বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
৮ম পর্ব
খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:
বিষয়:যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে?পাক-রুহ নাকি মুহাম্মদ সাঃ?
আলোচনা:"উক্ত সাহায্যকারীর [ভাববাদী] ৪ টি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ
\________________________________________/
যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত মানবজাতির এই ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশক কে?মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন,হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আর খ্রিস্টানগণ দাবি করেন পাক রুহ ।খ্রিস্টান ভাই ও বোনেরা আসুন আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি -কার দ্বারা যীশুর বর্ণিত এসব বৈশিষ্ট্য/শর্তগুলো পূরণ হয়েছে।মুহাম্মদ সাঃ এর দ্বারা নাকি পাক-রুহের দ্বারা।
আমাদের ব্যাখ্যা গুলো ভালো করে লক্ষ্য করবেন
[ ১ ] নং বৈশিষ্ট্য:
"আর একজন সাহায্যকারী প্রেরণ করবেন"
\__________________________________/
নিশ্চয়ই পূর্বে আরো সাহায্যকারী" ছিলেন, আর একজন সাহায্যকারী"-এর পূর্বে আগেকার মানুষরুপী সাহায্যকারী" থাকতে হবে। অন্যথায় "আর"শব্দ বলা হয়েছে কেন??কারণ "আর" শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে,এই সাহায্যকারী "হবেন পূর্বের মানুষরুপী "সাহায্যকারী"-দের মতোই। "আর" শব্দ দিয়ে আরো বোঝানো হয়েছে যে,যীশু তথা ঈসা আঃ নিজেও একজন "সাহায্যকারী ছিলেন। (১ ইউহান্না ২:১)।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদে এরশাদ করে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর উদ্দেশ্যে বলেছেন সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ১৬৩
إِنَّآ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ كَمَآ أَوْحَيْنَآ إِلَىٰ نُوحٍ وَٱلنَّبِيِّۦنَ مِنۢ بَعْدِهِۦ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْمَٰعِيلَ وَإِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَٰرُونَ وَسُلَيْمَٰنَ وَءَاتَيْنَا دَاوُۥدَ زَبُورًا
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি আপনার [মুহাম্মদ সাঃ] প্রতি ওহী প্রত্যাদেশ করেছি যেমন করে ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহের প্রতি এবং সে সমস্ত নবী-রসূলের প্রতি যাঁরা তাঁর পরে প্রেরিত হয়েছেন।আর ওহী পাঠিয়েছি, ইসমাঈল, ইব্রাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তাঁর সন্তাবর্গের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনূস, হারুন ও সুলায়মানের প্রতি। আর আমি দাউদকে দান করেছি যবুর গ্রন্থ।"
[ফুটনোট:এখানে "আর"- হলো অব্যয় পদ বা শব্দ যা দ্বারা পূর্বের মত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন (ব্যক্তি,বস্তু) যে কোন কিছুকে বোঝায়।উদাহরণ স্বরূপ:আমি আর/আরো একটি সাইকেল কিনব।"এখানে বাক্যে ব্যবহৃত "আর"-অব্যয় পদ/শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে, যে সাইকেলটি কিনব সেটি হবে পূর্বেকার সাইকেলের মত।আর পূর্বেকার সাইকেলের মত হওয়াতে এখানে "আর"-শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে।ঠিক তেমনি "আর একজন সাহায্যকারী "-বলতে পূর্বেকার মানুষরপী সাহায্যকারীর মতো হবে বোঝানো হয়েছে।
[ ২ ] নং বৈশিষ্ট্য:
এই সাহায্যকারী হবেন পূর্বের সাহায্যকারীদে মতোই একজন:
\________________________________________/
পূর্বের "সাহায্যকারী"গণ ছিলেন রক্ত মাংসের দেহ বিশিষ্ট মানুষ। মুসা,দাউদ,সুলাইমান প্রমুখ নবীগণ তাঁর আগেই আগমন করেছিলেন।ঈসা আঃ নিজেই ছিলেন একজন "সাহায্যকারী ,সহায়,প্যারাক্লীট (Paracletos)পক্ষ সমর্থনকারী অর্থাৎ উকিল (১ ইউহান্না ২:১)।আরো দেখুন ইউহান্না (১৪:১৬)। ঈসা আঃ এর বর্ণিত এই আগত ব্যক্তি প্রকৃতই ছিলেন একজন (Comforter) শান্তনাদানকারী,সাহায্যকারী।ইতিহাস বলে যীশুর পরে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ সাঃ ই নবী হয়েছিলেন। সুতরাং পূর্বোল্লিখিত আরেকজন "সাহায্যকারী " ও "শান্তিদাতা" হলেন নবী মুহাম্মদ সাঃ। ঐতিহাসিক ভাবে জ্ঞাত যে ঈসা আঃ এর পরে দুনিয়াতে মুহাম্মদ সাঃ ছাড়া আর কোন নবীর আগমন হয়নি। আর তিনি হলেন ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত শান্তিদাতা (Comforter),ঈসা আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে সেই সহায় যখন দুনিয়াতে আসলেন ,তখন আল্লাহ্ তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:-"
সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ১০৭ وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
অর্থঃ আমি আপনাকে [ হে মুহাম্মদ] বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।"মহান আল্লাহ্ মুহাম্মদ সাঃ এর প্রশংসায় আরো বলেছেন:-"সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১৫৯
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلْقَلْبِ لَٱنفَضُّوا۟ مِنْ حَوْلِكَ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى ٱلْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَوَكِّلِينَ
অর্থঃ আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।"
[ ৩ ] নং বৈশিষ্ট্য:
তিনি বিশ্বাসীদের কাছে চিরকাল থাকবেন (যোহন ১৪:১৬ )
\________________________________________/
সত্য নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দেওয়া শিক্ষা ও তাঁর ব্যক্তিত্ব "চিরকাল আমাদের কাছে আছে"।তাঁর জীবনাদর্শ (সহিহ হাদিস) ও তাঁর উপর নাযিলকৃত সত্য আসমানী কিতাব মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র আল কোরআন ১৪০০ বছর পূর্বে যেমন ছিল,আজও তেমনি আছে এবং কি ইনশাআললাহ কিয়ামত পর্যন্ত এই পবিত্র আল কোরআন কোন মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া অবিকৃত থাকবে ।কারণ তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না। তিনি সকল নবীদের মধ্যে সর্বশেষ সত্য নবী ও রাসূল। "তিনি বিশ্বাসীদের কাছে চিরকাল থাকবেন" - এ কথা বলতে ঈসা আঃ সেই সত্যময় আত্মা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দেওয়া পরিপূর্ণ শিক্ষা ,জীবনাদর্শ ও ব্যক্তিত্বকেই বুঝিয়েছেন। অন্য কোন মানুষ বা রুহকে বোঝাননি।কারণ কোন রুহ মানুষের নিকট চিরকাল থাকতে পারে না। কোন নবীও চিরকাল মানুষের সাথে থাকতে পারে না।কিন্তু "তাঁর (মুহাম্মদ সাঃ) শিক্ষার মাধ্যমে তিনি চির স্বরনীয় হয়ে থাকবেন ।"সত্যময় আত্মা মুহাম্মদ সাঃ এর দেওয়া আসমানী শিক্ষা "পবিত্র আল কোরআন "-এবং তাঁর জীবনাদর্শ (সহীহ হাদিস) অক্ষত অবস্থায় কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে মানুষের মাঝে।কারণ তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না।তিনি সমস্ত নবীদের সিলমোহর।প্যারাক্লীতস (Paracletos) হবেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ। কারণ :-
• তিনি সমস্ত বিষয় মানুষকে শিক্ষা দিবেন।''আর নবী মুহাম্মদ সাঃ সমস্ত কিছুই মুসলিম জাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের মাধ্যমে এবং তাঁর কাজ কর্ম (সহীহ হাদিস) এর মাধ্যমে।
• তিনি পথ দেখিয়ে মানুষকে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন।সুতরাং আর একজন নবী আসার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
• তিনি চিরকাল তাদের সঙ্গে থাকবেন। "-প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে চিরকাল আমাদের সঙ্গে আছেন।
[ ৪ ] নং বৈশিষ্ট্য:
যীশুর বর্ণিত উক্ত "পথ নির্দেশক" হবেন সত্যের (Spirit of Truth) আত্মা [সত্য নবী/ভাববাদী](যোহন ১৪:১৭; ১৫:২৬; ১৬:১৩)
\____________________________________/
আপনাদের (খ্রিস্টানদের) কল্পিত "পাক-রুহ" -কিভাবে "সত্যের আত্মা "-হলো বলেন?-"পাক-রুহ"- সত্যের আত্মাও নন আবার মিথ্যার আত্মাও নন,অশরীরী। (১ যোহন ৪:১,২) এ Spirit শব্দটি নবী শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সত্যের আত্মাই সত্য নবী এবং মিথ্যার আত্মাই মিথ্যা নবী।সুতরাং বলা যায়-পবিত্র আত্মা হলেন পবিত্র নবী,সত্যের আত্মা হলেন সত্যের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ।সত্যের আত্মা বা সত্যময় আত্মা ( Spirit of Truth),আরবীতে আল-আমীন,যা ছিল বাল্যকাল থেকে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর উপাধি। তাঁকে কুরাইশরা এই নামে ডাকতো।দুনিয়াতে তাঁর মতো সত্যময় আর কেউই হতে পারবে না।জীবনে তিনি কোনদিন মিথ্যা কথা বলেননি,ওয়াদা ভঙ্গ করেননি।তাঁর জীবন,তাঁর ব্যক্তিত্ব,তাঁর দেওয়া শিক্ষা তাঁর (আল-আমীন) সত্যের আত্মা হওয়ার বাস্তব প্রমাণ।ইংরেজ কবি থমাস কার্লাইল যেমন বলেছেন:-"তাঁর (মুহাম্মদ সাঃ এর) সাথীরা তাঁকে আল-আমীন তথা বিশ্বাসী ,সত্য ও বিশ্বস্ত মানুষ নামে নামকরণ করেছিল"(On Hero & Hero-Worship -pp-93-94)।তাঁর পরিচয় ছিল আস-সাদিক (সত্যবাদী),আল-আমীন (বিশ্বস্ত) বা মক্কাবাসীদের কাছে সত্যের প্রতীক,সত্যের আত্মা।তিনি জীবন্ত নজীর সৃষ্টি করে নিজেকে সবচেয়ে মহাসত্যবাদী ,বিশ্বস্ত ও সৎ প্রমাণ করেছেন।এমনকি তাঁর চরম শত্রুরাও তাঁর সততা ও বিশ্বস্তায় মুগ্ধ ছিল। মুহাম্মদ সাঃ এর মতো সত্যবাদী ও সৎ আর কেউই হতে পারেননি। যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য,মুহাম্মদ সাঃ এর ক্ষেত্রে এ বাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছে।
[বিঃদ্রঃ ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম নাস্তিকরা সহ যে কেউই কোন কিছু না জেনে বুঝেই অথবা ধর্মীয় বিদ্বেষবশত নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে অপপ্রচার করে ও অশোভনীয় ভাষা ব্যবহার করে যা তাদের দুর্বলতা বহন করে। আর তারাই(ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম নাস্তিকরা) অমুসলিম পন্ডিত বা মনিষীদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে যে প্রশংসা বাণী ব্যক্ত করেছেন তা কিভাবে নেবেন???এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাই আপনাদের কাছে!অমুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে নবী মুহাম্মদ সাঃ!
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=236833801127917&id=104106391067326