Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

১০ নং পর্ব:যীশু কতৃক বর্ণিত উক্ত সাহায্যকারীর ৬ ও ৭ নং বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ?

খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:

১০ম পর্ব 
(বিষয়:প্রতিশ্রুতি নবী কি যীশু না মুহাম্মদ সাঃ ?)
আলোচনা:(৬ নং বৈশিষ্ট্য/শর্ত:যীশু যা বলেছিলেন উক্ত সাহায্যকারী তা বলবেন।
৭ নং বৈশিষ্ট্য/শর্ত:তিনি ঈসা আঃ এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন
যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে?পাক-রুহ নাকি মুহাম্মদ সাঃ?আসুন এটা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখি।
\_____________________________________/

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআললাহ। আর সেটা হলো যীশু কতৃক বর্ণিত উক্ত সাহায্যকারীর মধ্যে যেসব শর্ত বা বৈশিষ্ট্য আছে তা যথার্থ রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে যৌক্তিক ভাবে প্রমাণ উপস্থাপন করে দেখাব এসব শর্ত কার দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে?খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত অদৃশ্য/অশরীরী পবিত্র আত্মা নাকি সমগ্র বিশ্বজগতের রহমতের নবী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ?যাইহোক এখানে মূল আলোচনায় আসা যাক। 

 

এখানে পূর্বের লিংক টা যোগ করে দিলাম যেন সবাই ভালো করে বুঝতে পারেন। শর্ত ১-৫ নং পর্যন্ত বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই লিংকে

 

https://www.facebook.com/104106391067326/posts/236853861125911/

 

৬ নং বৈশিষ্ট্য:

"যীশু তথা ঈসা আঃ যা কিছু বলেছিলেন ,তিনি সে সমস্ত কিছু মনে করিয়ে দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)

\___________________________________/

এখানে গ্রিক বাইবেলে (যোহন ১৪:২৬) পদে "ὑπομνήσει" (উচ্চারণ: hypomnēsei) শব্দটি রয়েছে যার অর্থ :-"মনে করিয়ে দেওয়া।"আর ইংরেজিতে এই গ্রিক শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে "will bring to remembrance."তবে সমস্ত কিছু মনে করিয়ে দিবেন" বাক্যের গ্রিক লিপির Sentence হলো "πάντα καὶ "ὑπομνήσει" ὑμᾶς πάντα." আর ইংরেজি বাইবেলের মধ্যে এই বাক্যের অনুবাদ করা হয়েছে:-

 

(i)New American Standard Bible: things, and bring to your remembrance all. "

(ii)King James Bible: your remembrance, whatsoever

iii)INT: all things and will bring to remembrance of you all things

iv)Holman Christian Standard Bible: all things and remind you of everything.

 

এখন চলে আসি এই কথার বিশ্লেষণে।ভবিষ্যদ্বাণীতে "যীশু তথা ঈসা আঃ যা কিছু বলেছিলেন ,তিনি (উক্ত সাহায্যকারী/helper) সমস্ত কিছু মনে করিয়ে দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)।

 

এখন বলি খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত অদৃশ্য/অশরীরী পবিত্র আত্মা বা পাক-রুহই নাকি ঈসা আঃ যা যা বলেছিলেন,সেই সমস্ত কিছু খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিবেন। যীশু তথা ঈসা আঃ এর কি কি শিক্ষা "পাক-রুহ" মনে করিয়ে দিয়েছে আমরা সবাই তা জানতে চাই।বলুন, আপনাদের কল্পিত পাক-রুহ কি কি মনে করিয়ে দিয়েছে?কিছুই না। এবার দেখুন আমাদের প্রিয় রাসূল সাঃ কি কি মনে করিয়ে দিয়েছে?-প্রিয় নবী ঈসা আঃ যা কিছু বলেছিলেন,যা কিছু করেছিলেন সে সব "মনে করিয়ে দিয়েছেন।"এখানে ঈসা আঃ বিধর্মীদের বলেননি,নিজের লোক "বনি ইসরাইল "কে বলেছেন,সব কিছুই তিনি (উক্ত সাহায্যকারী) তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিবেন।কারণ,তারা ভুলে যাবে।যদি তাদের মনে থাকে তাহলে তো "মনে করিয়ে দিবার (ὑπομνήσει/ reminded) কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

 

নোট:কখন মনে করিয়ে দেওয়া যৌক্তিক/যুক্তিগত?যখন কেউ কোন কিছু ভুলে যায় অর্থাৎ তখনই কোন কিছু মনে করিয়ে দেওয়া সম্ভব যদি কেউ কিছু ভুলে যায়।আর ভুলে না গেলে মনে করিয়ে দেবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। 

আর"সেই সাহায্যকারী/another helper"-এমন একটি সময়ে আসবেন,যখন ঈসা আঃ এর শিক্ষা লোকে ভুলে যাবে এবং তা "স্বরণ করানোর প্রয়োজন হবে।" প্রকৃত পক্ষে তারা তা" ভুলে গিয়েছিল "।এই বিষয়টি মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা পবিত্র আল কোরআনে বলেছেন সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১৩

 

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَٰقَهُمْ لَعَنَّٰهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَٰسِيَةً يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَنَسُوا۟ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱصْفَحْ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ

 

অর্থঃ অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নত করেছি আর তাদের অন্তরকে কঠিন করে দিয়েছি, তারা কালামকে স্বস্থান থেকে বিকৃত করেছিল এবং তাদেরকে দেয়া "উপদেশের বড় অংশ তারা ভুলে গিয়েছিল।" তুমি অল্প সংখ্যক ছাড়া তাদেরকে সর্বদা বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে। কাজেই তাদেরকে ক্ষমা কর, মার্জনা কর, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।"(অনুবাদ:তাইসিরুল)

 

"তাদেরকে দেয়া উপদেশের বড় অংশ তারা ভুলে গিয়েছিল"।

 

এই আয়াতে "وَنَسُوا" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ "ভুলে যাওয়া"।আর ইহুদি নাসারারা যে প্রকৃতপক্ষে ভুলে গিয়েছিল আল্লাহ্ তাআলা এখানে সুস্পষ্ট ভাবে তা উল্লেখ করে দিয়েছেন।আর ইংরেজি অনুবাদে বলা হয়েছে:-"They distort words from their [proper] usages and have forgotten a portion of that of which they were reminded."(Sahih International)

 

আবার অনেক ইংরেজি অনুবাদে "have abandoned a good part of the Message that was sent to them."বলা হয়েছে। 

 

এছাড়া আরো বলা হয়েছে সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১৪

 

وَمِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّا نَصَٰرَىٰٓ أَخَذْنَا مِيثَٰقَهُمْ فَنَسُوا۟ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ ٱلْعَدَاوَةَ وَٱلْبَغْضَآءَ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ ٱللَّهُ بِمَا كَانُوا۟ يَصْنَعُونَ

 

অর্থঃ আর যারা বলে ‘‘আমরা নাসারা’’ আমি তাদের হতেও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তারা তাদের প্রতি উপদেশের একটা বড় অংশ ভুলে গিয়েছিল। কাজেই আমি কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিয়েছি। তারা যা করছিল অচিরেই আল্লাহ তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন।"(অনুবাদ: তাইসিরুল কোরআন) [এছাড়া পবিত্র কোরআনের ৪৩ নং সূরা আয-যুখরুফের ৬৩ নম্বর আয়াতেও এটা ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে]।

 

এই আয়াতেও ইংরেজি অনুবাদে বলা হয়েছে:-"but they forgot a portion of that of which they were reminded."(অনুবাদ Sahih International) 

 

আর এখানেও উপরোল্লিখিত আয়াতে আরবি শব্দ "فَنَسُوا" ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ "কিন্তু তারা ভুলে গেলো /But they forgot." আর যীশু বলেছিলেন,"উক্ত সাহায্যকারী এই ভুলে যাওয়া অংশ মনে করিয়ে দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)।

 

আর আমরা জানি যে,বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য কে তুলে ধরে ভুলে যাওয়া অংশ কে মনে করিয়ে দিয়েছেন সমগ্র আহলে কিতাবীদের।

 

যীশু তথা ঈসা আঃ এর বর্ণিত সত্যময় আত্মা হযরত মুহাম্মদ সাঃ যা বলেছিলেন ,সেই সমস্ত কি রুপে ইসরাইল সন্তানগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন,কোরআনের পৃষ্ঠা উল্টান,আর নিন্মের কতিপয় উদ্ধৃতি একটি একটি করে তুলনা করে দেখুনঃ-

১)সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত: ৬

وَإِذْ قَالَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُولٍ يَأْتِى مِنۢ بَعْدِى ٱسْمُهُۥٓ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ قَالُوا۟ هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ

 

অর্থঃ স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমাদ...........।"

 

আবার ১৪ নং আয়াত ও দেখতে পারেন।"আহমাদ" -হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দ্বিতীয় নাম।"আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়নকারী"-এর সঙ্গে তুলনা করুন।

 

যীশু তথা ঈসা আঃ বলেছেন:-"এ কথা মনে কর না যে,আমি মুসার শরিয়ত [তাওরাত] ও নবীদের লেখা [সহীফা] বাতিল করতে এসেছি।আমি সেগুলো বাতিল করতে আসিনি বরং পূর্ণ করতে এসেছি ।আমি তোমাদের সত্যই বলছি,আসমান ও যমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ,যতদিন না শরিয়তের সমস্ত কথা সফল হয় ,ততদিন সেই শরিয়তের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছা যাবে না।তাই [শরিয়তের] হুকুমগুলোর মধ্যে ছোট একটি হুকুমও যে কেউ অমান্য করে এবং লোককে তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় ,তাকে বেহেশতী রাজ্যে সবচেয়ে ছোট বলা হবে। "( ইঞ্জিল শরিফ,মথি ৫:১৭-১৯)।

 

এখানে যীশু তথা ঈসা আঃ যা বলেছিলেন (কোরআন শরীফ ৬১:৬)-তে তা সংক্ষেপে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

● ২)........ঈসা মসিহ আঃ বললেন:-"সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৭২

 

لَقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ ٱلْمَسِيحُ يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

 

অর্থঃ অথচ ঈসা মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।"(কোরআন ৫:৭২)।

 

● ৩)ঈসা আঃ বনি ইসরাইলকে বললেন:-"সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৪৯

 

وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ إِنَّ 

فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

 

অর্থঃ আর বণী ইসরাঈলদের জন্যে রসূল হিসেবে তাকে [ঈসা আঃ কে]মনোনীত করবেন। তিনি [ঈসা আঃ] বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।" [ঈসা আঃ এর মুজিজা সম্পর্কে বলা হয়েছে ৫:১১০ নং আয়াতেও।তবে এটা হলো কিয়াম দিনের কথোপকথন]

 

আবার কোরআনে এরশাদ হয়েছে:-"সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৫০

 

وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ ٱلَّذِى حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُم بِـَٔايَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ

 

অর্থঃ এবং আমি [ঈসা আঃ] এসেছি আমার পূর্বে তাওরাতে যা ছিল তার সত্যতা প্রদান করতে এবং তোমাদের জন্য যা অবৈধ হয়েছে তার কতিপয় তোমাদের জন্য বৈধ করতে আর তোমাদের রবের নিকট হতে তোমাদের জন্য নিদর্শন নিয়ে ; অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে অনুসরণ করো।"

 

আবার কোরআনে এরশাদ হয়েছে:-"সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৫১

 

إِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ هَٰذَا صِرَٰطٌ مُّسْتَقِيمٌ

 

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার [ঈসা আঃ] পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্ত।-অতঃপর তাঁর ইবাদত কর, এটাই হলো সরল পথ।"(পবিত্র কোরআন ৩:৫১)।

 

● ৪)ঈসা আঃ মায়ের কোলে থেকে বললেন:-"সূরা মারইয়াম (مريم), আয়াত: ৩০

 

قَالَ إِنِّى عَبْدُ ٱللَّهِ ءَاتَىٰنِىَ ٱلْكِتَٰبَ وَجَعَلَنِى نَبِيًّا

 

অর্থঃ সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন"(কোরআন ১৯:৩০)। [আল্লাহ্ ঈসা আঃ কে কিতাব, প্রজ্ঞা,তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছেন; পবিত্র কোরআন ৩:৪৭; ৫:১১০]

 

● ৫)মরিয়ম-তনয় ঈসা আঃ আল্লাহর কাছে নিজের অনুসারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১১৮

 

إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ

 

অর্থঃ হে আল্লাহ্, যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার বান্দা এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।"(কোরআন ৫:১১৮)।

 

৭নং বৈশিষ্ট্য:
তিনি" যীশু তথা ঈসা আঃ এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন,তাঁর "সম্বন্ধে "বলবেন"(যোহন ১৬:১৪)
\____________________________________/
বলুন,আপনাদের কল্পিত "পাক-রুহ" যীশু তথা "ঈসা আঃ এর বিষয়ে কি সাক্ষ্য দিয়েছেন?"কিছুই না।এবার দেখুন ,হযরত মুহাম্মদ সাঃ কি "সাক্ষ্য দিয়েছেন "।ইনিই সেই "সাহায্যকারী"অর্থাৎ মুহাম্মদ(সাঃ যিনি ওহীর [কোরআন] মাধ্যমে যীশু তথা ঈসা আঃ ও তাঁর মিশনের প্রকৃত রুপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি সেই সত্যের আত্মা যিনি যীশু তথা ঈসা আঃ ,তাঁর মায়ের এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর শত্রুদের আরোপিত সেই মিথ্যা অভিযোগ ,কলঙ্ক লেপন ও মিথ্যা বদনাম দূর করেছিলেন।যেমন:

 

১)ইয়াহুদিরা যীশু তথা ঈসা আঃ এর প্রতি মহা অপবাদ আরোপ করেছিল;তারা বলত -"আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসিহকে হত্যা করেছি। "কিন্তু নবী মুহাম্মদ সাঃ ওহী প্রাপ্ত হয়ে "ঈসা আঃ এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন ":সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত:১৫৭

وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا ٱلْمَسِيحَ عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِ لَفِى شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُم بِهِۦ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًۢا


অর্থঃ আর তাদের [ইয়াহুদিদের] একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।"(কোরআন ৪:১৫৭)।


২)ইয়াহুদিরা ঈসা আঃ এর মা মরিয়মের প্রতি মহা অপবাদ আরোপ করেছিল;তারা [ইয়াহুদিরা ] ঈসা আঃ কে বলল:-"আমরা তো জারজ নই,আমাদের একজনই পিতা আছেন।সেই পিতা হলেন আল্লাহ্ (ইউহান্না ৮:২২)।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঈসা আঃ এর মায়ের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন;আল্লাহ্ বলেছেন:-"সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৯১

وَٱلَّتِىٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَٰهَا وَٱبْنَهَآ ءَايَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
অর্থঃ এবং সেই নারীর [মারিয়াম] কথা স্মরণ করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।"(কোরআন ২১:৯১)।

৩)--ঈসা আঃ বলেছেন,সেই সত্যময় আত্মা [মুহাম্মদ সাঃ] আমার সম্বন্ধে বলবেন:-"আল্লাহ্ বলেছেন!(হে মুহাম্মদ), বর্ণনা করুন এই কিতাবে [কোরআনে] উল্লেখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।অতঃপর তাদের হতে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে [মারিয়াম]পর্দা করল; অতঃপর আমি [আল্লাহ্] তার নিকট আমার রূহকে (ফেরেশতা জিব্রাঈলকে) পাঠিয়ে দিলাম ( আরো দেখুন,লুক ১:২৬-২৭) সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।মারইয়াম বললঃ তুমি যদি (আল্লাহকে) ভয় কর তাহলে আমি তোমা হতে দয়াময়ের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। সে বললঃ আমিতো শুধু তোমার রাব্ব হতে প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার (সুসংবাদ জানানোর) জন্য।মারইয়াম বললঃ কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।সে বললঃ এরূপই হবে; তোমার রাব্ব বলেছেন - এটা আমার জন্য সহজ সাধ্য এবং তাকে আমি এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন এবং আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; এটাতো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।প্রসব বেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; সে বললঃ হায়! এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম!মালাইকা/ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বললঃ তুমি দুঃখ করনা, তোমার পাদদেশে তোমার রাব্ব এক নহর সৃষ্টি করেছেন।তুমি তোমার দিকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে নাড়া দাও, ওটা তোমাকে সুপক্ক তাজা খেজুর দান করবে।সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়িয়ে নাও; মানুষের মধ্যে কেহকে যদি তুমি দেখ তখন বলঃ আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবনা।অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বললঃ হে মারইয়াম! তুমিতো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ!হে হারূন ভগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলনা এবং তোমার মাতাও ছিলনা ব্যভিচারিণী।অতঃপর মারইয়াম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল; তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?সে (ঈসা) বললঃ আমিতো আল্লাহর দাস; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নাবী করেছেন।যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে আশিষ ভাজন করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে –আর আমার মাতার প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা।আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও শান্তি থাকবে যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।এই মারইয়াম তনয় ঈসা! আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে।(কোরআন ১৯:১৬-৩৪)।"

 

লুক লিখিত সুসমাচারে ঈসা আঃ এর জন্মের বিষয়ে নিন্মরুপ বর্ণিত হয়েছে:-" ..............খোদা গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রামের মরিয়ম নামে একটি কুমারী মেয়ের নিকটে জিব্রাইল ফেরেশতাকে পাঠালেন।..........ফেরেশতা মারইয়ামের নিকটে এসে তাঁকে সালাম জানিয়ে বললেন,"প্রভু,তোমার সঙ্গে আছেন এবং তোমাকে অনেক দোআ করেছেন। "এই কথা শুনে মরিয়মের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল।তিনি ভাবতে লাগলেন,এরকম সালামের অর্থ কি?ফেরেশতা তাঁকে বললেন,মরিয়ম ভয় কর না। কারণ খোদা তোমাকে খুব আশীর্বাদ করেছেন। শুন,তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি পুত্র সন্তান হবে।তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে।তিনি মহান হবেন।......... তখন মরিয়ম ফেরেশতা কে বললেন, "এটা কেমন করে হবে?আমার তো বিবাহ হয়নি।"ফেরেশতা বললেন,"পাক-রুহ" তোমার উপর আসবেন এবং খোদার শক্তির ছায়া তোমার উপর পড়বে। এজন্য ,যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে "খোদার পুত্র বলা হবে। "দেখ,এই দেখ বৃদ্ধ বয়সে তোমার আত্মীয় এলিজাবেথের গর্ভেও ছেলের জন্ম হয়েছে।লোকে বলত,তার ছেলে-মেয়ে হবে না!কিন্তু এখন তার ছয় মাস চলছে। খোদার নিকট অসম্ভব বলতে কোন কিছুই নেই।"মরিয়ম বললেন," আমি প্রভুর বাদী। আপনার কথা মতোই আমার উপর সমস্ত কিছু হোক। "এর পরে ফেরেশতা মরিয়মের নিকট থেকে চলে গেল।(ইঞ্জিল শরীফ,লুক ১:২৬-৩৮)।


He [God] gave His only begotten son.(son.(Ak .James Version ,John 3:16)..।

অর্থঃখোদা তাঁর একমাত্র পুত্র [যীশু] কে দান করলেন। "খ্রিস্টান দের অনেকেই পুত্র শব্দের রুপক অর্থ বললেও প্রকৃতপক্ষে রুপক অর্থের আড়ালে প্রকৃত অর্থই ব্যবহার করে,যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলে begotten , not made. অথচ only begotten son of God বাক্যের begotten ঔরসজাত/জন্ম দেয়া সন্তান বলতে স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনের অন্তর্নিহিত অর্থই প্রকাশ করে। "জন্ম দেয়া " স্রস্টার নয় বরং সৃষ্ট জীবের একটি স্বভাব; তা জীব-জগতের,জীবের নিন্ম শ্রেণীর যৌন কাজের অন্তর্ভুক্ত।এটা মানুষের জৈব-স্বভাবের চাহিদার উপর নির্ভরশীল দৈহিক কার্য।স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনে উভয়ের দেহ হতে কোন তরল পদার্থ নির্গত হয়ে সন্তান জন্মের সূচনা হয়।তাই কাজেই "খোদা সন্তান জন্ম দিয়েছেন "(নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক) বললে স্বভাবগতই ধারণা হয় যে-খোদা বুঝি দেহ ধারী কোন বস্তুগত সত্ত্বা,তাঁর বুঝি স্বজাতির কোন স্ত্রীও আছে এবং তাঁর দেহ হতে বুঝি কোন তরল পদার্থও নির্গত হয়। (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)।