Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

পবিত্র আত্মার বিশেষ পরিচয় পর্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান

বাইবেলের আলোকে সত্য ভাববাদী চেনার উপায়:

পবিত্র আত্মা (পাক-রুহ) সম্পর্কে বিশেষ কয়েকটি পরিচয় জেনে নিই 

\___________________________________/

১)কিভাবে "পাক-রুহ"-শব্দটা সন্নিবেশিত হলো?

\___________________________________/

খ্রিস্টানগণ গর্ব করে থাকেন যে,তাদের কাছে ২৪,০০০ পান্ডুলিপি আছে। কিন্তু এগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির হুবহু মিল নেই। এরুপ পান্ডুলিপি নিয়ে গর্ব করার কি আছে আমি তো বুঝি না। ইউহান্না (১৪:২৬) :-"সেই' সাহায্যকারী 'অর্থাৎ পাক-রুহ (পবিত্র আত্মা) ,যাকে পিতা আমার নামে      

 পাঠিয়ে দিবেন। (#উদ্ধৃতির_নিচে_রেখা_টেনেছি) এখন জানার বিষয় হলো:-"এই পাক-রুহ (পবিত্র আত্মা "সন্নিবেশ কিভাবে হলো???এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে,অর্থাৎ "পাক-রুহ (পবিত্র আত্মা)" বাক্যাংশটি প্রকৃতপক্ষে  পুস্তকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা সন্নিবেষ্ট মেকি রচনা ( Insertion/Interpolation) যা বন্ধনীর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ মূল বিষয়ের প্রতি সম্পর্কহীন পদ। দৃষ্টান্ত স্বরূপ,আমি উপরের বন্ধনীর ভেতরে বলেছি যেমন:(##উদ্ধৃতির_নিচে_রেখা_টেনেছি_আমি,অর্থাৎ মূল বিষয়ের প্রতি এর কোন সম্পর্ক নেই)।বাইবেলের নকলকারীগণ তথাকথিত মূল পান্ডুলিপি থেকে নকল করার সময় এরকম অনেক মেকী রচনা, মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা মূল বিষয়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ,কত কতগুলো বন্ধনীর ভেতরে রেখে দিয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের সময়  বন্ধনী তুলে দিয়েছিলেন।এভাবে মনগড়া ব্যাখ্যাগুলো কে মূল রচনার রূপ দিয়েছিলেন। একটি দৃষ্টান্ত দেই:লুক লিখিত ইংরেজি ইঞ্জিল: (৩:২৩ )এ দেখুন (As was supposed,যেমন ধারণা করা হয় ) বন্ধনীর মধ্যে ছিল,অন্যান্য ভাষায় অনুবাদগুলোতে বন্ধনী তুলে দেওয়া হয়েছে ,আর এভাবে মূল পাঠে পরিণত হয়েছে।যথাস্থানে এরুপ মেকি রচনার উল্লেখ করার আশা থাকল।খ্রিস্টানদের এত গর্বের সংকলন হলো ১৬১১ সনের সংকলন অথরাইসড কিং জেমস ভার্সন (Authorized King James Version) ।১৯৫২ সনের সংকলন রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন (Revised Standard Version) এর সম্পাদকগণ ঐ ১৬১১ সনের ভার্সন থেকে ডজনখানেক ঐরুপ মেকি-রচনা মুছে ফেলে দিয়েছেন অথচ:-"পাক-রুহ বা (পবিত্র আত্মা)"টি মুছে ফেলে দেননি,বরং ধরে রেখেছেন। এই একটি মাত্র বাক্যাংশ যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক  অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিবন্ধক হচ্ছে। উল্লেখ্য যে,একটি মাত্র বাক্যাংশ ঢুকিয়ে দিয়ে ১৫০ কোটি সহজ-সরল মানুষকে শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ কে গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছে। খ্রিস্টানরা দুইভাবে সত্যকে ঘোলাটে করে।

 

(ক)সত্যের সঙ্গে কতগুলো মিথ্যাকে এমনভাবে মিশিয়ে দেয় যে ,ঐ মিথ্যার দ্বারা সত্যের প্রকৃত রূপটি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে তার দ্বারা শ্রোতার মনে সন্দেহের উদ্রেক সৃষ্টি হয়। যেমন:ঈসা আঃ কতৃক প্রতিশ্রুতি নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আগমন বার্তা সম্বন্ধে অর্থাৎ "পাক-রুহ (পবিত্র আত্মা)" মিথ্যাকে মিশিয়ে দিয়েছে।এই মিথ্যার দ্বারা প্রকৃত ভবিষ্যদ্বাণী আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। 

 

(খ) সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেসব যুক্তি  প্রমাণ আছে সেগুলো কে গোপন করে ফেলা হয়।যেমন:দ্বিতীয় বিবরণ  (৩৩:২) উদ্ধৃতিতে "Ten thousand " -এর অনুবাদ "দশ হাজার " কে গোপন করে ফেলা হয়েছে। ইয়াহুদি-খ্রিস্টান পন্ডিতগণ অবস্থা বুঝে উভয়বিধ ব্যবস্থা অবলম্বন করে।

 

২)পাক-রুহ সম্পর্কে ড.মরিচ বুকাইলীর মন্তব্য 

\__________________________________/

●এ বিষয়ে ফরাসী বিজ্ঞানী ড.মরিচ বুকাইলী বলেছেন:-"আমরা অধুনা প্রচলিত ইঞ্জিলগুলোতে প্যারাক্লীতস (Paracletos-হিব্রু শব্দ )শব্দের বদলে "পাক রুহ বা (পবিত্র আত্মা) (Holy Spirit)" বলে যে কথাটা পাচ্ছি ,তা নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের সংযোজন এবং ঐ শব্দ দুটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে একান্ত ইচ্ছাকৃত ভাবেই।এর দ্বারা মূল বাইবেলের যে বাণীতে যীশু তথা ঈসা আঃ এর পরে আরেকজন নবীর আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছিল তা পুরোপুরিভাবে ধামা-চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে,খ্রিস্টান গির্জাসমূহের সংগঠনের কালে,প্রচার চালানো হয়েছিল যে,যীশুই হচ্ছেন সর্বশেষ নবী ।গির্জা সংস্থার সেই প্রচারটা যাতে মাঠে মারা না যায় তার জন্যই বাইবেলের বাণীতে ও অনুবাদে এ ধরনের কারসাজি ও বিকৃতি সাধন করা হয়েছিল ।(বাইবেল,কোরআন ও বিজ্ঞান  ,পৃষ্ঠা:১৬৭)।পাক-রুহ বা পবিত্র আত্মা আর কেউ নন বরং প্রধান ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল আঃ।

 

৩) কে এই পবিত্র আত্মা বা পাক-রুহ?

\__________________________/

●অনেক খ্রিস্টান ভাই ও বোনেরা বলে থাকেন যে:-"পবিত্র আত্মা ফেরেশতা নন বরং ঈশ্বরের একটি শক্তি। মুসলিমগণ এখানেই ভুল বলেন,পবিত্র আত্মা এবং ফেরেশতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না  "(Muslims are confused to differentiate in between the angle and the Holy Spirit which is power of God).

 

মুসলিমগণ ভুল করেন নাই বরং ভুলটা আপনারাই (খ্রিস্টানরা) করেছেন। আপনারা মনগড়া কথা বলছেন,আপনাদের মন্তব্যের সমর্থনে কোন দলীল নেই। অথচ আমরা আপনাদের "ইঞ্জিল " এবং আমাদের কোরআন থেকে দলীল দিয়ে বলছি,শুনুন আপনারা যাকে "পবিত্র আত্মা " বলেন তিনিই হলেন প্রধান "ফেরেশতা জিব্রাইল/জিব্রীল।

 

নিন্মের উদ্ধৃতিগুলো দেখুন:যীশুর জন্মের পূর্বে,তাঁর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলেন এক বার্তাবাহক।  মথি তাঁকে বলেছেন:-"পবিত্র আত্মা,লুক বলেছেন:-"জিব্রীল ফেরেশতা [গাব্রিয়েল],এবং কোরআনে মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা তাঁকে বলেছেন:-"জিব্রাইল ফেরেশতা।

 

 (ক) ঈসা মসিহের জন্ম হয়েছিল এভাবে:-"ইউসুফের সঙ্গে মরিয়মের বিবাহের ঠিক হয়েছিল কিন্তু তাঁরা একসঙ্গে বাস করার আগেই 'পাক-রুহের' শক্তিতে মরিয়মের গর্ভ হয়েছিল........(মথি ১:১৮)।" 

 

"ইউসুফের সঙ্গে মরিয়মের বিবাহের ঠিক হয়েছিল কিন্তু তাঁরা একসঙ্গে বাস করার আগেই ''-এই কথাগুলো ঠিক নয়,এর কোন দলীল নেই। মথি কোথা থেকে শুনে ভুল লিখেছেন। 

 

নিন্মের উদ্ধৃতি(লুক ১:২৬-২৭) এ দেখা যায় :-"মারিয়াম ছিলেন "চিরকুমারী ।"আর কোরআনও একই কথা বলছে। মরিয়ম আঃ ছিলেন "চিরকুমারী ।"নিন্মের উদ্ধৃতি (কোরআন ১৯:২১) এ আল্লাহ্ বলেছেন:-"আমি তাঁকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চাই।"আল্লাহ্ তাআলা মহাপরাক্রমশালী। "সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান "(কোরআন ২:২০,১০৬)।

 

আল্লাহ্ তাআলা পিতা-মাতার মধ্যবর্তীতা ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। আদম আঃ তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি (মহান আল্লাহ্) পিতার মধ্যবর্তীতা ছাড়া শুধু মায়ের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন,ঈসা আঃ কে সৃষ্টি করে তিনি (আল্লাহ্) তাঁর কুদরতের নিদর্শন দেখিয়েছেন। তিনি পিতা-মাতার মধ্যবর্তীতায় দুনিয়ার সকল মানুষ সৃষ্টি করেছেন। 

 

(খ)..............খোদা গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রামের মরিয়ম নামের একটি কুমারি মেয়ের নিকট 'জিব্রীল ফেরেশতাকে' পাঠালেন.........(লুক ১:২৬-২৭)।

 

(গ) মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা পবিত্র আল কোরআনে বলেছেন:-"(হে মুহাম্মদ), এই কিতাবে (কোরআনে) মারইয়ামের কাহিনী বর্ণনা করুন;যখন সে তাঁর পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল। অতঃপর সে তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য পর্দা করল।তখন আমি তাঁর কাছে আমার (আল্লাহ্) রুহ (অর্থাৎ ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ) কে পাঠিয়ে দিলাম। "(এটা আরো দেখুন বাইবেল থেকে  ,,,লুক  ১:২৬-২৭)।"সে তাঁর নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলো।মারিয়াম বলল,"আমি তোমার থেকে দয়াময় আল্লাহ্ এর আশ্রয় প্রার্থনা করছি,যদি তুমি আল্লাহ্ কে ভয় কর।সে (ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ) বলল,"আমি তো তোমার পালনকর্তা কতৃক প্রেরিত হয়েছি,তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দানের উদ্দেশ্যে।সে বলল,"কেমন করে আমার পুত্র হবে ,যখন কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি,আর আমি অসতীও নই। "সে (জিব্রীল আঃ) বলল,এভাবেই হবে তোমার প্রতিপালক বলেছেন-ওটা আমার জন্য সহজ,আমি তাঁকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চাই,আর আমার পক্ষ থেকে এক রহমত, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।অতঃপর পুত্র তাঁর গর্ভে আসল। তখন সে দূরবর্তী জায়গায় চলে গেল।"(কোরআন ১৯:১৬-২২)। 

 

(ঘ) আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:-"আমি মারিয়ম তনয় ঈসাকে 'পবিত্র আত্মা বা "পাক-রুহের" মাধ্যমে শক্তি দান করেছি (কোরআন ২:৮৭,২৫৩)

 

এ উপরের উদ্ধৃতি গুলো থেকে প্রমাণ হয় যে,পাক-রুহ বা পবিত্র আত্মা "আর কেউ নন বরং প্রধান "ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল

 আঃ। "এই পাক-রুহ অর্থাৎ ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ পূর্বের নবীদের কাছে ওহী আনয়ন করতেন। 

যেমন:(ঙ) --দাউদ আঃ তো পাক রুহের পরিচালনায় বলেছেন .......(মার্ক ১২:৩৬)।

সার কথা হলো "পবিত্র আত্মা (পাক-রুহ) হলো প্রধান"ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল আঃ।" 

 

"পাক-রুহ বা(পবিত্র আত্মা)"ভবিষ্যতে দুনিয়াতে আসবেন খ্রিস্টানদের পথ দেখানোর জন্য -এ কথার কোন অর্থই হয়না। খ্রিস্টান বাইবেল পন্ডিতগণ কতবড় ধোকাবাজ -ঈসা কতৃক বিঘোষিত প্রতিশ্রুতি নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আগমন বার্তা সম্বন্ধে  ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইঞ্জিলের (?) এর পংক্তির মিথ্যা অনুবাদ করতে  ও অপব্যাখ্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে নাই। 

 

যীশুর ব্যাপারে ১ ইউহান্না (২:১) এ লেখা হয়েছে:-"আমার প্রিয় সন্তানেরা ,তোমরা যাতে পাপ না কর,সে জন্যই আমি তোমাদের নিকট এ সমস্ত কথা লিখছি।তবে যদি কেউ পাপ করেই ফেলে,তাহলে পিতার নিকট আমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলার জন্য প্যারাক্লীতস (একজন সাহায্যকারী-Paracletos) একজন আছেন। তিনি ঈসা মসিহ,যিনি নির্দোষ।

 

"আর একজন " -এর ব্যাপারে,(ইউহান্না/যোহন ১৪:১৬)-এ লেখা হয়েছে -যীশু বলেছেন:-

 

"তোমরা যদি আমাকে মহব্বত কর,তবে আমার সমস্ত হুকুম মেনে চলবে ।আমি পিতার নিকট প্রার্থনা করব  এবং তিনি তোমাদের কাছে আর একজন প্যারাক্লীতস (Paracletos) সাহায্যকারী প্রেরণ করবেন।"

 

প্রিয় পাঠকগণ ,খ্রিস্টান অনুবাদকদের চালাকি দেখলেন কি?একই গ্রিক শব্দ "প্যারাক্লীতস (Paracletos) " -এর অনুবাদ করা হয়েছে যীশুর ক্ষেত্রে "একজন " আর "মুহাম্মদ সাঃ" এর ক্ষেত্রে "সাহায্যকারী।" আর এটা করা হয়েছে যেন মানুষ বুঝতে না পারে যে ,"আর একজন "-পূর্বের জন ঈসা আঃ এর মতো "আর একজন " নবী।(Paracletos)-প্রথমটি (১ যোহন ২:১)- এ রক্ত মাংসের মানুষ যীশু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।প্যারাক্লীট (Paraclete) দ্বিতীয়টি (যোহন ১৪:২৫-২৬)  তে ভুল অর্থে পবিত্র আত্মা বলে সনাক্ত করা হয়েছে অথচ যীশু মানুষ এবং পবিত্র আত্মা আধ্যাত্মিক।কাজেই প্যারাক্লীতস (Paracletos) প্রথম টি যীশুর মতো মানুষ হতে পারল,তাহলে প্যারাক্লীতস (Paracletos)দ্বিতীয় টি কেন মুহাম্মদ সাঃ এর মতো মানুষ হতে পারবে না??"উল্লেখ্য যে , 

 

এখানে উল্লেখ্য যে,যোহনের সুসমাচারে "আরেকজন সাহায্যকারী "-(১৪:১৬)-এখানে গ্রিক লিপির শব্দ Παράκλητον ( Paraklēton) ব্যবহার করা হয়েছে যার অনুবাদ Advocate,helper ,Comforter,Interceder,,,,,.!আর বাংলাতে সহায় সাহায্যকারী,শান্তিদাতা,উকিল,পক্ষ সমর্থনকারী,মধ্যস্থতা উকিল ইত্যাদি অর্থে অনুবাদ করা হয়েছে। paracletus শব্দের কয়েকটি অনুবাদ করা হয়েছে যেমন সাহায্যকারী,সহায়,ইত্যাদি।Paraclete শব্দ টি এসেছে গ্রিক শব্দ παράκλητος (paráklētos) থেকে।যাই হোক যদি প্রশংসিত অর্থ ধরে নিই তাহলেও সেটা নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কেননা এখানে যীশু একজন সাহায্যকারী ব্যক্তির সম্পর্কে বলেছেন ।"আমি পিতার কাছে চাইব আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকার জন্য একজন পেরিক্লিতস (প্রশংসিত) ব্যক্তি কে পাঠিয়ে দিবেন[এখানে সাহায্যকারী বলতে প্রশংসিত ব্যক্তির সম্পর্কে বলা হয়েছে] । তুলনামূলক ভাবে এখানে "আর একজন "-শব্দ দ্বারা কখনোই পবিত্র আত্মা তথা পাক রুহ কে বোঝায় না। কেননা "আর" শব্দ প্রমাণ করে যে এই "সাহায্যকারীর" পূর্বে আরো "সাহায্যকারী " ছিলেন। আরো ভালো করে বলি নিশ্চয়ই পূর্বে আরো সাহায্যকারী" ছিলেন, আর একজন সাহায্যকারী"-এর পূর্বে আগেকার মানুষরুপী সাহায্যকারী" থাকতে হবে। অন্যথায় "আর"শব্দ বলা হয়েছে কেন?কারণ #আর" শব্দ বলা হয়েছে কেন?কারণ "আর" শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে,এই সাহায্যকারী "হবেন পূর্বের মানুষরুপী "সাহায্যকারী"-দের মতোই। "আর" শব্দ দিয়ে আরো বোঝানো হয়েছে যে,যীশু তথা ঈসা আঃ নিজেও একজন "সাহায্যকারী ছিলেন। (১ ইউহান্না ২:১)।

 

যোহনের সুসমাচারে গ্রিক শব্দ প্যারাক্লীতস (Paracletos)এর অর্থ (প্রশংসিত জন অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ) যীশুর পরবর্তী একজন সত্য নবী ও রাসূল।এছাড়াও গ্রিক শব্দ প্যারাক্লীতস (Paracletos)এর অনুবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন ভাবে,বিভিন্ন শব্দ দ্বারা ।যেমন:সত্যের আত্মা (Spirit of Truth), সহায় সাহায্যকারী (helper) , শান্তিদাতা (Comforter), উকিল (Advocate, Counselor) ,পক্ষ সমর্থনকারী,মধ্যস্থতা উকিল (Interceder)  ইত্যাদি। সুতরাং যীশু কৃতক বিঘোষিত ভাবী নবীর অবিকল নামটি আসলে কারো জানা ছিল না। অথচ এই নামটি আল্লাহ্ তাঁর একমাত্র প্রমান্য গ্রন্থ কোরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন। ভবিষ্যত নবীর প্রকৃত নাম ছিল আহমাদ।আয়াত টাও উদ্ধৃতি দিলাম 

 

 وَ اِذۡ قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ  مَرۡیَمَ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ  اِنِّیۡ  رَسُوۡلُ  اللّٰہِ  اِلَیۡکُمۡ مُّصَدِّقًا  لِّمَا بَیۡنَ  یَدَیَّ  مِنَ  التَّوۡرٰىۃِ وَ مُبَشِّرًۢا  بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ  مِنۡۢ  بَعۡدِی اسۡمُہٗۤ  اَحۡمَدُ ؕ فَلَمَّا جَآءَہُمۡ  بِالۡبَیِّنٰتِ قَالُوۡا ہٰذَا  سِحۡرٌ  مُّبِیۡنٌ ﴿۶﴾

 

"স্মরণ কর, মারইয়াম তনয় ঈসা বললঃ হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি উহার সমর্থক এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা। পরে সে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের নিকট এলো তখন তারা বলতে লাগলঃ এটাতো এক স্পষ্ট যাদু।(পবিত্র কোরআন ৬১:৬)।

 

আর আহমাদ মুহাম্মদ সাঃ এর দ্বিতীয় নাম। উপরোল্লিখিত শব্দগুলোর প্রায় সবই হয় মুহাম্মদ সাঃ এর বৈশিষ্ট্য,না হয় পদবী বা উপাধি  আর না হয় গুনগুন। যেমনঃ 

 

(ক) সত্যের আত্মা বা সত্যময় আত্মা (Spirit of Truth),আরবীতে ছিল আল-আমিন ,যার অর্থ সত্যবাদী। আর এটা ছিল মুহাম্মদ সাঃ এর বাল্যকালের উপাধি।কুরাইশরা তাঁকে এই নামে ডাকতো । দুনিয়াতে তাঁর মতো সত্যময় আর কেউই ছিল না এবং কি কেউ হতেও পারবে না আর।

 

(খ)সহায়,শান্তিদাতা,রহমতস্বরুপ বা করুনার মূর্তপ্রতীক (Comforter) অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ এর সাথে সম্পর্কিত। আর এই সহায় যখন আসলেন তখন আল্লাহ্ তাঁকে উদ্দেশ্য করে তাঁর প্রশংসায় বললেন:-"আমি আপনাকে [ হে মুহাম্মদ] বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।(কোরআন ২১: ১০৭)।

 

(গ)মধ্যস্থতাকারী বা পক্ষ সমর্থনকারী (Interceder):কিয়ামতের দিন মুহাম্মদ সাঃ সমস্ত মানুষের পক্ষ হতে বিচার শুরু করার জন্য আল্লাহ্ পাকের দরবারে সুপারিশ করবেন। তাঁর মধ্যস্থতায় বিচার শুরু হবে। তাঁর এই সুপারিশের দ্বারা দুনিয়ার আদি-অন্তের সমস্ত মানুষই লাভবান হবে।(বুখারি শরিফ,কিতাবুল তাওহিদ,৯ নং অধ্যায়,হাদিস নং:৫০৭)। দুই হাজারেরও বেশি ভাষা ও উপভাষায় সুসমাচারগুলোকে অনুবাদ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। অতএব খ্রিস্টান অনুবাদকারীগণ নিশ্চয়ই  প্যারাক্লীট (Paraclete) শব্দের আরো দুই হাজার অনুবাদ আবিষ্কার করেছেন।অর্থাৎ শুধু একজন প্রার্থী -"সহায় "- এর  আরো দুই হাজার ভাষায় আরো দুই হাজার নাম দেওয়া হয়েছে। যদিও মানুষের নামকে অনুবাদ করার কোন অধিকার কারো নেই। তাহলে এই প্রার্থী কে চিনবার উপায় কি?আর এর প্রকৃত নামই বা কি?তা জানতে হলে আমাদের কে যেতে হবে সেই গোড়ার দিকে ,যীশুর মাতৃভাষা আরামায়িকে। এই ভাষার মূল বাইবেল আজ দুনিয়ার কোথাও নেই,কিন্তু পরবর্তী মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে তাঁর প্রকৃত নাম উল্লেখ আছে।আর তা হলো "আহাম্মাদ "।শিক্ষিত খ্রিস্টানদের জিজ্ঞেস করে দেখুন   এই -"আর একজন সাহায্যকারী "-কে?তিনি বলবেন- "সাহায্যকারী " মুহাম্মদ নন বরং "পাক-রুহ বা পবিত্র আত্মা "(ইউহান্না ১৪:২৬): 

 

দুই হাজার বছর যাবত পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজন হওয়ার পরও যতটুকু সত্যের ক্ষীণ আলো বাইবেলে টিঁকে আছে তাতেও প্রমাণ হয় যে যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত সেই সাহায্যকারী ও শান্তিদাতা একমাত্র মুহাম্মদ সাঃ ছাড়া আর কেউ নন। আমরা মুসলিমগণ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি ঈসা আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী  একমাত্র মুহাম্মদ সাঃ এর ক্ষেত্রে অক্ষরেঅক্ষরে প্রযোজ্য। ইউহান্না (১৪:১৫) এবং কোরআন (৬১:৬) এর সাথে হুবহু মিল রয়েছে।

                   

(৪)"উক্ত সাহায্যকারী" খ্রিস্টানদের তথাকথিত পবিত্র আত্মা নয়?

\___________________________________/

●বাইবেল বলছে (ক) ইউহান্না (১৫:২৬) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-"সেই সাহায্যকারীকে আমি পিতার নিকট থেকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই 'আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন'।ইনিই সত্যের রুহ (Spirit of Truth)........

 

(খ) ইউহান্না (১৬:৭-৮) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-"তবুও আমি তোমাদের সত্য কথা বলছি যে,আমার যাওয়া তোমাদের জন্য ভালো, কারণ আমি না গেলে 'সেই সাহায্যকারী '(প্যারাক্লীট) তোমাদের নিকট আসবেন না।কিন্তু আমি যদি চলে যাই তাঁকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব। আর তিনি এসে পাপের সম্বন্ধে,ধার্মিকতার সম্বন্ধে এবং বিচারের সম্বন্ধে জগতকে দোষী সাবস্ত্য করবেন।"

 

🚩অধিকাংশ খ্রিস্টানই বলতে চান,এই সত্যের আত্মা হলো পবিত্র আত্মা।

🚩এবার,এই সত্যের আত্মা যে পবিত্র আত্মা নয়,বরং একজন মানুষ ও একজন নবি (ভাববাদী)তা প্রমাণ করবো।

 

উপরোল্লিখিত দুটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ভবিষ্যত সম্পর্কে কিন্ত অতীত নয়।

।ইঞ্জিল (?) এর উপরোল্লিখিত ২টি উদ্ধৃতির মধ্যে "সেই সাহায্যকারীর " মধ্যে গুরত্বের সাথে একটা কমন বৈশিষ্ট্য/শর্ত থাকতে হবে:-

i) যীশু তথা ঈসা আঃ না গেলে "সেই সাহায্যকারী "-বিশ্বাসীদের নিকট আসবে না

ii) আর "উক্ত সাহায্যকারী"- না আসলে পাপের সম্বন্ধে,ধার্মিকতার সম্বন্ধে এবং বিচারের সম্বন্ধে জগতকে দোষী সাবস্ত্য করতে পারবেন না।"

 

এখানে( ইউহান্না/যোহন ১৬:৭)-এ যীশুর স্পষ্ট কথা হলো "-তিনি না গেলে সেই সাহায্যকারী পৃথিবীতে আসবেন না। "এটা একটা শর্ত হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ "সেই সাহায্যকারী" কে পৃথিবীতে আগমন করতে হলে অবশ্যই যীশুকে পৃথিবীর বুক থেকে চলে যেতে হবে অন্যথায় নয়।তার মানে এখানে সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে সত্যের আত্মা যদি পবিত্র আত্মাই (খ্রিস্টানদের দাবিকৃত পবিত্র আত্মা) হয়,তবে তাকেও যীশু পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থায় আসা যাবেনা।আর এই কথাটি যীশু সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর কথার মাধ্যমে যা আমরা (যোহন ১৬:৭) এ দেখেছি।

 

আর আমরা বাইবেল পাঠ করলে জানতে পারি যে যীশুর জন্মের আগে পবিত্র আত্মা পৃথিবীতে ছিল (মথি ১:১৮; লুক ১:৪১; (এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে ২৬-২৭;) মার্ক ১:৯-১০; ১২:৩৬)।এখানে ভার্সগুলোর উদ্ধৃতি গুলো দিয়ে দিলাম পাঠকের সুবিধার্থে।

 

মথি লিখেছেন:

18. যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এই ভাবে হয়েছিল। যখন তাঁর মা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগদত্তা হলে, তাঁদের সহবাসের আগে জানা গেল, তিনি গর্ভবতী হয়েছেন পবিত্র আত্মার মাধ্যমে।"(মথি ১:১৮)

 

যীশু যখন মাতৃগর্ভে,তখনই পবিত্র আত্মা এলিজাবেথ নামক এক মহিলার দেহে এসেছিলো।আর এজন্য লুক লিখেছেন:

41. যখন ইলীশাবেৎ মরিয়মের শুভেচ্ছা শুনলেন, তখনই তাঁর গর্ভের শিশুটি নেচে উঠল ও ইলীশাবেৎ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন "(লুক ১:৪১)

 

এছাড়াও দেখা যায়, যীশুর জর্ডান নদীতে বাপ্তাইজ হওয়ার পরেও পবিত্র আত্মা সেখানে এসেছিলো।মার্ক লিখেছেন:-

9. সেদিনের যীশু গালীলের নাসরৎ শহর থেকে এসে যোহনের কাছে যর্দ্দন নদীতে বাপ্তিষ্ম নিলেন।

10. আর সঙ্গে সঙ্গেই জলের মধ্য থেকে উঠবার দিন দেখলেন, আকাশ দুইভাগ হল এবং পবিত্র আত্মা পায়রার মত তাঁর ওপরে নেমে আসছেন।"(মার্ক ১:৯-১০)

 

এছাড়া দাউদ আঃ পবিত্র আত্মার প্রেরণাতে কথা বলেন।আর এ সম্পর্কে মার্ক লিখেছেন:

36. কারণ দায়ূদ নিজে পবিত্র আত্মার প্রেরণাতেই তিনি এই কথা বললেন....."(মার্ক ১২:৩৬)

 

তাহলে উপরোল্লিখিত যথার্থ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুষ্ঠভাবে বোঝা যায় যে উক্ত সাহায্যকারী খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা নয় বরং নবী মুহাম্মদ সাঃ ।কেননা না,পবিত্র আত্মা শুধুই একটা "আত্মা" কিন্তু অপরদিকে সত্যের আত্মাকে একজন "ব্যক্তি [মানুষ]" হিসেবে চিহ্নিত করে গেছেন যীশু।আর যদি খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা হয় তাহলে আমরা বলব,পবিত্র আত্মা (ইউহান্না/যোহন ১৬:৭) এর শর্ত পূরণ করেনি।কাজেই,এই সত্যের আত্মা যে খ্রিস্টানদের দাবিকৃত পবিত্র আত্মা নয়,তা প্রমাণিত।এরপরেও যদি অজ্ঞ খ্রিস্টানরা কেবলমাত্র দাবি করেই যায়,আর যদি পবিত্র আত্মা হয় তাহলে বলতে হবে (ইউহান্না ১৬:৭)-পদ ভুল। কেননা পবিত্র আত্মা যীশুর জন্মের আগে ছিল কিন্তু যীশু বলেছেন তাঁর না যাওয়া পর্যন্ত উক্ত সাহায্যকারী আসবেন না। এখন যে কোন একটি মেনে নিতে হবে যে যীশুর উক্ত সাহায্যকারী তথাকথিত পবিত্র আত্মা নয় বরং নবী মুহাম্মদ সাঃ?আর নবী মুহাম্মদ সাঃ কে না মানলে বুঝতে হবে এটা যীশুর ভুল ভবিষ্যদ্বাণী।এবার খ্রিস্টানরা বলতে পারেন,মুহাম্মদ সাঃ কি কোন আত্মা?

 

৫)মুহাম্মদ সাঃ কিভাবে "সত্যের আত্মা" হলো ?

\___________________________________/

●অনেক খ্রিস্টানগণ বলেন,হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)কি কোনো আত্মা?তাদের কথার জবাব আমি বাইবেল থেকেই দেবো।খোদ বাইবেলেই মানুষকে "আত্মা" বলা হয়েছে।এই "সত্যের আত্মা" যে মানুষ এবং একজন ভাববাদী,এটা প্রমাণ করতে বাইবেলের ভার্সটাই যথেষ্ট।

 

1. প্রিয় সন্তানেরা,তোমরা সব আত্মাকে বিশ্বাস করো না, কিন্তু সব আত্মাকে পরীক্ষা করে দেখ তারা ঈশ্বর থেকে এসেছে কিনা, কারণ জগতে অনেক ভণ্ড ভাববাদীরা বের হয়েছে। 

2. তোমরা ঈশ্বরের আত্মাকে এই প্রকারে চিনতে পার যে, প্রত্যেক আত্মা স্বীকার করে যে ঈশ্বর থেকেই যীশু খ্রীষ্ট দেহ রূপে [অর্থাৎ যীশু ইশ্বর নয়,অন্যান্যদের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ] এসেছিলেন।"(১ যোহন ৪:১-২)

 

প্রিয় পাঠকগণ,এখানে একদম সুস্পষ্টভাবে মানুষ ও ভাববাদী অর্থে "আত্মা" শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে।এটা থেকে বোঝা যায় যে,সত্যের আত্মাও একজন মানুষ ও ভাববাদী।যীশু কেবল রূপক অর্থে "সত্যের আত্মা" শব্দটা ব্যবহার করেছেন।পাশাপাশি এটাও বোঝা যায় যীশুর পরেও আরো একজন ভাববাদী আছে।

 

🚩এবার চলুন দেখে আসি,এই একই অধ্যায়ের একই পদে সত্য ভাববাদীকে চেনার  চিহ্ন বলে দেয়া হয়েছে যা,আমি আপনাদের সুবিধার জন্য আবার পুরো পদটা উদ্ধৃত করছিঃ-

 

3. এবং যে আত্মা যীশুকে স্বীকার করে না সে ঈশ্বরের থেকে নয়।"(১ যোহন ৪:৩)

 

অর্থাৎ,সত্যের আত্মা যে একজন ভাববাদী,এটা পরিষ্কার।আর অনেকেই নিজেকে ভাববাদী দাবি করবে,কিন্তু তাদের সবাই সত্য ভাববাদী কিনা,এটা যাচাই করে দেখতে বলেছে এই ভার্সে।এবার সত্য নবি/ভাববাদী হতে গেলে তাঁকে  যীশুকেও নবি বলে স্বীকার করতে হবে এবং যীশু খ্রিষ্ট যে রক্ত মাংসের দেহবিশিষ্ট একজন মানুষ ছিলেন এটাও স্বীকার করতে হবে।আলহামদুলিল্লাহ,এই দুটো শর্তই মুহাম্মদ(স)পুরোপুরিভাবে পালন করেছেন।তিনি যীশুকে একজন নবি হিসেবে মানতেন,এবং যীশুও যে আমাদেরই মতো একজন রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন,এটাও মানতেন।পাশাপাশি যোহন ১৬ঃ১৪তে যীশু বলেছেন,"তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন"।যীশু খ্রিষ্টের পর একমাত্র মুহাম্মদ(স)এর দ্বারাই ঈসা(আ)মহিমান্বিত হয়েছেন।কারণ মুহাম্মদ(স) ব্যাপক বৃহত্তর পরিসরে প্রচারকাজ চালিয়েছিলেন যা যীশুর শিষ্যরা পর্যন্ত করতে পারেনি।আর দ্বীন ইসলামের একটি অন্যতম স্তম্ভ হলো ঈসা(আ)সহ পূর্ববর্তী সকল নবিদের উপর ইমান আনা এবং তাঁদেরকে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও অনুসরণ করা।কোনো ব্যক্তিই মুসলিম হতে পারবেনা যদি সে ঈসা(আ)কে আল্লাহর রাসুল হিসেবে বিশ্বাস না করে এবং তাঁকে সম্মান না করে।কাজেই মুহাম্মদ(স)এর দ্বারাই ঈসা(আ)সারা পৃথিবীতে মহিমান্বিত হয়েছেন।

 

আবার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে "সত্য নবী"-কে চেনার বিশেষ কিছু চিহ্ন বলে দেওয়া হয়েছে।আসুন আমরা সেগুলো রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি হিসেবে প্রমাণগুলো দেখে নিই:

 

[ ● ] কে সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ এর নামে বাণী শুরু করবেন?

\____________________________________/

ঈশ্বর সদাপ্রভু মুসা আঃ কে বললেন:-"আর আমার নামে তিনি আমার বাণী প্রচার করবেন। "আর নবী মুহাম্মদ সাঃ কার নামে আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন?আল্লাহর নামে।প্রমাণ দেখলে কোরআনের ১১৪ টা সূরার ১১৩ টা সূরা পড়ুন।সূরা আত তাওবা ছাড়া সকল সূরার শুরুতেই মহান আল্লাহর নামে শুরু হয়েছে। 

 

"কিন্ত আমি যে বাক্য বলতে আজ্ঞা করিনি,আমার নামে যে কোন ভাববাদী [নবী] দুঃসাহসপূর্বক তা বলে,কিম্বা অন্য দেবতার [ঈশ্বর] নামে যে কেহ কথা বলে সেই ভাববাদী কে মারতে হবে।"(দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২০)

 

অতঃপর কোরআনের এই আয়াতটিও পাঠ করুন এবং বলুন এতদুভয় বিষয়বস্তু কী একই দিকের দুটি চিত্র নয় কী,যাতে বলা হয়েছে সূরা আল-হাক্কাহ (الحآقّة), আয়াত: ৪৪-৪৭

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ ٱلْأَقَاوِيلِلَأَخَذْنَا مِنْهُ بِٱلْيَمِينِثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ ٱلْوَتِينَفَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَٰجِزِينَ

অর্থঃ সে [মুহাম্মদ সাঃ] যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম অতঃপর তাঁর গ্রিবা কেটে দিতাম (অর্থাৎ হত্যা করতাম)।তখন তোমাদের কেউই আমার কবল থেকে তাঁকে রক্ষা করতে পারত না। 

 

(বিঃদ্রঃ প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেছেন। মিথ্যা ভাববাদীর জন্য মারার যে ওয়াদা করা হয়েছে তা তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।আর তিনি আল্লাহর আজ্ঞাবহ [কোরআন] সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহর নামেই বলেছেন।কোরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে ১১৩ টিই শুরু হয়েছে মহান আল্লাহর নামেই :-"পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ্ পাকের নামে শুরু করলাম। "

 

৩)"আর তুমি যদি মনে মনে বল,"সদাপ্রভু যে বাক্য বলেননি,তা আমরা কী প্রকারে জানব?[তবে শুনো,] কোন ভাববাদী সদাপ্রভুর নামে কোন কথা কহিলে যদি সেই বাক্য পরে সিদ্ধ না হয় ও তার ফল উপস্থিত না হয়,তবে সেই বাক্য সদাপ্রভু বলেননি (অর্থাৎ সেই ভাববাদী মিথ্যা ভাববাদী/ভন্ড নবী] .......!"(দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২০-২২)।

 

এখানে লক্ষণীয়:কোরআনে যা বলা হয়েছে সবই সত্য/সিদ্ধ হয়েছে,প্রমাণিত হয়েছে এবং কখনোই কিছু মিথ্যা প্রমাণিত হয় নাই।মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণীর বিপরীতে সবই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।এ থেকেই বাইবেলের আলোকে প্রমাণিত নবী মুহাম্মদ সাঃ হলেন সত্য ভাববাদী।এছাড়া বাইবেলের মধ্যে যিরমিয় নবী তথা ভাববাদী বলেছেন:-

 

"কিন্তু যে ভাব্বাদী শান্তির ভাব্বাণী প্রচার করে, সেই ভাব্বাণীগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে,সত্যিই সেগুলো প্রভুর পাঠানো কিনা। সত্যি হলেই বোঝা যাবে যে সেই ভাব্বাদী সত্যি সত্যিই প্রভুর দ্বারা প্রেরিত।যদি কোন ভাব্বাদীর বাণী সঠিক হয় তাহলে মানুষকে বুঝতে হবে ঐ ভাব্বাদী প্রভুর দ্বারা প্রেরিত।"(যিরমিয় ২৮:৯)

 

আর নবী মুহাম্মদ সাঃ ছিলেন একজন সত্যিকারের নবী। কেননা নবী মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী শান্তিপূর্ণ (অর্থাৎ তিনি ইসলাম তথা শান্তির বাণী প্রচার করেছেন) এবং তিনি সফল হয়েছেন।

 

এছাড়া আরো বলা হয়েছে:-ভ্রান্ত ভাব্বাদীরা মিথ্যা কথা বলে।কিন্তু প্রভু তাদের দেখিয়ে দেন যে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা।তিনি যাদুকরদের হত বুদ্ধি করে দেন। জ্ঞানী লোকদেরও তিনি বিভ্রান্ত করে দেন।যদিও তারা ভাবে তারা অনেক কিছু জানে কিন্তু প্রভু তাদের বোকার মতো করে দেবেন"(ইসাইয়া ৪৪:২৫)

 

এখানে বলা হয়েছে,মিথ্যা ভাববাদীরা (যে সদাপ্রভু ঈশ্বরের থেকে প্রেরিত নয়) মিথ্যা কথা বলে।"আর সমগ্র কোরআন ও সহীহ হাদিস এবং ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে,পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সাইয়্যেদুল মুরসালীন তথা হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাঁর ৬৩ বছরের জীবনে একটা মিথ্যা কথাও বলেননি।এবং কী তাঁর কোন শত্রু পর্যন্ত তাঁকে বলতে পারেনি যে:তুমি (মুহাম্মদ সাঃ) মিথ্যা বল।"বরং তাঁর শত্রুরাও তাঁকে আল-আমিন বলে ডাকত।আর নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও মিথ্যা বলে প্রমানিত হয় নাই।আর উপরের ভবিষ্যদ্বাণী (ইসাইয়া ৪৪:২৫) নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি কারণ তিনি ছিলেন সত্য ভাববাদী। 

 

এরপরের ভার্সে বলা হয়েছে:-

26 আমি, সদাপ্রভু! আমার দাসের কথা সফল হতে দিই আর আমার দূতদের বলা কথা পূর্ণ করি...(যিশাইয় ৪৪:২৬)

 

এখানে দাস বলতে মহান আল্লাহর প্রেরিত ভাববাদী/নবীদের বোঝানো হয়েছে যাঁদের কাছে আল্লাহ্ দূতের (ওহীবাহক/সংবাদবাহক দূত)মাধ্যমে কথা বলতেন বা তাঁর কথা জানিয়ে দিতেন।আর হযরত মুহাম্মদ সাঃ,সংবাদ বাহক দূত হযরত জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে জানার পর যা বলেছেন তা সফল হয়েছে। আর নবী মুহাম্মদ সাঃ সত্য ভাববাদী ছিলেন বলেই সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা তাঁর কথাকে ব্যর্থ হতে দেননি। সুতরাং বাইবেলের আলোকে নবী মুহাম্মদ সাঃ হলেন সত্য ভাববাদী যা প্রমাণিত।

#সিদ্ধান্তঃ-উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়,যীশুর ভবিষ্যতবাণীকৃত সেই "সত্যের আত্মা" হলেন সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবি "হযরত মুহাম্মদ(স)"।

 

৬)"পাক-রুহের"-[জিব্রাইল আঃ/গাব্রিয়েল] মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্য আছে?

\___________________________________/

●১)"পাক-রুহ"-তো একজনই ,তাঁর পূর্বেও কেউ নেই,পরেও কেউ নেই;

২)"পাক-রুহ"-[গাব্রিয়েল/জিব্রাইল আঃ] অশরীরী আত্মা ,কোন মানুষের মতোই নন;

৩)ওহী আনার পর শেষ হবার পর "পাক-রুহ"[গাব্রিয়েল/জিব্রাইল আঃ] স্বর্গে চলে গেছেন;

৪)"পাক-রুহ"সত্যের আত্মাও নন আবার মিথ্যার আত্মাও নন অর্থাৎ অশরীরী;

৫)"পাক-রুহ"-কি শিক্ষা দিয়েছেন ?বরং শয়তান খ্রিস্টানদের অন্তরে কুশিক্ষা শিক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ কুমন্ত্রণা দেয়;

৬)"পাক-রুহ"-কোন শিক্ষা দেয় নাই;

৭)"পাক-রুহ"-যীশুতথা ঈসা আঃ এর বিষয়ে কি সাক্ষ্য দিয়েছে?কিছুই না।

৮)তিনি তো যীশু তথা ঈসা আঃ এর সঙ্গেই ছিলেন।পরে আসার কোন মানে হয় না। 

৯)"পাক-রুহ"-কি সম্পর্কে নিন্দা করেছেন?কি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন?কিছুই না।

১০)"পাক-রুহ"-[গাব্রিয়েল/জিব্রাইল আঃ] যা বলার,তা সঙ্গে সঙ্গে বলে যান,সে বাকি রেখে যান না বা তা খেয়ানত করে পরে বলেন না।

১১) একটি দেখান তো "পাক-রুহ"-কোন সত্যে নিয়ে গেছেন?

১২)"পাক-রুহ"-কি শুনে কি বলেছেন?তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় নেই,শোনা ও বলা তাঁর ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়। 

১৩)"পাক-রুহ"-কি আগামী ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছে?কিছুই না। 

১৪)"পাক-রুহ"-যীশু তথা ঈসা আঃ কে কি মহিমান্বিত করেছেন?কিছুই না।

 

আমি সত্য জানাইলাম।আর জ্ঞানীদের কাজ সত্য কে গ্রহণ করে নেওয়া। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে কে সঠিক পথে কবুল করুন। আমীন