খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:
(বিষয়:"যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে ?পবিত্র আত্মা নাকি শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাঃ?
আলোচনা:কোরআন ও বাইবেল থেকে বিবাহ ও মদ্যপান প্রসঙ্গে .....!
\________________________________________/
সমাধান:
প্রত্যেক সমাজেই ধনী এমন কিছু পুরুষ আছে যারা দ্বিতীয় স্ত্রীর দায়িত্ব ও বোঝা বহন করতে অসুবিধা মনে করে না।আর এমন কিছু নারী আছে যারা উপপত্নী বা বারবণিতা হওয়ার চেয়ে সতীন হওয়া উৎকৃষ্ট মনে করে।পুরো স্বামী না পেলেও আধা স্বামী পেয়েও খুশি থাকে তারা।এমন নারী-পুরুষের স্বাভাবিক ও সামাজিক উপায়ে বৈধভাবে দ্বিতীয় বিবাহে বাঁধা দিয়ে মানুষের রচিত খ্রিস্টধর্ম অবিচার করেছে।সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা ই অসীম জ্ঞানের অধিকারী,তিনিই সর্বাপেক্ষা ভালো জানেন তাঁর সৃষ্ট মানুষের জন্য কোন প্রথা মঙ্গলজনক।মানুষের প্রকৃতির জন্য যা দরকার তা পূর্ণ করার জন্য ইসলাম পূর্বে থেকেই একের অধিক বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে।প্রায় অধিকাংশ নবীই একের অধিক বিবাহ করেছিলেন।যেমন হযরত ইব্রাহিম আঃ,হযরত ইয়াকুব আঃ,হযরত মুসা আঃ,দাউদ আঃ,সুলাইমান আঃ,আইয়ুব আঃ ।সত্যময় আত্মা মুহাম্মদ সাঃ এর নীতিমালা কতই না সুন্দর ,তাঁর দেওয়া সমাধান কতই না যুক্তিপূর্ণ। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে,সামর্থ্যের ভিত্তিতে শর্ত সাপেক্ষে তিনি একের অধিক বিবাহ করার অনুমতি দিয়ে বাড়তি নারীদের বিবাহ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্ পবিত্র আল কোরআনে বলেছেন সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৩
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا۟ فِى ٱلْيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُوا۟ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثْنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ فَوَٰحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُكُمْ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُوا۟
অর্থঃ আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।
পৃথিবীর বুকে একমাত্র এই পবিত্র আল কোরআনই বলেছে -"মাত্র একজনকে বিবাহ কর।" বিধবা বিবাহে উৎসাহ দিয়ে তিনি [নবী মুহাম্মদ সাঃ] নারীত্বের সম্মান বাড়িয়েছেন। শুধু মুখে বলেই তিনি উৎসাহ দেননি,বাস্তবে প্রমাণ করেও দেখিয়েছেন।সত্যময় আত্মা আল-আমীনের প্রথম বিবাহ হয়েছিল ৪০ বছর বয়স্কা অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ সাঃ অপেক্ষা ১৫ বছর বেশি বয়স্কা একজন বিধবা রমনী মা খাদিজা রাঃ এর সাথে।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে,প্রয়োজন বোধে তিনি তালাকের ব্যবস্থা রেখেছেন। এভাবে তিনি আত্মহত্যা,স্ত্রী হত্যা,খুন-খারাবী ও নানা অঘটন থেকে সমাজকে বাঁচিয়েছেন।সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা এরশাদ করেছেন সূরা (১৭) বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ৩২
وَلَا تَقْرَبُوا۟ ٱلزِّنَىٰٓ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةً وَسَآءَ سَبِيلًا
অর্থঃ আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।"
[নোট:ইসলামে বহুবিবাহ এবং বাস্তবসম্মত যৌক্তিক কারণ:
https://www.facebook.com/104106391067326/posts/202904277854203/
বিবাহ সাদী করার এত সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও অবিচার,ব্যভিচার করে তবে তার শাস্তি বড় মারাত্মক। "ব্যাভিচারের শাস্তি কোন কোন অবস্থাতে একশত বেত্রাঘাত ও কোন কোন অবস্থায় পাথর মেরে হত্যা করা। "
৩)মানব অধিকারঃ-তিনি দাস-দাসীর প্রথার উচ্ছেদ করে দাসত্বের নিগূঢ় হতে মানবজাতি (বন্দিদিগ) কে সর্বপ্রথম মুক্ত করে দিলেন। তিনি সতীদাহ প্রথার অভিশাপ থেকে নারী জাতিকে মুক্ত করে দিলেন।
৪)মদ পানঃ-বাইবেল বলছে:-"কে হায় হায় বলে?কে হাহাকার করে?কে বিবাদ করে?কে বিলাপ করে?কে অকারণেই আঘাত পায়?কাহার চক্ষু লাল হয়?যারা দ্রাক্ষারস (Wine)-এর নিকটে বহুকাল থাকে,যারা সুরার সন্ধানে যায়?দ্রাক্ষারসের প্রতি দৃষ্টি কর না..............যদিও তা চকচক করে, যদিও তা সহজে গলায় নেমে যায়,অবশেষে তা সর্পের ন্যায় কামড়ায়,বিষধরের ন্যায় দংশন করে।" (হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩২)। "ব্যভিচার,মদ্য ও নতুন দ্রাক্ষারস (New Wine)-এ সকল বুদ্ধি হরণ করে। "(হোসেয়া ৪:১১)।
মদ অপবিত্র বস্তুর মধ্যে একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে:মদ পানের বিষফল:অনেক কঠিন কঠিন অসুখ হয়। যা "সর্পের ন্যায় কামড়ায়,বিষধরের ন্যায় দংশন করে,বুদ্ধি হরণ করে"-এমন একটি ধ্বংসশীল পানীয় থেকে তার অনুসারীদের বাঁচানোর জন্য পাক-রুহ কী সমাধান দিল?কিছুই না।বরং কুবুদ্ধি দিল।পাক-রুহের (?) পরিচালনায় পৌল তার শিষ্য তীমথিয়কে মদ পান করার জন্য উপদেশ দিল ,এই বলে:-"তোমার প্রায়ই অসুখ হয় বলে হজমের জন্য অল্প অল্প করে মদ পান কর,কেবল পানি পান কর না। "(১ তীমথিয় ৫:২৩)।
মদ্যপায়ী তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে,তার স্বাস্থ্য নষ্ট হয়,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর অশান্তি আসে ,সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মদ্যপায়ী মদ পান করার ফলে মা,মেয়ে,স্ত্রীর কোন পার্থক্য করতে পারে না সহজে।এ সময় এই নরপশুর নিকট সবাই সমান। সম্ভবত:মদের এত ছড়াছড়ির কারণেই আমেরিকাতে ১৩% লোক এবং আফ্রিকাতে ৮%লোক নিজ মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে।ওদের কল্পিত পাক রুহের (?) পরিচালনায় :ঈসা (?) কান্না গ্রামে বিবাহভোজে ১৮ মন কড়া মদ তৈরী করে মদ পানে উৎসাহ দিলেন ।"(ইঞ্জিল শরিফ,ইউহান্না ২:৩-১১)।
যীশুর মতো একজন মহান নবী কিরূপে নিজের অনুসারীদেরকে এমন একটি ধ্বংসশীল পানীয় (মদ) পানে উৎসাহ দিতে পারেন?তবে কি ইঞ্জিল (সুসমাচার)-এর ঘটনা কি মিথ্যা?সুস্থ বিবেক বোধবুদ্ধি সম্পন্ন কোন ব্যক্তি কি বিশ্বাস করতে পারেন যে, যীশু তথা ঈসা আঃ (?) এর মতো মহান নবীর নবুয়তের কাজ শুরু হতে পারে সূচনারুপে এমন একটি অপবিত্র ও ধ্বংসশীল পানীয় তৈরির এই কার্যসিদ্ধি করে ।অথচ তাঁরই মতো আরেকজন নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ ১৪০০ বছর পূর্বে যখন সারা দুনিয়া মদ্যপানে লিপ্ত ছিল ,তখন তিনি মদের বিভীষিকাময় অপকারীতার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন,এর ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করলেন এবং মদ পানকারীকে দণ্ডনীয় অপরাধ ও শাস্তির যোগ্য সাবস্ত্য করেছেন।"
নারী হোক আর পুরুষ, মদ পান করলে তাকে ৮০ টি বেত্রাঘাত করতে হবে। "প্রিয় রাসূল সাঃ যে কোন মাদকদ্রব্য তৈরী করা এবং তা ব্যবহার করার সাথে জড়িত সকলকেই অভিশাপ দিয়েছেন:-"
১)যে তা তৈরি করে;
২) যে তা তৈরি করতে সাহায্য করে;
৩) যার জন্য তা তৈরি করা হয়;
৪) যে তা দান করে;
৫) যে তা পান করে;
৬) যে তা বিক্রি করে;
৭) যে তা ক্রয় করে;
৮) যে তার বিক্রয় মূল্য ভোগ করে;
৯) যে তা বহন করে;
১০)যার জন্য তা বহন করে আনা হয়। "(ইবনে মাজাহ,তিরমিজী ও মেশকাত শরিফ, দ্বিতীয় খন্ড,পৃষ্ঠা-৪১৫)।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ আরো বলেছেন:-"যে মাদকদ্রব্য বেশি পরিমাণে পান করলে নেশা হয়,তার অল্প মাত্রাও ব্যবহার করা হারাম।"জিমি স'গার্ড (Jemmy Swaggard) নামক আমেরিকান ধর্ম প্রচারক তাঁর -"অ্যালকোহল "- নামক পুস্তকে হিসাব দিয়েছেনঃ আমেরিকাতেই সমস্যা সৃষ্টি কারী মদ্যপায়ী মাতালের সংখ্যা "সাড়ে পাঁচ কোটি। "এই পরাশক্তি আমেরিকা সরকারের অর্থবল জাতির বুদ্ধিবল কাজে লাগিয়েও এর শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমে -"মদ তৈরী ও বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ "-আইন জারি করেও কৃতকার্য হতে পারল না। মদ্যপানের বিভীষিকাময় অপকারীতা সার্বজনীন। এমন ধ্বংসশীল পানীয় (মদ) আজ খ্রিস্টান জগতে পানির মতো ব্যবহৃত হচ্ছে অথচ পাক-রুহ কোন গির্জার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত এর রায় প্রদান করেনি,মদ পান বন্ধ করতে বলেনি ,অধিকন্তু মদ পানে উৎসাহ প্রদান করেছে (১ তীমথিয় ৫:২৩ ; হিতোপদেশ ৩১:৬,৭, যোহন ২:৩-১১ ইত্যাদি দ্রষ্টব্য)।
অথচ যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী নবী মুহাম্মদ সাঃ এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত একটি মাত্র পংক্তি ঘোষণা করার সাথে সাথে মদিনায় সমস্ত মদের পাত্র খালি করা হলো।অদ্যাবধিও দ্বিতীয়বার আর পূর্ণ করা হয় নাই।প্রিয় নবী-"মদ পানের বিভীষিকাময় অপকারীতা থেকে সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন।
মহান আল্লাহ্ পবিত্র আল কোরআনে বলেছেন:-"یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾
হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।
اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ ﴿۹۱﴾
শয়তানতো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে। সুতরাং এখনো কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা?(কোরআন ৫:৯০-৯১)