Are you sure?

বিবিধ »  রম্য গল্প

মুক্ত চিন্তার চোরাগলি

অধ্যবসায় কাকে বলে তা হাসান মাহমুদকে দেখলে বুঝাযেত। দির্ঘ্য আট বছর সাহিত্য চর্চা করেও কখনো একপলকের জন্যও সফলতার দেখা পায়নি সে, তবুও সাহিত্য চর্চা থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। সাহিত্যের পিছনে আঠার মতো লেগে থাকতে গিয়ে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে তাকে। দুইবারের প্রচেষ্টায় টেনেটুনে মাধ্যমিকে পাশ করলেও উচ্চ মাধ্যমিকএর দেয়াল আর টপকাতে পারেনি। কি রাত আর কি দিন, খেয়ে নাখেয়ে সাহিত্য নিয়েই মগ্ন থাকতো সারাক্ষণ।

আমি হাসান মাহমুদের লেখা কয়েকটি গল্প, কবিতা পড়েছিলাম। আসলে তার লেখনী শক্তি খুবএকটা উন্নত ছিল না। এটাই তার সফলতা না পাওয়ার অন্যতম কারণ। গল্পের শুরুটা ভালোই হতো, মাঝে অনেকটা আকর্ষণও তৈরি করতো কিন্তু শেষে গিয়ে তাল কেটে যেতো। অনেকটা তীরে এসে তরি ডুবার মতো অবস্থা।

তার লেখা একটা গল্পের কথা বলি, এটা ছিলো গোয়েন্দা কাহিনী। গল্পটা সুন্দর গুছিয়ে লেখা শুরু করেছিলো কিন্তু মাঝে মাঝে ঘটেছে লাইন থেকে পিছলে যাওয়ার মতো ঘটনা। গল্পের কয়েকটি লাইন ছিলো এমন - "হাটতে হাটতে একটি বড় মাঠের ধারে এসে থামলো গোয়েন্দা আদনান। মাঠের পাশে বড় একটা গাছ, গাছে উঠে ফল খেয়ে আদনান বুঝতে পারলো এটা আমগাছ! "

এটা কোনো কথা হলো?  একজন গোয়েন্দা নাকি গাছ দেখে, ফল দেখে বুঝতে পারেনা এটা কি গাছ! তাকে গাছে উঠে ফল ছিড়ে, খেয়ে বুঝতে হয় এটা আমগাছ। কাহিনী বর্ননা করতে গিয়ে বর্ণনাতীত বোকামি করে ফেলেছে এখানে।

গল্পের শেষটা বলি-

"রহস্যের কিনারা খুজে পেতে তরুন গোয়েন্দা আদনান দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌছালো। এবার পাহাড়ে উঠতে হবে, তবেই রহস্যের সমাধান হবে। খরখরে পাথুরে পথ পেরিয়ে, পাহাড়ি খাড়াই টপকিয়ে, ঝোপঝাড়, লতাপাতার বাধা অতিক্রম করে পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দেখে বিশাল বড় বড়, কালো কালো অনেক গুলো পিপড়া! "

হাহা, এতো বড়ো অভিযান শেষ করে খুজে পেলো কালো পিপড়া! এটা কোনো গল্পের সমাধান হলো? অতিমাত্রায় উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি করতে গিয়ে শেষে এসে গল্পের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

তার কবিতাও ছিলো খাপছাড়া। কবিতায় ছন্দ থাকতো কিন্তু কোন বিষয়বস্তু থাকতো না।

এসব কারনেই তার সফলতার ঝুলি ছিলো শুন্য।

আলোরণ সৃষ্টি করার জন্য হাসান মাহমুদ সাহিত্য নতুনত্বের আবির্ভাবও ঘটিয়েছিল বেশ কয়েকবার। তার সেইসব চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। 

হাসান মাহমুদ একদিন আমাকে বলে "সাহিত্যের নতুন এক শাখা আবিষ্কার করেছি। "

আমি বললাম "কি শাখা আবিষ্কার করেছো? "

"পরমানু কাব্য। " - বললো হাসান।

আমি বললাম "এটা আবার কেমন? "

সে ববলো "কবিতা যখন ক্ষুদ্র হয় তখন সেটাকে অনুকাব্য বলেে, তাহলে কবিতা যখন আরো ক্ষুদ্র হয় তখন তাকে নিশ্চই পরমানু কাব্য বলা যাবে? "

আমি বললাম "হ্যাঁ, বলা যাবে। "

তারপর তার লেখা একটা "পরমানু কাব্য " শুনতে চাইলাম।  আমাকে শুনালো-

"পেটে কষা?

খাও শসা। "

এই হলো তার পরমানু কাব্য। এটা কাব্য, নাকি উপদেশ, নাকি খনার বচন কিছুই বুঝতে পারলাম না। 

প্রথম প্রথম বিভন্ন পত্রিকায় গল্প কবিতা ছাপানোর জন্য অনেক দৌড়ঝাপ করেছে,  কোনো লাভ হয়নি। তারপর ব্লগে লেখালেখি করেছে, সেখানেও পাঠক শূন্য। এরপর ফেসবুকে লেখা পোস্ট করেছে , খুব বেশী হলে দশ থেকে বারোটা লাইক কমেন্ট পেতো, তার বেশিরভাগই আবার অটো লাইক আর বুট-কমেন্ট। তবুও সাহিত্যকে আকড়ে ধড়ে ছিলো বছরের পর বছর। 

এটা ছিলো তার অধ্যবসায়ের গল্প যা ব্যর্থতায় টইটম্বুর।

তার সফলতার গল্পও আছে। এখন সে সাহিত্যাঙ্গনে একজন সফল ব্যক্তিত্ব।

তার সফলতার পিছনে কিন্তু অধ্যবসায়ের কোনো ভূমিকা নেই, আছে ভিন্ন পথে লক্ষে পৌছনোর দৃষ্টান্ত। এবার খুলে বলি-

সাহিত্যের পথে পথে গড়াগড়ি খেতে খেতে আলীবাবা নামক একজন প্রগতিশীল লেখকের সাথে পরিচয় হয় হাসানএর। আলীবাবার আসল নাম আমি জানিনা, আলীবাবা নামেই সে পরিচিত। 

কোনো এক আশ্চর্য জাদুর প্রভাবে রাতারাতি অনেক পরিচিত হয়েগেছে আলীবাবা। তার কাছে সেই জাদুর কাঠির সন্ধান চায় হাসান। আলীবাবা বলে "এই জাদুর কাঠি পাওয়া যেমন সহজ আবার তেমনি কঠিন, যদি তুমি একটু আধুনিক হতে পারো তাহলেই এই জাদুর কাঠির নাগাল পাবে।" ওদিকে সফলতা পাওয়ার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি হাসান মাহমুদ। 

এরপর থেকে শুরু হয় বাকাঁ পথে হাসান মাহমুদের অগ্রযাত্রা। এই পথে তার পথনির্দেশক হয় আলীবাবা। বাংলায় এক প্রবাদ আছে "যেমন গাড়ি তেমন চালক "  এখানে হাসান মাহমুদ আর আলীবাবার ব্যপারটাও তেমন "যেমন উস্তাদ তেমন সাগরেদ। "

আলীবাবার প্রথম নির্দেশ ছিলো ফেসবুকে "হাসান মাহমুদ" নাম পরিবর্তন করে  "হাসান মেহমুদ" দেয়া। গুরুর কথামত তাই করলো হাসান কিন্তু এর উপকারিতা বা অপকারিতা কিছুই নজরে আসলো না। 

আলীবাবার সান্নিধ্যে থেকে ভালোই তালিম নিচ্ছে হাসান। দুইদিন পর আলীবাবার পক্ষ থেকে দ্বিতীয় নির্দেশনা পেলো সে। এবার আলীবাবা বলেছে ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করতে, লেখাটি কেমন হবে তাও আলীবাবা ঠিক করে দিয়েছে। আলীবাবার নির্দেশনা অনুযায়ী হাসান যেই লেখাটি পোস্ট করেছে তা ছিলো এমন -  " মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, এই মহাবিশ্ব কেউ সৃষ্টি করেনি। বিজ্ঞান বলে এক মহা বিষ্ফোরন বা বিগ ব্যাঙ্গ এর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। তারপর কোটি কোটি বছরের পরিবর্তনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব আজ এই অবস্থায় উপনীত হয়েছে। যদি কোনো সৃষ্টিকর্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতো তাহলে কোটি কোটি বছর সময় ব্যায় করতো না একবারেই কাঙ্খিত রূপে সৃষ্টি করতো। "

এই লেখাটা ফেসবুকে পোস্ট করার পর তুমুল আলোরণ সৃষ্টি হলো। সকলের আলোচনা-সমেলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হাসানএর এই স্টাটাস। এক দিনেই সহস্রাধিক কমেন্ট পেলো এই লেখাতে। ধার্মিক মানুষগুলো হাসানএর ঘোর বিরোধিতা শুরু করলো আর কিছু প্রগতিশীল লেখক হাসানএর ভূয়সী প্রসংশা করে তার পাশে দাড়ালো। একটি ফেসবুক স্টাটাসের মাধ্যমে বেশ পরিচিতি লাভ করলো হাসান মেহমুদ। 

কয়েকদিন পর হাসান আরএকটি লেখা পোস্ট করলো ইসলামে নারীর পর্দার বিরুদ্ধে। সেই লেখাতে মহানবীকে কটাক্ষ করেও কিছু কথা লিখেছিলো। তারপর শুরু হলো হুলুস্থুল কান্ড। সারাদেশ হাসান মাহমুদের সাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ, মানব বন্ধন, আন্দোলনের জোয়ার বয়ে গেলো। পত্রপত্রিকায় হাসান মেহমুদকে নিয়ে লেখালেখি হলো, টিভি টকশোতে আলোচনা হলো।

প্রগতিশীল লেখক সমাজে হাসান মেহমুদ এখন নতুন প্রতিভা। ফেসবুকে যেই লেখাই পোস্ট করে তাই ভাইরাল হয়ে যায়। কিছু পত্রিকা তার লেখা ছাপানোর জন্য আগে থেকেই বায়না করে রাখে। অবাক করা ব্যপার হলো তিন বছর আগের একটি গল্প সেদিন আবার ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো হাসান, তাতে বস্তা বস্তা লাইক কমেন্ট পড়েছে। এই ঘটনায় হাসান নিজেই অবাক। তিন বছর আগে যখন এই গল্পটি পোস্ট করেছিলো তখন মাত্র আটটি লাইক আর পাঁচটি কমেন্ট পেয়েছিলো আর আজ সেই গল্পেই হাজার হাজার লাইক কমেন্ট!

এরপর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, বিবর্তনবাদ, ইসলামে নারীর অধিকার, সৃষ্টির রহস্য, ধর্মতত্ত্ব সহ অনেক বিষয়েই হাসন মেহমুদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দেশ বিদেশে প্রগতিশীল সমাজে তার অনেক সুনাম। লেখক হিসেবে সফলতার দেখা পেলো হাসান আর তৈরি হলো আরো একজন মুক্তমনা, বিজ্ঞান মনষ্কা, প্রগতিশীল লেখক হাসান মেহমুদ।