Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

ঢাকার পথে যাত্রা

#ঢাকার_পথে❤

 

সবেমাত্র ফজরের নামাজ শেষ হলো,রাতে ঘুমাতো একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো,তাই নামাজের পর বসে বসে কিছুক্ষন ঝিমিয়ে নিলাম,

 

--ডা.তারেক ভাইয়ের ডাকে তন্দ্রা ছুটে গেলো,উনার দিকে চোখ খুলে তাকাতেই বললেন--

 

-- শাহিদ ভাই! চা খাবেন? 

 

--কোথায়? বাসায় নাকি দোকানে?(আমি)

 

--- না! বাসায় এখন যাবোনা,কাজে বেরিয়ে গেছি,দোকানে চলেন, ওখানেই খাবো,

 

--- আচ্ছা চলেন,আমি আপনার জন্যই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে অপেক্ষা করছিলাম,

 

সকালের এই সময়টাতে দিনমজুর মানুষেরা নিজ নিজে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে,আর এই সময় এই এলাকাতে এই একটামাত্র দোকানই খোলা থাকে,তাই প্রত্যেক দিন ঠিক এই সমটাতেই দোকানে প্রচন্ডরকমের ভীর দেখা যায়,

 

অনেক্ষন ধরে বসে থাকার পরেও নাস্তা পেলাম না,অবশেষে একজন এসে চা আর রুটি দিয়ে গেলো,সেগুলো খেয়েই দ্রুত বেরিয়ে আসলাম দোকান থেকে,

 

-- শাহেদ ভাই! আজকে কিছু অপারেশন আছে,ইশরাকের নামাজ পড়ে একটু দোয়া করে দিয়েন আমার জন্য,(ডাঃ তারেক)

 

-- আচ্ছা ভাইয়া ইনশাআল্লাহ, আসি তাহলে,আসসালামু আলাইকুম, 

 

--- ওয়া আলাইকুম আসসালামু -- আচ্ছা আরেকটা কথা- আজকে মাগরিবের পর আপনাদের নাস্তার দাওয়াত রইলো,মনে থাকে যেনো,

 

-- আচ্ছা,ঠিক আছে,চলে আসবো ইনশাআল্লাহ, 

 

বিশেষ কিছু কাজে ঢাকা যাওয়া প্রয়োজন, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শায়েখের সাথে এবং শাহিদ ভাইয়ের সাথে দেখা করা,এছাড়াও বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে ঢাকা যেতে হবে,

 

প্লেনিং করে রেখেছি,কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছিলাম না,শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতেই ঢাকার গাড়ি ধরবো ইনশাআল্লাহ, 

 

মাগরিবের পর তারেক ভাইয়ের দাওয়াত কবুল করলাম,নাস্তা শেষে তারেক ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম,

 

--চিটাগাং হাইওয়ে রোড দিয়ে সাঈ সাঈ আওয়াজে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে,গন্তব্য ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন, 

 

--- আমার পাশের সিটেই হাল্কা পাতলা গড়নের মধ্যবয়স্ক একজন লোক বসেছে,পোষাক আসাক অনেকটা পশ্চিমাদের মতো,মুখে দাড়ি নেই,দেখেই অনুমান করা যায় লোকটা সেকুলার মনোভাবের,

 

--- ভদ্রলোক আমার দিকে তাকাতেই মুচকি একটা হাসি দিয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলাম,

 

-- আসসালামু আলাইকুম - আমি শাহিদ,চিটাগং থাকি,আপনি?

 

--জি! আমার নাম যোসেফ,আমার জন্ম জার্মানিতে,বেশ কয়েক বছর হলো সেখান থেকে চলে এসেছি, এখন এখানেই থাকি,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ছোটখাটো যব করি,

দেশের মানুষ অবশ্য আমাকে জনি নামেই ডাকে,

 

--আচ্ছা পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো,তো ভাইয়া যাচ্ছেন কোথায়? (আমি)

 

--- কোম্পানির কাজে একটু গুলিস্তান যেতে হবে,সেখানে কিছু কাজ সেরেই আবার ফিরবো,-আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

 

--- দাওয়াতী সফরে বের হয়েছি,সেই সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কাজও করা যাবে,গন্তব্য ঢাকা কমলাপুর, 

 

-- অহ আচ্ছা,,আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি একজন মুসলিম,আসলে আমি জীবনের বেশীরভাগ সময় ধরে জার্মানিতে থাকায় আমার চিন্তাভাবনা অনেকটা সেকুলার টাইপের হয়ে গেছে,কেনো জানিনা নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি,কিন্তু জীবনের যে সুখ- আনন্দ সেটা আমি কখনোই উপভোগ করতে পারিনি,মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে মুসলিম হয়ে যাবো,কিন্তু তার ঠিক পরের মূহুর্তেই কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দেয়,আমাকে আবারও সংশয়ের সাগরে নিক্ষেপ করে,যেই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমি মেলাতে পারছিনা,সব সময় এক অজানা আতংক কাজ করছে আমার মধ্যে,

 

কেনো জানিনা আপনাকে দেখে আমার অনেক কাছের মানুষ বলে মনে হচ্ছে,

হয়তো আপনিই আমার সমস্যা গুলোর কোন সমাধান দিতে পারবেন,

 

-এতোক্ষন চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে উনার কথাগুলো শুনে গেলাম,এই পুরো সময়ে কোন কথাই বলিনি,

 

--জানিনা আপনাকে আদৌ হেল্প করতে পারবো কিনা,তবুও শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই আমি চেষ্টা করবো,আর ইনশাআল্লাহ আল্লাহও আমাকে সাহায্য করবেন,আপনার মনে ঠিক কেমন প্রশ্ন আসে? কি এমন সমস্যা যেটার কারনে আপনি নাস্তিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেন না? আমাকে একটু খুলে বলুন ভাই,দেখি যদি কিছু করতে পারি!

 

--- হ্যাঁ ভাই! সেগুলো বলার জন্যই তো অপেক্ষা করছি,-

 

যেমম ধরুন!

একজন মানুষকে অমুসলিম হিসেবে তৈরি করবে, আবার অমুসলিম হিসেবে মারা গেলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে, 

 

কিন্তু একজন জন্মগত মুসলিমকে মুসলিম হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবেনা, অথচ সে কোন একসময়ে জান্নাতে যাবে,

 

কিন্তু আল্লাহ যাকে অমুসলিম হিসেবে তৈরি করবে তাকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে,না হলে জাহান্নামে যেতেই হবে, আমার মনে হচ্ছে এই পুরো ব্যাপারে আল্লাহ কোনপ্রকার ন্যায়ের ফয়সালা করেননি,যদি আল্লাহ ন্যায় বিচারই করেন, তাহলে কেনো এমন নিয়ম,তুমি কি এই বিষয়ে আমার সংশয় গুলো দূর করে দিতে পারবে?

 

-- হুম বুঝতে পারলাম পুরো বিষয়টা,আমি আমার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবো আপনার সংশয়গুলো দূর করতে,কিন্তু আমি শুধুমাত্র চেষ্টা করতে পারি,হেদায়েত দিতে পারিনা,ওইটা শুধুমাত্র আল্লাহর কাজ,তাই আপনাকেও চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহ যাতে আপনাকে এবং আমাকে বোঝার তাওফিক দেন,সেইজন্য আল্লাহর কাছে হেদায়েত চেয়ে দোয়া করতে হবে,

 

এইবার আপনার প্রশ্নের জবাবে আসি-

আপনার প্রথম অভিযোগ হলো আল্লাহ কেনো অমুসলিম কে অমুসলিম বানানোর পরেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন? অথচ তারা নির্দোষ,

 

আপনার এই প্রশ্নের জবাবে পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে খুব সুন্দর করে উত্তর দেওয়া হয়েছে-

 

পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের ৩০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-

 

⚫সুরা রুম আয়াত ৩০

 

فَاَقِمۡ وَجۡہَکَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ؕ فِطۡرَتَ اللّٰہِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡہَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ٭ۙ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿٭ۙ۳۰﴾ 

[[অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি*, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না]]

 

* فطرة স্বভাব, প্রকৃতি। মহান আল্লাহ মানুষকে যে সহজাত প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাকেই فطرة الله বলা হয়েছে। আর فطرة الله এর মর্মার্থ হল ইসলাম।

 

এছাড়াও নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)এর একটা হাদীস বহু জায়গায় বর্নিত হয়েছে,আর সহীহ বুখারীর একটা হাদীসে বলা হয়েছে--

 

⚫[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৮৫

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস]

 

حدثنا آدم، حدثنا ابن أبي ذئب، عن الزهري، عن أبي سلمة بن عبد الرحمن، عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ قال قال النبي صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كل مولود يولد على الفطرة، فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجسانه، كمثل البهيمة تنتج البهيمة، هل ترى فيها جدعاء ‏"‏‏.‏

 

[[আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নবী(ﷺ) ইরশাদ করেন: প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অত:পর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে জন্মগত কানকাটা দেখেছ?]]

 

কোরআনের আয়াত এবং হাদীস থেকে যেটা বুঝতে পারি তা হলো- কোন ব্যক্তিই অমুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেনা,প্রত্যেকেই আল্লাহর নির্ধারিত দ্বীনের উপরেই জন্মগ্রহন করে,কিন্তু তার অমুসলিম পিতা-মাতা তাকে অমুসলিম বানিয়ে ফেলে,

তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে কোন ব্যক্তিই অমুসলিম হিসেবে জন্মায় নি বরং তার পিতা- মাতাই এর জন্য দায়ী,

 

আর বোঝার বিষয় হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি,এর পাশাপাশি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও দিয়েছেন,একটা বিবেক দিয়েছেন যেটা দিয়ে সে চিন্তা করতে পারে কোনটা ভুল কোনটা সঠিক,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে নিশ্চয়ই খেল তামাশায় মত্ত থেকে দুনিয়ার জীবন শেষ করার জন্য সৃষ্টি করেননি,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য--

পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে- 

 

⚫সুরা যারিয়াত আয়াত ৫৬

 

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾ 

 

[[আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।]]

 

এখন আপনার আমার স্রষ্টা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যখন বললেন আমি মানুষ আর জ্বীনকে শুধুমাত্র আমারই ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি,সেইখানে কেউ যদি আল্লাহর ইবাদাত ভুলে গিয়ে সত্য ধর্মকে না জেনে,সত্য পথকে না জেনে, মা বাবার দেখানো ভুল পথে খেল তামাশায় মত্ত থাকে,অথচ তাকে সুস্থ বিবেক বুদ্ধি দেওয়া হয়েছিলো,তাহলে কি তার শাস্তি পাওয়াটা আবশ্যক নয়?

 

--- এতক্ষন এক নাগারে কথাগুলো বলে গেলাম,

-- মি.যোসেফ চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনেই যাচ্ছেন,এরপর আমি আবার বলা শুরু করলাম,

 

যেইখানে স্রষ্টা বলছেন তোমাদের কে সুস্থ বিবেক বুদ্ধি দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র সঠিক পথকে চিনে আমার ইবাদাত করার জন্য,খেল তামাশা করার জন্য নয়,এরপরেও যদি কেউ আল্লাহর হুকুম কে না মেনে আল্লাহর ইবাদাত ভুলে গিয়ে দুনিয়ার চাকচিক্যময় ক্ষনস্থায়ী দৃশ্যে ডুবে থাকে তাহলে তো তাকে শাস্তি পেতেই হবে,

 

বিবেক বুদ্ধি দেওয়ার কারনই হলো যাতে ভালো খারাপ বুঝতে পারে,সত্যকে জানতে পারে,স্রষ্টা তো আর মানুষকে সৃষ্টি করে অন্ধের মতো ছেড়ে দেননি,চিন্তাভাবনা করারও সামর্থ্য দিয়েছেন, যাতে সে চিন্তাভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে,সেইখানে কেউ যদি নিজের এই সামর্থ্যের অপব্যবহার করে চিন্তাভাবনা না করে সঠিক পথ না চিনে দুনিয়ায় ডুবে থাকে তাহলে সেই দোষ স্রষ্টার উপর আসবে কেনো? স্রষ্টা তো তাকে সুযোগ দিয়েছেন চিন্তাভাবনা করার,সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে স্রষ্টা এখানে অন্যায় কিছুই করেননি,আপনি শুধু শুধু স্রষ্টার ন্যায় বিচারকে ভুলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে কেনো নিজেকে সংশয়ের জালে আবদ্ধ করে রেখেছেন?

 

--- হুম পুরোটাই তো বুঝলাম,কথাগুলো যৌক্তিক, স্রষ্টা যেহেতু মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন শুধুমাত্র উপকার লাভের জন্য,এখন সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে কেউ যদি নিজের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি করে তাহলে সেই দায়ভার স্রষ্টা নিবেন না,(মি.যোসেফ)

 

--- এক্সাটলি! একদম ঠিক বলেছেন- এখন আপনার পরবর্তী সংশয় গুলো নিয়েও একটু আলোচনা করা যাক কি বলেন?

 

--- হুম শিওর, আপনি বলতে থাকুন আমি শুনছি,

 

এরপর আপনি যেই সংশয়ের কথা বললেন সেটা হলো- কিন্তু একজন জন্মগত মুসলিমকে মুসলিম হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবেনা, অথচ সে কোন একসময়ে জান্নাতে যাবে,

 

আপনার এই কথায় ছোট্ট একটা ভুল আছে, সেটা হলো একজন জন্মগত মুসলিম কে মুসলমানের হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবেনা,এইখানে আপনার একটু ভুল হয়ে গেলো--

আপনি হয়তো হাদীসটি আগে দেখেননি,থাক সেটা কোন ব্যাপার নয়,

 

দেখুন নবী মুহাম্মাদ সাঃ হাদীসে পাকে বলেছেন-

 

⚫সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪

 

حدثنا هشام بن عمار، حدثنا حفص بن سليمان، حدثنا كثير بن شنظير، عن محمد بن سيرين، عن أنس بن مالك، قال قال رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ طلب العلم فريضة على كل مسلم وواضع العلم عند غير أهله كمقلد الخنازير الجوهر واللؤلؤ والذهب ‏"‏ ‏.

 

[[আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অপাত্রে জ্ঞান দানকারী শুকরের গলায় মণিমুক্তা ও সোনার হার পরানো ব্যক্তির সমতুল্য।]]

 

প্রত্যেক মুসলিমের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করা হয়েছে,মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়,এরজন্য প্রয়োজন ঈমান,মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েছে কিন্তু ঈমান নেই,খগেনগিরি করে তারা কখনোই জান্নাতে যাবেনা,যতক্ষন না তারা ঈমান আনছে,

 

কেউ যদি মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েছে বলেই জান্নাতে যায় তাহলে তো তাসলিমা নাসরিন এবং লোপা রহমানদের মতো নাস্তিকরাও জান্নাতে যাবে! (যদি তারা ঈমান আনে তাহলে ভিন্ন কথা)

 

আর সেটা কখনোই সম্ভব নয়,কেননা জান্নাতে যাওয়ার প্রথম শর্ত হলো ঈমান আনা,আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা,এবং উনার আদেশকৃত সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান আনা,যতক্ষন না কেউ ঈমান আনছে ততক্ষন তার জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ 0% যদি সে মুসলিম ঘরে জন্মও নেয়, তবুও সেটা গ্রহনযোগ্য হবেনা,

 

কেউ মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই জান্নাতে যাবে এমন ধারনা ভুল,কেননা এমন অনেক আছে যে মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেও মূরতাদ হয়ে গেছে, এমন অহরহ ঘটনাও আছে,বরং জান্নাতে যেতে হলে ঈমান থাকতে হবে,যার কাছে সরিষাদানা পরিমান ঈমান থাকবে সে ব্যক্তিই জান্নাতে যাবে,এছাড়া বেঈমান কেউ জান্নাতে যাবে এমন চিন্তা করাটা সূচের চিদ্র দিয়ে হাতী প্রবেশ করানোর মতোই মনোভাব, 

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

 

⚫সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫০৯

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

 

يوسف بن راشد حدثنا أحمد بن عبد الله حدثنا أبو بكر بن عياش عن حميد قال سمعت أنسا قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول إذا كان يوم القيامة شفعت فقلت يا رب أدخل الجنة من كان في قلبه خردلة فيدخلون ثم أقول أدخل الجنة من كان في قلبه أدنى شيء فقال أنس كأني أنظر إلى أصابع رسول الله صلى الله عليه وسلم

 

[[আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নবী(ﷺ) কে আমি বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন যখন আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে তখন আমি বলব, হে আমার রব্ব! যার অন্তরে এক সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করাও। তারপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তারপর আমি বলব, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করাও, যার অন্তরে সামান্য ঈমানও আছে। আনাস রাঃ বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)এর হাতের আঙুলগুলো যেন এখনো দেখছি,]]

 

সহীহ বুখারীর এই হাদীস থেকে স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে - যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমান ঈমান থাকবে সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে,জান্নাতে যাওয়ার জন্য মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়াটাই মূল বিষয় নয়,ঈমান আছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়,

 

মুসলিম ঘরে জন্ম নিলে কোন এক সময় জান্নাতে যাবে ঠিক আছে,তবে তাকে ফরজ এলেম শিক্ষা করে দ্বীনের উপর ঈমান রাখতে হবে,এছাড়া কখনোই তার জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়,এইখানেই আপনি ভুলটা করেছিলেন আশা করি এখন সেইটা বুঝতে পেরেছেন?

 

--- মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন মি.যোসেফ,

উনি এতক্ষন চুপচাপ বসে ছিলেন,কোন কথাই বলেননি,দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়তো ভাবছেন,আমিও আর বিরক্ত করিনি,চুপচাপ বসে ছিলাম,

 

এখন প্রায় মধ্যরাত,ঘরির কাটা রাত দুইটা ছুই ছুই অবস্থা,কুমিল্লা হাইওয়ে রোড দিয়ে গাড়ি আমাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলছে,

 

মিনিট দশেক পর বেশ ভালো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামলো,২০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়েছে,

সবাই ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নামলো,আমি আর মি. যোসেফ ঠিক সবার পরেই নামলাম,

 

অজু করে ফ্রেস হয়ে দুজনেই একসাথে হাল্কা নাস্তার উদ্দেশ্যে একটা টেবিলে বসলাম,একটু পরেই গরম গরম ধূমায়িত খাবার চলে এলো,খাবার খেতে খেতে মি. যোসেফ বলে উঠলেন,--

 

সব তো বুঝলাম,কিন্তু আমার সংশয় যেনো কাটতেই চায়না,নতুন কিছু প্রশ্ন আবার মাথার ভিতর কিলবিল করছে-

 

--- আবার কি প্রশ্ন? (ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললাম)

 

-- মানলাম যে প্রত্যেকেই মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে,তার পিতা-মাতাই তাকে ইহুদী খ্রিষ্টান মূর্তিপুজারী বানায়,এখন প্রশ্ন হলো সেই শিশুটার অমুসলিম হওয়ার পেছনে দোষ কার? স্রষ্টার? যিনি এই শিশুকে অমুসলিম ঘরে পাঠিয়েছেন!

নাকি সমাজের, যারা তাকে অমুসলিম বানিয়েছেন?

 

সময় প্রায় শেষ,কিছুক্ষন পরেই গাড়ি ছেড়ে দিবে,তাই দেড়ি না করে দ্রুত গাড়িতে চলে এলাম,কিছুক্ষনের মধ্যেই সমস্ত যাত্রীরা চলে এসেছে,গাড়ি আবারও হাইওয়ে দিয়ে চলতে শুরু করলো,

 

-- আচ্ছা এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? কেউ অমুসলিম হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো ভুমিকা কার? সমাজের নাকি স্রষ্টার? (মি.যোসেফ)

 

-- চুপচাপ বসে আছি,আর ভাবছি,হে আল্লাহ আপনি যদি কাউকে সাহায্য না করেন তবে তাকে সাহায্য করার মতো আর কেউই নেই,আমি জানি আমি গুনাহগার, কতটা গুনাহগার সেটা শুধুমাত্র আপনিই জানেন,আমার গুনাহের কারনে দুনিয়া ও আখেরাতে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়েন না,

আমি জানি আমি গুনাহগার, কিন্তু আমার দ্বারা এই ভাইয়ের সংশয় দূর করে দিন আল্লাহ,আপনি না চাইলে তো কিছুই সম্ভব নয়,যদি আমি হাজারো যুক্তিও দাড় করাই তাও কিচ্ছু হবেনা,হে আল্লাহ আমরা আপনার সাহায্যের মুহতাজ,আপনার হেদায়েতের মুহতাজ,আমাদের আপনি হেদায়েত দিয়েই দেন আল্লাহ,

 

চুপচাপ বসে দোয়াগুলো করছিলাম,মি. যোসেফও আমাকে বিরক্ত করলেন না,বাইরে সুনশান নিরবতা,পুরো পৃথিবীই যেনো ঘুমিয়ে আছে,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি,হাল্কা ঠান্ডাও লাগছিলো,

 

--- একটু পর আবারও বলা শুরু করলাম,

 

মনে করুন স্রষ্টা আপনাকে একটা ডাকাত পরিবারে জন্ম দিলেন,এবং পরবর্তীতে আপনি বংশ পরম্পরায় ডাকাতিকে পেশা হিসেবে নিলেন,কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে ডাকাতি খুবই খারাপ কাজ,তোহ এখন আপনার কাছে প্রশ্ন হলো ডাকাতি খুব খারাপ কাজ জানার পরেও কি আপনি ডাকাতি করবেন নাকি ছেড়ে দিবেন?

 

নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবেন,যেটাতে কোন সন্দেহ নেই,স্রষ্টা আপনাকে ডাকাত ফেমেলিতে জন্ম দিয়েছেন বলে এই নয় যে স্রষ্টা আপনাকে ডাকাত বানাতে চেয়েছেন,কেউ যদি নিজের ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই দায়ভার আল্লাহ নিবেন কেনো?

 

আপনার মা বাবাই আপনাকে ডাকাত বানানোর কারিগর,উনারা নিজেদের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ করে আপনাকে ডাকাত বানিয়েছে,আল্লাহ মানুষকে যেই ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, সেই ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করেই আপনার বাবা মা আপনাকে ধ্বংস করেছে,

 

স্রষ্টা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যাতে সে নিজের ভালোটা নিজেই বুঝতে পারে, কিন্তু কেউ যদি এর বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই দায়ভার আল্লাহ নিতে যাবেন কেনো?

 

ঠিক তদ্রুপ,

আল্লাহ আপনাকে অমুসলিম ঘরে পাঠিয়েছেন বলে এই নয় আল্লাহ আপনাকে অমুসলিম বানিয়েছেন,বরং প্রত্যেকেই মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে,সেইসাথে স্রষ্টা সবাইকে বিবেক বুদ্ধিও দান করেছেন,যাতে সে নিজের ভালোটা নিজেই বুঝতে পারে,

 

নিজেদের ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করে আপনার বাবা-মা যদি আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে সেই দোষ আল্লাহর হতে যাবে কেনো?

 

এখান থেকে তো বুঝতেই পারছেন যে কেউ অমুসলিম হওয়ার পেছনে স্রষ্টা নয় বরং তার পরিবার এবং সমাজই দায়ী,

 

তাছাড়া সেই শিশুকে আপনি ততক্ষন পর্যন্ত দোষী বলতে পারবেন না,যতক্ষন না সে প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে,আরেকটু খোলাসা করে বলতে গেলে শিশু প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত অমুসলিম হওয়ার ক্ষেত্রে তার গুনাহ হবেনা,এইটা সম্পূর্ণ তার পরিবারের দোষ,কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও যদি কেউ বুঝে শুনে ভুল পথে হাটতে থাকে তাহলে সেটার জন্য নিশ্চয়ই স্রষ্টা দায়ী নন,

 

স্রষ্টা তো সবাইকে বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন শুধুমাত্র নিজের ভালোটা যাতে বুঝতে পারে,এরপরেও যদি কেউ বুঝে শুনে নিজের ক্ষতি নিজেই করে তাহলে সেই দায়ভার কার?

 

আগেই বলেছি স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাতের জন্য,খেল তামাশায় মত্ত থাকার জন্য নয়,হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ কল্কিপুরাণ, ভবিষ্যপুরাণ, অল্লোপনিষদ,ঋগবেদ,অসংখ্য গ্রন্থে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাঃ কে মানার কথা আছে,

এছাড়াও খ্রিস্টানদের বাইবেলে অসংখ্য জায়গায় নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)কে মানার কথা আছে,এখন কেউ যদি নিজের ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করে ইসলাম ধর্মের কথা নাহয় বাদই দিলাম,নিজের ধর্মও যদি ঠিকমতো না জানে,নিজের ধর্মগ্রন্থে কি আদেশ দেওয়া হয়েছে সেটা না জেনে,ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে দায়ভার কেবল তারই, অন্য কেউই তার দায়ভার নেবেনা, 

 

যেহেতু স্রষ্টা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন,আর অমুসলিম ধর্মগ্রন্থেও শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)মানার কথা বলা হয়েছে,এখন কেউ যদি নিজের ধর্মগ্রন্থই না পড়ে,সেখানে যে নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) কে মানতে বলা হয়েছে সেটা না জানে,তাহলে ক্ষতি তো তারই হবে,

 

এখানে আরেকটা বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করছি,প্রশ্ন করতে পারেন অমুসলিমদের তো জ্ঞান অর্জন করে মুসলিম হতে হয়,নাহলে সত্যকে জানা সম্ভব নয়,কিন্তু মুসলিমদের জ্ঞান অর্জন করতে হয়না কেনো? কেনো তারা বিনা কষ্টে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাবে?

 

এখানে আপনাকে সেই হাদীসটি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সেটা হলো (طلب العلم فريضة على كل مسلم) প্রত্যেক মুসলিমের উপর এলেম অন্বেষণ করা ফরজ,শুধু করলেই হবেনা, সেটাকে সবার জন্য আবশ্যক করা হয়েছে,আর শুধুমাত্র মুসলিম ঘরে জন্ম নিলেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়,এরজন্য ঈমান থাকাটা আবশ্যক, এছাড়া গ্রহনযোগ্য নয়,

 

সুতরাং, পরিশেষে সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে-কেউ অমুসলিম হওয়ার পেছনে মূল ভুমিকা হলো তার পরিবারের,তবে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্তই,

প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে নিজের গুনাহের ভার নিজেকেই নিতে হবে,আর স্রষ্টা যেহেতু বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন, এবং ইসলামের মতো সত্য দিয়েছেন,এবং সেই সত্যকে যাতে সবাই জানতে পারে তারজন্য অমুসলিমদের ধর্মগ্রন্থেও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর কথা উল্লেখ করেছেন,এরপরেও যদি কেউ বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহার না করে দুনিয়ায় ডুবে থাকে তাহলে সেই দায়ভারও তাকেই নিতে হবে,স্রষ্টা এখানে মোটেও দায়ী নন,

 

আমি কি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি ভাই মি. যোসেফ?

 

--- হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি, স্রষ্টা যেহেতু মানুষকে ভালো খারাপ বোঝার শক্তি দিয়েছেন,জানার শক্তি দিয়েছেন, তা সত্বেও কেউ যদি খারাপ পথকে বেচে নেয়,অজ্ঞানতার সাগরে ডুবে থাকে তাহলে সেই দোষ একান্তই তার নিজের,কেননা স্রষ্টা তাকে জেনে বুঝে সত্যকে মানার জন্য পাঠিয়েছেন,এখন সেই দায়িত্ব যদি কেউ ভুলে যায়,তাহলে সেই দোষের ভার অন্য কেউ নিবেনা,

 

--- একদম ঠিক বলেছেন,আলহামদুলিল্লাহ আপনি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন,

আল্লাহর কাছে অনেক সুকরিয়া আদায় করলাম, আল্লাহ আমাকে দিয়ে অন্তত কিছু একটা করিয়েছেন,আমাকে সাহায্য করেছেন,আমাকে ছেড়ে যাননি,

 

গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটেই চলেছে, মাঠের পর মাঠ,সবকিছুই যেনো পিছনের দিকে ছুটে যাচ্ছে,

 

রাতও অনেক হয়েছে একটু পরেই ফজরের আজান দিবে,তাই না ঘুমিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন আজান দেয়,

 

দূরেই ইন্ডিয়ার সীমান্ত চোখে পড়লো, লাইট ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়না,এরই-মধ্যে আজান শুরু হয়ে গেলো,

 

আজানের পর ভালো একটা মসজিদ দেখে গাড়িটা থামলো,হাতে-গোনা কিছু মানুষ নামাজ পড়তে নামলেন,কিছু মানুষ গাড়ি থেকে নেমে একটু হেটে নিচ্ছিলেন,আমিও এইবার নামতে যাবো গাড়ি থেকে ঠিক এমন সময় পিছন থেকে আমার হাত ধরে টান দিলেন মি. যোসেফ,

 

অবাক হয়ে উনার দিক তাকিয়ে রইলাম,এমন অদ্ভুত আচরণের জন্য,বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে!!

 

--- কিহে ভাই! জান্নাতে কি একাই যাবেন নাকি? আমাকেও সাথে নিয়ে চলুন!!আমাকে একা রেখে যাচ্ছেন কোন দুঃখে?

 

আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরুচ্ছেনা,প্রচন্ডরকম শর্ক খেয়েছি,ক্ষনিকের জন্য কথা বলাই ভুলে গেলাম,অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে,এইসব দেখতে দেখতে কখন যে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো বুঝতেই পারিনি,খেয়াল করে দেখলাম শুধু আমারই নয় মি. যোসেফ এমনকি বাসের সব যাত্রীও উনার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে,সবার চোখই ছলছল করছিলো,

 

কোনভাবে নিজেকে সামলিয়ে বললাম -- হ্যাঁ, নিশ্চয়ই চলুন,আপনাকে ফেলে জান্নাতে যাই কি করে বলুন?

 

এই বলে উনার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামলাম,তখন মসজিদে জামাত শুরু হয়ে গেছে,খেয়াল করলাম শুধু আমরা দুজনই নই,বাসের ড্রাইভার থেকে নিয়ে সব যাত্রীই আমাদের পিছু পিছু মসজিদে চলে এসেছে,মসজিদ একদম কানায় কানায় ভর্তি,

 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর এই অসীম সাহায্যের কথা ভেবে পূনরায় চোখ অশ্রুসিক্ত হলো,চোখ থেকে অনবরত বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছিলো,চোখের এই এক পশলা বৃষ্টিতে ঝুম ভিজা ভিজলাম অনেকদিন পর,,

 

সকাল সাতটার দিকে আমি আমার গন্তব্য কমলাপুর পৌঁছে গেলাম,গাড়ি থেকে নেমেই দেখলাম ডা.তারেক ভাই কল দিয়েছেন-

 

-- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,হ্যাঁ বলুন,আমি শুনতে পাচ্ছি,(আমি)

 

-- ওয়া আলাইকুম আসসালামু, আপনি ঢাকা পৌছে গেছেন ভাই? আপনার জন্য টেনশন হচ্ছিলো,

 

-- জি ভাইয়া,এইমাত্রই গাড়ি থেকে নামলাম,টেনশনের কিছু নেই,খুব দ্রুতই ব্যাক করবো ইনশাআল্লাহ, দোয়া করবেন,

 

-- হুম অবশ্যই, আমার জন্যও দোয়া করিয়েন ভাই,

 

#সমাপ্ত❤