Are you sure?

কুরআন »  বিবিধ

কোরআন সূরা (৩৫:৮) অনুযায়ী, আল্লাহ কী মানুষকে ইচ্ছা করে পথভ্রষ্ট করেন ও সঠিক পথে আনেন?

কোরআন সূরা (৩৫:৮) অনুযায়ী, আল্লাহ কী মানুষকে ইচ্ছা করে পথভ্রষ্ট করেন ও সঠিক পথে আনেন ?

এ অভিযোগের জবাব -

আসুন দেখি সূরা (৩৫:৮) এ ঠিক কী বলা হয়েছে

أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৮)

নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন, বলতে আল্লাহ এই আয়াতে ঠিক কী বুুুঝিয়েছেন তা জানতে আসুন এই আয়াতের আগের আয়াত ও পরের আয়াত গুলো  দেখি:- 

وَإِنْ يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ

তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণকেও তো মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। আল্লাহর প্রতিই যাবতীয় বিষয় প্রত্যাবর্তিত হয়। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৪)

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ

হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারণা না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৫)

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ

৬. শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৬)

الَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ

৭. যারা কুফর করে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর আযাব। আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৭)

أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

৮. যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।  (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৮)

উপরের আয়াত গুলো দেখে বুঝায় যাচ্ছে , আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সতর্ক করেছেন কাফের ও শয়তান সম্পর্কে।

[৮]. যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৮)

আসুন এই আয়াতের তাফসীর দেখি এবং বুঝার চেষ্টা করি এই আয়াত কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

আগের আয়াতে মুমিন ও কাফির ব্যক্তির পরিণতির কথা বর্ণনা করার পর এই আয়াতে বলা হচ্ছে: সত্যকে অস্বীকার করতে করতে মানুষের অন্তর এতটা কলুষিত হয়ে যায় যে, সে খারাপ কাজকে ভালো বলে মনে করতে থাকে। কোনো ঘটনা ভালো নাকি মন্দ তা যাচাই করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। খারাপ কাজ ও আচরণ তার কাছে শোভনীয় হয়ে যায় বলে সে নিজেকে সংশোধনের প্রয়োজন মনে করে না। এ ধরনের মানুষ নিজের ভুল ও অন্যায় কর্মকে সঠিক মনে করে বলে যতই উপদেশ দেয়া হোক না তা সে গ্রহণ করে না। 

কাফেররা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে বলে সবকিছুকে নিজেদের প্রবৃত্তি দিয়ে যাচাই করে। প্রবৃত্তি মানুষকে সারাক্ষণ ভোগবিলাস ও ঋপুর চাহিদা মেটাতে উৎসাহিত করে বলে বেশিরভাগ খারাপ কাজকে সে মানুষের জন্য শোভনীয় করে তুলে ধরে। অপরপক্ষে মুমিন ব্যক্তিরা নিজেদের কথা, কাজ ও আচরণকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী যাচাই করে নেয়। তারা প্রবৃত্তির কামনার কাছে আত্মসমর্পন করে না। 

স্বাভাবিকভাবেই প্রবৃত্তির আনুগত্য করার কারণে মানুষ আল্লাহর হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয় এবং পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।কিন্তু কারো মধ্যে ঈমান থাকলে তার পক্ষে আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্তি সহজ হয়ে যায় এবং সে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলতে থাকে। আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বনবী (সা.) ও সব মুমিনকে উদ্দেশ করে বলছেন, সত্য বাণী গ্রহণ করা তো দূরে থাক যাদের সত্য শোনারই আগ্রহ নেই তাদের জন্য অনুতাপ ও দুঃখ করার প্রয়োজন নেই। এতে করে তোমাদের জীবন চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে কিন্তু তারা ঈমান আনবে না। তাদের ফয়সালা আল্লাহ তায়ালার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। মহান আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম ও অন্তরের সবকিছু সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন।

তাফসীর আহসানুল বায়ান :-

اَفَمَنۡ زُیِّنَ لَہٗ  سُوۡٓءُ عَمَلِہٖ  فَرَاٰہُ حَسَنًا ؕ فَاِنَّ اللّٰہَ یُضِلُّ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۫ۖ فَلَا تَذۡہَبۡ نَفۡسُکَ عَلَیۡہِمۡ حَسَرٰتٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ  بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ ﴿۸﴾

কাউকে যদি তার মন্দ কাজ শোভন করে দেখানো হয় এবং সে একে উত্তম মনে করে,[১] সে ব্যক্তি কি তার সমান (যে সৎকাজ করে)? আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন।[২] অতএব তুমি ওদের জন্য আক্ষেপ করে নিজেকে ধ্বংস করো না।[৩] নিশ্চয় ওরা যা করে, আল্লাহ তা খুব জানেন। [৪] [১] যেমন কাফের ও পাপাচারীরা, কুফর ও শিরক এবং ফিসক ও পাপাচরণ করে, অথচ মনে মনে ভাবে যে, তারাই উত্তম কর্ম করছে। অতএব ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন, তাকে বাঁচানোর জন্য তোমার নিকট কোন সুব্যবস্থা আছে কি? অথবা সে কি ঐ ব্যক্তির মত যাকে আল্লাহ তাআলা সৎপথ প্রদর্শন করেছেন? উত্তর নাবাচক, না -- অবশ্যই না। [২] আল্লাহ তাআলা নিজ ইনসাফ, ন্যায়পরায়ণতা ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী ঐ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করেন, যে নিরন্তরভাবে আপন কর্ম দ্বারা নিজেকে তার উপযুক্ত বানিয়ে নেয়। পক্ষান্তরে নিজ দয়া ও অনুগ্রহে ঐ ব্যক্তিকে সৎপথ প্রদর্শন করেন, যে সৎপথ অন্বেষণকারী হয়। [৩] কারণ, আল্লাহ তাআলার সকল কর্ম হিকমত ও পূর্ণ ইলমের সাথে সম্পাদিত হয়। অতএব কারোর পথভ্রষ্টতার জন্য তুমি এমন অনুতপ্ত হবে না যে, নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে। [৪] অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে তাদের কোন কথা বা কর্ম গুপ্ত নয়। উদ্দেশ্য হল, তাদের সাথে আল্লাহ তাআলার ব্যাপারটা একজন সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত এবং একজন বিজ্ঞের মত। সাধারণ এমন বাদশাদের মত নয়, যারা নিজের স্বাধীনতাকে ইচ্ছামত ব্যবহার করে, কখনো সালাম পাওয়ার পরেও অসন্তুষ্ট হয়, আবার কখনো কটুবাক্যের বদলে উপঢৌকন দিয়ে থাকে।

اَفَمَنۡ زُیِّنَ لَہٗ  سُوۡٓءُ عَمَلِہٖ  فَرَاٰہُ حَسَنًا ؕ فَاِنَّ اللّٰہَ یُضِلُّ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۫ۖ فَلَا تَذۡہَبۡ نَفۡسُکَ عَلَیۡہِمۡ حَسَرٰتٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ  بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ ﴿۸﴾

৭-৮ নং আয়াতের তাফসীর: প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের শাস্তি ও যেসব ঈমানদার সৎ আমল করে তাদের পুরস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন। (أَفَمَنْ زُيِّنَ لَه۫ سُوْ۬ءُ عَمَلِه) ‘যাকে তার খারাপ কাজ সুন্দর করে দেখানো হয়’ অর্থাৎ যাদের কাছে শয়তান খারাপ কাজগুলোকে চাকচিক্যময় করে তুলে ধরেছে, আর সে তা করতে ভাল মনে করে। যেমন অনেকের কুফরী করতে ভাল লাগে, ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করতে ভাল লাগে ইত্যাদি। হে নাবী! এসব লোকদেরকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না। কারণ হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দিয়ে থাকেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করে থাকেন। যারা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর তুমি তাদের হিদায়াতের আশায় পেছনে পেছনে ঘুরে নিজেকে ধ্বংস করে দিও না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰٓي اٰثَارِهِمْ إِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ أَسَفًا) ‏“তারা এ হাদীসকে (কুরআনকে) বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে নিজেকে ধ্বংস করে দিবে।” (সূরা কাহফ ১৮:৬) সুতরাং হিদায়াত দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাই কেবল আল্লাহ তা‘আলার কাছে হিদায়াত চাইতে হবে। কারণ তিনি হিদায়াত দিলে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই, আর পথভ্রষ্ট করলে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. ভাল কাজ করলে ভাল প্রতিদান এবং মন্দ কাজ করলে মন্দ পরিণাম ভোগ করতে হবে। ২. দাওয়াত দেয়ার পরেও কোন কাফির-মুশরিক ঈমান না আনলে তার জন্য দুঃখ করা ঠিক নয়। ৩. শয়তান মানুষের কাছে খারাপ কাজগুলো এমনভাবে তুলে ধরে যে, অধিকাংশ মানুষ তা ভাল মনে করে।

♦ সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এই আয়াত অনুযায়ী যারা আল্লাহর অবাধ্য , আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে না ,যারা সীমালঙ্গন করে আল্লাহ তাদের পথভ্রষ্ট করেন। সোজা কথায়, তিনি কাফেরদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। কাফেররা তাদের মন্দ কর্মের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। এখানে আপনি কোন মতেই আল্লাহকে দোষারোপ করতে পারবেন না কারণ আল্লাহ কাফেরদের পথভ্রষ্ট করার পাশাপাশি এও বলে দিয়েছেন তিনি মুমিনদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবেন। তিনি মুমিনদের সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন কারণ মুমিনরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। আল্লাহর ইবাদত কর।

তো উপরের করা আলোচনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করবেন মানে এখানে কাফেরদেরকে বুঝিয়েছেন।

আর যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করবেন বলতে এখানে মুমিনদের কথা বুঝিয়েছেন। 

অর্থাৎ এই আয়াত অনুযায়ী, আপনি যদি এখন আল্লাহর ইবাদত করেন , তার সব আদেশ নিষেধ মেনে চলেন তবে আল্লাহ আপনাকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন। 

আবার, আপনি যদি এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর অবাধ্য হন তার আদেশ নিষেধ অমান্য করেন তবে আল্লাহ আপনাকে পথভ্রষ্ট করবেন। আর এই পথভ্রষ্ট আপনি আপনার ইচ্ছাতেই হবেন। কারণ কাফেররা কখনো সঠিক পথ পাবে না।

ব্যাপারটা আরো সুস্পষ্ট করি, 

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ১৭৯)

فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا

 অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, (সূরাঃ আশ-শামস, আয়াতঃ ৮)

مَا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৭৯)

উপরের আয়াত গুলোতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন তিনি মানুষকে অসৎ ও সৎ কর্মের জ্ঞান দিয়েছেন সুতরাং এখন আপনি যদি সৎ পথে থাকেন তবে আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন। আর যদি আপনি অসৎ পথে থাকেন তবে আপনি পথভ্রষ্ট হবেন কারণ আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন না। ফলে আপনি হবেন পথভ্রষ্ট। 

সুতরাং মানুষ পথভ্রষ্ট বা সঠিক পথ পেলে সেটা সে তার কর্মের জন্যই পেয়ে থাকে। 

নিচে সূরা গুলোর তাফসীর পড়ুন তবে আরো সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারবেন। 

তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া:-

وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَہَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ ۫ۖ  لَہُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِہَا ؕ اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ ﴿۱۷۹﴾

আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি [২]; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী বিভ্রান্ত । তারাই হচ্ছে গাফেল [৩] । [১] এর অর্থ এটা নয় যে, আমি বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম এবং তাদেরকে সৃষ্টি করার সময় এ সংকল্প করেছিলাম যে, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করবো । বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বেকুফরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাদের আমলই তাদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করেছে। তাদের জাহান্নাম দেয়া আল্লাহর ইনসাফের চাহিদা । সে হিসেবে তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন যে, তারা জাহান্নামে যাবে, সুতরাং তাদেরকে যেন তিনি জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। [ফাতহুল কাদীর ] [২] আয়াতে বলা হয়েছেঃ এরা কিছুই বোঝে না, কোন কিছু দেখেও না এবং শুনেও না। অথচ বাস্তবে এরা পাগল বা উম্মাদ নয় যে, কিছুই বুঝতে পারে না। অন্ধও নয় যে, কোন কিছু দেখবে না, কিংবা বধিরওঁ নয় যে, কোন কিছু শুনবে না । বরং প্রকৃতপক্ষে এরা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের যা বুঝা বা উপলব্ধি করা উচিত ছিল তারা তা করেনি, যা দেখা উচিত ছিল তা তারা দেখেনি, যা কিছু তাদের শুনা উচিত ছিল তা তারা শুনেনি । আর যা কিছু বুঝেছে, দেখেছে এবং শুনেছে, তা সবই ছিল সাধারণ জীবজন্তুর ' পর্যায়ের বুঝা, দেখা ও শুনা, যাতে গাধা-ঘোড়া, গরু-ছাগল সবই সমান । এ জন্যই উল্লেখিত আয়াতের শেষাংশে এসব লোক সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “এরা চতুস্পদ খাদ্য আর পেটই হলো তাদের চিন্তার সর্বোচ্চ স্তর । অতঃপর বলা হয়েছেঃ “এরা চতুস্পদ জীব-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট " তার কারণ চতুস্পদ জীব-জানোয়ার শরীআতের বিধি-নিষেধের আওতাভুক্ত নয়- তাদের জন্য কোন সাজা-শাস্তি কিংবা দান-প্রতিদান নেই। তাদের লক্ষ্য যদি শুধুমাত্র জীবন ও শরীর-কাঠামোতে সীমিত থাকে তবেই যথেষ্ট। কিন্তু মানুষকে যে স্বীয় কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে । সেজন্য তাদের সুফল কিংবা শাস্তি ভোগ করতে হবে । কাজেই এসব বিষয়কেই নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলে সাব্যস্ত করে বসা জীবজন্তুর চেয়েও অধিক নিবুদ্ধিতা। তাছাড়া জীব-জানোয়ার নিজের প্রভূ ও মালিকের সেবা যথার্থই সম্পাদন করে । পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞ না-ফরমান মানুষ স্বীয় মালিক, পালনকর্তার আনুগত্যে ক্রটি করতে থাকে। সে কারণে তারা চতুস্পদ জানোয়ার অপেক্ষা বেশী নির্বোধ ও গাফেল । কাজেই বলা হয়েছে "এরাই হলো প্রকৃত গাফেল [দেখুন, তাবারী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া:-

فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَ تَقۡوٰىہَا ۪ۙ﴿۸﴾

তারপর তাকে তার সৎকাজের এবং তার অসৎ-কাজের জ্ঞান দান করেছেন [১] – [১] এর অর্থ, আল্লাহ্‌ তার নফসের মধ্যে নেকি ও গুনাহ উভয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং চিনিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রত্যেক নফসেরই ভালো ও মন্দ কাজ করার কথা রেখে দিয়েছেন; এবং যা তাকদীরে লেখা রয়েছে তা সহজ করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] একথাটিই অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, “আর আমরা ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য সুস্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি।” [সূরা আল-বালাদ:১০] আবার কোথাও বলা হয়েছে , “আমরা তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি , চাইলে তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে হতে পারে অস্বীকারকারী।” [সূরা আল-ইনসান:৩] একথাটিই অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে, “অবশ্যই আমি শপথ করছি নাফস আল-লাওয়ামার” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ২] সুতরাং মানুষের মধ্যে একটি নাফসে লাওয়ামাহ্ (বিবেক) আছে। সে অসৎকাজ করলে তাকে তিরস্কার করে। আরও এসেছে, “আর প্রত্যেক ব্যক্তি সে যতই ওজর পেশ করুক না কেন সে কি তা সে খুব ভালো করেই জানে।” [সূরা আল-কিয়ামাহ্ঃ ১৪-১৫] এই তাফসীর অনুযায়ী এরূপ প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই যে, মানুষের সৃষ্টির মধ্যেই যখন পাপ ও ইবাদত নিহিত আছে, তখন সে তা করতে বাধ্য। এর জন্যে সে কোন সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হবে না। একটি হাদীস থেকে এই তাফসীর গৃহীত হয়েছে। তাকদীর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করেন। [মুসলিম: ২৬৫০, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৪৩৮] এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানুষের মধ্যে গোনাহ ও ইবাদতের যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেননি; বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা দান করেছেন । হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো‘আ করতেন (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ্‌ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক।” [মুসলিম: ২৭২২] তাকওয়া যেভাবে ইল্‌হাম হয়, তেমনিভাবে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কোন কোন মানুষের পাপের কারণে তাদের অন্তরে পাপেরও ইল্‌হাম করেন। [উসাইমীন: তাফসীর জুয আম্মা] যদি আল্লাহ্‌ কারও প্রতি সদয় হন তবে তাকে ভাল কাজের প্রতি ইলহাম করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করতে সমর্থ হয় সে যেন আল্লাহ্‌র শোকরিয়া আদায় করে। আর যদি সে খারাপ কাজ করে তবে তাওবা করে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসা উচিত। আল্লাহ্‌ কেন তাকে দিয়ে এটা করালেন, বা এ গোনাহ তার দ্বারা কেন হতে দিলেন, এ ধরনের যুক্তি দাঁড় করানোর মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহ্‌র রহমত থেকে দূরে সরিয়েই রাখা যায়, কোন সমাধানে পৌঁছা যাবে না। কারণ; রহমতের তিনিই মালিক; তিনি যদি তার রহমত কারও প্রতি উজাড় করে দেন তবে সেটা তার মালিকানা থেকে তিনি খরচ করলেন পক্ষান্তরে যদি তিনি তার রহমত কাউকে না দেন তবে কারও এ ব্যাপারে কোন আপত্তি তোলার অধিকার নেই। যদি আপত্তি না তোলে তাওবাহ করে নিজের কোন ক্রটির প্রতি সঠিক পথের দিশা দিবেন এবং তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে দিবেন এবং তাকওয়ার অধিকারী করবেন।ঐ ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য যে আল্লাহ্‌র কর্মকাণ্ডে আপত্তি তোলতে তোলতে নিজের সময় নষ্ট করার পাশাপাশি তাকদির নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ভাল আমল পরিত্যাগ করে তাকদীরের দোষ দিয়ে বসে থাকে। হ্যাঁ, যদি কোন বিপদাপদ এসে যায় তখন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র তাকদীরে সন্তুষ্টি প্রকাশের খাতিরে তাকদীরের কথা বলে শোকরিয়া আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে গোনাহের সময় কোনভাবেই তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না। বরং নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহ্‌র কাছে তাওবাহ করে ভবিষ্যতের জন্য তাওফীক কামনা করতে হবে। এজন্যই বলা হয় যে, ‘গোনাহের সময় তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না, তবে বিপদাপদের সময় তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে।” [দেখুন, উসাইমীন, আল-কাওলুল মুফীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদঃ ২/৩৯৬-৪০২]

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৭৯)

>> সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, আল্লাহ কাউকে ইচ্ছা করে পথভ্রষ্ট করেন না। কেউ পথভ্রষ্ট হলে সে তার কর্মের জন্য পথভ্রষ্ট হয়।