ঈসা আঃ এর অলৌকিক কীর্তিকলাপ খোদাত্বের প্রমাণ নয় কী?১ম অংশ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 
খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:
যীশুর অলৌকিক কীর্তিকলাপ খোদাত্বের প্রমাণ নয় কি?কোরআন VS বাইবেল :
\________________________________________/
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু।সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য প্রত্যেক যুগেই নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।আর এইসব নবী-রাসূলগণ যে মহান আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত সত্য নবী ও রাসূল তার কিছু নিদর্শন স্বরূপ মহান আল্লাহ্ নবীদের মাধ্যমে কিছু অলৌকিক কার্যাবলি মানুষের সম্মুখে প্রদর্শন করান,যেন তারা নবীদের নবুয়তীর সততার প্রমাণ জানতে এবং বুঝতে পারে এবং তাঁদের উপর ও একক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা মহান আল্লাহর উপর ইমান আনতে পারে।কিন্তু নবীদের এই অলৌকিক কার্যাবলির কারণে কেউই আল্লাহ হয়ে যান না। এরপরও ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানরা ঈসা আঃ এর কিছু অলৌকিক কার্যাবলির সম্পর্কে অবগত হয়ে তাঁকে ভুলবশত ঈশ্বর বলে দাবি করে (নাঊযুবিল্লাহ)।খ্রিস্টান ধর্ম-প্রচারকরা যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ হিসেবে দাবি করে যে,যীশু নানাপ্রকার অলৌকিক কীর্তিকলাপ/কাজ করেছেন।যা খোদা ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা সম্ভব নয়।যেমন মৃতকে জীবিত করা,কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করা,অন্ধকে ভালো করে দেওয়া ইত্যাদি।এর স্বপক্ষে তারা পবিত্র আল-কোরআনের ৩:৪৯ নং আয়াত অর্থাৎ সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৪৯

وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ


অর্থঃ আর বণী ইসরাঈলদের জন্যে রাসূল হিসেবে তাঁকে [ঈসা/যীশু] মনোনীত করবেন। তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।"

খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ হিসেবে এই আয়াত কে দাবি করে বলে যে কোরআনেও যীশুর খোদাত্বকে স্বীকার করা হয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক) এবং কোরআনের কোন কোন তাফসীর কারকও "যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক মৃত্তিকা দ্বারা পাখির আকৃতি গঠনপূর্বক ফুৎকার প্রদান করে তাকে জীবিত পাখিতে পরিণত করা,মৃতকে জীবিত করা,জন্মান্ধ কে দৃষ্টিশক্তি দেওয়া এবং কুষ্ঠরোগীকে হাতের স্পর্শ মাত্র আরোগ্য করা,.........এতদ্ভিন্ন সমবেত লোকদের খাদ্য-পানীয় এবং সংগৃহীত দ্রব্যাদি সম্বন্ধেও নানা রূপ বিস্ময়কর সংবাদ "-দেওয়া সম্বন্ধে বিশ্বাস ও সংস্কারের পূর্ণ সমর্থন সমর্থন করেছেন। 

[বিঃদ্রঃ কোরআনে দুই ধরনের আয়াত রয়েছে। একটা সরাসরি "স্পষ্ট" আরেকটা" অস্পষ্ট "আয়াত। তবে "অস্পষ্ট "-আয়াত সংখ্যা "স্পষ্ট"- আয়াত সংখ্যা অপেক্ষা অনেক কম।আর কোরআন এর অনেক কথাই বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে বলা হয়েছে যা সরাসরি ভাবে অর্থ নেওয়া যাবে না অর্থাৎ উক্ত উপমার মাধ্যমে বর্ণিত কথাগুলো কে সরাসরি ভাবে গ্রহণ করলে আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য /মাহাত্ম্য বুঝতে পারবেন না।ঠিক বাইবেলেও এমন অসংখ্য উপমার মাধ্যমে যীশু তথা ঈসা আঃ এর কথা বর্ণিত হয়েছে যা সরাসরি ভাবে গ্রহণ করলে ভ্রান্ত হওয়া ছাড়া কোন রাস্তা নেই]

আর বাইবেলে হযরত ঈসা আঃ কতৃক জন্মান্ধ কে দৃষ্টিশক্তি দান,কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান,এবং মৃতকে জীবিত করার প্রথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু মৃন্ময় পক্ষীকে সজীব করার প্রথা উল্লেখ করা হয়নি।ইহুদিরা ঐসব কথায় সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী। খ্রিস্টানরাও বাইবেলে যা লিখিত আছে তদ্ব্যতীত অন্য কথায় অবিশ্বাসী। আধুনিক কোন কোন তাফসীর কারক হযরত ঈসার অলৌকিক নিদর্শন সম্বন্ধে পবিত্র কোরআন ও বাইবেলে যে সব উক্তি রয়েছে,তার সবগুলো কেই রুপক বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেন,"আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের পক্ষে মৃতকে জীবিত করা,কোন নতুন জীব সৃষ্টি করা,কিংবা প্রাকৃতিক শক্তি কে স্বীয় আজ্ঞাধীন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব।যদিও আহসানুল বয়ান (কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর),তাফসীরে ইবনে কাসির,তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া,তাফসীরে ফাতহুল কাদীর এবং কি তাফসীরে যালালাইনেও বলা হয়েছে যে যীশু তথা ঈসা আঃ নিজ থেকে কিছুই করতে পারতেন না। তিনি শুধুই আল্লাহ্ এর হুকুমে মৃতকে জীবিত করতেন,জন্মান্ধ কে দৃষ্টিশক্তি দান করতেন এবং কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করতেন।কিন্তু এসব তাফসীরে সম্ভবত রুপক বলে বর্ণনা করা হয় নাই।যাই হোক,আধুনিক অনেক তাফসীর কারক/স্কলাররা বলেছেন যে:-"
তাদের মতে মৃন্ময় পক্ষী মূর্তিকে সজীব করার:- অর্থ তুচ্ছ মাটির মানুষকে আধ্যাত্মিক জীবন্ত শক্তি প্রদান করা, মৃতকে জীবিত করার অর্থ হলো অবনত ও পতিত জাতিকে উন্নত ও শক্তিশালী করা এবং অন্ধকে দৃষ্টি শক্তি,খঞ্জকে চলৎ শক্তি,রোগীকে আরোগ্য ও বধিরকে শ্রবণশক্তি দান করা (নতুন নিয়ম) প্রভৃতির অর্থ ধর্মহীন কে ধর্ম শিক্ষা দান,পথভ্রষ্ট কে পথ-প্রদর্শন,অজ্ঞানান্ধকে জ্ঞানের আলো দান এবং নির্বোধ মূর্খদেরকে ধর্মজ্ঞান ও বিভিন্ন উপদেশ প্রদান প্রভৃতি। তঃ কবির,বয়জবী ও বাঃ কোঃ- মঃ আঃ প্রভৃতি তুলিতব্য" (তরজমা ও তাফসীর ১ম খন্ড,১৭১-৭২ পৃষ্ঠা,ওসমানীয়া লাইব্রেরি-কলকাতা)।

পবিত্র কোরআনে (৩:৪৯) আয়াতে যীশু তথা ঈসা আঃ বনি-ইস্রায়েলের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়ে বলেছিলেন:-"

وَ رَسُوۡلًا اِلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۬ۙ اَنِّیۡ قَدۡ جِئۡتُکُمۡ بِاٰیَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ ۙ اَنِّیۡۤ اَخۡلُقُ لَکُمۡ مِّنَ الطِّیۡنِ کَہَیۡـَٔۃِ الطَّیۡرِ فَاَنۡفُخُ فِیۡہِ فَیَکُوۡنُ طَیۡرًۢا بِاِذۡنِ اللّٰہِ ۚ وَ اُبۡرِیٴُ الۡاَکۡمَہَ وَ الۡاَبۡرَصَ وَ اُحۡیِ الۡمَوۡتٰی بِاِذۡنِ اللّٰہِ ۚ وَ اُنَبِّئُکُمۡ بِمَا تَاۡکُلُوۡنَ وَ مَا تَدَّخِرُوۡنَ ۙ فِیۡ بُیُوۡتِکُمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿ۚ۴۹﴾

"....................নিশ্চয়ই আমি (ঈসা) তোমাদের রবের নিকট হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট আগমন করেছি; নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য মাটি হতে পাখির আকার গঠন করব, অতঃপর ওর মধ্যে ফুৎকার দিব, অনন্তর আল্লাহর আদেশে ওটা পাখি হয়ে যাবে, এবং জন্মান্ধকে ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করি এবং আল্লাহর আদেশে মৃতকে জীবিত করি এবং তোমরা যা আহার কর ও তোমরা যা স্বীয় গৃহের মধ্যে সংগ্রহ করে রাখ তদ্বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছি - যদি তোমরা বিশ্বাসী হও তাহলে নিশ্চয়ই এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"

এখানে আয়াতের বিভিন্ন অর্থবাচক শব্দ গুলোকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করলে স্বীকৃত হয় যে যীশুর মৃতকে জীবিত করার ,জন্মান্ধ কে দৃষ্টিশক্তি দান করার শক্তি পর্যন্ত ছিল এবং এই শক্তি তাঁর থাকলে নিশ্চয়ই সে প্রয়োগ ও করেছিল।যাই হোক,এখানে পরিষ্কার ভাবে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে,যীশু নিজ থেকে নয় বরং আল্লাহ্ এর সাহায্যে উক্ত কাজগুলো করতেন। আর আল্লাহ্ এর সাহায্য যদি নাই থাকত তাহলে তিনি উক্ত কাজগুলো করতে জানতেন না।

[ নোট: যাই হোক যীশু তথা ঈসা আঃ কি সত্যিই মানুষকে জীবিত করতে পারতেন কিনা,নাকি কথাগুলো রুপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ ই ভালো জানেন। যাই হোক,প্রসঙ্গ ধরে আলোচনায় আসি]

যদি সাধারণ অর্থে এটা নিই যে,যীশু তথা ঈসা আঃ আল্লাহ্ এর সাহায্যে মানুষকে জীবিত করতে পারতেন তাহলে এটা কোরআনের নৈতিক শিক্ষার বিরুদ্ধে এমন তাৎপর্য গ্রহণ করা মোটেই সঙ্গত হবে বলে মনে হয় না।কেননা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে-সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৩

وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً لَّا يَخْلُقُونَ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ
ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًا وَلَا حَيَوٰةً وَلَا نُشُورًا

অর্থঃ তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনের ও তারা মালিক নয়।"

[নোট:অনেক মুশরিক,কাফেররা মানুষ {নমরুদ,ফেরাউন} থেকে শুরু করে চাঁদ,সূর্য এবং প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তুকে স্রষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং কি এখনো আছে।এবং কি যীশুর মাতা মরিয়ম কে পর্যন্ত উপাসনা করত]

আবার পবিত্র কোরআন ১৭ পারায় বলা হয়েছে,সূরা আল হাজ্জ্ব (الحجّ), আয়াত: ৭৩

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥٓ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَن يَخْلُقُوا۟ ذُبَابًا وَلَوِ ٱجْتَمَعُوا۟ لَهُۥ وَإِن يَسْلُبْهُمُ ٱلذُّبَابُ شَيْـًٔا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَٱلْمَطْلُوبُ

অর্থঃ হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।"

উপরোল্লিখিত আয়াতদ্বয় থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহ্ এর আসনে যাদের মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে i)সৃষ্টির অধিকার/ক্ষমতা তাদের নেই;
ii)কারো মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা তাদের নেই;
iii)কাউকে জীবন দানের ক্ষমতাও তাদের নেই;
iv)কোন মৃত কে জীবিত করার ক্ষমতাও তাদের নেই।

সুতরাং ভ্রষ্ট মানব-সমাজ এ পর্যন্ত যাদেরকে আল্লাহর অংশীদার রুপে গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম ঐ গুণ চতুষ্টদ্বয়ের অধিকারী ছিলেন না। তা স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে।আর তাছাড়া মহান স্রস্টার সর্বোত্তম সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের ১১২ নং সূরা ইখলাসের (১-৪) নং আয়াতে। আর উক্ত গুণগুলো আল্লাহ্ ব্যতীত কারো নেই।আরো উল্লেখ্য যে,পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদিস-থেকে জানা যায় যে ,মানুষ একবার মরে যাবার পর কিয়ামত পর্যন্ত তার পুনর্জীবিত হওয়া সম্ভব নয়।যেমন:পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ্ বলেছেন:-"সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৯৫

وَحَرَٰمٌ عَلَىٰ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَٰهَآ أَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُونَ

অর্থঃ যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার সম্পর্কে হারাম (অলঙ্ঘনীয় বিধান) করা হয়েছে যে তার অধিবাসীবৃন্দ পুনরায় কখনো ফিরে আসবে না। "

হাদিসে আছে,আল্লাহ্ তা'আলা শহিদদেরকে তাঁদের প্রার্থনা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন:-

"হে আমার বান্দা,আমার কাছে প্রার্থনা কর,আমি তোমাকে তা দান করব।"শহিদরা তখন বলে:"আমাদের কোনই অভাব নেই। "আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার ঐরকম প্রশ্ন হওয়ার এবং তাঁদের পক্ষ থেকে ঐধরণের উত্তর দেওয়ার পরেও আল্লাহ্ ঐরুপ জিজ্ঞেস করেন।শহিদরা তখন বলেন,"হে প্রভু!আমাদের মাত্র আকাঙ্ক্ষা আপনি আবার আমাদের কে জীবিত করে দুনিয়ায় পাঠান।আবার আমরা আপনার নামে জিহাদ করি এবং শহীদ রুপে নিহত হই।তখন আল্লাহ্ বলেন:আমার অলঙ্ঘ্য নির্দেশ,মৃতেরা আর দুনিয়ায় ফিরবে না অর্থাৎ যারাই একবার মৃত্যুবরণ করেছে তারা দ্বিতীয় বার আর দুনিয়ায় ফিরে আসবে না। "(মুসলিম শরীফ,নাসাঈ,ইবনে-মাজাহ প্রভৃতি)

প্রকৃতপক্ষে যীশুর মূল শিক্ষা থেকে খ্রিস্টানরা কতদূর স্থলিত হয়েছে,নাজরান ডেপুটেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য -ই যীশুর নিজ মুখের উক্তি (কোরআন ৩:৫০ )আয়াতে তার-ই ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে। এর মধ্যে যে গূঢ়-তথ্য নিহিত আছে,তা জানতে যীশুর জীবনচরিতের আশ্রয় নিতে হবে। তাঁর জীবনেতিহাস রচতিয়রা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে ,যে কোন কারণেই হোক,যীশু জনসাধারণের জন্য তাঁর ধর্মমত প্রচার করতেন রুপকভাবে (Allegorical) উপমা উদাহরণের মাধ্যমে। যেমন:ইঞ্জিল লেখক মথি বলেছেন,

"তখন তিনি উপমার দ্বারা তাদের নিকট অনেক কথাই বললেন (১৩:৩)।
পরে শিষ্যেরা এসে তাঁর কাছে বললেন,"আপনি কি কারণে উপমা দ্বারা এদের নিকট কথা বললেন?"তিনি উত্তরে তাদের বললেন,স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে,কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি। কারণ যার আছে তাকে দেওয়া হবে,আর তার উপচে পড়বে;কিন্তু যার নেই,তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপমা দ্বারা তাদের নিকট কথা বলি।

কারণ তারা দেখেও দেখে না,আর শুনেও শুনে না,এবং বুঝেও বুঝে না।"(মথি ১৩:১০-১৩)

মার্ক বলেছেন,"তিনি উপমা দ্বারা তাদের অনেক বিষয় শিক্ষা দিলেন (৪:৩) পরে যখন তিনি একাকী ছিলেন তখন তাঁর সঙ্গীরা সেই ১২ জন শিষ্যকে নিয়ে তাঁকে উপমার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন।তিনি তাদের বললেন,"খোদার রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্বগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বাইরে রয়েছে,তাদের জন্য সমস্ত কিছুই উপমা দিয়ে বলা হয়। "যেন তারা যদিও দেখে,তবুও প্রত্যক্ষ করে না। যদিও শুনে,তথাপি না বুঝে,পাছে তারা ফিরে আসে ও তাদের ক্ষমা করা হয়। পরে তিনি তাদের বললেন,"তোমরা এই উপমাটি যখন বুঝতে পারলে না,তখন অন্যগুলোর অর্থ কি বুঝবে?"(৪:১০-১৩)

উল্লিখিত বর্ণণা থেকে জানা যাচ্ছে যে,যীশু জনসাধারণের মধ্যে রুপক ভাষায় উপমা উদাহরণের মধ্যে দিয়ে ধর্ম প্রচার করতেন ।যার মর্ম তারা কিছুই বুঝতে পারত না।এমনকি তাঁর অন্তরঙ্গ শিষ্য-সহচরদের পর্যন্ত অনেক সময় সেসবের অর্থ /মর্ম গ্রহণ করা ছিল অসম্ভব। এজন্য তিনি বাড়ি গিয়ে তাঁর শিষ্যেদের কে তিনি বুঝিয়ে দিতেন।
অতএব যীশু কি বলেছেন বা না বলেছেন,তাঁর প্রকৃত মর্ম তৎকালীন জনসাধারণ এমনকি শিষ্য-সহচররা পর্যন্ত বুঝতে পারতেন না আর এখন বর্তমান খ্রিস্টানদের তো বুঝার প্রশ্নই ওঠে না।অধিকন্তু যিশুর কাছে জিজ্ঞেস করার কোন সুযোগ সুবিধা যখন নেই তখন ৩:৫০ আয়াতের অবোধ্য উক্তি নিয়ে যীশু খ্রিস্টের অতিমানুষী বা খোদাত্বের /খোদায়ী স্বরুপের ভিত্তি খোঁজা খ্রিস্টান প্রচারকদের সঙ্গত নয়।

Share this:

More articles

চলুন আমরা পবিত্র আল কুরআনের সাহিত্য শৈলীর দিকে নজর দেই।মহান আল্লাহ্ চেয়েছেন আল কুরআন একটি মুযিজা ও জীবন্ত সাক্ষ্য প্রমাণ এই দুনিয়ার শেষ অবধি জারি থাকবে। এটা অবিশ্বাসীদের জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কোন কিছু দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে হলে, নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ দাবি করলে, এটা অবশ্যই ঐসব বিষয় দিয়েই করতে হবে যে ক্ষেত্রে তারা দক্ষতার শীর্ষে থাকে। আপনি দুর্বল বা অক্ষম কোন ব্যক্তিকে ভারী জিনিস উত্তোলনের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারেন না; কেননা এটাতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। একজন ভারোত্তোলনকা....
16 Min read
Read more
আমাদের জীবনের কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক ধাপ রয়েছে। এভাবে জীবন তার শেষ সময়ের দিকে গড়ায়। চিরন্তন এক বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে একটি উপমার সৌন্দর্যের মাধ্যমে। এই আয়াতটা সূরা হাদিদের অন্তর্ভুক্ত। এই সূরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মুসলিম সমাজকে কেন্দ্র করে। এমন অনেক মাদানি সূরা রয়েছে যার মূল আলোচ্য বিষয়টিতে সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ এই ধর্ম তথা ইসলামের আহ্বান সমগ্র মানবজাতির জন্য বিশেষ বার্তা। কিন্তু কুরআনে আবার এমন জায়গা রয়েছে, বিশেষ করে মদিনায় অবতীর্ণ কোন কোন সূরা, যেখানে আলোচ্য বিষয়ের মূল উদ্দেশ....
28 Min read
Read more
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।  আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম  ● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ কর....
17 Min read
Read more
খ্রিস্টান মিশনারিরা যীশু খ্রিস্টকে ঈশ্বর দাবি করেন অথচ তিনি ছিলেন একজন মানুষ। আর বাইবেল বলছে মানুষ পাপী অপরদিকে ঈশ্বর এসবের ঊর্ধ্বে। তাহলে যীশু একজন মানুষ হয়েও কিভাবে পাপের ঊর্ধ্বে হতে পারে? যীশু অপবিত্র:বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে:4 ঈশ্বরের তুলনায় কে-ই বা অধিকতর পবিত্র? কোন মানুষই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না।5 ঈশ্বরের চোখে চাঁদ পর্যন্ত উজ্জ্বল নয়, তারারাও খাঁটি নয়।6 মানুষ ঈশ্বরের তুলনায় কম খাঁটি।তুলনায় মানুষ উল্লু এবং কৃমিকীটের মত!(যোব ২৫:৪-৬) বাইবেলের মধ্যে আরো বলা হয়েছে: প্....
8 Min read
Read more
॥ ১॥ আল কুরআন নাজীলের সূচনা ৬১০ খৃষ্টাব্দে । আল কুরআন রাসুলুল্লাহর  (ﷺ) জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়বস্তু নিয়ে নাজীল হয়েছে খণ্ডে খণ্ডে, দীর্ঘ ২৩ বছরে। কুরআন পরিপূর্ণ রূপ পায় ৬৩২ ঈসায়ী সালে। কুরআনের প্রথম আয়াত সমুহ বদলে দেয় নবীজীর (ﷺ) জীবন। এরপর নবীজী (ﷺ) ও সাহাবীদের (رضي الله عنه) জীবন আবর্তিত হয় আল্লাহর কালাম তথা  কুরআনকে ঘিরেই । তাই সে সময় থেকেই কুরআনের প্রতিটি আয়াত বিশুদ্ধভাবে সংরক্ষণে প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না।  কুরআনের আয়াতাংশ, আয়াত, সূরা—যখনই যা নাজিল হতো, তখনই নবীজী (ﷺ) তা নিজে বার বার তেলাওয়াত ....
15 Min read
Read more
Did a  goat/sheep really  eat  some verses of the Quran?    Translator:- Habib Ibnay Hussain   \________________________________/   Non-muslims &  Atheists almost complain  with sunan ibnay Mazah hadith that a goat ate some verses of the Quran.Thus claim that they questioned about archive of Quran.insallah we will solve this complain now.   Hadith-   حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، ....
11 Min read
Read more