Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

এই বৈজ্ঞানিক যুগে বাদশাহ যুলকার নাইনের প্রাচীর কেন দেখা যায় না?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

রব্বি যিদনী ইলমা 

বিষয়:-"পবিত্র কোরআনের রহস্যময় আয়াতের ঘটনা বিশ্লেষণ

আলোচনা :-বাদশাহ যুলকার নাইনের প্রাচীর কেন দেখা যায় না?

\___________________________________/

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআললাহ।আপনারা সবাই জানেন যে যুলকার নাইন একজন ন্যায়পরায়ণ সৎ ও আল্লাহ্ ভীরু সমগ্র পৃথিবীর (পূর্ব-পশ্চিম) বাদশাহ ছিলেন। যিনি ইয়াজুজ এবং মাজুজের জন্য একটি প্রাচীর তৈরি করেছিলেন তাদের কে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে দেওয়ার জন্য।এখন আমাদের সবারই মনে একটা প্রশ্ন জাগে যে যুলকার নাইনের উক্ত প্রাচীরটি কোথায়?পৃথিবীতে এখন এত এত বৈজ্ঞানিক উন্নত প্রযুক্তি তারপরেও কেন আমরা উক্ত প্রাচীরটির রহস্য উদঘাটন করতে পারছি না!উক্ত প্রাচীরটি কোথায় গেল?আমরা কেন উক্ত প্রাচীরটির সন্ধান পাচ্ছি না?যেখানে আমরা মহাকাশে চলে গিয়েছি ,এতসব গ্রহ-নক্ষত্র সম্বন্ধে জানতে পারছি কিন্তু যুলকার নাইনের উক্ত প্রাচীরটির রহস্য আমরা খুঁজে বের করতে পারছি না!এর কারণ কি?তা কোরআন থেকে রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে বলব যে কেন আমরা উক্ত প্রাচীরটির দেখা পাচ্ছি না?

\___________________________________/

●মহান সর্বশক্তিমান রব মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা পবিত্র আল কোরআনে সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ৯৬ তে বলেছেন:-

 

ءَاتُونِى زُبَرَ ٱلْحَدِيدِ حَتَّىٰٓ إِذَا سَاوَىٰ بَيْنَ ٱلصَّدَفَيْنِ قَالَ ٱنفُخُوا۟ حَتَّىٰٓ إِذَا جَعَلَهُۥ نَارًا قَالَ ءَاتُونِىٓ أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا

 

অর্থঃ(অতঃপর জুলকার নাইন বলল:) তোমরা আমাকে লৌহপিন্ড এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে লৌহস্তুপ দুই পর্বতের সমান হলো তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।"

 

(So Dulkqar Nain said:)Give me pieces (blocks) of iron, then, when he had filled up the gap between the two mountain-cliffs, he said: Blow, till when he had made it (red as) fire, he said: Bring me molten copper to pour over it."

 

এখানে কয়েকটি পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে:

I)লোহার পাত তথা লোহপিন্ড আনার কথা বলা হয়েছে 

ii)পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান/জায়গা লৌহস্তুপ দ্বারা পর্বত সমান উঁচু করা হয়েছে ;

iii)হাপরে দম দিতে দিতে তা আগুনে পরিণত করা হলো;

iv)এরপর গলিত তামা দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।

 

বিস্তারিত বর্ণনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ:

\__________________________/

উপরোল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে,প্রথমে লোহা দিয়ে পাত তৈরি করা হলো,অর্থাৎ লোহার পাত দিয়ে প্রাচীরটি তৈরী করা হলো।তারপর সে প্রাচীরে আগুন জ্বালানো হলো যাতে সমস্ত লোহা আগুনের উত্তাপে একটি লোহাতে অর্থাৎ একটি দেয়ালে/প্রাচীরে পরিণত হয়।

 

"তাপর যুলকার নাইন বললঃ,তোমরা আমাকে গলিত তামা এনে দাও এবং সেই তামাটা আমি উক্ত লোহার পাতের উপর দিয়ে দেই।"

 

দেখেন কত ডিটেইলস মহান আল্লাহ্ পাঁক এখানে বলে দিয়েছেন আল্লাহ্ তা'আলা কিন্তু চাইলেই পারতেন এতটুকু বলতে যে,যুলকার নাইন তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিল যে প্রাচীরটা ছিল অভেদ্য। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ্ তা'আলা এখানে লোহার কথা বলেছেন,তামার কথা বলেছেন অর্থাৎ ডিটেলস বলে দিয়েছেন তাহলে বুঝতে হবে যে এখানে কিছু রহস্য রয়েছে। কিন্তু কী রহস্য?আপনারা সবাই জানেন যে ,লোহা হচ্ছে এমন একটি শক্তিশালী ধাতু যার মতো শক্তিশালী ধাতু সহজে নাই বললেই চলে।এবং এই লোহাটি যতই শক্তিশালী হোক না কেন,পানির সংস্পর্শে এলেই মরিচায় পরিণত হয়।

 

অথচ  অপরদিকে কপার (Cu2) বা তামা হচ্ছে লোহা অপেক্ষা কম শক্তিশালী কিন্তু পানির সংস্পর্শে আসলে এটা মরিচায় পরিণত হয় না। আর মরিচায় পরিণত হওয়া মানে উক্ত ধাতুর ক্ষয় হয়ে বিনষ্ট হওয়া বা ভঙুর হয়ে যাওয়া। 

 

ব্রিটিশদের যেই নেভী জাহাজগুলো রয়েছে অর্থাৎ তাদের যেই জাহাজগুলো তৈরী করা হয় যা সমুদ্রে চলাচল করছে তার নিচের ভাগ যা কিনা পানির সাথে লেগে থাকে তা তামা দিয়ে তৈরি করা হয়।তাছাড়া এই কপার বা তামার আরেকটি ধর্ম হচ্ছে এটি যখন কোন পরিবেশে থাকে এবং বাতাসের অক্সিজেনের সাথে কানেক্টড হয়ে অক্সিডেশন পদ্ধতিতে এই তামা একটি গ্রিন প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরী করে অর্থাৎ সবুজ ধরনের একটি প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরী করে ।আপনারা অবশ্যই স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখেছেন যেটা আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত সেই স্ট্যাচু অব লিবার্টি কিন্তু সম্পূর্ণ তামা দিয়ে তৈরি করা। যখন এই স্ট্যাচু অব লিবার্টি তামা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তখন এটা ছিল লালচে বর্ণের অর্থাৎ এটা আসল রঙের ছিল।কিন্তু পরে অর্থাৎ দীর্ঘদিন পর এটা সবুজ রঙের হয়ে যায়। এর কারণ কপার বা তামার ধর্মই হচ্ছে সে পরিবেশের অক্সিজেনের সাথে থাকতে থাকতে একটা গ্রিন অর্থাৎ সবুজ রঙের আবরণ তৈরি করে। এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে উক্ত আয়াতে "যুলকার নাইন বলল যে তোমরা আমাকে গলিত তামা এনে দাও তা আমি এর উপরে ঢেলে দেই " অর্থাৎ লোহার যে প্রাচীর টা ছিল তার উপরে তামা দেওয়া হলো ।আর কপার বা  তামার সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্মই হলো আস্তে আস্তে সবুজ আবরণ তৈরী করা।তো ঐখানেও ঠিক একই বিষয় টা হয়েছে। লোহার উপর তামার প্রলেপের কারনে সেখানে আস্তে আস্তে সবুজ ধরণের আবরণ হয়ে গিয়েছে।আর সেই সবুজ আমাদের প্রকৃতির সবুজের সাথে মিলে গিয়েছে। যার কারণে এটা অসম্ভব হয়ে গেছে বের করা যে আসলে প্রাচীরটি কোথায়!কেননা এটা একদম পৃথিবীর সবুজ রঙের সাথে মিশে গিয়েছে। কোন ভাবেই আপনি বুঝতে পারবেন না যে এখানে আসলে কোন প্রাচীর কি ছিল বা এটা কি প্রকৃতিক ।মানে এই জিনিসগুলো এখন বোঝার কোন উপায় নেই। ঠিক এই কারণেই আমরা বের করতে পারছি না যে যুলকার নাইনের উক্ত প্রাচীরটি কোথায়।কোরআনে মহান আল্লাহ্ পাঁক বিষয়টা এত সুন্দর করে বলেছেন ,এটা নিয়ে যদি আমরা গবেষণা না করতাম তাহলে এসব জিনিস কখনোই জানা যেত না এর কারণ যে আসলে কিভাবে কি হচ্ছে। তো আমাদের মনের মধ্যে যে প্রশ্নটি উক্ত প্রাচীরটি কেন দেখতে পাচ্ছি না বা এটা কোথায় এর যথার্থ ব্যাখ্যা হচ্ছে এটাই।আলহামদুলিললাহ!আল্লাহ্ তা'আলা এখানে যে দুটি ধাতুর নাম উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ লোহা ও কপার বা তামার কথা যার জন্য যথার্থ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা গেছে।আর এই দুটি ধাতুর নাম উল্লেখ না করলে এর কিছুই ব্যাখ্যা করা যেত না বৈজ্ঞানিক ভাবে।আশা করি এখন বুঝতে পারছেন। 

আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দিক ও আমাদের ক্ষমা করুন। আমীন