Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ৩://পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন!

কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব:৩

আলোচনা:পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন!

\____________________________________/

আদিমকালে মানুষ বিশ্বাস করতো যে,পৃথিবী চ্যাপ্টা।বহু শতাব্দীব্যাপী মানুষ পরিভ্রমণে বহুদূর পর্যন্ত গমনে ভয় পেত এই কারণে যে,পাছে সে পৃথিবীর কিনারা হতে পড়ে যায়?স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক (Sir Francis Drake) হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর চারিদিকে জলপথে ভ্রমণ করে প্রমাণ করেছিলেন যে পৃথিবী গোলাকারের ন্যায়। দিন ও রাতের পরিবর্তন সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ২৯

 

أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِىٓ إِلَىٰٓ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

 

অর্থঃ তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?"

 

এখানে "প্রবেশ/প্রবিষ্ট করান "-এর অর্থ হলো রাতের ধীরে ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হওয়া অনুরুপভাবে দিনের ধীরে ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হওয়া।আর এই প্রাকৃতিক ঘটনা তখনই সংঘটিত হতে পারে যদি পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারের ন্যায় হয়।যদি পৃথিবী চ্যাপ্টা হতো তাহলে হঠাৎ করে রাত দিনে এবং দিনও হঠাৎ করে রাতে রূপান্তরিত হতো।মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের আয়াতেও পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির কথা পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে ।পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে সূরা আয্‌-যুমার (الزّمر), আয়াত: ৫

 

خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ يُكَوِّرُ ٱلَّيْلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيْلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِى لِأَجَلٍ مُّسَمًّى أَلَا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفَّٰرُ

 

অর্থঃ তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"

 

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, (يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُه۫ حَثِيْثًا) “তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে” (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৫৪) يُكَوِّرُ অর্থ হলো এক বস্তুকে অপর বস্তুর ওপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেয়া। এরপর বলা হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাই চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়মাধীন করে দিয়েছেন যারা তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথ ছাড়া কখনো অন্যত্র চলাচল করে না। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ গতিসীমা বজায় রেখে চলাচল করে।

 

১)এখানে يُكَوِّرُ "-এর অর্থ:-" এক বস্তুকে অপর বস্তুর উপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়া, রাত্রিকে দিনের উপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, রাত্রি আনয়ন করে দিনকে ঢেকে দিয়ে তার আলো শেষ করে দেওয়া এবং দিনকে রাত্রি দ্বারা পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, দিন আনয়ন করে রাত্রিকে ঢেকে দিয়ে তার অন্ধকার শেষ করে দেওয়া। এর অর্থ এবং (يُغْشِيْ الَّيْلَ النَّهَارَ) (الأعراف-৫৪) এর অর্থ একই।(তাফসীরে আহসানুল বয়ান এবং ফাতহুল মাজীদ)

 

[সহজার্থে :এখানে আরবি শব্দ "কাওবেরু"-শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দের অর্থ আচ্ছাদিত করা,জড়ানো বা কুন্ডলী করা বা গোল করে প্যাচানো অর্থাৎ যেভাবে মাথার চারিদিকে পাক দিয়ে পাগড়ি বাঁধা হয়।দিন ও রাতের এই আচ্ছাদন/জড়ানো বা প্রবিষ্ট করানো তখনই সম্ভব হতে পারে যদি পৃথিবী গোলাকারের ন্যায় হয়। 

আবার পৃথিবী বলের মত পুরোপুরি গোলাকার নয়।তবে এটা ভূগোলকের মতো অর্থাৎ এটার মেরুদ্বয় চ্যাপ্টা। কোরআনে বর্ণিত আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আন নাযিয়াত (النّزعت), আয়াত: ৩০  -এ বলা হয়েছে:-"

وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ

অর্থঃ পৃথিবীকে এর পরে বসোপযোগী করেছেন।"

 

এখানে আরবি শব্দ "দা-হাহা"-শব্দের মানে হলো উট পাখির ডিম।আর উট পাখির ডিম পৃথিবীর আকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রায়।আর এভাবেই কোরআন পৃথিবীর আকৃতির ব্যপারে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েছে যদিও যখন কোরআন পৃথিবীতে নাযিল হয় তখন অতিপ্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাস ছিল পৃথিবীর চ্যাপ্টা আকৃতি। 

 

(নোট:আরবি শব্দ "দাহাহা "-কে আব্দুল্লাহ্ ইউসুফ আলী অনুবাদ করেছেন "সুবিশাল বিস্তার" যা সঠিক অনুবাদ। "দাহাহা "-এর অন্য আরেকটি অর্থ হলো "উট পাখির ডিম "