ইসলামে নারীরা ও তালাক দিতে পারে।

অজ্ঞতা :

ইসলামে তালাকের অধিকার শুধু পুরুষদের দেয়া হয়েছে। নারীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি।নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নাই এই ধর্মে।

অজ্ঞতার জবাব:

ইসলামে নারীরা ও তালাক দিতে পারে:

তালাক শব্দের অর্থ হচ্ছে বিয়ে বিচ্ছেদ। আর ইসলামি শরিয়তে তালাক নিকৃষ্ট কাজ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল সা: এক হাদিসে বলেন ,

“তালাক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ।” [১]

ইসলামে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা শর্ত সাপেক্ষে নারী পুরুষ উভয়কে দেওয়া হয়েছে। তবে নারী ও পুরুষের তালাকের মধ্য কিছুটা পার্থক্য আছে ।

নারী পুরুষের তালাক দেওয়ার ক্ষমতার মাঝে পার্থক্যের পেছনে অনেক হিকমত আছে। জ্ঞানী নারী ও পুরুষ সকলেই জানেন যে,  পুরুষের তুলনায় নারীগণ চঞ্চলমতি হন। তারা খুব সহজেই কারো প্রতি খুশি হন, আবার অল্পতেই কাউকে শত্রুভাবা শুরু করেন। তাই, তারা যদি এতো সহজেই তালাক দেওয়ার অধিকারিণী হন তাহলে ভবিষ্যতে সংসারে এটা তাদের স্বামীর প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলবে। স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হলেই খুব সহজেই সম্পর্কছিন্ন করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন।

 

 তাই কোনো নারীর যদি সত্যিই উপযুক্ত কারণ থাকে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার মতো, (যেমন স্বামী ব্যভিচারী অথবা স্বামী কর্তৃক মারধরের কারণ শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকে, স্বামী দুঃশ্চরিত্রের হয়ে থাকে), তাহলে তার সুযোগ আছে “খোলা” করে তার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য। খোলা শব্দের অর্থ হচ্ছে পৃথক হওয়া।

 এখন আমরা ইসলামের তালাকের বিস্তারিত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব ।

 

ইসলামে তালাকের ৫টি পদ্ধতি আছে যথা:

 

প্রথম:

এ চুক্তির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বলবে ব্যাস আমরা আর একসাথে ঘর করার মত উপযুক্ত নই- চল আমরা উভয়কে ছেড়ে দেই। একে ‘তালাকে মুবার’রা’ বলা হয় ।‌

দ্বিতীয়:

এই প্রকার তালাক স্বামীর একক ইচ্ছায় হবে। যেখানে স্বামীকে তার স্ত্রীর প্রদেয় মোহর পরিশোধ করতে হবে এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে প্রদেয় উপহারও ফিরিয়ে দিতে হবে। 

তৃতীয়:

স্ত্রীর একক ইচ্ছায় তালাক দেয়া। যদি তার বিয়ের চুক্তিতে তথা তার নিকাহনামায় এটি উল্লেখ থাকে তবে এককভাবে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারবে- এটাকে বলা হয় ‘ইসমা’। 

চতুর্থ:

এ পদ্ধতিটি হলো, স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে অথবা তাকে ন্যায্য অধিকার না দেয় তখন স্ত্রীর কাজীর কাছে যাওয়ার অধিকার আছে। এবং বিয়ে বাতিল করার আবেদন জানাতে পারবে। একে বলে ‘নিকাহ-ই-ফাসেদ’। তখন কাজী স্বামী কে পুরো মোহর পরিশোধ করার জন্য বলবে।  পঞ্চমঃ  এ পদ্ধতিটেকে বলা হয় “খোলা”। এক্ষেত্রে যদিও স্বামী সব দিক থেকে ভাল হয় এবং তার সম্পর্কে স্ত্রীর কোন অভিযোগ না থাকে তথাপি তার ব্যাক্তিগত কারণে স্বামীকে পছন্দ করেনা- তখন সে স্বামীকে অনুরোধ করতে পারে তাকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য। আর এটাই হলো ‘খোলা’। 

 নারীর একক ইচ্ছায় তালাকের প্রমাণ:

থাবিত বিন কায়েসের স্ত্রী রসুলের নিকট আসিয়া বলিল, 

  ‘হে আলাহ’র রসুল ! থাবিত বিন কায়েসের চরিত্র বা দ্বীনদারীর উপর আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু আমার ভয় হইতেছে আমি আলাহ’র অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিতে পারিব না’ (অর্থাৎ স্বামীর প্রতি কর্তব্যে গাফিলতি হতে পারে − হাদিস ২৪৮৩, হাফেজ আবদুল জলিল)।  ইহাতে রসুল বলিলেন, ‘তুমি কি তাহার বাগানটা ফেরৎ দিতে রাজি ?’ সে বলিল, ‘হ্যাঁ।’ অতএব সে তাহাকে বাগান ফেরৎ দিল এবং রসুল (দঃ) থাবিতকে তালাক দিতে বলিলেন। (এই স্ত্রীর নাম জামিলা − হাদিস নং ২০০)। 

দেখলেন ?  স্বামী ভালোবাসলেও কিংবা সে দ্বীনদারী ভাল মানুষ হলেও নারী বাধ্য নয় সে সংসার করতে যা তার মন চায় না। নারীকে ইচ্ছের এই প্রাকৃতিক অধিকার দিয়েছে কোরাণ ও রসুল। শুধুমাত্র স্ত্রীর ইচ্ছের ভিত্তিতে নবীজী বিয়ে বাতিল করেছেন এর প্রমাণ আরো আছে যেমন সহি ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড ১৮৭৪। 

এর পরেও শারিয়া আইন “খুল্” বানানো হয়েছে যাতে,

স্ত্রী তালাক চাইলে কোর্টে মামলা করতে হবে। শারিয়া আইনে আছে শারীরিক অক্ষমতা, মারপিট, খরচ না দেওয়া ইত্যাদি বিশেষ দু’একটা কারণের স্পষ্ট প্রমাণ থাকলে কাজী নিজে থেকে বিবাহ বাতিল করতে পারেন। ওসব প্রমাণ না থাকলে কোর্ট স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্বামীকে দিয়ে স্বামীর অনুমতির চেষ্টা করবে, নতুবা স্ত্রীর ইচ্ছের কোনই দাম নেই শারিয়া আইনে (বি-ই-আ ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৮, ধারা ৩৫৫ ; শাফি’ই আইন #হ.৫.০, হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১১২, শারিয়া দি ইসলামিক ল’ − ডঃ আবদুর রহমান ডোই, পৃঃ ১৯২)। 

  বাস্তবে তো আমরা দেখি ওসবের প্রমাণ কত কঠিন। তাছাড়া, কোন বিচারকই তো দেবতা নন। তিনিও অজ্ঞানতার দরুণ, আবেগের কারণে বা ঘুষ খেয়ে নারীর জীবন দোজখ করতে পারেন: দেখে নিন “শারিয়া, অতিতের দলিল” নিবন্ধ।  কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নারী যে তার স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার এ পদ্ধতিগুলো গ্রহন করতে পারে সে কথা খুব কম লোকই বলে। কিছু আলেম-ওলামা আছেন যারা এ পাঁচ ধরনের ডিভোর্স কে ২ বা ৩ ভাগে ভাগ করেন; কিন্তু ব্যাপক অর্থে ইসলামে তালাক পাঁচ প্রকার।  আল্লাহ্‌ সকলকে সত্যকে জানার ও মানার তৌফিক দান করুন,আমিন। 

নোট:

  [১] উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ ছহীহ নয় (আবূদাউদ হা/২১৭৮; যঈফুল জামে‘ হা/৪৪)। তবে মর্ম সঠিক। শায়খ উছায়মীন বলেন, উক্ত মর্মে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে; কিন্তু সনদ ছহীহ নয়। যদিও মর্ম ছহীহ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তালাক দেওয়াকে অপসন্দ করেন। কিন্তু জাতির কল্যাণে এর বৈধতা রেখেছেন (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৫৫/ ১০)

 

লিখেছেন: নয়ন চৌধুরী ।

[ Facebook: https://www.facebook.com/nayan.choudhary.148 ]

Share this:

More articles

প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া জেনেটিক ড্রিফট প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জ....
4 Min read
Read more
নাস্তিকসহ কিছু মডারেট মুসলিমদেরকেও বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ! গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়! এই লেখাটিতে গান-বাজনার ক্ষতিকর দিক, ইসলামে গান-বাজনা হারাম হওয়ার রেফারেন্স এবং কেন গান-বাজনা হারাম তা তুলে ধরা হয়েছে।  আল-কোরআনে গান-বাজনা হারাম  ● মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ কর....
17 Min read
Read more
◾মহানবী মুহাম্মদ সা: তার ৬৩ বছর ৪ দিনের জীবনে মোট ১১টি বিবাহ করেন। রাসূল (সা.) এর ১১ জন স্ত্রীদের মধ্যে দশ জনই ছিলেন হয় বিধবা না হয় তালাক প্রাপ্তা। যথাক্রমে, ◾খাদিজা (রা:)। ◾সওদা বিনতে জামআ (রা:)। ◾আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা:)। ◾হাফসা বিনতে ওমর (রা:)। ◾যয়নব বিনতে খোযায়মা (রা:)। ◾উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা:)। ◾যয়নব বিনতে জাহাশ ইবনে রিয়াব (রা:)। ◾যুয়াইরিয়া বিনতে হারেস (রা:)। ◾উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রা:)। ◾সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রা:)। ◾মায়মুনা বিনতে হারেস (রা:)।  ◾খাদিজা (রা:) - মদি....
20 Min read
Read more
Falsifiability ধারণার প্রবক্তা কার্ল পপার বলেছেন যে, বিবর্তন তত্ত্ব পরীক্ষণযোগ্য ফ্যাক্ট না, বরং অধিবিদ্যা গবেষণা কার্যক্রম। উইলিয়াম ডেম্বস্কি লিখেছেন, falsifying Darwinism seems effectively impossible. কিন্তু কেন? কারণ বিবর্তন তত্ত্ব একটা প্যাকেজ তত্ত্ব, এর আরও অনেক অনুমান আছে। যখনই কোন প্রমাণ বিবর্তনের বিরুদ্ধে যায়, তখনই কোন না কোন অনুমান সেই আঘাত সহ্য করে নেয়। আর বিবর্তন তত্ত্ব সুরক্ষিত থেকে যায়। যখনই কোন ফসিল 'older than previously thought' প্রমাণিত হয়, তারা বলবে যে, "পূর্বের ক্ল্যাডোগ্রামে....
3 Min read
Read more
 অভিযোগঃ হাদিসে আজওয়া খেঁজুর খেয়ে বিষ পান করলে বিষ ক্রিয়া হবে না এমন বক্তব্য রয়েছে।[আমি এমন কোনো হাদিস পাই নি।] তাই বিশ্বাসী মুসলিমদের আজওয়া খেঁজুর খেয়ে হাদিসের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা উচিত।  হাদিস: সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি সকালে আজওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, তাকে সেদিন কোনো বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, চিকিৎসা অধ্যায়, ৫৩৬৪)।  প্রতিদিন খেতে হবে এমন হাদিসও রয়েছে।  ইসলামবিরোধী ব্যাখ্যা: যেহেতু সকালে আজওয়া খেঁজুর খেলে বিষ কাজ করে না, মুমিনদে....
15 Min read
Read more
অজ্ঞতা: ‘মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু কুকুর কে হত্যা করতে বলে ইসলাম’ যা একটি জঘন্য কাজ।  অজ্ঞতা প্রসূত অভিযোগের জবাব: জড়জগৎ, জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ এই পৃথিবীর উপাদান। জড়জগৎ প্রাণহীন। উদ্ভিদজগতেও আছে ন্যূনতম প্রাণের স্পন্দন। পশুপাখির মধ্যে প্রাণের উপস্থিতির পাশাপাশি রয়েছে আহার-বিহার, বিচরণ ও সন্তান ধারণের ক্ষমতা। এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য আছে মানুষেরও। এরই সঙ্গে মানুষের আছে বিবেক ও বোধশক্তি; জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা এবং সত্য-মিথ্যা পরখ করার ক্ষমতা। এ গুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ জীবের আসনে সমাসীন।  ইসলাম মনে করে, এই পৃথিবীতে....
8 Min read
Read more