Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  নাস্তিক্যধর্ম

The Problem of Evil - মুসলিম ও নাস্তিক্য উভয় ধর্মেই ভিত্তিহীন - The Logical Problem

বস্তুবাদী নাস্তিকদের কাছ থেকে কমন একটা আর্গুমেন্ট পাওয়া যায় এখন। যার মাধ্যমে তারা "আল্লাহ নেই"-এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। এটাকে নাম দেওয়া হয়েছে 'Problem of Evil'.

আর্গুমেন্টটি হলো এরকম:

"আমরা জানি যে আল্লাহ Good এবং Powerful. যদি Good হয়ে থাকেন, তাহলে পৃথিবীতে যে এতোসব অন্যায়/খারাপকাজ হচ্ছে তিনি এসব থামাতেন। যদি না থামাতে পারেন তাহলে তিনি Powerful না। আর যদি ইচ্ছে করেই না থামিয়ে থাকেন তাহলে তিনি Good না। Good অথবা Powerful একটি জিনিসও মিস হয়ে গেলে তিনি আর আল্লাহ থাকেন না। অতএব এরকম কোনো আল্লাহ নেই।"

নতুন শোনা রা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন তো?ব্যাপার না। ইনভ্যালিড আর্গুমেন্ট দিয়ে কোনো কিছু প্রমাণ করা যায় না। আমি এতো বিস্তারিততে যাবো না। অল্প কথায় (আমি যেরকম চিন্তা করছি) বুঝিয়ে দিচ্ছি।

 

প্রথমত, এখানে তারা পৃথিবীতে "অন্যায়/খারাপকাজ" এর কথা এনেছে। অথচ বস্তুবাদে অন্যায়/খারাপকাজ বলতে কিছুই নেই। সবকিছুই ভ্রম। তাদের দিক থেকে এই আর্গুমেন্ট এখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারা যদি বলে যে, আমাদের আস্তিক/মুসলিমদের দিক থেকে লজিকটা দিয়েছে তাহলে পোস্টের পরবর্তী অংশ আপনার জন্য।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ Powerful এটাতে তেমন বোঝানোর কিছুই নেই। তবে কোনো ঘটনা ঘটাবেন কিনা এটা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে (এ নিয়ে তাকদীর নিয়ে আমার পোস্টটি দেখতে পারেন)[1]

 

এবার আসবে Good আর Non-Good এর বিষয়টি।

আচ্ছা, আল্লাহর Goodness আর আমাদের চোখে Goodness কি এক? Goodness বলতে আমরা কী বুঝি? কাউকে সাহায্য করা, উপকার করা ইত্যাদিকে আমরা "ভালো" বলি। আবার অপকার করা, হত্যা, লুটপাট এগুলোকে আমরা "খারাপ" বলি। কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এগুলোকে আমরা ভালো কিংবা খারাপ কেন বলছি? নাহ! বস্তুবাদীতা এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। আবার কিছু মানুষ এখন বিবেক-বুদ্ধির টার্মটা নিয়ে আসবে।

কিন্তু বিবেক-বুদ্ধির টার্মটা আনলেই তো নাস্তিক্য ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। যেহেতু বুদ্ধিহীন কোনো কিছু থেকে বুদ্ধি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। আবার বিবেক-বুদ্ধি বৈজ্ঞানিক কোনো গবেষণায় প্রমাণিত নয়। এবারও যদি বলে যে তারা আমাদের দিক থেকে যুক্তিগুলো দিচ্ছে তাহলে বলবো, আমাদের যুক্তি (বিশেষ করে আমার) এরকম নয়। বিবেক-বুদ্ধি ভালো খারাপের নিশ্চায়ক নয়। একজন মাতালের কাছে হত্যা-ধর্ষণ ভালোই। এখানে হয়তো বলতে পারেন মাতালের তো বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু, নষ্ট বিবেক কী? কেন বললেন? তারটা নষ্ট হয়েছে কেন? ভালো বিবেক কী? নষ্ট ও ভালো বিবেক নির্ধারণের মানদণ্ড কী যেখানে বিবেক বুদ্ধি প্রমাণিতই নয়! (এখানেও কিন্তু ভালো বিবেক টার্মটি চলে এসেছে)।

আপনি হয়তো বলবেন স্বাভাবিকভাবে যে বিবেক থাকে সেটাই ভালো।

 

কিন্তু, মানুষের এই স্বাভাবিকতার টার্মটি আনলেই কিন্তু নাস্তিক্য ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ মানুষের সহজাত অনুভূতি, বিশেষ করে জন্মের পর আস্তিক থাকে[2]। মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকতই আল্লাহর কনসেপ্ট বিদ্যমান।

অর্থাৎ, মানুষের বিবেককে ভালো খারাপের স্ট্যান্ডার্ড ধরে আর্গুমেন্ট দিতে পারবেন না নাস্তিকরা। দিলে প্রমাণ করতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ সেটা আল্লাহই আমাদেরকে শিখিয়েছেন। যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়ে সেটাকে আপডেইট করেছেন। 'চুরি' খারাপ, এটাকে আল্লাহ খারাপ বলেছেন বলেই এটাকে আমরা খারাপ বলি। ইতিহাস তাই বলে। এমন না যে, হঠাৎ করে কোনো নাস্তিকের "বিবেক"-এ লাগলো, আরে চুরি করা তো খারাপ! তারপর থেকে সবাই মানতে লাগলো চুরি করা খারাপ! আল্লাহ বার্তাবাহক পাঠিয়েই নির্দেশ দিয়েছেন কোনটা খারাপ কোনটা ভালো। এবার আসি পয়েন্টে, যেটা শুরু করেছিলাম। আল্লাহর Goodness আর আমাদেরকে Define করে দেওয়া Goodness কি এক?

মহান আল্লাহ বলেন, "কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।" - কোরআন ৪২:৪১।

 

একটা উদাহরণ দিই,

নিজেকে একটা প্রোগ্রামারের জায়গায় ভাবুন। একটি গেইম বানালেন, যেখানে দুটি স্বাধীন ক্যারেক্টার রাখলেন। তাদের দুটি ক্ষমতা দিলেন, অপরজনকে থাপ্পড় দেওয়ার এবং অপরজনকে লাথি দেওয়ার।আপনার মন চাইলো এদের পরীক্ষা করে দেখতে।আপনি Define করে দিলেন, লাথি দেওয়া হলো ভালো আর থাপ্পড় দেওয়া খারাপ। আপনি আরেকটি ক্যারেক্টার তৈরি করে তাদের এই তথ্যটা জানিয়ে দিলেন আর সাবধান করে দিলেন যে আপনার ডিফাইন করে খারাপ কাজটা করলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তি কীরকম হবে তার ছোটখাটো নমুনাও দিলেন তাদের দুঃখকষ্টে পতিত করে। চতুর্থ আরেকটি ক্যারেক্টার তৈরি করলেন, যেটি থাপ্পড় দেওয়ার জন্য উষ্কাবে। এখন গেমের ক্যারেক্টারগুলো যে কাজই করুক, থাপ্পড় অথবা লাথি, সেগুলো তো আপনার ডিফাইন করা খারাপ ভালো। আপনি ক্যারেক্টারগুলোর ইশ্বর। গেমের ভিতরের কাজকারবার কি আপনার Goodness এ প্রভাব ফেলবে?

এই পৃথিবীও তেমনই, আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। কিছু জিনিসকে খারাপ ঘোষণা করেছেন (জ্বীন ও ইনসানের জন্য), আর কিছু জিনিসকে ভালো ঘোষণা করেছেন। এখন আমাদের কাজকারবার কি আল্লাহর Goodness এ প্রভাব ফেলবে?

"Defined Good" আর "Divine Good" সেম না ব্রো।

(তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কমন জিনিস রেখেছেন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে)।

 

তাদের লোডেড আর্গুমেন্টটা ইনভ্যালিড হয়ে গেলো এভাবে।

 

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

"আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।" -কোরআন ২:১৫৫-১৫৬

 

‘তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবা করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। ’ (সুরা আত-তাওবা, আয়াত:১২৬)

 

প্রিয়নবী (সা.) হাদিসে বলেন,

‘আল্লাহ যার ভালো চান তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৪৫)

 

হাদিসে রাসুল (সা.) আরো বলেন,

‘যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন; যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। ’  (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৮৪)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,

‘প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অবশ্যই কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই। ’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)

কোথায় ভাই? কোথায় লেখা আছে আল্লাহ Good(of course, Divine) হলেই সব অন্যায়/খারাপকাজ (Defined) থামিয়ে দেবেন? আল্লাহর কাছে প্রকৃতপক্ষে এগুলো শুধু Event!

অতএব, নাস্তিকিয় যুক্তিটাই মিথ্যানির্ভর।

 

এক্সট্রা:

আল্লাহর গুণাবলি শুধুমাত্র Good আর Powerful এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞানীও বটে। 

সূরা কাহফ ৬০-৮২ পড়ুন। মূসা (আ.) আর খিজির নামক ব্যক্তির ঘটনাটি দেখুন। সেখানে খিজির নামক ব্যক্তিটি একের পর এক খারাপ কাজ করে যাচ্ছিলেন, নৌকা ফুটো থেকে শুরু করে বালক হত্যা। কিন্তু ঘটনার শেষে দেখা গেল সেটা ভালো কাজ। আল্লাহ সেই খিজির নাম ব্যক্তিকে "বিশেষ জ্ঞান" দান করেছিলেন বলেই এরকম ঘটনাটি ঘটতে পেরেছিলো। যেই জ্ঞান মূসা (আ.) কেউ দেওয়া হয়নি।তাহলে বোঝা যায়, আমাদের আপাত দৃষ্টিতে যেটা খারাপ (though it's Defined) সেটা পরবর্তীতে বৃহত্তর ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে আমরা সে বিষয়ে জানি না বলেই বুঝতে পারি না। আল্লাহ (ফেরেশতাদেরকে) বলেছিলেন, “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।” [সূরা বাকারাহ ৩০] আমাদের আপাতদৃষ্টি আর ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর Goodness এর উপর প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক।

 

পরিশেষে: যেহেতু তাদের আর্গুমেন্টের ভিত্তিই দাঁড়িয়ে আছে অসম্ভব কিছু বিষয়ের উপর, তাই তাদের দাবি প্রমাণ হয় না। আল্লাহ Good আর Powerful দুটি একসাথে হয়েও তাঁর তৈরি করা সিস্টেমটা কন্টিনিও করে যাচ্ছেন। উলটো এরকম আর্গুমেন্ট নিজের পেছনে নিজের *!

 

পাদটীকা ·

  • 1. https://islamicauthors.com/article/212
  • 2. University of Oxford এর Centre for Anthropology and Mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে বলেছেন: “Young people have a predisposition to believe in a supreme being because they assume that everything in the world was created with a purpose.” “If we threw a handful (of babies) on an island and they raised themselves I think they would believe in God.” “সাধারণত বাচ্চারা মনে মনে আগে থেকেই বিশ্বাস করে যে, একজন অতিপ্রাকৃত সত্তা কোনো একটি উদ্দেশ্যে এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে... যদি কোনো দ্বীপে কিছু শিশুকে ছেড়ে দিয়ে নিজে নিজেই বেড়ে উঠার সুযোগ দেওয়া হয়, দেখা যাবে, তারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে।” https://www.telegraph.co.uk/news/religion/3512686/Children-are-born-believers-in-God-academic-claims.html

 

সমালোচনাঃ আমি কেন এই বিষয়গুলো জবাব দেওয়ার জন্য কুরআন হাদিসের ব্যবহার করি?

- মূলত, আল্লাহকে নিজের জ্ঞান দিয়ে যতটুকু জেনেছি, তার পাশাপাশি কুরআন দিয়ে আরো বেশি জেনেছি।

নিশ্চয়ই কুরআন যুক্তিবিদ্যার শ্রেষ্ঠ উৎস।

কুরআনের যুক্তি খণ্ডন করার সাধ্যি মানবজাতির নেই।