Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন কে? নবী মুহাম্মদ ﷺ নাকি যীশু খ্রিস্ট?

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহু তাআলা। আর সেটা হলো অবিশ্বাসী অমুসলিম নাস্তিক সহ খ্রিস্টান মিশনারি/পাদ্রীদের একটা মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিব। এছাড়া বর্তমানে বিশেষ করে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টান মিশনারিরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতগুলোকে গোপন করে কিছু অস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং তা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। আর তারা কোরআনের একটা আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ গোটা পৃথিবীর জন্য আসেননি বরং তিনি নাকি শুধুমাত্র আরবি ভাষাভাষী আরবদের জন্য এসেছিলেন। আর তাদের এই দাবি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা তা প্রমাণ করব। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন:

An-Nahl 16:43
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِىٓ إِلَيْهِمْۚ فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
তোমার পূর্বে আমি অহীসহ (পুরুষ) মানুষই প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা যদি না জান তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।" [1]

এখানে বলা হয়েছে:-"فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ/ask the people of the message if you do not know--অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।"

অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন যা কিছু আমরা বুঝতে পারব না তা জানার জন্য, বোঝার জন্য জ্ঞানীদের কাছে যেতে হবে। আর আমরাও কোরআন না বুঝে অপপ্রচার করব না ইনশাআল্লাহু তাআলা। আর বর্তমান খ্রিস্টান মিশনারিরা হচ্ছে ঠিক এরুপ, তারা নিজেরা কখনোই কোরআনের আয়াত বোঝার জন্য তাফসীর গ্রন্থগুলো পড়েই না বরং নিজেরা ভুলভাল বুঝে অপপ্রচারে লিপ্ত হয় তাদের ধর্ম কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এছাড়া খ্রিস্টান মিশনারিরা কখনোই সত্য খোঁজার জন্য, জানার জন্য গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে না বলেই ভুলভাল বুঝে অপপ্রচারে লিপ্ত হয় যা অতি জঘন্য একটা কাজ। আর কোরআনের এরুপ একটি আয়াত হলো যাতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন:

Ash-Shura 42:7
وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ قُرْءَانًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ ٱلْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ ٱلْجَمْعِ
لَا رَيْبَ فِيهِۚ فَرِيقٌ فِى ٱلْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِى ٱلسَّعِي
Bengali - Mujibur Rahman
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"
English - Sahih International
And thus We have revealed to you an Arabic Qur'an that you may warn the Mother of Cities/towns [Makkah] and those around it and warn of the Day of Assembly,about which there is no doubt. When a party will be in Paradise (those who believed in Allah and followed what Allah's Messenger SAW brought them) and a party in the Blaze (Hell). (those who disbelieved in Allah and followed not what Allah's Messenger SAW brought them)." [2]

আর খ্রিস্টান মিশনারিরা এই আয়াতের মূল সারমর্মসহ ভাষার সাহিত্যগত শৈলীর অলংকার না বুঝেই বলেন যে,"রাসূল ﷺ কে নাকি কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছে কিন্তু সারা মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়নি। এখন আসলে কি খ্রিস্টানদের এই দাবি সঠিক না ভুল তা এখানে প্রমাণ করব। প্রথমে আমরা এই আয়াতের প্রতিটা শব্দের অর্থ দেখি: 

[সম্পূর্ণ অনুবাদ উপরে দেওয়া হয়েছে]।এইখানে উপরোল্লিখিত আয়াতের কোথাও সুনির্দিষ্টবাচক শব্দ যেমন কেবলমাত্র, শুধুমাত্র, একমাত্র, ছাড়া, ব্যতীত জাতীয় শব্দ গুলোর প্রয়োগ হয় নাই যা বাক্যের উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ ভাবে স্বীকার করে নিবে যে, হ্যাঁ, রাসূল ﷺ কে কেবলমাত্র/শুধুমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল।" অথচ এসব শব্দ বাইবেলের মধ্যে যীশু নিজের ক্ষেত্রে বহুবার প্রয়োগ করেছেন যেখানে তিনি বলেছেন:-

মথি ১৫:২৪ কেরি ভার্সন
তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই।
Matthew 15:24 KJV
But he answered and said, I am not sent but unto the lost sheep of the house of Israel."
আরবি বাইবেলের "Sharif Arabic Bible" এ বলা হয়েছে:
فَأَجَابَ: ”أَنَا أُرْسِلْتُ فَقَطْ إِلَى خِرَافِ بَنِي إِسْرَائِيلَ الضَّالَّةِ.“
[3]

উল্লেখ্য যে, আরবি বাইবেলের মধ্যেও "فَقَطْ/faqat" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ কেবল, মাত্র/just/only যা বাইবেল থেকেই প্রমাণিত। আর এদিকে আপনি যদি পবিত্র কোরআনের উল্লেখিত আয়াতের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, এখানে أُمُّ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ জননী/মাতা (the) mother এবং الْقُرَى শব্দ রয়েছে যার অর্থ গ্রাম (the villages)/শহর/নগরী (of) the towns/Cities. আর এই উভয় শব্দের মিলনে যুক্ত হয়ে أُمُّ الْقُرَى শব্দটি গঠিত হয়েছে যার অর্থ হলো সমস্ত শহরের জননী বা Mother of the towns/Cities যা ইংরেজি অনুবাদে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আরবি সাহিত্যের ক্ষেত্রে বা আরবি ভাষায় অনেক সময় أُمَّ/امم শব্দের অর্থ কেন্দ্র বা মূলকে বোঝানো হয়, তবে এর শাব্দিক অর্থ হলো জননী। লক্ষ্যণীয় যে এখানে "أُمُّ الْقُرَى/উম্মুল ক্বুরা" অর্থাৎ সমস্ত শহরের জননী স্বরূপ বলা হয়েছে পবিত্র মক্কাকে الْقُرَى শব্দটির অর্থ (of) the towns যেটা একটা Determiner. আর Noun এর সঙ্গে কোন শব্দ যুক্ত থাকলে সেটা কে Determiner (Noun কে নির্দেশক শব্দ) বলে।

[নোট: একটা শব্দ কে দুই ভাবে ব্যবহার করা হয়। একটা শাব্দিক অর্থ আরেকটা পারিভাষিক অর্থ]

প্রশ্ন:০১
পবিত্র মক্কা কে কেন أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে?
) এর যথার্থ কারণ হলো এটি সমগ্র বিশ্বের শহর-জনপদ এমন কী ভূ-পৃষ্ঠ অপেক্ষা দয়াময় স্রস্টার কাছে অধিক সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ।" (তাবারী, ইবনে কাসীর)। ৬ নং সূরা আন‘আমের ৯২ নম্বর আয়াতেও এটা আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া সহীহ হাদিসের মধ্যে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মক্কাকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার সকল ভূমির মাঝে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট তুমিই সবচেয়ে প্রিয়ভূমি। আমাকে যদি তোমার বুক হতে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হত তবে আমি কখনও (তোমায় ছেড়ে) চলে যেতাম না।" [4]

) এছাড়া মক্কা কে أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns) বলা হয়েছে এই জন্য যে, এটা হল আরবের অতীব পুরাতন বসতি। অর্থাৎ এটা যেন সমস্ত গ্রাম-শহরের মা তথা কেন্দ্র বা মূল ভিত্তি। একজন মাতা-ই পরিবারের জন্ম দিতে পারে অর্থাৎ তাঁর থেকে পরিবারের সূচনা হয়। ঠিক এরুপই অন্যান্য গ্রাম-শহরগুলোর সূচনা লাভ করেছে এই মক্কা থেকেই। وَمَنْ حَوْلَهَا (ওয়ামান হাওলাহা) এর মধ্যে মক্কার পার্শ্বস্থ সমস্ত অঞ্চল শামিল। এছাড়া এখানে حَوْلَهَا দ্বারা প্রাচ্যের ও পাশ্চাত্যের সমস্ত শহর ও জনপদকে বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ সমস্ত মানব জাতি।" [তাফসীরে আহসানুল বায়ান] (সোর্স: এই সকল কথাগুলো তাফসীরে আহসানুল বয়ান, তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া, তাফসীরে তাবারী/ফাতহুল মাজীদ এবং তাফসীরে ইবনে কাসীরে দ্রষ্টব্য। পবিত্র কোরআন ৪২:৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন)

[নোট: কাবা হলো মুসলিম বিশ্বের ইবাদতের কেন্দ্রস্থল ২:১২৫। এখানে প্রতিবছর হজ্জ্বের মৌসুমে বিভিন্ন জাতি তথা বাঙালি, ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি, ডাচ, আমেরিকান, ইংরেজ (ব্রিটিশ) সহ নানা জাতি এসে একত্রিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাই এর চতুর্দিক বলতে সমগ্র বিশ্ব কে বোঝানো হয়েছে।]

প্রশ্ন:০২
কাবা কী পৃথিবীর ভৌগলিক কেন্দ্র?
ক) ভৌগলিক অবস্থানের দিক বিবেচনা করে কাবা পৃথিবীর প্রায় মাঝখানে অবস্থিত অর্থাৎ গোলাকার পৃথিবীর সমতলের তথা ভূ-পৃষ্ঠের মামাঝামাঝি কাবার অবস্থান। কাবাকে প্রায় কেন্দ্রে ধারণ করে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান রয়েছে। বৈজ্ঞানিক ভাবে আমরা জানি যে, বছরের একটি বিশেষ দিনে একটি বিশেষ সময়ে (মধ্যাহ্নে) সূর্য কাবা শরিফের ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করে। তখন কাবা শরিফ বা মক্কা শরিফে অবস্থিত কোনো অট্টালিকা বা কোনো স্থাপনারই ছায়া চোখে পড়ে না। পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে এরূপ ঘটে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কাবা ভূমণ্ডলের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কাবাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বা হৃদয় বলা যায়। মানুষের হৃৎপিণ্ডকে যেমন হৃদয় বলা হয়, পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুকেও তেমনি সঙ্গত ভাবেই পৃথিবীর হৃদয় বলে অভিহিত করা চলে। এছাড়া কাবার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটা গোলাকারভাবে নির্মিত। শুধুই ভূ-তাত্ত্বিক দিক থেকে পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তাই নয়; ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকেও মক্কা নগরী মানব সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া আপনি যদি ওয়ার্ল্ড ম্যাপে কাবা লিখে সার্চ করেন তাহলে কাবাকে ঠিক মাঝখানে দেখতে পারবেন। এছাড়া পৃথিবীটা হলো একটা গোলাকার আকৃতির ন্যায়। যাকে একটি বৃত্ত হিসেবে কল্পনা করতে পারি। ঠিক এই বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দু থেকে এর চারিপাশ বলতে সমগ্র বৃত্তকেই বোঝানো হয়। আর অনুরূপ ভাবে "মক্কা এবং ওর চতুর্দিক" বলতে সারা বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে। কেননা পবিত্র কোরআনের ৪২:৭ নং আয়াতে মক্কা কে أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns/Cities) বলা হয়েছে। আর এখানে أُمُّ শব্দের অর্থও কেন্দ্র। তাই এই আয়াত কোন ভাবেই প্রমাণ করে না যে,"মহানবী ﷺ কে কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল বরং এটি থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে তিনি বিশ্ব মানবতার দূত, মহান রাসূল, যিনি এসেছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য।

এছাড়া ধরে নিলাম: যদি এই আয়াতটাও বলতে গেলে অস্পষ্ট, যার মাধ্যমে কোন রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই সুস্পষ্ট ভাবে বলা যায় না যে, তাঁকে কেবলমাত্র আরবদের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কেননা এই আয়াতে মক্কা কে বলা হয়েছে "উম্মুল ক্বুুুরা" তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the town's/Cities) বা মূূল ভিত্তি হিসেবে। আর "উম্মুুল ক্বুরা তথা শহরের জননী" শব্দের পরে "حَوْلَهَا/পাশ্ববর্তী জনপদ" কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে, যার জন্য কোনভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে,"রাসূল ﷺ কে কেবলমাত্র আরবদের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল বরং দাবিটাই নিছক ভিত্তিহীন মিথ্যা। আবার লক্ষণীয় যে, মক্কা কে যেহেতু أُمُّ الْقُرَى বা উম্মুল ক্বুরা তথা সমস্ত শহরের জননী (Mother of the towns/Cities) বা মূল ভিত্তি হিসেবে বলা হয়েছে বা আখ্যায়িত করা হয়েছে, তাই এটাকে আমরা পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে কল্পনা করতে পারি। আর এই কেন্দ্র বিন্দু থেকে "পাশ্বববর্তী জনপদحَوْلَهَ/ا" বলতে নিশ্চয়ই এই কেন্দ্রের চারিদিক তথা সমগ্র পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে। তাই এটা থেকেও প্রমাণিত হয় যে,"নবী মুহাম্মদ ﷺ কে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে but not only Saudi Arabia.

নোট: আরবি হলো বিশ্বের বৃহত্তম ভাষার অন্যতম একটা, যার অবস্থান পঞ্চমে। পৃথিবীর প্রায় ৬০ টা দেশের ২৪২ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে যাদের ভাষা আরবি অর্থাৎ মধ্য প্রাচ্যের ভাষা আরবি। তবে এর মূল রাষ্ট্র হলো সৌদি আরব। [5]

আবার পবিত্র কোরআন, সমগ্র সহীহ হাদিস সহ জাল এবং বানোয়াট হাদিসেও পর্যন্ত এবং কি ইতিহাসের কোথাও একটা সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বাক্য নেই যেখানে বলা হয়েছে,"নবী মুহাম্মদ ﷺ কে শুধুমাত্র আরবজাতি ছাড়া অন্য কোন জাতির জন্য পাঠানো হয়নি।" আমি সমগ্র ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম নাস্তিক কাফের মুশরিক খ্রিস্টানদের চ্যালেঞ্জ করলাম! বরং সমগ্র কোরআন, সহীহ হাদিসে সুস্পষ্ট ভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মহান আল্লাহর বাণী এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বহু উক্তি রয়েছে যে,"তাঁকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।" মহান আল্লাহ্ পাঁক রাসূল ﷺ কে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন যা কোরআনের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। প্রমাণ:

Al-A'raf 7:158
قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
বলঃ হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূ-মন্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নাবীর প্রতি ঈমান আন। যে আল্লাহ ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।" [6]

Al-Anbiya 21:107
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
Bengali - Mujibur Rahman
আমিতো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি।" [7]

Saba' 34:28
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
আমিতো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা।" [8]

আর এইভাবে পবিত্র কোরআন মাজীদের বহু জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,"নবী মুহাম্মদ ﷺ কে সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে " [পবিত্র কোরআন ৬:৯০; ৭:১৫৮; ২১:১০৭; ২৫:১; ৩৪:২৮; ৩৮:৮৭; ১২:১০৪; ৬৮:৫২; অনুরুপ ভাবে ৩:২০,৩১; ১৭:১০৫; ২৫:৫৬; ৩৩:৪৫-৪৭; ৩৫:২৩-২৪; ৪৮:৮,২৮; ৮১:২৭ আয়াত দ্রষ্টব্য)] এইভাবে একটা লিস্ট দেওয়া যাবে বৃহৎ আকারের।

 

সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণ:
আর সহীহ হাদিসে এর অসংখ্য দলিল-প্রমাণাদি সহ এর উপমা উদাহরণ রয়েছে স্বয়ং রাসূল ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের কমেন্টারী থেকে। 

▪︎i) আর সহীহ হাদিসে স্বয়ং রাসূল ﷺ এর জবাব থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অসংখ্য উক্তি পাওয়া যায় যেখানে তিনি বলেছেন,"আমি সকল মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি।"হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:-"আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশ্ববাসীর জন্য রহমত”(ত্বাবরানী, মুজামুল আওসাত্মঃ ৩০০৫, আস-সাগীরঃ ১/১৬৮, নং ২৬৪, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ১/৯১ নং ১০০, মুসনাদে শিহাবঃ ১১৬০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৫/৬৯, ৩০৫, মারফু' সনদে আর সুনান দারমী, হাদীস নং ১৫ মুরসাল সহীহ সনদে)।
▪︎ii) মহানবী (ﷺ) বলেন, "আমাকে সাদা-কালো সকলের প্রতি নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।" (মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়) "পূর্বে নবীকে বিশেষ একটি জাতির নিকট পাঠানো হত। আর আমাকে সকল মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠানো হয়েছে" (বুখারী, মুসলিম)।
▪︎iii) এছাড়া রাসূল ﷺ আরো বলেছেন,"তোমরা কি জান না যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে আমি যখন বললামঃ হে মানবমণ্ডলী, আমি তোমাদের সমস্ত লোকের জন্য আল্লাহ রাসূল। তখন তোমরা সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। শুধু এই আবু বকর রাঃ-ই ছিলেন, যিনি সর্বপ্রথম আমাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন"(বুখারীঃ ৪৬৪০)।
▪︎iv) এ বিষয়বস্তুটিকে আরো সুস্পষ্টভাবে রাসূল ﷺ হাদীসে বার বার বর্ণনা করেছেনঃ তিনি বলেছেনঃ “আমাকে লাল-কালো সবার কাছে পাঠানো হয়েছে।” (মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩০১)
▪︎v) আরো বলেছেনঃ “প্রথমে একজন নবীকে বিশেষ করে তার নিজেরই জাতির কাছে পাঠানো হতো এবং আমাকে সাধারণভাবে সমগ্র মানব জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।” (বুখারীঃ ৩৩৫, ৪৩৮, মুসলিমঃ ৫২১)
▪︎vi) তিনি আরো বলেনঃ “আমাকে সমস্ত সৃষ্টির কাছে পাঠানো হয়েছে এবং আমার আগমনে নবীদের আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।” [মুসলিমঃ ৫২৩]।
▪︎vii) আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উদ্ধৃত বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদীনাসারা হোক, যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে জাহান্নামে যাবে’ । [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৫০]।
▪︎viii) রাসূল ﷺ বলেছেন, "আমি রহমতের মূর্তপ্রতীক হয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বজগতের জন্য একটি উপহার।" (সহীহুল জামে' ২৩৪৫ নং)।

এছাড়া হাদিসের অসংখ্য জায়গায় বলা হয়েছে নবী মুহাম্মদ ﷺ এসেছেন সমগ্র মানবজাতির জন্য। এরপরেও অমুসলিম নাস্তিক খ্রিস্টানরা কিভাবে জঘন্য মিথ্যাচার করে??? আবার রাসূল ﷺ যদি সমগ্র মানবজাতির জন্য না আসতেন তাহলে তিনি বিদেশী রাজা-বাদশাহদের কাছে, ইহুদি-খ্রিস্টানদের কাছে ইসলাম প্রচার করতেন না, বিদেশে চিঠি প্রেরণ, দূত প্রেরণের মাধ্যমে ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন না। এরকম বহুত তথ্য প্রমাণ রয়েছে সহীহ হাদিসে, ইসলামিক ইতিহাসে। আসুন কয়েকটা হাদিস দেখা যাক এ সম্পর্কে:

▪︎i) রাসূল ﷺ দিহ্ইয়াতুল কালবী (রাঃ) কে দিয়ে বসরার শাসকের মাধ্যমে রোমান বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের নিকট চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল:-"বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম (পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে)। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। -শান্তি বর্ষিত হোক তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সকল প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে।হে আহলে কিতাব! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তা হল, আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই যেন তাঁর শরীক সাব্যস্ত না করি এবং আমাদের কেউ যেন কাউকে পালনকর্তারূপে গ্রহণ না করে আল্লাহকে ত্যাগ করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমরা বল, “তোমরা সাক্ষী থাক, আমারা তো মুসলিম”।" [9]

এই সেই চিঠি যা রাসূল ﷺ তাঁর সাহাবী দিহ্ইয়াতুল কালবী (রাঃ) এর মাধ্যমে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের দরবারে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। সম্রাটের পুরো নাম ছিল (Flavius Heraclius Augustus) ফ্লেবিয়াস হিরাক্লিয়াস অগাস্টাস। জন্মকাল: ৫৭৫-৬৪১। শাসন কাল ৬১০-৬৪১। চিঠিটার একদম নিচের দিকে ডানে রাসূল রাসূল ﷺ এর ব্যবহৃত আংটির সিলমোহর মারা হয়েছে। চিঠিটি বর্তমানে জর্ডানের এক যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। 

▪︎ii) রাসূল ﷺ জনৈক ব্যক্তি কে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরাইনের গভর্নর-এর নিকট তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বাহ্‌রাইনের গভর্নর তা কিস্‌রা তথা পারস্য সম্রাটের নিকট দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল...।" [10]

▪︎iii) আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ....একখানি পত্র লিখতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল যে, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহর যুক্ত ছাড়া কোন পত্র পড়ে না। এরপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরী করালেন যার নকশা ছিল مُحَمَّدُ الرَّسُوْل الله ’ (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্)। আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির ঔজ্জ্বল্য (এখনো) দেখতে পাচ্ছি [শু’বা (রহঃ) বলেন] আমি কাতাদা (রহঃ) কে বললাম, কে বলেছে যে, তার নকশা مُحَمَّدُ الرَّسُوْل الله’ ছিল? তিনি বললেন, ‘আনাস (রাঃ)।" [11]

▪︎iv) রাবী [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাকে আদেশ করলেন যেন আমি সুরিয়ানী ভাষা শিখি। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (ﷺ) আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি ইয়াহূদীদের পত্রলিখন পদ্ধতি শিখে নিই। তিনি (ﷺ) আরো বলেন যে, পত্রালাপ সংক্রান্ত ব্যাপারে ইয়াহূদীদের দিক থেকে আমার সন্তুষ্টি আসে না। যায়দ ইবনু সাবিত(রাঃ) বলেনঃ অর্ধ মাসের মধ্যে আমি (সুরিয়ানী ভাষা) শিখে ফেললাম। অতঃপর তিনি (ﷺ) যখনই কোন ইয়াহূদীকে চিঠি লিখতেন, তা আমি লিখতাম। আর কোন ইয়াহূদী যখন তাঁর কাছে চিঠি পাঠাত, তাদের চিঠি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর সমীপে আমিই পাঠ করতাম।" [12]

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-ইহুদিদের সঙ্গে দাওয়াতী কার্যক্রমের জন্য পত্রালাপ করতেন চিঠির মাধ্যমে।

[নোট: তাদের ভাষা সুর্ইয়ানি কিন্তু প্রসিদ্ধ আছে তাদের ভাষা হলো হিব্রু। সুতরাং এক্ষেত্রে বলা যায়, হয়ত বর্ণনাকারী যায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ প্রয়োজনের তাকীদে উভয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৫)]

▪︎v) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (ﷺ) কিসরা তথা পারস্যের সম্রাট, কায়সার তথা রোমের সম্রাট ও নাজ্জাশী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শাসকগণের নিকট পত্র লিখেন, যাতে তিনি তাদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেন...।" [13]

▪︎vi) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী ﷺপারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার এবং আবিসিনীয় বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লেখার ইচ্ছে পোষণ করেন। তখন তাঁকে জানানো হলো যে, তারা সীল-মোহর ছাড়া চিঠি গ্রহণ করেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আংটি তৈরি করান, যার বৃত্তটি ছিল রৌপ্যের। আর তিনি ঐ আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অঙ্কিত করান।" [14]

ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ যেসব বাদশাহর নামে চিঠি পাঠিয়েছেন : রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যেসব রাজা-বাদশাহ ও শাসকদের নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন তাদের কয়েকজনের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো:-

১. রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস : সাহাবী দিহইয়া কালবী (রাঃ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের প্রতি তাঁর বিশ্বাস থাকার পরও তিনি ঈমান আনেননি। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চিঠির কোন অবমাননাও করেননি।
২. পারস্যের সম্রাট পারভেজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা আস-সাহমী (রাঃ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। পাপী পারভেজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চিঠি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বদ দু’আর ফলে তাঁর রাজ্যও ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
৩. আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশী : এ চিঠির বাহক সাহাবী আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ)। যে নাজ্জাশী হাবশায় মুসলমানদেরকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নাম আমবাসা। ষষ্ঠ হিজরী সনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সনে মারা যান। মদিনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
৪. মিশরের রাজা মুকাওকিস : তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান হাতিব ইবনে আবী বালতা’আ। তিনি ইসলাম কবুল করেননি। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট হাদিয়া প্রেরণ করেন।
৫. বাহরাইনের রাজা মুনযির ইবনে সাদী : আলা ইবনে হাযরাম (ﷺ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং ইসলামী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৬. আম্মানের রাজা : সে সময় আম্মানে ছিল দু’জন বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমর ইবনে আস (রাঃ) এর মাধ্যমে তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠি পেয়ে তারা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন।"

এখন আসুন আমরা আবু সুফিয়ান এবং রোমান বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের কথোপকথন টা দেখি, যেখানে তিনি রাসূল ﷺ এর নবুয়্যতের খবর শুনে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে নিশ্চিত হয়েছেন যে,"এই সেই নবী যাঁর আসবার কথা ছিল।" এবং কী তিনি যে সত্যিই নবী সে সম্পর্কে পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়ে তার আরেক বন্ধুর কাছে চিঠি লিখেন।

 '‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হরব তাকে বলেছেন, রাজা হিরাক্লিয়াস একদা তাঁর নিকট লোক প্রেরণ করলেন। তিনি তখন ব্যবসা উপলক্ষে কুরাইশদের কাফেলায় সিরিয়ায় ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ)
সে সময় আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিতে আবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সাথী সহ রোমের বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের নিকট আসলেন এবং দোভাষীকে ডাকলেন।

--অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন,"এই যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করে-তোমাদের মাঝে বংশের দিক হতে তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে?
>আবূ সুফিয়ান বলেন,"আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়।"
--তিনি বললেন, ‘তাঁকে আমার অতি নিকটে আন এবং তাঁর সাথীদেরকেও তার পেছনে বসিয়ে দাও’।

অতঃপর তাঁর দোভাষীকে বললেন, ‘তাদের বলে দাও, আমি এর নিকট সে ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করব, যদি সে আমার নিকট মিথ্যা বলে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তোমরা তাকে মিথ্যুক বলবে।

>আবূ সুফিয়ান বলেন,'‘আল্লাহর কসম! আমার যদি এ লজ্জা না থাকত যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে, তবে আমি অবশ্যই তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।"

অতঃপর তিনি (বাদশাহ হিরাক্লিয়াস রাসূল ﷺ এর সম্পর্কে) আমাকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করেন তা হলো:-

--‘বংশমর্যাদার দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সে কিরূপ?’
>আমি বললাম, ‘তিনি আমাদের মধ্যে খুব সম্ভ্রান্ত বংশের।

--তিনি বললেন,"তোমাদের মধ্যে এর পূর্বে আর কখনো কি কেউ এরূপ কথা বলেছে?
>আমি বললাম,"না’।
--তিনি বললেন,"তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ কি বাদশাহ ছিলেন? >আমি বললাম, ‘না’।
--তিনি বললেন, ‘সম্ভ্রান্ত মর্যাদাবান শ্রেণীর লোকেরা তাঁর অনুসরণ করে, নাকি দুর্বল লোকেরা?’
>আমি বললাম, ‘দুর্বল লোকেরা’।
--তিনি বললেন, ‘তাদের সংখ্যা কি বাড়ছে, না কমছে?’
>আমি বললাম, ‘তারা বেড়েই চলছে’।
--তিনি বললেন, ‘তাঁর ধর্মে ঢুকে কেউ কি অসন্তুষ্ট হয়ে তা ত্যাগ করে?’ >আমি বললাম, ‘না’।
--তিনি বললেন, ‘তাঁর দাবীর পূর্বে তোমরা কি কখনো তাঁকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছ?’
>আমি বললাম, ‘না’।
--তিনি বললেন, ‘তিনি কি সন্ধি ভঙ্গ করেন?’
>আমি বললাম, ‘না’। তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের সন্ধিতে আবদ্ধ আছি। জানি না এর মধ্যে তিনি কি করবেন’।

আবূ সুফিয়ান বলেন, ‘এ কথাটি ব্যতীত নিজের পক্ষ হতে আর কোন কথা যোগ করার সু্যোগই আমি পাইনি’।

--তিনি বললেন, ‘তোমরা তাঁর সঙ্গে কখনো যুদ্ধ করেছ কি?’
>আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’।
--তিনি বললেন, ‘তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের পরিণাম কি হয়েছে?’ >আমি বললাম, ‘তাঁর ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল কুপের বালতির ন্যায়’। কখনো তাঁর পক্ষে যায়, আবার কখনো আমাদের পক্ষে আসে’।
--তিনি বললেন, ‘তিনি তোমাদের কিসের আদেশ দেন?’
>>আমি বললাম, ‘তিনি বলেনঃ তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর অংশীদার সাব্যস্ত করো না এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা বলে তা ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত আদায়ের, সত্য বলার, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেন’।

অতঃপর তিনি দোভাষীকে বললেন:-
--তুমি তাকে বল, আমি তোমার নিকট তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তুমি তার জবাবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রসূলগণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই পাঠানো হয়ে থাকে।

--তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, এ কথা তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আর কেউ বলেছে কিনা? তুমি বলেছ, ‘না’। তাই আমি বলছি, পূর্বে যদি কেউ এরূপ বলত, তবে আমি অবশ্যই বলতাম, ইনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর পুর্বসূরীর কথারই অনুসরণ করছেন।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি তার জবাবে বলেছ, ‘না’। তাই আমি বলছি যে, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে যদি কোন বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি বলতাম, ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁর বাপ-দাদার বাদশাহী ফিরে পেতে চান।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি-এর পূর্বে কখনো তোমরা তাঁকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছ কিনা? তুমি বলেছ, ‘না’। এতে আমি বুঝলাম, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা পরিত্যাগ করবে আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবে।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, সম্ভ্রান্ত লোক তাঁর অনুসরণ করে, না সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তাঁর অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এই শ্রেনীর লোকেরাই হন রসূলগণের অনুসারী।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ, বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানে পূর্ণতা লাভ করা পর্যন্ত এ রকমই হয়ে থাকে।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর দীনে প্রবেশ করে কেউ কি অসন্তুষ্ট হয়ে তা ত্যাগ করে? তুমি বলেছ, ‘না’। ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সঙ্গে মিশে গেলে ঈমান এরূপই হয়।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি সন্ধি ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ, ‘না’। প্রকৃতপক্ষে রসূলগণ এরূপই, সন্ধি ভঙ্গ করেন না।

--আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি তোমাদের কিসের আদেশ দেন? তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের এক আল্লাহর বন্দেগী করা ও তাঁর সঙ্গে অন্য কিছুর অংশীদার স্থাপন না করার নির্দেশ দেন। তিনি তোমাদের নিষেধ করেন মূর্তিপূজা করতে আর তোমাদের আদেশ করেন সালাত আদায় করতে, সত্য বলতে ও সচ্চরিত্র থাকতে। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্যি হয়, তবে শীঘ্রই তিনি আমার দু’পায়ের নীচের জায়গার অধিকারী হবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্য হতে হবেন, এ কথা ভাবতে পারিনি। যদি জানতাম, আমি তাঁর নিকট পৌছতে পারব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি যে কোন কষ্ট সহ্য করে নিতাম। আর আমি যদি তাঁর নিকট থাকতাম তবে অবশ্যই তাঁর দু’খানা পা ধৌত করে দিতাম। অতঃপর তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সেই পত্রখানি আনার নির্দেশ দিলেন, যা তিনি দিহ্‌ইয়াতুল কালবী (রাঃ)-কে দিয়ে বসরার শাসকের মাধ্যমে হিরাক্লিয়াসের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। তিনি তা পড়লেন। তাতে (লেখা) ছিলঃ

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে)। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। -শান্তি (বর্ষিত হোক) তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সকল প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে।

বল, ‘হে আহলে কিতাব! এমন এক কথার দিকে আসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, তা এই যে, আমরা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো ‘ইবাদাত করব না এবং কোন কিছুকে তাঁর শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাদের মধ্যে কেউ কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করব না। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা এ বিষয়ে সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।"(সূরা আলে ইমরান; ৩/৬৪)

আবূ সুফিয়ান বলেন, ‘হিরাক্লিয়াস যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং পত্র পাঠও শেষ করলেন, তখন সেখানে হট্টগোল শুরু হয়ে গেল, চীৎকার ও হৈ-হল্লা চরমে পৌছল এবং আমাদেরকে বের করে দেয়া হলো। আমাদেরকে বের করে দিলে আমি আমার সাথীদের বললাম, আবূ কাবশার [১] ছেলের বিষয় তো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বনূ আসফার (রোম)-এর বাদশাহও তাকে ভয় পাচ্ছে! তখন থেকে আমি বিশ্বাস রাখতাম, তিনি শীঘ্রই জয়ী হবেন। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দান করলেন।

ইব্‌ন নাতূর ছিলেন জেরুযালেমের শাসনকর্তা এবং হিরাক্লিয়াসের বন্ধু ও সিরিয়ার খৃস্টানদের পাদ্রী। তিনি বলেন, হিরাক্লিয়াস যখন জেরুজালেম আসেন, তখন একদা তাঁকে অত্যন্ত মলিন দেখাচ্ছিল। তাঁর একজন বিশিষ্ট সহচর বলল:-

--আমরা আপনার চেহারা আজ এত মলিন দেখছি, ইব্‌নু নাতূর বলেন, হিরাক্লিয়াস ছিলেন জ্যোতির্বিদ, জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তারা জিজ্ঞেস করলে তিনি তাদের বললেন,"আজ রাতে আমি তারকারাজির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ আবির্ভূত হয়েছেন। বর্তমান যুগে কোন্‌ জাতি খাতনা করে’?

>তারা বলল, ‘ইয়াহূদ জাতি ব্যতীত কেউ খাতনা করে না। কিন্তু তাদের ব্যাপারে আপনি মোটেও চিন্তিত হবেন না। আপনার রাজ্যের শহরগুলোতে লিখে পাঠান, তারা যেন সেখানকার সকল ইয়াহূদীকে কতল করে ফেলে’। তারা যখন এ ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন হিরাক্লিয়াসের নিকট জনৈক ব্যক্তিকে হাযির করা হলো, যাকে গাস্‌সানের শাসনকর্তা পাঠিয়েছিল। সে আল্লাহর রসূল (ﷺ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছিল।

হিরাক্লিয়াস তার কাছ থেকে খবর জেনে নিয়ে বললেন, ‘তোমরা একে নিয়ে গিয়ে দেখ, তার খাতনা হয়েছে কি-না’। তারা তাকে নিয়ে গিয়ে দেখে এসে সংবাদ দিল, তার খতনা হয়েছে।

হিরাক্লিয়াস তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে জওয়াব দিল, ‘তারা খাতনা করে’। অতঃপর হিরাক্লিয়াস তাদের বললেন, ইনি [আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] এ উম্মতের বাদশাহ। তিনি আবির্ভূত হয়েছেন।"

আতঃপর হিরাক্লিয়াস রোমে তাঁর বন্ধুর নিকট লিখলেন। তিনি জ্ঞানে তাঁর সমকক্ষ ছিলেন। পরে হিরাক্লিয়াস হিমস চলে গেলেন। হিমসে থাকতেই তাঁর নিকট তাঁর বন্ধুর চিঠি এলো, যা নবী (ﷺ) এর আবির্ভাব এবং তিনিই যে প্রকৃত নবী, এ ব্যাপারে হিরাক্লিয়াসের মতকে সমর্থন করছিল

তারপর হিরাক্লিয়াস তাঁর হিমসের প্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ডাকলেন এবং প্রাসাদের সকল দরজা বন্ধ করার আদেশ দিলে দরজা বন্ধ করা হলো। অতঃপর তিনি সম্মুখে এসে বললেন:-

--হে রোমের অধিবাসী! তোমরা কি মঙ্গল, হিদায়াত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর বায়’আত গ্রহণ কর।"

এ কথা শুনে তারা বন্য গাধার ন্যায় দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু তারা তা বন্ধ দেখতে পেল। হিরাক্লিয়াস যখন তাদের অনীহা লক্ষ্য করলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন বললেন:-

--ওদের আমার নিকট ফিরিয়ে আন’। তিনি বললেন, ‘আমি একটু পূর্বে যে কথা বলেছি, তা দিয়ে তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপর কতটুকু অটল, কেবল তার পরীক্ষা করছিলাম। এখন তা দেখে নিলাম’। একথা শুনে তারা তাঁকে সাজদাহ করল এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হলো। এটাই ছিল হিরাক্লিয়াসের সর্বশেষ অবস্থা।" [15]

এইভাবে অসংখ্য হাদিসে প্রমাণ মেলে যে, রাসূল ﷺ দেশে- বিদেশে অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে চিঠি এবং দূত প্রেরণ করেছিলেন। আবার রাসূল ﷺ এর সাহাবীগণ খিলাফতের সময় বিভিন্ন দেশি- বিদেশী রাজা- বাদশাহ্দের ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন + তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। তার অসংখ্য প্রমাণ পর্যন্ত ইতিহাসের মধ্যে পাওয়া যায়।"

[এ জন্য পড়ুন, খিলাফতের ইতিহাস, জীবন ও কর্ম: উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ ১-২ খন্ড; জীবন ও কর্ম: আবু বকর সিদ্দিক রাঃ ১-২ খন্ড; জীবন ও কর্ম: উসমান ইবনে আফফান রাঃ ১-২ খন্ড; জীবন ও কর্ম আলী ইবনে আবি তালিব- ১-২ খণ্ড, লেখক: ড.আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাবী, এর গবেষণা লদ্ধ ইতিহাস সিরিজ]

 

অপরদিকে যদি বাইবেল পড়েন তাহলে দেখবেন বাইবেলের মধ্যে স্বয়ং যীশু নিজেই সুস্পষ্ট ভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন:

মথি ১৫:২৪ কেরি ভার্সন
তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই।"

[নোট: আর পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে, যীশু খ্রিস্ট তথা ঈসা আঃ কে কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল।" (পবিত্র কোরআন ৩:৪৯; ৫:৭২,৭৮; ৬১:৬) এবং তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা/দাস বা নবী"(পবিত্র কোরআন ৩:৫৯,৬৪,৮৪; ৫:১৭,৭২,৭৩,৭৫,১১৬,১১৭)]

আর (মথি ১৫:২৪) পদে ইংরেজি অনুবাদে বলা হয়েছে:
i) I was sent only to the lost sheep of the house of Israel" (New American Standard Bible)
ii) I am not sent but unto the lost sheep of the house of Israel" (King James Bible)
iii) I was sent only to the lost sheep of the house of Israel.(Holman Christian Standard Bible)

এখানে যীশু খ্রিস্ট only to the lost ,but unto the lost অর্থাৎ বাক্যের উদ্দেশ্যেকে সম্পূর্ণভাবে/সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেওয়া অর্থে বাংলা তর্জমায় শুধু, শুধুমাত্র, কেবল, কেবলমাত্র, মাত্র, ছাড়া/ব্যতীত....শব্দগুলো তিনি ব্যবহার করেছেন। আর যখন যীশু নিজেই বলেছেন,"তিনি ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি" তখন কোন যুক্তিতে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হবেন?" তাহলে এটা কী যীশুর প্রতি ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের মিথ্যাচার নয়। তাহলে তো এটা পরস্পর সাংঘর্ষিক বক্তব্য হয়ে যাবে। এছাড়া যীশু খ্রিস্ট ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি। এই কথাই তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অর্থাৎ তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ ১২ জন শিষ্যের কাছে প্রচার করেছেন এবং তাঁদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। যাই হোক এখানে বোঝার সুবিধার্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। প্রথমে জেনে আসি যীশু কোন জাতির জন্য এসেছিলেন যা তিনি নিজেই তাঁর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে (জীবদ্দশায়) সুস্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন? আর এটা আছে বাইবেলের মথির ১৫ নং অধ্যায়ে যা নিম্নরুপ:

21. যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন।
22. আর দেখ, ঐ অঞ্চলের একটি কেনানীয় মহিলা এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাকে দয়া করুন, আমার মেয়েটি ভূতগ্রস্ত হয়ে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে।
23. কিন্তু তিনি তাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করলেন, একে বিদায় করুন, কারণ এ আমাদের পিছন পিছন চিৎকার করছে?" [16]

এখানে প্রশ্ন হলো যীশু কেনানীয় মহিলাকে কেন উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলেন? এর যথার্থ কারণ উক্ত কেনানীয় মহিলা ছিল খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক অর্থাৎ অইহুদি, যার জন্য যীশু কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলেন। যদি উক্ত মহিলা তাঁর জাতির অন্তর্ভুক্ত তথা ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক হতো তাহলে নিঃসন্দিগ্ধ ভাবে তখন চুপ না থেকে সরাসরি উত্তর দিতেন। কিন্তু তারপর কী হলো? এরপরে শিষ্যরা করুণাময় বিগলিত হয়ে যীশুকে উক্ত মহিলার প্রতি দয়া করার অনুরোধ জানালে তিনি উত্তরে কী বলেছিলেন? যীশু খ্রিস্ট বলেছিলেন:

মথি ১৫:২৪ কেরি ভার্সন
তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই।"

আর এটাই হলো এই ভার্সের প্রেক্ষাপট যা সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন কথা যেখানে তিনি কোন রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই বলে দিয়েছেন যে, তিনি কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতি তথা ইহুদিদের জন্য ছাড়া অইহুদিদের [খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের] জন্য আসেননি। যীশুর উপরোল্লিখিত মন্তব্য করার পরে কী হলো?

25. কিন্তু স্ত্রীলোকটি আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া বলিল, প্রভু, আমার উপকার করুন।
26. তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।" [17]

এখানেও যীশু কথাগুলো এদের নাপাকীর (অপবিত্রতার) দিকে ইঙ্গিত করে বললেন। কেননা এরা ছিল খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক তথা অইহুদি। এরপরের ভার্সে দেখুন কী বলা হয়েছে:

27. তাতে সে বলল, “হ্যাঁ, প্রভু, কারণ কুকুরেরাও তাদের মালিকের টেবিলের নিচে পড়ে থাকা সন্তানদের সেই সব খাবারের গুঁড়াগাঁড়া তারা খায়।” [18]

এখানে অবশেষে উক্ত খৎনা বিহীন সম্প্রদায়ের লোক তথা অইহুদি মা মহিলাটি তার সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্য পক্ষান্তরে নিজেকে কুকুর বলে অভিহিত করল যা উপরোল্লিখিত ভার্স থেকেই স্পষ্ট। এরপরে মহিলার এই বিনয় বাক্যে যীশু সপ্রশংস দৃষ্টিতে উক্ত নারীর উপরে দয়া করলেন।

এখানে যীশু সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর ধর্ম সার্বজনীন নয় অর্থাৎ তিনি সবার জন্য আসেননি। এছাড়া যীশু খ্রিস্ট কেবলমাত্র ইস্রায়েল বংশের হারানো মেষপালের জন্য প্রেরিত ছিলেন" (মথি ১০:৫-৬; এবং মার্ক ৪:১১-১২)। এখানে বোঝার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি দেওয়া হলো (মথি ১০:৫-৬)।

5. এই বারো জনকে যীশু পাঠিয়ে দিলেন, আর তাঁদের এই নির্দেশ দিলেন, তোমরা অযিহূদীরা যেখানে বাস করে সেখানে যেও না এবং শমরীয়দের কোন শহরে প্রবেশ কর না;
6. বরং ইস্রায়েল কুলের হারান মেষদের কাছে যাও।" [19]

এখানে "পরজাতি তথা অইহুদি" (অ-ইস্রায়েলীয়)"-কোন মানুষকে তাঁর ধর্মে দীক্ষা দেওয়া যাবে না যা যীশু সুস্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন। এমনকি "শমরীয়গণ" যারা মূলত ইস্রায়েলীয় কিন্তু অ-ইস্রায়েলীয় দের সাথে বিবাহ-সাদী করে অন্য বংশে মিশে ছিল তাদেরকেও যীশুর ধর্মে দীক্ষা দেওয়া যাবে না। কেবলমাত্র "বিশুদ্ধ ইস্রায়েল বংশীয়দের" মধ্যেই তাঁর ধর্মের প্রচার সীমাবদ্ধ থাকবে। খ্রিস্টধর্মের সকল রাজ্যের সুসংবাদ কেবলমাত্র তাদের জন্য সীমাবদ্ধ।

এখানে প্রশ্ন হলোঃ যীশু কেন তাঁর শিষ্যদের অইহুদিদের কাছে যেতে নিষেধ করলেন এবং কেবলমাত্র/শুধুমাত্র ইস্রায়েলকুল তথা ইহুদিদের কাছে যেতে বললেন? আসলে এর উত্তর স্বয়ং যীশু নিজেই দিয়েছেন:

মথি ১৫:২৪ কেরি ভার্সন
তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই।"

এবং কী যীশু এর মূল কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন:

6. পবিত্র জিনিস কুকুরদেরকে দিও না এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদের সামনে ফেলো না; যদি তারা পা দিয়ে তা দলায় এবং ফিরে তোমাদের টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে।"(মথি ৭:৬; মথি ১৫:২৫-২৬ পদেও এসব ব্যাখ্যা করে বলেছেন) [20]

এখানেও দেখেন যীশু অইহুদিদের কুকুর শুকর বলার মাধ্যমে একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে "তিনি সবার জন্য আসেননি। যার জন্য তিনি পরজাতি কে কুকুর শুকর বলতে দ্বিধাবোধ করলেন না। যীশু যদি সকলের জন্য আসতেন তাহলে তিনি পরজাতি কে কখনোই বার বার কুকুর শুকর বলতেন না।" এ থেকেই বোঝা যায় যে যীশুকে সকলের মুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয় নাই। এখন মার্কের (৪:১১-১২) -অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি দেওয়া হলো। তবে হ্যাঁ (মার্কের ৪ অধ্যায়ে ১-৭ নং অনুচ্ছেদে যীশু একটা গল্পের মাধ্যমে শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এই গল্পটাই হলো ১১ ও ১২ পদের প্রসঙ্গ। আর এই প্রসঙ্গটা পড়লেও বুঝতে পারবেন আসলে যীশু শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য এসেছিলেন বলেই কেবলমাত্র তাদের কে শিক্ষা দিতেন এবং তা বুঝিয়ে দিতেন কিন্তু অইহুদিরা সেটা শুনলেও কিছুই বুঝত না। কারণ তিনি তাদের শিক্ষা দিতে চাইতেন না। কিন্তু কেন? কারণ তিনি অইহুদিদের কাছে আসেননি বরং ইহুদিদের জন্য এসেছিলেন- মথি ১৫:২৪)। যাই হোক মূল উদ্ধৃতিতে চলে যাই:

10. যখন তিনি একা ছিলেন, তাঁর সঙ্গীরা সেই বারো জনের সঙ্গে তাঁকে গল্পের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
11. তিনি তাঁদেরকে বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত সত্য তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ঐ বাইরের লোকদের কাছে সবই গল্পের মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে।" [21]

এখানে "ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত তথ্য (বেহেশতে প্রবেশ করার সকল সুসংবাদ)" কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য দেওয়া হয়েছে। কারণ যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য এসেছিলেন। কিন্তু তিনি অ-ইস্রায়েলীয়দের জন্য আসেননি বলেই তাদের কাছে গল্পের মাধ্যমে (উপমার ন্যায়) বলেন যেন তারা (অইহুদিরা) কিছুই বুঝতে না পারে অর্থাৎ যীশু এটার মাধ্যমেও বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁর সকল সুসংবাদ বা শিক্ষা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য সীমাবদ্ধ কিন্তু বাইরের লোকদের জন্য নয়।

12. সুতরাং তারা যখন দেখে, তারা দেখুক কিন্তু যেন বুঝতে না পারে এবং যখন শুনে, শুনুক কিন্তু যেন না বোঝে,পাছে তারা ফিরে আসে ও ঈশ্বর তাদেরকে ক্ষমা করেন।" [22]

উপরোল্লিখিত যথার্থ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে, যীশু খ্রিস্ট কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য এসেছিলেন এবং তাঁর শিক্ষা এবং কথা-বার্তা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য প্রযোজ্য ছিল বলেই তিনি তাদেরকে তাঁর কথাগুলো বুঝিয়ে দিতেন যেগুলো তিনি দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতেন। কিন্তু অইহুদিদের তা বুঝিয়ে দিতেন না। এর মানে বোঝায় অইহুদিদের কাছে যীশুর কথাগুলো ছিল অস্পষ্ট যেন তারা তা বুঝতে না পারে। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন সময়ে স্বয়ং যীশুর শিষ্যরাই তাঁর দেওয়া দৃষ্টান্ত বুঝতেন না (মার্ক ৪:১৩) যেগুলো পরে তাঁকে তা বুঝিয়ে দিতে হতো। কিন্তু এখন হাজার হাজার বছর পরে দাবিদার খ্রিস্টানগণ যীশুর দৃষ্টান্তগুলো কিভাবে বুঝবে তাঁর অনুপস্থিতিতেই যেহেতু বর্তমান খ্রিস্টানগণ বিশুদ্ধ ইস্রায়েলীয় নয়। আর বিশুদ্ধ ইস্রায়েলীয় ছাড়া বাইরের কেউই যীশুর দৃষ্টান্তগুলো বুঝবে না যা তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। তো এরপরেও প্রশ্ন হলো যেখানে যীশুর উক্তিতে বলা হয়েছে:

6. আমিই পথ, আমিই সত্য এবং আমিই জীবন; আমাকে ছাড়া কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না" [23]

উদ্ধৃতি দ্বারা যীশু কাদের ক্ষেত্রে বোঝানোর জন্য এরুপ মন্তব্য করেছেন? আগেই প্রমাণ দেখিয়েছি যে "যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি। তাই উক্ত কথাটা কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির মুক্তি ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।" আমি সুস্পষ্ট ভাবে যথার্থ রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে অত্যন্ত যৌক্তিকতার সাথে প্রমাণ করে দিলাম যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছেন অপরদিকে যীশু তথা ঈসা আঃ ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি। তবুও খ্রিস্টানরা এসব যুক্তি খন্ডন না করে যীশুর তথাকথিত ক্রসিফিকশনের পরে নতুন সংযোযিত বাইবেলের কিছু বানোয়াট ভার্স উল্লেখ করে বলেন যে, "যীশু খ্রিস্ট সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছিলেন। আর এটাও প্রমাণ করে দেখাব এটা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ নয় বরং পরবর্তী সময়ে সংযোজন। আর সেই ভার্স হলো:

18. তখন যীশু কাছে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে।
19. অতএব তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতিকে শিষ্য কর, পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও,
20. আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সে সমস্ত পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। আর দেখ, আমিই যুগের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।" [24]

পাঠক বন্ধুগণ আপনারা কী জানেন (মথি ২৮:১৮-১৯; মার্ক১৬:১৫-১৬) নং ভার্সে উল্লেখিত উক্তি যীশু কোন সময় করেছিলেন? এটা হলো যীশুর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা। এখন আমরা উপরোল্লিখিত যৌক্তিক আলোচনাতে দেখেছি যে, যীশু তাঁর জীবদ্দশায় ১২ জন ঘনিষ্ঠ শিষ্যেদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি কেবলমাত্র ইস্রায়েল জাতির জন্য ছাড়া আর কারো জন্য আসেননি এবং কী তাদেরও তিনি শমরীয়গণসহ অইহুদিদের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন বার বার। এবং কী তিনি যে অইহুদিদের জন্য আসেননি তা বার বার বিভিন্ন ঘটনা এবং কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জানিয়ে দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো যীশু তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন এক আর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরে বলবেন আরেক, কথা। এটা কী বিশ্বাস করা যায়? একজন মহান লোক কিভাবে পরস্পর সাংঘর্ষিক কথা বলতে পারেন? অথচ যদি আপনারা বাইবেলের নিউটেস্টামেন্টের চারটা প্রচলিত গসপেল (মার্ক, লুক, মথি ও ইউহান্না/যোহন) পড়েন তাহলে দেখবেন যীশুর সম্পূর্ণ দাওয়াতি মিশন শুধুমাত্র খাঁটি ইহুদিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তিনি পরজাতিদের সাথে মিশতেন না ইত্যাদি। এছাড়া (মথি ২৮:১৮-১৯; মার্ক১৬:১৫-১৬) নং অনুচ্ছেদগুলো চারটা গসপেলের মূল পান্ডুলিপিতে নেই। এখন কথা হলো তাহলে এসব কী মিথ্যা? হ্যাঁ, আমরা বলব এসব অবশ্যই যীশুর নামে মিথ্যা অপপ্রচার এবং পরবর্তীকালের সংযোজন। কেননা এটা যীশুর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা। আর যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করা বাইবেল থেকেই প্রমাণ করা যায়। আবার ঠিক এর বিপরীতেও প্রমাণ করা যায় যে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। অর্থাৎ বাইবেল থেকেই দুই ধরনের তথ্য প্রমাণ করা সম্ভব যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন ≠ যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে যৌক্তিকতার সাথে বলা যায় যে স্বয়ং বাইবেল থেকেই যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করাটা ১০০% বিশুদ্ধ নয় অর্থাৎ প্রমাণিত নয় এবং কী অনেক ঐতিহাসিক ভাবেও স্বীকৃতি যে যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি।অর্থাৎ বাইবেল নিজেই যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করার ঘটনা ১০০% বিশুদ্ধ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ। আর এই জন্য পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে:-"তারা ঈসা আঃ এর সম্পর্কে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি করল।" পবিত্র কোরআন ও বাইবেল অনুযায়ী যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। এখন যখন যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করাটা যখন বিশুদ্ধ ভাবে ১০০% প্রমাণিত নয় সেখানে কোন যুক্তিতে (মথি ২৮:১৮-১৯; মার্ক১৬:১৫-১৬) তে উল্লেখিত উক্তিগুলো সঠিক হবে এবং যীশুর পক্ষে বলা সম্ভব? কোরআন ও বাইবেলের সাক্ষ্যানুযায়ী যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি যা প্রমাণ করা সম্ভব। রেফারেন্সে লিঙ্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। [25]

ফুটনোট: আবারো স্মরণ করিয়ে দিলাম: যীশু যখন সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কেবলমাত্র, শুধুমাত্র ইস্রায়েলের জন্য এসেছেন অর্থাৎ ইস্রায়েল ব্যতীত অন্য কোন জাতির জন্য আসেননি। এই কথাই তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অর্থাৎ তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের আগে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ ১২ জন শিষ্যের কাছে প্রচার করেছেন এবং তাঁদের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনোই বলেননি যে তিনি সমগ্র পৃথিবীর জন্য এসেছেন! কিন্তু যীশুর মতো একজন মহান ব্যক্তি কিভাবে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের শিক্ষা দিবেন একটা আর তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরে বলবেন আরেকটা?তাহলে যীশু কী তার নিজের কথার বিরোধী তথ্য বলেন নাকি? আর যার কথার মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে তার স্বভাবের মধ্যেও প্রতারণা লুকিয়ে থাকে। তাহলে যীশু কী প্রতারক মিথ্যাবাদী ছিল নাকি? কারণ (মথি ১০:৫-৬; ১৫:২৪ এবং মার্ক ৪:১১-১২) এর উক্তির সাথে (মথি ২৮:১৯ ও মার্ক ১৬:১৫-১৬) উক্তি গুলো পরস্পর বিরোধী। তবে (মথি ২৮:১৯ ও মার্ক ১৬:১৫-১৬) এই উক্তি গুলো তথাকথিত ক্রুশিফিকশনের পরের ঘটনা যা জলন্ত মিথ্যা বানোয়াট এবং বাইবেলের নতুন সংযোজন। সুতরাং যীশু খ্রিস্ট সমগ্র মানবজাতির জন্য আসেননি বরং মহানবী ﷺ সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছেন। 

 

তথ্যসূত্রঃ-
➤[01] "না জানলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো" আন-নাহাল ১৬:৪৩
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=1944;
এই সেম আয়াত: আল-আম্বিয়া | Al-Anbiya | سورة الأنبياء ২১:৭
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=2490
➤[02] সূরাঃ আশ-শূরা | Ash-Shura | سورة الشورى ৪২:৭
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=4279
এই সেম কথা : সূরাঃ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৬:৯২
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=881
➤[03] যীশু কেবলমাত্র ইস্রায়েলকুলের হারান মেষ ছাড়া আর কারো জন্য আসেনি: মথি ১৫:২৪ কেরি ভার্সন
https://bible.com/bible/1791/mat.15.24.ROVU
Matthew 15:24 KJV
https://bible.com/bible/1/mat.15.24.KJV
Sharif Arabic Bible (শরিফ অ্যারাবিক বাইবেল)
https://bible.com/bible/153/mat.15.24.SAB
গ্রিক টেক্সটও দেখতে পারেন: sent only to the Israel
https://biblehub.com/text/matthew/15-24.htm
➤[04] সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)- ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) - 46. Chapters on Virtues এর ৩৯২৫ নং হাদিস
https://www.hadithbd.net/hadith/link/?id=42243
➤[05] Language ranking source
https://www.ethnologue.com/statistics/summary
➤[06] সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف ৭:১৫৮
https://www.hadithbd.com/quran/error/?id=1112
➤[07] আল-আম্বিয়া | Al-Anbiya | سورة الأنبياء ২১:১০৭
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=2590
➤[08] সাবা | Saba | سورة سبإ ৩৪:২৮
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3634
➤[09] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১/ ওয়াহ্‌য়ীর সূচনা (كتاب بدء الوحى) - 1/ Revelation, হাদিস নং- ৭
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=21870
➤[10] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩/ আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) (كتاب العلم) - 3/ Knowledge, হাদিস নং- ৬৪
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=21928
➤[11] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩/ আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) (كتاب العلم) - 3/ Knowledge, হাদিস নং- ৬৫
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=21929
➤[12] মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب) -এর ৪৬৫৯ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে:
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=75383
➤[13] সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير)- 33. The Book of Jihad and Expeditions, হা:৪৫০১
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=51584
➤[14] সহীহ শামায়েলে তিরমিযী, ১২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আংটির বিবরণ (باب ما جاء في ذكر خاتم رسول الله ﷺ) - 12. The Mubarak Ring Of Rasoolullah (pbuh), হাদিস নং- ৭৩
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=48987
➤[15] রোমান বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের নবী ﷺ এর নবুয়তী পরীক্ষা
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=21870

➤[16] মথি ১৫:২১-২১
https://bible.com/bible/1791/mat.15.21-23.ROVU
➤[17] মথি ১৫:২৫-২৬ (যীশু অইহুদিদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করল)
https://bible.com/bible/1791/mat.15.25-26.ROVU
➤[18] মথি ১৫:২৭
https://bible.com/bible/1791/mat.15.27.ROVU
➤[19] মথি ১০:৫-৬ (অ-ইস্রায়েলীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিষিদ্ধ)
https://bible.com/bible/1791/mat.10.5-6.ROVU
➤[20] মথি ৭:৬ (যীশুর অ-ইস্রায়েলীদের কুকুর- শুকরের সাথে তুলনা)
https://bible.com/bible/1791/mat.7.6.ROVU
➤[21] মার্ক ৪:১০-১১ (যীশুর কয়েকটি দৃষ্টান্ত)
https://bible.com/bible/1791/mrk.4.10-11.ROVU
➤[22] অইহুদিদের কাছে যীশুর কথাগুলো ছিল অস্পষ্ট
https://bible.com/bible/1791/mrk.4.12.ROVU
(মার্কের ৪ অধ্যায়ে ১-৭ নং অনুচ্ছেদে যীশু একটা গল্পের মাধ্যমে শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এই গল্পটাই হলো ১১ ও ১২ পদের প্রসঙ্গ) 

https://bible.com/bible/1791/mrk.4.1-7.ROVU
➤[23] যোহন ১৪:৬
https://bible.com/bible/1791/jhn.14.6.ROVU
➤[24] মথি ২৮:১৮-২০
https://bible.com/bible/1791/mat.28.18-20.ROVU
[এই একই কথা বলা হয়েছে মার্ক ১৬:১৫-১৬ নং ভার্সে]।
https://bible.com/bible/1791/mrk.16.15-16.ROVU ; এরপর যীশুর নামে কিছু বানোয়াট শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো হবে বিশ্বাসীদের চিহ্ন যা বাস্তবে অসম্ভব।
➤[25] কোরআন ও বাইবেলের সাক্ষ্যানুযায়ী যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি; আলোচনায় শাইখ আহমেদ দিদাত
https://youtu.be/7GI8CydDQQo
➤[26]আরো দেখতে পারেন: যীশু খ্রিস্ট কি সত্যিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন? আলোচনায়: ড. জাকির নায়েক (সম্পূর্ণ লেকচার)
https://youtu.be/WoXrEHz0zeo