Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

জাহেলী যুগে নারী ও কন্যা শিশুর জিন্দাকবর এবং একরাশ অপমান

ইসলাম পূর্ব নারীদের অবস্থা - ১

জাহেলী যুগে কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া সাধারণ জনগণের জন্য ছিলো খুবই অপমান ও লজ্জাজনক।  কন্যাসন্তান জন্মের পর পিতা ভাবে সে কি তাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেবে নাকি হীনতা সত্ত্বেও রেখে দেবে!

সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সোর্স থেকে:

“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্নগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে (কন্যাকে) রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে ফেলবে! সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত নেয় তা কত নিকৃষ্ট”। (সূরা আন-নাহল: ৫৮-৫৯)

ইবনে কাসীর রা. এই আয়াতের তাফসিরে কী বর্ণনা করেছেন আসুন দেখি, "তারা ভাবতো কন্যাসন্তান হলে সেটা হলো আল্লাহর কন্যা, আর পুত্র হলো তাদের নিজেদের, তাই তাকে আল্লাহর নিকট পাঠিয়ে দেওয়াই শ্রেয়(নাউজুবিল্লাহ)। যখন তাদেরকে খবর দেয়া হয় যে, তাদের মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে, তখন লজ্জায় তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে কথা সরে না। তারা লোকদের কাছে আত্মগোপন করে থাকে। তারা চিন্তা করেঃ এখন কি করা যায়? যদি এ কন্যা সন্তানকে জীবিত রাখা যায়, তবে এটাতো খুবই লজ্জার কথা! সে তো উত্তরাধিকারিণীও হবে না এবং তাকে কিছু একটা মনে করাও হবে না। সুতরাং পুত্র সন্তানকেই এর উপর প্রাধান্য দেয়া হোক। মোট কথা তাকে জীবিত রাখলেও তার প্রতি অত্যন্ত অবহেলা প্রদর্শন করাহয়। অন্যথায় তাকে জীবন্তই কবর দিয়ে দেয়া হয়। এই অবস্থা তো তার নিজের। আবার আল্লাহর জন্যে এই জিনিসই সাব্যস্ত করে। সুতরাং তাদের এই মীমাংসা কতই নী জঘন্য! এই বন্টন কতই না নির্লজ্জতাপূর্ণ বন্টন! আল্লাহর জন্যে যা সাব্যস্ত করছে তা নিজের জন্যে কঠিন অপমানের কারণ মনে করছে! প্রকৃত ব্যাপার এই যে, তারা হচ্ছে অতি নিকৃষ্ট প্রকতির অধিকারী, আর আল্লাহ তো হচ্ছেন অতি মহৎ প্রকৃতির অধিকারী এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, মহিমাময় ও মহানুভব।" (উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে)

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

"আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?" (সূরা আত-তাকভীর ৮-৯)

ইবনে কাসীর (রঃ) উল্লেখ করেছেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কায়েস ইবনে আসিম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! জাহিলিয়াতের যুগে আমি আমার কন্যাদেরকে জীবিত প্রোথিত করেছি (এখন কি করবো?)।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তুমি প্রত্যেকটি কন্যার বিনিময়ে একটি করে গোলাম আযাদ করে দাও।” তখন হযরত কায়েস (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তো উটের মালিক (গোলামের মালিক তো আমি নই?)।” তিনি বললেনঃ “তাহলে তুমি প্রত্যেকের বিনিময়ে একটি করে উট আল্লাহর নামে কুরবানী করে দাও।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আবদির রাযযাকে বর্ণিত হয়েছে) অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত কায়েস (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি বারো বা তেরোটি কন্যাকে জীবন্ত দাফন করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাদের সংখ্যা অনুযায়ী গোলাম আযাদ করে দাও। তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, আমি তাই করবো।” পরবর্তী বছর তিনি একশটি উট নিয়ে এসে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি মুসলমানদের সাথে যা করেছি তার জন্যে আমার কওমের পক্ষ থেকে এই সাদকা নিয়ে এসেছি।” আলী (রাঃ) বলেনঃ “আমি ঐ উটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতাম। ঐগুলোর নাম কায়সিয়্যাহ্ রেখেছিলাম।” (উক্ত আয়াতের তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে)

প্রাচীন তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে ক্বুরতুবিতে ইমাম কুরতবি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.)-এর একজন সাহাবি সদা রাসুল (সা.)-এর সম্মুখে চিন্তিত অবস্থায় বসে থাকতেন। প্রিয় নবী (সা.) একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেন—কী হয়েছে, তুমি এত চিন্তিত কেন? তখন সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি জাহেলি যুগে এমন মারাত্মক গুনাহ করেছি, আমি ভয় করছি যে আল্লাহ আমার এ গুনাহ আমি মুসলমান হলেও ক্ষমা করবেন না! বিশ্বনবী (সা.) তাকে বলেন, তোমার গুনাহর কথা আমাকে বলো। তখন সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি এমন পাপী যে জাহেলি যুগে অনেক কন্যাসন্তান হত্যা করেছি। একসময় আমার একটি সন্তান জন্ম হলো, আমার স্ত্রী একে হত্যা না করে রেখে দেওয়ার জোর সুপারিশ করল। অতঃপর আমি রেখে দিলাম। ধীরে ধীরে সে বড় হলো। সে ছিল খুবই সুন্দরী। যুবকরা একে বিয়ের প্রস্তাব দিল। এতে আমার মধ্যে রাগের সঞ্চার হলো, অন্তরে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, একে বিয়ে দেব; নাকি বিয়ে ছাড়া ঘরে রেখে দেব। অবশেষে আমার স্ত্রীকে বললাম, আমি আমার বংশের অমুক অমুক লোকদের কাছে বেড়াতে যাব, কন্যাকেও আমার সঙ্গে যেতে দাও। স্ত্রী খুশি হয়ে সুন্দর পোশাক ও অলংকার পরিয়ে তাকে সুসজ্জিত করল। অতঃপর তার কোনো ক্ষতি না করার জন্য প্রতিশ্রুতি নিল। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে একটি নদীর তীরে গেলাম। অতঃপর মেয়েটিকে নদীতে ফেলে দেওয়ার চিন্তা করলাম। মেয়েটি যখন বুঝতে পারল, তখন সে বলল, আব্বা! আপনি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করবেন? এতে আমার মধ্যে দয়ার উদ্রেগ হলো। তারপর নদীর দিকে তাকালাম, এতে আমার মধ্যে রাগ ফিরে এলো। আমি তাকে নদীতে ফেলে দিতে চাইলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আব্বা! আমার মায়ের আমানতের খিয়ানত করবেন না। অতঃপর আমার মধ্যে দয়ার উদ্রেগ হলে তাকে ছেড়ে দিই। পরিশেষে শয়তান আমার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করলে আমি তাকে ধরে নদীতে ফেলে দিলাম। তখন সে চিৎকার করে বলেছিল, হে আমার আব্বা! আপনি আমাকে কেন হত্যা করছেন? তার জবান থেকে আওয়াজ বের হওয়া পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অতঃপর সেখান থেকে চলে আসি। তার বর্ণনা শুনে মহানবী (সা.) ও উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম কাঁদতে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, জাহেলি যুগের কোনো অপকর্মের কারণে যদি কাউকে শাস্তি দেওয়ার আদেশ করা হতো, তাহলে আমি তোমাকে শাস্তি দিতাম।’(তাফসীরে কুরতুবি, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ৬৮) আরো দেখুনঃ (Tafsir Samarqandi; Bahrul 'Ulum, Tafsir Qurtubi, Surah Al An'am, Verse: 140)

সীরাত সরওয়ারে আলমে পাই, "কোনো ব্যক্তি যেন তার জামাতা না হতে পারে নিছক এই জাহেলী চিন্তার বশবর্তী হয়ে তারা নিজেদের শিশু কন্যাকে স্বহস্তে জীবিত কবর দিতো" (সীরাতে সরওয়ারে আলম ১/৯৬, আধুনিক প্রকাশনী, ২০০৪)

মাজমাউজ জাওয়াইদ (Majma al-Zawaid) হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত আছে, ইবন আসিম ছিলেন বনু তামিম গোত্রের নেতা। মুসলমান হওয়ার পর মহানবী (সা.)-এর পাক দরবারে হাজির হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি নিজ হাতে আমার আট কন্যাকে জীবন্ত কবর দিয়েছি। কায়েসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এতগুলো কন্যা হত্যা করতে তোমার মায়া লাগেনি? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেছেন, হ্যাঁ, অবশ্যই লেগেছে। একটি মেয়ের জন্য ব্যথা লেগেছে সবচেয়ে বেশি। কারণ মেয়েটিকে গর্তে ফেলে আমি গর্তটি ভরাট করছিলাম, যখন বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলি, তখন মেয়েটি তার দুই হাত বাড়িয়ে আমার দাড়িগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলেছে, আহা! আব্বাজান, আপনার দাড়িতে ধূলি লেগেছে। তখন মেয়েটিকে গর্তে ফেলতে অন্তরে একটু ব্যথা লেগেছিল। পরে দ্রুত গর্তটি পূর্ণ করে চলে আসি। কায়েসকে আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, আর কোনো কন্যার জন্য কি আপনি ব্যথা পেয়েছেন? তিনি তখন বললেন, হ্যাঁ, আমার আরেকটি কন্যার জন্য বড় ব্যথা পেয়েছি। সে ছিল খুবই সুন্দরী। তার মুখের হাসি ছিল মিষ্টি, কথা ছিল হৃদয়গ্রাহী। আমি যখন তাকে গর্তে ফেলে মাটি ফেলতে লাগলাম, তখন অশ্রুজলে তার গণ্ডদেশ প্লাবিত হতে থাকে এবং আমার দিকে তাকিয়ে হৃদয়বিদারক ভাষায় বলতে থাকে, আব্বাজান! আমি আপনার কাছে কী অপরাধ করেছি, কী জন্য আমাকে হত্যা করছেন? তখন আমার কোনো উত্তর ছিল না, আমি দ্রুত মাটি ফেলে গর্ত ভরাট করে চলে আসি। আরেকজন কন্যা হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে আমি গর্ভাবস্থায় রেখে ব্যবসা নিয়ে সফরে গেলাম, বহুদিন পর ফিরে এলে স্ত্রী জানাল যে একটি মৃত সন্তান হয়েছিল। অতঃপর বছর দুয়েক পর ঘরে ফুটফুটে একটি মেয়ে দেখে জানতে চাইলে স্ত্রী জানাল যে এই মেয়ে আমাদেরই এবং আমি জীবন্ত কবর দেব এই ভয়ে সে তাকে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে বড় করেছে। আমি তাকে আদর করলাম। কিন্তু আমি যেহেতু ছিলাম গোত্রের সরদার, আমার জাহেলি চিন্তা ছিল ভিন্ন। তাই একদিন তাকে বেড়াতে যাব বলে নিয়ে চললাম, নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গর্ত খোঁড়া শুরু করলাম, মেয়েটি গর্ত থেকে মাটি তুলে আমাকে সাহায্য করছিল। হায়, সে তখনো জানতে পারেনি যে নিজের কবর সে নিজেই খুঁড়ছে। মাটি এসে আমার দাড়িতে লাগছিল আর মেয়েটি তা ঝেড়ে দিচ্ছিল। অবশেষে গর্ত খোঁড়া শেষ হলে আমি মেয়েটির হাত-পা বাঁধতে শুরু করলাম। সে তখন বুঝে ফেলেছিল যে তাকে আমি হত্যা করতে যাচ্ছি। সে কেঁদে কেঁদে বলছিল, আব্বা, আমি আপনাকে আমার বাবা বলে কারো কাছে পরিচয় দেব না, আমাকে মেরে ফেলবেন না আব্বা। আমি তার কথায় কান না দিয়ে তাকে নির্মমভাবে গর্তের মধ্যে ফেলে দিলাম। তারপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় পাথর তার বুক বরাবর ছুড়ে মারলাম। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আর মেয়েটির সর্বশেষ যে আর্তনাদটি আমি শুনতে পেলাম তা হলো, ‘হে আব্বা!’ তার বর্ণনা শুনে দয়াল নবীর পবিত্র নয়ন থেকে অশ্রু ঝরছিল। মহানবী (সা.) কায়স ইবন আসিমের কথা শুনে প্রত্যেক কন্যার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করার কথা বলেন। কায়স বললেন, আমি অনেক উটের মালিক। তখন রাসুল (সা.) বলেন, প্রতিজনের বিনিময়ে একটি উট দান করে দাও - (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৭/১৩৪)

আদর স্নেহের বিপরীতে তাঁর সেসময় জাহেলী চিন্তা ছিলো ভিন্ন। এটি দিয়েই সেসময়কার জাহেলী চিন্তার প্রমাণ পাওয়া যায়, যে কন্যা হত্যা সেসময় কমন বিষয় ছিলো!

“ইসলামের ইতিহাস” গ্রন্থে গ্রন্থকার লিখেন, “বনী তামীম এবং কোরায়শদের মধ্যে কন্যা হত্যার সমধিক প্রচলন ছিল। তারা এজন্যে রীতিমত গর্ববোধ করতো এবং তাদের জন্যে সম্মানের প্রতীক বলে বিশ্বাস করতো। কোন কোন পরিবারে এ পাষণ্ডতা এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল যে, মেয়েরা যখন বেশ বড় হয়ে যেতো এবং মিষ্টি কথা বলতে শুরু করতো, তখন পাঁচ ছ’ বছর বয়সে তাকে সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত করে পিতা তাকে লোকালয়ের বাইরে নিয়ে যেতো। পাষণ্ড পিতারা পূর্বেই সেখানে গিয়ে গর্ত খুড়ে আসত এবং পরে মেয়েকে সেখানে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলে দিত। অবোধ মেয়ে তখন অসহায় অবস্থায় চীৎকার করে করে বাপের কাছে সাহায্য চাইতো, কিন্তু পাষণ্ড পিতা তার দিকে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে ঢিল ছুড়ে ছুড়ে তাকে হত্যা করতো বা জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে নিজ হাতে কবর সমান করে দিয়ে নির্বিকারে ঘরে ফিরে আসতো এবং আপন কলিজার টুকরা সন্তানকে জীবন্ত প্রেথিত করার জন্য সে রীতিমত গর্ববোধ করতো। বনী তামীমের জৈনেক কায়স ইবন আসিম এভাবে একে একে তার দশটি কন্যাসন্তানকে জীবন্ত প্রেথিত করে। কন্যা হত্যার এ অমানুষিক বর্বরতা থেকে আরবের কোন কবীলাই মুক্ত ছিলো না। তবে কোন কোন এলাকা্র কবীলায় এটি অনেক বেশী হত, আবার কোন কোন কবীলায় তা কম হত। দেখুন: নজিবাদী, আকবর শাহ খান, ইসলামের ইতিহাস, ১/৬৮; (অনুবাদ করেছে - ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগারগাও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা, ২য় সংস্করণ, জুন, ২০০৮)।

লায়স (রহ.) বলেন হিশাম তাঁর পিতা সূত্রে তিনি আসমা বিন্ত আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণনা করতে গিয়ে আমার কাছে লিখছেন যে, তিনি (আসমা) বলেন, আমি দেখলাম যায়দ ইবনু ‘আমর ইবনু নুফায়ল কা’বা শরীফের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বলছেন, হে কুরাইশ গোত্র, আল্লাহর কসম, আমি ব্যতীত তোমাদের কেউ-ই দ্বীনে ইব্রাহীমের উপর নেই। আর তিনি যেসব কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার জন্য নেয়া হত তাদেরকে তিনি বাঁচাবার ব্যবস্থা করতেন। যখন কোন লোক তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করার জন্য ইচ্ছা করত, তখন তিনি এসে বলতেন, হত্যা করো না, আমি তার জীবিকার ব্যয়ভার গ্রহণ করবো। এ বলে তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। শিশুটি বড় হলে তার পিতাকে বলতেন, তুমি যদি তোমার কন্যাকে নিয়ে যেতে চাও, তাহলে আমি দিয়ে দেব। আর তুমি যদি নিতে না চাও, তবে আমিই এর সকল ব্যয় ভার বহন করে যাব। - (বুখারী - তাওহিদ পাব্লিকেশন্স, হাদিস ৩৮২৭-৮ hadithbd)

দ্বীনে ইব্রাহিম হলো ইসলামের পুরনো শরিয়ত যা ইব্রাহিম (আ:) এর উপর নাজিল হয়েছিলো। এই হাদিসটিতে 'যখন কোনো লোক' ও যেসব কন্যা' অংশগুলোই প্রমাণ করে যে কন্যাশিশু হত্যা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিলো না। বিরল ক্ষেত্রে আমরা আরবি কবিতায় শিশুহত্যার সূত্র খুঁজে পাই। (ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া)

Al-Lisan/Um Wa Diwan Hassan/The Diwan of Hassan Thabit (c. 563): 1:467 (Poem Collection). Buried beneath earth and settled therein, without any appurtenances of burial, or a pillow on which the dead are given homage. Al-Lisan, Wa'd, Wa Bulugh al-Irab, 3:42. That the buried newborn, did not receive from his mother’s inclemency as much as did all of Thuhul and ‘Amer'. Um Wa Diwan Hassan/The Diwan of Hassan Thabit: 2:319. Omar Abdallah Ahmad Shehadeh. "Infanticide in pre Islam Era: Phenomenon Investigation". Department of Arabic Language and Literature: 5. we do not find in what remained, any mention by the poets of the word wa’d (infanticide) or its derivatives, except in rare cases'.

ইসলাম বিদ্বেষী লেখক রবার্ট স্পেন্সারও তার ইসলাম বিদ্বেষী লেখায় কন্যাশিশু হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। (Robert Spencer, The Truth About Muhammad, p.34; (An Eagle Publishing Company, Washington, DC, 2006).

উল্লেখ্য যে, আরবের জনগণ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করতো। প্রতিটি শ্রেণীর অবস্থা ছিল অন্য শ্রেণীর চেয়ে আলাদা। অভিজাত শ্রেণীতে নারী পুরুষের সম্পর্ক ছিল যথেষ্ট উন্নত। এ শ্রেণীর মহিলাদের স্বাধীনতা ছিল অনেক। এদের কথার মূল্য দেয়া হতো। (আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ ৫, জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি) অর্থাৎ, অভিজাত বংশের কন্যাদের বেশিরভাগ হত্যা করা হতো না। আর সাধারণ বংশের কন্যাদের বেশিরভাগই হত্যা করা হতো, কমসংখ্যক গ্লানি সত্ত্বেও রেখে দিতো। তারা অনেক অধিকার পেত।উদাহরণ স্বরূপঃ রাসূল (সা:) এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা:) ছিলেন অভিজাত বংশের কন্যা, তাঁর পিতা ছিলেন খুওয়াইলিদ ইবনে আসাদ যিনি একজন বণিক এবং কুরাইশ বংশের একটি গোত্রের নেতা ছিলেন।