Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

ইহুদি ও খ্রিস্টানধর্মে হজ্বের রহস্য উন্মোচন

ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। তন্মধ্যে একটি হলো হজ্ব।কাবা-ঘরে গিয়ে হজ্ব করে আসার আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য আছে এমন পুরুষ কিংবা মহিলার উপর জীবনে অন্তত একবার হজ্ব করা ফরজ অর্থাৎ অবশ্য কর্তব্য। হজ্বকে নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিদের তথ্য বিকৃতি ও ঠাট্টা তামাশার শেষ নেই। উক্ত পোস্টে প্রমাণ করা হবে যে, বাইবেল হজ্বের স্বীকৃতি দেয় এবং ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মেও হজ্বের সংস্কৃতি মিশে আছে। মূলত খ্রিস্টান মিশনারিরা ইসলামের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগগুলো করে, সেগুলোর প্রায় সবকিছুই সত্য হয়ে উলটো তাদের ধর্মের দিকেই ফিরে যায়!

◾সাধু পলের হজ্ব 

খ্রিষ্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল ধর্ম পরিবর্তনের পর উমরা হজ্ব করতে আরবদেশে গিয়েছিলেন ।

সাধু পল বলেন, ἀποκαλύψαι τὸν Υἱὸν αὐτοῦ ἐν ἐμοὶ, ἵνα εὐαγγελίζωμαι αὐτὸν ἐν τοῖς ἔθνεσιν, εὐθέως οὐ προσανεθέμην σαρκὶ καὶ αἵματιοὐδὲ ἀνῆλθον εἰς Ἱεροσόλυμα πρὸς τοὺς πρὸ ἐμοῦ ἀποστόλους, ἀλλὰ ἀπῆλθον εἰς Ἀραβίαν, καὶ πάλιν ὑπέστρεψα εἰς Δαμασκόν.

যখন তিনি নিজের পুত্রকে আমাতে প্রকাশ করবার ইচ্ছা করলেন,যেন আমি পরজাতিদের মধ্যে তাঁর বিষয়ে প্রচার করি, তখন আমি কোনো মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করিনি, এমন কি আমার আগে যারা প্রেরিত হয়েছিলেন তাদের সঙ্গে দেখা করতে আমি জেরুশালেমেও যাইনি, কিন্তু কাল বিলম্ব না করে আমি আরব দেশে চলে গেলাম। পরে দম্মেশকে ফিরে আসলা। {বাইবেল,গালাতীয় ১:১৬-১৭}

উল্লেখ্য যে, পৌল যখন ঈশ্বরের আহবান শুনতে পান, তখন তিনি দামেস্কের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন।দামেস্ক ছিলো জেন্টাইল বা অইহুদিতে পরিপূর্ণ একটি শহর। যীশুকে জেন্টাইলদের মাঝে প্রচার করার জন্য তো তাঁর সবার আগে দামেস্কেই প্রচার করার কথা।এছাড়া দামেস্ক ও আরবের মাঝে আরো অনেকগুলো জেন্টাইল অঞ্চল ছিলো। পৌল সেগুলোতেও যাননি।কিন্তু কাল বিলম্ব না করে বলা নেই-কওয়া নেই  হঠাৎ আরব দেশে চলে যাওয়ার কারণ কি দামেস্ক পেরিয়ে? সম্ভবত সাধু পল যীশুর সাহাবিগণ, ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান ও ইহুদিদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করতে ও নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে দ্রুত হজ্বে গিয়েছিলেন। কারণ হজ্ব করে নিজেকে পরিশুদ্ধ ও অন্তর পরিবর্তনের রীতি ইহুদিদের মধ্যেও ছিলো। হজ্ব করে পবিত্র হওয়ার পর তিনি দামেস্কে গিয়ে প্রচারকার্য শুরু করেন।

◾সাধু পলেরই অনুসরণ করে জাহেলী যুগে খ্রিস্টানরাও কাবায় হজ্ব করতো।

নন- মুসলিম ইতিহাসবিদগণও কাবায় খ্রিস্টানদের হজ্বের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন - 

Marshall G . S . Hodgson এর The Venture  of Islam : Conscience and History in a World Civilization গ্রন্থে মুহাম্মাদ ﷺ এর পূর্বের জাহিলী যুগে মক্কার বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে:

It seems that even Christian Arabs made pilgrimage to the Kabah , at that time , honouring Allah there as God the Creator. 

অর্থাৎ - এমনকি আরব খ্রিষ্টানরাও সে যুগে আল্লাহকে স্রষ্টা হিসাবে ভক্তি করে কাবায় হজ করতো। { সূত্র:- Marshall G . S . Hodgson , The Venture  of Islam : Conscience and History in a World Civilization { Vol 1 } University of Chicago Press , p 156 }

 

◾যীশুর কথায় ইসলামি ইবাদত হজ্বের প্রমাণ:-

21. যীশু তাকে বললেন, ‘হে নারী, আমার কথায় বিশ্বাস করো! সময় আসছে যখন তোমরা পিতা ঈশ্বরের উপাসনা এই পাহাড়ে করবে না, জেরুশালেমেও নয়৷ [যোহন ৪:২১] এখানে যীশু মাক্কায় হজ্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

◾ইসলামিক সূত্র থেকে প্রমাণ:-

সহিহ বুখারীতেও মক্কায় খ্রিস্টানদের হজ্বের স্বপক্ষে হাদিস পাওয়া যায় । সহিহ বুখারী অনুযায়ী কাবাঘরে মারইয়াম আ: এর ছবি ছিলো। {বুখারী:৩৩৫১ }। কাবায় খ্রিস্টানদের যাতায়াত না থাকলে মারইয়াম আ: এর ছবি থাকার কথা নয়।

◾ইহুদিধর্মে হজ্ব প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক:-

বিখ্যাত ইহুদি পন্ডিত ও গবেষক 'আভি লিপকিন' ইহুদিধর্মে হজ্বের রহস্য প্রকাশ করে একটি কালজয়ী বই রচনা করেছেন। বইটির নাম হলো "RETURN TO MECCA".

উক্ত বইয়ে তিনি ইহুদিদেরকে পুনরায় তাদের প্রাচীন কিবলা কাবাঘরের দিকে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন। বইটিতে তিনি নানাভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, হজ্ব ইহুদিধর্মেরও একটি অংশ,এমনকি মূসা(আ)ও হজ্ব করেছেন।ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মের বিশাল অংশের প্র‍্যাক্টিস আজ কালের বিবর্তনে ভুলে বসে আছে।শুধু তাদের ধর্মগ্রন্থের পাতাতেই সেসব ইতিহাস ও রীতিনীতি খানিকটা রয়ে গিয়েছে। আভি লিপকিনের বই থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:

◾মূসা(আ) এর হজ্ব:

ואחר באו משה ואהרן ויאמרו אל־פרעה כה־אמר יהוה אלהי ישראל שלח את־עמי ויחגו לי במדבר. 

লোকদের সঙ্গে কথা বলার পর মোশি এবং হারোণ ফেরাউনের কাছে গিয়ে বললঃ প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, আমার সম্মানার্থে হজ্ব করার জন্য আমার লোকদের মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র দাও।

International Standard Version (ISV)

1 After Moses and Aaron arrived, they told Pharaoh, “This is what the Lord God of Israel says: ‘Let my people go so they may make a pilgrimage for me in the desert.’] [Exodus 5:1]

এখানে মরুপ্রান্তর দ্বারা নিশ্চিতভাবেই মক্কা মরুভূমিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা মিশরের নীলনদ তীরবর্তী বিশাল অঞ্চল ছিলো শস্য শ্যামলা। সেখানেই ফেরাউন ও মূসা আ: বসবাস করতেন। এছাড়া এখানে হজ্বের ক্ষেত্রে হিব্রু ויחגו  { Yohaggu } শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা হিব্রু ভার্ব חגג { Hagg } থেকে এসেছে। Hagg ও Hajj মূলত একই । এদের মাঝে উচ্চারণগত মিল যেমন রয়েছে, তেমনি উৎপত্তিগত মিলও রয়েছে। 

Hebrew Language Detective ওয়েবসসাইট Balashon এও হিব্রু শব্দটি ব্যাখ্যা করতে আল কুরআনের হাজ্জ { حَجِّ } শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এই হিব্রু শব্দটির ধাতুমূল { root — word } হচ্ছে חוג  {খুগ/হুগ } যার মানে হচ্ছে — to make a circle — বা — move in a circle — অর্থাৎ কোনো বৃত্ত তৈরি করা । এই শব্দটির সাথে পাক দেওয়া বা ঘোরানোর একটি সম্পর্ক আছে। এই কারণে হিব্রু ভাষায় টেলিফোনের ডায়ালের ক্ষেত্রে এই শব্দমূল থেকে উদ্ভুত חיוג {খেউগ/হেউগ } শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তাই হিব্রুতে ইহুদিদের pilgrimage বা হজ বোঝাতে ব্যবহৃত ❛হাগ❜ শব্দটি দিয়ে সরাসরি বৃত্তাকারে ঘোরা”ও বোঝানো হয়।এজন্যই দেখবেন হজের সময় ❛বৃত্তাকারে ঘোরা হয়❜। বাইবেলের সুবিখ্যাত ডিকশনারি NA — SEC এবং BDB-তেও স্বীকার করা হয়েছে যে, ויחגו শব্দটি Pligrimage/তীর্থযাত্রা বা আরবি হাজ্জ {حج } এর সাথে সম্পর্কিত। নিম্নে স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

আগ্রহী পাঠকগণ বাইবেলহাব ডট কমে যাত্রাপুস্তক ৫:১ এর হিব্রু শব্দটি এনালাইসিস করলেই পাবেন । হিব্রু ভাষায় ❛জ❜ অক্ষরটি নেই। এজন্য হিব্রু ভাষায় ❛গ❜ ই  ❛জ❜ এর স্থলাভিষিক্ত। যেমন: ইসমাইল আ: এর মাতাকে আরবিতে বলা হয় হাজার এবং হিব্রুতে বলা হয় হাগার। বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে "হাগ" শব্দটি বৃত্ত তৈরি করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ { Proverbs } পুস্তকের ৮ম অধ্যায়ের ২৭ আয়াতে হাগ শব্দটির ধাতুমূল হুগ { חוג } বৃত্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে:

❛প্রভু যখন আকাশ তৈরী করেন, সেই সময় আমি ছিলা। প্রভু যখন ভূমির চারদিকে একটি বৃত্ত একেছিলেন এবং সাগরের সীমারেখা স্থির করেছিলেন তখন আমি ছিলাম❜। এছাড়া যীশাইয় { Isaiah } পুস্তকের ৪০ অধ্যায়ের ২২ আয়াতেও  শব্দটি বৃত্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। হিব্রু চেক করে দেখতে পারেন। আমি শুধু বাংলা দিচ্ছি, ❛প্রভুই সত্যিকারের ঈশ্বর! তিনি পৃথিবীর বৃত্তের ওপর বসে থাকেন❜। কাজেই, যাত্রাপুস্তক ৫:১-এ বৃত্তাকারে ঘুরে হজ্ব করা অর্থেই হাগ { Hagg } শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক খ্রিস্টান বলতে পারে যে, যাত্রাপুস্তক ৫:১-এ ইহুদিদের নিস্তারপর্বের উৎসবকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তা একেবারেই হাস্যকর দাবি। ঐ সময় তো ইহুদিরা ফেরাউনের কবল থেকে নিস্তারই পায়নি। তাহলে নিস্তারপর্ব পালন করবে কিভাবে?

◾অনেক খ্রিস্টান অনুবাদক যাত্রাপুস্তক ৫:১ এর "হাগ" শব্দটিকে 'উৎসব বা Feast' হিসেবে অনুবাদ করে থাকেন। সেটি করলেও ভুল কিছু হবে না। বরং সেটিও ইসলামের সাথেই মিলে যাবে। যাত্রাপুস্তক ৫:১-এর হাগ শব্দটিকে যদি উৎসব হিসেবে অনুবাদ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় যে, এটা কিসের উৎসব?উত্তরটি আমরা পাই, যাত্রাপুস্তক ৫:৩ থেকে। যাত্রাপুস্তক ৫:৩ থেকে আমরা জানতে পারি এই উৎসবটি হলো নৈবেদ্য উৎসর্গ বা কুরবানি দেয়ার উৎসব। হাজীগণ হজ্বে গিয়ে যে কুরবানির ঈদ পালন করেন তার সঙ্গে মিলে যায়।

◾নির্ভরযোগ্য সনদের হাদিস দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, মূসা আ: সহ অন্তত ৭০ জন নবী মসজিদুল হারামে হজ্জ করেছেন।

قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم : ( لقد مر بِالرَّوْحَاءِ سَبْعُونَ نَبيا فيهم نَبِي الله مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَام ، حُفَاة عَلَيْهِم العباء ، يؤمُّونَ بَيت الله الْعَتِيق.

রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, ৭০ জন নবী রাওহা {মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী অঞ্চল} অতিক্রম করেছেন। তাদের মধ্যে মুসা (আ.) আছেন। তিনি খালি পায়ে ও আবায়া পরে আল্লাহর প্রাচীন ঘরের (কাবা) দিকে গমন করেছেন। {আত তারগিব ওয়াত তারহিবঃ ২/১১৮} 

আল মুনজিরী (র.)-এর মতে এই হাদিসের সনদে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই। মুসা (আ:) এর হজের বিবরণ দিয়ে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (র.)-এর কিতাবুয যুহদ কিতাবের হাদিসে বলা হয়েছে যে, হজের সময় তার গায়ে ছিল ২টি কাতাওয়ানি বস্ত্র। তিনি লাব্বাইক {আমি হাজির} বললে পাহাড়সমূহ থেকে তার প্রতিধ্বনি আসত {কিতাবুয যুহদ) {রাসুলের চোখে দুনিয়া শিরোনামে বাংলায় অনূদিত} {ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (র.) হাদিস নং — ৩১৩} 

৭০ জন নবী বাইতুল্লাহর {মসজিদুল হারাম} হজ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মুসা বিন ইমরান {আ.} তার গায়ে ছিল ২টি কাতাওয়ানী বস্ত্র। আরেকজন হলেন ইউনুস আ:। {হজের সময়} তিনি বলেছিলেন, لبيك كاشف الكرب لبيك আমি হাজির 'হে দুর্দশা দূরকারী' {আল্লাহ} আমি হাজির {কিতাবুয যুহদ} {রাসুলের চোখে দুনিয়া শিরোনামে বাংলায় অনূদিত} ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল র: হাদিস নং — ২৯৩]

◾বাইবেলের গীতসংহিতা { Psalms } গ্রন্থের ৮৪ অধ্যায়ের ৫ — ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে: 

হে প্রভু তারাই আশির্বাদধন্য যারা তোমার ঘরে বাস করে, তারা সদা — সর্বদা তোমার প্রশংসা করে। তারাই আশির্বাদধন্য তোমাতেই যাদের শক্তি, যারা তীর্থযাত্রার জন্য মনস্থির করে। যখন তারা বাকা {Baca/Baka} উপত্যকা দিয়ে গমন করে, একে পানির নহরের স্থান গণ্য করে। শরতের বৃষ্টি একে আশির্বাদে পূর্ণ করে। {কোনো কোনো ভার্সনে – শরতের বৃষ্টি জলাশয়গুলোকে ভরিয়ে দেয়} Blessed are those who dwell in your house , they are ever praising you . Blessed are those whose strength is in you , whose hearts are set on pilgrimage . As they pass through the Valley of Baka ,  they make it a place of springs , the autumn rains also cover it with pools { Or blessings } — NIV 

বাকা বা বাক্কা হচ্ছে মক্কার প্রাচীন নাম। বাইবেলের গীতসংহিতা হচ্ছে দাউদ আ: এর ওপর নাযিলকৃত কিতাব {যাবুর}-এর বিকৃতরূপ। এটি বাইবেলের পুরাতন নিয়ম {Old Testament} অংশে আছে এবং এটি ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মাবলম্বীদের স্বীকৃত গ্রন্থ। এই কিতাবে আমরা বাকায় তীর্থযাত্রী / হজ কাফেলাদের বিবরণ পাই। বাইবেলের পদটিতে আরও বলা হয়েছে যে, সেখানে আশীর্বাদ { blessings } বা বরকত আছে। আল কুরআনেও মক্কার বাক্কা নামের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এখানকার বরকতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো অনুবাদে ওই স্থানে জলাশয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিও বলা হয়েছে যে, তারা একে পানির নহরের স্থান গণ্য করে। মক্কায় কাবার নিকটেও জলাশয় আছে, বিপুল পানির সুপ্রাচীন আধার — যমযম কূপ।

আল কুরআনে সূরা ইমরানের ৯৬ ও ৯৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে–

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ ﴿٩٦﴾ فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّـهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّـهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿٩٧.

নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে , সেটাই হচ্ছে এ ঘর , যা বাক্কা তে {মক্কা} অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মাকামে ইব্রাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানে না — আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।

এর থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় দাউদ আ: এর আমলেও মুসা আ: এর অনুসরণে ইহুদিরা কাবায় হজ্ব করতো। এমনকি স্বয়ং দাউদ আ: ও তাদেরকে আশীর্বাদধন্য বলেছেন। উল্লেখ্য যে, অনেক খ্রিস্টান দাবি করে থাকেন এই বাকা উপত্যকা হলো ইস্রায়েল কিংবা ফিলিস্তিন অঞ্চলভুক্ত কোনো জায়গা। কিন্তু গীতসংহিতা {Psalms} গ্রন্থের ৮৪ অধ্যায়ের ৫ — ৬ নং আয়াতে বাকার পাশাপাশি তীর্থযাত্রার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসের আলোকে দাউদের আমলে কস্মিণকালেও ফিলিস্তিন/ইস্রায়েল অঞ্চলে ইহুদিদের কিংবা একত্ববাদী কোনো জাতির কোনোপ্রকার তীর্থযাত্রা হতো না। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এখানে বাকা দ্বারা মাক্কাকে বোঝানো হয়েছে এবং তীর্থযাত্রা দ্বারা হাজ্জকে বোঝানো হয়েছে।

◾কাবাঘর ও হজ্বের বিষয়টি ইহুদি সংস্কৃতিতেও মিশে আছে। ইহুদিরা প্রার্থনার সময় মাথায় ও হাতে কাবাঘর আকৃতির একটি ঘনকাকৃতির বস্তু বাঁধে, যার নাম "টেফিলিন (Tefillin)".

ইহুদিরা যখন হাতে টেফিলিনটি বাঁধে, তখন কনুই থেকে হাতের কবজি পর্যন্ত ৭টি প্যাঁচ দিয়ে বাঁধে।অনেকটা মুসলিমদের কাবাঘরকে ঘিরে ৭ বার তাওয়াফ করা বা পাক খাওয়ার সাথে মিলে যাচ্ছে না!

প্যাগানরা কাবাঘরকে ঘিরে ক্লকওয়াইজ অর্থাৎ ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরতো। আজকের দিনে হিন্দুদেরকেও আপনারা দেখবেন কোনো কিছুকে ঘিরে ক্লকওয়াইজ ঘুরতে। প্যাগানদের বিরোধিতা দেখানোর জন্য ইসলামের নিয়ম হচ্ছে এন্টি-ক্লকওয়াইজ বা ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘোরা।

◾কাবায় যে ইহুদিরা হজ্ব করতো তার আরো একটি প্রমাণ হলো বিখ্যাত পরিব্রাজক ও ঐতিহাসিক ইবন যুবাইর দ্বাদশ শতকে মক্কায় মসজিদুল হারামে কুব্বাতুল ইয়াহুদিয়্যাহ বা ইহুদিদের গম্বুজ স্বচক্ষে দেখেছেন এবং নিজ রিহলাহতে তা উল্লেখ করেছেন। তিনি তার রিহলাহ গ্রন্থে ১১৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদুল হারাম ভ্রমণ করে নিচ চোখে দেখা বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সে সময়ের মসজিদুল হারামের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন:

আব্বাসের গম্বুজ এবং ইহুদিদের গম্বুজ উত্তর দিকে মুখ করে আছে। গম্বুজটির এক পাশের কোণের নাম ইহুদিদের নামে দেয়া হয়েছে যেটি প্রাচীন গৃহের {কাবা} দিকে মুখ করে আছে। যেটি পূর্বমুখী আব্বাসের দেয়ালের পেছনভাগের বাম কোণা পর্যন্ত পৌঁছে {রিহলাহ — ইবনে যুবাইর পৃ/৫৯} 

এর অর্থ কোনো এক সময় {অত্যন্ত প্রাচীন কালে } ইহুদিরাও মক্কায় হজ্ব করতো এবং তাদের নামেই গম্বুজটির নামকরণ হয়েছে। যেভাবে বিভিন্ন নামে অন্য আরো কিছু প্রসিদ্ধ গম্বুজ ছিলো।