Are you sure?

ইতিহাস »  সিরাত

রাসুল (ﷺ) কি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারনে একজন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন?

 

একটি তথ্য প্রচার কর হয়ে থাকে যে মুহাম্মাদ (ﷺ) "বানু উমার বিন কিলাব" গোত্রের একজন নারিকে বিয়ে করেন, এবং পরবর্তিতে যখন জানতে পারেন যে সেই মহিলা একজন কুষ্ঠরোগি, তখন তিনি উক্ত মহিলাকে তালাক দেন।

এই তথ্যের মুল উৎস হলো "সুফিয়ান বিন ইয়াকুব আল-ফাসাওই" এর সুত্রে বর্নিত একটি বর্ননা।

"সুফিয়ান বিন ইয়াকুব আল-ফাসাওই" তার "আত-তারিখ ওয়াল মা'রেফাহ" (3/269) গ্রন্থে বর্ননা করেন :

'روى يعقوب بن سفيان عن حجاج بْنُ أَبِي مَنِيعٍ عَنْ جَدِّهِ عَنِ الزُّهْرِيِّ عن عروة عن عائشة …تزوج رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةِ من بني عمرو بن كلاب، فأنبئ أن بها بياضا، فطلقها ولم يدخل بها"
"ইয়াকুব বিন সুফিয়ান বর্ননা করেছেন হাজ্জাজ বিন আবি-মানিঈ থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি আয-যুহরী থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি আয়েশাহ (রা) থেকে যে……
… রাসুলুল্লাহ (ﷺ) "বানু উমার বিন কিলাব" গোত্রের একজন মহিলাকে বিয়ে করেন। তারপর তার (ﷺ) নিকট খবর আসে যে তার (মহিলাটির) কুষ্ঠরোগ রয়েছে, ফলে তিনি (ﷺ) তাকে (মহিলাটিকে) তালাক দেন ও তার সাথে বাসর করা হতে বিরত থাকেন "।

এই "ইয়াকুব বিন সুফিয়ান আল-ফাসাওই" এর সুত্র ধরেই অন্যান্য বহু গ্রন্থে এটি বর্নিত হয়েছে। যেমন : ইবন কাসির "আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ" (8/211) এ, ইবন আসাকির "তারিখ দামেশক"(3/184) এ, আল-বায়হাকী "দালাইলুন নাবুওয়াহ" (7/286) ও "আস-সুনানুল কুবরা"(7/115) তে -- এই বর্ননাটি "ইয়াকুব বিন সুফিয়ান আল-ফাসাওই" এর সুত্র ধরে বর্ননা করেছেন।

অর্থাৎ এই বর্ননার সকল সনদ "ইয়াকুব বিন সুফিয়ান আল-ফাসাওই" পর্যন্ত এসে মিলিত হয়েছে। তারপর থেকে "ইয়াকুব বিন সুফিয়ান আল-ফাসাওই" যেই সনদ বর্ননা করেছেন তা নিম্নরুপ :

"হাজ্জাজ বিন আবি-মানিঈ " বর্ননা করেছেন তার "দাদা" হতে, হাজ্জাজের "দাদা" বর্ননা করেছেন "আয-যুহরী" থেকে, "আয-যুহরী" বর্ননা করেছেন "উরওয়াহ" থেকে, "উরওয়াহ" বর্ননা করেছেন "আয়েশাহ (রা) " থেকে।

এই সনদটিতে একজন রাবি হলেন "হাজ্জাজের দাদা"। হাজ্জারের দাদার নাম হলো "আবু-মানিঈ উবাইদুল্লাহ বিন আবি-যিয়াদ আর-রাসাফী আশ-শামী "।

"আবু-মানিঈ উবাইদুল্লাহ বিন আবি-যিয়াদ আর-রাসাফী আশ-শামী" - থেকে শুধুমাত্র তার নাতি হাজ্জাজই হাদিস বর্ননা করেছেন, তার নাতি হাজ্জাজ বতিত তার নিকট থেকে আর কেওই বর্ননা করেন নি।

আল-মিযযী "তাহযিবুল কামাল"(19/39) গ্রন্থে উবাইদুল্লাহ আর-রাসাফীর ছাত্র হিসেবে শুধুমাত্র "হাজ্জাজ" এরই নাম উল্লেখ্য করেছেন।

আয-যাহাবী "তাযহিব তাহযিবিল কামাল" (6/208) গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেছেন "তার নিকট হতে তার নাতি হাজ্জাজ একা হাদিস বর্ননা করেছেন"।

আয-যাহাবী "আল-আবর"(1/176) গ্রন্থে তার স্ম্পর্কে বলেছেন "তার নিকট হতে তার নাতি হাজ্জাজ বিন আবি-মানিঈ ব্যাতিত আর কেওই বর্ননা করেনি"।

আয-যাহাবীর "আল-আবর" গ্রন্থের বক্তব্যটিকে ইবনুল আমাদ আল-হানবলী "শাযারাতুয যাহাব"(2/161) গ্রন্থে নক্বল করেছেন।

আয-যাহাবী "মিযানুল ই'তিদাল"(3/8) গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেছেন "তার নাতি হাজ্জাজ বিন আবি-মানিঈ ইউসুফ বিন উবাইদুল্লাহ ব্যাতিত তার নিকট হতে আর কেওই বর্ননা করেনি"।

আয-যাহাবী "মিযানুল ই'তিদাল"(3/8) গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেছেন "আয-যাহলী বলেছেন : সে শামের রাসাফাহর লোক, আমি তার জন্য তার ছেলের ছেলে হাজ্জাজ ব্যাতিত আরো কোনো রাবি সম্পর্কে জানিনা "।

//যদি "ক" রাবি থেকে শুধুমাত্র একজন রাবি হাদিস বর্ননা করে, তাহলে "ক" রাবিকে বলা হয় "মাজহুলুল আইন"। অর্থাৎ যার থেকে শুধুমাত্র একজন রাবি বর্ননা করে তাকে মাজহুলুল আইন বলা হয়। [নুখবাতুল ফিকার (পৃ/20)]

এক্ষেত্রে হাজ্জাজের দাদা থেকে শুধুমাত্র একজন রাবি অর্থাৎ হাজ্জাজ হাদিস বর্ননা করেছেন। যার অর্থ হলো হাজ্জাজের দাদা "আবু-মানিঈ উবাইদুল্লাহ বিন আবি-যিয়াদ আর-রাসাফী আশ-শামী" হলেন একজন "মাজহুলুল আইন"।

এবং "মাজহুলুল আইন " রাবির হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়
[শারহু আল-ফিয়াতিল ইরাকি (1/350)] 

সুতরাং এটি একটি "অনির্ভরযোগ্য" হাদিস। একে দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা, এর উপর নির্ভর করা যাবেনা।

তাছারা  "হিশাম বিন মুহাম্মাদ ইবনুস সাইব আল-কালবী" এর সুত্রে "আল-আরযামী' হতে এইমর্মে আরো একটি বর্ননা আছে, সেই বর্ননাটিও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিয়াহাহ সহ অন্যান্য বেশকিছু গ্রন্থে "হিশাম বিন মুহাম্মাদ ইবনুস সাইব আল-কালবী" এরই সুত্রে "আল-আরযামী" হতে  বর্নিত হয়েছে,উল্লেখিত হয়েছে। "হিশাম " ও "আল-আরযামী" উভয়েই "মাতরুক", যার অর্থ হলো এইমর্মে হিশামের সুত্রে আসা বর্ননাটি বাতিল।

[নাবিল আল-বাসারাহ,"আনিসুস সারী" (6/3904)]