Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

পর্ব: ৩] আমরা হাদিস কেন মানতে বাধ্য?

আমরা সবাই জানি হযরত মুসা আঃ মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার সাথে কোন মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কথা বলেছিলেন অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং মুসা আঃ এর কথোপকথনের মাঝে কোন মাধ্যম ছিল না। মহান আল্লাহ মুসা আঃ কে বনি ইস্রায়েল জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলেন এবং তাঁর মাধ্যমে বনি ইসরাইল জাতিকে অত্যাচারী এবং পাপিষ্ঠ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন যা বাইবেল এবং পবিত্র কোরআন থেকে জানা যায়। মহান আল্লাহ তাঁর উপর পবিত্র তাওরাত কিতাব নাযিল করলেন। আর এই তাওরাত কিতাব পালনকারীরাই পৃথিবীতে ইহুদি নামে পরিচিত। ইহুদিরা নিজেদের কে মুসা আঃ এর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়। তো তাঁরা প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুহাম্মদ ﷺ এর নবুয়্যত সম্পর্কে তাওরাত থেকেই অবগত হয়েছিল। এরপরেও তারা হঠকারিতা প্রদর্শন করে রাসূল ﷺ কে বিভিন্ন প্রশ্ন করত। ইহুদিরা রাসূল ﷺ কে বলল,"আপনি যদি সত্যিই নবী হন, তাহলে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন না কেন, তাঁকে দেখেন না কেন, যেমন মুসা আঃ কথা বলেছেন এবং দেখেছেন? আপনি এরুপ না করা পর্যন্ত আমরা ইমান আনব না। তখন রাসূল ﷺ বলেন মুসা আঃ আল্লাহ্ তা'আলাকে দেখেননি। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।" [তাফসীরে কুরতুবি ৪২:৫১]

মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআন মাজীদের ৪২ নং সূরা আশ-শূরার ৫১ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন:

وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَآئِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِىَ بِإِذْنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِىٌّ حَكِيمٌ

অর্থঃ মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন অহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিত, অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

And it is not for any human being that Allah should speak to him except by revelation or from behind a partition or that He sends a messenger to reveal, by His permission, what He wills. Indeed, He is Most High and Wise." [Translator: Sahih International]

এই আয়াত থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, কোনো মানুষের পক্ষেই সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলা সম্ভব নয়। আবার আল্লাহ যা চান তাই ওয়াহী করেন। আল্লাহ শুধুমাত্র কুরআন নাজিলের জন্যই ওহী প্রেরন করেননি, বরং আল্লাহর যা জানানোর ইচ্ছা তাই জানাতে ওহী পাঠিয়েছেন। তো যাইহোক আমরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দিকে যাই ইনশাআল্লাহু তাআলা।

এই আয়াতে আমরা তিনটি পদ্ধতিতে ওহী নাযিলের কথা জানতে পারি অর্থাৎ আল্লাহ্ এই তিনটি পদ্ধতিতে কথা বলেন মানুষের (নবী) সাথে:

  • i] إِلَّا وَحۡيًا/ওয়াহীর মাধ্যমে;
  • ii] أَوۡ مِن وَرَآئِ حِجَابٍ/ অথবা পর্দার আড়ালে;
  • iii] أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولًا/ অথবা বার্তা বাহক প্রেরণের মাধ্যমে।

 

i) ওয়াহী (وحيا) : এ শব্দটির অর্থ অনুপ্রেরণা, অদৃশ্য বা গোপন প্রত্যাদেশ যা ইশারাকারী ও ইশারা গ্রহণকারী ছাড়া তৃতীয় কেউ টের পায় না। আর এরুপ ওয়াহী কোন ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই রাসূলের অন্তরে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। আর এরুপ পদ্ধতিকে نفث বলা হয়" [তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ ৪২:৫১ নং আয়াত দ্রষ্টব্য]। অন্তরে কোন কথা প্রক্ষিপ্ত করা (ঢুকিয়ে দেওয়া) অথবা স্বপ্নে বলে দেওয়া এই প্রত্যয়ের সাথে যে, তা মহান আল্লাহর-ই পক্ষ হতে। আর নবীদের স্বপ্নও যে ওহী তার প্রমাণ খোদ কোরআন মাজীদে বিদ্যমান [পবিত্র কোরআন ৩৭:১০০-১০৫; ৪৮:২৭]।

ii) পর্দার আড়াল: জাগ্রত অবস্থায় পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি কথা বলা। এই ধরনের ওহীর ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমের দরকার হয় না। যেমন হযরত মুসা আঃ তুর পর্বতে মহান আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন কোন মাধ্যম ছাড়া [পবিত্র কোরআন ২৮:৩০-৩৫, ৪৬; ২০:১১-১৪; ২৭:৮-৯]। আবার আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ ও মেরাজে গিয়ে মহান আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন কোনরুপ মাধ্যম ছাড়া যা সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

iii) বার্তা বাহক প্রেরণের মাধ্যমে: এ ধরনের ওহী স্বীয় ফেরেশতার মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় নবী-রাসূলগণের প্রতি। যেমন হযরত জিব্রাইল আঃ ওয়াহী নিয়ে আসতেন এবং নবী-রাসূলগণের নিকট তা শুনাতেন। আর রাসূল ﷺ এর উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে। সুতরাং দুনিয়াতে কোন মানুষ মহান আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে না।
আর আমরাও জানি মহান আল্লাহ রাসূল ﷺ কে স্বপ্নের মাধ্যমে ওয়াহী করেছিলেন। আর এইখানে ওহী বাহক ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ অনুপস্থিত ছিলেন। তো পবিত্র কোরআনের ৪৮ নং সূরা আল ফাত্‌হ (الفتح), আয়াত: ২৭ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন:

لَّقَدْ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءْيَا بِٱلْحَقِّ لَتَدْخُلُنَّ ٱلْمَسْجِدَ ٱلْحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا۟ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে - কেহ কেহ মাথা মুন্ডন করবে, কেহ কেহ কেশ কর্তন করবে; তোমাদের কোন ভয় থাকবেনা। আল্লাহ জানেন, তোমরা যা জাননা। এটা ছাড়াও তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়।" [অনুবাদক:মুজিবুর রহমান] 

এই আয়াত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল ﷺ কোন এক সময় স্বপ্ন দেখেন যা ছিল মূলত স্বপ্নযোগে ওহী (আয়াত নাযিল না হলে তথাকথিত আহলে কোরআন দাবিদাররা এটা বিশ্বাস করত না, কিন্তু আমরা করতাম সহীহ হাদিসের প্রমাণ থেকে)। তো তিনি এই স্বপ্ন দেখার পরে তাঁর সাহাবীগণের কাছে স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনালেন। আর সাহাবীগণও সেটা শুনলেন। এইখানে তিনি এমনটা বলেছেন যে,"আমি স্বপ্নে এই এই...দেখেছি! তাহলে এইটা কী মহান আল্লাহর কথা, নাকি রাসূলের? অবশ্যই রাসূলের কথা। আর এটাই রাসূল ﷺ এর হাদিস নামে পরিচিত। তো রাসূল ﷺ এর এই স্বপ্নের যে বৃত্তান্ত তিনি তাঁর সাহাবীগণকে শোনালেন এইটা কী ওহী তথা পবিত্র কোরআনের ৪৮:২৭ নং আয়াত নাযিলের পরে শুনিয়েছিলেন নাকি আগে? অবশ্যই আগে। তাহলে তিনি আগে তাঁর স্বপ্নের বর্ণনা তাঁদের শুনিয়েছিলেন। এটাই রাসূল ﷺ এর হাদিস। তো সাহাবীগণ কেন কোরআন বহিভূর্ত রাসূল ﷺ এর কথাকে মেনে নিলেন নির্দ্বিধায়? কারণ এটা নাযিল হবার আগে রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করতে হবে এই মর্মে আল্লাহ্ জানিয়ে দিয়েছেন ওহীর মাধ্যমে। এই জন্য সাহাবীগণ তাঁর কথাগুলো মেনে নেন। তো এরপর আল্লাহ্ ওহী নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, রাসূল যে স্বপ্ন দেখে তা বলেছেন, আল্লাহ্ তা অবশ্যই বাস্তবায়িত করবেন। কেননা এটা ছিল রাসূলের প্রতি আল্লাহর আদেশ। সুতরাং এটা থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূল ﷺ কোরআনের বাইরেও কথা বলতেন। কেননা তিনি যদি এসব না বলতেন তাহলে মহান আল্লাহ্ও এর সমর্থনে কোন আয়াত নাযিল করে তা অবগত করিয়ে দিতেন না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূল ﷺ এর স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত করবেন যা তিনি তোমাদের কে শুনিয়েছেন।

তাহলে এ থেকে প্রমাণ হয় যে, কোরআনের বাইরেও ওহী নাযিল হতো। এরপর রাসূল ﷺ তাও জানিয়ে দিতেন।

বিস্তারিত পড়ুন:
https://islamicauthors.com/article/301

তাহলে আমরা প্রমাণ পেলাম যে, মহান আল্লাহ্ রাসূল ﷺ এর সঙ্গে তিন ভাবেই কথা বলেছেন।
আবার আমরা জানতে পারলাম যে, পবিত্র কোরআনের ৪৮:২৭ নং আয়াতটা মূলত রাসূল ﷺ এর স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত করার ঘোষণা আল্লাহ্ জানিয়ে দিয়েছেন অগ্রীম। এই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়:

  • i) لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ/আপনি মাসজিদ আল-হারামে প্রবেশ করবেন;
  • ii) مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ/কেহ কেহ মাথা মুন্ডন করবে এবং কেহ কেহ চুল কর্তন করবে;
  • iii) لَا تَخَافُونَ/আপনাদের কোন ভয় থাকবে না;
  • iv) فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا/এটা ছাড়াও তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়। (এই বৈশিষ্ট্যের সবগুলো হজ/ওমরার সাথে সম্পৃক্ত)

 

আর এটা হলো ভবিষ্যদ্বাণী যা মহান আল্লাহ্ মুসলিমদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ এখানে কোরআন নিজে নিজেই হচ্ছে থিওরিটিক্যাল। আর রাসূল ﷺ হচ্ছেন এর বাস্তবায়নকারী। আর রাসূল ﷺ কিভাবে কি বাস্তবায়ন করেছিলেন তা জানার একমাত্র মাধ্যম হলো সহীহ হাদিস। আর সহীহ হাদিস ছাড়া কোরআনের এসব থিওরিটিক্যাল আয়াতের সত্যতা জানার কোন মাধ্যম নেই। এখন যারা হাদিস অস্বীকার করেন তাদের প্রমাণ দেখাতে হবে:

১] পবিত্র কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে কিনা এর প্রমাণ আমরা কোথায় থেকে পাব যদি সহীহ হাদিস না মানি?
২] এবং এইখানে যে বিজয় দানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেটা কোন বিজয়?