Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

কালোজিরার সর্বরোগের ঔষধ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা

 

মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন :

إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ مِنَ السَّامِ ‏.‏ قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ الْمَوْتُ‏.‏[1]

"এই কালো জিরা 'সাম' ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ সাম- কি? তিনি বললেনঃ সাম- অর্থ মৃত্যু। " (প্রাথমিক অনুবাদ)

মুহাদ্দিসদের মাঝে এই হাদিসটির ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ ঘটেছে। একদল বলেছেন كُلِّ দ্বারা ব্যাপকভাবে "সকল" রোগকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এবং আরেকদল বলেছেন যে كُلِّ দ্বারা "সকল" রোগকে উদ্দেশ্য করা হয়নি, বরং নির্দিষ্টভাবে সেই সকল রোগকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে যেসব রোগের বিরুদ্ধে কালোজিরা ভুমিকে রাখতে পারে। _[2]

জালালুদ্দিন আস-সুয়ুতী সেই মতদুটি উল্লেখ্য করে বলেন :

"قيل: هو من العام المخصوص,أي: من كل داء يقبل العلاج بها، وقيل: على عمومه، وأنها تدخل في كل دواء داء بالتركيب" [3]

"বলা হয়েছে যে : ইহা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যাপকার্থের, অর্থাৎ সেইসমস্ত রোগের (ঔষধ) যেগুলোর বেলায় তার (কালোজিরার) দ্বারা চিকিৎসা করা যায়। এবং আরো বলা হয়েছে যে : তা ব্যাপকার্থ অনুযায়ি হবে, অর্থাৎ তা (কালোজিরা) সমস্ত রোগের ঔষুধের তৈরি করার প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে "।

যদি ধরে নেই যে প্রথম মতটিই সঠিক, কালোজিরা সকল রোগের ঔষধ, সেক্ষেত্রে প্রধান দুটি আপত্তি আসে :

(১) কালোজিরা সকল রোগের ঔষধ নয়, এটা বিজ্ঞান বিরুধি, বিজ্ঞান অনুযায়ি কালোজিরা সকল রোগের ঔষুধ হিসেবে কাজ করেনা! সুতরাং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল! 

(২) ক্ষেত্রবিশেষে কোনো রোগির জন্য কালোজিরা খাওয়া উল্টো ক্ষতিকর হতে পারে।

আপত্তি দুটোর জবাব :

কালোজিরা সর্বরোগের ঔষধ হয়ার অর্থ এই না যে আপনার কোনো রোগ হলে, শুধুমাত্র কালোজিরা খেলেই সুস্থ হয়ে যাবেন। বরং এর অর্থ হলো এই যে বিশ্বের সকল রোগের বিরুদ্ধেই কালোজিরাকে কোনো না কোনাভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটা হতে পারে কালোজিরা একা, হতে পারে কালোজিরার সাথে কোনোকিছু মিশিয়ে, হতে পারে অন্য কোনো ঔষুধে কালোজিরাকে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে, হতে পারে কালোজিরাকে কোনো একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় অন্য ঔষুধে প্রয়োগ করে কিংবা হতে পারে কালোজিরাকে কোনো একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করে … এইধরনের যেকোনো পদ্ধতিই হতে পারে।_[4][5]

এটা সবারই জানা যে বিভিন্ন সাপের বিষ দ্বারা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি করা হয়। ধরুন "ক" সাপের বিষের সাহায্যে "খ" নামক একটি ঔষুধ তৈরি হলো যা "গ" রোগের নিরামক। এবং ধরুন আপনি "গ" রোগে আক্রান্ত একজন রোগি। "ক" সাপের বিষের সাহায্যে যেই ঔষধটি তৈরি করা হয়েছে, সেটা কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে। এখন আপনি যদি "গ" রোগটি নিরাময়ের উদ্দেশ্যে সরাসরি "ক" সাপের বিষ পান করেন তাহলে তা আপনার "গ" রোগটি নিরাময়ে কাজ করবেনা, প্রভাব ফেলবেনা; উলটো যদি এই পান করার সময় কোনোভাবে বিষটি আপনার রক্তে মিশে যায়, তাহলে আপনি মারাও যেতে পারেন।অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনি "গ" রোগটি নিরাময়ের জন্য "ক" সাপের বিষটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন নি, ভুলভাবে প্রয়োগ করেছেন। "ক" সাপের বিষটিকে "গ" রোগের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য আপনার বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা ঔষধটা নিতে হবে, সরাসরি বিষ নিলে হবেনা।

একইভাবে বহু রোগের ক্ষেত্রে আপনি যদি কালোজিরা প্রয়োগ করেন, তাহলে তা কাজ নাও করতে পারে, এর অর্থ এই না যে কালোজিরা সেই রোগের নিরাময়ে কোনো ভুমিকা রাখতে পারেনা । বরং এর অর্থ হলো এই যে : আপনি কালোজিরাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন নি। এমন বহু অসুস্থতা ও রোগ আছে যার নিরামক হিসেবে কালোজিরার ভুমিকার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তী নেই, কেননা সেইসকল রোগের নিরাময় করার জন্য
কালোজিরাকে কোন পদ্ধতিতে কোন প্রক্রিয়ায় কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে সেটা বিজ্ঞানের জানা নেই। বিজ্ঞান এখনো সেটা জানতে পারেনি।

একইভাবে যদি কালোজিরাকে ভুল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতির কারনও হতে পারে। বর্তমান সময়ের রসায়নবিদ্যার সাহায্যে তৈরিকৃত ঔষধগুলোর দিকে দেখুন, যদি কেও এসব ঔষধকে ভুল পদ্ধতিতে গ্রহন করে, তাহলে এই ঔষধগুলো তার ক্ষতি করতে পারে, এমনকি কিছুক্ষেত্রে সে মারাও যেতে পারে ; সিংহভাগ ঔষধের ক্ষেত্রেই এব্যাপারটা প্রযোজ্য । এর অর্থ এইনা যে এসব ঔষধ সব অকার্যকর বা নিরামক হিসেবে কাজ করেনা। বরং ঔষধ ঠিকিই আছে, সমস্যার কারন হলো প্রয়োগের পদ্ধতি। অনুরুপভাবে কালোজিরা যদি কোনো ক্ষেত্রে তার ক্ষতি করে, তাহলে এর অর্থ হবে সে কালোজিরাকে সেই ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেনি, ভুলভাবে প্রয়োগ করেছে।

এই মত অনুযায়ি হাদিসটিতে রাসুল (ﷺ) আমাদের এটা জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন যে কালোজিরা এমন একটা পদার্থ, যা সকল রোগ নিরাময়ে কাজ করতে পারে।  কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোন পদ্ধতিতে কালোজিরাকে প্রয়োগ করতে হবে, সেটা তিনি (ﷺ) শিখিয়ে দিয়ে যান নি। কোন কোন ক্ষেত্রে কিভাবে কালোজিরাকে প্রয়োগ করতে হবে সেটা আবিষ্কার করা ও নির্নয় করা চিকিৎসকদের কাজ। হতে পারে ভবিতষৎে বিজ্ঞানিরা কালোজিরার বহু নতুন নতুন প্রয়োগ পদ্ধতি আবিস্কার করতে সক্ষম হবেন।

যদি দ্বিতীয় মতটিকে সঠিক ধরে নেই, সেক্ষেত্রে হাদিসটিতে কালোজিরাকে "সমস্ত রোগের ঔষধ " নয় বরং "বহু রোগের ঔষধ " বলা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর শতভাগ সবগুলো রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অবদান রাখার ক্ষমতা কালোজিরা রাখেনা, বরং নির্দিষ্ট একটি ক্যাটাগড়ির অন্তর্ভুক্ত সকল রোগের নিরাময়ের জন্য অবদান রাখার ক্ষমতা কালোজিরার আছে। এবং সেই নির্দিষ্ট ক্যাটাগড়িটি হলো "সর্দি-কাশি জাতিয় ও ঠান্ডাজনিত কারনে সৃষ্ট  রোগসমুহ", অর্থাৎ এই ধরনের যত রোগ আছে, এর সবগুলোর নিরাময়ই কালোজিরাতে
রয়েছে। [5][2]

হাদিসটিতে "كل" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, এরদ্বারা "প্রত্যেক, সমস্ত, সকল" বুঝানো হয়। কিন্ত এরদ্বারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে "বহু,অনেক" এইসব অর্থও বুঝানো হয়ে থাকে। [6][7][8]

এবং এই হাদিসটিতে كل দ্বারা "বহু, অনেক" বুঝানো হয়েছে, "প্রত্যেক বা সব " নয়। كل শব্দটির এরুপ ব্যবহারের উদাহরন কোর'আনেও পাওয়া যায় [9]

এবং "সা'ম (মৃত্যু) ব্যাতিত " দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : "যেই রোগটির চিকিৎসার জন্য কালো জিরাকে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেই রোগটি যদি এমন কোনো রোগ হয় যাদ্বারা আল্লাহ রোগিটির মৃত্যু হয়া নির্ধারন করে রেখেছেন,  তথা রোগটি দ্বারা মৃত্যুবরন করা রোগিটির তাকদিরে লিখিত ও নির্ধারিত আছে - সেক্ষেত্রে এই কালোজিরা উক্ত রোগির উপকারে আসবেনা। " [10][11]

প্রমানসমুহ :

[1]সহিহুল বুখারী (হা/5285),আল-মুসনাদুল জামে (হা/16941), আল-মুসনাদুল মুয়াল্লাল (38/566)

[2]ইবনুল যাওযি, কাশফুল মুশকিল (3/364)

[3]আস-সুয়ুতী,আত-তাওশিহ (8/3512-3513)

[4]ইবন বাত্তাল, শারহু সহিহিল বুখারি (9/397)

[5]ইবনুল মুলাক্কিন,আত-তাওদ্বিহ (27/361)

[6]আল-খাত্তাবী,আ'লামুল হাদিস (3/2112)

[6]আবু-মুসা, আল-মাজমুয়ুল মুগিস (3/70)

[7]আস-সাগানী,আত-তাকমিলাহ ওয়ায যাইল (5/505)

[8]নাশওয়ান আল-হুমাইরী,শামসুল উলুম (1/567)

[9]আন-নামল (আ/23),আল-আহকাফ (আ/25)

[10]আস-সিন্দী,হাশিয়াহ আলা সুনান ইবন মাজাহ (2/342)

[11]আল-মিনাওই,ফাইযুল কাদির (4/352)