Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

রাসুল (ﷺ) কি একজন ধর্ষককে বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিয়েছিলেন?

অভিযোগ :

নবি মুহাম্মদ একবার একজন ধর্ষককে বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৩৩/ শাস্তির বিধান (كتاب الحدود) - 33/ Prescribed Punishments (Kitab Al-Hudud)

 পরিচ্ছেদঃ ৭. হাকীমের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করা সম্পর্কে।

৪৩২৮. মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) .... আলকামা তাঁর পিতা ওয়াযেল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নরী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় জনৈক মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে পথিমধ্যে তার সাথে একজন পুরুষের দেখা হলে, সে ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, তার পাশ দিয়া গমনকালে জনৈক ব্যক্তি এর কারন জানতে চায়। তখন সে মহিলা বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ অপকর্ম করেছে। পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে মহিলা তাদের বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ কাজ করেছে। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনে, যার সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে, সে-ই এরূপ করেছে। এরপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত মহিলার কাছে উপস্থিত করলে, সেও বলেঃ হ্যাঁ। এই ব্যক্তিই এ অপকর্ম করেছে।তখন তাঁরা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সে ব্যক্তির উপর শরীআতের নির্দেশ জারী করার মনস্থ করেন, তখন মহিলার সাথে অপকর্মকারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায় এবং বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি-ই অপকর্ম করেছি। তখন নরী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে বলেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমার অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন। এরপর তিনি সে লোকটির সাথে উত্তম ব্যবহার করেন। তখন সাহাবীগন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ব্যভিচারী লোকটিকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করলে, তিনি বলেনঃ লোকটি এমন তাওবা করেছে যে, সমস্ত মদীনাবাসী এরূপ তাওবা করলে, তা কবূল হতো।

 লিংক : http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=36434

 জবাব :

অভিযোগকারিদের উল্লেখিত হাদিসটি "যইফ"। আর যইফ হাদিস দলিল হিসেবে প্রয়োগ করার যোগ্য নয়, গ্রহনযোগ্য নয়।

হাদিসটি আহমাদ, আবু-দাউদ, আত-তিরমিযী, আন-নাসাঈ, ইবনুল জারুদ, আত-তাবারানী ও আল-বায়হাকী বর্ননা করেছেন [1][2]

হাদিসটির সবগুলো সনদ "سماك بن حرب" (সিমাক বিন হারব) পর্যন্ত এসে মিলিত হয়েছে।[2][1] "সিমাক বিন হারব" হলেন এমন একজন রাবি যিনি কোনো উস্তাদ হতে একা কোনো হাদিস বর্ননা করলে সেটি "যইফ " হয়, এছারা অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি প্রাথমিকভাবে নির্ভরযোগ্যই।

হাফেয ইবনুল জা'আদ বলেছেন :
  حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ زُهَيْرٍ قَالَ: سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِينٍ، سُئِلَ عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ: مَا الَّذِي عَابَهُ؟ قَالَ: أَسْنَدَ أَحَادِيثَ لَمْ يُسْنِدْهَا غَيْرُهُ قَالَ يَحْيَى: وَسِمَاكٌ ثِقَةٌ[3]

আমাকে আহমাদ বিন যুহাইর বর্ননা করে বলেছেন যে আমি শুনেছি যে ইয়াহইয়া বিন মুয়াইন কে  সিমাক বিন হারব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যে "কোন বিষয়টি তাকে (সিমাককে) ক্রুটিপুর্ন করলো?" তিনি (ইয়াহইয়া) উত্তরে বলেন : সে বহু হাদিস সনদ ধরে বর্ননা করেছে যা সে ব্যাতিত আর কেওই সনদ ধরে বর্ননা করেনি। এবং ইয়াহইয়া আরো বলেন : সিমাক (প্রাথমিকভাবে) নির্ভরযোগ্য।

হাফেয জামালুদ্দিন আল-মিযযী বলেছেন :

قَال أبو بَكْرِ بْنُ أَبي خيثمة : سمعت يحيى بْن مَعِين سئل عَنْ سماك بْن حرب ما الذي عابه؟ قال: اسند أحاديث لم يسندها غيره. قال يحيى: وسماك ثقة. [4]

আবু-বকর বিন আবি-খাইসামাহ বলেছেন যে আমি শুনেছি যে ইয়াহইয়া বিন মুয়াইন কে  সিমাক বিন হারব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যে "কোন বিষয়টি তাকে (সিমাককে) ক্রুটিপুর্ন করলো?" তিনি (ইয়াহইয়া) উত্তরে বলেন : সে বহু হাদিস সনদ ধরে বর্ননা করেছে যা সে ব্যাতিত আর কেওই সনদ ধরে বর্ননা করেনি। এবং ইয়াহইয়া আরো বলেন : সিমাক (প্রাথমিকভাবে) নির্ভরযোগ্য।

এই হাদিসের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র  "সিমাক বিন হারব" ই হাদিসটি আলকামাহ থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি ব্যাতিত আর কেওই হাদিসটি আলকামাহ থেকে বর্ননা করেন নি, যার অর্থ সিমাক উক্ত হাদিসটি একা বর্ননা করেছেন। এবং সিমাকের একা বর্নিত বর্ননাগুলো ক্রুটিপুর্ন অর্থাৎ যইফ। অপরদিকে এই হাদিসটির মতনেও "ইযতিরাব" আছে।

মুহাক্কিক শুয়াইব আল-আরনাওওত এই হাদিসের ব্যাপারে বলেছেন :

رجاله ثقات لكن سماك بن حرب تفرد به، ولا يُحتمل تفرّد مثله، ثم إنه قد اضطرب في متنه [5]

"এর বর্ননাকারিদের সবাই নির্ভরযোগ্য, কিন্ত সিমাক বিন হারব এটা একা বর্ননা করেছেন।  তার (সিমাকের) এই ধরনের একা বর্ননা করার বিষয়টি গ্রহনযোগ্য নয়। তাছারা অবশ্যই এই হাদিসের মতনে ইযতিরাব ঘটেছে "।

আবার শুয়াইব আল-আরনাওওত,মুহাম্মাদ নুয়াইম আল-ইরকাসুসি, ইব্রাহিম আয-যাইবাক,মুহাম্মাদ বারাকাত ; এই চারজন মুহাক্কিক সম্মিলিতভাবে উক্ত হাদিস সম্পর্কে (মুসনাদ আহমদের টিকাতে) বলেছেন :

إسناده ضعيف، سِماك -وهو ابن حَرْب- تَفَرَّد به، وهو ممَّن لا يُحتمل تفرُّدُه، ثم أنه قد اضطرَب في متنه [6]

"হাদিসটির সনদ যইফ। সিমাক, তিনি হলেন ইবন হারব, এটা তিনি একা বর্ননা করেছেন। এবং তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের একা বর্নিত বর্ননা গ্রহনযোগ্য নয়। তাছারা অবশ্যই এর মতনে ইযতিরাব ঘটেছে "।

 

প্রমানসমুহ :

[1]মুসনাদ আহমাদ (হা/27782),সুনান আবি-দাউদ (হা/4379),সুনানুত তিরমিযি (হা/1454), সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা (হা/7270), আল-মুন্তাকা(হা/823), আল-কাবির
(22/18-19),আস-সুনানুল কুবরা (8/284)

[2]আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল (25/462-464), আল-মুসনাদুল জামি (হা/12091)
,তুহফাতুল আশরাফ (হা/11770), আতরাফুল মুসনাদ (হা/7529)

[3]মুসনাদ ইবনিল জা'আদ (হা/566)

[4]তাহযিবুল কামাল (12/119)

[5]তাহকিক সুনান আবি-দাউদ (6/432,টিকা-1)

[6]তাহকিক মুসনাদ আহমাদ (45/214,টিকা-3)