Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

প্রাণসৃষ্টিঃ জলতাপীয় ফাটল

অজীবজনি বিশেষজ্ঞদের কারো কারও মতে, সূর্যের আলো ও আগ্নেয়গিরির প্রভাবে প্রাণের জাগরণ হয়েছে। গভীর সমুদ্রের ‘হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট’-গুলোতে; যেখান থেকে ভূগর্ভস্থ গরম পানি বেরিয়ে আসে, সেখানে পর্যাপ্ত হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, লোহা, নিকেল এবং সালফারের উপস্থিতিতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। বলা হয় যে, এই তাপের উপস্থিতিতে পলিমার সংশ্লেষ হবে। আর পানির উপস্থিতি থাকায়, তাপের প্রভাবে পলিমার ভেঙে যাবে না। এই ভেন্টগুলোতে ATP উৎপাদনের মত, কিছু প্রাকৃতিক প্রোটন গ্রেডিয়েন্ট সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। গবেষণাগারে এই মডেলের অনুরূপ পদ্ধতিতে অ্যামিনো এসিড ও পেপটাইডের মত ছোট ছোট জৈব অনু প্রস্তুত করা গেছে।[i]
প্রাণতত্ত্ববিদদের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে যে, কীভাবে অ্যামিনো অ্যাসিড বা অন্যান্য মূল-জৈব অণুগুলি দীর্ঘ শিকলের (পলিমার) গঠন করে প্রোটিন (বা RNA) তৈরি করে। কারন পুরো বিক্রিয়া যেহেতু পানির ভিতরে হচ্ছে, আমাদের দেখতে হবে যে, পানির ভেতরে অ্যামিনো এসিড কোন শিকলে যুক্ত হতে পারে কিনা। ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সের মতে,
“Two amino acids do not spontaneously join in water. Rather, the opposite reaction is thermodynamically favored.”[ii]
“দুটি অ্যামিনো অ্যাসিড স্বতঃস্ফূর্তভাবে জলীয় পরিবেশে পরস্পর যুক্ত হয় না। বরং, বিপরীত বিক্রিয়া তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী অনুকূলে থাকে”।
অন্যকথায়, পানি প্রোটিন অনুকে ভেঙে ফেলে, তাই উক্ত পরিবেশে প্রোটিন তৈরি হতে পারে না। আরও আগে, স্ট্যানলি মিলার দেখিয়েছিলেন যে, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যাডেনিন ও গুয়ানিনের অর্ধায়ু প্রায় এক বছর, ইউরাসিলের ১২ বছর, এবং সাইটোসিনের ১৯ দিন।[iii] সাধারণত ভেন্ট [ফাটলের] তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি[1] সেলসিয়াস হতে পারে। মিলারের গবেষণা অনুযায়ী, উক্ত তাপমাত্রায় অ্যামিনো এসিডের অর্ধায়ু কয়েক মিনিট, ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সুগারের অর্ধায়ু সেকেন্ডের এককে নেমে আসে। আর ডিএনএ/আরএনএ তৈরির জন্য সুগারের বন্ধন হওয়া জরুরি। পলিপেপটাইডের অর্ধায়ু কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে উঠা-নামা করে। আরএনএ ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জলবিশ্লেষিত হয়ে যায়, এবং ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মাত্র কিছু সেকেন্ড টিকে থাকে। মিলারের মতে, একই ভেন্ট নিউক্লিওটাইড ধ্বংসের জন্য দায়ী।[iv] অনেক জটিল অ্যামিনো এসিড যেমন- সেরিন ও থ্রিওনিন তাপ প্রয়োগে নষ্ট হয়ে যায়।[v]
আরেকটি সমস্যা হল, অ্যামোনিয়া তৈরি, কারন প্রাণসৃষ্টির জন্য অ্যামোনিয়া খুব জরুরি। আর আদিম পৃথিবীতে অ্যামোনিয়া যথেষ্ট পরিমাণে ছিল না। তবে রসায়নের মূলনীতি অনুযায়ী, অ্যামোনিয়া তৈরির জন্য নাইট্রোজেনকে হাইড্রোজেন সালফাইড বা আয়রন[২] সালফাইডের বিক্রিয়াপথে পরিচালিত করতে হবে। গবেষণাগারের তথ্যানুযায়ী, হাইড্রোজেন সালফাইড পথ খুব সামান্য পরিমাণ অ্যামোনিয়া প্রস্তুত করে, যা প্রাণ সঞ্চারের জন্য যথেষ্ট নয়। আর আয়রন[২] সালফাইড বিক্রিয়াপথ খুব ধীর গতির।[vi]
মিলার দেখিয়েছেন যে, আজকের জলতাপীয় ফাটলগুলোর ঘনত্ব এমন যে, মহাসাগরগুলোর সমস্ত পানি ১০ মিলিয়ন বছর লম্বা চক্রের মধ্যে পরিচলন পদ্ধতিতে চলাচল করে। আজ থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, জলতাপীয় ফাটলের ঘনত্ব আরও অনেক বেশি ছিল। অন্যকথায়, পানির চলাচলের সময় অনেক কম ছিল। যদি কোনভাবে প্রাণ প্রয়োজনীয় অনু তৈরি হয়েও থাকে, তা মহাসাগরের ফাটল পেরিয়ে বিক্রিয়াস্থল থেকে দূর সাগরে হারিয়ে যেত।
কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া উন্নত সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ‘ডিএনএ’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতিটি কাজ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে খুব জটিল যন্ত্রাংশে সম্পাদিত হয়। তাহলে সমুদ্রের অনিয়ন্ত্রিত বিক্রিয়াকে কিভাবে ATP তৈরির সাথে তুলনা করা যায়?
প্রানীর জন্য ২০ প্রকারের অ্যামিনো এসিড দরকার। অন্যসকল অ্যামিনো এসিড প্রাণের কোন কাজে আসে না। আমাদের ডিএনএ-তে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য কোড করা আছে। হাইড্রো-থার্মাল ভেন্টে ডিএনএ/আরএনএ ছিল না। আর প্রাকৃতিকভাবে ডিএনএ বা আরএনএ অদ্যাবধি উৎপন্ন হতে দেখা যায় নি, কিংবা তা উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘তথ্য’ প্রকৃতি সরবরাহ করতে পারে না। প্রফেসর পল ডেভিস বলেন,
“ … . where did the very peculiar form of information needed to get the first living cell up and running come from? Nobody knows … .”[vii]
“...প্রথম কোষকে জীবন্ত করে তুলতে অদ্ভুত গঠনের তথ্য কোথা থেকে আসলো? কেউ জানে না...”
“No known law of nature could achieve this.”[viii]
“কোন প্রাকৃতিক আইন [ডিএনএ তৈরির] তথ্য সরবরাহ করতে পারে না”।
---------------------------------------------------------------------------------
[1] সমুদ্রের তলদেশে উচ্চচাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
[i] J. P. Amend and E. L. Shock, “Energetics of Amino Acid Synthesis in Hydrothermal Ecosystems,” Science 281 (1998): 1659–62; Sarah Simpson, “Life’s First Scalding Steps,” Science News 155 (1999): 24–26; Ei-ichi Imai et al., “Elongation of Oligopeptides in a Simulated Submarine Hydrothermal System,” Science 283 (1999): 831–33; George Cody et al., “Primordial Carbonylated Iron-Sulfur Compounds and The Synthesis of Pyruvate,” Science 289 (2000): 1337–40.
[ii] Committee on the Limits of Organic Life in Planetary Systems, Committee on the Origins and Evolution of Life, National Research Council, The Limits of Organic Life in Planetary Systems, p. 60 (Washington D.C.: National Academy Press, 2007).
[iii] Levy, M and Miller, S.L., The stability of the RNA bases: Implications for the origin of life, Proc. Natl. Acad. Sci. USA 95(14):7933–38, 1998.
[iv] Stanley L. Miller and Jeffrey L. Bada, “Submarine Hot Springs and the Origin of Life,” Nature 334 (1988): 609–11; Matthew Levy and Stanley L. Miller, “The Stability of the RNA Bases: Implications for the Origin of Life,” Proceedings of the National Academy of Sciences, USA 95 (1998): 7933–38.
[v] Gish, D.T., Origin of life: The Fox thermal model of the origin of life, Impact 33, Institute for Creation Research, March 1976.
[vi] Martin A. A. Schoonen and Yong Xu, “Nitrogen Reduction under Hydrothermal Vent Conditions: Implications for the Prebiotic Synthesis of C-H-O-N Compounds,” Astrobiology 1 (2001): 133–42.
[vii] Davies, P., Life Force, New Scientist, 1:27–30, 18 September 1999.
[viii] Davies, P., The Fifth Miracle, Penguin Books, London, UK, p. 100, 1999.