Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

প্রাণবৃক্ষঃ একটি মূল্যায়ন

[এই অংশটি জোনাথান ওয়েলস রচিত ZOMBIE SCIENCE: More Icons Of Evolution বই অবলম্বনে অনূদিত]
শত শত বছর আগ থেকেই মানুষ জীবজগতের শ্রেণিবিভাগ করা শুরু করেছিল। তখন মানুষ মনে করত যে, এই শ্রেণিবিভাগ সৃষ্টির স্বর্গীয় পরিকল্পণার অংশ।
‘Linnaeus’ original classification of animals does not distinguish between analogous and homologous structures. Creatures were often put in the same groups by resemblances to an imagined "divine plan" or "design". Since Darwin … species are classified to reflect the relative closeness or distance of their common ancestry.’
“লিনিয়াসের তৈরি জীবজগতের মূল শ্রেণীবিন্যাসে এনালোগাস [তুলনীয়] ও হোমোলোগাস অঙ্গের পার্থক্য করা হয় নি। কল্পিত "ঐশ্বরিক পরিকল্পনা" বা "নকশা"-এর সাথে অনুরূপতার ভিত্তিতে জীবজগতকে প্রায়-ই একই দলভুক্ত করা হত। ডারউইনের পর থেকে… প্রজাতিগুলি তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের সাথে আপেক্ষিক ঘনিষ্ঠতা বা দূরত্ব অনুধাবন করার জন্য শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।'
রিচার্ড ওয়েনের মতে, হোমোলজির উদ্দেশ্য হল সাধারণ নকশা রচনা করা [কমন প্ল্যান]; কিন্তু ডারউইন দাবি করল, এটা সাধারণ পূর্বপুরুষ থাকার প্রমাণ। তাই ডারউইন ‘প্রাণের মহান বৃক্ষের’ ধারণা দিলেন, যে বৃক্ষের কান্ড হল সাধারণ পূর্বপুরুষ, শাখা হল মধ্যবর্তী প্রজাতি, এবং আধুনিক জীব হল সবুজ বর্ধিষ্ণু পাতা।

ফসিল

ডারউইন লিখেছেঃ ‘the number of intermediate and transitional links, between all living and extinct species, must have been inconceivably great.’
“সমস্ত জীবিত এবং বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে অন্তর্বর্তী ও পরিবর্তনকালীন সংযোগের সংখ্যা নিশ্চয়ই কল্পনাতীতভাবে অসংখ্য হবে”।
কিন্তু এই অসংখ্য অন্তর্বর্তী ও পরিবর্তনকালীন সংযোগের খোঁজ অদ্যাবধি পাওয়া যায় নি। ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ, যা ভূতাত্ত্বিক সময়কাল ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে ঘটেছিল, ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে একইসাথে অনেকগুলো পর্বের জীবের আবির্ভাব ঘটে, যাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের কোন প্রকারের জীবাশ্মভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
ডারউইন তার তত্ত্বের এই সমস্যা জানত, তাই সে ভবিষ্যতে নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কার হবে এই আশা করেছিলেন। কিন্তু ১৬০ বছর হয়ে গেল, আজও জীবাশ্মের শূণ্যস্থান পূরণ হল না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। ১৯৯১ সালে জীবাশ্মবিদদের একটি দল মন্তব্য করে, ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ কখনও এতটা আকস্মিক ও তীব্র হয়ে যাবে বলে কল্পণা করা হয় নি। তা সত্ত্বেও, ২০০৪ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে On the Origin of Phyla শিরোনামে বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের লেখক ভ্যালেন্টাইন দাবি করেন যে, একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে সকল প্রাণীর আগমন এবং তাদের একটি প্রাণবৃক্ষে স্থাপনের ব্যাপারে ডারউইন সঠিক ছিলেন। কিন্তু একটু পিছনে-ই তিনি লিখেছেন, “organisms with the characteristic body plans that we identify as living phyla appear abruptly in the fossil record, many within a narrow window of geologic time.… It is consistent with the fossil record that all of the characteristic animal body plans had evolved by the close of this period, but none of them can be traced through fossil intermediates to an ancestral group.”
“দৈহিক গঠন সম্বলিত জীব, যাদের জীবিত পর্ব বলা হয়, তারা জীবাশ্ম নথিতে আকস্মিকভাবে আবির্ভূত হয়েছে, অনেকে-ই খুবই স্বল্প ভূতাত্ত্বিক সময় ব্যবধানে এসেছে… জীবাশ্ম নথিতে খুবই স্বল্প ভূতাত্ত্বিক সময় ব্যবধানে দৈহিক গঠন সম্বলিত জীবের আগমণ সামঞ্জস্যপূর্ণ, কিন্তু তাদের কারও মধ্যবর্তী অবস্থার জীবাশ্ম দ্বারা পূর্বপুরুষের খোঁজ পাওয়া যায় নি”।
২০১৩ সালে ভ্যালেন্টাইন ও এরউইন বিবর্তনবাদী অনুমান দিয়ে কিছু গল্প ফেঁদে আরেকটি বই প্রকাশ করলেন। বইটি-তে আরেকটি পারিভাষিক শব্দ আবিষ্কার করলেন, শব্দটি হল ‘ভুতুড়ে বংশ’ [Ghost lineage]। গোস্ট লিনিয়েজ হল অনুমিত সংযোগ যার কোন জীবাশ্ম নথি নেই, কিন্তু সাধারণ পূর্বপুরুষ আগে থেকে-ই অনুমান করে নিলে এসব সংযোগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। মানে, আপনি প্রমাণ করতে চাইলেন যে, সকল জীব একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। কেউ জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই, আপনার ‘অনুমান’ সঠিক, এটা কিভাবে প্রমাণ করবেন’? আপনি বললেন, ‘জীবাশ্মে নথিতে শাখা-প্রশাখার মত বংশধারা পাবেন’। ১৬০ বছর পরে কেউ বলল, ‘ভাই, আমরা জীবাশ্ম খুঁজে খুঁজে আমাদের বংশধারা ধরে ধরে অতীতে গিয়ে প্রত্যেকবার বংশের রশি ছেঁড়া পেয়েছি’। আপনি বললেন, ‘কোন সমস্যা নেই। সেখানে রশি ছেঁড়া নয়, বরং সংযুক্ত বলে ‘অনুমান’ করে নাও’। এটা কতটা হাস্যকর কেউ ভেবেছেন? আপনি আপনার হাইপোথিসিস প্রমাণ করার জন্য দ্বিতীয় আরেকটি হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়ে দিলেন? আর দাবি করলেন যে, আপনার প্রথম হাইপোথিসিস সত্য? একটি অনুমান কি অপর আরেকটি অনুমানকে সত্যায়িত করতে পারে? যাই হোক, ভ্যালেন্টাইন ও এরউইন রসিকতা করে তাদের হাইপোথিসিসকে ‘বিবর্তনীয় প্রেত গবেষকদের বৈঠকে চর্চা’ বা exercises in evolutionary séances বলে উল্লেখ করেছেন।
মূলত, ভিন্ন ভিন্ন দৈহিক কাঠামোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন, আর তথ্য শুধু বুদ্ধিমত্তা থেকে আসে। তাই ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ নিপুণ নকশার প্রমাণ.
Punctuated Equilibria [যতিযুক্ত ভারসম্য]
জীবাশ্মের নথি জুড়ে এরকম ছোট ছোট ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ দেখা যায়। অধিকাংশ প্রজাতি জীবাশ্ম নথিতে আকস্মিকভাবে আবির্ভূত হয় এবং কিছু কাল অপরিবর্তিত [একে stasis বা নিষ্ক্রিয়কাল বলে] থেকে উধাও হয়ে যায়। জীবাশ্ম নথি এধরনের উদাহরণে পূর্ণ। ১৯৭২ সালে নিলস এল্ড্রেজ ও স্টিফেন জে গুল্ড এই প্যাটার্নকে punctuated equilibria বা যতিযুক্ত ভারসম্য নাম দেন। আরেকটি পারিভাষিক শব্দ, যা ডারউইনের জাহাজ ডুবি থামাতে আবিষ্কার করা হয়েছে।
এল্ড্রেজ ও গুল্ড দাবি করেন যে, প্রজাতির নিষ্ক্রিয়কালের জন্য অপরিবর্তিত পরিবেশ দায়ী। আর প্রজাতির আকস্মিক আবির্ভাবকে allopatric speciation বা এলোপ্যাট্রিক প্রজাত্যায়ন [নতুন প্রজাতির আগমনকে প্রজাত্যায়ন বলে]। এলোপ্যাট্রিক প্রজাত্যায়ন অনুযায়ী, কোন প্রজাতির কিছু সদস্য মূল দল থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে চলে আসলে এই প্রজাত্যায়ন হয়।
বলাবাহুল্য, প্রমাণের ঘাটতি ধামাচাপা দিতে এই প্রচেষ্টা। এটা ডারউইনের মতে, 'বিজ্ঞান বিরোধী, আর সৃষ্টির সমর্থনে চলে যায়'।
তাছাড়া অঙ্গসংস্থানসংক্রান্ত অবয়বে জিনগত মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য অনেক সময় লাগে। অন্যান্য বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা যতিযুক্ত ভারসম্যকে অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। দুদিন পরপর-ই পত্রিকায় শিরোনাম হয় মধ্যবর্তী জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। আর তার দুদিন পরে যখন দেখা যায় যে, এরা আসলে মধ্যবর্তী প্রজাতি না, তখন কিন্তু পত্রিকার শিরোনাম পাওয়া যায় না।