Are you sure?

বিবিধ »  বিবিধ

দাদার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনির অধিকার নেই কেন?

 

সম্পত্তি লাভের বৈধ উপায় ৩টি-

1.    ক্রয়-বিক্রয়

2.    ওসিয়ত

3.    ওয়ারিশ

ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলে- তার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে, যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন, এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

ইসলামি আইন অনুযায়ী, এতিম তার দাদার সম্পত্তির মালিকানা পায় না, যদি না- তার দাদা ওসিয়ত করে যায়; চাচা/ফুফু তাদের অধিকৃত সম্পত্তি থেকে এতিমকে কিছু দেয় অথবা এতিমের মৃত পিতা এতিমের দাদার একমাত্র সন্তান হন।

শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরীন [রাহঃ] বলেন,

“যদিপিতা তার নিজের পিতার আগে মারা যান, তবে এতিম তার পিতামহের কাছ থেকে উত্তরাধিকারী হবে না, যদি তার নিজের একটি পুত্র বা পুত্র থাকে, কারণ [ওয়ারিশের সংজ্ঞানুযায়ী] নিজের পুত্র, ব্যক্তির পুত্রের পুত্রের চেয়ে নিকটবর্তী আত্মীয়”।

মাজাল্লাত আল-হারাস আল-ওয়াতানি, সংখ্যা নং। 264, তারিখ 1/6/2004

অনেকে এখানে আবেগের বশে বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন। আইন আবেগ দিয়ে কথা বলে না। আইন আইনের ভাষায় কথা বলে।

মৃত পিতার পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করে আপনার দাদা থেকে সম্পত্তি বুঝে নেয়া সম্ভব না। মৃত্যুর পরে কেউ স্বাক্ষর করলে, তা জাল স্বাক্ষর ছাড়া কিছু হতে পারে না। মৃত্যুর পর যদি কেউ মালিকানা লাভের হক্বদার হয়, তবে মৃত ব্যক্তির উপরে যাকাত-ও ফরজ হবার কথা কিংবা সরকারের উচিত লাশের উপরেও ট্যাক্স ও আয়কর আরোপ করা।

মনে রাখতে হবে, আইন অন্ধ। আইন কতটা অন্ধ তা দুটি গল্প বললে বুঝতে পারবেন-

1.    মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকে শাইলক যখন নায়কের মাংস কেটে নিতে উদ্যত হয়, তখন নায়িকা পর্শিয়া এই বলে আপত্তি করে যে, উইল অনুযায়ী মাংস কাটা যাবে, কিন্তু আমার মক্কেলের রক্ত যেন না গড়ায়। কারন উইলে রক্তপাতের কথা উল্লেখ নেই।

2.    একবার বিচারক আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলানোর আদেশ করেন। যথারীতি, তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। প্রাণ বেরিয়ে যাবার আগ মুহূর্তে উকিল বললেন যে, আমার মক্কেলকে মুক্তি দেয়া হোক।

বিচারকঃ কেন?

উকিলঃ তাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর কথা ছিল; কিন্তু আমৃত্যু ঝুলিয়ে রাখার কথা বলা হয় নি।

এরপর আইনের অনুচ্ছেদ সংশোধন করে, ‘আমৃত্যু ঝুলিয়ে রাখা’ অংশ যুক্ত করা হয়।

 

চাচা-ফুফুর কর্তব্য

অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। [কুরআন ৩০:৩৮]

জাবেদ মুহাম্মাদ লিখেছেন, "কারো যদি একজন ধনী ভাই ও দরিদ্র চাচা থাকে তাহলে সে ভাইয়ের সাথে সাধারণ আলোচনা ও কথাবার্তাই যথেষ্ট। আর সামর্থ্য থাকায় চাচাকে অর্থনৈতিক সাহায্য না দিয়ে শুধু কথা বললে আত্মীয়তার হক আদায় হবে না। আবার যদি উভয়ে দরিদ্র হয় তাহলে দরিদ্রাবস্থায় একে অপরের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করবে। অক্ষমতার কারণে আর্থিক সাহায্য দেয়া জরুরি নয়"[আল্লাহর হক বান্দার হক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পৃ ১০৭]

চাচা-চাচীর কাছে তাদের সন্তানের মতই কল্যাণ, সঠিক দিক-নির্দেশনা, ছোট হিসাবে ভালবাসা, প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য ইত্যাদি প্রত্যাশা করা ভাতিজা-ভাতিজী হিসেবে তাদের হক।

অন্যদিকে আপন ভাইয়ের মৃত্যতে তার নাবালক ও অবুঝ সন্তানরা পিতা না থাকার কারণে ইয়াতিম, আত্মীয় হিসাবে নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী হিসাবে নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী । সুতরাং আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ও আল-হাদীসে আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াতীম, নিকট আত্মীয় ও নিকটতম প্রতিবেশীদের যে সমস্ত হকের কথা উল্লেখ করেছেন তা সবই এখানে প্রযোজ্য । এর ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই এ সমস্ত চাচা-চাচীকে আল্লাহর আদালতের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে । ফলে চাচা-চাচী, ভাতিজা-ভাতিজীকে সব সময় তাদের পিতার স্ত্রেহে আদর করে জীবনে সফলতার দিক-নির্দেশনা প্রদান, তাদের আদর্শ শিক্ষা নিশ্চিত করা, আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করা, তারা বড় হলে শারীআহ মুতাবিক বিয়ের ব্যবস্থা করা, ভাতিজী হলে পর্দার ব্যবস্থা করা, তাদের সাথে সুন্দর-সুন্দর কথা বলে মনকে হাসিখুশি রাখা, অসুস্থ হলে সেবা ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করা (আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশে অধিকাংশ মুসলিম পরিবারেই এমন অবস্থা বর্তমানে বিরাজমান আছে) ভাতিজা-ভাতিজী হিসেবে তাদের হক।

মহানবী (ছাঃ) বলেছেন,

হে আল্লাহ! আমি লোকদেরকে দুই শ্রেণীর দুর্বল মানুষের অধিকার সন্বন্ধে পাপাচারিতার ভীতিপ্রদর্শন করছি; এতীম ও নারী।” আহমাদ ২/৪৩৯ নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৩৬৭৮, হাকেম, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০১৫নং)

এতিমের মাল ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাতে অবহেলা করা যাবে না। বরং আপ্রাণ চেষ্টা করতে বে, যাতে ক্ষতির হাত হতে তা রক্ষা করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা চোর-ছ্যাচড়ের হাত হতে নিরাপদ রাখা যায়। যেমন আল্লাহর নবী খিজির [আঃ] করেছিলেন।

আল্লাহ বলেন, (মুসা ও খিজির) উভয়ে চলতে লাগল; চলতে চলতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌছে খাদ্য চাইল; কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর সেখানে তারা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল এবং সে ওটাকে সোজা খাড়া করে দিল। মুসা বলল, “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।” (কাহফ ৭৭)

এই পর্যায়ে কেন ইয়াতীমের ব্যাপারে আল্লাহ স্বতন্ত্র আইন দিলেন না, তা নিয়ে কিছু মতামত পেশ করার চেষ্টা করছি- প্রথমত, আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি, ইয়াতীমের ব্যাপারে স্বতন্ত্র আইন না দেয়ার পেছনে কিছু হিকমাহ অবশ্যই আছে। তবে আল্লাহর মনের কথা আমাদের কারও জানা নেই।

এখানে মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, এতিমের দাদা ইচ্ছা করলেই ওসিয়ত করে যেতে পারতেন; তিনি তা করেন নি সম্ভাব্য দুটি কারণে- জাহেল কিংবা মৃত্যুকে ভুলে থাকা। এক আনসার এসে রাসূলুল্লাহ [সাঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন মুমিন সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি [সাঃ] জবাব দিলেন, মৃত্যুকে অধিক স্মরণকারী। [সিলসিলাহ সহীহাহ ১৩৮৪নং]

আবার এতিমের চাচা-ফুফু ইচ্ছা করলেই ওসিয়ত করতে পারত। তাই স্বতন্ত্র আইন না দিয়ে আল্লাহ তা'আলা খুব সম্ভবত এই দুই প্রজন্মকে পরীক্ষা করলেন। কারণ কাউকে সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে অভাব দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘আমি তোমাদিগকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব।’ (সুরা:-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

কিন্তু সম্পদের লোভ কিংবা নির্দয় হবার কারণে চাচা-ফুফু ওসিয়ত করেন নি। মহানবী [সাঃ] বলেন যে, ক্ষুধার্ত নেকড়ে ছাগলের পালের যতটা ক্ষতি করতে পারে, লোভ তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। [সহীহুল জামে' ৫৬২০নং]

তিনি [সাঃ] আরও বলেন যে, দুর্ভাগা ছাড়া অন্য কারও অন্তর থেকে দয়া ছিনিয়ে নেয়া হয় না। [সহীহুল জামে' ৭৪৬৭নং]

একজনের পাপের ফল আরেকজন ভোগ না করলেও দুনিয়াতে আমাদের ভাল-মন্দ প্রত্যেক কাজের ফল অন্য কেউ ভোগ করে। এটাই সৃষ্টির নিয়ম। ওসিয়ত না করাটা খারাপ কাজ না হলেও এর ফলাফল এতিম ভোগ করে। আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেন তিনি আমাদের একজনের দ্বারা অপরকে পরীক্ষা করতে পারেন। আল্লাহ অধিক জানেন।

এতিমকে সাহায্যের জন্য উৎসাহ

এবং অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, (এতীম-মিসকীন) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে...এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং ধর্মভীরু। [বাকারাহ ১৭৭]

লোকে তোমাকে পিতৃহীনদের সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করে; বল, তাদের উপকারের চেষ্টা করাই উত্তম। আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলে-মিশে থাক, তাহলে তারা তোমাদের ভাই। [বাকারাহ ২২০]

পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীনদের সাথে ভাল ব্যবহার কর।’ (৩৬ নিসা)

ভর্তসনা

বস্তুতঃ তোমরা পিতৃহীনকে সমাদর কর না। [ফাজর ১৭]

তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্তেও অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে অন্নদান করে। [দাহর ৮]

সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীন (এতীম)কে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। [সূরা মা'উন ২]

ফযিলত

عَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ فَقَالَ امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيْمِ وَأطْعِمْ الْمِسْكِيْنَ. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে নিজের হৃদয়ের কাঠিন্য সম্পর্কে অভিযোগ করল। তিনি বললেন, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকীনকে খানা খাওয়াও (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৯১)

عَنْ سَهْلٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আর ইয়াতীম পালনকারী নিজের ইয়াতীম হোক অথবা অন্যের ইয়াতীম হোক- জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তরজনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৭৩৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)

আরও বিস্তারিতঃ দাদার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনির অধিকার