Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কি লিখতে পড়তে জানতেন? তিনি কি আসলেই কোরআন নকল করেছিলেন বাইবেল থেকে?

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার অসীম রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। সকল প্রশংসা এই বিশ্বজগতের সর্বোত্তম রব মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার জন্য, যিনি বিচার দিনের মালিক। অসংখ্য কোটি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক মহান আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর সাহাবাগণের প্রতি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর অনুসারী সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের প্রতি।

তো সম্প্রতি সহ পূর্ব থেকেই খ্রিস্টান মিশনারিদের দলগুলো আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সম্পর্কে জঘন্য মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন যে, "তিনি কোরআন নকল করে লিখেছেন বাইবেল থেকেই।" (নাউযুবিল্লাহ; আস্তাগফিরুল্লাহ) এই অভিযোগটা সাধারণত খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রায়ই করে থাকে।


তো আমরা এর যৌক্তিক জবাব দিব ইনশাআল্লাহু তাআলা। আসলেই খ্রিস্টান মিশনারিদের এই অভিযোগটা কতটুকু সত্য আসুন তা জানার চেষ্টা করি। প্রথমেই বলে রাখি, এটা ঐতিহাসিক ভাবেও স্বীকৃত যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ পড়ালেখা জানতেন না যা কিনা সীরাত গ্রন্থগুলো পড়লে জানা যায়। আসুন পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদিসে এই সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা জানা যাক।

* রাসূল ﷺ কী লিখতে ও পড়তে জানতেন?
সহীহ হাদিসের আলোকে প্রমাণ:
সহীহ বোখারির শুরুতেই ওহীর সূচনা অধ্যায়ের ৩ নং হাদিসে বলা হয়েছে:

i] উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ -এর নিকট সর্বপ্রথম যে ওয়াহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায় প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি হেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। আপন পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনি এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজাহ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবে হেরা গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, '’পাঠ করুন’'। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, ’’আমি বললাম, ’আমি পড়তে জানি না।

তিনি (ﷺ) বলেনঃ অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ’'পাঠ করুন'’। আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না। সে দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ ’পাঠ করুন’। আমি উত্তর দিলাম, ’আমি তো পড়তে জানি না।’ আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’’পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু’’- (সূরা আলাক্ব ৯৬/১-৩)।

এইখানে রাসূল ﷺ সুস্পষ্ট ভাবে বলছেন যে:فَقَالَ اقْرَأْ‏.‏ فَقُلْتُ مَا أَنَا بِقَارِئٍ‏.‏ فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ /He said, "Read." So I said, "I am not a reciter অর্থাৎ তিনি বললেন,"পড়ো", আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না।" যে লিখতে জানে, সেই তো পড়তে জানে; আবার যে পড়তেই জানে না, সে তো লিখতেও পারে না। 

নোট: উল্লেখ্য যে, এইখানে কোন একটা টেক্সট তাঁর সামনে আনা হয়েছে আর তাঁকে তা দেখে দেখে পড়তে বলা হয়েছে ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। বরং জিব্রাইল আঃ মুখে মুখে যা বলবেন, তাঁকেও (রাসূল ﷺ) কে তাঁর (জিব্রাইল আঃ) সাথে সাথে পড়তে বলা হয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন হলো, জিব্রাইল আঃ কেন বললেন, اقرا ইকরা (পড়ুন)... ? তিনি যেখানে লিখতে পড়তেই জানতেন না সেখানে কেন ৯৬ নং সূরা আলাকের প্রথম আয়াত নাযিল করে বলতে হল,"পড়ুন।" আসলে এই আয়াতটা দেখিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী শত্রুরা প্রমাণ করতে চায় যে, আসলেই নবী ﷺ লিখতে পড়তে জানতেন, আর এটার মাধ্যমে তাদের অপপ্রচারের কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। এটা আসলে তাদের বোঝার ক্ষেত্রে ত্রুটি। একটা যুক্তি দেখাই। মা তার ছোট্ট শিশুটাকে বলে,"বাবু! পড়ো, পড়ো? এখন এই ছোট্ট শিশু কি লিখতে পড়তে জানে নাকি? অবশ্যই জানে না। এরপরেও কেন মা তার ছোট্ট শিশুটাকে বলছে,"পড়ো? আসলে মা মুখে যা যা বলবে, ছোট্ট শিশুটাও তার মায়ের সাথে সাথে তা পড়ে নিবে অর্থাৎ যেটাকে বলে মুখে মুখে আওড়ানো বা পড়া। আর এইখানেও ঠিক অনুরূপ যে, জিব্রাইল আঃ যা যা বলবেন, নবী ﷺও তাঁর সাথে সাথে তা পাঠ করবেন। আর তাঁর কাছে টেক্সট আকারে ওহী আসত না মৌখিক ব্যতীত। এই জন্য কোরআনে বলা হয়েছে:

"তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহবা দ্রুততার সাথে সঞ্চালন করনা। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি উহা পাঠ করাই তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর।" (কোরআন ৭৫:১৬-১৮)

▪︎ যদি নবী ﷺ লিখতে পড়তে জানতেন এবং তাঁর কাছে টেক্সট আকারে ওহী আসত তাহলে জিহ্বা দ্রুত নাড়ানোর প্রশ্ন-ই আসে না এবং এই রকম আয়াতও আল্লাহ্ নাযিল করতেন না, কারণ যেখানে টেক্সট দেখে দেখেই পড়া সম্ভব হচ্ছে সেখানে কেন দ্রুততার সাথে জিহ্বা নাড়িয়ে ওহী পাঠ করবেন? কিন্তু সেটা যদি হয় মৌখিক ওহী অর্থাৎ মুখে মুখে পড়ে নেওয়া বা আয়ত্ত করা তাহলে সাধারণত আমি আপনি হলেও তা আয়ত্তে নেওয়ার জন্য দ্রুত জিহ্বার সঞ্চালন করতাম যা সাধারণ যুক্তিতেই বোঝা যায়। আর মানুষ হিসেবে নবী ﷺও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, টেক্সট আকারে ওহী নাযিল হতো না যার জন্য তাঁকে টেক্সট দেখে দেখে পড়তে হতো না বরং যেই ওহী আসত তা ছিল মৌখিক ওহী। কাজেই এইখানে "পড়ো" দ্বারা কখনোই এটা বোঝানো সম্ভব নয় যে, তিনি আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন। এটা ভুল।

ii] সহীহ বোখারির শর্তাবলি অধ্যায়ের "যুদ্ধের প্রতিপক্ষীয়দের সাথে জিহাদ ও সমঝোতার ব্যাপারে শর্তারোপ এবং লোকদের সঙ্গে কৃত মৌখিক শর্ত লিপিবদ্ধ করা" শিরোনামে উল্লেখিত ২৭৩১ নং হাদিসের মধ্যে রয়েছে:....{হাদিসটা বিশাল বড়। কাজেই এটা আপনারা সম্পূর্ণ পড়ে নিবেন, নিচে মূল লিঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মূল থিম হলো}

নবী ﷺ যখন ওমরা করার উদ্দেশ্যে সাহাবীগণের সাথে হুদাইবিয়াতে পৌঁছালেন তখন কাফের- মুশরিকরা তাঁর আগমনের খবর সম্পর্কে অবগত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। অথচ নবী ﷺ যুদ্ধ করার জন্য আসেননি। আর নবী ﷺ তাদের সঙ্গে একটি সন্ধি চুক্তি করতে চাইলেন যেখানে তাঁর দূত হয়ে বুদায়ল ইবনু ওয়ারকা খুযাঈ কুরাইশদের নিকট গেলেন এই প্রস্তাব নিয়ে। এবং কুরাইশদের পক্ষে থেকে উরওয়াহ ইবনু মাস‘ঊদ রহঃ (যিনি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন) রাসূল ﷺ এর নিকটে এলেন। তিনি এসেই রাসূল ﷺ এর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন....। এভাবেই এক পর্যায়ে সুহায়ল ইবনু আমর এসে বলল, আসুন আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র লিখি। অতঃপর নবী (ﷺ) একজন লেখককে ডাকলেন {অন্য হাদিসে বলা হয়েছে এই লেখক ছিলেন হযরত আলী রাঃ}। অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন, (লিখ) بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  এতে সুহায়ল বলল, আল্লাহর কসম! রাহমান কে-? আমরা তা জানি না, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন, লিখুন بِاسْمِكَ اَللَّهُمَّ  মুসলিমগণ বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ব্যতীত আর কিছু লিখব না। তখন নবী (ﷺ) বললেন, লিখ, بِاسْمِكَ اَللّٰهُمَّ অতঃপর বললেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (ﷺ)...........।

এইখানেও এটা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা গেল যে, যদি নবী ﷺ নিজেই লিখতে পড়তে জানতেন তাহলে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধির ক্ষেত্রে নিজে না লিখে অন্য একজন লেখককে ডাকতেন না এবং তাঁকে দিয়েও লেখাতেন না। সুতরাং এটা থেকেও প্রমাণ হয় যে, তিনি আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন না।

iii] সহীহ বোখারির "জিজিয়া কর ও সন্ধি স্থাপন" অধ্যায়ের ৩১৮৪ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে: বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী ﷺ যখন ‘উমরাহ করার ইচ্ছা করেন, তখন তিনি মক্কায় আগমনের অনুমতি চেয়ে মক্কায় কাফিরদের নিকট লোক পাঠান। তারা শর্ত দেয় যে, তিনি সেখানে তিন রাতের বেশি থাকবেন না এবং অস্ত্রকে কোষে আবদ্ধ না করে প্রবেশ করবেন না। আর মক্কাবাসীদের কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবে না। বারাআ (রাঃ) বলেন, এ সকল শর্ত ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) লেখা শুরু করলেন এবং সন্ধিপত্রে লিখলেন, ‘‘এটা সে সন্ধিপত্র যার উপর আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ফায়সালা করেছেন।’’ তখন কাফিররা বলল, ‘আমরা যদি এ কথা মেনে নিতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, তবে তো আমরা আপনাকে বাধাই দিতাম না এবং আপনার হাতে বায়‘আত করে নিতাম। কাজেই এভাবে লিখুন, এটি সেই সন্ধিপত্র যার উপর মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ফায়সালা করেছেন।’ তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ এবং আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসূল। বারাআ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ লিখতেন না। তাই তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ মুছে ফেল। ‘আলী (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা মুছব না। তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন, তবে আমাকে দেখিয়ে দাও। তখন ‘আলী (রাঃ) তাঁকে তা দেখিয়ে দিলেন এবং আল্লাহর নবী ﷺ তা স্বহস্তে মুছে ফেললেন/Allah's Messenger (ﷺ) used not to write; so he asked `Ali to erase the expression of Apostle of Allah. On that `Ali said, "By Allah I will never erase it." Allah's Apostle said (to `Ali), "Let me see the paper." When `Ali showed him the paper, the Prophet (ﷺ) erased the expression with his own hand.

অতঃপর যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং সে দিনগুলো অতীত হয়ে গেল, তখন তারা ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, তোমার সঙ্গীকে বল, যেন তিনি চলে যান। ‘আলী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল ﷺ-কে তা বললেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে। অতঃপর তিনি যাত্রা করলেন।

এই হাদিসেও সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে:وَكَانَ لَا يَكْتُبُ قَالَ فَقَالَ لِعَلِيٍّ امْحَ رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ عَلِيٌّ وَاللهِ لَا أَمْحَاهُ أَبَدًا قَالَ فَأَرِنِيْهِ قَالَ فَأَرَاهُ إِيَّاهُ فَمَحَاهُ
রাসূল ﷺ লিখতেন না (he would not write/তিনি লিখতেন না)। কারণ তিনি লিখতে পড়তেই জানতেন না। এই জন্য তিনি অন্য কাউকে দিয়ে কোন কিছু লিখিয়ে নিতেন যদি প্রয়োজন হতো। যদি তিনি লিখতে পড়তেই জানতেন তাহলে তিনি আলী রাঃ কে কখনোই রাসূলুল্লাহ্ শব্দটি দেখিয়ে দিতে বলতেন না তা মোছার জন্য। আর এটাও যৌক্তিক চিন্তা ভাবনাতেই অটোমেটিক্যালি চলে আসে, যে লিখতে পড়তে জানে সে কেন রাসূলুল্লাহ্ শব্দটি দেখিয়ে দিতে বলবে? এর অর্থ আসলেই তিনি নিজে লিখতে পড়তে জানতেন না যার জন্য অন্যরা তাঁর আদেশে কোন কিছু লিখে দিত।

[নোট: হাদিস পড়ে এটাই বোঝা যায় যে, যখন রাসূলুল্লাহ পর্যন্ত লেখা হয়েছিল সন্ধিতে, তখন তাতে অল্প কয়েকটি বাক্য লেখা হয়েছিল যার মাঝে উরওয়া আপত্তি করে বসে রাসূলুল্লাহ শব্দটির জন্য। এখন নবী ﷺ যদি সত্যিই লিখতে পড়তে জানতেন তাহলে এই অল্প কয়েকটি বাক্যের মাঝে "রাসূলুল্লাহ্" শব্দ মুছে দেওয়ার জন্য আলী রাঃ কে তা দেখিয়ে দিতে বলতেন না। কিন্তু যারা লিখতে পড়তে জানে না তারাই কেবলমাত্র অল্প বাক্য হলেও শব্দ দেখিয়ে দিতে বলে যেটা বাস্তবিক লজিক প্রয়োগে বোঝা যায়। ]

সেম হাদিসের রেফারেন্স: নবী ﷺ লিখতে জানতেন না/he did not know a better writing

iv] সহীহ বোখারির "আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ" অধ্যায়ের কুরআন সংকলনের পরিচ্ছেদের ৪৯৮৬ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে: যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামাহর যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় ’উমার (রাঃ)-ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উমার (রাঃ) আমার কাছে এসে বললেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কারীগণ শহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন মাজীদের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। উত্তরে আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম, যে কাজ আল্লাহর রাসূল ﷺ করেননি, সে কাজ তুমি কীভাবে করবে? ’উমার (রাঃ) জবাবে বললেন, আল্লাহর কসম! এটা একটি উত্তম কাজ...। এইভাবে তাদের মধ্যে কথোপকথন ও চিন্তা ভাবনার পরে আবু বকর সিদ্দিক রাঃ, যায়েদ রাঃ কে ডেকে বললেন, "তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই। তদুপরি তুমি রাসূল ﷺ-এর ওয়াহীর লেখক ছিলে.........।

এটা থেকে আরো সুস্পষ্ট যে, রাসূল ﷺ আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন না। অন্যথায় তিনি নিজে ওহী লেখক না হয়ে কেন অন্য আরেকজনকে ওয়াহী লেখক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন যা কিনা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর উক্তির মাধ্যমেই বোঝা যায়। তিনি লেখালেখি জানলে তো তিনি নিজেই ওহী লিখতেন + এতে ভুল হবার আশঙ্কাও ছিল না। কিন্তু নাহ্! আল্লাহর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন।

v] যায়দ ইবনে সাবিত রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল ﷺ-এর ওয়াহী লিখতে.....।

vi] সহীহ বোখারির আল কোরআনের ফযিলতসমূহ অধ্যায়ের নবী ﷺ এর কাতিব (ওয়াহী লিখক) পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে:

বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَايَسْتَوِي الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ....وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْسَبِيْلِ اللهِ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে নবী ﷺ বললেন, যায়দকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল সে যেন কাঠখন্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় (রাবী বলেন- অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত) নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখ/Then he said, "Write:.....।"

এইটা থেকেও প্রমাণ হয় যে, নবী ﷺ আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন না। অন্যথায় তিনি ওহী লেখার জন্য লেখক নিয়োজিত না করেই তিনি নিজে লিখতেন। কিন্তু নাহ্! গোটা হাদিস জুড়েই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। 

vii] সহীহ বোখারির ৩০/ সাওম/রোযা (كتاب الصوم) - 30/ Fasting অধ্যায়ের "নবী (ﷺ)-এর বাণীঃ আমরা লিপিবদ্ধ করি না এবং হিসাবও করি না" শিরোনামের ১৯১৩ নং হাদিসে বলা হয়েছে:
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেনঃ إِنَّا أُمَّةٌ أُمِّيَّةٌ لاَ نَكْتُبُ وَلاَ نَحْسُبُ الشَّهْرُ هَكَذَا অর্থাৎ আমরা উম্মী (নিরক্ষর) জাতি। আমরা লিখতে পারি না এবং হিসাবও করতে পারি না.....।[এই একই রকমের হাদিস প্রচুর আছে সহীহ হাদিসের মধ্যে]

viii] সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ২২/ সাওম [রোযা] (كتاب الصيام) - 22/ The Book of Fasting এর ২১৪৪ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে:

মুহাম্মাদ ইবনু মুছান্না (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা হলাম উম্মাতে উম্মিয়্যা। (মায়ের শিশু সন্তানের মত) আমরা ভাল করে লিখা জানি না আর ভাল করে হিসাবও জানি না। মাস এত দিনের হয়, মাস এত দিনের হয়, মাস এত দিনের হয়। এরকম তিনবার বলে তিনি ঊনত্রিশ দিনের উল্লেখ করলেন।

এইখানে নবী ﷺ বলেছেন," "‏ إِنَّا أُمَّةٌ أُمِّيَّةٌ لاَ نَكْتُبُ وَلاَ نَحْسِبُ الشَّهْرُ هَكَذَا তথা আমরা একটি নিরক্ষর জাতি...ভালো করে হিসাবও জানি না। এটা স্বয়ং নবী ﷺ এর-ই কথা। এইখানে উত্তম পুরুষে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে আবার প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে নবী ﷺ মাসের হিসেব কিভাবে জানতেন? উত্তরও হাদিসের মধ্যে আছে ভাই। তিনি বলেছেন, "আমার কাছে জিবরীল (আঃ) এসে বললো যে, মাসটি ঊনত্রিশ দিনের (সুনান আন নাসায়ী, হাদিস-২১৩৭)।" অর্থাৎ সকল কিছুই আল্লাহ্ তাঁকে জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমেই জানিয়ে দিতেন। আর তিনি তাঁর সাহাবীগণকে জানাতেন। আর সাহাবীগণ পরস্পরের কাছে বলতেন। সুনান আন নাসায়ী, সুনানে আবু দাউদ

ix] মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب) -এর ৪৬৫৯ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে: রাবী [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাকে আদেশ করলেন যেন আমি সুরিয়ানী ভাষা শিখি। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (ﷺ) আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি ইয়াহূদীদের পত্রলিখন পদ্ধতি শিখে নিই। তিনি (ﷺ) আরো বলেন যে, পত্রালাপ সংক্রান্ত ব্যাপারে ইয়াহূদীদের দিক থেকে আমার সন্তুষ্টি আসে না। যায়দ ইবনু সাবিত(রাঃ) বলেনঃ অর্ধ মাসের মধ্যে আমি (সুরিয়ানী ভাষা) শিখে ফেললাম। অতঃপর তিনি (ﷺ) যখনই কোন ইয়াহূদীকে চিঠি লিখতেন, তা আমি লিখতাম। আর কোন ইয়াহূদী যখন তাঁর কাছে চিঠি পাঠাত, তাদের চিঠি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর সমীপে আমিই পাঠ করতাম।

নোট: তাদের ভাষা সুর্ইয়ানি কিন্তু প্রসিদ্ধ আছে তাদের ভাষা হলো হিব্রু। সুতরাং এক্ষেত্রে বলা যায়, হয়ত বর্ণনাকারী যায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ প্রয়োজনের তাকীদে উভয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৫)

x] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৩/ আহ্‌কাম (كتاب الأحكام) - 93/ Judgments (Ahkaam) এর ৭১৯৫ নং হাদিসে বলা হয়েছে: যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী ﷺ তাকে ইয়াহূদীদের লিখন পদ্ধতি শিক্ষা করার জন্য আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেন, যার ফলে আমি নবী ﷺ এর পক্ষ থেকে তাঁর চিঠিপত্র লিখতাম এবং তারা কোন চিঠিপত্র তাঁর কাছে লিখলে তা তাঁকে পড়ে শোনাতাম...।

এইখানেও বলা হয়েছে যে, নবী ﷺ প্রয়োজনের জন্য হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ কে ইহুদিদের সাথে পত্রালাপের জন্য তাদের ভাষা শেখার আদেশ করেছিলেন। আর জায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ ও ইহুদিদের ভাষাও শিখেছিলেন + তাদের থেকে কোন চিঠিপত্র আসলে তা নবী ﷺ কে পড়ে শোনাত + তাঁর পক্ষ থেকে কোন চিঠিপত্র দেওয়ার প্রয়োজন হলে যায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ তা লিখে দিত। নবীজি ﷺ যদি লিখতে পড়তে জানতেন তাহলে তিনি কেন জায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ কে দিয়ে লেখাতেন + তা শুনতেন? তাঁর উচিত ছিল যে, তিনি নিজেই লিখবেন কিন্তু এটাও হয়নি। 

xi] এই একই হাদিস আরো আছে সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২০/ জ্ঞান (كتاب العلم) - 20. Knowledge (Kitab Al-Ilm)

এইভাবে বহু সহীহ হাদিস আছে যার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত যে, নবী ﷺ আসলেই লিখতে পড়তে জানতেন না। আসুন আমরা এ সম্পর্কেও মহামহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন মাজীদের আলোকে জেনে নিই।

পবিত্র কোরআনের আলোকে প্রমাণ:
এখন আসুন এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কী বলা হয়েছে তা জানা যাক। পবিত্র কোরআনের ৭ নং সূরা আল আরাফের ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন:

ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓۙ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ

যারা সেই (উম্মী) নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে লিখিত পায়, যে মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করে, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করে। সুতরাং তার প্রতি যারা ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে এবং সাহায্য করে ও সহানুভূতি প্রকাশ করে, আর সেই আলোকের অনুসরণ করে চলে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই (ইহকালে ও পরকালে) সাফল্য লাভ করবে।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

▪︎ এইখানে বলা হয়েছে: ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ (আল্লাযীনা ইয়াত্তাবিঊনার রাসুলান্নাবিইয়াল উম্মান) অর্থাৎ যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী...। এখন প্রশ্ন হলো "ٱلْأُمِّىَّ (আল উম্মান) শব্দের অর্থ কী? মূল আরবি "أمّي/উম্মী" শব্দের অর্থ হলো unlettered (unable to read-পড়তে অক্ষম), uneducated (having had little or no formal education at a school; showing a lack of education অর্থাৎ সামান্য ছিল বলতে গেলে নেই বা না থাকার মতো অথবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা নেই অথবা শিক্ষার অভাব রয়েছে এমন), illiterate (unable to read & write- লিখতে এবং পড়তে অক্ষম যিনি)।

আরবি ডিকশনারি থেকে দেখুন

গুগলের অনুবাদ: আরবি থেকে বাংলা  গুগলের অনুবাদ: আরবি থেকে ইংরেজী

আবার পবিত্র কোরআনের ৭ নং সূরা আল আরাফের ১৫৮ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন:

قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

বলঃ হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূ-মন্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নাবীর প্রতি ঈমান আন। যে আল্লাহ ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

▪︎ এই আয়াতের মধ্যেও সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে: فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهِ النَّبِیِّ الۡاُمِّیِّ (ফাআ-মিনু বিল্লাহি ওয়া রাসুলিহীন নাবিইয়ীল উম্মীই) অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর প্রতি ঈমান আন/So believe in Allah and His Messenger, the unlettered prophet. এইখানেও সেম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ উম্মী যার অর্থ নিরক্ষর তথা যে লিখতে এবং পড়তে অক্ষম এমন নবী। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের ৭ নং সূরা আল আরাফের ১৫৭-১৫৮ নং আয়াতে "أمّي/উম্মী/unlettered/নিরক্ষর" নবী দ্বারা রাসূল ﷺ উদ্দেশ্যে। এর মানে স্বয়ং বিশ্বজগতের অধিপতি নিজেই রাসূল ﷺ কে উম্মী তথা নিরক্ষর নবী বিশেষণ দ্বারা অভিহিত করেছেন বা সম্বোধন করেছেন। এই সম্বোধন দ্বারা মূলত মহান আল্লাহ কাফের মুশরিকদের মিথ্যা অপবাদকে খন্ডন করে দিলেন যারা দাবি করেন যে, তিনিই নাকি কোরআন রচনা করেছেন নট আল্লাহ্ (নাউযুবিল্লাহ) এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য এইখানে চিন্তার উপকরণ রেখে দিলেন।

আর কোরআনের ৬২:২ নং আয়াতে উম্মী বলতে আরব জাতীকে বোঝানো হয়েছে যাদের অধিকাংশই ছিল অক্ষর জ্ঞানহীন তথা illiterate. আর নবী ﷺ কে এমন এক জাতীর কাছেই পাঠানো হয়েছিল। এই আয়াতটা দিয়ে অনেকেই আছে অপব্যাখ্যা করে অন্যান্য আয়াতগুলোর সাথে জগাখিচুড়ি অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলে। তো যাইহোক আমরা কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে এটাই প্রমাণ পেলাম যে, আসলেই নবী ﷺ নিজে থেকে লিখতে পড়তে জানতেন না অর্থাৎ তিনি ছিলেন নিরক্ষর নবী।

নোট: সকল অনুবাদ + তাফসীরের মধ্যে "উম্মী" শব্দের অর্থ নিরক্ষর অর্থ করা হয়েছে এবং কী ইংরেজি অনুবাদেও। আবার গুগলে ট্রান্সলেশন করলেও এই সেম অর্থ-ই চলে আসে।

এখানে প্রশ্ন চলে আসে, মহান আল্লাহর এত বড় মর্যাদা সম্পন্ন একজন নবী আবার যিনি কিনা নবীগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই কিনা লিখতে পড়তে জানতেন না, এটা কিভাবে হয়? আসলে এটাই মহান আল্লাহর ইচ্ছে ছিল (আল্লাহু আলাম)। কারণ নবী ﷺ যদি লিখতে পড়তে জানতেন তাহলে মক্কার কাফের মুশরিকদের অপবাদ সঠিক হবার সম্ভাবনার পক্ষে যুক্তি ছিল তাদের নিজেদের কাছে। কারণ কাফের মুশরিকদের দাবি ছিল মুহাম্মদ নিজেই কোরআন লিখেছেন বা রচনা করেছেন। কিন্তু এই দাবিটি মিথ্যা। কারণ যেখানে নবী ﷺ ছিলেন একজন নিরক্ষর নবী সেখানে তাঁর পক্ষে কিভাবে কোরআন রচনা করা সম্ভব হতে পারে লজিক্যালী? অর্থাৎ আল্লাহ্ কাফের মুশরিকদের এসব অপবাদ থেকে নবী ﷺ কে রক্ষা করেছিলেন যার জন্য তাদের দাবির পক্ষে লজিক্যাল কোন কারণ ছিল না কেবলমাত্র অযৌক্তিক দাবি ছাড়াই।

এছাড়া রাসূল ﷺ এর আক্ষরিক কোনো জ্ঞান ছিল না, তবে তিনি মূর্খ নন বরং বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বললে যারা ক্ষেপে যান এবং ফতোয়াবাজি শুরু করে দেন তারা মনে করেন যে, রাসুল ﷺ কে নিরক্ষর বলার মাধ্যমে তাকে ছোট করা হচ্ছে কিন্তু সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, যদিও নিরক্ষর হওয়াটা কোনো মানুষের জন্য প্রশংসনীয় গুণ নয়; বরং ক্রটি হিসাবেই গণ্য। কিন্তু রাসুল ﷺ এর জ্ঞান-গরিমা, তত্ত্ব ও তথ্য অবগতি এবং অন্যান্য গুণ-বৈশিষ্ট্য ও পরাকাষ্ঠা সত্বেও নিরক্ষর হওয়া তার পক্ষে বিরাট গুণ ও পরিপূর্ণতায় পরিণত হয়েছে। কারণ, শিক্ষাগত, কার্যগত ও নৈতিক পরাকাষ্ঠ্য যদি কোনো লেখাপড়া জানা মানুষের দ্বারা প্রকাশ পায়, তাহলে তা হয়ে থাকে তার সে লেখাপড়ারই ফলশ্রুতি, কিন্তু কোনো একান্ত নিরক্ষর ব্যক্তির দ্বারা এমন অসাধারণ, অভূতপূর্ব ও অনন্য তত্ত্ব-তথ্য ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় প্রকাশ পেলে, তা তার প্রকৃষ্ট মু'জিযা ছাড়া আর কি হতে পারে? বুখারী মুসলিমের একটা হাদিসেও এসেছে,وليس يحسن أن يكتب "তিনি লিখতে জানেন না"। তাছাড়া যদি তাঁর আক্ষরিক জ্ঞান থাকতো, তিনি যদি লেখাপড়া জানতেন তাহলে কাফেররা বলতো যে, এই কুরআন মাজিদ তিনি নিজে হাত দিয়ে লিখেছেন; এটা আল্লাহর বাণী নয়। তিনি লেখাপড়া জানতেন না। কোনো শিক্ষাও তিনি অর্জন করেননি। তা সত্বেও তিনি এমন এক কুরআন পেশ করলেন যে, তার অলৌকিকতা ও সাহিত্য-অলংকারের সামনে পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক ও পন্ডিত তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম রয়ে গেল। আর তিনি যে শিক্ষা পেশ করলেন, যার সত্যতা ও যথার্থতা পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বীকৃত। আর তা এ কথারই প্রমাণ যে, তিনি সত্যিই আল্লাহর রাসুল। তাছাড়া একজন নিরক্ষর, না এ রকম গ্রন্থ পেশ করতে পারে, আর না এমন শিক্ষার বর্ণনা দিতে পারে, যা ন্যায় ও ইনসাফের এক সুন্দর নমুনা এবং বিশ্ব-মানবতার পরিত্রাণ ও সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

অতএব রাসূল ﷺ নিরক্ষর হয়েও এমন একটি গ্রন্থ বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়ে চমকে দেওয়া তাঁর জন্য ত্রুটি নয় বরং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় মুজিজা যা গভীর চিন্তা ভাবনা ছাড়া বোঝা অসম্ভব।

আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কি লিখতে পড়তে জানতেন?

খ্রিস্টানদের বাইবেল থেকে প্রমাণ:
উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআনের ৭ নং সূরা আল আরাফের ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেই দিয়েছেন যে, যারা সেই (উম্মী) নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে লিখিত পায়...।" এর মানে এইখানে পবিত্র কোরআন দাবি করছে যে, পূর্ববর্তী কিতাবের মধ্যে রাসূল ﷺ এর গুণাবলী তথা তাঁর বৈশিষ্ট্যের সম্পর্কে অগ্রিম জানান দেওয়া হয়েছিল যা কিনা তাতে উল্লেখ রয়েছে। আসলেই কী পবিত্র কোরআনের এই দাবিটি সত্যি? অবশ্যই সত্য। বর্তমানে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কিতাব বাইবেল হচ্ছে সেইসব কিতাবের সমষ্টি যা কিনা বিকৃতরুপে রয়েছে। বিকৃত মানে এর আংশিক সত্য এবং আংশিক মিথ্যা তথ্য রয়েছে এর মধ্যে। কাজেই এখান থেকে পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়া না গেলেও আংশিক সত্য পাওয়া যায় যার মিল আমরা খুঁজে পাই কোরআন হাদিসের সাথে।

বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের ইসাইয়া পুস্তকের ২৯ অধ্যায়ের ১২ নং ভার্সের মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল:

12. Then the book will be given to the one who is illiterate, saying, "Please read this." And he will say, "I cannot read."[New American Standard Bible]

১২. আবার যে লেখা পড়া জানে না, তাহাকে যদি সে তাহা দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, তবে সে উত্তর করিবে, "আমি লেখা পড়া জানি না।"

আরবি বাইবেলের মধ্যে বলা হয়েছে: وَحِينَ تُنَاوِلُونَهُ لِمَنْ لَا يَعْرِفُ الْقِرَاءَةَ وَتَقُولُونَ لَهُ: ”اِقْرَأْ هَذَا“ فَيُجِيبُ: ”لَا أَعْرِفُ الْقِرَاءَةَ.“

এখানে বলা হয়েছে: "اِقْرَأْ هَذَا (ইকরা হা'ঝা)/এটি পড়ুন"। উত্তরে তিনি কী বলবেন? তিনি বলবেন ”لَا أَعْرِفُ الْقِرَاءَةَ/কিভাবে পড়ে তা আমি জানি না।" অর্থাৎ আমি পড়তে জানি না। অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে ক্লিক করুন:

আবার বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণে রাসূল ﷺ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলা হয়েছিল:

18. আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাব্বাদী উৎপন্ন করিব (a Prophet from among their brethren, like unto thee) ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন।

[এই ভার্সের বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ মূলক আলোচনা বিস্তর পরিসরে আরেক আর্টিকেলে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ]

অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে ক্লিক করুন

এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে:-"তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব (will put my words in his mouth)." এই কথা থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, এই ভাববাদী/নবীর উপর পৃথক "আসমানী কিতাব" অবতীর্ণ হবে এবং নিরক্ষর হওয়ার কারণে তিনি তা মুখস্থ রেখে পাঠ করবেন। আর তাঁকে যা ওহী করা হবে কেবলমাত্র তাই ই তিনি আবৃত্তি করবেন।

আর আমরাও সহীহ হাদিসে দেখেছি যে, ওহী নাযিলের প্রাথমিক অবস্থায় রাসূল ﷺ কে যখন জিব্রাইল আঃ জড়িয়ে ধরে বললেন, اقرا ইকরা (পড়ুন), তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন যে, "আমি তো পড়তে জানি না।" [সহীহ বোখারির ওহীর সূচনা অধ্যায়ের ৩ নং হাদিস দ্রষ্টব্য]

তাহলে পবিত্র কোরআন বলছে তাদের গ্রন্থে, রাসূল ﷺ এর সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টানরা হিংসা বিদ্বেষ অহংকারবশত নবী ﷺ কে অস্বীকার করে।

কোরআন নকল করার অভিযোগ প্রসঙ্গে: ঐসব প্রাচ্যবিদসহ ইসলাম বিদ্বেষী খ্রিস্টান মিশনারিদের দলগুলো যারা বলে যে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ কোরআনকে লিখেছেন বাইবেলকে নকল করে (নাউযুবিল্লাহী মিনযালিক) তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ যখন বর্তমান ছিলেন তখন বাইবেলের কোন আরবি অনুবাদ ছিল না। প্রথম ওল্ড টেস্টামেন্ট আরবিতে যা সাদিয়া গাওন কতৃক অনুদিত হয় ৯০০ খ্রিস্টাব্দে। এটা সাধারণ বিষয়, নবী ﷺ
এর ওফাতের ২০০ বছর পরেও এবং আরবিতে সবার আগে যে নিউ টেস্টামেন্ট প্রকাশিত হয় ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে নবী ﷺ এর ওফাতের প্রায় ১০০০ বছর পরে।

আমরা মুসলিমরা এ সম্পর্কে একমত যে, বাইবেল এবং পবিত্র কোরআনের মধ্যে আংশিক মিল রয়েছে যেগুলো পরিপূর্ণ সত্য। এসব দ্বারা এটা বোঝায় না যে, পরেরটা পূর্বেরটা থেকে নকল করা হয়েছে। এর অর্থ এটাই দেয় যে, উভয়ের-ই তৃতীয় কোন উৎস রয়েছে। মহান আল্লাহর নাযিলকৃত সব সংবাদেই তাঁকে বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে একই সংবাদ আছে। পূর্ববর্তী সকল কিতাবগুলো ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবতীর্ণ অর্থাৎ সময় সীমা নির্ধারিত ছিল। যেমন কোরআন বলছে, সেসব কিতাবগুলো মূল অবস্থায় নেই বরং বিকৃত হয়ে গেছে, পবিত্র কোরআনে ৩:৬৪,৭০,৭১,৭৮,৮৪; ৫:১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, ৪২, ৪৪, ৭৩,৭৫,১১৬,১১৭) [এসব আয়াত গুলো ধারাবাহিক ভাবে পড়লেই বুঝা যায়]।

এতে বিভিন্ন সময়ে মনুষ্য হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সেগুলোতে মানব সংযোজিত অনেক মিথ্যা কাহিনি ঢুকানো হয়েছে। তারপরও সেগুলোতে আবশ্যকীয়ভাবে আংশিক বিষয়ের মিল রয়েছে। শুধু মিলগুলোর কারণে বলা ভুল হচ্ছে যে, এগুলো নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ বাইবেল নকল করে লিখেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে এক্ষেত্রে এটাও প্রমাণিত হয় যে, যীশু খ্রিস্টও (নাউযুবিল্লাহ) নিউ টেস্টামেন্ট, ওল্ড টেস্টামেন্টের থেকে নকল করেছেন ; কেননা নিউ এবং ওল্ড টেস্টামেন্টের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। উভয় গ্রন্থ একই উৎস (মহান আল্লাহ) থেকে আগত।

মনে করেন কেউ পরীক্ষায় নকল করল, "সম্রাট বাবর পানি পথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদির সাথে যুদ্ধ করেন ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে।" এটা আমি আমার বন্ধুর থেকে নকল করলাম। আমি লিখব না যে, আমি x y z থেকে নকল করেছি। হযরত মুহাম্মদ ﷺ এবং আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন যে, ঈসা, মুসাসহ সকল নবী সাঃ ই আল্লাহর প্রেরিত। এটা তাঁদের সঠিক সম্মান ও মর্যাদা দান করে। তিনি যদি আসলেই নকল করতেন তাহলে হয়তো এটা বলতেন না যে, ঈসা, মুসা আঃ আল্লাহর নবী ছিলেন। এটা প্রমাণ করে যে তিনি নকল করেননি; শুধু ঐতিহাসিক বিষয়াবলির উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির দ্বারা বলা কঠিন- কোনটি সঠিক? বাইবেল না কোরআন?

যাইহোক আমরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগ করে পরীক্ষা করতে পারি ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি বাইবেল এবং কোরআন পড়েন তাহলে দেখবেন এর অনেক ঘটনা এবং বিষয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ সেম ঘটনা এবং বিষয় যেমনটা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক তেমনি বাইবেলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি এসব একই রকম দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে আকাশ পাতাল পার্থক্য খুঁজে পাবেন।

আসুন এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখা যাক:
দৃষ্টান্ত: ১
বাইবেলে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে:
বাইবেলের মধ্যে আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে বিশ্ব, স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি ৬ দিনে সৃষ্টি হয়েছে এবং দিনের বর্ণনা করা হয়েছে ২৪ ঘন্টার সময় হিসেবে যা কিনা পৃথিবীর সময় বোঝায়। কারণ সেখানে "সকাল এবং সন্ধ্যা হল" উল্লেখ করা হয়েছে। এইভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার সময়, এক দিন করে ৬ দিন পর্যন্ত সৃষ্টির কাজ চলতেই থাকে এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর নাকি বিশ্রাম পর্যন্ত নিয়েছেন। চিন্তা করেন তিনি নাকি বিশ্রামও নেন। আপনি যদি বাইবেলের প্রথম অধ্যায় সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে সেখানে দেখবেন যে, ঈশ্বর শুরুতেই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। অন্ধকারে আবৃত ছিল....। ঈশ্বর বললেন, "আলো ফুটুক।" আলো ফুটে গেল এবং ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। এই আলোর নাম দিলেন দিন এবং অন্ধকারের নাম দিলেন রাত্রি। তারপর সেখানে সন্ধ্যা হল এবং রাত হল। এই হলো প্রথম দিন। আর এইভাবে ছয় দিন পর্যন্ত ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিকর্ম চালালেন এবং সপ্তম দিনে তাঁর বিশ্রামের দরকার হলো কিন্তু আল্লাহর বিশ্রামের দরকার হয় না, কোরআন ৪৬:৩৩। এইভাবে ঈশ্বর ২৪ ঘন্টার সময়ে তা সৃষ্টি করলেন যা বোঝা গেল।

কোরআন এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে:
কিন্তু আজকের আধুনিক বিজ্ঞান বলে: ২৪ ঘন্টার হিসাবে ৬ দিনে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আর মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনেও বলা হয়েছে ৬ টি আইয়াম। আরবি ভাষায় এক বচন ( يَوْمِ ইয়াওম) এবং বহুবচন ( أَيَّامٍ আইয়াম) শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়। আরবিতে শব্দটি দিন, পর্যায়কাল, সময়কাল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। সুরা ক্বফ এর ৩৮নং আয়াতে যে أَيَّامٍ (আইয়াম) এর কথা বলা আছে তা অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার দিন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে সময়ে সূর্য তৈরি হয়নি; কাজেই সৌর দিনের হিসাব এখানে অবান্তর। সুরা হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫ তে হাজার বছরের 'দিন' এবং সুরা মাআরিজ ৭০:৪ এ ৫০ হাজার বছরের 'দিন' এর কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য যে, হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫তে أَلْفَ سَنَةٍ বা ‘হাজার বছর’ এর 'দিন' এর কথা উল্লেখ আছে; যা দ্বারা যেমন নির্দিষ্টভাবে ১০০০ বছর বোঝাতে পারে, আবার ‘হাজার বছর’ তথা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। কুরআনে শব্দটির ব্যবহারের এই বৈচিত্র্য দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে যে-- يَوْمِ (ইয়াওম) শব্দটির অর্থ ব্যাপক; এ দ্বারা যে কোন সময়কালের দিনই বোঝাতে পারে। এ দ্বারা ২৪ঘণ্টা, ১ হাজার বছর, ৫০,০০০ বছর এমনকি হাজার বছর বা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। মোট কথা, শব্দটি দ্বারা যে কোন time period বা পর্যায়কাল/সময়কাল বোঝাতে পারে।

আর বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান বলে এই মহাবিশ্ব ৬ টি লম্বা সময়ে সৃষ্টি হয়েছে। আর এখানে কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্য এক হলেও বাইবেল বিরোধী অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক ভাবে ভুল।

দৃষ্টান্ত ২
বাইবেলে আলো, আকাশ, পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে:

৩. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল।
৪. আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন।
৫. ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।"
৬. তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশ মণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।"
৭. তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল।
৮. ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।" সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
৯. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।" এবং তা-ই হল।
১০. ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
১১. তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।" আর তাই-ই হল।
১২. পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উৎপন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
১৩. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।" [আদিপুস্তক ১:৩-১৩]

▪︎ তাহলে এইখানে বাইবেল আমাদের বলছে যে, প্রথম দিনে সৃষ্টি হয় দিন এবং রাতের (আদিপুস্তক ১:৩-৫)। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে, মহাবিশ্বের আলো সৃষ্টি হয়েছে নক্ষত্রের প্রতিক্রিয়ায়। আদিপুস্তকের ১ম অধ্যায়ে ১৪-১৯ নং ভার্সে বলা হয়েছে যে, সূর্য চতুর্থ দিনে সৃষ্টি হয়েছিল। প্রমাণ নিচে:

১৪. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
১৫. পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।" এবং তা-ই হল।
১৬. তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি (সূর্য) বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি (চাঁদ) বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
১৭. পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
১৮. দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
১৮. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।" [আদিপুস্তক ১:১৪-১৮]

অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে ক্লিক করুন

▪︎ এখন আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে, সূর্য হলো একটি নক্ষত্র এবং আলোর উৎস। এখন বাইবেল আমাদের বলছে যে, আলোর উৎস সূর্য সৃষ্টি হয়েছে চতুর্থ দিনে (আদিপুস্তক ১:১৬-১৮)। তাহলে প্রশ্ন হলো আলোর উৎস কিভাবে ৪র্থ দিনে সৃষ্টি হয় যেখানে আলো সৃষ্টি করা হয়েছে ১ম দিনে? (আদিপুস্তক ১:৩-৫) অর্থাৎ ফলাফল যেটা হলো "আলো" তা সূর্যের চারদিন পূর্বেই সৃষ্টি করা হয়েছে যা অবৈজ্ঞানিক/বৈজ্ঞানিক ভুল। আবার পৃথিবী, যা দিন রাতের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন তা সৃষ্টি হয়েছে তৃতীয় দিনে (আদিপুস্তক ১:৯-১৩) যা বৈজ্ঞানিক ভুল।

পবিত্র কোরআনেও আলো এবং সৃষ্টি সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে। তবে এটা অসম্ভব ও অবৈজ্ঞানিক ধারাবাহিকতা দেয় না। আপনারা কি মনে করেন যে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ এসব বাইবেল থেকে নকল করে সংশোধন করে ঘটনাক্রমগুলো সাজিয়ে নিয়েছিলেন? এগুলো ১৪০০ বছর পূর্বে কেউই জানতেন না।

দৃষ্টান্ত ৩
চাঁদ ও সূর্য সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে:
বাইবেলের আদিপুস্তকের ১ম অধ্যায়ের ৯ থেকে ১৩ নং ভার্সে উল্লেখ করা হয়েছে পৃথিবী তৃতীয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে, দেখুন উপরে ভার্স। এবং ১৪ থেকে ১৯ নং ভার্সে উল্লেখ করা হয়েছে পৃথিবীর পরে সূর্য এবং চাঁদ সৃষ্টি করা হয়েছে চতুর্থ দিনে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলছে যে, পৃথিবী এবং চাঁদ মূল নক্ষত্র সূর্যের অংশমাত্র অর্থাৎ সূর্য থেকেই পৃথিবী এবং চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে। এর মানে পৃথিবী, কখনোই সূর্যের আগে সৃষ্টি হতে পারে না। এটাও একটা অবৈজ্ঞানিক তথা ভুল।

দৃষ্টান্ত ৪
বাইবেলে গাছপালা, লতা-পাতা, সবজি, বীজ সৃষ্টি প্রসঙ্গে:
বাইবেলের আদিপুস্তকের ১ নং অধ্যায়ের ১১ থেকে ১৩ নং ভার্সে গাছ-পালা, লতা-পাতা, ঘাস, শস্যদায়ী ও ফলদায়ক উদ্ভিদের সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে যা কিনা তৃতীয় দিনে সৃষ্টি হয়েছিল এবং ১৪ থেকে ১৯ নং ভার্সে বলা হয়েছে, সূর্য সৃষ্টি হয়েছিল চতুর্থ দিনে। কিভাবে শাক সবজি, গাছ-পালা, লতা-পাতার মূল সূর্য ছাড়াই অস্তিত্বে আসল?

দৃষ্টান্ত ৫
চাঁদ ও সূর্যের আলো প্রসঙ্গে:
আদিপুস্তক ১ম অধ্যায়ের ১৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:-"তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি (সূর্য) বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি (চাঁদ) বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। এর সঠিক অনুবাদ অর্থাৎ হিব্রু বাইবেলের মধ্যে বলা হয়েছে "প্রদীপ "הַמְּאֹרֹ֖ת যা নিজে থেকে আলো বিকিরণ করে অর্থাৎ আলোর উৎস। এক কথায় যার নিজের আলো আছে। আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে যদি আদিপুস্তক ১ম অধ্যায়ের ১৬ ও ১৭ নং একত্রে বুঝে পড়া হয়। ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:-"পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলোকে (সূর্য ও চাঁদ) আকাশে স্থাপন করলেন।" এখানে পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য অর্থাৎ সূর্য ও চাঁদের নিজস্ব আলো আছে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই অর্থাৎ বাইবেলের উল্লেখিত তথ্য আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু পবিত্র কোরআন চাঁদ এবং সূর্যের আলোর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ সূর্যের নিজস্ব আলো থাকলেও চাঁদের নিজস্ব আলো নেই বরং যেটা আছে ওটা হলো ধার করা আলো।

এখন এটা কিভাবে সম্ভব যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ সব বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাকে নকল এবং সংগ্রহ করেছেন অথচ কিনা কোন ভুলটাকে সংগ্রহ করল না বাইবেল থেকে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, এটা কেবলমাত্র হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের অজ্ঞতাসুলভ আচারণ। কারণ তারা এ সম্পর্কে ভালো করে গবেষণা না করেই তাঁর প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকারবশত এমন অভিযোগ করে বসে কোনরুপ যৌক্তিক পর্যালোচনা ছাড়াই।

আবার আপনি বাইবেল এবং কোরআন যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে আকাশ পাতাল পার্থক্য পাবেন। বাইবেলের মধ্যে এইভাবে অসংখ্য ভুল আছে যা কিনা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মারাত্মক সাংঘার্ষিক এবং অবাস্তব কল্পকাহিনীর মতো। উল্লেখ্য যে, বাইবেলের আদিপুস্তক-ই শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক ভুল দিয়ে, গোটা অধ্যায়টাই মারাত্মক ভুলে ভরা। বাইবেলের মধ্যে এতটাই ভুল আছে যে, যা লিখতে গেলে আস্ত একটা বই হয়ে যাবে।

দৃষ্টান্ত ৬
বাইবেলে আকাশের খুঁটি সম্পর্কে:
বাইবেলে যোব/ইয়োবের ২৬ নং অধ্যায়ে বলা হয়েছে:

১১. ভূগর্ভস্থ থামগুলি আকাশকে ধারণ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে...।

অপরদিকে পবিত্র কোরআনের ৩১ নং সূরা লোকমানের ১০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَاۖ وَأَلْقَىٰ فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍۚ وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَأَنۢبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ

তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পবর্তমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জীব-জন্তু এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্ভব করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

▪︎ আপনারা কেউ কী আকাশের কোন স্তম্ভ বা খুঁটি দেখেছেন জীবনে কিন্তু বাইবেল বলছে আকাশের খুঁটি আছে অর্থাৎ এটা একটা বৈজ্ঞানিক ভুল। শুধু আকাশের স্তম্ভ আছে তা নয়, বাইবেল বলছে পৃথিবীরও স্তম্ভ বা খুঁটি/ভীত আছে।

৬. তিনি পৃথিবীকে তাহার স্থান হইতে কম্পমান করেন, তাহার স্তম্ভ সকল টলটলায়মান হয়।"

অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে ক্লিক করুন

[নোট: শুধু আকাশের স্তম্ভ আছে তা নয়, বাইবেল বলছে পৃথিবীরও স্তম্ভ/ভিত/খুঁটি আছে (যোব ৯:৬; ১ শ্যামুয়েল ২:৮; সামসংগীত ৭৫:৩)]

এইভাবে বাইবেলের মধ্যে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক ভুল রয়েছে যা কিনা কোরআনের মধ্যে নেই। এখন খ্রিস্টান মিশনারিদের বলি, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) যদি আসলেই পবিত্র কোরআন বাইবেল থেকে নকল করত, তাহলে তাঁর পক্ষে কিভাবে সম্ভব হলো যে, তিনি ভুলগুলো নকল না করে কেবলমাত্র সঠিক তথ্যগুলো মানব জাতির সামনে পেশ করলেন? তারপরও তো কোরআন আর বাইবেলের মধ্যে যেসব একই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাতেও পার্থক্য রয়েছে। কারণ বিষয় বস্তু একই হলেও বাইবেল অবৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েছে যা কিনা কোরআন দেয় নাই। তাহলে এখন কী বলতে চান তিনি বাইবেলের ভুলগুলোকে সংশোধন করেছিলেন? কি আশ্চর্য দাবি আপনাদের।

তো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) যে নকল করেননি তার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখিয়েছি যে, প্রথমত তিনি লিখতে পড়তে জানতেন না, যা অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় গুণ না হলেও এটা তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনা এবং তাঁর জন্য একটি মুজিজা। কেন মুজিজা এবং তাঁর ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় তা পূর্বেই বলা হয়েছে। আবার তাঁর সময়ে বাইবেলের আরবি অনুবাদও ছিল না। আবার কোরআনের মধ্যে এও বলে দেওয়া হয়েছে যে, পূর্বে তিনি কোন কিতাব-ই পাঠ করেননি যার প্রমাণ কোরআনের ২৯ নং সূরার ৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে:

وَمَا كُنتَ تَتْلُوا۟ مِن قَبْلِهِۦ مِن كِتَٰبٍ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذًا لَّٱرْتَابَ ٱلْمُبْطِلُونَ

তুমিতো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোন দিন কিতাব লিখনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

উক্ত আয়াতের বিস্তারিত তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন। 

সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত যে, পবিত্র কোরআনকে কস্মিনকালেও বাইবেলের থেকে নকল করা হয় নাই। এবং কী তাঁর সমসাময়িক বড় বড় শত্রুরাও এরুপ অপবাদ দিতে পারে নাই যা কিনা বর্তমান খ্রিস্টান মিশনারিদের দলগুলো অপবাদ দেয়। কাজেই আপনার মস্তিষ্ক যদি সুস্থ স্বাভাবিক থাকে তাহলে আপনার অবশ্যই বোঝার কথা আসলেই কোরআন, বাইবেল থেকে নকল করা হয়েছে কিনা?

মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার মতো তাওহিদ দান করুন, মুসলিমদের হেদায়েতের উপর অটল রাখুন মৃত্যু পর্যন্ত এবং অমুসলিমদের হেদায়েত দিক। আমীন।

কৃতজ্ঞতান্তে: ডা. জাকির নায়েক স্যার এবং প্রিয় ভাই মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান মিনারের প্রতি।