Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

যীশু খ্রিস্ট তথা হযরত ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কি বলা হয়েছে?

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার অসীম রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। সকল প্রশংসা এই বিশ্বজগতের সর্বোত্তম রব মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার, যিনি বিচার দিনের মালিক। অসংখ্য কোটি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর প্রিয় সাহাবী- গণের প্রতি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর অনুসারী সকল মুসলিম ভাই- বোনদের প্রতি।

তো আজ আমরা গুরত্বপূর্ণ বিশেষ একটা টপিকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহু তা'আলা। আর সেটা হলো পবিত্র কোরআনের আলোকে যীশু খ্রিস্ট তথা আমাদের সম্মানিত নবী হযরত ঈসা মসিহ ইবনে মারিয়াম আঃ এর ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে। কেননা সারা বিশ্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টানদের মধ্যে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের সংখ্যা বেশি। এসব ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ ঈসা আঃ কে নবী হিসেবে গ্রহণ না করে বরং তাঁকে ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তারা পবিত্র কোরআন থেকেও ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করে যদিও এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন আয়াত দেখাতে সক্ষম নন। তো যাইহোক পবিত্র কোরআন ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে কি বলেছে আসুন তা জানা যাক। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসব বিভ্রান্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে আয়াতে এরশাদ করেছেন এবং তা সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর মাধ্যমে।

Aal-e-Imran 3:59
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
Bengali - Mujibur Rahman
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, অতঃপর বললেন হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।" [1]

▪︎ এর অর্থ আদম আঃ এর ন্যায় ঈসা (আঃ)ও পিতা বহিভূর্ত মাটির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন যা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন মহান রব। এইখানে পার্থক্য হলো আদম আঃ পিতা- মাতা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছেন; অপরদিকে ঈসা আঃ সৃষ্টি হয়েছেন পিতা বহিভূর্ত কেবলমাত্র মাতার মাধ্যমে। আর মহান আল্লাহ্ কাজেই এইখানে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব দাবি কতটুকু সত্য হতে পারে তা বোঝানোর জন্য ঈসা আঃ কে, আদম আঃ এর সঙ্গে তুলনা করে দেখিয়েছেন। যদি ঈসা আঃ পিতা বহিভূর্ত সৃষ্টি হওয়ার জন্য ঈশ্বর হয়ে যায়, তাহলে আদম আঃ পিতা- মাতা ছাড়াই সৃষ্টি হওয়াতে কেন ঈশ্বর হবেন না ঠিক যেমনটা ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ চিন্তা ভাবনা করে থাকেন? এমন চিন্তা ভাবনা করলে তো যীশু অপেক্ষা আদম আঃ-ই বড় ঈশ্বর হয়ে গেল। কিন্তু ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ কি তাঁকে ঈশ্বর হিসেবে মানে? অবশ্যই মানে না। তাহলে তাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড রয়ে গেল যে। আসলে যাদের বিবেক বোধ আছে এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চিন্তা ভাবনা করতে পারে, তারাই এই কথার গভীর তাৎপর্য বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

Aal-e-Imran 3:84
قُلْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْمَٰعِيلَ وَإِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
তুমি বলঃ আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রাব্ব কর্তৃক প্রদত্ত হয়েছে তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, আমরা তাদের মধ্যে কেহকেও পার্থক্য জ্ঞান করিনা এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।" [2] (ঠিক এমন কথার মিল পাওয়া যায় বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণের ৬ অধ্যায়ের মধ্যে)

▪︎ আর আমরা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট পড়লে জানতে পারি যেখানে পূর্ববর্তী সব নবীগণ কেবলমাত্র একত্ববাদের প্রচার করেছিলেন অর্থাৎ ইব্রাহিম আঃ সহ তাঁর সকল উত্তরসূরিগণ এক আল্লাহর উপর ইমান এনেছিলেন এবং তা প্রচার করেছিলেন সকল নবীগণ [3]। আর এটার কথাই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।

Al-Ma'idah 5:17
لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَۚ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا إِنْ أَرَادَ أَن يُهْلِكَ ٱلْمَسِيحَ ٱبْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُۥ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًاۗ وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاۚ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
Bengali - Bayaan Foundation
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে যারা বলে ‘নিশ্চয় মারইয়াম পুত্র মাসীহই আল্লাহ’। বল, যদি আল্লাহ ধ্বংস করতে চান মারইয়াম পুত্র মাসীহকে ও তার মাকে এবং যমীনে যারা আছে তাদের সকলকে ‘তাহলে কে আল্লাহর বিপক্ষে কোন কিছুর ক্ষমতা রাখে? আর আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের মধ্যবর্তী যা রয়েছে, তার রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" [4]

▪︎ এই আয়াতে মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ কত সুন্দর ভাবে অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দিয়েছেন? একদম গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখুন। যারা ঈসা আঃ কে মহান আল্লাহর স্থানে আসন দিয়েছে অর্থাৎ তাঁকে আল্লাহ্ বলে (নাউযুবিল্লাহ; আস্তাগফিরুল্লাহ) তারা কতটাই নির্বোধ? কেননা মহান আল্লাহ যদি ঈসা আঃ সহ তাঁর মাতা মারিয়াম আঃ কে এবং সেই সাথে সকলকে পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে চান তাহলে কে আছে যারা আল্লাহর থেকে তাঁদের বাঁচাবে? কেউই না। এমনকি তাঁরা নিজেরাও সেটা করতে সক্ষম নয়। সুতরাং তাঁরা কিভাবে ইলাহ হতে পারে? আল্লাহ তা'আলার সামনে মসীহ 'আলাইহিস সালাম এতটাই অক্ষম যে, তিনি নিজেকে পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেন না এবং কি যে জননীর খেদমত ও হেফাযত তার কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, সে জননীকেও রক্ষা করতে পারেন না। সুতরাং তিনি কিভাবে আল্লাহ্ হতে পারেন। আল্লাহ্ মূলত এইভাবে কথা বলার মাধ্যমে গভীর চিন্তা ভাবনার উপকরণ রেখে দিয়েছেন।

Al-Ma'idah 5:18
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ وَٱلنَّصَٰرَىٰ نَحْنُ أَبْنَٰٓؤُا۟ ٱللَّهِ وَأَحِبَّٰٓؤُهُۥۚ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُم بِذُنُوبِكُمۖ بَلْ أَنتُم بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۚ وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاۖ وَإِلَيْهِ ٱلْمَصِيرُ
Bengali - Mujibur Rahman
ইয়াহুদী ও নাসারাহ্ বলেঃ আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র। তুমি তাদের বলে দাও, আচ্ছা তাহলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপের দরুণ কেন শাস্তি প্রদান করবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় সাধারণ মানুষ মাত্র, তিনি যাকে ইচ্ছা মার্জনা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন, আর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে আকাশসমূহে ও যমীনে এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুতেও; আর সবাইকে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।" [5]

▪︎ অর্থাৎ যদি সত্যি-সত্যিই তোমারা আল্লাহর প্রিয়বান্দা হতে তবে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিতেন না। অথচ তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তোমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা নও। আবার ইয়াহুদীরা উযায়ের (আঃ) কে এবং খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে ‘'আল্লাহর পুত্র" বলে এবং তারা নিজেদেরকেও ‘'আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র’' বলে দাবী করে। আপনি যদি খ্রিস্টানদের সাথে কথা বলেন তাহলে দেখবেন ওরাও নিজেদেরকে ঈশ্বরের সন্তান বলে দাবি করে এবং কি এ সম্পর্কে বাইবেলের নতুন নিয়মের মধ্যেও দেখা যায় যেখানে তারা নিজেদের কে ঈশ্বরের সন্তান বলে দাবি করে অথচ এটা স্পষ্ট মিথ্যা দাবি। কারণ সবাই মানুষ। মানুষ কস্মিনকালেও আল্লাহর সন্তান হতে পারে না বরং তাঁর সৃষ্টি করা দাস।

Al-Ma'idah 5:72
لَقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَۖ وَقَالَ ٱلْمَسِيحُ يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْۖ إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
Bengali - Mujibur Rahman
নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়েছে যারা বলে - মসীহ ইবনে মারইয়ামই আল্লাহ। অথচ মসীহ্ নিজেই বলেছিলঃ হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর! যিনি আমার রব্ব এবং তোমাদেরও রব্ব; নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশী স্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম; এবং এরূপ অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবেনা।" [6]

▪︎ আসলেই যারা যীশু খ্রিস্ট তথা ঈসা মসিহ আঃ কে আল্লাহ্ বলে (নাউযুবিল্লাহ) তারা মূলত কুফরিতে লিপ্ত। আর বর্তমান ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ সুস্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত। কারণ তারা যীশু খ্রিস্টকে আল্লাহ্/ঈশ্বর হিসেবে মানে অথচ বাইবেলের মধ্যে সুস্পষ্ট মজুদ রয়েছে যীশুর উদ্ধৃতিতে যেখানে তিনি নিজেই বারংবার বলেছিলেন:

মার্কের ১২ অধ্যায়ের "সর্বপ্রধান আদেশের বিষয়ে শিক্ষা" শিরোনামে বলা হয়েছে:

28. আর অধ্যাপকদের একজন নিকটে আসিয়া তাঁহাদিগকে তর্ক বিতর্ক করিতে শুনিয়া, এবং যীশু তাঁহাদিগকে বিলক্ষণ উত্তর দিয়াছেন জানিয়া, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সকল আজ্ঞার মধ্যে কোন্‌টি প্রথম?

29. যীশু উত্তর করিলেন, প্রথমটি এই, ‘‘হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু;
30. আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।”
31. দ্বিতীয়টি এই, ‘‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই। (এই দুটি আদেশেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের বই নির্ভর করে মথি ২২:৪০)
32. অধ্যাপক তাঁহাকে কহিল, বেশ, গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন যে, তিনি এক, এবং তিনি ব্যতীত অন্য নাই;
33. আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা এবং প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ।
34. তখন সে বুদ্ধিপূর্বক উত্তর দিয়াছে দেখিয়া যীশু তাহাকে কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য হইতে তুমি দূরবর্তী নও (অর্থাৎ তুমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে এরুপ বিশ্বাস নিয়ে)। ইহার পরে তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে আর কাহারও সাহস হইল না।" [7] (আর এই সেম সারমর্ম উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের ৫:৭২ নং আয়াতের মধ্যে)

▪︎ এ থেকে একটা বাস্তব মহাসত্য আরো সুস্পষ্ট ভাবে জানা গেল। আর তা হলো প্রথম যে আজ্ঞা/আদেশটি তাওরাত ও সকল ভাববাদীদের গ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যা ঈশ্বরের রাজ্যের নৈকট্যের (অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করার) মূল কারণ তা হলো একত্ববাদ (but not Trinity) অর্থাৎ এ কথা বিশ্বাস করা যে সদাপ্রভু মহান আল্লাহই বলেন একমাত্র ঈশ্বর বা উপাস্য এবং তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপাস্য নেই।

যদি ত্রিত্ববাদের (অর্থাৎ তিনের সমন্বয়ে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসের) উপরে মুক্তি তথা অনন্ত জীবন নির্ভর করতো তবে নিশ্চয়ই তা তাওরাত এবং অন্যান্য ভাববাদীদের গ্রন্থগুলোতে প্রথম আদেশ হিসেবে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হতো। তাহলে যীশু বলতেন:-"হে ইস্রায়েল! প্রথম আদেশ এই, যিনি তিনটি প্রকৃত ও সম্পূর্ণ পৃথক সত্ত্বার অধিকারী, তিনি তিনের সমন্বয়ে একজন ঈশ্বর।" অথচ এইরূপ কোন কথা কোন তাওরাতসহ কোন ভাববাদীদের কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করা হয় নাই।

নোট: (মার্ক ১২:২৮-৩৪)- ভার্সে ইহুদিদের একজন শিক্ষক সকল আদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম আদেশ জানতে চাওয়ায় যীশু ঈশ্বরের একত্ববাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, যা শুনে উক্ত শিক্ষক ঈশ্বরের একত্ববাদে সাক্ষ্য দিয়ে যীশুর কথাকে সত্য বলে স্বীকার করেন। আর যীশু উক্ত ইহুদি আলেমের প্রতিরোত্তরে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন যে,"তিনি স্বর্গরাজ্যের খুব নিকটে তথা জান্নাতী" অর্থাৎ উক্ত ইহুদি পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছে "একমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত দ্বিতীয় কেউই নেই।" যীশুও ইহুদি আলেমের এরুপ ঈশ্বরের একত্ববাদের সাক্ষ্য শুনে তাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থাৎ তিনি এরুপ বিশ্বাস নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে অন্যথায় না। আর ইহুদিরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে না।

তাহলে উপরোল্লিখিত বক্তব্যের আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের তিনটি সত্ত্বা নয় (not Trinity) বা তিনের সমন্বয়ে একজন ঈশ্বর নন। কেননা ইহুদিদের বিশ্বাস হলো ঈশ্বর মাত্র একজন কিন্তু তিনের সমন্বয়ে এক ঈশ্বর ইহুদিরা বিশ্বাস করে না। এখানে প্রশ্ন হলো যদি ইহুদিরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস নাই করে তাহলে যীশু কোন যুক্তিতে উক্ত ইহুদি আলেম কে "ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যের খুবই নিকটে " বলে ঘোষণা করল? যেখানে ইহুদিরা একজন সত্ত্বাধারী ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে গেল সেখানে কোন যুক্তিতে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস না করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না- দাবিগুলো সত্য হয় খ্রিস্টানদের?

তাহলে আমরা পেলামঃ
i) ইহুদিরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে না অপরদিকে
ii) খ্রিস্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে

ত্রিত্ববাদীগণ বিভিন্ন ভাববাদীর অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বাক্য থেকে বিভিন্ন খাটাখাটনি করে, কষ্টকল্পনা করে ত্রিত্ববাদের পক্ষে কিছু "অযৌকক্তিক কাল্পনিক ব্যাখ্যা" প্রদান করে যা যীশু খ্রিস্টসহ সকল ভাববাদীদের গ্রন্থের সুস্পষ্ট বক্তব্যের সাথে পরস্পর বিপরীত এবং মারাত্মক সাংঘর্ষিক। এছাড়া ত্রিত্ববাদ বিরোধীদের সামনে প্রমাণ হিসেবে এগুলো একদমই মূল্যহীন। কারণ এসকল কাল্পনিক ব্যাখ্যা অতি দূরবর্তী ও অত্যন্ত অস্পষ্ট। এগুলোর বিপরীতে সুস্পষ্ট বাক্যাবলী রয়েছে যা ত্রিত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করে এবং একত্ববাদ প্রমাণ করে।এখানে এতটুকু প্রমাণ করাই যথেষ্ট যে, মুক্তি ও অনন্ত জীবন লাভের জন্য যদি ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন থাকত তবে ইস্রায়েলীয় ভাববাদীগণ অবশ্যই অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে তা উল্লেখ করতেন যেভাবে তাঁরা একত্ববাদের কথা উল্লেখ করেছেন। যার ফলে ইহুদিরাও ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করতো।

আর পবিত্র কোরআনের মধ্যেও যীশু খ্রিস্ট তথা ঈসা মসিহ আঃ এর এরুপ সাক্ষ্য প্রমাণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, "হে ইস্রায়েল! তোমরা আমার এবং তোমাদের একক তথা অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করো মন-প্রাণ দিয়ে। তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন তথা তিনি একজন নন বরং তাঁর সমকক্ষ আরো আছে এরুপ বিশ্বাস স্থাপন করলে জাহান্নামে যেতে হবে; যার স্বীকৃতি যীশু খ্রিস্টসহ উক্ত ইহুদি আলেম থেকে আমরা দেখেছি।

নোট: বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের কোথাও তিন খোদার নাম গন্ধ নাই; এবং কি যীশু তথা ঈসা আঃ পর্যন্ত তিন খোদার কথা নয় বরং একক ও অদ্বিতীয় খোদার কথা প্রচার করেছিলেন। তিন খোদার মতবাদের ধারণা শুরু করেছিল রোমান সম্রাট থিয়োডোসিউস যিনি পৌত্তলিক মতবাদের অনুসারী ছিল। আর তিন খোদার প্রচারক ছিল শৌল অরফে সেন্ট পৌল, যে পূর্বে ইহুদি ছিল এবং ঈসা মসিহের তথাকথিত ক্রসিফিকশনের পরে যীশুর অনুসারী হওয়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে তিন খোদার কথা প্রচার করেছিল। আর এই পৌলই যীশুর বক্তব্যের বিরোধী এবং তার সমালোচক; যে খ্রিস্টের মতবাদের বিকৃতি ঘটিয়েছিল।

এখন দেখি ত্রিত্ববাদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআনে কি বলা হয়েছে?

Al-Ma'idah 5:73
لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٍۘ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌۚ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا۟ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
Bengali - Mujibur Rahman
নিঃসন্দেহে তারাও কাফির যারা বলেঃ ‘আল্লাহ তিনের (অর্থাৎ তিন মা‘বূদের) এক’, অথচ ইবাদত পাবার যোগ্য এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহই নেই; আর যদি তারা স্বীয় উক্তিসমূহ হতে নিবৃত্ত না হয় তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফরীতে অটল থাকবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।" [8]

▪︎ এইখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যারা বলে আল্লাহ্ তিনজনের একজন তথা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে তারা মূলত কুফরিতে লিপ্ত যা ভয়ানক অপরাধ। তো ত্রিত্ববাদ থিওরিটা কি? প্রোটেস্টাইন খ্রিস্টানদের বিশ্বাসমতে পবিত্র আত্মা (পাঁক-রুহ) + ঈসা আঃ তথা যীশু খ্রিস্ট + সদাপ্রভু ঈশ্বর মিলে একজন পরিপূর্ণ ঈশ্বর; যেটা তারা দাবি করে থাকে। আসলে এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে আপনাকে পাগল হতে হবে যে এত হ য ব র ল অবস্থা। খ্রিস্টান পন্ডিতগণ পর্যন্ত এটার সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারে নাই। তো যাইহোক এটা এতটাই ভয়ানক অপরাধ যে, যদি আসমান যমিনের মানুষের মতো অনুভূতি থাকত তবে তা মুহুর্তেই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ঈসা আঃ কোনভাবেই আল্লাহ্ হতে পারেন না এবং ত্রিত্ববাদ বিশ্বাসটা মূলত কুফরি বিশ্বাস, যেটা আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে। কাজেই এটা থেকে বিরত হতে হবে যেই শিক্ষা আমরা কোরআন এবং বাইবেল থেকেই প্রমাণ পেয়েছি।

▪︎ কোরআনের অন্যত্রে ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে আরো শক্তিশালী যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে:

Al-Ma'idah 5:75
مَّا ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّيقَةٌۖ كَانَا يَأْكُلَانِ ٱلطَّعَامَۗ ٱنظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ ٱلْءَايَٰتِ ثُمَّ ٱنظُرْ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
Bengali - Bayaan Foundation
মাসীহ ইবনে মারইয়াম একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নয়; তার পূর্বে আরও বহু রাসূল গত হয়েছে, আর তার মা একজন পরম সত্যবাদিনী, তারা উভয়ে খাদ্য আহার করত। লক্ষ্য কর! আমি কিরূপে তাদের নিকট প্রমাণসমূহ বর্ণনা করছি। আবার লক্ষ্য কর! তারা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে?" [9]

▪︎ এই আয়াতটা সুষ্ঠু বিবেক সম্পন্ন মানুষের জন্য জ্বলন্ত এক দৃষ্টান্ত যেখানে বাস্তবিক অর্থে শক্তিশালী যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা ঈসা আঃ কেবলমাত্র একজন মানুষ ছিলেন বিধায় তাঁর বেঁচে থাকার জন্য খাবারের প্রয়োজন পড়েছে অর্থাৎ তিনি যদি সত্যিই ঈশ্বর হতেন তাহলে খাবারের উপর নির্ভরশীল হতে হতো না তাঁকে। এর মানে ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্বের বিরুদ্ধে এটা শক্তিশালী একটা আয়াত। এখন গভীরভাবে একটু চিন্তা করেন কার খাবারের উপর নির্ভরশীল হতে হয়? ঈশ্বর নাকি মানুষের? নিশ্চয়ই ঈশ্বরের খাবারের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তিনি কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নন। অপরদিকে ঈসা আঃ সহ তাঁর মাতা উভয়েই বেঁচে থাকার জন্য খাবারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এর অর্থ তাঁরা ছিলেন দুর্বল মানুষ ঠিক আমাদের মতোই।

আর তাফসীরে বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি খাবারের উপর নির্ভরশীল, সে পৃথিবীর সবকিছুরই মুখাপেক্ষী। মাটি, বাতাস, পানি, সূর্য এবং জীব-জন্তু থেকে সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। পরমুখাপেক্ষীতার এ দীর্ঘ পরম্পরার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা মসীহ ও মারইয়ামের উপাস্যতা খণ্ডণকল্পে যুক্তির আকারে এরূপ বলতে পারি, মসীহ ও মারইয়াম পানাহারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র থেকে মুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়টি চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা ও লোক পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত। আর যে পানাহার থেকে মুক্ত নয়, যে সত্তা মানব-মণ্ডলীর মত স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে বস্তু-জগতের মুখাপেক্ষী, সে কিভাবে আল্লাহ হতে পারে? এ শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট যুক্তিটি জ্ঞানী ও মূর্খ সবাই সমভাবে বুঝতে পারে। অর্থাৎ পানাহার করা উপাস্য হওয়ার পরিপন্থী।" [বাগভী, ইবন কাসীর, সা’দী, আইসারুত তাফসীর]

আবার বাইবেলের মধ্যেও বলা হয়েছে: ঈশ্বর মানুষ না, মানুষ ঈশ্বর না।

গণনা পুস্তক ২৩:১৯
ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন; তিনি মনুষ্য-সন্তান নহেন যে অনুশোচনা করিবেন; তিনি কহিয়া কি কার্য করিবেন না? তিনি বলিয়া কি সিদ্ধ করিবেন না?" [10]

▪︎ বাইবেল অনুযায়ী ঈশ্বর মানুষ হতে পারে না, আবার মানুষ ঈশ্বর হতে পারে না। কিন্তু যীশু খ্রিস্ট ছিলেন মানুষ আবার তিনি নারীর গর্ভে জন্ম পর্যন্ত নিয়েছেন। তাহলে একজন মানুষ কিভাবে ঈশ্বর হতে পারে? এসব-ই ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের মগজে ঢুকে না। আফসোস তাদের জন্য। আর কোরআন ঠিকই বলেছে, যীশু খ্রিস্ট কস্মিনকালেও ঈশ্বর হতে পারে না। কারণ সে মানুষ হিসেবে খাবার গ্রহণ করে।

নোট: মহান আল্লাহ ব্যতীত সকল সৃষ্টি তাঁর উপর নির্ভরশীল। উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআন অনুযায়ী ফেরেশতারা মানুষের রুপ ধারণ করে আসলেও খাবার খায় না (পবিত্র কোরআন ১১:৬৯-৭০)। কারণ তাঁদের খাবারের দরকার হয় না। আল্লাহ্ এমন বৈশিষ্ট্য দিয়েই তাঁদের সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবিনানুসারে স্বয়ং ঈশ্বর নিজেই মানুষরুপ ধারণ করে এসে আবার খাবারও খায়। চিন্তা করছেন পার্থক্যটা? ব্যপারটা অদ্ভুত।

Al-Ma'idah 5:78
لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنۢ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبْنِ مَرْيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফির ছিল, তাদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছিল দাঊদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখে; এই লা’নত এ কারণে করা হয়েছিল যে, তারা অবাধ্য ছিল এবং সীমালংঘন করত।" [11]

▪︎ বর্তমান ইহুদি- খ্রিস্টানরা সত্যিকারের বনি ইস্রায়েলের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব আছে। তো যাইহোক বর্তমান ইহুদি- খ্রিস্টানরা যেহেতু শির্ক-কুফরিসহ বিভিন্ন সীমা লঙ্ঘনে লিপ্ত কাজেই দাউদ এবং ঈসা আঃ এর দ্বারা তারা অভিসম্পাত হয়েছে। এই অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে হলে আপনাদের উচিত শির্ক কুফরি ত্রিত্ববাদ বিশ্বাস ত্যাগ করে মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ইমান এনে ইসলাম গ্রহণ করা অন্যথায় মুক্তি মিলবে না।

Al-Ma'idah 5:116
وَإِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ءَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِى وَأُمِّىَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبْحَٰنَكَ مَا يَكُونُ لِىٓ أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِى بِحَقٍّۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُۥ فَقَدْ عَلِمْتَهُۥۚ تَعْلَمُ مَا فِى نَفْسِى وَلَآ أَعْلَمُ مَا فِى نَفْسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلْغُيُوبِ
Bengali - Mujibur Rahman
আর যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলেঃ তোমরা আল্লাহর সাথে আমার ও আমার মায়েরও ইবাদাত কর? ঈসা নিবেদন করবেঃ আপনি পবিত্র! আমার পক্ষে কোনক্রমেই শোভনীয় ছিলনা যে, আমি এমন কথা বলি যা বলার আমার কোন অধিকার নেই; যদি আমি বলে থাকি তাহলে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে; আপনিতো আমার অন্তরে যা আছে তাও জানেন, পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞানে যা কিছু রয়েছে আমি তা জানিনা; সমস্ত গাইবের বিষয় আপনিই জ্ঞাত।" [12]

Al-Ma'idah 5:117
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَآ أَمَرْتَنِى بِهِۦٓ أَنِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِى كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيْهِمْۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
Bengali - Mujibur Rahman
আমি তাদেরকে উহা ব্যতীত কিছুই বলিনি যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, যিনি আমার রাব্ব এবং তোমাদেরও রাব্ব। আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, অতঃপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই ছিলেন তাদের রক্ষক, বস্তুতঃ আপনিই সর্ব বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন।" [13]

▪︎ উল্লেখ্য যে, আপনি যদি বাইবেলের নতুন নিয়মের মথি, যোহন, লুক এবং মার্কের পুস্তক সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে কস্মিনকালেও দেখবেন না যে, যীশু তাঁর তথাকথিত ক্রসিফিকশনের আগ পর্যন্ত কখনো বলেছে, "আমি ঈশ্বর অথবা তোমরা আমার উপাসনা করো।" এসব কখনোই যীশু তাঁর নিজস্ব উদ্ধৃতিতে ব্যবহার করেননি বরং যা বলেছেন তা হলো তোমরা আমার এবং তোমার ঈশ্বরের উপাসনা করো, তাঁকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে গ্রহণ করো, সকল কিছুই তাঁর কাছে চাও, তাঁর আদেশ- নিষেধ মেনে চলো এবং আমাকেও বিশ্বাস করো।" এই জাতীয় কথাগুলো আপনি বারংবার পাবেন বাইবেলের নতুন নিয়মের চারটা পুস্তকের মধ্যে যদিও যীশুর নামে অনেক অতিরঞ্জিত বানোয়াট কথা রয়েছে তাতে। কিন্তু ভুলেও এটা পাবেন না যেখানে সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছেন, "আমি ঈশ্বর এবং আমার উপাসনা করো।" সুতরাং কোরআন যে প্রমাণগুলো দিয়েছে তা খোদ খ্রিস্টানদের বাইবেলের মধ্যেও উপস্থিত প্রমাণ রয়েছে।

সিদ্ধান্ত: পবিত্র কোরআনের আলোকে যীশু তথা ঈসা আঃ এর ঈশ্বরত্ব কস্মিনকালেও সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয় বরং তাঁর ঈশ্বরত্বের যে দাবি ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ করে থাকেন তা খন্ডন করা হয়েছে। অপরদিকে বাইবেলের আলোকেও কস্মিনকালে যীশুকে খোদ খ্রিস্টানগণ সকলে মিলেও সুষ্ঠুভাবে যীশুর ঈশ্বরত্ব দাবির পক্ষে পরিপূর্ণ যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে না; যেটাই তারা উপস্থাপন করুক না কেন তা পরিপূর্ণ হবে না বরং সেসবের বিরুদ্ধে উল্টো বাইবেল থেকেই খন্ডন করা যাবে। এর মানে পবিত্র কোরআন যে দাবিতে স্থির তার প্রমাণ খোদ বাইবেল থেকেই নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু এইখানে বিপদে পড়লে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ-ই পড়বে। কারণ তারা না পারবে যীশুর ঈশ্বরত্বের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ উপস্থাপন করতে আর না পারবে আমাদের প্রমাণ খন্ডন করতে। পথ একটাই, একনিষ্ঠ হয়ে গভীরভাবে গবেষণা করার মাধ্যমে প্রকৃত সত্য গ্রহণ করা। তার গভীর গবেষণা, চিন্তা-ভাবনাই তাকে উদ্বুদ্ধ করবে ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে। অবশেষে কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে লেখাটি সম্পূর্ণ করি।

Aal-e-Imran 3:64
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَآءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِۦ شَيْـًٔا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقُولُوا۟ ٱشْهَدُوا۟ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
Bengali - Mujibur Rahman
তুমি বলঃ হে আহলে কিতাব! আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে যে বাক্যে সুসাদৃশ্য রয়েছে তার দিকে এসো, যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদাত না করি এবং তাঁর সাথে কোন অংশী স্থির না করি এবং আল্লাহকে পরিত্যাগ করে আমরা পরস্পর কেহকে রব্ব রূপে গ্রহণ না করি। অতঃপর যদি তারা ফিরে যায় তাহলে বলঃ সাক্ষী থেকো যে, আমরা মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমপর্নকারী)।" [14]

সর্বোপরি মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিক বোঝার মতো তাওফিক দান করুক এবং হেদায়েত নসীবে রাখুক। আমীন 

তথ্যসূত্রঃ-
➤[01] আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران ৩:৫৯
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=352
➤[02] সূরাঃ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران ৩:৮৪
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=377
➤[03] সদাপ্রভু ঈশ্বর একজন ব্যতীত দ্বিতীয় কেউই নেই; সেখানে ত্রিত্ববাদের থিওরিটা মিথ্যা প্রমাণিত হয় ওল্ড টেস্টামেন্টের আলোকে।
[ইসাইয়া/যীশাইয় ৪০:১৮,২৫,২৮; ৪৩: ১, ৩, ৭, ১০,১১,১২,১৩,১৫,২১; ৪৪:২,৬-৭,৮,২১,২৪; ৪৫:৩,৫,৬,৭,৮,১১,১৮,১৯,২১,২২; ৬৪:৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৫,৩৯; ৬:৪,৫,১০; ১৩:৪; ৩২:৩৯; লেবীয় পুস্তক ১৯:২, ৩,৪,১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২৫,২৮,৩০,৩১,৩২,৩৪,৩৬,৩৭; গীতসংহিতা/সামসংগীত ৮৩:১৮; ৮৬:৮,১০ সহ অসংখ্য ভার্স অর্থাৎ পুরাতন নিয়মের ভেতরে ত্রিত্ববাদের বালাই গন্ধ নেই একবারে।]
➤[04] সূরাঃ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:১৭ "তারা কুফরী করেছে যারা বলে মাসীহ্ ইবনে মারইয়ামই আল্লাহ...।"
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=686
➤[05] সূরাঃ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:১৮
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=687
➤[06] সূরাঃ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:৭২
"নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়েছে যারা বলে - মসীহ ইবনে মারইয়ামই আল্লাহ। অথচ মসীহ্ নিজেই বলেছিলঃ হে বানী ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর! 
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=741
➤[07] মার্ক ১২:২৮-৩৪; যীশু বললেন,"হে ইস্রায়েল! আমার আর তোমাদের ঈশ্বর একজন। তোমরা তাঁর-ই ইবাদত করো।"
https://bible.com/bible/1791/mrk.12.28-34.ROVU
(প্রায় একই কথা বলা হয়েছে মথি ২২:৩৪-৩৮ পদে)
https://bible.com/bible/1791/mat.22.34-40.ROVU
এই সেম কথা পুরাতন নিয়মের মধ্যেও আছে। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৫
https://bible.com/bible/1791/deu.6.4-5.ROVU
➤[08] আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:৭৩ https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=742

➤[09] আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:৭৫ "মারইয়াম পুত্র মাসীহ কেবল একজন রাসূল"
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=744
➤[10] গণনা পুস্তক ২৩:১৯; ঈশ্বর মানুষ না
https://bible.com/bible/1791/num.23.19.ROVU
➤[11] আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:৭৮
কাফেরদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে দাঊদ ও ঈসা আঃ থেকে
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=747
➤[12] আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:১১৬
ঈসা আঃ এবং মহান আল্লাহর মাঝে কথোপকথন
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=785
➤[13] আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة ৫:১১৭ "আল্লাহর কাছে ঈসা আঃ এর বক্তব্য "
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=786
➤[14] আলে-ইমরান ৩:৬৪ "ইহুদি- খ্রিস্টানদের আহ্বান করা"
https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=357