﷽
অনেক ইসলাম বিরোধীদের দাবি নিচে উল্লেখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিস নাকি পরস্পর বিরোধী !
[আল-আন‘আম ৬:১৬৪]
قُلْ أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِى رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَىْءٍۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
তুমি জিজ্ঞেস করঃ আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য রবের সন্ধান করব? অথচ তিনিই হচ্ছেন প্রতিটি বস্তুর রাব্ব! প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে, কেহ কারও কোন বোঝা বহন করবে না, পরিশেষে তোমাদের রবের নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে, অতঃপর তিনি তোমরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করেছিলে সে বিষয়ের মূল তত্ত্ব তোমাদেরকে অবহিত করবেন।◈
Say, ˹O Prophet,˺ “Should I seek a lord other than Allah while He is the Lord of everything?” No one will reap except what they sow. No soul burdened with sin will bear the burden of another. Then to your Lord is your return, and He will inform ত of your differences.◈
▪️▪️▪️
ইবনু ‘উমার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহﷺ বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহﷻ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয়না)। (নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬। )
▪️▪️▪️
💠 এরকম আরো কয়েকটি আয়াত ও হাদীস রয়েছে ।
◻️অভিযোগের জবাব:
এখানে অভিযোগ হলো আল্লাহﷻ বলেছেন কেউ অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না , আবার হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন বেপর্দা নারীর পাপের কারনে ঐ নারীর অভিভাবক যাকে ইসলামিক পরিভাষায় দাইয়ূস(১) বলে আখ্যায়িত করা হয়, সে জাহান্নামী, অথচ এটা পরস্পর বিরোধী ! এখানে নাকি দুই রকমের কথা !
আসলে কি বিষয়টি তাই ?
না বিষয়টি মোটেও এরকম নয় বরং দাইয়ূস ব্যক্তি নিজের দায়িত্বহীনতার কারণেই দোষী, কারণ সে তার অধিনস্থ নারী কে সঠিক শিক্ষা দেয়নি, বেপর্দায় চলা ও ব্যাভিচারের প্রতিবিধান করেনি ।
আসলে যে অন্যায় করে, যে অন্যায় কাজে বাধা দেয় না, যে অন্যায় কাজে সহায়তা করে আর যে অন্যায় কাজে উৎসাহ দেয় তারা প্রত্যেকেই অপরাধী ।
একজন পুলিশের সামনে চুরি হলে পুলিশ যদি বাধা না দেয় সেটা যেমন ঐ পুলিশের অপরাধ , তেমনিভাবে একজন দাইয়ূস ব্যাক্তির জন্য তার অধিনস্থ নারীদের বেপর্দায় চলতে বাধা না দেয়াটা ঐ দাইয়ূসের জন্য অপরাধ । আল কুরআনের সুরা ৬:১৬৪ ও আলোচ্য হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী,
দায়ূস ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন না করার অপরাধের বোঝা বহন করবে , আর বেপর্দা নারী বহন করবে তার নিজের পাপের বোঝা । অর্থাৎ প্রত্যেকেই নিজ নিজ অংশের পাপের বোঝা বহন করবে, অন্যের অংশ নয় ।
এমনিভাবে অভিভাবক বা কর্তৃত্বশীল ব্যাক্তি অথবা কর্তৃপক্ষ যদি তাদের অধিনস্থদেরকে পাপ করতে বাধা না দেয় তবে দায়িত্ব পালন না করার জন্যে তারাও অপরাধী হবে ।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে আলোচ্য আয়াত ও হাদীসের মধ্যে কোন ধরনের বৈপরীত্য নেই । পুরোটাই অভিযোগকারীর বোঝার ভুল ।
মুসলিদের কোন ধর্মীয় গ্রন্থে সহীহ বর্ণনাতে কোন ধরনের পরস্পর বিরোধী কথা নেই , পুরোটাই অভিযোগকারীদের বোঝার ভুল ।
(الحمد لله)
_____________________
(১)
◻️দাইয়ূস (اَلدَّيُّوْث) –এর সংজ্ঞা ও পরিচিতি :
💠 দাইয়ূস (اَلدَّيُّوْث) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলোঃ অসতী, বেহায়া, বেশরম, নির্লজ্জ, বিবেকহীন, আত্মমর্যাদাহীন ইত্যাদী।
💠 দাইয়ূস (اَلدَّيُّوْث) শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলোঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যিনা-ব্যাভিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম ভালো মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
◻️দাইয়ূস (اَلدَّيُّوْث) -এর পরিচয় :
নিজের স্ত্রী,মা,বোন কিংবা মেয়ে সম্পর্কে যার কোন গাইরাত(protective jealousy) নেই;
যে নিজের স্ত্রীকে কিংবা তার দায়িত্বশীল পরিবারের মেয়েদের পর পুরুষকে দেখিয়ে আনন্দ পায় কিংবা পরপুরুষের সামনে যেতে কোন ধরণের বাধা দেয় না সেই ব্যক্তিই দাইয়ূস।
আর দাইয়ূস ব্যক্তি জান্নাতে তো যাবেই না; জান্নাতের সুঘ্রাণ ও পাবে না। তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি আল্লাহﷻ তাদের দিকে তাকিয়ে ও দেখবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেনী হচ্ছে দাইয়্যুস ব্যক্তি; যাদের দিকে আল্লাহ তাকিয়েও দেখবেন না।(মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহﷻ বলেন,
[আন নিসা ৪:৩৪ প্রাসঙ্গিক অংশ]
"আর পুরুষেরা নারীদের রক্ষক ও ভরন-পোষন প্রদানকারী"
“The men are the protectors and maintainers of women”
💠 রাসূল (ﷺ) বলেছেন ,
اَلدَّيُّوْثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
"দাইয়ূস এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।"
[আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩]।
💠অন্য বর্ণনায় এসেছে,
اَلدَّيُّوْثُ الَّذِي يُقِرُّ السُّوْءَ فِيْ أَهْلِهِ
"দাইয়ূস এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও খারাপ কর্মসমূহ মেনে নেয়।"[বায়হাক্কী]
💠অন্য বর্ণনায় এসেছে,
اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ
বেহায়া বা দাইয়ূস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করেনা বাইহাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ১০৮০০]।
💠 ইবনুল কাইয়্যূম(رَحِمَكَ اللّٰهُ) বলেন,
اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُغَارُ عَلٰى مَحَارِمِهِ مِنَ النِّسَاءِ
"দাইয়ূস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে উদাসীন, বিবেকহীন, দায়িত্ববোধহীন, আত্মসম্মানহীন ও আত্মমর্যাদাহীন।"
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচাইতে নিন্মশ্রেনীর হচ্ছে দাইয়ূস ব্যক্তি, আর তার জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। কারণ তার মধ্য থেকে গাইরাত বোধ হারিয়ে গেছে। এছাড়া মুসলিম পুরুষদের উম্মাহর মুসলিমাহদের ব্যাপারে গাইরাত বোধ থাকা প্রয়োজন। স্বামীর উচিৎ তার স্ত্রীর সম্মানের ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা, স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা । এটা তার অন্যতম দায়িত্ব যে, তার সামনে কেউ যদি তার স্ত্রীর নিন্দা করে কিংবা তার স্ত্রীর সম্পর্কে কটু কথা বলে সে তাকে প্রতিরোধ বা ডিফেন্ড করবে!
যদিও এটা প্রতিটি মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমাহর অধিকার ।কিন্তু এই সম্মানটুকু প্রতিটি স্ত্রীর তার স্বামীর কাছে বিশেষভাবে প্রাপ্য।
একজন দায়িত্বশীল স্বামী কখনো তার স্ত্রীকে বেগানা পুরুষের সামনে যেতে, কথা বলতে বাধ্য করবে না । কিংবা তার স্ত্রী, মা বোন এর সাথে অন্য কারো এমন আচরণ সহ্য করবে না যেটা তার আত্মসম্মানবোধে লাগে।”
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে যিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অশ্লীল, গর্হিত-ঘৃণিত, বেহায়াপনা-বেলেল্লপনা, শাস্তিযোগ্য পাপাচার মূলক আচার-আচরণসহ ইসলামী শরীয়াহ ও সমাজ বিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে না, বাধা দেয় না; উপরন্তু সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং বোবা শয়ত্বানের ন্যায় বধির ও অন্ধের মতো চোখবুজে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে আর তাদের অবাধ বিচরণে ও তাদের হীন চরিতার্থ করণার্থে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হস্তদ্বয় প্রসারিত করেন সেই দাইয়ূস। অবহেলা করে উল্লেখিত দায়িত্ব সমূহ পালন না করলেও ব্যক্তি দাইয়ূস হিসেবে বিবেচিত হবে ।
◻️আল-কুরআনে দাইয়ূস (আত্মমর্যাদাহীন) -এর ভয়াবহ পরিণতির সম্পর্কে আলোকপাত :
💠জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ও আগুন থেকে আত্মরক্ষা ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করার আদেশ :
[সূরা তাহরীম ৬৬: ০৬]
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا قُوٓا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا
يُؤْمَرُونَ
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগুন হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় কঠোর স্বভাবের মালাইকা (ফেরেশতা), যারা অমান্য করেনা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা’ই করে।◈
O believers! Protect yourselves and your families from a Fire whose fuel is people and stones, overseen by formidable and severe angels, who never disobey whatever Allah orders—always doing as commanded.◈
আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় :
এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায় যে, নিজেদেরকে সংস্কার ও সংশোধন করার সাথে সাথে পরিবারের লোকদেরকেও সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে এবং তাদেরকে ইসলামী শিক্ষা ও তরবিয়ত দেওয়ার প্রতি যত্নবান হতে হবে। যাতে তারা জাহান্নামের জ্বালানী হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
‘প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।যে শাসক ও দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্থ লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ি এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে’। [সহিহ বুখারী: ৮৯৩, ৫১৮৮]।
💠যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি,
[সূরা নূর;২৪:১৯]
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلْفَٰحِشَةُ فِى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ্ জানেন, তোমরা জানো না।◈
Indeed, those who love to see indecency spread among the believers will suffer a painful punishment in this life and the Hereafter. Allah knows and you do not know.◈
আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় :
فَاحِشَةٌ (ফাহিশা) নির্লজ্জতা অশ্লীলতা। তবে কুরআনে ব্যভিচারকেও فًاحِشَة (অশ্লীলতা) বলে গণ্য করা হয়েছে। [সূরা ইস্রাঈল : ৩২]।
আর এখানে ব্যভিচারের একটি মিথ্যা খবর প্রচার করাকেও আল্লাহ অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছেন এবং একে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির কারণ হিসাবে গণ্য করেছেন।
মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার করা হারাম।প্রচারকারীদের মূল উদ্দেশ্য হল মু’মিনদেরকে কষ্ট দেয়া এবং তাদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার করা। যারা এরকম জঘন্য কথা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি (হদ) এবং পরলৌকিক শাস্তি জাহান্নামে দেয়া হবে।
হাদীসে এসেছে :
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) বলেন : তোমরা আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে কষ্ট দিও না। এবং তাদের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করো না। যে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করবে আল্লাহও তার গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করবেন এবং তাকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করবেন যে, তাকে তার বাড়ির লোকেরাও খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে। [মুসানাদ আহমাদ ৫/২৭৯]।
💠রাসূলﷺ-এর হাদীসে দাইউস (বেহায়া, আত্মমর্যাদাহীন)- এর ভয়াবহ পরিণতির সম্পর্কে আলোকপাত
💠 মু‘মিনকে সর্বদা আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হতে হবে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْمُؤْمِنُ يَغَارُ وَاللهُ أَشَدُّ غَيْرًا
আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন : মুমিন আত্মমর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়। আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। [সহীহ মুসলিম ৬৭৪৩ (ই. ফা), ৬৮৯২ (হা. এ), ২৭৬১ (শামিলা ও সুন্নাহ.কম), ৬৭৯৯ (ই. সে)]।
💠 ইসলামী শরী‘আয় প্রকাশ্য ও গোপনীয় (যাবতীয়) অশ্লীলতাকে হারাম করা হয়েছে,
عَنِ الْمُغِيرَةِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ لَوْ رَأَيْتُ رَجُلاً مَعَ امْرَأَتِي لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ، فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : تَعْجَبُونَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ، وَاللهِ لأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللهُ أَغْيَرُ مِنِّي، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلاَ أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللهِ، وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ الْمُبَشِّرِينَ وَالْمُنْذِرِينَ وَلاَ أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللهِ وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللهُ الْجَنَّةَ
মুগীরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (رضي الله عنه) বললেন, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে সরাসরি তরবারি দিয়ে হত্যা করব। একথা রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন : তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে বিস্মিত হচ্ছো? আল্লাহর শপথ! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। আর আল্লাহ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। আল্লাহ্ আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হবার কারণে প্রকাশ্য ও গোপনীয় (যাবতীয়) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহর চেয়ে অধিক পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এজন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ দাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মপ্রশংসা আল্লাহর চেয়ে অধিক কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। [সহিহ বুখারি ৭৪১৬ (তা. পা, শামিলা ও সুন্নাহ.কম), সহিহ মুসলিম ১৪৯৯, আহমাদ ১৮১৯২১, ৬৯১১ (ই. ফা), ৬৮৯৯ (আ. প্র)]।
💠পরিবারের সদস্যদের মান-সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা আবশ্যকীয় কর্ম, আর এহেন কর্মে কেউ নিহত হলে সে শাহাদাতের মর্যাদা ও অমিয়সূধা পানে ধন্য হবেন মর্মে রাসূলﷺ-এর হাদীস,
عَنْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ قُتِلَ دُوْنَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ دِيْنِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ
সাঈদ ইবনু যাইদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি তারসম্পদ রক্ষার্থে নিহতহয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবারের মানসম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তারদ্বীন-ধর্মরক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার আত্ম রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। [আবূ দাউদ ৪৭৭২, তিরমিযী ১৪১৮, ১৪২১, নাসায়ী ৪০৯০, ৪০৯১, ৪০৯৪, ইবনু মাজাহ ২৫৮০, আহমাদ ১৬৩১ ও ১৬৩৬, বুলুগুল মারাম ১২৫৬ (তা. পাব)]।
💠 জান্নাতের অধিবাসী হতে পারবেনা যারা,
إِنَّ اللهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالٰى لَمَّا خَلَقَ الْجَنَّةَ قَالَ وَعِزَّتِيْ وَجَلاَلِيْ لَا يَدْخُلُكِ بَخِيْلٌ وَلَا كَذَّابٌ وَلَا دَيُّوْثٌ
নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তখন, জান্নাতকে বলেছেন : আমার সম্মান-গৌরব ও পরাক্রমশালীর শপথ, কৃপণ , মিথ্যাবাদী এবং দাইয়ূস(বেহায়া, নির্লজ্জ, আত্মমর্যাদাহীন, অসতী) ব্যক্তিগণ তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে না। [সনদ সহিহ। নাসাঈ, যাকাত অনুচ্ছেদ ২৫৬২, আহমাদ ২/১৩৪, মাজমু‘আতুল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যা ১/২১ এবং ৩২/১২, ইয়াহইয়া উলুমুদ্দীন, ইরাক্বী ০৭, বায়হাক্বী, আল-আসমাউ ওয়াস সিফাত ৬৯২, শায়খ আহমাদ শাকির ৬১৮০]।
শেষ করবো ইবনুল কাইয়্যূম (رَحِمَكَ اللّٰهُ) একটি অসাধারণ উক্তি দিয়ে,তিনি বলেন-
“যদি গাইরাত মানুষের হৃদয় ত্যাগ করে চলে যায়, তবে সে হৃদয় থেকে ঈমানও হারিয়ে যাবে”