Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

মৃতের জন্য কাঁদতে নিষেধ করেছে মুহাম্মদ(ﷺ)। কত নিষ্ঠুর তার ধর্ম।  অজ্ঞতাপ্রসূত অভিযোগের উপযুক্ত জবাব ।

জ্ঞতাপ্রসূত অভিযোগ:

মৃতের জন্য কাঁদতে নিষেধ করেছে মুহাম্মদ()। কত নিষ্ঠুর তার ধর্ম।

 

উপযুক্ত জবাব:

দেখুন হাদিসে বলা হয়েছে--  

" আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল () চেহারা ক্ষতবিক্ষতকারিণী, বক্ষদেশের জামা ছিন্নকারিণী, ধ্বংস ও মৃত্যু কামনাকারিণী ও শোকগাথার আয়োজনকারিণীকে অভিসম্পাত করেছেন "  ইবন মাযাহ ১৫৮৫; সাহীহাহ ২১৪৭ (সনদ সহীহ )  

 

"আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ () বলেছেনঃ ‘’দুটি আওয়াজ দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত। একটি হল- খুশির সময় গান-বাজনার আওয়াজ, অপরটি হল- বিপদের সময় উচ্চস্বরে ক্রন্দনের আওয়াজ "  হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা নঃ ৪৪২; আলী আল-মুত্তাকি, কানযুল উম্মাল ৪০৬৬১, ৪০৬৭২; মুসনাদুল বাযযার ৮৯৭ (শব্দের কিছু ভিন্নতা সহ। বাযযার রাবীদের বিশ্বস্ত বলেছেন)

 

উল্লেখিত বর্ণনা অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই নারীদের উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে নিজেদের বক্ষের কাপড় ছিড়ে ফেলাকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বিলাপ করে নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করা ও পোশাক খুলে ফেলা কি গ্রহণযোগ্য কাজ? এবার দেখুন রাসুল() বিভিন্ন সময় মৃতের জন্য কান্না করেছেন তার প্রমাণ নিচে দেখানো হলো । 

 

🌸 যে সকল বর্ণনায় বলা হয়, মহানবী () মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন :

 

  ১। সাদ ইবনে উবাদার (রা:) অসুস্থতায় মহানবীর () ক্রন্দন:

সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ সাদ ইবনে উবাদা অসুস্থ হয়েছিলেন। আল্লাহর রাসূল () তাকে দেখার জন্য আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ও অব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে নিয়ে তার সাক্ষাতে গেলেন। সাদা ইবনে উবাদার শিয়রে পৌঁছলে তিনি বেহুস হয়ে পড়লেন। মহানবী () জিজ্ঞাসা করলেনঃ সে কি মৃত্যু বরণ করেছে ? কেউ বললেনঃ না, হে আল্লাহর রাসুল () । মহানবী () ক্রন্দন করলেন। রাসূল () -এর ক্রন্দন দেখে লোকজন ও কাঁদতে লাগলেন। তিনি () বলেনঃ ওহে তোমরা কি শুনতে পাওনা ? মহান আল্লাহ চোখের জলের উপর শাস্তি দেননা বা দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের উপরও শাস্তি দেননা। কিন্তু এর ( নিজ জিহবার দিকে ইঙ্গিত করে) জন্য শাস্তি কিংবা পুরস্কার দেন।

অর্থাৎ কেবলমাত্র উচ্চস্বরে বিলাপ ও কুফরী আচার আচরণ ও শব্দ উচ্চারণের কারনে মানুষ শাস্তি পায় ।

 

২। পুত্র ইব্রাহীমের জন্য মহানবীর () ক্রন্দন:

সাহীহ বোখারী, সাহীহ মুসলিম, সুনানে ইবনে দাউদ ও সুনানে ইবনে মা‘জায় আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, "আল্লাহর রাসূলের () সাথে প্রবেশ করলাম -- ইব্রাহীম মৃত্যু পথ যাত্রী ছিল। মহানবীর চোখ অশ্রুসজল হল। আব্দুর রহমান বিন আউফ বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল ()  আপনিও ? ' তিনি () বলেন, "হে আউফের পুত্র ! এটা হল রহমত।' অতঃপর আরো বলেন,  '( তুমি কি ঠিক দেখতে পাচ্ছ? ) আমাদের নয়ন ক্রন্দনরত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, কিন্তু কখনোই যা কিছু মহান আল্লাহকে তুষ্ট করে তা ব্যতীত অন্য কিছুই মুখে আনবনা । হে ইব্রাহীম ! সত্যিই আমরা তোমার বিরহে ব্যাথাতুর।' "

এ বর্ণনাটি সুনানে ইবনে মাজায় এরূপ ভাবেও বর্ণিত হয়েছে:

আনাস বিন মালেক বলেন, "যখন রাসূলের () পুত্র ইব্রাহীম মৃত্যু বরণ করেন তখন তিনি () উপস্থিত লোকদেরকে বলেন,  'তাকে (রা:) কাফনে ঢেকে দিও না ( শেষ বারের মত ) তাকে দেখব।' এরপর তার শিয়রে এলেন ও তার উপর ঝুঁকে পড়ে তিনি () ক্রন্দন করলেন।" 

সুনানে তিরমিযিতে বর্ণিত হয়েছে:

জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন,

"মহানবী () আব্দুর রহমান ইবনে আউফের হাত ধরে , তার সাথে নিজ পুত্র ইব্রাহীমের মাথার নিকট আসলেন এবং মৃত্যু পথযাত্রী পুত্রকে কোলে তুলে নিলেন এবং ক্রন্দন শুরু করলেন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বললঃ আপনি কি কাঁদছেন ? আপনি কি ক্রন্দন করতে নিষেধ করেন নি ?! তিনি () বললেন: “না’ আমি দু’দল পাপাচারী গর্দভ ও নির্বোধের আর্তনাদ ও আর্তচিৎকারে বাধা দিয়েছিলাম: যারা মুসিবতের সময় মুখ আঁচড়ায় এবং জামার কলার ছিড়ে ফেলে ও শয়তানী ক্রন্দনে লিপ্ত হয়।,'  "

 

অর্থাৎ উল্লেখিত আলোচনাতে পরিষ্কার হলো যে, পাপাচার ও কুফরী বক্তব্য এবং উচ্চস্বরে বিলাপ, নিজের জামাকাপড় ছেড়া শরীর বিকৃত করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, উন্মাদনা ইত্যাদি অস্বাভাবিক ও বাড়াবাড়ি  ব্যতিরেকে সাধারণভাবে,  ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ বৈধ ।‌ 

 

৩। স্বীয় নাতির জন্য মহানবীর () ক্রন্দন:

সাহীহ বোখারীতে , সাহীহ মুসলিমে, সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে নাসাঈয়ে বর্ণিত হয়েছে:

মহানবীর () কন্যা তাঁর জন্য সংবাদ পাঠালেন যে, "আমাদের কাছে আসেন। আমার একটি ছেলে মৃত্যু পথযাত্রী ।" মহানবী () উঠে দাঁড়ালেন এবং সা’দ ইবনে উবাদা এবং সাহাবীদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে তাদের নিকট এলেন। মৃত্যু পথ যাত্রী শিশুকে হযরতের () নিকট নিয়ে আসলেন। মহানবীর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল । সা’দ বললো, 'হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা কী দেখতে পাচ্ছি ?' মহানবী () বলেন “ এটা হলো সেই রহমত ও মমতা যা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপন করেছেন। আর মহান আল্লাহ একমাত্র নিজের দয়ালু ও মেহেরবান বান্দদেরকেই রহমত ও ক্ষমা করে থাকেন।'

অর্থাৎ সাধারণ ভাবে নম্র ও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে শোক প্রকাশ করা বৈধ  শুধু তা ই নয় বরং এধরনের মমতা  ও শোক আল্লাহর পক্ষ থেকে আশির্বাদ ।‌

 

৪।নিজ চাচা হযরত হামযার জন্য মহানবীর () ক্রন্দন:

তাবাকতে ইবনে সাদ, মাগযীয়ে ওয়াকেদী, মুসনাদে আহমদ ও মাকতাবে খোলাফার অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছে:

আল্লাহর রাসূল ()-ওহুদ যুদ্ধের পর- যখন আনসারদের ঘর থেকে তাদের শহীদদের জন্য ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পেলেন তখন রাসূলের () চোখ ও অশ্রুসজল হলো। রাসূল () কেঁদে বললেন, "কিন্তু হামযার জন্য তো কোন ক্রন্দনকারী নেই !" সা’দ ইবনে মায়ায একথা শুনতে পেলেন এবং বনি আব্দুল আশহালের নারীদের নিকট ছুটে গেলেন। তিনি তাদেরকে (মহানবীকে () সমবেদনা জানানো ও হামযার জন্য ক্রন্দন করতে ) আহবান জানালেন। মহানবী () তার জন্য দোয়া করলেন এবং তাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। এ ঘটনার পর আনসারদের কোন নারীই ক্রন্দন করতনা যদি না আগে হামযার জন্য কাঁদত এবং তারপর নিজেদের মৃতদের জন্য কাঁদত।  

 

৫। মুতার যুদ্ধে শহীদদের জন্য মহানবীর () ক্রন্দন:

সহীহ বোখারীতে বর্ণিত হয়েছে,

মহানবী () যায়িদ, জাফর ও ইবনে রাওহা ( কিরূপে শহীদ হবেন) শহীদ হওয়ার পূর্বেই তাদের শাহাদাতের খবর মানুষকে দিয়েছিলেন। তিনি () বলেন, "যায়িদ পতাকা তুলে নিলেন, আঘাত পেলেন ও শহীদ হলেন! অতঃপর জা’ফর পতাকা তুলে নিলেন। তিনি ও শহীদ হলেন! অতঃপর ইবনে রাওহা পতাকা তুলে নিলেন ও শহীদ হলেন।" মহানবী () এ কথাগুলো বলছিলেন যখন তার আঁখিযুগল থেকে অশ্রুধারা বইছিলো।

 

৬। জাফর ইবনে আবি তালিবের জন্য মহানবী ()-এর ক্রন্দন:

ইসতিয়াব, উসদুল গাবা, আসাবা, তারিখে ইবনে আসির এবং অন্যান্য পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে যে,

( সংক্ষেপ) যখন জাফর এবং তাঁর সাহীরা শহীদ হলেন মহানবী () তাঁর গৃহে গেলেন ও তার সন্তানদেরকে ডাকলেন। তিনি () (অশ্রুসিক্ত অবস্থায়) জাফরের সন্তানদের সুগন্ধ নিলেন (ও মাথায় হাত বুলালেন)। জাফরের স্ত্রী আসমা বললেন, "আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, কিসে আপনাকে () কাঁদালো ? জাফর ও তাঁর বন্ধুদের কোন খবর কি আপনার নিকট পৌঁছেছে?" তিনি () বললেন, " হ্যাঁ, আজ তাঁরা শহীদ হয়েছেন।” আসমা বললেন, "আমি উঠে দাঁড়ালাম ও আর্তনাদ করলাম ও অন্যান্য মহিলাদেরকে একত্র করে ফাতেমার ঘরে গেলাম, দেখলাম ফাতেমা কাঁদছে এবং বলছে, 'হায় আমার চাচা!' আল্লাহর রাসূল () (এ অবস্থা দেখে) বললেন, 'প্রকৃতপক্ষে ক্রন্দনকারীরা জাফরের জন্য কাঁদার মত করে কাঁদা উচিৎ।' [অর্থাৎ নিচু স্বরে বিলাপ ও কুফরী শব্দ ব্যাতিরেখে ।] "

 

৭। নাবী মাতা অমিনার মাযারে মহানবী () ও সাহাবীদের ক্রন্দন:

সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবি দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাযা বর্ণনা করেন, 

"আবু হুরইরা বলেন, 'মহানবী () তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করলেন এবং আশেপাশের সকলকে কাঁদালেন।' "  

 

এরপরেও কি বলা যায় ইসলাম মৃতের জন্য কান্না করতে নিষেধ করে? মূলত ইসলাম কান্না করতে নিষেধ করেনা বরং শোকের নামে অশালীন কাজকেই নিষেধ করে।

আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।