Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

স্রষ্টা ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব! (স্রষ্টার অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ)

(সংগৃহীত লেখা)

প্রতিনিয়ত নাস্তিকদের কাছ থেকে শুনা যায় স্রষ্টা বলতে কেউ নেই সবই মানব মনের কল্পনা। মাঝে মাঝে বিশ্বাসীদের মনেও উঁকি দেয় "স্রষ্টা কি আসলেই আছে?" 

 

আমি তাদের প্রশ্ন করি স্রষ্টা ছাড়া কি আদৌও সৃষ্টি সম্ভব এই মহাবিশ্ব আর সকল প্রাণের?

 

এই পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছে অসংখ্য প্রাণী । কেউ জলে, কেউ স্থলে আবার কেউবা বিচরণ করে আকাশে। তাদের কেউ দুই পায়ে, কেউ চার পায়ে, কেউ বহু পায়ে আবার কেউবা চলে ডানায় ভর করে !

 

কিভাবে শুরু হয়েছিল এইসব প্রাণের?

এক্ষেত্রে আমাদের কাছে দুটি বিকল্প থাকে:

১. এমনি এমনি কারো নিয়ন্ত্রণ ছাড়ায় প্রথমে একটি প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে তার  পর বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বাকী সকল জীবের।

২. কোন এক মহান কারিগর সুনিপুণ পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে  সৃষ্টি করেছেন সকল প্রাণ ও সমগ্র মহাবিশ্ব।

যেকোন কিছুর প্রমাণের জন্য আমরা বিজ্ঞানের আশ্রয় নেই।

বিজ্ঞান কি সকল ক্ষেত্রে আমাদের সকল প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে সক্ষম? 

 

সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানি হকিং তার "A Brief History of Life" বইতে লিখেছেন,

" হয়তো কোটি কোটি বছর আগে পানিতে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি । তারপর সেই এক কোষী প্রাণ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকোষী প্রাণের সৃষ্টি হয়।"

'হয়তো' শব্দটি ব্যাবহার করে তিনি যা বলেছেন তা শুধুমাত্র তাঁর ধারণা ! 

 

প্রশ্ন হচ্ছে এই বক্তব্য কি আদৌও গ্রহণযোগ্য?   আচ্ছা বিজ্ঞানিরা কি আজ পর্যন্ত কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টিতে সফল হয়েছে? 

 

আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক ল্যাবরেটরিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানিরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করেও যদি কৃত্রিম প্রাণের সৃষ্টি না করতে পাড়ে তবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও বিরূপ পরিবেশে কিভাবে প্রাণের সৃষ্টি হলে কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া?

ধরেনিলাম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল নিয়ন্ত্রক ছাড়াই!  সেই এককোষী প্রাণ থেকে কি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর সৃষ্টি সম্ভব?

জবাব হচ্ছে "না" কখনোই সম্ভব নয়। 

 

যদি স্রষ্টা ছাড়া প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই একজন স্রষ্টা রয়েছে যিনি অসীম মমতায়, অত্যন্ত সুক্ষ পরিকল্পনায় গঠন করেছেন এই মহাবিশ্ব, সৃষ্টি করেছেন সকল প্রাণ!

 

 একটু বিশ্লেষণে যাচ্ছি ! প্রাণীদেহের অন্যতম নিয়ামক কোষ বা Cell।  কোষ সম্পর্কে প্রথম সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় ১৯৩৯ সালে জার্মান প্রানীবিদ থিওডোর শোয়ানের [ ˈteːodoːɐ̯ ˈʃvan] (৭ ডিসেম্বর ১৮১০ – ১১ জানুয়ারি ১৮৮২) কাছ থেকে।

চিত্র: জীব কোষ । 

এর আগে কোষের সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের প্রতিস্ঠিত কোন সুস্পষ্ট ধারনা ছিল না । প্রতিটি কোষের মূল উপাদান হচ্ছে প্রোটিন ( Protein )।

প্রোটিন হচ্ছে কোষের প্রোটোপ্লাজমের মূল উপাদান এবং সকল উদ্ভিদও প্রানি দেহে এটি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। আবার প্রোটিন হল অসংখ্য অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত বৃহদাকার যৌগিক জৈব অনু। এই অ্যামিনো এসিড গুলি প্রোটিনের ভিতরে শুধু পেপটাইড নামক এক প্রকার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। একটি অ্যামিনো এসিডের কার্বোক্সিল মূলক ( COOH-) অপর একটি অ্যামিনো এসিডের অ্যামিনো গ্রুপের সাথে (NH) যে বন্ধনে যুক্ত থাকে তাকে পেপটাইড বন্ধন বলে। কোষের বাইরে এইঅ্যামিনো এসিড গুলি আরো অনেক বন্ধনে যুক্ত হয় কিন্তু কোষের ভিতর এই অ্যামিনো এসিড গুলি শুধুমাত্র পেপটাইড বন্ধনেই আবদ্ধ থাকে।

চিত্র: এমাইনো এসিড ও প্রোটিনের গঠণ । 

 

প্রোটিন গঠনকারী এই অ্যামিনো এসিডের রয়েছে ২০টি প্রকারভেদ। এই ২০ প্রকারের অ্যামিনো এসিড নিজেদের ভিতর সঠিক ক্রমানুসারে সজ্জিত হতে হবে। একটি সাধারন আকারের প্রোটিন কম পক্ষে ৫০০ টি অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে সবচেয়ে অবাক করা জিনিস হল এই অ্যামিনো এসিড গুলি আবারডান হাতি ও বাম হাতি হয়। প্রোটিন গঠনে শুধু মাত্র বামহাতি অ্যামিনো এসিড গুলি যুক্ত থাকে। প্রোটিন কাঠামোর মাঝে যদি একটিও ডান হাতি অ্যামিনো এসিডের প্রবেশ ঘটে তবে এই প্রোটিন কাঠামোটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একটি অকার্যকর খন্ডে পরিনত হবে। এখন আমরা একটি প্রানী কোষের মূল উপাদান প্রোটিনের যে মূল বৈশিষ্ট্য গুলি পেলাম তা হল প্রোটিনের মাঝে অ্যামিনো এসিড গুলি শুধুমাত্র পেপটাইড বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ থাকে, প্রোটিন সমূহের সংগঠনে ব্যবহৃত ২০ টি বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড গুলি শুধু মাত্র বাম হাতিহতে হবে, এখন ডারউইনের মতে কাঁকতলিয় ভাবে যদি প্রানের উৎপত্তি হয়ে থাকে তাইলে সামান্য ৫০০ অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রোটিন অনু গঠিত হবার সম্ভাবনা পরিসংখ্যানের Probability অনুসারে দাড়ায় যথাক্রমে: ১. সঠিক ক্রমানুসারে অবস্থানের সম্ভাবনা = ১/২০^৫০০= ১/১০^৬৫০ [ যেহেতু Log { (20)^500}=500Log20=650 এবং Log { (10)^650}= 650log10=650 ] ২. সবগুলি বাম হাতি হবার সম্ভাবনা = ১/২^৫০০= ১/১০^১৫০ [ পূর্বের নিয়মে লগারিদম করে ] ৩. পেপটাইড বন্ধনে আবদ্ধ হবার সম্ভাবনা= ১/২^৪৯৯= ১/১০^১৫০ [ পূর্বের নিয়মে লগারিদম করে ] সর্ব মোট সম্ভাবনা= ১/১০^৯৫০ অর্থ্যাৎ ১০^৯৫০ ভাগের একভাগ। এখন দেখা যাচ্ছে ৫০০ অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত একটি সাধারন প্রোটিন মলিকুল কাঁকতলিয় ভাবে গঠিত হবারসম্ভাবনা ১ সংখ্যাটির পরে একটানা ৯৫০ টি শূন্য বসালে যেসংখ্যাটি দাঁড়ায় সেই সংখ্যাটি দ্বারা ১ সংখ্যাটি ভাগ করলে যে ভাগফল দাঁড়াবে, ঠিক ততভাগের একভাগ ।

 

বুঝতেই পারছেন এটা নিতান্তই কাগুজে সম্ভাবনা বা Probability on paper. বাস্তবে এটি ০ সম্ভাবনারই নামান্তর। পরিসংখ্যান এর নিয়ম অনুযায়ী ১০^৫০ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনাকে শুন্য সম্ভাবনা হিসাবেই ধরা হয়। এই যদি হয় সামান্য একটি প্রোটিন গঠিত হবার সম্ভাবনা তাইলে ১ মিলিয়ন প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের দেহ কাঁকতলিয় ভাবে গঠন হওয়া কতটা সম্ভব আপনারা একটু চিন্তা করেন!! 

 

আর এই ভাবে যদি কখনো একটি প্রোটিন গঠিত হয় তাইলে এই সময় লাগবে বিগব্যাং সংগঠিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত যত সময় লেগেছে ততদিন। আর আমি এখানে শুধু প্রোটিনের কথাই বললাম, মাইটোকন্ড্রিয়া, সাইটোপ্লাজম গঠন হওয়া যে আর কত কঠিন তা আপনারা বুঝে নিন।

এখন তাহলে প্রশ্ন আসে প্রানের উৎপত্তি তাইলে কিভাবে হয়েছে? হঠাৎ করে? তথ্য সূত্র : ১.উচ্চ মাধ্যমিক প্রানিবিজ্ঞান, গাজী আজমল, আসমত । 

বন্ধুগণ, এতক্ষণে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন প্রাণের উৎপত্তি কত জটিল বিষয়।

প্রশ্ন হচ্ছে সামান্য এক কোষী প্রাণের সৃষ্টি যদি এতটা জটিল ও অসম্ভব হয় তবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সৃষ্টির জটিলতা কি আমরা কল্পনা করতে পারি?  

 

বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বিজ্ঞানীরা প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে উপলব্ধি করা শুরু করেন যে, কাকতালীয়ভাবে  প্রাণ সৃষ্টির মতবাদটি অগ্রহণযোগ্য। প্রাণের জটিল এবং নিখুঁত কাঠামো অনেক গবেষকের জন্য বিশেষ সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

গাণিতিক হিসাব-নিকাশ এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ নির্দেশ করছে যে, প্রাণ ‘আকস্মিকতার ফসল’ হতে পারে না, যেমনটি ডারুইনবাদিরা দাবি করে। 

প্রাণের উৎসের ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট ধারনা না দিয়েই হাজার বছরের পুরনো কিছু ফসিল দিয়ে ডারুইনবাদীরা তৈরি করলেন এক "ঠাকুর মার ঝুলি" ! ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টাকরলেন কিভাবে সকল প্রাণী বিবর্তিত হয়ে আজকের স্থরে পৌছেছে। অনেকটা ২+২=৫ এর মত!(অবশ্য জিরাফ জেব্রার মত প্রাণীদের বিবর্তনের ব্যাখ্যা তারা আজো দিতে পারেনি) গোপাল ভাড়ের ন্যায় নিজেরমত করে সবই ব্যাখ্যা করলেন কিন্তু আটকে গেলেন চোঁখে এসে ! 

চোঁখের চমৎকারিতা দেখে ডারুইন বলেন- 

"চোঁখ বিবর্তনের দ্বারা এসেছে এমন ধারণা করাটা হবে, আমি খোলামনে স্বীকৃতি দিচ্ছি,বড় ধরনের হাস্যকর কথা।"[The Origin of Species part-1,p-250]

চিত্র: চোঁখের গঠণ ।

 

চোঁখ এত জটিল ও আশ্চর্যজনক !

চিত্র: মানব মস্তিষ্কের জটিল গঠন ।

 

আর মানুষের মগজ? সাধারণ একটা মেশিন হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় না,আর চোখ,মগজ এমনি এমনি হঠাৎ এসে গেল??!!

বৈজ্ঞানিক [জাসট্রো ] Dr. Robert Jastrow বলেন,

“মানুষের চোঁখ যে দৈবাৎ  সৃষ্টি,বিবরতনের পরিণতি ,এ ধরনের মতকে গ্রহণ করা কঠিন।আর মানুষের বুদ্ধি যে আমাদের অতীত বংশদরদের মগজের অভ্যন্তরে এলোমেলো ভাঙচুরের ফল,এ ধরণের মতকে গ্রহণ করা আরো কঠিন। [The Enchanted Loom: Mind in the Universe ,p-98,100] 

প্রশ্ন হচ্ছে,  বিজ্ঞান যখন সামান্য একটি কোষের গঠনের সম্ভবনাকে শূন্যের কাছাকাছি বলছে,  চোখের মত জটিল অংগের বিবর্তন অসম্ভব বলছে, নিজেরা কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টিতে ব্যার্থ হচ্ছে সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধার সহায়তা নিয়েও, সেখানে কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল প্রাণী দেহ কিভাবে সৃষ্টি হল নিয়ন্ত্রক ছাড়া?   প্রিয় বন্ধুগণ, নিয়ন্ত্রক, হ্যা, একজন সুনিপুণ কারিগরের সুক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণের দ্বারাই প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল আর এটাই সঠিক এবং একমাত্র বাস্তবতা।  কে সেই নিয়ন্ত্রক? সেই নিয়ন্ত্রক আর কেউ নয় বরং তিনিই আমাদের স্রষ্টা, তিনিই আমাদের রব।

📖আল কুরআন, সূরা আত ত্বীন-৪

لَقَدْ خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ  أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ   

[সম্ভাব্য ভাবানুবাদ]

আমিতো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে,

প্রশংসা সেই মহান রবের যিনি আমাদের অত্যন্ত সুক্ষতা ও দক্ষতার দ্বারা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অপার মহিমা অবলোকন করার জন্য!

মানব দেহের অভ্যন্তরের চিত্র দেখুন আর বলুন আদৌকি সম্ভব নিয়ন্ত্রক ছাড়া এই দেহের সৃজন?

এভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা থেকে সুরু করে দেখা অদেখা, জানা অজানা প্রতিটি বিষয়ের ভিতরের অপার বিস্ময় আমাদের মেনে নিতে বাধ্য  করে মহাবিশ্বের একজন সর্বজ্ঞ  সর্বশক্তিমান স্রস্টার অস্তিত্ব । 

 

✍🏽 নয়ন চৌধুরী।