Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

 রাসুল (ﷺ) বিশেষ এক ঘটনায় বিশেষ কারণে একদল মুনাফিকদের তপ্ত মুরুতে উটের দুধ ও পেশাব পান করার অনুমতি  দিয়েছিলেন একে বিকৃত করে ইসলামবিরোধী মিথ্যাচারের জবাব।  

অজ্ঞতা:
মুহাম্মদ () উটের পেশাব খেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর চেয়ে হাস্যকর কি হতে পারে?

অজ্ঞতাপূর্ণ অভিযোগের জবাব:

এই বিষয়ে আলোচনার পূর্বে দেখে নেয়া যাক রাসুল () রোগ মুক্তির জন্য সাধারণত কি ধরনের উপকরন ব্যাবহার করতে বলেতেন-

 

💠 সহীহ বুখারী (ইফাঃ)- হাদীস নং ৫২৭৮;

রাসুল () বলেন:

باب الشِّفَاءُ فِي ثَلاَثٍ حَدَّثَنِي الْحُسَيْنُ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ شُجَاعٍ، حَدَّثَنَا سَالِمٌ الأَفْطَسُ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ ‏ "‏ الشِّفَاءُ فِي ثَلاَثَةٍ شَرْبَةِ عَسَلٍ، وَشَرْطَةِ مِحْجَمٍ، وَكَيَّةِ نَارٍ، وَأَنْهَى أُمَّتِي عَنِ الْكَىِّ ‏"‏‏.‏ رَفَعَ الْحَدِيثَ وَرَوَاهُ الْقُمِّيُّ عَنْ لَيْثٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْعَسَلِ وَالْحَجْمِ‏.‏

[সম্ভাব্য বাংলাভাবানুবাদ: হুসায়ন (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তির ব্যবস্থা নিহিত আছে। মধু পান করা ও ব্যবহার করা, শিঙ্গা লাগান এবং আগুন (তপ্ত লৌহ) দিয়ে দাগ লাগানো। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে দাগ লাগাতে নিষেধ করছি। হাদীসটি “মারফূ”। কুম্মী হাদীসটি লায়স, মুজাহিদ, ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেفِي الْعَسَلِ وَالْحَجْمِ‏ শব্দে বর্ননা করেছেন।]

 

আল্লাহ্‌ বলেন:

💠সূরা আনআম(৬), আয়াত ১৪৫;

قُلْلا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلا أَنْيَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌأَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاعَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ [সম্ভাব্য ভাবানুবাদ:"হে নবী আপনি বলে দিন, আমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীরআহার্যের মধ্যে মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশ্ত ছাড়া আর কোনো বস্তুহারাম পাইনি। এগুলো অপবিত্র ও হারাম। আর যেই প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামেযবেহ করা হয়েছে তাও হারাম। তবে অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে একান্ত নিরুপায়হিসেবে কিছু গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয় তোমার রব (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।]

এখানে প্রশ্ন : পশুর মল মুত্র খাওয়া কি জায়েজ? উত্তর:না,কখনোই না!

পশুর পেশাব পান করা হারাম। আর হারাম বস্ত্ত খাদ্য হ’তে পারে না।তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি উক্ত পেশাব ব্যতীত রোগের কোন ঔষধ পাওয়া না যায়, তবে বাধ্যগত অবস্থায় তা গ্রহণ করা যাবে (আন‘আম(৬),আয়াত:১১৯

 

জনৈক সাহাবী রাসূল () এর কাছে ঔষধ হিসাবে মদ ব্যবহারেরঅনুমতি চাইলে তিনি বলেন, এটা কখনোই রোগের প্রতিষেধক নয়। বরং তা রোগ সৃষ্টিকারী (মুসলিম হাদীস নং -১৯৮৪, মিশকাত হাদীস নং-৩৬৪২)।

 

রাসূল () চুলকানী রোগের কারণে আব্দুর রহমান বিন ‘আউফ এবং যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ)-কে সফরে রেশমের কাপড় পরিধান করার অনুমতি দিয়েছিলেন,যদিও তা পুরুষের জন্য হারাম (বুখারী ২৯২২,৫৮৩৯, মুসলিম ৫৫৫২)।

 

উপরে আলোচিত হাদীস ও আয়াত থেকে বুঝা যায় যে হালাল খাবার খেতে হবে এবং হারাম খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। তবে বিপদে পড়লে এবং একেবারেই নিরুপায় হয়ে গেলে উপরোক্ত হারাম বস্তুসমূও সাময়িক কেবলমাত্র অপরিহার্য্য ক্ষেত্রে ব্যবহারে অনুমতি দেয়া হয়েছে। 'নির্দেশ ' নয়।

 

এবার যদি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কিত  হাদিসের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাই- 

 💠সহীহ বুখারী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ২৮০৯ আধুনিকপ্রকাশনী ৩৮৭২, ইসলামিক ফাঊন্ডেশন ৩৮৭৫, তাওহীদ পাবলিকেশন ৪১৯২;

باب إِذَا حَرَّقَ الْمُشْرِكُ الْمُسْلِمَ هَلْ يُحَرَّقُ حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَهْطًا، مِنْ عُكْلٍ ثَمَانِيَةً قَدِمُوا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَاجْتَوَوُا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، ابْغِنَا رِسْلاً‏.‏ قَالَ ‏ "‏ مَا أَجِدُ لَكُمْ إِلاَّ أَنْ تَلْحَقُوا بِالذَّوْدِ ‏"‏‏.‏ فَانْطَلَقُوا فَشَرِبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا حَتَّى صَحُّوا وَسَمِنُوا، وَقَتَلُوا الرَّاعِيَ، وَاسْتَاقُوا الذَّوْدَ، وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ، فَأَتَى الصَّرِيخُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَبَعَثَ الطَّلَبَ، فَمَا تَرَجَّلَ النَّهَارُ حَتَّى أُتِيَ بِهِمْ، فَقَطَّعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ، ثُمَّ أَمَرَ بِمَسَامِيرَ فَأُحْمِيَتْ فَكَحَلَهُمْ بِهَا، وَطَرَحَهُمْ بِالْحَرَّةِ، يَسْتَسْقُونَ فَمَا يُسْقَوْنَ حَتَّى مَاتُوا‏.‏ قَالَ أَبُو قِلاَبَةَ قَتَلُوا وَسَرَقُوا وَحَارَبُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم وَسَعَوْا فِي الأَرْضِ فَسَادًا‏ [স‌ম্ভাব্য ভাবানুবাদ: মুআল্লাহ ইবনু আসাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উকল নামক গোত্রে আট ব্যাক্তির একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। মদিনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা বরং সাদকার উটের পালের কাছে যাও। তখন তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। তারপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলমান  হওয়ার দাবি করার পরেও তারা মুরতাদ  হয়ে গেল। তখন জনৈক সংবাদদাতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্বারোহীদেরকে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো পূর্ণতা লাভ করেনি। ইতোমধ্যেই তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। তারপর তাঁর নির্দেশে লৌহশলাকা উতপ্ত করে তাদের চোখে প্রবেশ করানো হয় এবং তাদেরকে প্রস্তরময় উতপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চেয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে পানি দেওয়া হয়নি। অবশেষে তারা মারা যায়। আবূ কিলাবা (রাঃ) বলেন, (তাদের এরূপ শাস্তি এ জন্য দেওয়া হয়েছে যে,) তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা ছাড়াতে চেষ্টা করেছে। ]

কেউ কেউ বলেন ঘটনাটি কিসাসের বিধান অবতীর্ণ হবার আগেকার যাইহোক, এঘটনা থেকে আমরা দেখি যে, উটেরমূত্র পানের নির্দেশ রাসুল () এর সাহাবীদের উপর নয় এবং ওই সকল লোকের অসুস্থতার কারনে চিকিৎসা হিসেবে তাদের উপযোগী তাৎক্ষনিকব্যবস্থা হিসেবেই নির্দেশ দিয়েছেন। লক্ষণীয়যে, প্রথমত,মুহাম্মদ () যাদেরকে উটের দুধ ও মূত্র (শুধু মূত্র নয় ) পান করার অনুমতি  দিয়েছিলেন তারা আসলে মুসলিম ভানকারী মুনাফেক ছিল, যা পরে প্রমাণহয়েছে। উটের দুধও মূত্র পান করার পর তারা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর তারা রাখালবালককে নির্মমভাবে হত্যা করে উট নিয়ে পালিয়ে যায়।  

 

একটিনির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লোককে (যারা আসলে মুনাফেক ছিল) মুহাম্মদ () উটের দুধ ও মূত্র পান করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ () কোথাও বলেননি যে মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পানকরতে হবে। এরকমকোনো কথা হাদিসে লিখা থাকলে কিছু মুসলিম অন্তত লোক লজ্জার তোয়াক্কা না করে উটেরমূত্র পান করতই। কিন্তু মুসলিমরা কোথাও উটের মূত্র পান করে না। এই সাধারণ বোধটুকুও উটকো ইসলাম বিদ্বেষীদের নেই ।  হাদিসঅনুযায়ী আসলে ভণ্ড-মুনাফিকদের উচিত উটের মূত্র পান করা! কেননা মুহাম্মদ () যাদেরকে উটের মূত্র পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে ভণ্ড বা মুনাফিক ছিল। দ্বিতীয়ত,হাদিস অনুযায়ীই তারা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ফলে এই হাদিসের প্রথম অংশে বিশ্বাস করলে দ্বিতীয় অংশেও বিশ্বাস করতে হবে। উটের দুধ ও মূত্র পান করে কেউ যদি সুস্থ হয় তাহলে এটি নিয়ে হাসি-তামাসা করাটাই তো বোকামী!   তৃতীয়ত, হাদিস দুটিতে বিশেষ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেটি সেই ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটি সার্বজনীন কোন উপদেশ বাণী নয়। কোরআনে যেমন মধুর ব্যাপারে সার্বজনীনএকটি বাণী আছে, “In honey there is a healing,” হাদিসে “In camel’s urine there isa healing” বলে কোন বাণী নেই বা মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পান করার জন্য উপদেশও দেয়াহয়নি। অতএব যারা উটের মূত্র পান করে মাতাল হয়ে উপহাস-বিদ্রুপ করছে তারা নিজেদেরকেই বোকা বানিয়েছে! শেষ কথাহলো, রাসুল () যা কিছুই করেছেন তা আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারেইকরেছেন। আর তাই গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এই অনুমোদনেরও কিছু মাহাত্ম্য দেখতে পাই-- আমরা জানি আধুনিক বহু ঔষধ হারাম উপকরণ থেকে তৈরি হচ্ছে। যেমন-ঔষধে এলকোহল, শুকরের শরীরের উপাদান, সাপের বিষ, বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্টা ইত্যাদি ব্যাবহৃত হচ্ছে বা এসব থেকেই তৈরি হচ্ছে।‌ রাসুল () এই অনুমোদন দিয়েছেন বলেই আজ মুসলমানরা নিঃসংকোচেএইসব জীবন রক্ষাকারী ঔষধ গ্রহণ করতে পারছে। অন্যথায় হারাম মনেকরে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হত ! আর এই উপকরণ গুলো থেকে যে ভবিষ্যৎকালে ঔষধ তৈরি হবে তা সর্বজ্ঞ আল্লাহ্‌ আগে থেকেইজানতেন এটা কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। এজন্যই' মেডিসিন হিসেবে' উটের মুত্র ব্যবহার ও 'থেরাপি' নেয়ার জন্য যদি কেউ উটের মূত্রেআরোগ্য পান এবং বিজ্ঞান তাকে সার্টিফাইড করে তাহলে তা অপারগতা হিসেবে ক্ষমাযোগ্যহতে পারে, যা উপরে প্রথমেই বলা হয়েছে।

কিন্তু তাই বলে এটিকে খুবই সুখকর ও স্বাভাবিক বৈধ কিংবা এটা খেতে হবে এমন কথা যদি কেউ হাদীস দ্বারা সার্টিফাইড করতেচায় তাহলে বুঝতে হবে সে নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

আল্লাহ্‌ এইসব অপপ্রচার থেকে আমাদের হেফাজত করুন,আমিন।

লিখেছেন: নয়ন চৌধুরী

[  https://www.facebook.com/nayan.choudhary.148  ]