Are you sure?

বিবিধ »  বিবিধ

দাসপ্রথা ও ইসলাম

ক.

ভূমিকা:

দাসপ্রথা ইসলাম প্রবর্তিত কোন ব্যবস্থা নয়। আজ হতে প্রায় পৌনে ৪০০০ বছর আগের ব্যবলনিয় Code of Hammurabi-তে ও দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু কেন যেন ইসলামের সমালোচনায় দাসপ্রথা একটি বেশ মুখরোচক বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়, আর আলোচনার ভঙ্গিটাও এমন থাকে যাতে পাঠকের কাছে মনে হতে থাকবে দাসপ্রথার মত ঘৃণ্য একটি ব্যবস্থাকে ইসলাম জন্ম দিয়েছে বা উন্নীত করেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম দাসপ্রথার মতো একটি বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, ক্রীতদাসকে ভাতৃত্বের যে মর্যাদা দিয়েছিল, নেতৃত্বের যে সুযোগ দিয়েছিল, যে কোন নিরপেক্ষ বিশ্লেষক তার প্রশংসা না করে পারবে না।    

দুই. 

কুরআন এবং হাদিসে দাস-দাসি ও দাসপ্রথার অবস্থান:

মূল আলোচনায় যাবার আগে আসুন কুরআনের কিছু আয়াত এবং কিছু হাদিস থেকে দাস-দাসি ও দাসপ্রথার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝবার চেষ্টা করি। 

কুরআনের কিছু আয়াত:

আয়াত-১: দাসমুক্তকরণ ধর্মের ঘাঁটি

সূরা:আল বালাদ(৯০), আয়াত:১১-১৭

(١١) فَلَا ٱقْتَحَمَ ٱلْعَقَبَةَ (١٢) وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا ٱلْعَقَبَةُ (١٣) فَكُّ رَقَبَةٍ (١٤) أَوْ إِطْعَٰمٌ فِى يَوْمٍ ذِى مَسْغَبَةٍ (١٥) يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ (١٦) أَوْ مِسْكِينًا ذَا مَتْرَبَةٍ (١٧) ثُمَّ كَانَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلْمَرْحَمَةِ

সম্ভাব্য ভাবার্থ:

[বাংলা-বায়ান ফাউন্ডেশন]

(১১) তবে সে বন্ধুর গিরিপথটি অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়নি। (১২) আর কিসে তোমাকে জানাবে, বন্ধুর গিরিপথটি কী? (১৩) তা হচ্ছে, দাস মুক্তকরণ। (১৪) অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে। (১৫) ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে। (১৭) অথবা ধূলি-মলিন মিসকীনকে। (১৭) অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের।

[English - Mufti Taqi Usmani]

(11) Yet he did not make his way through the steep course,- - (12) - And what may let you know what the steep course is? (13) (It is) freeing of the neck of a slave, (14) or giving food in a day of hunger (15) to an orphan near of kin, (16) or to a needy person lying in dust- - (17) - then he did not join those who believe and advise each other to be patient and advise each other to be merciful. 

 
আয়াত-২: মুক্তিকামি ক্রীতদাসের জন্য সম্পদ ব্যয় করা বড় সৎকাজ 

সুরা: আল বাক্কারাহ(২), আয়াত:১৭৭

لَّيْسَ ٱلْبِرَّ أَن تُوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ ٱلْمَشْرِقِ وَٱلْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلْبِرَّ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلْكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۦنَ وَءَاتَى ٱلْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَٰمَىٰ وَٱلْمَسَٰكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِى ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَٰهَدُوا۟ۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِۗ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُتَّقُونَ   

সম্ভাব্য ভাবার্থ:

[বাংলা-বায়ান ফাউন্ডেশন]

ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দি(দাস)মুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী। 

[English - Mufti Taqi Usmani] Righteousness is not (merely) that you turn your faces to the East and the West; but righteousness is that one believes in Allah and the Last Day and the angels and the Book and the Prophets, and gives wealth, despite (his) love for it, to relatives, and to orphans, the helpless,the wayfarer, and to those who ask, and (spends) in (freeing) slaves and observes the Salāh (prayers) and pays Zakah-and (the act of) those who fulfill their covenant when they enter into a covenant, and, of course, those who are patient in hardship and suffering and when in battle! Those are the ones who are truthful, and those are the God - fearing.

 
আয়াত-৩: নিজেদের সমান হয়ে যাবার ভয়ে দাস-দাসীদের দান না করা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করার নামান্তর

সূরা:আন নাহল(১৬), আয়াত:৭১

وَٱللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ فِى ٱلرِّزْقِۚ فَمَا ٱلَّذِينَ فُضِّلُوا۟ بِرَآدِّى رِزْقِهِمْ عَلَىٰ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَآءٌۚ أَفَبِنِعْمَةِ ٱللَّهِ يَجْحَدُونَ  

সম্ভাব্য ভাবার্থ:

[বাংলা-বায়ান ফাউন্ডেশন]

আর আল্লাহ রিয্ক তোমাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিয্ক দাসদাসীদের ফিরিয়ে দেয় না। (এই ভয়ে যে,) তারা তাতে সমান হয়ে যাবে। তবে তারা কি আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করছে?
[English - Mufti Taqi Usmani]

Allah has given some of you preference over others in provision. So, those given preference are not willing to pass on their provision to their slaves, so that they become equal in it: Do they, then, reject the blessing of Allah?

 
আয়াত-৪: নিঃস্ব হলেও সৎকর্মপরায়ণ দাস-দাসীদের বিবাহ দিয়ে দিতে হবে

সূরা: আন নূর(২৪), আয়াত:৩২

وَأَنكِحُوا۟ ٱلْأَيَٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْۚ إِن يَكُونُوا۟ فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ  

সম্ভাব্য ভাবার্থ:

[বাংলা-বায়ান ফাউন্ডেশন]

আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।

[English - Mufti Taqi Usmani]

Arrange the marriage of the spouseless among you, and the capable from among your bondmen and bondwomen. If they are poor, Allah will enrich them out of His grace. Allah is All-Encompassing, All-Knowing.

 

দাসদাসি ও দাসপ্রথা সম্পর্কিত কিছু হাদীস:

 

হাদীস-১: স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা নিষিদ্ধকরণ 

আবু হুরাইরা(রা.) হতে বর্ণিত:  নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ[তায়ালা] বলেন:  আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরূদ্ধে হবো,  [১] যে আমার নামে শপথ করে অত:পর বিশ্বাসঘাতকতা করে,  [২] যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে,  [৩] যে কোন মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে অথচ তার পারশ্রমিক প্রদান করে না।

حَدَّثَنِي بِشْرُ بْنُ مَرْحُومٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ] إِسْمَاعِيلَ بْنِ أُمَيَّةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ قَالَ اللَّهُ ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ ‏"‏‏.‏  Narrated Abu Huraira:  The Prophet (ﷺ) said, "Allah says, 'I will be against three persons on the Day of Resurrection: -1. One who makes a covenant in My Name, but he proves treacherous. -2. One who sells a free person (as a slave) and eats the price, -3. And one who employs a laborer and gets the full work done by him but does not pay him his wages.' "  ]

Reference  : Sahih al-Bukhari 2227 In-book reference  : Book 34, Hadith 174 USC-MSA web (English) reference  : Vol. 3, Book 34, Hadith 430   (deprecated numbering scheme)

 
হাদীস-২: দাস-দাসির অধিকার 

আল-মা’রুর বিন সুওয়াইদ(রা.) হতে বর্ণিত:  [রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন:  তোমাদের দাসেরা তোমারদের ভাই যাদের ওপর আল্লাহ তোমাদের ক্ষমতা দিয়েছেন। কাজেই কারো নিয়ন্ত্রণে যদি তার ভাই থাকে, তবে সে যা খাবে তাকেও তাই খাওয়াবে, সে যা পরবে তাকেও তাই পরাবে। তাদের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপাবে না যা তারা বহন করতে অক্ষম। যদি তা করো, তবে তাদেরকে সাহায্য কর। 

 [حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا وَاصِلٌ الأَحْدَبُ، قَالَ سَمِعْتُ الْمَعْرُورَ بْنَ سُوَيْدٍ، قَالَ رَأَيْتُ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ ـ رضى الله عنه ـ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ وَعَلَى غُلاَمِهِ حُلَّةٌ فَسَأَلْنَاهُ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ إِنِّي سَابَبْتُ رَجُلاً فَشَكَانِي إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ لِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ إِنَّ إِخْوَانَكُمْ خَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَأَعِينُوهُمْ ‏"‏‏ Narrated Al-Ma'rur bin Suwaid:  I saw Abu Dhar Al-Ghifari wearing a cloak, and his slave, too, was wearing a cloak. We asked him about that (i.e. how both were wearing similar cloaks). He replied, "Once I abused a man and he complained of me to the Prophet (ﷺ) . The Prophet (ﷺ) asked me, 'Did you abuse him by slighting his mother?' He added, 'Your slaves are your brethren upon whom Allah has given you authority. So, if one has one's brethren under one's control, one should feed them with the like of what one eats and clothe them with the like of what one wears. You should not overburden them with what they cannot bear, and if you do so, help them (in their hard job).].‏ Reference : Sahih al-Bukhari 2545 In-book reference : Book 49, Hadith 28 USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 46, Hadith 721 (deprecated numbering scheme)

 
হাদীস-৩: দাস-দাসিকে সম্মানজনকভাবে সম্বোধন করা 

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আমার আব্‌দ ও আমাত তথা আমার বান্দা, আমার বান্দী না বলে। কারণ তোমাদের সকল পুরুষই আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের সকল নারীই আল্লাহর বান্দী। সুতরাং বলবে, গোলামী, ওয়া জারিয়াতী, ওয়া ফাতায়া, ওয়া ফাতাতী' অর্থাৎ, আমার সেবক, আমার সেবিকা।

باب حُكْمِ إِطْلاَقِ لَفْظَةِ الْعَبْدِ وَالأَمَةِ وَالْمَوْلَى  وَالسَّيِّدِ] ‏‏ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ، وَابْنُ، حُجْرٍ قَالُوا حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبْدِي وَأَمَتِي ‏.‏ كُلُّكُمْ عَبِيدُ اللَّهِ وَكُلُّ نِسَائِكُمْ إِمَاءُ اللَّهِ وَلَكِنْ لِيَقُلْ غُلاَمِي وَجَارِيَتِي وَفَتَاىَ وَفَتَاتِي ‏"‏   Abu Huraira reported Allah's Messenger (ﷺ) as saying: None of you should say: My bondman and my slave-girl, for all of you are the bondmen of Allah, and all your women are the slave-girls of Allah; but say: My servant, my girl, and my young man and my young girl.]

্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ৪১। শব্দচয়ন ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার (كتاب الألفاظ من الأدب وغيرها) হাদিস নম্বরঃ ৫৭৬৭   ৩. আল-আবদ, আল-আমাত (দাস-দাসী) এবং আল-মাওলা, আস-সাইয়্যিদ শব্দসমূহ ব্যবহারের বিধান   ৫৭৬৭-(১৩/২২৪৯)

(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬৭৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৭০৯)‏.‏

 
হাদীস-৪: দাস-দাসির ন্যায়বিচার লাভের অধিকার 

সামুরাহ(রা.) হতে বর্ণিত:  রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি কেউ তার ক্রীতদাসকে হত্যা করে আমরা তাঁকে হত্যা করবো, আর কেউ যদি তার ক্রীতদাসের নাক কেটে দেয়, আমরাও তার নাক কেটে দেবো। একই সনদে অপর একটি হাদিসে এই বর্ণনার সাথে বাড়তি বর্ণিত, যে কেউ তার দাসের অঙ্গছেদ করলে তারও অঙ্গছেদ করা হবে ।   [ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، ح وَحَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَتَلَ عَبْدَهُ قَتَلْنَاهُ وَمَنْ جَدَعَ عَبْدَهُ جَدَعْنَاهُ ‏"‏ ‏.‏ :Narrated Samurah:  The Prophet (ﷺ) Said: If anyone kills his slave, we shall kill him, and if anyone cuts off the nose of his slave, we shall cut off his nose. 

Reference  : Sunan Abi Dawud 4515 In-book reference  : Book 41, Hadith 22 English translation  : Book 40, Hadith 4501]

 
হাদীস-৫: দাস-দাসির ওপর অপবাদ আরোপের পরিণাম 

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:  আমি আবুল ক্বসিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, কেউ যদি তার ক্রীতদাসকে অপবাদ দেয় আর সেই ক্রীতদাস যদি সে যা বলছে তা হতে মুক্ত হয়, তবে তাকে (অপবাদ আরোপকারিকে) কিয়ামতের দিনে বেত্রাঘাত করা হতে থাকবে যতক্ষণ না সেই ক্রীতদাস তাই হয় যা সে বর্ণনা করেছে।  [ حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ فُضَيْلِ بْنِ غَزْوَانَ، عَنِ ابْنِ أَبِي نُعْمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ، صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ قَذَفَ مَمْلُوكَهُ وَهْوَ بَرِيءٌ مِمَّا قَالَ، جُلِدَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِلاَّ أَنْ يَكُونَ كَمَا قَالَ ‏

"Narrated Abu Huraira:  I heard Abu-l-Qasim (the Prophet) saying, "If somebody slanders his slave and the slave is free from what he says, he will be flogged on the Day of Resurrection unless the slave is really as he has described him."]

‏‏Reference  : Sahih al-Bukhari 6858In-book reference  : Book 86, Hadith 80USC-MSA web (English) reference  : Vol. 8, Book 82, Hadith 841   (deprecated numbering scheme)

 
হাদীস-৬: দাস/দাসিকে চপেটাঘাত করার শাস্তি

মুআবিয়া বিন সুওয়াইদ হতে বর্ণিত:  আমি আমাদের এক ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করি, অত:পর পলায়ন করি। আমি ঠিক মধ্যাহ্নের আগে ফিরে এলাম এবং আমার পিতার পেছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি তাকে (ঐ ক্রীতদাসকে) এবং আমাকে ডাকলেন এবং বললেন: সে তোমার প্রতি যা করেছে, তুমিও তেমন করো. সে [ক্রীতদাস] আমাকে মাফ করে দিল। তখন তিনি (আমার পিতা) বললেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় আমরা মুকাররিনের পরিবারভুক্ত ছিলাম এবং আমাদের একজন মাত্র ক্রীতদাসি ছিল। আমাদের একজন তাকে চড় মারলো। এই খবর রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পৌঁছল এবং তিনি বললেন: তাকে মুক্ত করে দাও। তারা (পরিবারের লোকজন) বললেন: সে ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারি নেই। কাজেই তিনি বললেন: তাহলে তাকে কাজে নিযুক্ত করো, আর যখনই তোমরা তাকে কাজ হতে অব্যাহতি দিতে সমর্থ হও, তাকে মুক্ত করে দাও।   [ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ سُوَيْدٍ، قَالَ لَطَمْتُ مَوْلًى لَنَا فَهَرَبْتُ ثُمَّ جِئْتُ قُبَيْلَ الظُّهْرِ فَصَلَّيْتُ خَلْفَ أَبِي فَدَعَاهُ وَدَعَانِي ثُمَّ قَالَ امْتَثِلْ مِنْهُ ‏.‏ فَعَفَا ثُمَّ قَالَ كُنَّا بَنِي مُقَرِّنٍ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ لَنَا إِلاَّ خَادِمٌ وَاحِدَةٌ فَلَطَمَهَا أَحَدُنَا فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏"‏ أَعْتِقُوهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا لَيْسَ لَهُمْ خَادِمٌ غَيْرُهَا قَالَ ‏"‏ فَلْيَسْتَخْدِمُوهَا فَإِذَا اسْتَغْنَوْا عَنْهَا فَلْيُخَلُّوا سَبِيلَهَا ‏"‏ ‏.  Mu'awiya b. Suwaid reported: I slapped a slave belonging to us and then fled away. I came back just before noon and offered prayer behind my father. He called him (the slave) and me and said: Do as he has done to you. He granted pardon. He (my father) then said: We belonged to the family of Muqarrin during the lifetime of Allah's Messenger (may peace be upon him. and had only one slave-girl and one of us slapped her. This news reached Allah's Apostle (ﷺ) and he said: Set her free. They (the members of the family) said: There is no other servant except she. Thereupon he said: Then employ her and when you can afford to dispense with her services, then set her free.

Reference  : Sahih Muslim 1658a In-book reference  : Book 27, Hadith 48 USC-MSA web (English) reference  : Book 15, Hadith 4081   (deprecated numbering scheme)]

 
হাদীস-৭: দাসিকে বিবাহে উৎসাহ প্রদান

আবু মুসা(রা.) হতে বর্ণিত:  রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:  যার একটি ক্রীসদাসি আছে আর সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তার সাথে সদয় ব্যবহার করে, অত:পর তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، سَمِعَ مُحَمَّدَ بْنَ فُضَيْلٍ، عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ كَانَتْ لَهُ جَارِيَةٌ فَعَالَهَا، فَأَحْسَنَ إِلَيْهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا وَتَزَوَّجَهَا، كَانَ لَهُ أَجْرَانِ ‏"‏‏ Narrated Abu Musa:  Allah's Messenger (ﷺ) said, "He who has a slave-girl and educates and treats her nicely and then manumits and marries her, will get a double reward.".‏

Reference  : Sahih al-Bukhari 2544 In-book reference  : Book 49, Hadith 27 USC-MSA web (English) reference  : Vol. 3, Book 46, Hadith 720   (deprecated numbering scheme)]    

 

তিন. 

দাসত্বের পথ এবং ইসলাম 

সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন যখন নাযিল হচ্ছিল তখন শুধু আরবে নয় বরং সারা দুনিয়ায় ক্রীতদাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল।

স্বাধীন মানুষ দাসত্ব বরণ করত প্রধানত দুটি উপায়ে: 

১. স্বাধীন ব্যক্তিকে বেচাকেনার মাধ্যমে ক্রীতদাস বানানো:

এই পথটি ইসলামে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-১

 

২. যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো: 

যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো সেই সময় একটি স্বাভাবিক রীতি ছিল। কোন মুসলিম যদি যুদ্ধে অমুসলিমদের হাতে বন্দী হতো তাকেও এই পরিণতি বরণ করতে হতো। ইসলামে যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো কোন জরুরী বিষয় নয়। ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ নিয়ে মুক্ত করতে পারে, বিনা মুক্তিপণেও মুক্ত করতে পারে, যুদ্ধবন্দি বিনিময় করতে পারে বা প্রয়োজনবোধে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের রীতি অনুসারে দাস-দাসীও বানাতে পারে। তবে কোন রাষ্ট্রের সাথে মুসলিমদের যদি এমন কোন চুক্তি থাকে যে তারা তাদের যুদ্ধবন্দীদের দাস বানাতে পারবে না, তবে সেই চুক্তি রক্ষা করা মুসলিমদের জন্য জরুরি। 

 

২.১. কেন ইসলামে এই সুযোগ রহিত করা হলো না?  ইসলাম একটি বাস্তব ধর্ম। ইসলাম এমন কোন ধর্ম না যে কেউ এক গালে চড় মারলে আরেকটা গাল পেতে দিতে বলবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজ অনুসারিদের বিপদ বা অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলে দেবার ধর্ম ইসলাম নয়। যেখানে মুসলিমরা অমুসলিমদের হাতে যুদ্ধবন্দী হলে তাদেরকেও দাসত্ব বরণ করতে হতো, সেখানে ইসলাম যদি একই সুযোগ না রাখতো তবে তা হতো শত্রুর হাতে এক বিরাট মারণাস্ত্র তুলে দেওয়ার নামান্তর। কাজেই যতদিন মুসলিমদের জন্য এই নিশ্চয়তা না আসে যে তাদের যুদ্ধবন্দীদের দাসদাসী বানানো হবে না, ততদিন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্যও এই সুযোগ রহিত করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। 

 

২.২. দাসত্বের এই পথ বন্ধ করার উপায় 

ইসলামে দাসত্ব বরণের এই পথটি যদিও খোলা রয়েছে তবে একটি বন্ধযোগ্য পথ, যা বন্ধ করার চাবি অমুসলিম রাষ্টসমূহের হাতেই দেওয়া আছে। যে কোন অমুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে এই ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে ‘আমরা একে অপরের যুদ্ধবন্দীদের দাস-দাসী বানাবো না’, দাসত্বে প্রবেশের এই উন্মুক্ত পথটি বন্ধ করে দিতে পারে।   

চার. 

ইসলামে দাসমুক্তির পথসমূহ 

১. যাকাত: ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ যাকাত। আর এই যাকাতের একটা খাত নির্ধারণ করা হয়েছে দাসমুক্তির জন্য। [দ্রষ্টব্য সুরা: আত তাওবা(৯), আয়াত:৬০

 

২. কাফফারা: বিভিন্ন গুনাহ বা ভুলের কাফফারা নির্ধারণ করা হয়েছে দাস মুক্তকরণকে। [দ্রষ্টব্য সূরা:আল মা'ঈদাহ(৫)-আয়াত:৮৯, সুরা:মুযাদিলাহ(৫৮)- আয়াত:৩, সূরা: আন নিসা(৪)-আয়াত:৯২

 

৩. লিখিত চুক্তি: ইসলাম দাস-দাসিদের তার মালিকের সাথে মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তির অনুমতি প্রদান করেছে।  তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। [সূরা:আন নূর(২৪), আয়াত:৩৩, প্রাসঙ্গিক অংশ] 

 

৪. ক্ষতিপূরণ: কোন দাস/দাসিকে চপেটাঘাত করা হলে তার শাস্তি হিসেবে উক্ত দাস/দাসিকে মুক্ত করে দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৬] 

 

৫. দাসমুক্তকরণে উৎসাহ প্রদান: 

 

৫.১ দাসমুক্তিকে একটি বিরাট সওয়াবের কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: আয়াত-২] 

 

৫.২ বিভিন্ন প্রাকৃতিক নির্দশনের সময় দাসমুক্তির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যেমন; চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ কালে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি.২, বুক ১৮, নম্বর ১৬৩; ভলি.৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৫; ভলি.৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৬

 

৫.৩ মুক্তিকামি দাসদাসীদের অর্থকড়ি প্রদান করে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সুরা: আন নূর (২৪), আয়াত:৩৩

 

৫.৪ মালিকের অধিক পছন্দনীয় এবং অধিক দামী দাস-দাসীর মুক্তিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবে কম থাকে। তাই ঘোষণা করা হয়েছে যে, সর্বোত্তম দাসমুক্তি হচ্ছে সবচেয়ে দামী এবং মালিকের অধিক পছন্দনীয় দাসকে মুক্ত করা। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৪

 

৫.৫ দাস-দাসি নিজের সমান হয়ে যাবে এমন আশঙ্কায় যারা তাদের দান করা থেকে বিরত থাকে তাদের তিরস্কার করা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সূরা আন নাহল(১৬)-আয়াত:৭১]  

 

৫.৬ কোন ক্রীতদাস যদি একাধিক মালিকের আয়ত্বাধীনে থাকে এবং কোন একজন মালিক তার অংশ হতে ঐ দাসকে মুক্ত করে দেয় তবে উক্ত মালিকের জন্য ঐ ক্রীতদাসকে অপর অংশীদারদের হতেও মুক্ত করে দেওয়াকে জরুরী করে দেওয়া হয়েছে। মালিক তাতে অসমর্থ হলে, উক্ত ক্রীতদাসকে মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার নিমিত্তে কাজ করার অনুমতি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি. ৩, বুক ৪৪, নম্বর ৬৭২

 

৫.৭. দাসিকে শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে মুক্ত করে বিবাহকারীকে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী বলা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৭]    

 

পাঁচ.

ইসলামে দাস/দাসী'র অধিকার ও মর্যাদা 

 

ক. ভ্রাতৃত্বের মর্যাদা:  ইসলাম দাসদের ভাইয়ের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-২

 

খ. নেতৃত্বের অধিকার:  ইসলামে দাসও আমীর হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে তাকে মান্য করা সকলের জন্য জরুরি।

[ দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭২২৯; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৯, নম্বর ২৫৬;

 

৩. অন্ন-বস্ত্রের সমানাধিকার: 

 

৩.১ মুনিব যা খাবে দাসকেও তাই খাওয়াতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-২

 

৩.২ মুনিব যা পরবে দাসকেও তা-ই পরাতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-২

 

৪. কাজ-কর্মে সহানুভূতি লাভের অধিকার:  ৪.১ দাসের ওপর তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের বোঝা চাপানো যাবে না। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-২

 

৪.২. দাসের ওপর অতিরিক্ত কোন কাজের বোঝা দিতে হলে নিজেকেও তাতে সাহায্য করতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-২

 

৫. সম্মান লাভের অধিকার: 

 

৫.১ দাস-দাসীদের ‘আমার বান্দা/দাস’ ‘আমার বান্দি/দাসী’ বলা যাবে না, বলতে হবে ‘আমার বালক’, 'আমার বালিকা'। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৩

 

৫.২ দাস-দাসীদের চপেটাঘাত পর্যন্ত করা যাবে না। তাদেরকে চপেটাঘাত করা হলে এর শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে মুক্ত করে দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৬

 

৫.৩ দাস-দাসীদের ওপর কোন অপবাদ আরোপ করা যাবে না। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৫

 

৬. ধর্মীয় মর্যাদা:  ইসলামে একজন দাসের ধর্মীয় মর্যাদা একজন স্বাধীন মুসলিমের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বরং বেশি। কেননা, যদি কোন দাস তার মালিকের প্রতি সৎ এবং বিশ্বস্ত থাকে এবং তার প্রভুর (আল্লাহর) ইবাদতও যথাযথভাবে করে তবে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৭২২

 

৭. ন্যায়বিচার লাভের অধিকার:  ইসলাম ক্রীতদাসের ন্যায়বিচার লাভের অধিকারকে নিশ্চিত করে। বিশ্বে যেখানে দাসদের ওপর চলছিল ইচ্ছামত অত্যাচার, নিপীড়ণ; দাসদের হত্যা করাও যখন ছিল আইনসিদ্ধ, সেই সময় ইসলাম ঘোষণা করে কঠোরতম সতর্কবাণী, কেউ কোন ক্রীতদাসকে হত্যা করলে তাকেও হত্যা করা হবে, কেউ কোন ক্রীতদাসের অঙ্গহানি ঘটালে তারও অঙ্গহানি ঘটানো হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদীস-৪

 

৮. জৈবিক চাহিদা পূরণের অধিকার:  ইসলাম দাস-দাসীদের জৈবিক চাহিদা পূরণের অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং নিজের দাস-দাসীদের বিবাহ দিয়ে দেওয়াকে মুনিবের জন্য দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। [দ্রষ্টব্য সূরা আন নূর(২৪): আয়াত ৩২

 

৯. পবিত্র জীবন যাপনের অধিকার: 

ইসলামে দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।  তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। [সূরা নূর:২৪- আয়াত:৩৩, প্রাসঙ্গিক অংশ] 

 

১০. বিবাহের ক্ষেত্রে মতামত প্রদানের অধিকার: 

কোন মুনিব তার ক্রীতদাসির সাথে আলোচনা না করে তাকে কারো সাথে বিবাহ দিতে পারবে না। [দ্রষ্টব্য: বুখারি, হাদীস নম্বর ৭০৫৬; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৬, নম্বর ১০০;

 

১১. ক্রীতদাসি এবং তার শিশুর একত্রিত থাকার অধিকার: 

কোন ক্রীতদাসীকে ভিন্ন কোথাও বিক্রি করে তার থেকে তার শিশুকে বিচ্ছিন্ন করার কোন অনুমতি ইসলামে নেই, এবং এই ধরণের বেচাকেনা নিষিদ্ধ। [দ্রষ্টব্য: সুনান আবু দাউদ, ইংরেজি অনুবাদ: বুক ১৪, হাদীস নম্বর ২৬৯০]

 

য়. 

শেষের কথা

এতক্ষণ তো দেখলেন প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ইসলামে দাস/দাসীদের অবস্থান কোথায় ছিল। এবার মাত্র কয়েক শতক আগে পাশ্চাত্যের Slave code-এ দাস/দাসীদের আইনসিদ্ধ অবস্থান কোথায় ছিল তার একটু নমুনা দেখা যাক:

 

 "If any slave resists his master…correcting such a slave, and shall happen to be killed in such correction…the master shall be free of all punishment…as if such accident never happened." 

-Virginia, 1705

 

 "Any person or persons who attempt to teach any free person of color, or slave, to spell, read, or write, shall, upon conviction thereof by indictment, be fined in a sum not less than two hundred and fifty dollars, nor more than five hundred dollars." 

-Alabama, 1833, section 31

 

"Any free person of color who shall write for any slave a pass or free paper, on conviction thereof, shall receive for every such offense, thirty-nine lashes on the bare back, and leave the state of Alabama within thirty days thereafter…" 

 -Alabama, 1833, section 32 

 

"Any slave who shall write for any other slave, any pass or free-paper, upon conviction, shall receive, on his or her back, one hundred lashes for the first offence, and seven hundred lashes for every offence thereafter…"  South Carolina, 1712–No slave shall be allowed to work for pay, or to plant corn, peas or rice; or to keep hogs, cattle, or horses; or to own or operate a boat; to buy or sell; or to wear clothes finer than 'Negro cloth' 

-Alabama, 1833, section 33

[তথ্যসূত্র সমূহ এখানে পাবেন ।

অর্থাৎ দাসদের পড়া-লেখা শেখার, মজুরি খাটার, কিছু উৎপাদন করার, গবাদি পশু রাখার, নৌকা রাখা/চালানোর, কেনা-বেচা করার, ভালো কাপড় পরিধান করার অধিকারই শুধু হরণ করা হয় নাই, মালিককে এতটুকু অধিকারও দেওয়া হয়েছিল যে যদি ক্রীতদাসকে সংশোধন করতে গিয়ে সে তাকে মেরেও ফেলে, তবু তার কোন শাস্তি হবে না, যেন এমন কোন ঘটনাই ঘটে নাই! 

এরপরও যদি কেউ দাসপ্রথার কথা এলেই ইসলামের দিকে আঙুল উঁচু করতে চান, তবে বলতেই হবে, যারা চোখ বন্ধ করে ঘুমান তাদের জাগাবার সাধ্য কারো নেই। 

নোট:

এই লেখায় দাস-দাসীদের সাধারণ বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই দাস বলতে দাস-দাসী উভয়কে বুঝানো হয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় একটি প্রসঙ্গ ইচ্ছা করেই আলোচনায় আনা হয় নাই, সেটি হচ্ছে- দাসীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এই বিষয় নিয়ে একটি স্বতন্ত্র লেখা  এখানে দেখুনঃ  ‘ইসলামে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌন সম্পর্কের বৈধতার স্বরূপ’

 

লিখেছেন : মুহাম্মদ সাদাত ।

 

মূল লেখার লিংক: http://shodalap.org/bngsadat/12301/