[পাঠককে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এই লেখাটি পড়ার আগে দাসপ্রথা ও ইসলাম লেখাটি পড়ে নেবার জন্য।]
ভূমিকা
ইসলামকে আক্রমণ করার যতগুলো মোক্ষম অস্ত্র ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই প্রোপাগাণ্ডা যে ইসলাম ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে বরং ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীদের যৌনদাসীতে পর্যবসিত করেছে। তাদের এই প্রোপাগাণ্ডায় যে কেউ ভেবে বসতে পারেন, ইসলামই বুঝি ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রবর্তক। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা যথেচ্ছ, অমানবিক ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারকে ইসলাম সীমিত, মানবিক ও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনার পাশাপাশি তাদেরকে জৈবিক চাহিদা পূরণের একটি বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ সুযোগ প্রদান করেছে যার ফলে একদিক দিয়ে তাদের সন্তান জন্মগতভাবে স্বাধীন ও পিতার সম্পদের উত্তারিকারী হয়, অন্যদিক সন্তান গর্ভধারণের মাধ্যমে ক্রীতদাসিটি ক্রমান্বয়ে মুক্তি লাভ করে। মূল আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে:
০.১ দাসপ্রথা ইসলামের উদ্ভাবন নয়, বরং দাসপ্রথা অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ইসলাম একদিকে সমাজে প্রচলিত অমানবিক দাসপ্রথাকে নিজ আওতার ভেতরে মানবিক করতে সচেষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে নানাবিধভাবে দাসমুক্তকরণের পথ উন্মুক্ত করেছে।
০.২ ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার দাসপ্রথার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, ইসলামের কোন অপরিহার্য, অবশ্য করণীয়, অথবা আকাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়। ইসলাম নিজ গণ্ডির ভেতরে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছে মাত্র।
০.৩ দাসপ্রথার নিয়মকে ইসলামের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না।
এক.
যুদ্ধবন্দি/যুদ্ধবন্দিনীর দাসত্ববরণ:একটি প্রচলিত পন্থা:
১.১ যুদ্ধবন্দির দাসত্ববরণের প্রচলিত পন্থা ও ইসলামের অনুমোদন:
ইসলামি রাষ্ট্রনায়ক যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে নিম্নোক্ত যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন:
১.১.১ কতল করতে পারেন (এটি কেবল সেইসব যুদ্ধক্ষম পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য যারা ইসলামি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে, নারী-শিশু-বৃদ্ধের জন্য প্রযোজ্য নয়।)
১.১.২ নি:শর্তভাবে মুক্ত করে দিতে পারেন।
১.১.৩ মুক্তিপণ সাপেক্ষে মুক্ত করে দিতে পারেন।
১.১.৪ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে ব্যবহার করতে পারেন।
১.১.৫ প্রচলিত অন্য কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেন। যেমন, দাসপ্রথা প্রচলিত থাকলে তাদেরকে দাস/দাসি হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করে দিতে পারেন।
কাজেই,
যুদ্ধবন্দিদের দাস-দাসি বানানো একটি প্রচলিত পন্থা ছিল যা ইসলামের কোন বাধ্যতামূলক বা অপরিহার্য নির্দেশ তো নয়ই, কোন আকাঙ্ক্ষিত বিষয়ও নয়, বরং অনেকগুলো অনুমোদিত পন্থার একটি মাত্র। যদি ইসলামি রাষ্ট্রনায়ক কোন কারণবশতঃ পঞ্চম পন্থাটি অবলম্বন করেন, সেক্ষেত্রে বণ্টিত হবার পর একজন যুদ্ধবন্দিনী একজন ক্রীতদাসি হিসেবে পরিগণিত হবেন।
১.২ কেন এর অনুমোদন?
ইসলাম যদিও স্বাধীন ব্যক্তির বেচাকেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে ক্রীতদাসপ্রথার মূল উৎস বন্ধ করে দিয়েছে, দাসমুক্তির নানাবিধ পথ উন্মুক্ত করেছে কিন্তু যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী বানানোর এই পথটি বন্ধ করেনি। কেন?
১.২.১ ইসলাম একটি বাস্তব ধর্ম। একগালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেবার ধর্ম ইসলাম নয়। ইসলামে যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানো কোন জরুরী বিষয় না হলেও যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানো তখনকার সময়ে একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল। যুদ্ধে মুসলিমরা অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হতো। যতদিন পর্যন্ত মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হবার সম্ভাবনা দূর না হয়, ততদিন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্য অমুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানোর সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজ অনুসারীদের নিশ্চিত বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেবার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ইসলাম কিছুতেই নিতে পারে না। তবে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত দ্বার বন্ধ করার চাবি অমুসলিমদের হাতেই রয়েছে।
অমুসলিমরা মুসলিমদের সাথে মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি না বানানোর চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত পথটি চিরতরে বন্ধ করে দিতে পারে।
১.২.২ মুক্তিপণ বা বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তকরণের পরও যে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দি রয়ে যেত, তাদের নি:শর্তভাবে মুক্ত করে দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকিস্বরূপ ছিল, তেমনি কারাবন্দি করে রাখাও ছিল ব্যয়বহুল ও অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপস্বরূপ। সহজ পন্থা ছিল প্রচলিত নিয়মে ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হিসেবে তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া।
১.২.৩ যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হিসেবে বিভিন্ন পরিবারে বণ্টন করে দেবার ফলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকতো, অন্যদিকে মুনিবের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ করে ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি নিজেদের মুক্ত করার সুযোগও পেত। অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে খুব কাছে থেকে ইসলামকে পর্যবেক্ষণ করে ইসলামে দাখিল হবার একটি সুযোগও তাদের সামনে খোলা থাকতো।
দুই.
ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনী সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত:
ক্রীতদাসিদের (ক্রয়কৃত/অধিকারলব্ধ দাসি বা বণ্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী) জন্য কুরআনে ব্যবহৃত সাধারণ পরিভাষা হচ্ছে “মা- মালাকাত আইমানুকুম” বা “তোমাদের ডান হাতের মালিকাধীন/মালিকানাভুক্ত”। নিচে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনী সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত বা আয়াতের প্রাসঙ্গিক অংশের অনুবাদ তুলে ধরা হলো:
আয়াতসূত্র-১:
কেবল মুনিবের জন্য নিজ ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্কের অনুমোদন।
তবে তাদের স্ত্রী ও ডান হাতের মালিকানাভুক্তদের (দাসীদের) ক্ষেত্রে [যৌনাঙ্গকে] সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। [২৩:৬]
নোট: এই অনুমোদন নি:শর্ত নয়, পুরো পোস্টটি পড়ার পর এই অনুমোদনের ক্ষেত্র ও যৌক্তিকতা বুঝা যাবে।
আয়াতসূত্র-২:
বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীদের পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ধরা হবে।
এবং [তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ] বিবাহিত নারী তারা ব্যতিত যারা তোমাদের ডান হাতের মালিকাধীন। [৪:২৪, প্রাসঙ্গিক অংশ]
নোট: স্বামী ছাড়া যেসব বিবাহিত নারী যুদ্ধবন্দিনী হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজন্য, স্বামীসহ ধৃত হলে বিবাহ অক্ষুন্ন থাকে, দ্রষ্টব্য: সূত্র-৯]
আয়াতসূত্র-৩:
অন্যের ক্রীতদাসিকে মুনিবের অনুমতিক্রমে বিবাহের অনুমোদন ।
আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ৪:২৫]
আয়াতসূত্র-৪:
দাসীদের বিবাহ প্রদানের নির্দেশ
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩২]
আয়াতসূত্র-৫:
দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩৩]
তিন.
সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস, ফাতাওয়া ও আইন
সূত্র-১ (হাদিস)
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) আওতাসে ধৃত যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত এরশাদ বর্ণনা করেন: গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী নয় তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ না তার একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়। [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৭ ]
সূত্র-২ (হাদিস)
রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত: আমি কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন মাল বিক্রয় করা।” [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮ ]
সূত্র-৩ (হাদিস)
হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন:
‘উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ(রা.) এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ(রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ(রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি।” [সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫]
লক্ষ্য করুন:
৩.৩.১ খলিফা বা খলিফা হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক বণ্টন হবার আগে যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস করা যে অবৈধ সেটা সুবিদিত ছিল।
৩.৩.২ উক্ত কর্মটিকে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কেননা, উমর(রা.) এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে ব্যভিচারের হদ নির্ধারণ করেছেন।
সূত্র-৪ (হাদিস)
আমর বিন সুহাই’ব তার পিতার বরাতে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন তোমাদের কেউ তার ক্রীতদাসের সাথে তার ক্রীতদাসির বিবাহ দেয়, তার (ক্রীতদাসির) গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো তার (মুনিবের) জন্য উচিত নয়। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১১৩]
সূত্র-৫ (ফাতাওয়া)
মালিক (রহ.) বলেন যে, যদি কোন পুরুষ তার মালিকাধিন একজন ক্রীতদাসির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকে, অতঃপর সে তার (ক্রীতদাসির) বোনের সাথেও সম্পর্কে জড়িত হতে চায়, উক্ত বোন পুরুষটির জন্য হালাল নয় যতক্ষণ না (প্রথমোক্ত) ক্রীতদাসির সাথে তার সহবাস হারাম হয়ে যায়- বিবাহ, মুক্তকরণ, কিতাবা অথবা অনুরূপ কোন ঘটনার দ্বারা, যেমন যদি সে যদি তাকে (অর্থাৎ প্রথমোক্ত ক্রীতদাসিকে) তার ক্রীতদাসের সাথে বা অন্য কারো সাথে বিবাহ প্রদান করে। [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: বুক ২৮, হাদিস নং- ১১২৯]
সূত্র-৬ (হাদিস/ফাতাওয়া)
ইয়াহইয়া মালিক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ হতে এবং তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হতে বলেন, “কোন নারীকে তার ফুপু বা খালার সাথে একই সাথে বিবাহাধীনে রাখা নিষিদ্ধ এবং অন্য পুরুষের সন্তান গর্ভে ধারণকারি কোন ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ। [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: অধ্যায় ২৮, হাদিস নং-১১১৫]
সূত্র-৭ (ফাতাওয়া)
মালিক (রহ.) বলেন, “মুনিবের জন্য মালিকানা বলে খ্রিস্টান ও ইহুদি ক্রীতদাসি হালাল, কিন্তু মালিকানা বলে মাজুসি (magian) ক্রীতদাসির সাথে সহবাস হালাল নয়।” [মুয়াত্তা মালিক, ইংরেজি অনুবাদের বুক নং ২৮, হাদিস নং ৩৮]
সূত্র-৮ (হাদিস)
নুমান ইবনে বশির হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করেছিল: যদি সে (অর্থাৎ স্ত্রী) তাকে (অর্থাৎ ক্রীতদাসিকে) তার (অর্থাৎ তার স্বামীর) জন্য হালাল করে থাকে, তাকে (পুরুষটিকে) একশ বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি সে তাকে তার জন্য হালাল না করে থাকে, আমি তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব। [সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৫৯]
সূত্র-৯ (আইন গ্রন্থ)
“When the army takes a woman captive followed by her husband who is also taken captive sooner or later and either the woman does not have menses during that period or has had upto three menses but she is not taken out of the Territory of War before her husband is taken, their marriage shall continue. Whosoever of the two is taken captive and brought to the Territory of Islam before the other, their marriage shall cease to exist”
[সূত্র:Chapter II :The Army’s Treatment of the Disbelievers, passage 45, The Shorter Book on Muslim International Law, translated by Mahmood Ahmad Ghazi, মূল: কিতাবুস সিয়ার আস সাগির, লেখক: মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী ]
সূত্র-১০ (হাদিস)
আবু মুসা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামম বলেন, “যার কোন ক্রীতদাসি আছে এবং সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দেয়, তার সাথে সদ্ব্যবহার করে, অতঃপর তাকে মুক্তি প্রদান করে বিবাহ করে, সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে।” [সূত্র: বুখারি, অধ্যায় ৪৬, হাদিস নং-৭২০]
সূত্র-১১ (হাদিস)
ইয়াহইয়া মালিক হতে বর্ণনা করেন, তিনি শুনেছেন যে উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) তাঁর ছেলেকে একজন ক্রীতদাসি দান করে বলেন, “তাকে স্পর্শ করো না, যেহেতু আমি তাকে উন্মোচণ করেছি।” [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক, অধ্যায় ২৮, হাদিস নং ১১৩০]
সূত্র-১২
উমর (রা.) বলেন, “তার (ক্রীতদাসির) সন্তান তাকে মুক্ত করে যদিও তা মৃত হয়” [সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ২১৮৯৪]
সূত্র-১৩
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি তার সন্তান ধারণ করে, সে তার(মুনিবের) মৃত্যুর পর স্বাধীন হয়ে যায়।” [সূত্র: তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]
সূত্র-১৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তান গর্ভধারিণী ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করো না।” [তাবারানি’র মু’যাম আল কাবির, হাদিস নং-৪১৪৭]
চার.
ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্কের পন্থা
৪.১
৪.১.১ বৈবাহিক পন্থা
৪.১.১.১ নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা: দাসত্বে থাকা অবস্থায় নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা যায় না। কোন মুনিব যদি নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করতে চায়, তবে তাকে মুক্ত করে বিবাহ করতে হবে। অর্থাৎ আগে তাকে স্বাধীন করতে হবে, অতঃপর স্বাধীন নারী হিসেবে তাকে বিবাহ করতে হবে। এই ধরণের বিবাহকে ইসলামে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১০]
৪.১.১.২. অন্যের ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা: অন্যের ক্রীতদাসিকে মালিকের অনুমতিক্রমে বিবাহ করা যায়। [দ্রষ্টব্য: আয়াতসূত্র-৩]
২. অবৈবাহিক বা উপবৈবাহিক পন্থা (concubinage): এই পন্থা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা আসছে। তার আগে আমরা উপপত্নী (concubine) এবং উপবৈবাহিক বন্ধন (concubinage) সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করব।
৪.২
উপপত্নী ও উপবৈবাহিক বন্ধন:
৪.২.১ উপবৈবাহিক বন্ধনের (concubinage) ইসলামপূর্ব প্রচলন [সূত্র: ব্রিটানিকা]
কুরআন অবতরণের অনেক আগে থেকেই উপপত্নী গ্রহণ করা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিষয় ছিল।
৪.২.১.১ প্রাচীন গ্রিসে, উপপত্নী (গ্রিক "pallakis") রাখার প্রচলনের কথা সামান্য লিপিবদ্ধ থাকলেও এথেনিয়ান ইতিহাস জুড়েই তা বিদ্যমান ছিল। hetaera এর কিছু ব্যাখায় বলা হয়, তারা ছিল উপপত্নী যাদের কোন একজন পুরুষের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক ছিল।
৪.২.১.২ প্রাচীন রোমে ‘উপবিবাহ’ ছিল একটি প্রচলিত প্রতিষ্ঠান যা একজন পুরুষকে স্ত্রীভিন্ন এমন একজন নারীর (concubina, বহুবচনে concubinae) সাথে একটি অলিখিত কিন্তু স্বীকৃত বন্ধনে আবদ্ধ হবার অনুমতি প্রদান করে, যার নিচু সামাজিক মর্যাদা বিবাহের জন্য প্রতিবন্ধক ছিল। ধর্মীয় এবং পারিবারিক সংহতির জন্য হুমকিস্বরূপ না হওয়া অবধি ‘উপবিবাহ’ গ্রহণযোগ্য ছিল। “concubina” বলে পরিচিত হওয়াকে অসম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হতো না, কেননা এই উপাধি প্রায়ই সমাধিপ্রস্তরে খোদিত থাকতো।
৪.২.১.৩ প্রাচীন চীনে, সফল পুরুষরা প্রায়ই একাধিক উপপত্নী প্রতিপালন করতেন- চৈনিক সম্রাটগণ রাখতেন হাজার হাজার।
৪.২.২ উপপত্নী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
৪.২.২.১ কোন স্বাধীন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের কোন সুযোগ ইসলামে নেই।
৪.২.২.২ কিন্তু সমাজে দাসপ্রথা বিদ্যমান থাকলে নিজ ক্রীতদাসিকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের অনুমতি ইসলামে রয়েছে (বণ্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনীও ক্রীতদাসি হিসেবে পরিগণিত)। যে ক্রীতদাসির সাথে তার মুনিব শারিরিক সম্পর্ক স্হাপন করে, সে অন্যান্য ক্রীতদাসি থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। এ ধরণের ক্রীতদাসিকে বলা হয় সারিয়্যাহ বা উপপত্নী। আরবী সারিয়্যাহ শব্দটি ‘সির’ হতে আগত যার অর্থ বিবাহ। উপপত্নীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারি পুরুষের কোন বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদিত হয় না, কিন্তু সামাজিকভাবে স্বীকৃত এমন একটি বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় ইসলাম যার অনুমোদন প্রদান করে।
৪.৩ ইসলামে উপপত্নী ও স্ত্রীর সাদৃশ্য
ইসলামে উপপত্নী অনেকদিক দিয়েই স্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উপপত্নী সংক্রান্ত অনেক বিধানই স্ত্রীর বিধানের সাথে মিল রেখে করা হয়েছে। নিচে কিছু সাদৃশ্য তুলে ধরা হলো:
৪.৩.১ নিজের স্ত্রীর জন্য যেমন স্বামী ভিন্ন অন্য কারো সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ নয়, তেমনি উপপত্নী ক্রীতদাসির জন্য মুনিব ভিন্ন অন্য কোন পুরুষের সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ নয়। অর্থাৎ স্ত্রী এবং উপপত্নী উভয়েই একইসাথে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক রাখতে পারে।
৪.৩.২ কোন পুরুষ বিবাহ-বহির্ভূতভাবে কোন স্বাধীন নারীর সাথে যেমন দৈহিক সম্পর্ক রাখতে পারে না, তেমনি নিজ মালিকাধীন ক্রীতদাসি ভিন্ন অন্য কোন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি নিজ স্ত্রীর মালিকাধীন ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকেও ব্যভিচার হিসেবে গন্য করা হয়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৮]
৪.৩.২ একই সাথে দুই সহোদর বোনকে যেমন বিবাহ করা যায় না, তেমনি একই সাথে দুই সহোদর ক্রীতদাসিকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৫]
৪.৩.৩ পিতার উপপত্নী ক্রীতদাসির অবস্থান সন্তানদের জন্য নিজের মায়ের মতো। পিতার উপপত্নী ক্রীতদাসি পুত্রের জন্য সেরকমভাবেই হারাম যেভাবে তার আপন মা তার জন্য হারাম। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১১]
৪.৩.৪ নিজ স্ত্রীর সন্তান যেমন বৈধ ও স্বীকৃত, তেমনি উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান ও বৈধ এবং স্বীকৃত।
৪.৩.৫ উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান, স্ত্রীর সন্তানের মতোই মুক্ত সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়।
৪.৩.৬ উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান স্ত্রীর সন্তানদের মতোই পিতার সম্পত্তির উত্তারাধিকারী।
পাঁচ.
ক্রীতদাসি এবং যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে ইসলামী নিয়ন্ত্রণ ।
৫.১ বণ্টন হবার আগে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ
অনেকেই ভেবে থাকেন, যুদ্ধের ময়দানেই যে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যে কোন মুসলিম যোদ্ধা ইচ্ছেমতো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, ইসলামে এ ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ তো নেই-ই, বরং এটিই সম্ভবত ইসলামী নিয়ম। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। যুদ্ধক্ষেত্রে তো নয়ই এমন কি যুদ্ধ শেষ হলেও বন্টন হবার আগে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্হাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ যদি এ ধরণের কোন কার্যে লিপ্ত হলে তবে সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় এবং উক্ত ব্যক্তির ওপর ব্যভিচারের হদ প্রযুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, জিরার ইবনুল আযওয়ার খলিফা/খলিফা পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক বণ্টনের আগেই একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস করার কারণে উমর(রা.) তার ওপর ব্যভিচারের হদ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৩]
৫.২ যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামীসহ ধৃত যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ
বন্দি হবার পর সাধারণভাবে বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীর পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হিসেবে গণ্য করা হয়, ফলে তাদেরকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করা তথা তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ বিবেচিত হয়। [দ্রষ্টব্য: আয়াতসূত্র-২] যদি যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই একসাথে অথবা একজনকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধির বাইরে নিয়ে যাবার আগেই অন্যজন যুদ্ধবন্দি/বন্দিনী হিসেবে ধৃত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ-বন্ধন অক্ষুন্ন থাকবে, ফলে উক্ত যুদ্ধবন্দিনীর সাথে স্বামী ভিন্ন অন্য কারো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ হবে। যদি শুধুমাত্র একজন যুদ্ধক্ষেত্রে ধৃত হয়ে ইসলামী সীমানায় পৌঁছে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হিসেবে গণ্য হবে। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৯]
৫.৩ ইদ্দতকাল অতিবাহিত হবার আগে ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ
ক্রীতদাসি ক্রয় করলেই বা বন্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী লাভ করার সাথে সাথেই একজন মুসলিমদের জন্য তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হয়ে যায় না, বরং এক ইদ্দতকাল (তথা একটি মাসিক চক্র) অতিবাহিত হবার আগে তাদের সাথে মিলিত হওয়া নিষিদ্ধ। [এই নিয়ম সেসব ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীদের জন্য যারা গর্ভবতী নন] [ দ্রষ্টব্য: সূত্র-২]
৫.৪ গর্ভবতী ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
ক্রয়কৃত ক্রীতদাসি বা বন্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী যদি গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান প্রসবের আগে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ। [ দ্রষ্টব্য: সূত্র-১, সূত্র-২]
৫.৫ বিবাহিত ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
যদি মুনিবের অনুমতিক্রমে কোন ক্রীতদাসি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক তো বটেই এমনকি যৌনাঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৪]
৫.৬ যে ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে তার বোনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
যদি সহোদর দুই বোন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি হিসেবে থাকে, মুনিব কোন একজনের সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়িত থাকা অবস্থায় অন্য জনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৫]
৫.৭ নিজ মালিকাধীন নয় এমন ক্রীতদাসির সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ
নিজের মালিকাধীন ক্রীতদাসি ব্যতিত অন্য কারো ক্রীতদাসির সাথে বিবাহ-বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ (এমনকি নিজের স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথেও) এবং তা ব্যভিচার হিসেবে পরিগণিত। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৮]
ছয়.
ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্ককে অনুমোদনের যৌক্তিকতা
৬.১ ক্রীতদাসির জৈবিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিতকরণ
ইসলামে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যৌন চাহিদার স্বীকৃতি এবং তা পূরণের বৈধ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইভাবে ক্রীতদাসদাসিদের যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ ব্যবস্থাও ইসলামে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ক্রীতদাসিকে পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করার মতো ঘৃণ্য প্রথাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। নিজ ক্রীতদাসিকে শিক্ষদীক্ষা দিয়ে মুক্ত করে বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু কোন কারণে মুনিব যদি ক্রীতদাসিকে মুক্ত করতে অপারগ হয় সেক্ষেত্রে হয়তো তাকে নিজের সাথে জৈবিক বন্ধনে আবদ্ধ রাখবে (উপপত্নী হিসেবে) অথবা অন্য কারো বিবাহাধীনে দিয়ে দেবে। অর্থাৎ যে কোন অবস্থায় ক্রীতাদাসির জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রীতদাসিকে বিবাহ প্রদানের মাধ্যমেই যেখানে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব ছিল সেখানে মুনিবের জন্য ক্রীতাদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার বহাল রাখার যৌক্তিকতা কী ছিল? এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
৬.২ মুনিবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক অনুমোদনের যৌক্তিকতা
মনে রাখতে হবে ইসলাম ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটায়নি, বরং দাসপ্রথায় যেখানে ক্রীতদাসি যৌনপণ্যর মতো যার ইচ্ছে তার উপভোগের সামগ্রী ছিল, ইসলাম সেটাকে একজন মাত্র পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে। সেই পুরুষ হয়তো তার মুনিব অথবা তাকে বিবাহকারী স্বামী। একজন ক্রীতদাসির জন্য অন্য কোন পুরুষকে বিবাহ করার চেয়ে নিজ মুনিবের সাথে দৈহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুবিধা হচ্ছে:
৬.২.১ সন্তানের মুক্তি
৬.২.১.১ দাসপ্রথা অনুসারে একজন মুনিবের ক্রীসদাসির সন্তান (যে উক্ত মুনিবের ঔরসজাত নয়, ক্রীতদাসির স্বামীর সন্তান) উক্ত মুনিবের ক্রীতদাস হিসেবে গণ্য হয়।
৬.২.১.২ কিন্তু ক্রীতদাসির সন্তান যদি মুনিবের ঔরসজাত হয়, তবে সে উক্ত মুনিবের সন্তান হিসেবে গণ্য হয়। ফলে সে সন্তান স্বাধীন ও পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
৬.২.২ ক্রীতদাসির সামাজিক মর্যাদা ও মুক্তির সুযোগ
আমরা আগেই দেখে এসেছি, ইসলামে মুনিবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকারি ক্রীতদাসি তথা উপপত্নী অনেকটাই তার স্ত্রী-সদৃশ। ইসলাম মুনিবের সন্তানধারণকারি ক্রীতদাসির সামাজিক মর্যাদাকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে তার মুক্তির একটি পথকেও উন্মুক্ত করেছে:
৬.২.২.১ ক্রীতাদাসি মুনিবের সন্তান গর্ভে ধারণ করার সাথে সাথে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত ক্রীতদাসি মুনিবের পরিবারের স্থায়ী সদস্যে পরিণত হয়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১৪]
৬.২.২.২ ক্রীতদাসি মুনিবের সন্তান প্রসব করলে (জীবিত অথবা মৃত) উক্ত ক্রীতদাসি ‘উম ওয়ালাদ’ বা ‘সন্তানের মা’ হিসেবে অভিহিত হয়। সেই সন্তান মুনিবের বৈধ, স্বাধীন সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং পিতার সম্পত্তির ঠিক সেরকম উত্তরাধিকার পায় যেরকম স্ত্রী’র সন্তানরা পেয়ে থাকে।
৬.২.২.৩ মুনিবের মুত্যুর পর ‘উম ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসি মুক্ত হয়ে যায়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১২, সূত্র-১৩]
কাজেই, দেখা যাচ্ছে ক্রীতদাস প্রথায় ক্রীতদাসির ওপর অনিয়ন্ত্রিত যে যৌনাচারের সুযোগ ছিল, ইসলাম সেটাকে নিয়ন্ত্রিত, মানবিক করে তুলে প্রচলিত উপবৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গিয়ে –
একদিকে ক্রীতদাসির সন্তানকে মুক্ত, বৈধ ও পিতার সম্পত্তির উত্তারিধারী হবার সুযোগ দিয়েছে,
অন্যদিকে ক্রীতদাসিকে দিয়েছে একটি পারবারিক ঠিকানা ও মুক্তির পথ।
পরিশেষ:
সমালোচনা করাই যাদের লক্ষ্য তারা সমালোচনা করবেই, কিন্তু চিন্তা ও উপলদ্ধির দ্বার যারা এখনো বন্ধ করেন নাই আশা করি লেখাটি পড়ে স্পর্শকাতর এই বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অনেক ভুল ধারণারই অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।