আবু-বকর আল-বায়হাকী তাঁর 'আস-সুনানুল কুবরা' (2/320) তে বর্ননা করেছেন :
وَأَخْبَرَنَا أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْحِرَفِيُّ بِبَغْدَادَ أنبأ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ الْكُوفِيُّ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ، ثنا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ جَدِّهِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: " كُنَّ إِمَاءُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَخْدِمْنَنَا كَاشِفَاتٍ عَنْ شُعُورِهِنَّ تَضْرِبُ ثُدِيُّهُنَّ
'আমাদের আবুল-কাসিম আব্দুর-রহমান বিন উবাইদুল্লাহ আল-হিরাফী বাগদাদে বর্ননা করেছেন যে……আনাস বিন মালিক (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেছেন : উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দাসীরা আমাদের খেদমত করতেন, চুল খোলে রাখা অবস্থায়, যা তাদের স্তনে বাড়ি খেত'
অনেকে দাবি করে যে এখানে বলা হয়েছে 'تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ' অর্থাৎ 'তাদের (দাসীদের) স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো '। কিন্ত এটা আসলে সঠিক না। উক্ত হাদিসে এমন কিছু বলা হয়নি, বরং এই হাদিসটিতে বলা হয়েছে 'كَاشِفَاتٍ عَنْ شُعُورِهِنَّ تَضْرِبُ ثُدِيُّهُنَّ' যাদ্বারা স্পষ্ট হয় যে 'তাদের চুলগুলো স্তনে বাড়ি খেত'। এখানে 'তাদের স্তনগুলো দোল খেত' বা এই ধরনের কোনোকিছু বলা হয়নি।
এই বর্ননাটাকে উল্লেখ্য করতে গিয়ে কিছু আলেম تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা কিনা সঠিক না।আস-সুনানুল কুবরা আমাদের সামনে আছে, এবং আমরা দেখতে পারছি যে আল-বায়হাকী "تَضْرِبُ" বর্ননা করেছেন "تَضْطَرِبُ" নয়!
পক্ষান্তরে "দাসীদের স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো" - এই কথাটিসহ উল্লেখিত হাদিসটি বর্নিত হয়েছে 'ইয়াহইয়া বিন সালাম' এর রিওয়ায়েতে।
ইয়াহইয়া বিন সালাম তাঁর 'তাফসিরে'(1/441) উল্লেখিত হাদিসটিকে কিছুটা ভিন্ন শব্দে বর্ননা করেছেন :
وَحَدَّثَنِي حَمَّادٌ وَنَصْرُ بْنُ طَرِيفٍ، عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كُنَّ جَوَارِي عُمَرَ يَخْدُمْنَنَا كَاشِفَاتِ الرُّءُوسِ، تَضْطَرِبُ ثُدِيُّهُنَّ بَادِيَةً خِدَامُهُنَّ
'আমাকে হাম্মাদ ও নাসর বিন তারিফ সম্মিলিতভাবে বর্ননা করেছেন ছুমামাহ বিন আনাস বিন মালিক হতে যে আনাস বিন মালিক (রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন : উমারের (রা) দাসীরা আমাদের খেদমত করতো, মাথা খোলা রাখা অবস্থায়, তাদের স্তনগুলো দোল খেত/ বিশৃংখল হয়ে যেতো, উরু (হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত দেহাংশ) একদম প্রকাশ্য উন্মুক্ত থাকতো '
কিন্ত 'ইয়াহইয়া বিন সালাম ' কে আদ-দারাকুতনী, ইবন আদী, আল-হাকিম, আল-বায়হাকী,ইবনুল যাওযি, আয-যাহাবী এবং ইবন হাজার 'যইফ/শক্তিশানী নয়/প্রচুর ভুলকারী' বলেছেন। সুতরাং রাবি হিসেবে ইয়াহইয়া বিন সালাম 'যইফ'।
[দেখুন : আল-ইলাল (5/117), আস-সুনান (1862) & (3271),আল-কামিল (9/126),
মুখতাসারু তালখিসিয যাহাবী (1/528), ফাতহুল বারী (4/243),আদ-দুয়াফা ওয়াল মাতরুকিন (3/196),আল-খিলাফিয়াত (2/430) এবং http://hadith.islam-db.com তে তার তরজমাহ ]
সুতরাং ইয়াহইয়া বিন সালামের বর্নিত উক্ত রেওয়ায়েতটি 'যইফ', যার অর্থ এটি গ্রহনযোগ্য নয়।
অপরদিকে, আল-বায়হাকীর আস-সুনানুল কুবরা গ্রন্থে বর্নিত রেওয়ায়েতটিও নির্ভর করার মতো না।
আল-বায়হাকীর 'আস-সুনানুল কুবরা' (2/320) তে বর্নিত রেওয়ায়েতটির সনদ নিম্নরুপ :
وَأَخْبَرَنَا أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْحِرَفِيُّ بِبَغْدَادَ أنبأ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ الْكُوفِيُّ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ، ثنا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ جَدِّهِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ
এই সনদটিতে একজন রাবি হলেন 'হাম্মাদ বিন সালামাহ'। হাম্মাদ বিন সালামাহ একজন বড়মাপের মুহাদ্দিস ও রাবি হিসেবে নির্ভরযোগ্য ছিকাহ ছিলেন । কিন্ত বৃদ্ধ হয়ার পর তাঁর স্বরনশক্তি ক্রুটিপুর্ন ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।
বৃদ্ধ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি ক্রুটিপুর্ন ও বিকৃত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিভংগি নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো :
এক. আবু-বকর আহমদ ইবনুল-হুসাইন আল-বায়হাকী -
হাম্মাদের ব্যাপারে আল-বায়হাকী বলেছেন :
هو أحد أئمة المسلمين إلا أنه لما كبر ساء حفظه فلذا تركه البخاري وأما مسلم فاجتهد وأخرج من حديثه عن ثابت ما سمع منه قبل تغيره
'তিনি (হাম্মাদ) মুসলিমদের ইমামদের অন্তর্ভুক্ত একজন, কিন্ত যখন তিনি বৃদ্ধ হন, তাঁর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে যায়, এবং একারনেই আল-বুখারি তাকে পরিত্যাগ করেছেন। আর যদি কথা আসে মুসলিমের, তিনি ইজতেহাদ করেছেন এবং তাঁর (হাম্মাদের) ছাবিত হতে বর্নিত সেইসমস্ত হাদিস থেকে বর্ননা উল্লখ্য করেছেন, যেগুলো হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ার পুর্বে তাঁর (হাম্মাদের) নিকট হতে শ্রবন করা হয়েছে।'
→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]
আল-বায়হাকী আরো বলেছেন :
وَحَمَّادٌ سَاءَ حِفْظُهُ فِي آخِرِ عُمُرِهِ، فَالْحُفَّاظُ لَا يَحْتَجُّونَ بِمَا يُخَالِفُ فِيهِ
"এবং জিবনের শেষের দিকে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো,কাজেই হাফেযরা (হাম্মাদের)সেইসব হাদিস দ্বারা দলিল দেন না যেগুলোতে হাম্মাদ ভিন্নতা প্রকাশ করেন"
→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (4/285)&আস-সুনানুল কুবরা (8/46)]
দুই. আল-ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী -
ইমাম আল-বুখারী 'হাম্মাদ বিন সালামাহ' এর বর্নিত হাদিসগুলো দ্বারা ইহতিজাজ করেন নি শুধুমাত্র এই কারনে যে, বৃদ্ধ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বিকৃত ও ক্রুটিপুর্ন হয়ে গিয়েছিল
→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]
তিন. আল-ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কাশিরী -
তিনি জানতেন যে হাম্মাদের স্বরনশক্তি শেষ বয়সে ক্রুটিপুর্ন হয়ে গিয়েছিল, তাই তিনি ইজতিহাদের দ্বারা হাম্মাদের সেই বর্ননাগুলোকে নির্দিষ্টভাবে বাছাই করেছেন, যেগুলো হাম্মাদ তাঁর স্বরনশক্তিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়ার পুর্বে বর্ননা করেছেন ও শুনেছেন
→[দেখুন : আল-খিলাফিয়াত (2/50); তাহযিবুত তাহযিব (3/14) ]
চার. আল-ইমাম আহমদ বিন হানবল আশ-শাইবানী আয-যুহলী-
আবু-বকর আল-বায়হাকী, ইমাম আহমদ হতে নক্বল করে বলেন :
'قَالَ الشَّيْخُ أَحْمَدُ: حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ سَاءَ حِفْظُهُ فِي آخِرِ عُمْرِهِ. فَلَا يُقْبَلُ مِنْهُ مَا يُخَالِفُهُ فِيهِ الْحُفَّاظُ'
'এবং শায়খ আহমদ বলেছেন : শেষ বয়সে হাম্মাদ বিন সালামাহ এর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো, সুতরাং তাঁর (হাম্মাদের) নিকট হতে এমন হাদিস গ্রহন করা হবেনা যেগুলোর ক্ষেত্রে (অন্যান্য) হাফেযরা হাম্মাদের প্রতি ভিন্নতা প্রকাশ করেছেন। '
→[দেখুন : মা'রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার (2/212) ]
পাচ. আবু-হাতেম মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস ইবনুল মুনযির আর-রাযী -
আবু-হাতিম আর-রাযী বলেছেন :
وكان حماد ساء حفظه في آخر عمره
'এবং শেষ বয়সে হাম্মাদের স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো'
→[দেখুন : আজ-জারহু ওয়াত তা'দিল (9/66)]
ছয়. আবুল-ফাদ্বাল আহমদ ইবন হাজার আল-আসকালানী -
ইবন হাজার আল-আসকালানী বলেছেন :
حماد بن سلمة بن دينار البصري، أبو سلمة، ثقة عابد، أثبت الناس في ثابت وتغير حفظه بأَخَرَةٍ
'হাম্মাদ বিন সালামাহ বিন দিনার আল-বসরী, আবু-সালামাহ,ছিকাহ আবিদ, ছাবিতের ক্ষেত্রে মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এবং শেষ বয়সে তাঁর স্বরনশক্তি বাজে হয়ে গিয়েছিলো।'
→[দেখুন : তাকরিবুত তাহযিব (রাবি/1499)]
সাত. যাইনুদ্দিন আবুল-বারাকাত ইবনুল কিয়াল আল-খাতিব :
ইবনুল কিয়াল তাঁর "আল-কাওয়াকিবুন নাইরাত ফি মা'রেফাতে মান ইখতালাতা মিনার রুয়াতিছ ছিকাত"(পৃ/460) এ হাম্মাদকে উল্লেখ্য করেছেন
আট. বুরহানুদ্দিন আবুল-ওয়াফা সাবাত ইবনুল-আজামী :
সাবাত ইবনুল আজামী তাঁর "আল-ইগতিবাত বিমান রুমিয়া বিল-ইখতিলাত"(রাবি/28) গ্রন্থে হাম্মাদকে উল্লেখ্য করেছেন।
এইক্ষেত্রে আলোচ্য হাদিসটি হাম্মাদ ছাড়া আর কেওই বর্ননা করেন নি (ইয়াহইয়ার রেওয়ায়েত অনুযায়ি নাসর বিন তারিফ হাম্মাদের সহিত বর্ননা করে মুতাবায়াত করেছেন, কিন্ত নাসরের বর্ননা বিবেচনারই যোগ্য না, কেননা নাসর ছিলো একজন হাদিস জালকারী মিথ্যুক)। যেহেতু হাম্মাদের বৃদ্ধবয়সে স্বরনশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, এবং তিনি ছাড়া আর কেওই উক্ত হাদিস বর্ননা করেন নি ; সুতরাং হাম্মাদের বর্নিত এই হাদিসটিও নির্ভরযোগ্য না।