অভিযোগ: একটি হাদিসে এসেছে যে আল্লাহ কিছু মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাদের দ্বারা তিনি জাহান্নামের যাওয়ার মত আমল করিয়ে নেন। তাহলে জাহান্নামীদের দোষটা কি? আল্লাহ তাদের দ্বারা জাহান্মামে যাওয়ার মত আমল করিয়েছেন বলেইত তারা জাহান্নমে যাবে! এটাকি একটা অন্যায় অবিচার নয়!
জবাব : যেই হাদিসের কথা বলা হচ্ছে সেই হাদিসটিই যইফ। এই হাদিসটির যইফ হয়া প্রসংগে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী তার "সিলসিলাতুল আহাদিসিদ্ব দ্বয়িফাহ ওয়াল মাওদ্বুওয়াহ(7/73) " গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ্য করা হলো :
3071-আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করিলেন এবং তাহার পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মুসেহ করিলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার সন্তানদেরকে বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা বেহেশতের কাজ করবে। অতঃপর পুনরায় তাহার পৃষ্ঠদেশে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বুলাইলেন এবং তাহার আর কিছু সংখ্যক সন্তান বাহির করিলেন এবং বলিলেন, আমি ইহাদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি। ইহারা দোযখের কাজ করবে। এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহা হইলে আমল করায় লাভ কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু পাক যখন কোন বান্দাকে বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তাহার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময়েও সে নেক কাজ করিয়া মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাহাকে বেহেশতে প্রবেশ করাইয়া থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তাহার দ্বারা দোযখীদের কাজ করাইয়া থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাহাকে খারাপ কাজ করাইয়াই মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ তখন তাহাকে দোযখে প্রবেশ করাইয়া থাকেন
হাদিসটি "যইফ "। এটি বর্ননা করেছেন মালিক "আল-মুয়াত্তা(2/898/2)" তে, এবং তার থেকে আহমদ (1/44-45), ও অনুরুপ আবু দাউদ(4703), আত-তিরমিযি(2/180), ইবন হিব্বান(1804), আলহাকিম(1/27), ইবন আসাকির(9/398/1) । ও ইবন আবি আসিম "আস-সুন্নাহ (195) " তে যাইদ বিন আবি আনিসাহ হতে, তিনি (যাইদ) আব্দুল হামিদ বিন আব্দির রহমান বিন যাইদ বিন আলখাত্তাব হতে, তিনি (আব্দুলহামিদ) মুসলিম বিন ইয়াসার আল-জাহনী হতে, যে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) কে "ওয়া ইজ আখাযা রাব্বুকা বিন মানি আদামি মিন যুহুরিহিম যারইয়াতিহিম ওয়া আশহুদিহিম আলা আনফুসিহিম " এই আয়াত (172/আল-আ'রাফ) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। তিনি (উমার) বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি "সে কি তা সম্পর্কে প্রশ্ন করছে "?, তারপর তিনি (সা) বলেন : …( অতপর পুরো হাদিসটি উল্লেখ্য করেন) ।
এবং আত-তিরমিযি বলেছেন : "হাসান হাদিস। মুসলিম বিন ইয়াসার, উমার হতে শ্রবন করেনি। (মুহাদ্দিসদের) কেও কেও এই সনদে মুসলিম বিন ইয়াসার ও উমারের মাঝে একজন অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে উল্লেখ্য করেছেন "।
অপরদিকে আলহাকেম বলেছেন : "বুখারি মুসলিমের শর্তে সহিহ "?
আয-যাহাবি এক্ষেত্রে শুধু বলেছেন : "আমি বলছি এতে ইরসাল আছে "।
(সনদের মধ্যের) এই মুসলিম বিন ইয়াসার। তিনি শায়খায়নদের রিজালদের কেও নন। তাছারা তার পরিচয়ও জানা যায়না। আয-যাহাবি নিজে তার "আল-মিযান " এ তার (মুসলিম বিন ইয়াসার এর) জিবনীতে বলেছেন : "শুধুমাত্র আব্দুল হামিদ বিন আব্দির রহমান বিন যাইদ বিন আলখাত্তাব তার নিকট থেকে বর্ননা করেছেন "।এর অর্থ হলো তিনি (মুসলিম বিন ইয়াসার) মাজহুল।
অপরদিকে আবু দাউদ (4704), ও ইবন আবি আসিম (200)ও আল-বুখারি "আত-তারিখ (4/2/97)) " এ, ও ইবন আসাকির ভিন্ন দুইটি সুত্রে যাইদ বিন আবি আনিসাহ হতে, তিনি (যাইদ) আব্দুল হামিদ বিন আব্দির রহমান হতে, তিনি (আব্দুলহামিদ) মুসলিম বিন ইয়াসার হতে, তিনি (মুসলিম) নুয়াইম বিন রাবিয়াহ হতে, তিনি (নুয়াইম) বলেন : আমি উমারের (রা) সাথে ছিলাম। তখন একজন লোক আসল ও উনাকে "ওয়া ইজ আখাযা রাব্বুকা বিন মানি আদামি মিন যুহুরিহিম যারইয়াতিহিম ওয়া আশহুদিহিম আলা আনফুসিহিম " এই আয়াত (172/আল-আ'রাফ) সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তারপর উমার (রা) (উত্তরে) বললেন : আমি নবি (সা) এর নিকট ছিলাম,… তারপর মালিকের হাদিসের অনুরুপ বর্ননা করেন।
এবং নুয়াইম বিন রাবিয়াহ "মাজহুল " যেমনটা বলেছেন আয-যাহাবি।তিনি সেই মাজহুল ব্যাক্তি যার দিকে আত-তিরমিযি ইংগিত দিয়েছেন। সুতরাং সে (নুয়াইম) হাদিসটির একটি ইল্লত (ক্রুটি)। হাফেয ইবন কাসির তার তাফসিরে ইমাম আদ-দারকুতনী হতে নকল করেছেন যে তিনি (আদ-দারকুতনী) এই বর্ননাটির মাধ্যমে মালেকের মুনকাতিঈ বর্ননাটিকে সংশোধন করে নিয়েছেন। তারপর তিনি (ইবন কাসির) বলেন : এবং এটা স্পষ্ট যে ইমাম মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে নুয়াইম বিন রাবিয়াহ উল্লেখ্য করেন নি, কেননা তিনি নুয়াইমের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না ও তাকে চিনেন নি। অবশ্যই সে (নুয়াইম) এই হাদিস ব্যাতিতও অপরিচিতই। এই কারনে তিনি পুরো একটি জামাতকেই উনার নিকট ভালো মনে না হয়ায় উল্লেখ্য করেন নি ।এবং এভাবে তিনি বহু মারফুকে মুরসাল ও বহু মাওসুল কে মুনকাতিই করেছেন।
আদমের পিঠ থেকে বংশধর বের করা সম্পর্কে অন্যান্য সহিহ হাদিস আছে। এর কিছু কিছু আস-সাহিহাহ গ্রন্থে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এসবের কোনোটিতে ঘার মাসেহ করার কথা নেই, শুধু আবু হুরাইরাহর একটি বর্ননাতে আছে যা যিলালুজ জান্নাহ গ্রন্থে তাখরিজকৃত হয়েছে। এসবের একটিতেও উক্ত আয়াতের কথা উল্লেখ্য নেই।
…(আল-আলবানির আলোচনা সমাপ্ত)