Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

হিন্দুধর্মে গরুর মাংস খাওয়া কী নিষেধ? পর্ব-২

পর্ব-১ এ, আমরা আলোচনা করেছিলাম এ বিষয়ে। এই মাংস খাওয়া-কে কেন্দ্র করে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মুসলিমরা ভারতে অত্যাচার নির্যাতিত হচ্ছে। আসুন জেনে নিই হিন্দুধর্মের কী সত্যি গরুরু মাংস খেতে নিষেধ করে?

গরুর মাংস খাওয়া হিন্দুধর্মে বৈধ কি অবৈধ তা নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। আজ আমরা দেখবো প্রাচীনকালে হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে হিন্দু ধর্মের প্রাচীন শাস্ত্রগ্রন্থাদি কি বলছে!


অর্থশাস্ত্র, চরক, অষ্টাধ্যায়ীতে মাংস খাওয়ার বিধান–
অর্থশাস্ত্রে উল্লেখিত রয়েছে-
(মাংসবিক্রয়বিধি:) মৃগ-পশূনামনস্থি মাংসং সদ্যোহতং বিক্রীণীরন্। অস্থিমতঃ প্রতিপাতং দদ্যুঃ। তুলাহীনে হীনাষ্টগুণম্। (সর্বথা অবধ্যা: প্রাণিন: তদ্বধে দণ্ড শ্চ-) বৎসো বৃষো ধেনুশ্চৈষামবধ্যাঃ। ঘ্নতঃ পশ্চাশৎকো দণ্ড: ক্লিষ্টঘাতং ঘাতয়শ্চ। ২/২৬/৩।
অনুবাদ: (মাংস বিক্রেতা) মৃগ ও পশুদের অস্থিবিহীন সদ্যোহত (নতুন বা শুদ্ধ) মাংস হাড়ছাড়া তাজা মাংস (বাজারে) বিক্রয় করবে। বিক্রীত মাংস যদি অস্থিযুক্ত হয়, তাহলে বিক্রেতাকে প্রতিপাত অর্থাৎ অস্থির সমান ওজনের মাংস অস্থির বদলে পূরণ করে দিতে হবে। মাংস যদি কাউকে ওজনে কম দেওয়া হয় (তুলাহীনে), তাহলে বিক্রেতা যে পরিমাণ মাংস কম দিয়েছে; তার আটগুণ বেশী দণ্ড দিতে বাধ্য থাকবে। (অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)
অর্থশাস্ত্র বলছে, সে সময়ে মৃত গরুর চামড়া ব্যবহার করা হত–
জরদগু-ধেনু-গর্ভিণী-পষ্ঠোহী-বৎসতরীণাং সমবিভাগং রূপশতমেক: পালয়েৎ। ঘৃতস্যাষ্টৌ বারকান্, পণিকং পুচ্ছম্, অঙ্কচর্ম চ বার্ষিকং দদ্যাদিতি করপ্রতিকর: ২/২৯/২।
অনুবাদ: জরদগু (অর্থাৎ জরদগবী, বৃদ্ধ গাই), ধেনু (দুধ দেয় যে গাই), গর্ভিণী গাভী, পষ্টোহী (প্রথম গর্ভবতী গাভী বা বৃষ-গবেষণী অর্থাৎ যে গাভী কোনও বৃষের সাথে সঙ্গত হতে চায়) ও বৎসতরী (যে গাভী অল্প দিন আগে স্তন্যপান ত্যাগ করেছে) এই পাঁচ জাতীয় গাভীকে সমবিভাগ করে (অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকার গাভী কুড়িটি করে নিয়ে) রূপশত গাভী (অর্থাৎ মিলিতভাবে জরদগু প্রভৃতি একশত গাভী) একজন গোপালক পালন করবে। এই পালক প্রতি বৎসর আট বরাক (=৮৪ কুডুব) ঘি, পুচ্ছ গণনায় দেয় ১ পণ কর (অর্থাৎ প্রত্যেক পশুর জন্য ১ পণ কর; অতএব ১০০ টি পশুর জন্য ১০০ পণ কর) এবং অঙ্কচর্ম অর্থাৎ পশু মৃত হলে তার চামড়া রাজমুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে গোহধ্যক্ষকে দেবে। এই প্রকার গোরক্ষণ এবং গবাদি পশু থেকে উৎপন্ন দ্রব্য মালিককে দানকরা-রূপ ব্যাপারকে করপ্রতিকর বলা হয়। (অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়)

কারণমৃতস্যাঙ্কচর্ম গো-মহিষস্য, কর্ণলক্ষণম্ অজাবিকানাং পুচ্ছমঙ্কচর্ম চাশ্বখরোষ্ট্রাণাং, বালচর্মবস্তিপিত্তস্নায়ুদন্তখুরশৃঙ্গস্থীনিচাহরেয়ু: ২/২৯/৬
অনুবাদ: গোপালক (ব্যাধি, জরা প্রভৃতি স্বাভাবিক)– কারণে মৃত গরু ও মহিষের চামড়া রাজমুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে, ছাগল ও মেষের কান ঐ রকম মুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে গোহধ্যক্ষকে (যাতে গোহধ্যক্ষের প্রত্যয় হয় যে, স্বাভাবিকভাবেই ঐ সব পশুর মৃত্যু হয়েছে); (গোপালক) ঐ সব মৃত পশুর লোম, চর্ম, বস্তু (মূত্রাশয়), পিত্ত, স্নায়ু (অন্ত্র), দাঁত, খুর, শিং এবং অস্থি (হাড়) আহরণ করে আনবে (এবং সম্ভবত, এই জিনিসগুলি রাজকীয় ক্যুপগৃহে জমা দিতে হবে)। (অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)। এর পরেই বলা আছে মৃত পশুর মাংস বিক্রি করা যাবে। আর গরু মারা গেলে নিশ্চয়ই তার মাংস ও বিক্রি করা যাবে। এতে বিন্দু পরিমাণে সন্দেহের অবকাশ নেই।
মাংসম্ আমম্ আর্দ্রং শুষ্কং বা বিক্রীণীয়ু: ২/২৯/৭।
অনুবাদ: (মৃত পশুর) মাংস অপক্ক, আর্দ্র অবস্থায় বা শুকিয়ে নিয়ে বিক্রয় করতে হবে। (অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)।

চরক সংহিতায়- এটি প্রাচীন ভারতের এক মহা চিকিৎসা গ্রন্থ। জেনে অবাক হবেন যে, এতেও ঔষধ হিসাবে গোমাংস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। চরক সংহিতা ১/২৭ এ বলা হয়েছে-

গব্যং কেবলবাতেষু পীনসে বিষমজ্বরে।শুষ্ককাসশ্রমাত্যগ্নিমাংসক্ষয়হিতশ্চ তৎ।
অর্থাৎ, গোমাংস কেবল বায়ুরোগ, পীনস রোগ, বিষমজ্বরে, শুষ্ককাসে, পরিশ্রমজনিত ক্লান্তিতে , অতিশয় অগ্নিতে এবং দেহের মাংসক্ষয়ে বিশেষ হিতকর। (অনুবাদক- শ্রী সতীশচন্দ্র শর্মা) বিস্তারিত

অষ্টাধ্যায়ীতে –
পাণিনি ছিলেন চতুর্থ-ষষ্ঠ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের একজন বিখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ। তিনি অষ্টাধ্যায়ী নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। অষ্টাধ্যায়ীতে একটি সূত্র রয়েছে, সেটি হল – দাশগোঘ্নৌ সম্প্রদান। শ্রীশচন্দ্র বসুর অনূদিত অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলা আছে -
⚠️दाशगोपनौ संप्रदाने ॥ ७३ ॥ पदानि ॥ दाश-गोधनौ, संप्रदानो वृत्तिः ॥ दाशगोधूनो शब्दो सम्प्रदाने कारके मिपात्येते॥
73. The word 'dâśa' and 'goghna' are irregularly formed, and the affix in these denotes the idea of the Dative or Recipient. The word comes from the root ar 'to give' by adding the affix under rule III. 1. 134. This being a word would have other wise denoted the agent by rule III. 4. 67 of this chapter. The present sûtra makes it denote the recipient or have the force of the dative case. Thus दाव means 'to whom somethiing is given i. e. a servant'. Similarly goghna does not mean 'the killer of cow' but he on whose coming the cow is killed in order to give him, that is to say, a guest'. It is this irregularly-formed word goghna which is made applicable to the priests, guests, sons-in-law &c, and not the re gularly-formed word goghna which means 'a killer of cow' or a 'Chandal'.
সারমর্ম: একইভাবে গোঘ্ন মানে গরু হত্যাকারী নয়' বরং যাঁর আগমনে গরু মেরে ফেলা হয় তাকে দেবার জন্য অর্থাৎ অতিথি বলা হয়। এই অনিয়মিতভাবে গঠিত শব্দ গোঘনা যা পুরোহিত, অতিথি, জামাই এবং গ-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, আবার গলিতভাবে গঠিত শব্দ গুঘনা নয় যার অর্থ 'গরু হত্যাকারী' বা 'চন্ডাল'।

এসব শাস্ত্র থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে সে সময় হিন্দু ধর্মে গোভক্ষণ বৈধ ছিলো। কিন্তু তাও কিছু হিন্দুরা তা অস্বীকার করবে।

 

পর্ব-১ পড়ে নিন– Click Here