Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

ইবনু উমার (রা) কর্তৃক বাজারে একজন দাসীর দেহের বিভিন্ন অংগে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে।

 

বিষয় : ইবনু উমার (রা) কর্তৃক বাজারে একজন দাসীর দেহের বিভিন্ন অংগে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে।

লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

0. সুচিপত্র :-

1. সুচনা।
2. বর্ণনাগুলোর উপস্থাপনা।
3. মূল আলোচনা।
4. পরিশিষ্ট ।

1. সুচনা :-

সাহাবী ইবনু উমার (রা) এর ব্যাপারে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে তিনি (রা) একদা বাজারে যান, এবং একটি দাসী ক্রয় করার ইচ্ছা করেন, অতঃপর বাজারের এক দাসীর নিতম্ব, স্তন, পেট, কোমড়, ঊরু,ও তার শরীরের কিছু অংশ নিজ হাত দ্বারা হাতিয়ে দেখেন।

এই লেখাটিতে এব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মূল আলোচনায় যাওয়ার পুর্বে, এই বর্ণনাটি কী কী সনদে কোন কোন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে তা উল্লেখ্য করব। এবং প্রত্যেকটা বর্ণনার সনদের ব্যাপারেই কিছু নেতিবাচক বিষয় উল্লেখ্য করব।

আমার কর্তৃক প্রত্যেকটা সনদের ব্যাপারে বিভিন্ন নেতিবাচক বিষয় উল্লেখ্য করার ব্যাপারটি দেখে অনেক পাঠকের মনে এইমর্মে ধারনা জন্মাতে পারে যে আমি এসব নেতিবাচক বিষয় উল্লেখ্য করার দ্বারা ইবনু উমার (রা) সম্পর্কে বর্ণিত এই বর্ণনাটিকে যইফ প্রমাণ করতে চাচ্ছি। তবে এই ধারনাটি আসলে সঠিক নয়, প্রত্যেকটা বর্ণনার সনদের ব্যাপারে কিছু নেতিবাচক বিষয় উল্লেখ্য করার দ্বারা আমি মোটেও এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে যাচ্ছিনা যে এই বর্ণনাটি যইফ।

শুরুতেই এব্যাপারটা স্পষ্ট করে দিলাম, যাতে পরবর্তীতে এনিয়ে বিভ্রান্তি দেখা না দেয়।

2. বর্ণনাগুলোর উপস্থাপনা :-

আবু বকর আল বায়হাক্বী (রহ) তাঁর "আস-সুনানুল কুবরা"(5/537) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,
أخبرنا أبو الحسين بن بشران العدل، ببغداد، أنا إسماعيل بن محمد الصفار، ثنا الحسن بن علي بن عفان، ثنا ابن نمير، عن عبيد الله بن عمر، عن نافع، عن ابن عمر، " أنه كان إذا اشترى جارية كشف عن ساقها ووضع يده بين ثدييها، وعلى عجزها " وكأنه كان يضعها عليها من وراء الثوب

এই সনদটিতে একজন রাবি আছেন "আল-হাসান বিন আলি বিন আফফান" নামের, তিনি  হাসানুল হাদিস বা ছিকাহ ছিলেন।

কিন্ত তাঁর (আল-হাসান বিন আলি এর) অতি সামান্য পরিমাণ ভুল হতো।

ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী (রহ) তাঁর "তাক্বরিবুত তাহযিব"(রাবি/1261) গ্রন্থে আল-হাসান এর ব্যাপারে বলেছেন যে আল-হাসান রাবি হিসেবে "ছুদুক"।

ইবনু আবি হাতিম (রহ) তাঁর "আজ-জারহু ওয়াত তাদিল"(3/22) গ্রন্থে আল-হাসান সম্পর্কে বলেছেন যে আল-হাসান রাবি হিসেবে "ছুদুক"।

এখন,

ইবনু হাজার (রহ) এর দৃষ্টিতে "ছুদুক" রাবি বলতে তাদের বোঝায় যারা কিনা হাসানুল হাদিস এবং অত্যন্ত কম ভুল করে , একথা ইবনু হাজার নিজ "তাক্বরিবুত তাহযিব" গ্রন্থের ভূমিকাতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

ইবনু আবি হাতিম (রহ) এর দৃষ্টিতে "ছুদুক" রাবি বলতে তাদের বোঝায় যাদের বর্ণনা দ্বারা সবক্ষেত্রে ইহতিজাজ করা যায়না।
দেখুন : https://www.islamweb.net/ar/article/207973

এবং এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল-হাসান অতি অল্প পরিমাণ ভুল করতেন।

ইবনু আবি শাইবাহ (রহ) তাঁর "আল-মুসান্নাফ"(4/289,হা/20240) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,
حدثنا جرير، عن منصور، عن مجاهد، قال: كنت مع ابن عمر أمشي في السوق فإذا نحن بناس من النخاسين قد اجتمعوا على جارية يقلبونها، فلما رأوا ابن عمر تنحوا وقالوا: ابن عمر قد جاء، فدنا منها ابن عمر فلمس شيئا من جسدها، وقال: «أين أصحاب هذه الجارية، إنما هي سلعة»

এই সনদটিতে একজন রাবি হলেন প্রসিদ্ধ তাবেঈ মুজাহিদ বিন জাবার (রহ), তাঁর ব্যাপারে ইমাম আহমদ (রহ) বলেছেন যে শেষজীবনে উনার মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো।

এই সনদটিতে আরেকজন রাবি হলেন মানসুর ইবনুল মু'তামির , তিনি ছিকাহ ছিলেন তবে তাঁর মধ্যে শিয়াপনা ছিলো।

এই সনদটিতে আরেকজন রাবি হলেন 'জারির বিন আব্দুল-হামিদ', জারিরের ব্যাপারে আল-বায়হাক্বী বলেছেন যে জীবনের শেষের দিকে তাঁর স্বরণশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো। আল-বায়হাক্বীর উক্ত বক্তব্যটির উপর নির্ভর করে বহু মুহাদ্দিসরা জারিরকে সেইসব রাবিদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করেছেন যাদের কিনা শেষ জীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিল বা স্বরণশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, উদাহরণস্বরুপ : ইবনুল কিয়াল, ইবনুল আজামী, আল-আলাঈ… ইত্যাদি ইত্যাদি। তাছারা কুতাইবাহ (রহ) 'জারির বিন আব্দুল-হামিদ' কে মাত্রাতিরিক্র শিয়াপনার সহিত সম্পৃক্ত করেছেন। কুতাইবাহ (রহ) বলেছেন যে জারির, মুয়াবিয়াহ (রা) ও উমার (রা) কে একদম প্রকাশ্যে গালি দিতো।

দেখুন :
আল-ইজলী, আছ-ছিকাত (পৃ/49)
ইবনুল আজামী, আল-ইগতিবাত (রাবি/18,89)
ইবনু হিব্বান, আছ-ছিকাত (7/474)
আল-বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা (6/143)
ইবনুল-কিয়াল, আল-কাওয়াকিবুন নাইরাত (পৃ/122)
আল-আলাঈ, কিতাবুল-মুখতালিতিন (পৃ/17)
মোগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবিল কামাল (2/89)
ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী (1/395)

ইবনু আবি-শাইবাহ তাঁর "আল-মুসান্নাফ"(2/289, হা/20241) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,

نا علي بن مسهر، عن عبيد الله، عن نافع، عن ابن عمر: «أنه كان إذا أراد أن يشتري الجارية وضع يده على أليتيها، وبين فخذها، وربما كشف عن ساقيها»

সনদটিতে একজন রাবি হলেন "আলি বিন মুসহির"। আলি সাধারণভাবে একজন ছিকাহ রাবি ছিলেন, কিন্ত শেষ জীবনে তিনি অন্ধ হয়ে যান এবং শুধুমাত্র স্বরণশক্তি দ্বারা হাদিস বর্ণনা করতে থাকেন। এরফলে তাঁর বর্ণিত হাদিসগুলোতে ভুল দেখা দেয়।

আলি বিন মুসহির কর্তৃক শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে গিয়ে শুধুমাত্র স্বরণশক্তির উপর নির্ভরশীল হয়াপুর্বক হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা অর্জনের পুর্বেও উনার সাথে একটা নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটা হচ্ছে অনেকটা এরকম যে, তাঁর হাদিসের নোটখাতাগুলো সব হারিয়ে গিয়েছিল, তারপর তিনি পরে আবার নতুন করে নোটগুলো তৈরি করেছিলেন। এই ঘটনার কারণে ইমাম আহমদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে যেহেতু আলির সাথে এমন একটা ঝামেলা ঘটে গিয়েছে, সেহেতু আলি এককভাবে কোনো হাদিস বর্ণনা করলে উনার এককভাবে বর্ণিত সেই হাদিস নির্ভরযোগ্য হবেনা, এবং এরই ভিত্তিতে ইমাম আহমাদ আলির একটা হাদিসকে মুনকার বলেছিলেন।

দেখুন :
আল-উক্বাইলী, আদ্বুয়াফাউল কাবির (3/251)
আল-লাহিম, আজ-জারহু ওয়াত তাদিল (পৃ/131)

আব্দুর-রাজ্জাক আস-সানআনী (রহ) তাঁর "আল-মুসান্নাফ"(হা/13198 - 13205) গ্রন্থে মোট ১০ টি সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,

عن ابن جريج، عن عطاء قال: قلت له: الرجل يشتري الأمة، أينظر إلى ساقيها، وقد حاضت، أو إلى بطنها؟ قال: «نعم»، قال عطاء: كان ابن عمر «يضع يده بين ثدييها، وينظر إلى بطنها، وينظر إلى ساقيها، أو يأمر به»

 أخبرنا ابن جريج قال: أخبرني عمرو - أو أبو الزبير -، عن ابن عمر: " أنه وجد تجارا مجتمعين على أمة، فكشف عن بعض ساقها، ووضع يده على بطنها

عن عبد الله بن عمر، عن نافع، عن ابن عمر، ومعمر، عن أيوب، عن نافع، عن ابن عمر كان إذا أراد أن يشتري جارية، فراضاهم على ثمن، وضع يده على عجزها، وينظر إلى ساقيها وقبلها - يعني بطنها  ".

عن معمر، عن الزهري، عن سالم، عن ابن عمر مثله

عن معمر، عن عمرو بن دينار، عن مجاهد قال: مر ابن عمر: على قوم يبتاعون جارية، فلما رأوه وهم يقلبونها، أمسكوا عن ذلك، فجاءهم ابن عمر، فكشف عن ساقها، ثم دفع في صدرها، وقال: «اشتروا»

قال معمر، وأخبرني ابن أبي نجيح، عن مجاهد قال: وضع ابن عمر يده بين ثدييها، ثم هزها

عن ابن عيينة، عن عمرو بن دينار، عن مجاهد قال: كنت مع ابن عمر في السوق، فأبصر بجارية تباع، فكشف عن ساقها، وصك في صدرها، وقال: «اشتروا». يريهم أنه لا بأس بذلك

عن ابن عيينة قال: وأخبرني ابن أبي نجيح، عن مجاهد قال: «وضع ابن عمر يده بين ثدييها، ثم هزها»

عن ابن جريج، عن نافع، أن ابن عمر:  كان يكشف عن ظهرها، وبطنها، وساقها، ويضع يده على عجزها

জুমহুর উলামাদের মতে আব্দুর-রাজ্জাক আস-সানয়ানী (রহ) ছিকাহ ছিলেন। কিন্ত,

১.

উনার মধ্যে 'তাশাইয়ু' (শিয়াপনা) ছিলো।

দেখুন : ইবনু আদী, আল-কামিল (6/545) ; আল-ইজলী, আছ-ছিকাত (পৃ/302); ইবনু হিব্বান, আছ-ছিকাত (8/412) ; মোগলতাঈ, আল-ইকমাল (8/268); ইবনু হাজার, আত-তাহযিব (6/314) ; আয-যাহাবী, আস-সিইর (9/563)… ইত্যাদি ইত্যাদি।

২.

এই তাশাইয়ু এর প্রভাবে আব্দুর-রাজ্জাক (রহ) আহলুল-বাইতের প্রসংশা করে এবং অন্যদের অপমান করে বহু মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছেন।

দেখুন : ইবনু আদীর 'আল-কামিল'(6/545)

৩.

যদিও অধিকাংশ উলামাদের মতেই আব্দুর-রাজ্জাক (রহ) ছিকাহ, কিন্ত উলামাদের একটা ক্ষুদ্র অংশ তাঁর উপর জারাহ করেছেন, যাদের মধ্যে আছেন :

আবু-হাতিম আর-রাযী (রহ)
যাইদ ইবনুল মুবারক (রহ)
সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহ)
আব্বাস আল-আনবারী (রহ)

আব্দুর-রাজ্জাক যেই ১০ টি সনদে বর্ণনাগুলো বর্ণনা করেছেন সেই ১০ টি সনদ নিম্নরূপ,

১. ইবনু জুরাইজ, আতা হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

২. ইবনু জুরাইজ, উমার অথবা আবুয-যুবাইর হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৩. আব্দুল্লাহ বিন উমার, নাফি হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৪.  মা'মার, আইয়ুব হতে, তিনি নাফি হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৫.  মা'মার, আয-যুহরী হতে, তিনি সালিম হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৬.  মা'মার, উমার বিন দিনার হতে, তিনি মুজাহিদ হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৭.  মা'মার, ইবনু আবি নাজিহ হতে, তিনি মুজাহিদ হতে, ইবনু উমার (রা) হতে।

৮.  ইবনু উয়াইনাহ, উমার বিন দিনার হতে, তিনি মুজাহিদ হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

৯. ইবনু উয়াইনাহ, ইবনু আবি নাজিহ হতে, তিনি মুজাহিদ হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

১০. ইবনু জুরাইজ, তিনি নাফি হতে, তিনি ইবনু উমার (রা) হতে।

এবার এই ১০ টি সনদ সম্পর্কে কিছু বিষয়,

প্রথম সনদের একজন রাবি হলেন "আতা", যার শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিল।
দেখুন : আল-লাহিম, আজ-জারহু ওয়াত তাদিল (পৃ/270)

দ্বিতীয় সনদের একজন রাবি "আবুয-যুবাইর", তিনি বহু মুহাদ্দিসদের পক্ষ হতে মাত্রাতিরিক্ত তাদলিস করার দরুন যইফ সাব্যস্তকরণপ্রাপ্ত মাত্রাতিরিক্ত তাদলিসকারী তৃতীয় স্তরের মুদাল্লিস। এবং এক্ষেত্রে তিনি শ্রবণ স্পষ্ট করেন নি।
দেখুন : ইবনু হাজার, তাবাকাতুল মুদাল্লিসিন (রাবি/101) এবং ফাতহুল বারী (1/442)

তৃতীয় সনদের একজন রাবি "আব্দুল্লাহ বিন উমার বিন হাফস", তিনি যইফুল হাদিস।
দেখুন : ইবনু হাজার, তাক্বরিবুত তাহযিব (রাবি/3489)

চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সনদের রাবি "মা'মার", আদ-দারাক্বুতনী (রহ) বলেছেন যে আব্দুর-রাজ্জাক (রহ) ছিকাহ হলেও মা'মার হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বহু হাদিসে ভুল করেন। দেখুন : আয-যাহাবী, মিযানুল ই'তিদাল (2/610)

অষ্টম ও নবম সনদের রাবি "মুজাহিদ", ইমাম আহমাদ (রহ) বলেছেন যে শেষজীবনে মুজাহিদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছিল। দেখুন : আল-ইজলী, আছ-ছিকাত (পৃ/49) এবং ইবনুল-আজামী, আল-ইগতিবাত (রাবি/89)

দশম সনদের রাবি "ইবনু জুরাইজ", তিনি বাজে ধরনের তাদলিস করতেন, এবং মুদাল্লিস হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। এই সনদে তিনি নাফি হতে শ্রবণ স্পষ্ট করেন নি।
দেখুন : আবু-উমার আও-ওয়াকিল, নাছলুন নাবাল (4/41-43)

3. মূল আলোচনা :-

এতক্ষণ নিছকই বর্ণনাগুলো উল্লেখ্য করলাম, এবার মূল আলোচনায় আসি।

এক.

মুসলিমদের জন্য ভালো-খারাপ, বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারাম, উচিত-অনুচিত, পছন্দনীয় -অপছন্দনীয়, ইত্যাদি এধরনের বিষয়গুলো নির্ণয় করার মাপকাঠি হলো শরিয়ত।এই একই কথা প্রযোজ্য সাহাবীদের ক্ষেত্রেও।

কিন্ত, কিছু সাহাবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাঁরা শরিয়তকে স্বাভাবিকভাবে অনুসরণ না করে কিছু কঠোর নীতির মাধ্যমে অনুসরণ করতেন, ফলে তাঁরা এমন অসংখ্যা বিষয়কে ত্যাগ করতেন যেগুলো কিনা শরিয়তে প্রকৃতপক্ষে বৈধ, কেননা এসব কঠোর নীতিমালা তাঁদেরকে বহু বৈধ বিষয় হতেও বিরত রাখত। কিছু সাহাবীদের কর্তৃক এমনটা করার উদ্দেশ্য ছিল মূলত নিজেদের ধার্মিকতাকে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক শক্তিশালী, অধিক সমৃদ্ধ ও অধিক উন্নত করা।

সাহাবী ইবনু উমারও (রা) উক্ত "কিছু" সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত একজন ছিলেন, তিনিও শরিয়তকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কিছু কঠোর নীতিমালা ব্যবহার করতেন।

ইবনু-উমার (রা) এর ব্যাপারে এটা প্রসিদ্ধ যে তিনি রাসুল (সা) এর কথা ও কর্মসমূহকে অত্যন্ত কঠোরভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করতেন, সেটা অতি-তুচ্ছ বিষয় হলেও তিনি সেটাতে রাসুল (সা) এর পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। অর্থাৎ তাঁর নীতি ছিলো যথাসম্ভব রাসুল (সা) কে অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলা, তা অতি তুচ্ছ বিষয়ের ক্ষেত্রে হলেও। রাসুল (সা) কে এভাবে অতিকড়াকড়িভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে ইবনু উমার (রা) বহু বৈধ বিষয় হতে বিরত থাকতেন, বহু বৈধ বিষয় ত্যাগ করতেন।

উপরে উল্লেখিত এই ব্যাপারটি হচ্ছে ইবনু উমার (রা) এর একটি সুপ্রসিদ্ধ কঠোর নীতি।

ইবনু উমার (রা) কর্তৃক ক্রয় করার পুর্বেই বাজারে একজন দাসীর দেহের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ করার এই যেই ব্যাপারটা, এই ব্যাপারটা ইবনু উমার (রা) এর উক্ত সুপ্রসিদ্ধ কঠোর নীতিটির আলোকে সঠিক নাকি ভুল এবার সেই আলোচনায় আসা যাক।

রাসুল (সা) সম্পর্কে এমনটা প্রমাণিত আছে যে তিনি (সা) কখনোওই এমন কোনো মহিলাকে স্পর্শ করেন নি যে কিনা তাঁর (সা) অধীনস্থ নয়।

আয়িশাহ (রা) বলেছেন যে,
وما مست يد رسول الله ﷺ يد امرأة إلا امرأة يملكها
অর্থ : রাসুলুল্লাহ (সা) এর হাত তাঁর অধীনস্থ মহিলা ব্যাতিত অন্য কোনো মহিলার হাতকেই কখনো স্পর্শ করেনি।

উৎস : সহিহুল বুখারী (9/80, হা/7214)
https://shamela.ws/book/1681/10743

যেখানে কিনা তিনি (সা) তাঁর অঅধীনস্থ অন্য কোনো মহিলার হাতকেও স্পর্শ করতেন না, সেখানেত অন্য কোথাও স্পর্শ করার প্রশ্নই আসেনা!

কোনো একজন ব্যাক্তি একজন দাসীকে ক্রয় করলে ক্রয় করার পর দাসীটি উক্ত ব্যাক্তির অধীনস্থ হয়ে যায়, কিন্ত উক্ত ব্যাক্তিটি কর্তৃক দাসীটিকে ক্রয় করার পুর্বে দাসীটি উক্ত ব্যাক্তিটির অধীনস্থ হিসেবে গণ্য হবেনা।

এক্ষেত্রে ইবনু উমার (রা) দাসীটিকে ক্রয় না করেই স্পর্শ করেছিলেন, যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে দাসীটি ইবনু উমারের (রা) অধীনস্থ ছিলনা।

রাসুল (সা) এমন কোনো মহিলাকেই স্পর্শ করেন নি যে কিনা উনার (সা) অধীনস্থ না। এখন ইবনু উমার (রা) এর কঠোর নীতির আলোকে হিসেব করলে ইবনু উমার (রা) এরও এমন কোনো মহিলাকেই স্পর্শ করার কথা নয় যে কিনা তাঁর (রা) অধীনস্থ না।

কিন্ত এক্ষেত্রে ইবনু উমার (রা) এমন একজন মহিলাকে স্পর্শ করেছেন যে কিনা তাঁর (রা) অধীনস্থ নয়।

সুতরাং, ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটির দেহের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করার ব্যাপারটি স্বয়ং ইবনু উমার (রা) এরই কঠোর নীতি অনুযায়ী অত্যন্ত অনুচিত একটি কাজ। কেননা উক্ত কাজটি দ্বারা রাসুল (সা) কে অনুকরণের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে।

এখন আপত্তি আসতে পারে যে :

"রাসুল (সা) কর্তৃক কোনো অঅধীনস্থ মহিলাকে স্পর্শ না করার ব্যাপারটি দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়না যে কোনো দাসীকে ক্রয় করার পুর্বে তার দেহে স্পর্শ করে দেখাটা নাযায়েয কাজ, বরং প্রকৃতপক্ষে এটা একটা যায়েয কাজ, ইবনু উমার (রা) এর দৃষ্টিতেও এটা যায়েয ছিলো, এবং তাই তিনি এরকমটা করেছিলেন।"

উক্ত সাম্ভাব্য আপত্তিটির জবাবস্বরূপ বলব যে,

আমি কোথাও দাবি করিনি যে কাজটি নাযায়েয, আমি এটাও দাবি করিনি যে ইবনু উমার (রা) এর দৃষ্টিতে কাজটি যায়েয ছিলনা। কাজেই এখানে যায়েয নাযায়েযের প্রসঙ্গ আনাটাই অবান্তর।ইবনু উমার (রা) এর নিকট কাজটা যায়েয হয়া সত্ত্বেও তা করাটা তাঁর (রা) কঠোর নীতি অনুযায়ী তাঁর (রা) জন্য অত্যন্ত অনুচিত ছিল।

বিভিন্ন সাহাবীদের যেই বিশেষ কঠোর নীতিগুলো আছে, সেগুলো অনেকসময় তাঁদেরকে বহু যায়েয কাজ হতেও বিরত রাখে, এব্যাপারটা আমি পুর্বেই স্পষ্ট করেছি।এক্ষেত্রে ইবনু উমার (রা) এর কঠোর নীতিটি অনুযায়ী বিচার করলে তাঁর (রা) উক্ত যায়েয কাজটি করা উচিত হয়নি।

দুই. 

ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটির দেহের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করার ব্যাপারটি ঘটেছিল দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে, সরাসরি দাসীটির উন্মুক্ত চামড়ায় উপর নয়! 

আমার উক্ত দাবিটির পক্ষে বহু যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে। যেমন,

আবু-বকর আল-বায়হাক্বী (রহ) তাঁর "আস-সুনানুল কুবরা" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,

أخبرنا أبو الحسين بن بشران العدل، ببغداد، أنا إسماعيل بن محمد الصفار، ثنا الحسن بن علي بن عفان، ثنا ابن نمير، عن عبيد الله بن عمر، عن نافع، عن ابن عمر،  أنه كان إذا اشترى جارية كشف عن ساقها ووضع يده بين ثدييها، وعلى عجزها وكأنه كان يضعها عليها من وراء الثوب

অর্থ :

আমাদের আবুল-হুসাইন বিন বিশরান আল-আদল বাগদাদে বর্ণনা করেছেন যে আমাদের ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ আস-সফফার বর্ণনা করেছেন যে আমাদের আল-হাসান বিন আলি বিন আফফান বর্ণনা করেছেন যে আমাদের ইবনু নুমাইর বর্ণনা করেছেন উবাইদুল্লাহ বিন উমার হতে তিনি নাফি হতে তিনি ইবনু উমার (রা) হতে যে তিনি (ইবনু উমার) যখন একটি দাসীকে ক্রয় করেছিলেন তখন দাসীটির উরু হতে কাপড় সরিয়েছিলেন এবং নিজ হাতকে দাসীটির দুই স্তনের মাঝখানে ও নিতম্বে রেখেছিলেন, যেন তিনি দাসীটিকে দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে স্পর্শ করছিলেন।

নাফি (রহ) হতে বর্ণিত উক্ত বর্ণনাটিতে নাফি (রহ) এব্যাপারটা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটির দেহের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করার ব্যাপারটি ঘটেছিল দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে, সরাসরি দাসীটির উন্মুক্ত চামড়ার উপর নয়।

আপত্তি : আলবায়হাক্বীর উক্ত বর্ণনাটির "وكأنه كان يضعها عليها من وراء الثوب" অংশটি অর্থাৎ "যেন তিনি দাসীটিকে দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে স্পর্শ করছিলেন" অংশটি নাফির বক্তব্যের অংশ নয়, বরং এ অংশটি আল-বায়হাক্বী অথবা সনদের অন্য কোনো রাবি কর্তৃক প্রদানকৃত একটি অতিরিক্ত সংযুক্তি।

উক্ত আপত্তির জবাব :

এক্ষেত্রে অধিক স্পষ্ট অধিক ব্যাহ্যিক অধিক জাহির হচ্ছে এই যে এই অংশটি নাফির বক্তব্যরই অংশ। এই অংশটি নাফির বক্তব্যের অংশ নয় বরং অন্য কারো কর্তৃক প্রদানকৃত একটি অতিরিক্ত সংযুক্তি, এমনটা দাবি করার জন্য এক্ষেত্রে কোনো যথাযথ কারণ ও ভিত্তি নেই, এটি একটি হুজ্জতবিহীন দাবি।

কোনো ছিকাহ রাবি কর্তৃক প্রদানকৃত অতিরিক্ত সংযুক্তিও নির্ভরযোগ্য হয় এই শর্তে যে সেই অতিরিক্ত সংযুক্তিটি অন্যান্য ছিকাহ রাবিদের কর্তৃক বর্ণিত মতনসমুহের সহিত অসামঞ্জস্যপুর্ণ হবেনা।

[দেখুন : আল-গাওরি, মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/384-387) ]

এক্ষেত্রে আল-বায়হাক্বীর উক্ত বর্ণনাটিতে বিদ্যমান আলোচ্য অংশটির সহিত অন্যান্য রেওয়ায়েতগুলোর কোনো বিরোধ বা অসামঞ্জস্যতা নেই।

সুতরাং যদি আলোচ্য অংশটি আল-বায়হাক্বী বা সনদটির অন্য কোনো রাবি কর্তৃক প্রদানকৃত অতিরিক্ত সংযুক্তি হয়েও থাকে, তাহলে তবুও আলোচ্য অংশটি নির্ভরযোগ্যই হবে, তবুও কোনো সমস্যা হবেনা! 

আবু-হাফস (রহ) সনদ ধরে ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে,

ابن عمر كان يضع يده بين ثدييها وعلى عجزها من فوق الثياب، ويكشف عن ساقها

অর্থ : "ইবনু উমার (রা) দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে দাসীটির দুই স্তনের মাঝে ও নিতম্বে নিজের হাত রেখেছিলেন। এবং দাসীটির উরু হতে কাপড় সরিয়েছিলেন।"

দেখুন :
ইবনু মুফলিহ, আল-ফুরুউ ওয়া তাসহিহুল ফুরুউ (8/182)
ইবনুন নাজ্জার, মায়ুনাতু উলিন নাহা (9/19)
উসমান ইবনু জামিঈ,আল-ফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত (3/161)
মানসুর আল-বুহুতী,দাক্বাইক্বু উলিন নাহা (2/624)
…… ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই বর্ণনাটির একটি সনদ আছে, তবে সনদটি কি তা অজানা। এবং এই বর্ণনাটির হুকুম হচ্ছে এই যে এটি সহিহ, কেননা এরপক্ষে আল-বায়হাক্বীর উক্ত সহিহ বর্ণনাটিসহ অন্যান্য আরো অনেক সহিহ বর্ণনা শাহিদ হিসেবে রয়েছে।

এই বর্ণনাটিতেও একদম সুস্পষ্ট বলা হয়েছে যে ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটিকে স্পর্শ করার ব্যাপারটি ঘটেছিলো দাসীটির পোশাকের উপর দিয়ে।

তিন.

এই ঘটনাটির কিছু রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে ইবনু উমার (রা) নাকি হাত দিয়ে দাসীটির স্তন নাড়াচড়া করে দেখেছিলেন, কিন্ত এই তথ্যটির বিশুদ্ধতা সন্দেহপুর্ণ।

ইবনু উমার (রা) সম্পর্কিত উক্ত ঘটনাটি মোট ৪ জন তাবেঈ বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হলেন,

১. আবু আব্দুল্লাহ নাফি (রহ)
২. আতা ইবনু আবি রাবাহ (রহ)
৩. মুজাহিদ বিন জাবার (রহ)
৪. সালিম বিন আব্দুল্লাহ (রহ)

এই চারজনের মধ্য হতে এককভাবে শুধুমাত্র মুজাহিদ (রহ) ই ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটির স্তন নাড়াচাড়া করার ব্যাপারটি বর্ণনা করেছেন। মুজাহিদ (রহ) ব্যাতিত আর কেওই এমনটা বর্ণনা করেন নি। এখন মুজাহিদ (রহ) এর আবার শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিলো, যা ইমাম আহমদ (রহ) সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন।

আবুল-হাসান আহমদ আল-ইজলী (রহ) তাঁর "আছ-ছিকাত"(পৃ/49) গ্রন্থে বলেছেন যে,
قال: قد اختلط في آخرة
অর্থ : এবং তিনি (ইমাম আহমদ) বলেছেন যে তাঁর (মুজাহিদের) শেষজীবনে মানসিক বিকৃতি ঘটেছিল।

সুতরাং, ইবনু উমার (রা) কর্তৃক দাসীটির স্তন নাড়াচাড়া করে দেখার ব্যাপারটির বিশুদ্ধতা সন্দেহপুর্ণ।

চার.

ইসলামবিরোধীদের দাবি :

"দাসীদের বাজারে এভাবে বিক্রি করার জন্য এনে রাখা এবং ক্রেতাদের কর্তৃক তাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করে দেখা, ইত্যাদি এধরনের ব্যাপারগুলো হচ্ছে অত্যন্ত জঘণ্য নিকৃষ্ট অনৈতিক এবং অন্যায়। "

উক্ত দাবিটির জবাব :

ইসলামবিদ্বেষীদের মাঝে প্রচলিত অত্যন্ত সাধারণ একটা বিষয় হচ্ছে "দ্বিচারিতা"। উক্ত দাবিটিতেও দ্বিচারিতা বিষয়টি উহ্যভাবে বিদ্যমান আছে। এক্ষেত্রে তারা যেই নীতিতে মুসলিমদের খারাপ বলছে, সেই একই নীতিতে প্রাচীন ও মধ্যযূগীয় প্রায় সবগুলো সমাজই খারাপ সাব্যস্ত হয়, কিন্ত তারা এটা মানতে নারাজ।

প্রাচীন ও মধ্যযূগে যে শুধুমাত্র নারী দাসীদেরকেই বাজারে এনে বিক্রি করার জন্য রাখা হত ব্যাপারাটা মোটেও এমন না, বরং পুরুষ দাসদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটত। আবার ক্রেতারা পুরুষ দাসদেরও দেহের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করে দেখত। অর্থাৎ এসব ব্যাপার স্যাপার মোটেও নারী দাসীদের জন্য খাস বা বিশেষ কিছু ছিলনা।

দাস-দাসীদের বাজারে বিক্রি করার জন্য এনে রাখা, ক্রেতাদের কর্তৃক তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ করা, এই ব্যাপারগুলো তৎকালীন প্রাচীন ও মধ্যযূগীয় নৈতিকতার মানদন্ড অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য, স্বাভাবিক ও প্রচলিত ছিল। সুতরাং তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপট সক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে এসব কাজের সহিত জড়িত ব্যাক্তিদেরকে ও এসব কাজকে বর্তমান সময়ে প্রচলিত নৈতিকতার মানদন্ডসমূহ দ্বারা বিচার করাপুর্বক জঘণ্য বা খারাপ বা অনৈতিক বলে দেয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়, এমনটা করা presentism এর অন্তর্ভুক্ত, আর presentism বিষয়টি নিজেই এক ধরনের অন্যায় ও লজিক্যাল ফ্যালাসি।

বিপুল সংখ্যাক ক্ষেত্রে নৈতিকতার মানদন্ডসমূহ আপেক্ষিক বা পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে, দাসপ্রথাও সেই বিপুল সংখ্যাক ক্ষেত্রসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

পাচ.

ইসলামবিরোধীদের দাবি :

"বর্তমানে বা ভবিৎষতে যদি কখনো মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে যুদ্ধ হয়, এবং মুসলিমরা সেই যুদ্ধে জয়ী হয়, তাহলে মুসলিমরা পুনরায় দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনবে। অমুসলিম যুদ্ধবন্দিনী নারীদের দাসী হিসেবে কেনাবেচা করার জন্য বাজারে নিয়ে আসবে,
মুসলিম পুরুষরা বাজারে এসে এসব দাসীদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে হাতিয়ে হাতিয়ে দেখবে।"

উক্ত দাবিটির জবাব :

ইসলাম দাসপ্রথাকে উৎসাহিত করেনা আবার নিরুৎসাহিতও করেনা, ইসলাম নিছকই দাসপ্রথাকে সংস্কারকরাপুর্বক "বৈধতা" দিয়েছে। কোনো একটা কাজ বৈধ হয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে কাজটা করলেও কোনো সমস্যা নাই, আবার না করলেও কোনো সমস্যা নাই।

যদি ভবিৎষত এ কোনোদিন অমুসলিমদের সহিত মুসলিমদের যুদ্ধ হয় এবং মুসলিমরা সেই যুদ্ধে বিজয়ী হয়, তাহলে মুসলিমদের জন্য দাসপ্রথা পুনরায় ফিরিয়ে আনাটা নিছকই বৈধ হবে, অর্থাৎ উৎসাহিত বা আবশ্যক কিছু হবেনা বরং ঐচ্ছিক ব্যাপার হবে।

বর্তমান সময়ের মুসলিম সমাজগুলোর পরিস্থীতি ও পরিবেশ দাসপ্রথাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয় প্রস্তুত নয়। বর্তমানের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিচার করলে, যদি হঠাত মুসলিমদের মাঝে দাসপ্রথা পুনরায় চালু করে দেয়া হয়, তাহলে এরফলস্বরুপ মুসলিম সমাজগুলোতে বিশৃংখলা ও জটিলতা দেখা দেয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

অতএব, যদি ভবিৎষতে মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে কোনোদিন যুদ্ধ হয় এবং মুসলিমরা সেই যুদ্ধে জয়ী হয়, তাহলে মুসলিমরা পুনরায় দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনবে এমনটা নিশ্চিতভাবে বলার কোনো সুযোগ নেই। হতে পারে কোনো সাম্ভাব্য ফিতনাহর আশঙ্কায় মুসলিম নেতারা দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনা হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন! এই কাল্পনিক পরিস্থীতিটিতে ফিতনাহর একটা বড়ধরনের আশঙ্কা রয়েছে, কেননা আমাদের বর্তমান সময়ের মুসলিম সমাজগুলো দাসপ্রথাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মোটেই প্রস্তুত বা উপযুক্ত নয়।ফিতনাহর তীব্র আশঙ্কা থাকলে বিভিন্ন বৈধ বিষয়কেও অনেকসময় অবৈধ এর মতো বিবেচনা করা হয়ে থাকে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় : মহিলাদের মসজিদে এসে সালাত আদায় করা।

ভবিৎষতে অমুসলিমদের বিরোদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে মুসলিমরা দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনবে নাকি না তা গভীর গবেষণার একটি ক্ষেত্র হতে পারে।

ছয়.

এখানে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি মনে করছি,

বাজারে দাসীদের দেহের বিভিন্ন অংশে হাতিয়ে দেখা অউদো বৈধ নাকি না, তা নিয়েই উলামাদের মাঝে ফিক্বহী মতভেদ আছে।

যারা বৈধ বলেছেন তারা মোটেও লাগামহীনভাবে ঢালাওভাবে বৈধ বলেন নি, বরং কিছু শর্তসাপেক্ষে বৈধ বলেছেন,এসক্রান্ত কিছু শর্তের উদাহরণ হলো : স্পর্শ করে দেখতে হলে অবশ্যই অবশ্যই মনে ক্রয় করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে, যৌন অনুভূতির সহিত স্পর্শ করে দেখা যাবেনা, স্পর্শটা হতে হবে অবশ্যই পোশাকের উপর দিয়ে উন্মুক্ত চামড়ার উপর নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

4. পরিশিষ্ট :-

ইবনু উমার (রা) কর্তৃক বাজারে একটি দাসীর দেহের বিভিন্ন অংশে হাতিয়ে দেখার ব্যাপারটির সহিত সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম।

এবার পরিশিষ্ট হিসেবে আমি ইবনু উমার (রা) এর সহিত সম্পর্কিত এমন কিছু তথ্য উল্লেখ্য করব যেগুলো ইসলামবিদ্বেষীরা গোপন করে রাখে ও বলতে চায়না।

ইবনু উমার (রা) দাস-দাসীদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন, তিনি দাস-দাসীদের খুব সহজেই মুক্ত করে দিতেন। ইবনু উমার (রা) এর অধীনস্থ দাস-দাসীদের জন্য তাঁর (রা) অধীনস্থতা হতে মুক্তি পাওয়াটা অত্যন্ত সহজ ব্যাপার ছিল, তারা সামান্য একটু চেষ্টা করলেই ইবনু উমার (রা) এর অধীনস্থতা হতে মুক্তি পেয়ে যেতে পারত, এভাবে অনেক দাসরাই ইবনু উমার (রা) এর অধীনস্থতা হতে নিজেদেরকে মুক্ত করিয়ে নিয়েছিল।

ইবনু উমার (রা) এর অধীনে একজন দাসী ছিল, দাসীটির গুণাগুণ ইবনু উমার (রা) কে আশ্চর্য করে, যার ফলে তিনি (রা) দাসীটিকে মুক্ত করে দেন এবং নিজের একজন মাওলা (সঙ্গী/মুক্তকৃত দাস) এর সহিত মুক্তকৃত দাসীটিকে বিয়ে দেন।

ইবনু উমার (রা) একজন রাখাল দাসের সততা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং রাখাল দাসটিকে তার মালিকের নিকট হতে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন, এবং এরপাশাপাশি মুক্তকৃত রাখাল দাসটিকে বহু গৃহপালিত পশু উপহার হিসেবে দেন।

ইবনু উমার (রা) এর একজন দাস ছিল "নাফি" নামের, তিনি (রা) তাঁকে মুক্ত করে নিজের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছিলেন। নাফি (রহ) ইবনু উমার (রা) হতে প্রচুর হাদিস বর্ণনা করেছেন।

এছাড়াও এরকম আরো বহু উদাহরণ দেয়া যাবে ইবনু উমার (রা) সম্পর্কে।

দেখুন :

১. ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা (4/167)

২. আল-আলবানী, সিলসিলাতুস সাহিহাহ (7/469-470),