Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

ইউশা বিন নুন এর জন্য সূর্যাস্ত থেমে যাওয়ার ঘটনাটি কী অবৈজ্ঞানিক?

 

একটি হাদিস রয়েছে, যে ইউশা বিন নুন (আ) একবার যুদ্ধে গেলেন, তিনি আবিষ্কার করলেন যে শত্রুপক্ষের সাথে লড়াই আরম্ভ করলে আসরের নামায কাযা হয়ে যাবে, একারনে তিনি সুর্যের উদ্দেশ্যে বললেন : 

 

" إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ " [1] 

 

"নিশ্চই তুমি আদেশপ্রাপ্ত এবং আমিও আদেশপ্রাপ্ত, হে আল্লাহ সুর্যকে আমাদের উপর থামিয়ে দিন, ফলে তাকে থামিয়ে রাখা হলো যতক্ষন না আল্লাহ ইউশাকে বিজয় দান করলেন " 

 

ইউশার (আ) এই বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে দাবি করা হয়ে থাকে যে ইসলাম অনুযায়ি সুর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। 

 

উক্ত দাবির জবাব : 

 

ইউশাহ (আ) সুর্যকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন "إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ" [নিশ্চই তুমি আদেশপ্রাপ্ত] অর্থাৎ "অস্ত যাওয়ার জন্য আদেশপ্রাপ্ত ও অনুগত"[2]। আর আরবি ভাষায় "সুর্যের অস্ত যাওয়া" কে সংজ্ঞায়িতই করা হয়েছে পৃথিবীতে অবস্থিত মানুষের ব্যাহ্যিক দৃষ্টিসাপেক্ষে [3]।অর্থাৎ ইউশার (আ) দৃষ্টি সাপেক্ষে সুর্যের যেই গতি, সেই গতি অনুযায়ি সুর্য ইউশার (আ)  সাপেক্ষে অস্ত যাওয়ার জন্য আদেশপ্রাপ্ত। 

 

অতপর ইউশা বলেছেন : "اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا" [হে আল্লাহ, তাকে আমাদের উপর থামিয়ে দাও]। প্রাচিনকালে পৃথিবীতে অবস্থিত মানুষের দৃষ্টিসাপেক্ষে সুর্যের আপেক্ষিত গতিকে সময় পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ মানুষ দৃষ্টিশক্তির সাহায্যে আকাশে সুর্যের অবস্থান পরিবর্তন হয়াকে পর্যবেক্ষন করতো ও সেনুযায়ি সময়ের হিসাব করত। ইউশা (আ) ও এখানে দৃষ্টিসাপেক্ষে আকাশে সুর্যের চলনকে একটা সময় পরিমাপের মাধ্যম হিসেবে ধরে নিয়েছেন, আর সেনুযায়ি তিনি সুর্যকে থামিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। ইউশা (আ) এই অনুরোধের মাধ্যমে মুলত সময়কে থামিয়ে দেয়ার দোয়া করেছেন। [4]যেহেতু ইউশার (আ) সুর্যকে থামিয়ে দেয়ার অনুরোধ করার ব্যাপারটি ব্যাহ্যিক দৃষ্টিসাপেক্ষে সুর্যের আপেক্ষিক গতির উপর নির্ভর করে সময়ের হিসাব করার সাথে সম্পর্কিত, সুতরাং এরদ্বারা সুর্যের পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা প্রমানিত হয়না।

 

উল্লেখ্য যে - হাদিসটিতে সুর্যকে হাবস করার কথা বলা হয়েছে ; যার অর্থ হিসেবে আমি অনুবাদের জায়গাগুলোতে উল্লেখ্য করেছি "থামিয়ে দেয়া"। কিন্ত এই "হাবস" এর অর্থ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। মুহাদ্দিসগন এর তিনটি ব্যাখ্যা উল্লেখ্য করেছেন : _[5]

 

(১) অবস্থান পরিবর্তনের ধাপ বন্ধ হয়ে যাওয়া

(২) একদম স্থীর হয়ে যাওয়া

(৩) চলনের গতি খুবই ধীর হয়ে যাওয়া

 

যদি বলা হয় : সুর্য ত কোনোভাবেই ব্যাহ্যিক দৃষ্টিসাপেক্ষে ধীরগতির কিংবা স্থীর হতে পারেনা!  এমনটা হয়াত সম্ভব না!  তাহলে উত্তরে বলব : এটা ইউশার (আ) একটা মুজেজা। সুর্যকে ব্যাহ্যিক দৃষ্টি সাপেক্ষে স্থীর করে দেয়া বা ধীর করে দেয়া হচ্ছে নবি ইউশার (আ) একটা মুজেজা। আর মুজেজা মানেই হলো এমন কিছু যা বাস্তবে অসম্ভব, কিন্ত তবুও আল্লাহ বাস্তবতার সুপ্রতিষ্ঠিত নিয়ম-নিতীকে ভঙ্গ করে তা ঘটিয়ে থাকেন নবিদের সত্যতার নিদর্শন হিসেবে। 

 

 

 

প্রমানসমুহ : 

 

[1]মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক (9492),সহিহ মুসলিম (1747),মুস্তাখরাজ আবি আওয়ানাহ (1/100-103), সহিহ ইবন হিব্বান (4808),সুনানুল বায়হাকী আল-কুবরা (6/290),শারহুস সুন্নাহ লিলবাগভী (2719),সহিহুল বুখারি (3124) & (5157),আল-জিহাদ লিইবন আবি আসিম (11), সুনানুন নাসাঈ আলকুবরা (8878), সহিহ ইবন হিব্বান  (4808), মুস্তাদরাকুল হাকেম (2/139), মুসনাদ আহমাদ (8238) & (8315), তারিখ বাগদাদ লিলখাতিব (7/34-35), আল-মা'রেফাহ ওয়াত তারিখ লিয়াকুব  (2/172), শারহু মুশকিলিল আছার  (1069) & (1070) 

 

[2]আল-কাস্তাল্লানী,ইরশাদুস সারী (5/206);আল-বিরমাওই, আল-লামিউস সাবিহ (9/181);আল-কিরামানী, আল-কাওয়াকিবুদ দারারী (13/96);আল-আইনী, উমদাতুল কারী (15/43)। 

 

[3]আল-খালিল, আল-আইন (4/410)

 

[4]ইবন বাত্তাল, শারহুল বুখারী (5/278); ইবনুল মুলাক্কিন,আত-তাওদ্বিহ (18/437)।

 

[5lআল-আনসারী,মানহাতুল বারী (6/229); শারহুয যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব (6/494);শারহুস সুয়ুতী আলা মুসলিম (4/350); আল-কাস্তাল্লানী,আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ (2/261) & ইরশাদুস সারী (5/206); সিদ্দিক হাসান,ফাতহুল বায়ান (3/394); আল-ইরাকী,তরহুত তাছরিব (7/247); শরহুন নববী আলা মুসলিম (12/52); আল-হারারী,আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ (19/129) ; আত-তাইবী,শারহুল মিশকাহ (9/2779);তাফসিরুল খাযিন (2/31);আস-সান'আনী,আত-তাহবির (3/154); আইয়াদ্ব,ইকমালুল মু'লিম (6/53); ইবন হাজার,ফাতহুল বারী (6/223); মোল্লা আলী,মিরকাতুল মাফাতিহ (6/2602); ইবন বাত্তাল, শারহুল বুখারী (5/278);ইবনুল মুলাক্কিন,আত-তাওদ্বিহ (18/437)।