Are you sure?

বিবিধ »  ইসলাম বিদ্বেষীদের অপনোদন

উটের মুত্র পান করা কী সুন্নত?

 

রাসুল ﷺ উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোককে উটের পশ্রাব ও দুধ পান করার কথা বলেছিলেন। এপ্রসংগে অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। সব হাদিসের সারমর্ম হলো অনেকটা এরকম  :

"উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক অসুস্থ অবস্থায় মুহাম্মাদের ﷺ নিকট আসল। এসে ইসলাম গ্রহন করল, তারপর খাদ্য-পানি ও আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানাল। মুহাম্মাদ ﷺ তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বললেন ও সেখানে গিয়ে উটের দুধ ও পশ্রাব পান করতে বললেন। তারপর তারা সুস্থ হলো, সুস্থ হয়ার পর তারা সেখানদের রাখালদের নির্মমভাবে হত্যা করল ও ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেল। রাখালদের হত্যা করার অপরাধে রাসুল ﷺ তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দিলেন।" [1]

কোনো ফকিহই উক্ত ঘটনার উপর ভিত্তী করে এটা বলেন নি যে উটের মুত্র খাওয়া নবি ﷺ এর সুন্নত। ফকিহদের কেও উটের মুত্র পান করাকে সুন্নত মনে করেন নি। এটাকে সুন্নত বলে ফতুয়া দেন নি। ৪ মাযহাবের কোথাও এটা বলা নেই যে উটের মুত্র খাওয়া সুন্নত। অথচ ১৪০০ বছর পর হাদিস-ফিকাহ সম্পর্কে চরম অজ্ঞ কিছু জাহেল এসে ফতুয়া দিতেসে যে উক্ত হাদিস অনুযায়ি উটের মুত্র পান করা নাকি সুন্নত!  ১৪০০ বছর যাবত ফকিহরা এত গবেষনার পরেও ধরতে পারেন নি যে এইটা নবিজির সুন্নত! এদিকে সুন্নাতের সংজ্ঞাটাই যেই জাহেলগুলো ঠিকমত জানেনা, তারা আইসা ফতুয়া মারতেসে এটা নাকি সুন্নত!  আশর্যজনক বিষয়! 

রাসুল ﷺ জিবনেও উটের মুত্র খান নি, সাহাবিদের কাওকে তিনি তা খাওয়ার উপদেশ দেননি, সাহাবিদের কেও উটের মুত্র খাননি। সুতরাং উটের মুত্র খাওয়া আর যাই হোক "সুন্নত " হতে পারেনা কখনৌই। একটা দলকে তিনি উটের মুত্র খাওয়ার নির্দেশনা  দিয়েছিলেন যারা ছিল বিশুদ্ধ মুনাফেক, মুরতাদ, খুনি। একদল নিকৃষ্ট লোককে উটের মুত্র পান করার নির্দেশ দেয়ার দ্বারা কখনৌই ইহা সুন্নত হিসেবে প্রমানিত বা সাব্যস্ত হয়না, হতে পারেনা। এটা যদি সুন্নত হতো তাহলে রাসুল ﷺ নিজে খেতেন, কিংবা সাহাবিদের কাওকে তিনি তা খাওয়ার নির্দেশ দিতেন।

এবার দেখা যাক, উটের মুত্র সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামদের অবস্থান কি। ইমাম আবু হানিফাহ (রহ) ও ইমাম আশ-শাফেঈ (রহ) এর মতে স্বাভাবিক অবস্থায়  উটের মুত্র কোনো ক্ষেত্রেই পান করা বৈধ হবেনা [2][3]।ইমাম মালেক (রহ) এবং ইমাম আহমাদ (রহ) এর মতে স্বাভাবিক অবস্থায় উটের মুত্র পান করা "বৈধ " [4][5]। ইমাম আবু হানিফাহ ও ইমাম আশ-শাফেঈ এর মতকে হানাফিরা ও শাফেঈরা গ্রহন করে নিয়েছে।একইভাবে ইমাম আহমদ ও ইমাম মালেকের মতকে মালেকিরা ও হাম্বলিরা গ্রহন করে নিয়েছে।

স্বাভাবিক অবস্থায় হানাফি ও শাফেঈদের নিকট উটের মুত্র পান করা এমনেতেই হারাম। কিন্ত মালেকি ও হাম্বলিদের নিকট তা "বৈধ "। মালেকি ও হাম্বলিগন উক্ত হাদিসের উপর ভিত্তি করেই এটাকে "বৈধ " বলেছেন ও বলে থাকেন। তাদের কেওই এটাকে "সুন্নত " মনে করেন নি, বরং শুধুই "বৈধ" মনে করেছেন। ইসলামে একটা বিষয় বৈধ থাকার অর্থ হলো এই যে : এব্যাপারে ইসলাম একজন মুসলিমকে স্বাধীনতা দিয়েছে যে সে যা মনচায় করতে পারবে। অর্থাৎ হাম্বলি মাযহাব ও মালেকি মাযহাব অনুযায়ি ইসলাম একজন ব্যাক্তিকে উটের মুত্র পান করা না করার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। কেও চাইলে পান করতে পারে, আর চাইলে নাও করতে পারে, এতে ইসলামের কিছুই আসে যায়না।

এখন কোনো হাম্বলি বা মালেকি যদি উটের মুত্র পান করে, তাহলে সেটার দায় ইসলামের উপর আসবেনা, হাম্বলি ও মালেকি মাযহাবের উপর আসবেনা। কেননা হাম্বলি ও মালেকি মাযহাব অনুযায়ি এটা জাস্ট বৈধ, কেও উটের মুত্র পান করবে নাকি করবেনা সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, ইসলাম তাকে উটের মুত্র পানে উৎসাহিতও করেনি & নিষেধও করেনি। যদি হাম্বলি ও মালেকিরা এটাকে সাওয়াবের কাজ বলে ঘোষনা দিতেন তাহলে কেও উটের মুত্র পান করলে দায়টা হাম্বলি ও মালেকি মাযহাবের উপর আসত। কিন্ত তারা এটাকে সাওয়াবের কাজ বলে ঘোষনা দেননি,তা পান করতে উৎসাহিত করেন নি, কাজেই কেও উটের মুত্র পান করছে নাকি করছেনা উটা তার একান্তই ব্যাক্তিগত বিষয়।

হাম্বলি & মালেকি মাযহাব অনুযায়ী বিবেচনা করলে, ইসলাম উটের মুত্র পান করাকে বৈধতা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে : ইসলাম কেন এমন একটা বিষয়কে বৈধতা দিবে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?  উত্তর : কোনটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর কোনটা উপকারি, এটাকে মানদন্ড ধরে নিয়ে ইসলাম কোনো বিষয়কে বৈধ অবৈধ বলেনি!  এমন অনেক বৈধ কাজ আছে যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর,যেমন : নিয়মিত অধিক তেলযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়াকে ইসলাম "বৈধতা " দিয়েছে, কিন্ত আমরা জানি নিয়মিত তেলযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর! বেশি বেশি পানি করাও বৈধ, কিন্ত কিছু ক্ষেত্রে বেশি পানি পান করাটাও ক্ষতির কারন হতে পারে!  মুলত উটের মুত্রের ক্ষেত্রে ইসলাম এটাকে বৈধতা দিয়ে ব্যাপারটাকে একজন মুসলিমের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিয়েছে, সে চাইলে খেতে পারবে, আর চাইলে নাও খেতে পারবে। সুতরাং উটের মুত্র পান করা ক্ষতিকর নাকি না ; সেটা যে উটের মুত্র খায় তার বিবেচনার বিষয়।

মধ্যযুগে আরবি উটের মুত্র কিছু কার্যকরী ও উপকারী ওষুধ তৈরির কাযে ব্যবহৃত হতো। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবন সিনা, (যাকে কিনা বহু মুসলিম স্কলার ও ইসলামবিরুধিরা একজন নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করে), তিনি তার "আল-কানুন ফিত-তিব্ব " গ্রন্থে এটা বলেছেন[6]। এতে বুঝা যায় যে উটের মুত্র চিকিতসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়াটা একেবারে ভিত্তিহীন কোনো বিষয় ছিলনা, বরং তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরদ্বারা কার্যকরী ওষুধ তৈরি করা হতো।

হিন্দুদের মধ্যে অনেকে যেভাবে গরুর মুত্র খায়, সেটার সাথে কোনো মুসলিমের উটের মুত্র খাওয়ার বিন্দুমাত্র সাদৃশ্যতা নেই, এদুটি ব্যাপারকে একইভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কেননা হিন্দুদের মধ্যে যারা গোমুত্র খায়, তারা দাবি করে যে তাদের ধর্মগ্রন্থে এসব খাওয়ার উপদেশ দেয়া আছে, উৎসাহ দেয়া আছে। কিন্ত ইসলামের মুলনিতী অনুযায়ি যখন কোনো মুসলিম উটের মুত্র খাবে, তখন সেটা শুধুই তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার বলে বিবেচিত হবে। তার মনচাইছে, রুচিতে ধরেছে … এজন্য সে খেয়েছে, তাকে ইসলাম এটা খেতে নির্দেশ দেয়নি,উৎসাহ দেয়নি, আবার নিষেধও করেনি।

হিন্দুদের একটা অংশ গুমোত্র খায় ও এটাকে খুবই পুন্যের কাজ বলে দাবি করে। এর জন্য তাদেরকে "গুমোত্রখোর জাতি ", বলা হয়,কিন্ত এটা মুলত একটা অযৌক্তিক কথা ও মিথ্যা অপবাদ, এর মধ্যে লজিক্যাল ফ্যালাসি বিদ্যমান। একটা অংশ মোটেও পুরো একটা জাতির প্রতিনিধিত্ব করেনা। কিন্ত মুসলিমদের বেলায় এই ভুল যুক্তিটিও দেয়া যাবেনা, কেননা মুসলিমদের মধ্যে যারা উটের মুত্র খায়, তাদের উটের মুত্র খাওয়াটা একান্তই তাদের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত ও ব্যাক্তিগত ব্যাপার,ব্যাক্তিগত ধ্যান-ধারনা।  অপরদিকে হিন্দুদের মধ্যে যারা গুমোত্র খায় তারা দাবি করে যে এটা নাকি তাদের ধর্মের নির্দেশনা।

রাসুল ﷺ ও তার সাহাবিদের কেওই উটের মুত্রের বিভিন্ন উপকারি গুনাগুন আছে বলে দাবি করেন নি। বরং এই দাবি আবিস্কৃত হয়েছে অনেক পরে। হাদিসটিতে উল্লেখিত "উটের দুধ ও মুত্র পান করার ফলে সেই লোকগুলো সুস্থ হয়েছিল", এই কথার উপর ভিত্তি করে পরবর্তি সময়ে অনেকে দাবি করেছেন যে উটের মুত্র নাকি অনেক উপকারি পানিয়। এটা ইসলামের দাবি নয়, বরং কিছু মুসলিমদের নিজস্ব দাবি। কোরান, হাদিস, ইজমা, কিয়াস কোথা হতেই এরুপ দাবি প্রমানিত নয় ; সুতরাং এটা ইসলামের দাবি নয়! কোনো মুসলিম যদি দাবি করে উটের মুত্র অনেক উপকারি! এটা খাইলে শরির সুস্থ থাকে, এটা হয় সেটা হয় ; তাহলে এগুলো একান্তই তার নিজস্ব দাবি … এসব দাবি যদি ভুল হয় তাহলে তার জ্ঞান ও বুঝ প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এতে ইসলাম প্রশ্নবিদ্ধ হবেনা । কেননা ইসলাম কখনো এই দাবিই করেনি যে পানিয় হিসেবে উটের মুত্র খুবই উপকারী কোনোকিছু।

প্রমানসমুহ :

[1]আল-মুসনাদুল জামে (2/59-67)
[2]আল-মাবসুত (1/53)
[3]আল-হাওইয়ুল কাবির (2/248)
[4]আল-মুহাল্লা বিল'আছার (1/170)
[5]আল-জামি লিউলুমে ইমাম আহমাদ - ফিকহ (13/279-280)
[6]আল-কানুন ফিত-তিব্ব (1/412-413) & (3/180) & (2/236)