Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

উমাইমাহ বিনত আন-নু'মান বিন শারাহিল সম্পর্ক একটি অভিযোগের জবাব

ইসলাম বিরোধী একটি ওয়েবসাইটে এই হাদিসটি উল্লেখ্য করা হয়েছে, عَنْ ‌أَبِي أُسَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْطَلَقْنَا إِلَى حَائِطٍ يُقَالُ لَهُ الشَّوْطُ، حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى حَائِطَيْنِ فَجَلَسْنَا بَيْنَهُمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اجْلِسُوا هَا هُنَا. وَدَخَلَ وَقَدْ أُتِيَ بِالْجَوْنِيَّةِ فَأُنْزِلَتْ فِي بَيْتٍ فِي نَخْلٍ فِي بَيْتِ أُمَيْمَةَ بِنْتِ النُّعْمَانِ بْنِ شَرَاحِيلَ، وَمَعَهَا دَايَتُهَا حَاضِنَةٌ لَهَا، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: هَبِي نَفْسَكِ لِي. قَالَتْ: وَهَلْ تَهَبُ الْمَلِكَةُ نَفْسَهَا لِلسُّوقَةِ؟ قَالَ: فَأَهْوَى بِيَدِهِ يَضَعُ يَدَهُ عَلَيْهَا لِتَسْكُنَ، فَقَالَتْ: أَعُوذُ بِاللهِ مِنْكَ، فَقَالَ: قَدْ عُذْتِ بِمَعَاذٍ، ثُمَّ خَرَجَ عَلَيْنَا فَقَالَ: يَا أَبَا أُسَيْدٍ، اكْسُهَا رَازِقِيَّتَيْنِ، وَأَلْحِقْهَا بِأَهْلِهَا»[1]

আবূ উসায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী ﷺ এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নাবী ﷺ বললেন, তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন। তখন নু’মান ইব্ন শারাহীলের কন্যা উমাইমার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে জাওনিয়াকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নাবী যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বলল কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেন: এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বলল: আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেন: তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি ﷺ আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।

তারা যেই হাদিসটি উল্লেখ্য করেনি, সেটিও উল্লেখ্য করছি, 

عَنْ عَبَّاسِ بْنِ سَهْلٍ، عَنْ أَبِيهِ وَأَبِي أُسَيْدٍ قَالَا: تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ[2]

আব্বাস বিন সাহল তার পিতা ও আবু আসইয়াদ (রা.) হতে বর্ননা করেন, যে তারা দুজন বলেছেন: নবি (সা) উমাইমাহ বিনত শারাহিল কে বিবাহ করেন। তারপর যখন তাকে তার  নিকট আনা হলো তিনি  তার দিকে নিজ হাত বাড়ালেন, ফলে উমাইমাহ তা অপছন্দ করলেন। একারণে রাসুল  আবু আসইয়াদকে আদেশ করলেন যেন তিনি উমাইমাহকে দুইখানা কাতান কাপড় প্রস্তুত করে পরিয়ে দিতে বললেন। 

 

উক্ত হাদিসটি উল্লেখ্য করে তারা যা বলেছে :

"এবারে সরাসরি বুখারী হাদিস থেকেই একটি হাদিস দিচ্ছি, পাঠকগণ হাদিসটি মন দিয়ে পড়ুন। হাদিসে বর্ণিত হচ্ছে, নবী একজন রাজকন্যাকে হুকুম করেন, নবীর কাছে নিজেকে সমর্পন করতে। রাজকন্যা বললেন, কোন বাজারি লোকের কাছে সে নিজেকে সমর্পন করতে পারবে না। এরপরে নবী তার গায়ে হাত দিলেন। তখন সেই রাজকন্যা আল্লাহর দোহাই দিয়ে নবীর থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করলেন। আল্লাহর দোহাই দেয়ার পরে নবী তাকে ছেড়ে দিলেন। হাদিসটি বর্তমান সময়ে হলে, নবী মুহাম্মদ নির্ঘাত মামলায় ফেসে যেতেন, একজন নারীকে যৌনতার জন্য জোরাজুরি করার অভিযোগে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সেই মেয়েটি ছিল খুবই অল্পবয়সী। তার Wet Nurse অর্থাৎ যে ধাত্রী শিশুকে মায়ের বদলে স্তন্য দেয়, সেই ধাত্রীও তার সাথে ছিল। প্রাপ্তবয়ষ্ক রাজকুমারির সাথে নইলে Wet Nurse থাকবে কেন?"

অভিযোগের জবাব: নবি  তাকে হুকুম করেছেন নিজেকে তার  কাছে সমর্পন করতে, আর তিনি করতেই পারেন, কেননা উমাইমাহকে তিনি  বিয়ে করেছিলেন। উমাইমাহ তার স্ত্রী ছিলেন। তিনি মূলত নিজের স্ত্রীকেই সমর্পন করার কথা বলেছেন। 

হ্যাঁ। তিনি ﷺ তার গায়ে হাত দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, হাত বাড়িয়েছিলেন এবং হাত দিয়েছিলেন। যেহেতু উমাইমাহ তার স্ত্রী ছিলেন সেহেতু এটাতে নেতিবাচক কিছুই নেই। একজন স্বামী তার স্ত্রীর গায়ে হাত দিতেই পারে। তারা এমনভাবে বলছে যেন, তিনি ﷺ যৌনতার উদ্দেশ্যে গায়ে হাত দিয়েছিলেন। অথচ বর্ণনাকারী সাহাবি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, "لِتَسْكُنَ →যাতে সে শান্ত হয়"। অর্থাৎ রাসুল ﷺ হাত রেখেছিলেন শান্তনা দেয়ার জন্য। ঠিক যেইভাবে একজন তার বন্ধুর পিঠে হাত রেখে তার প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করে। এই হাত দেয়াতে যৌনতা ছিলনা।
তারা কোন যুক্তিতে "যৌনতার জন্য জোরাজুরি" বলল, আমার মাথায় ঢুকেনি। রাসুল ﷺ উমাইমাহকে বিয়ে করার পর নিজেকে সমর্পন করার আদেশ দেন, যা খুবই স্বাভাবিক। কেননা বিয়ের পর একজন মহিলা তার স্বামীর অধিনস্থ হিসেবেই থাকবে ও থাকে। তারপর তিনি উমাইমাহকে পেরেশান আবিস্কার করলেন ও হাত রেখে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্ত উমাইমাহ তার ﷺ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বসলেন। ফলে তিনি নবী মুহাম্মদ ﷺ উমাইমাহ-কে ছেড়ে দিলেন ও তার সাথে সংসার করা হতে নিজেকে বিরত রাখলেন। অর্থাৎ সহজ বাংলায়, নবী মুহাম্মদ ﷺ তার সাথে সংসার করেননি। তাকে তালাক দিয়েছেন। বনিবনা না হওয়ায় স্বামী তার স্ত্রী-কে তালাক দিয়েছেন; যা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। এখানে আমি "যৌনতার জন্য জোরাজুরি" বলে কিছুই পাইনি। ইসলাম সম্পর্কে আলোচনার সময় বিকৃত মস্তিষ্কের ব্যক্তি যাদের দৃষ্টিশক্তি বাকা-তেড়া হয়ে যায়, তাদের নিকটই এটা "যৌনতার জন্য জোরাজুরি" মনে হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে কারো নিকটই এমনটা মনে হবেনা।

হাদিসটির "داية" শব্দটি নিয়ে মুহাদ্দিসদের মাঝে দুইটি ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে:

  • (১) এর দ্বারা "দুধ-মা" উদ্দেশ্য। [3]
  • (২) এর দ্বারা সন্তান প্রসবে সহায়ায্যকারী মহিলা উদ্দেশ্য। [4]

যদি প্রথমটি সঠিক হয়, তাহলে এর অর্থ হবে উমাইমাহর দুধ-মা তার সাথে ছিলেন ও তিনি উমাইমাহর খেদমত করতেন, দেখভাল করতেন। এখন দুধমার সাথে থেকে খেদমত করার মানেই এটা নয় যে, তিনি ছোট ছিলেন। দুধমার খেদমত করার বিষয়টা উমাইমাহর বয়স কম হয়ার কোনো প্রমান নয়। কারণ এমনটাও হতে পারে যে, উমাইমাহর বয়স বেশিই ছিল কিন্তু তার দুধমা তার সাথে তবুও থাকত ও তার দেখভাল করত, খেদমত করত। যদি এর দ্বারা প্রসবে সাহায্যকারী মহিলা উদ্দেশ্য হয়, সেক্ষেত্রে হাদিসটির অর্থ হবে এই যে, উমাইমার জন্য নির্দিষ্ট একজন প্রসবে সাহায্যকারিনী মহিলা ছিলেন। এর সুস্পষ্ট অর্থ হলো এই যে, উমাইমাহ গর্ভবর্তী ছিলেন, তাই তার জন্য একজন সন্তান প্রসবে সাহায্যকারীনি সেবিকা নির্ধারিত করে রাখা হয়েছিল।

 

 

রেফারেন্স:

[1] সহিহুল বুখারি (হা/5255)।
[2] সহিহুল বুখারি (হা/5256), (হা/5257)।
[3] উমদাতুল কারী (20/231)। 
[4] ফাতহুল বারি (9/359)।