অভিযোগ :
নবী মুহাম্মদ বলেছেন, কুমারী মেয়েদের যোনীপথ অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হয়। তাই তিনি কুমারী বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কতটা ভয়ঙ্কর মন মানসিকতার হলে কেউ এরকম কথা বলতে পারে, ভেবে অবাক লাগে
গ্রন্থঃ হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রী নির্বাচন
(২৫৫৮) একাধিক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুমারী বিবাহ কর। কারণ কুমারীদের মুখ অধিক মিষ্টি, তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী, তাদের যোনীপথ অধিক উষ্ণ, তারা ছলনায় কম হয় এবং স্বল্পে অধিক সমত্মুষ্ট থাকে।
(ইবনে মাজাহ ১৮৬১, ইবনুস সুন্নী, ত্বাবারানী, সিঃ সহীহাহ ৬২৩, সহীহুল জামে’ হা/ ৪০৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান ইবনু মাজাহ
৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯/৭. কুমারী মহিলা বিবাহ করা।
২/১৮৬১। উতবা ইবনু ‘উআয়ম ইবনু সাঈদা আল-আনসারী (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ তোমাদের কুমারী মেয়ে বিবাহ করা উচিত। কেননা তারা মিষ্টিমুখী, নির্মল জরায়ুধারী এবং অল্পতেই তুষ্ট হয়। হাসান,
হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহাহ ৬২৩।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
জবাব :
এই হাদিসটির একাধিক সংখ্যাক সনদ রয়েছে এবং প্রত্যেকটা সনদই যইফ, একটা সনদও সহিহ বা হাসান না [1]। তবে এর অনেকগুলো সনদ থাকার কারনে এটাকে হাসান লিগাইরিহ ধরা যেতে পারে। হাসান লিগাইরিহ তখন হয় যখন একটা হাদিসের অনেকগুলো যইফ সনদ পাওয়া যায় আর সেই সনদগুলো নিজেরা এককভাবে যইফ হলেও একত্রে মিলে শাহেদ হিসেবে একে অপরকে শক্তি প্রদান করে একটা হাদিসকে হাসানের পর্যায়ে উত্তির্ন করে। এই নিতীতে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ বলেছেন [2]।
ধরে নিলাম হাদিসটি হাসান লিগাইরিহ। যদি হাদিসটি হাসান লিগারিহ হয় তাহলে হাদিসটির বাকি অংশ হাসান হিসেবে গন্য হলেও নির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র أسخن أقبالا [যোনীপথ অধিক উষ্ণ] অংশটি যইফই থেকে যাবে। এই অংশটির জন্য হাসান লিগাইরিহ হুকুম প্রযোজ্য হবেনা।
হাদিসের মতনে যিয়াদাহ প্রমানিত হয়ার জন্য শাহেদের বিষয়টা প্রযোজ্য হয় [3]।আলোচ্য হাদিসের বেলায় "যোনীপথ অধিক উষ্ণ" অংশটি হলো একটি যায়িদাহ [4]।
হাদিসটির যেসব শাহেদ পরস্পরকে শক্তিশালি করে হাদিসটিকে হাসানের পর্যায়ে উত্তীর্ন করেছে [5], সেসব শাহেদের মধ্যে "যোনীপথ অধিক উষ্ণ" অংশটির জন্য কোনো শাহেদ নেই ; [6][7] নির্দিষ্টভাবে এই অংশটার জন্য কোনো শাহেদ নেই তবে এই অংশটি বাদে হাদিসটির বাকি অংশের জন্য শাহেদ আছে।
যেহেতু "যোনীপথ অধিক উষ্ণ" অংশটির জন্য শাহেদ নেই, সুতরাং এই অংশটার জন্য হাসান লিগাইরিহর হুকুম প্রযোজ্য হবেনা। যদি এই অংশটি হাসান না হয় তাহলে অবশ্যই যইফ, কেননা এই যিয়াদাহটি যেই সনদ ধরে এসেছে সেই সনদটি যইফ।
শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী এবং ইবন হাজার আল-আসকালানী আলোচ্য হাদিসের "যোনীপথ অধিক উষ্ণ" অংশটিকে নির্দিষ্টভাবে যইফ বলেছেন [4][8]।
উপরোক্ত আলোচনার মুল খোলাসাহকথা হলো : হাদিসটির "যোনীপথ অধিক উষ্ণ" অংশটি নির্দিষ্টভাবে যইফ, কেননা একে সমর্থন দেয়ার মত কোনো শাহেদ নেই।
অতপর - অভিযোগকারিরা "সুনান ইবন মাজাহ " হতে যেই হাদিসটি উল্লেখ্য করেছে, সেটার অনুবাদে "ভুল" আছে। ইবন মাজাহর হাদিসটির মুল আরবি ইবারত নিম্নরুপ :
"عَلَيْكُمْ بِالْأَبْكَارِ فَإِنَّهُنَّ أَعْذَبُ أَفْوَاهًا وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا وَأَرْضَى بِالْيَسِيرِ"
হাদিসটির وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا এর অর্থ হিসেবে অনুবাদক বলেছেন "নির্মল জরায়ুধারী", যা সুস্পষ্ট ভুল। এর সঠিক অর্থ হবে "তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী"।
কেও যদি বলে, আপনেকি অনুবাদকদের চেয়ে বেশি আরবি বুঝে ফেলেছেন? তাহলে তাকে উত্তরে বলা হবে : এটা আমার বলা অর্থ নয়, বরং হাদিস ব্যাখ্যাকারকদের বর্নিত অর্থ, হাদিসের ব্যাখ্যাকারকরা এর অর্থ এটাই বলেছেন। وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا অর্থ যারা "তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী" বলেছেন, তাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ্য করছি : _[9]
(১)মাযহারুদ্দিন আয-যাইদানী
(২)নাসিরুদ্দিন আল-বাইযাবী
(৩)মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল আস-সান'আনী
(৪)শারফুদ্দিন আল-হুসাইন আত-তাইবী
(৫)আবুল-হাসান নুরুদ্দিন আস-সিনদী
(৬)মুল্লা আলি আল-কারী
(৭)ইবনুল মালাক আল-কিরমানী
(৮)মুহাম্মাদ আল-আমিন আল-হারারী
কাজেই, আমিও পালটা প্রশ্ন ছুরতে পারি যে এই একজন বাংলা অনুবাদক কি এই অনর্গল আরবিতে কথা বলতে পারা ৮ জন মুহাদ্দিসের চেয়ে বেশি আরবি বুঝেন?
টিকাসমুহ :
[1]"শায়খ শুয়াইব আল-আরনাওওত"এর তাহকিককৃত "সুনান ইবন মাজাহ" এর তৃতীয় খন্ডের পৃষ্ঠা নং 64-65, টিকা নং -4 হতে হাদিসটির উপর শুয়াইব আল-আরনাওওত এর তাহকিক উল্লেখ্য করা হলো :
إسناده ضعيف لجهالة عبد الرحمن بن سالم بن عتبة بن عويم بن ساعدة وجهالة أبيه، وقد جاءت تسمية عتبة في بعض الروايات عبد الرحمن.وأخرجه ابن أبي عاصم في "الآحاد والمثاني" (١٩٤٧)، وابن قانع في "معجم الصحابة" ٢/ ٢٨٨، والطبراني في "الكبير" ١٧/ (٣٥٠)، وفي "الأوسط" (٤٥٥)، والبيهقي ٧/ ٨١، والمزي في "تهذيب الكمال" في ترجمة سالم بن عتبة ١٠/ ١٦٣ من طريق محمَّد بن طلحة التيمي، بهذا الإسناد.وفي الباب عن عبد الله بن مسعود عند الطبراني في "الكبير" (١٠٢٤٤) وفي إسناده أبو بلال الأشعري، ضعفه الدارقطني، وذكره ابن حبان في "الثقات" وقال: روى عنه أهل العراق، وترجمه ابن أبي حاتم وقال: روى عنه أبي رحمه الله.وعن عبد الله بن عمر عند ابن السُّنِّي وأبي نعيم كلاهما في "الطب" قال الحافظ في "التلخيص" ٣/ ١٤٥: وفيه عبد الرحمن بن زيد بن أسلم وهو ضعيف.وعن جابر بن عبد الله عند ابن الجوزي في "العلل المتناهية" (١٠١٦) وفي إسناده إبراهم بن البراء متهم
[2]আল-আলবানী "সিলসিলাতুস সাহিহাহ"(2/192-195) গ্রন্থে প্রথমে আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে এককভাবে উক্ত হাদিসের সবগুলো সনদই ক্রুটিযুক্ত - যইফ। তারপর তিনি এর অনেকগুলো যইফ সনদ থাকার কারনে সবগুলো যইফ সনদকে একত্রে মিলিয়ে হাদিসটিকে হাসান লিগাইরিহ বলেছেন।
[3]আল-গাওরী, মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/416)
[4]ইবন হাজার,আত-তালখিসুল হাবির (5/2239)
[5]ড.আহমদ আলি সালিম ও ড. আহমাদ সবরী "আল-কিসমুস সানী মিনাল মুজামিল আওসাত (1/425)" তে , আল-আলবানী "আস-সাহিহাহ (2/192-195)"তে, আল-মুত্তাকী আল-হিন্দী "কানযুল উম্মাল(16/294)" তে ,আল-হাইথামী "আল-ইফসাহ ফি আহাদিসিন নিকাহ "(30-31) তে - উক্ত হাদিসটির কিছু শাহেদ উল্লেখ্য করেছেন।
[6]হাদিসটির " أسخن أقبالا" সংবলিত সংস্করনটি বর্ননা করেছেন ইবনুস সুন্নি ও আবু-নুয়াইম, একই সুত্র ধরে "আব্দুর-রহমান বিন যাইদ বিন আসলাম " থেকে। আব্দুর-রহমান একজন যইফ রাবি & অন্যান্য সবগুলো সনদের মত এই বর্ননাটির সনদও যইফ। _
দেখুন : মুখতার ইব্রাহিম, মুহাম্মাদ নিদা ও হাসান ঈসা কতৃক তাহকিককৃত "আল-জামিউল কাবির "(5/720,টিকা-3), আল-আজলুনীর "কাশফুল খাফা"(2/83), ইবন হাজারের "আত-তালখিসুল হাবির"(5/2239), এবং এই লেখাটির টিকা নং 1।
[7]আশ-শিরাযী তার "আল-আলকাব" গ্রন্থে "বাশার বিন আসিম" হতে এই অংশটি সহ বর্ননা করেছেন বলে কথিত আছে। কিন্ত এইটা শাহেদ হিসেবে গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা : আশ-শিরাযির "আল-আলকাব" গ্রন্থটি কালের পরিক্রমায় হাড়িয়ে গিয়েছে, যার মানে এতে বর্নিত উক্ত হাদিসটির রাবিদের প্রায় সকলের অবস্থা অজানা, ফলে সনদটির দুর্বলতা অনেক বেশি, আর বেশি দুর্বল সনদ শাহেদ হিসেবে গ্রহনযোগ্য হয়না। তাছারা শাহেদ হয়ার জন্য এটা স্পষ্ট হতে হবে যে : শাহেদের সনদটি খুবই যইফ নয়, এতে মিথ্যাদ্বারা অভিযুক্ত বা মাতরুক কোনো রাবি নেই। যখন এবিষয়গুলো স্পষ্ট হবে তখনিই একটি হাদিস শাহেদ হিসেবে গন্য হতে পারবে। এক্ষেত্রে আশ-শিরাযির এই গ্রন্থটিই হারিয়ে গেছে, এই গ্রন্থের বর্তমানে কোনো নামগন্ধ নেই। কাজেই এটা অজানা যে আশ-শিরাযির বর্নিত সনদটি অউদো শাহেদ হয়ার যোগ্য নাকি না, এবং যেহেতু কোনো নিশ্চয়তা নেই যে আশ-শিরাযির বর্নিত সনদটি শাহেদ হয়ার যোগ্য, সেহেতু এটিকে এই وَأَسْخَنُ أَقْبَالاً অংশটির শাহেদ হিসেবে গন্য করা সঠিক হবেনা।
[8]আল-আলবানীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র "আসাম মুসা হাদি" হতে "আস-সিরাজুল মুনির ফি তারতিবে আহাদিসে সহিহিল জামিইস সাগির (1/31)" - এ বর্নিত আছে যে, তিনি (আল-আলবানি) এই হাদিসিটির وَأَسْخَنُ أَقْبَالاً অংশটিকে নির্দিষ্টভাবে "যইফ" বলেছেন।
[9]আল-মাফাতিহ(4/16),তুহফাতুল আবরার (2/334), আত-তানওইর (7/283),শারহুল মিশকাহ (7/2264),কিফায়াতুল হাজাহ (1/573),মিরকাতুল মাফাতিহ (5/2048),শারহুল মাসাবিহ (3/544),মুরশিদ যাওইল হিজা ওয়াল হাজাহ(11/60)