বিষয় : আয়েশাহ (রা) এর মতে তিনি ৯ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কা ছিলেন।
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী
একজন মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স সম্পর্কে আয়িশা(রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত আছে, হাদিসটি হচ্ছে এই যে আয়িশাহ (রা) বলেছেন "যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ৯ বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।" এই প্রবন্ধটিতে এই হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
হাদিসটির মাতান [1] নিম্নরূপ।
আয়িশাহ (রা) হতে মাওক্বুফরূপে [2] বর্ণিত যে তিনি (আয়িশাহ রা.) বলেছেন যে,
اذا بلغت الجارية تسع فهي امرأة
অর্থ : যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে (جارية) নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা (امرأة) হয়ে যায়।
উক্ত হাদিসটির তাখরিজ [3] নিম্নরূপ।
আততিরমিযী, আলবায়হাক্বী এবং আলবাগ্বওই হাদিসটিকে মুয়াল্লাক্বরূপে [4] সনদ ব্যতীত বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবুখারী হাদিসটিকে উল্লেখ্য করেছেন। হারব আলকিরামানী একটি সনদ দ্বারা হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমাদও একটি সনদ দ্বারা হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। __[5]
আততিরমিযী, আলবায়হাক্বী এবং আলবাগ্বওই কর্তৃক বর্ণিত বর্ণনাটি যইফ অবিবেচ্য অনির্ভরযোগ্য অদলিলযোগ্য কারণ এই তিনজনের বর্ণনাটি সনদবিহীন মুয়াল্লাক্ব হিসেবে বর্ণিত হয়েছে [6]।ইমাম আলবুখারী হাদিসটিকে কিভাবে কোন রূপে উল্লেখ্য করেছেন তা জানা নেই,কাজেই ইমাম আলবুখারি কর্তৃক উল্লেখ্যকৃত বর্ণনাটির মান সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছেনা। হারব আলকিরামানী কর্তৃক বর্ণিত সনদটিতে বিচ্ছিন্নতা (ইনক্বিতা) বিদ্যমান, হারব এর সনদ অনুযায়ী হাবিব বিন আবি মারযুক্ব উক্ত হাদিসটি আয়িশাহ (রা) হতে গ্রহণ করেছেন যা কিনা অসম্ভব কেননা হাবিব হচ্ছেন একজন তাবেতাবেঈ যিনি কিনা কখনোওই কোনো সাহাবী হতে কোনো হাদিস শ্রবণ করেন নি, সুতরাং হারব কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুনক্বাতিঈ, এবং মুনক্বাতিঈ সনদ হচ্ছে যইফ অনির্ভরযোগ্য অদলিলযোগ্য।…[7]
বাকি রইল ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত বর্ণনাটি। এবার ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত বর্ণনাটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
ইমাম আহমাদ এর যেই গ্রন্থগুলো বর্তমানে পাওয়া যায় সেই গ্রন্থগুলোর কোনোটিতেই কোথাও এমনটা পাওয়া যায়না যে ইমাম আহমাদ উক্ত হাদিসটি সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত পূর্ববর্তী বহু হাম্বলী উলামারা তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে লিখে গিয়েছেন যে ইমাম আহমাদ তাঁর একটি হাদিসগ্রন্থে উক্ত হাদিসটি সনদসহ বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমাদ তাঁর যেই গ্রন্থটিতে উক্ত হাদিসটি সনদসহ বর্ণনা করেছেন সেই গ্রন্থটি কালের পরিক্রমায় কোনোভাবে হারিয়ে গিয়েছে, তাই বর্তমানে সেই গ্রন্থটি আর পাওয়া যায়না। পূর্ববর্তী আলেমরা ইমাম আহমাদের সেই গ্রন্থটি এবং সেই গ্রন্থটিতে বিদ্যমান উক্ত হাদিসের সনদসহ বর্ণনাটি পেয়েছিলেন, তাই তাঁরা তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে লিখে গিয়েছেন যে ইমাম আহমাদ তাঁর একটি গ্রন্থে সনদসহ উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখ্য যে : ইবনু আব্দিলহাদী, ইবনু আবিউমার, ইবনু ক্বুদ্দামাহ, শামসুদ্দিন ইবনু মুফলিহ, বুরহানুদ্দিন ইবনু মুফলিহ, মানসুর আলবুহুতী, আব্দুল্লাহ আলমাক্বদিসী, ইবনুন নাজ্জার আলফুতুহী, বাহাউদ্দিন আলমাক্বদিসী, শামসুদ্দিন আযযারকাশী, আররুহাইবানী, উসমান ইবনু জামিঈ এবং অন্যান্য আরও বহু হাম্বলী উলামারা তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে ইমাম আহমাদ উক্ত হাদিসটি সনদ ধরে আয়িশাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন। …[8]
এটা জানা আছে যে ইমাম আহমাদ একটি সনদ ধরে আয়িশাহ (রা) হতে আলোচ্য হাদিসটি মাওক্বুফরূপে বর্ণনা করেছেন, কিন্ত সনদটি কি তা জানা নেই, কারণ ইমাম আহমাদ এর এই সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটি কোনো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ থাকা অবস্থায় বর্তমানকাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। সনদটি অজানা হয়ার দরুণ স্বাভাবিক ক্ষেত্রে ও পরিস্থিতিতে যেই পদ্ধতিতে কোনো একটি হাদিসের কোনো একটি সনদের মান নির্ণয় করা হয়, এক্ষেত্রে সেই পদ্ধতিতে ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত উক্ত সনদটির মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
তবে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া দ্বারা এটা প্রমাণ করে দেখানো সম্ভব যে ইমাম আহমাদ এর উক্ত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটির সনদটি সহিহ অথবা হাসান। এবং আমি ঠিক এটাই করে দেখাব, অর্থাৎ উক্ত বিশেষ প্রক্রিয়াটি দ্বারা প্রমাণ করে দেখাব যে ইমাম আহমাদ এর উক্ত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটির সনদটি সহিহ অথবা হাসান।
উক্ত বিশেষ প্রক্রিয়াটিতে প্রথমে একটি সূত্র প্রতিষ্ঠিত করা হবে অতঃপর সেই সূত্রটির উপর ভিত্তি করে ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত আলোচ্য হাদিসটির সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটিকে সহিহ বা হাসান সাব্যস্ত করা হবে।
প্রাথমিকভাবে এক্ষেত্রে দুইটি সম্ভাবনা বিদ্যমান। হয় ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদটি যইফ বা যইফের চেয়েও নিচু পর্যায়ের, আর নাহয় ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদটি সহিহ বা হাসান পর্যায়ের। এই দুইটি সম্ভাবনার যেকোনো একটি সঠিক হলে অপরটি ভুল অথবা ভিন্নভাবে বললে যেকোনো একটি ভুল হলে অপরটি সঠিক।
এবার, যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে উলামাদের মাঝে মোট তিনটি মত রয়েছে। সেই তিনটি মত নিম্নরূপ। …[9]
প্রথম মত : কিছু শর্ত সাপেক্ষে যইফ হাদিস সর্বদাই সকলক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য হবে, শর্তগুলো হচ্ছে এই যে যইফ হাদিসটির দূর্বলতা খুবই বেশি হতে পারবেনা এবং যইফ হাদিসটির বিরোধী অন্য এমন কোনো হাদিস থাকতে পারবেনা যা কিনা মানের দিক দিয়ে উক্ত যইফ হাদিসটির সমপর্যায়ের অথবা উক্ত যইফ হাদিসটির চেয়ে উঁচু পর্যায়ের।
দ্বিতীয় মত : যইফ হাদিস কোনোক্ষেত্রেই কখনোওই নির্ভরযোগ্য হবেনা, শুধুমাত্র সহিহ এবং হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য।
তৃতীয় মত : হালাল-হারাম, হুকুম-আহকাম, জায়েয-নাযায়েয ও এ জাতীয় অন্যান্য বিষয়গুলো সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যইফ হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়। তবে আমলের ফজিলত বর্ণনা, আগ্রহ-উৎসাহ জাগানো, ভীতি প্রদর্শন ও এ ধরণের অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করা বৈধ।
…[10]
যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা সংক্রান্ত উপর্যুক্ত তৃতীয় মতটি হতে একটি সূত্র নির্গত হয়, সূত্রটি নিম্নে বর্ণনা করা হল।
"যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে উপর্যুক্ত তৃতীয় মতটির অনুসারী একজন আলেম যদি হুকুম-আহকাম বা এজাতীয় অন্য কোনো বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট হাদিস এর উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেন তাহলে এর মানে হচ্ছে এই যে উক্ত নির্দিষ্ট হাদিসটি উক্ত আলেমটির নিকট সহিহ অথবা হাসান। "
উল্লেখ্য যে, একটু আগে বিশেষ প্রক্রিয়াটির একটি ধাপ হিসেবে যেই সূত্রটি প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলেছিলাম, উপর্যুক্ত এই সূত্রটিই হচ্ছে সেই সূত্রটি।
এই সূত্রটিকে মোট তিনটি মাধ্যম দ্বারা প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠিত করা যায়, এই তিনটি মাধ্যম হচ্ছে : কাণ্ডজ্ঞান, উসূল এবং উলামাদের উদাহরণ। এক্ষেত্রে আমি এই তিনটি মাধ্যমের সবগুলো দ্বারাই উক্ত সূত্রটিকে সঠিক সাব্যস্ত করে দেখাব।
যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা সংক্রান্ত তৃতীয় মতটির অনুসারী একজন আলেম হুকুম আহকাম অথবা এ জাতীয় অন্য কোনো বিষয় এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট হাদিস এর উপর শুধুমাত্র তখনই নির্ভর করবেন যখন উক্ত নির্দিষ্ট হাদিসটি উক্ত আলেমটির দৃষ্টিতে সহিহ বা হাসান হবে এবং যইফ বা যইফের চেয়ে নিচু পর্যায়ের হবে না, সুতরাং উপর্যুক্ত তৃতীয় মতটির অনুসারী একজন আলেম কর্তৃক হুকুম আহকাম অথবা এজাতীয় অন্য কোনো বিষয় এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট হাদিস এর উপর নির্ভর করার অর্থ হচ্ছে এই যে উক্ত নির্দিষ্ট হাদিসটি উক্ত আলেমটির দৃষ্টিতে সহিহ অথবা হাসান, অতএব সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞান ভিত্তিক সরল যুক্তির দ্বারা প্রমাণিত হল যে উপর্যুক্ত সূত্রটি সঠিক।
ফিক্বাহশাস্ত্র এবং হাদিসশাস্ত্র এ একটি বিশেষ উসূল বা মূলনীতি বিদ্যমান, সেই বিশেষ মূলনীতিটি নিম্নরূপ ;
"কোনো একজন আলেম একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যইফ বা যইফের চেয়ে নিচু পর্যায়ের হাদিসকে অনির্ভরযোগ্য মনে করেন। যদি উক্ত আলেমটি উক্ত নির্দিষ্ট ক্ষেত্রটিতে একটি নির্দিষ্ট হাদিসের উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করে সেই নির্দিষ্ট হাদিসটি দ্বারা আমল করেন
অথবা যদি উক্ত আলেমটি উক্ত নির্দিষ্ট ক্ষেত্রটিতে একটি নির্দিষ্ট হাদিসের উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করে সেই নির্দিষ্ট হাদিসটি দ্বারা একটি সিদ্ধান্ত বর্ণনা করেন, তাহলে এর মানে হচ্ছে এই যে উক্ত নির্দিষ্ট হাদিসটি উক্ত আলেমটির দৃষ্টিতে সহিহ অথবা হাসান এবং উক্ত নির্দিষ্ট হাদিসটির রাবীরা উক্ত আলেমটির দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য। "_[11]
আমার উল্লেখিত সূত্রটি হচ্ছে উপর্যুক্ত এই মূলনীতিটিরই একটি রূপ। এই মূলনীতিটি আমার দ্বারা বর্ণিত উক্ত সূত্রটিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
অপরদিকে, উক্ত সূত্রটিকে বহু উলামারাও প্রয়োগ করেছেন, উদাহরণস্বরূপ : ইবনু হাজার, আসসামহুদী, আলউসাইমিন, আলআলবানী, ইবনু কাসির, ইবনু তাইমিয়াহ, আবুইয়ালা ইবনুল ফারা এবং অন্যান্য আরো অনেকে।…[12]
অতএব, সূত্রটি সঠিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হল।
এবার সূত্রটি প্রয়োগ করার পালা।
আবুবকর মুহাম্মদ ইবনুলআরাবী আলমালিকী তাঁর গ্রন্থ 'عارضة الأحوذي' তে লিখেছেন যে,
"قال أحمد إذا رضيت وهي بنت تسع سنين جاز النكاح وكان الإستئمار صحيحا لقول عائشة إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي إمرأة…" [13]
অর্থ : আহমাদ বলেছেন যে যখন একজন নয় বছর বয়সী মেয়ে বিয়েতে রাজি হবে তখন বিয়েটি বৈধ হবে এবং সম্মতি চাওয়ার বিষয়টি সঠিক হবে, আয়িশাহর (রা) এই বক্তব্যটির কারণে যে "যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়"…
ইমাম আহমাদ এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [14]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে ইমাম আহমাদ এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
মাওফিক্বুদ্দিন আবুমুহাম্মাদ ইবনু ক্বুদ্দামাহ আলমাক্বদিসী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وجمعنا بين الأدلة والأخبار وقيدنا ذلك بابنة تسع لأن عائشة قالت إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة _[15]
অর্থ : এবং আমরা দলিলসমূহ এবং বর্ণনাসমূহের মাঝে সামঞ্জস্যসাধন করেছি এবং সেটাকে নয় বছরের মেয়ের দ্বারা সীমাবদ্ধ করেছি কেননা আয়িশাহ (রা) বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
ইবনু ক্বুদ্দামাহ উক্ত হাদিসটির জন্য ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। [16]
ইবনু ক্বুদ্দামাহ এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ইবনু ক্বুদ্দামাহ তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [17]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে ইবনু ক্বুদ্দামাহ এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
আবুলফারাজ আব্দুররহমান ইবনু আবিউমার আলমাক্বদিসী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وثَبَت في حَقِّها أحْكامُ الحَيضِ كلُّها؛ لأنَّه رُوِيَ عن عائشةَ، أنَّها قالت: إذا بَلَغَتِ الجارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فهي امرأةٌ …[18]
অর্থ : এবং মেয়েটির জন্য হায়েযের সকল হুকুম-আহকাম প্রমাণিত হয়েছে কেননা আয়িশাহ (রা) হতে এমনটা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
ইবনু আবিউমার উক্ত হাদিসটির জন্য ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। [19]
ইবনু আবিউমার এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ইবনু আবিউমার তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [20]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে ইবনু আবিউমার এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
তাক্বিউদ্দিন আবুলবাক্বা মুহাম্মদ ইবনুননাজ্জার আলফুতুহী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وثبت في حقها أحكام الحيض كلها لأنه روي عن عائشة رضي الله تعالى عنها انها قالت إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة _[21]
অর্থ : এবং মেয়েটির জন্য হায়েযের সকল হুকুম-আহকাম প্রমাণিত হয়েছে কেননা আয়িশাহ (রা) হতে এমনটা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
ووجه تقييد ذلك ببنت تسع ما روى أحمد بسنده إلى عائشة أنها قالت إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة _[22]
অর্থ : এবং সেটাকে নয় বছরের মেয়ের দ্বারা সীমাবদ্ধ/নির্দিষ্ট করে দেয়ার কারণ হচ্ছে তা যা ইমাম আহমাদ আয়িশাহ (রা) পর্যন্ত সনদ পৌছিয়ে বর্ণনা করেছেন যে তিনি (রা) বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
ইবনুননাজ্জার এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ইবনুননাজ্জার তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [23]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে ইবনুননাজ্জার এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
মানসুর বিন ইউনুস আলবুহুতী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وإذن بنت تسع معتبر لقول عائشة إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة رواه أحمد _[24]
অর্থ : নয় বছরের মেয়ের অনুমতি বিবেচ্য আয়িশাহ (রা) এর এই বক্তব্যটির কারণে যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়, ইমাম আহমাদ এটা বর্ণনা করেছেন।
ولها إذن صحيح معتبر نصا لما روي أحمد بسنده إلى عائشة إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة [25]
অর্থ : এবং নস অনুযায়ী মেয়েটির অনুমতি বিশুদ্ধ বিবেচ্য, কারণ ইমাম আহমাদ আয়িশাহ (রা) পর্যন্ত সনদ পৌছিয়ে বর্ণনা করেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
إذن بنت تسع سنين صحيح معتبر نصا لقول عائشة: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة رواه أحمد [26]
অর্থ : নস অনুযায়ী নয় বছরের মেয়ের অনমুতি বিশুদ্ধ বিবেচ্য আয়িশাহ (রা) এর এই বক্তব্যটির কারণে যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়, ইমাম আহমাদ এটা বর্ণনা করেছেন।
আলবুহুতী এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে আলবুহুতী তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [27][28]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে আলবুহুতী এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আযযারকাশী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وإنما قيدنا ذلك ببنت تسع، لقول عائشة رضي الله عنها إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة. رواه أحمد [29]
অর্থ : এবং আমরা সেটাকে নয় বছরের মেয়ের দ্বারা সীমাবদ্ধ/নির্দিষ্ট করেছি আয়িশাহ (রা) এর এই বক্তব্যটির কারণে যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়, ইমাম আহমাদ এটা বর্ণনা করেছেন।
আযযারকাশী এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে আযযারকাশী তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [30]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে আযযারকাশী এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
মুস্তফা বিন সাদ বিন আব্দাহ আররুহাইবানী আলহাম্বলী বলেছেন যে,
ووجه تقييد ذلك ببنت تسع، ما روى أحمد عن عائشة أنها قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة _[31]
অর্থ : এবং সেটাকে নয় বছরের মেয়ের দ্বারা সীমাবদ্ধ/নির্দিষ্ট করে নেয়ার কারণ হচ্ছে তা যা ইমাম আহমাদ আয়িশাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি (আয়িশাহ রা.) বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
আররুহাইবানী এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে আররুহাইবানী তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [32]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে আররুহাইবানী এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
উসমান বিন আব্দুল্লাহ বিন জুময়াহ বিন জামিঈ আলহাম্বলী বলেছেন যে,
وخص بنت تسع لحديث أحمد عن عائشة قالت إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة [33]
অর্থ : এবং নয় বছরের মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইমাম আহমাদ কর্তৃক আয়িশাহ (রা) হতে বর্ণিত হাদিসটির কারণে যে তিনি (রা) বলেছেন যে যখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হয়ে যায়।
উসমান ইবনু জামিঈ এক্ষেত্রে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটির উপর একদম সরাসরিভাবে নির্ভর করে একটি আহকাম সংক্রান্ত ফিক্বহী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এবং যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে উসমান ইবনু জামিঈ তৃতীয় মতটির অনুসারী ছিলেন। [34]
সুতরাং উক্ত সূত্রটি অনুযায়ী প্রমাণিত হল যে উসমান ইবনু জামিঈ এর নিকট উক্ত হাদিসটি সহিহ অথবা হাসান।
উক্ত সূত্রটি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল হল এই যে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত মাওকুফ হাদিসটির জন্য বর্ণিত ইমাম আহমাদ এর সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটিকে ইমাম আহমাদ নিজে, ইবনু ক্বুদ্দামাহ, ইবনু আবিউমার, ইবনুননাজ্জার, আলবুহুতী, আযযারকাশী, উসমান ইবনু জামিঈ এবং আররুহাইবানী সহিহ বা হাসান হিসেবে গণ্য করেছেন।
আমার উপর্যুক্ত সম্পূর্ণ আলোচনাটি হতে মোট তিনটি আপত্তি আসতে পারে। নিম্নে এই সম্ভাব্য আপত্তিসমূহকে উল্লেখ্য করাপূর্বক খণ্ডন করা হল।
প্রথম আপত্তি : আবুবকর ইবনুল আরাবী আলমালিকী তাঁর "আরিদ্বাতুল আহওয়াযী" গ্রন্থে আয়িশাহ (রা) এর উক্ত আলোচিত হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন যে,
وحديث عائشة لم يصح فإن صح فالمراد به باحتمال الوطء لا صحة الإذن …[35]
অর্থ : এবং আয়িশাহর (রা) হাদিসটি সহিহ নয়, যদি এটা সহিহ হয়ে থাকে তাহলে এদ্বারা উদ্দেশ্য সহবাসের সম্ভাব্যতা, অনুমতির শুদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়।
ইবনুল আরাবী একদম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে আয়িশাহর (রা) উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়।
দ্বিতীয় আপত্তি : অনেক হাম্বলী উলামাদের দৃষ্টিতে মুরসাল হাদিস ফিক্বহে নির্ভরযোগ্য, সুতরাং এমনও হতে পারে যে উক্ত হাদিসটির জন্য ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটি প্রকৃতপক্ষে মুরসাল ছিল।
তৃতীয় আপত্তি : অনেক উলামারা ক্বিয়াসের উপর যইফ হাদিসকে অগ্রাধিকার দিতেন অর্থাৎ আহকাম সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে যদি ক্বিয়াস করার প্রয়োজন হতো তাহলে তাঁরা ক্বিয়াস না করে ক্বিয়াস এর বদলে একটি যইফ হাদিস গ্রহণ করে নেয়াকে অধিক উত্তম বলে মনে করতেন। সুতরাং এমনও হতে পারে যে উক্ত হাদিসটির জন্য ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদবিশিষ্ট বর্ণনাটি প্রকৃতপক্ষে যইফ ছিল।
উপর্যুক্ত আপত্তিগুলোর খণ্ডন নিম্নরূপ।
প্রথম আপত্তিটির খণ্ডন :
আবুবকর ইবনুল আরাবী সম্পর্কে একটি বাস্তব সত্য হল এই যে তিনি বিশুদ্ধ ক্রুটিমুক্ত এবং বাগ্মীতাপূর্ণ আরবী ভাষা ব্যবহার করতেন, তিনি একজন খতিব বা বক্তা ছিলেন, তিনি আরবি সাহিত্য ও আরবি ব্যাক্যরণ সম্পর্কে বই লিখেছেন, কবিগণ তাঁর প্রশংসা করেছেন। [36]
আবুবকর ইবনুল আরাবী এর বক্তব্যটি হচ্ছে নিম্নরূপ,
وحديث عائشة لم يصح فإن صح فالمراد به باحتمال الوطء لا صحة الإذن
অর্থ : এবং আয়িশাহর (রা) হাদিসটি সহিহ নয়, যদি এটা সহিহ হয়ে থাকে তাহলে এদ্বারা উদ্দেশ্য সহবাসের সম্ভাব্যতা, অনুমতির শুদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়।
ইবনুল আরাবী এক্ষেত্রে "فإن صح" (যদি এটা সহিহ হয়ে থাকে) কথাটিতে اِنْ ব্যবহার করেছেন, তিনি এক্ষেত্রে لَوْ ব্যবহার করেন নি।
আরবি ভাষায় "যদি" বুঝানোর জন্য দুইটি শব্দ রয়েছে, একটি হচ্ছে لَوْ এবং অপরটি হচ্ছে اِنْ। এই لَوْ হচ্ছে এমন "যদি" যেই "যদি" এর পরে আসা কথাটি সাধারণত এমন কিছু হয় যা সত্য হয়া অসম্ভব। অপরদিকে اِنْ হচ্ছে এমন "যদি" যেই "যদি" এর পরে আসা কথাটি সাধারণত এমনকিছু হয় যা সত্য হয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। কিছু বিশেষ ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে اِنْ এর পরে এমন কথা আসে যা সত্য হয়া অসম্ভব, তবে সাধারণত এমনটা হয়না, তাছাড়া ইবনুল আরাবীর উপর্যুক্ত বক্তব্যটির ক্ষেত্রে এরকম কোনো বিশেষ ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। আবার কিছু বিশেষ ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে لَوْ এর পরে এমন কথা আসে যা সত্য হয়া সম্ভব, তবে সাধারণত এমনটা হয়না।[37][38]
এবার, اِنْ ও لَوْ সংক্রান্ত উপর্যুক্ত নীতিটির আলোকে ইবনুল আরাবীর উক্ত বক্তব্যটির فإن صح অংশটির অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে একটু চিন্তা করলেই এই ব্যাপারটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে ইবনুল আরাবী আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটি সহিহ না হয়ার দৃষ্টিভংগীটি সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত বা নিশ্চিত নন।অর্থাৎ, আয়িশাহ (রা) এর উক্ত হাদিসটি সহিহ না এইমর্মের যেই মতটি ইবনুল আরাবী ব্যক্ত করেছেন, সেই মতটির সঠিকতার ব্যাপারে ইবনুল আরাবী নিজেই নিশ্চিত বা সন্দেহমুক্ত নন, বরং তিনি সন্দেহ করেন যে হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে সহিহ হতে পারে।
এখন,একদিকে আবুবকর ইবনুল আরাবী উক্ত হাদিসটি সহিহ না হয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা প্রকাশের সহিত বলেছেন যে উক্ত হাদিসটি সহিহ না ; অপরদিকে এর বিপরীতে ইমাম আহমাদ, ইবনু ক্বুদ্দামাহ, ইবনু আবিউমার, ইবনুননাজ্জার, আলবুহুতী, আযযারকাশী, উসমান ইবনু জামিঈ এবং আররুহাইবানী উক্ত হাদিসটিকে পরোক্ষভাবে সহিহ বা হাসান সাব্যস্ত করেছেন।
সুতরাং ইবনুল আরাবী কর্তৃক উক্ত হাদিসটিকে অনিশ্চয়তা প্রকাশ সহকারে অসহিহ সাব্যস্তকরণ এর উপর ইমাম আহমাদ, ইবনু ক্বুদ্দামাহ, ইবনু আবিউমার, ইবনুননাজ্জার, আলবুহুতী, আযযারকাশী, উসমান ইবনু জামিঈ এবং আররুহাইবানী কর্তৃক উক্ত হাদিসটিকে পরোক্ষভাবে সহিহ বা হাসান সাব্যস্তকরণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।
দ্বিতীয় আপত্তিটির খণ্ডন :
যেই মুরসাল বর্ণনা যইফ হয়া প্রসঙ্গে উলামাদের মাঝে মতভেদ ঘটেছে সেই মুরসাল বর্ণনা হল তাবেঈ বা তাবেতাবেঈ কর্তৃক মাধ্যম উল্লেখ্য করা ব্যতিত সরাসরি রাসূল (সা) হতে বর্ণনাকৃত বর্ণনা ; তাছাড়া মুনক্বাতিঈ বর্ণনা এবং মুযাল বর্ণনা যে যইফ তা নিয়ে কোনো মতভেদ ঘটেনি। _[39]
আয়িশাহ (রা) এর আলোচিত উক্ত হাদিসটি সাহাবী আয়িশাহ (রা) হতে মাওক্বুফ হিসেবে বর্ণিত। যদি ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদটির ক্ষেত্রে কোনো তাবেতাবেঈ রাবি বা কোনো তাবেতাবেঈ এর নিচের দিকের রাবি মাধ্যম উল্লেখ্য করা ব্যতিত সরাসরি আয়িশাহ (রা) হতে বর্ণনা করে থাকেন তাহলে ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদটি সেই মুরসাল হবেনা যেই মুরসাল এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ ঘটেছে, বরং সেক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুনক্বাতিঈ হবে আর মুনক্বাতিঈ সনদ যে যইফ তা নিয়ে কোনো মতভেদ নেই।
সুতরাং উক্ত দ্বিতীয় আপত্তিটি অপ্রাসঙ্গিক অবান্তর এবং অত্যন্ত ভুল।
তৃতীয় আপত্তিটির খণ্ডন :
ক্বিয়াস এর উপর যইফ হাদিসকে অগ্রাধিকার দেয়া সংক্রান্ত এই নীতিটি যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গের ১ম মতটির অন্তর্ভুক্ত একটি উপমত।[40]
কিন্ত ইমাম আহমাদ, ইবনু ক্বুদ্দামাহ, ইবনু আবিউমার, ইবনুননাজ্জার, আলবুহুতী, আযযারকাশী, আররুহাইবানী এবং উসমান ইবনু জামিঈ এনারা সবাই যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে তৃতীয় মতটির অনুসারী।
সুতরাং উক্ত তৃতীয় আপত্তিটি অপ্রাসঙ্গিক অবান্তর এবং অত্যন্ত ভুল।
উপসংহার :
ইমাম আহমাদ,ইবনু ক্বুদ্দামাহ, ইবনু আবিউমার, ইবনুননাজ্জার, আযযারকাশী, আলবুহুতী, আররুহাইবানী এবং উসমান ইবনু জামিঈ উক্ত আলোচিত হাদিসটিকে সহিহ বা হাসান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এবং এটা দাবি করার মতো কোনো প্রমাণ নেই যে তাঁরা এক্ষেত্রে ভুল করেছেন। সুতরাং তাঁদের বিবেচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে উক্ত হাদিসটির জন্য ইমাম আহমাদ কর্তৃক আয়িশা (রা.) হতে সনদ ধরে বর্ণিত রেওয়াতটি সহীহ অথবা হাসান।অর্থাৎ আয়িশা (রা.) এর উক্ত আলোচিত হাদিসটির যেই রেওয়ায়েতটি ইমাম আহমাদ সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন সেই রেওয়ায়েতটি সহীহ অথবা হাসান। অতএব এটি প্রমাণিত হল যে আয়িশা(রা.) ৯ বছর বয়সকে একটি মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হবার বয়স হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং আয়িশা(রা.) এর নিজ বক্তব্যের দ্বারা প্রমাণিত হল যে নবীﷺ এর সাথে তাঁর যখন বাসর হয়, তখন অর্থাৎ ৯ বছর বয়সে তিনি প্রাপ্তবয়স্কা নারী ছিলেন, বালিগ্বাহ ছিলেন। যেখানে স্বয়ং আয়িশা(রা.) নিজ বাসর হবার বয়সকে প্রাপ্তবয়স্কা বা বালেগা নারীর বয়স বলে অভিহীত করছেন, সেখানে দেড় হাজার বছর পরে কিছু ইসলামবিরোধী নতুন করে তাঁকে “শিশু” বানিয়ে কী অভিযোগ তুললো এতে কিছুই আসে যায় না।
টীকাসমূহ :
"তাহক্বীক্ব" শব্দটির সংক্ষিপ্তরূপ হিসেবে টীকা প্রদানের ক্ষেত্রে "তাঃ" ব্যবহার করা হবে।
"হাদিস" শব্দটির সংক্ষিপ্তরূপ হিসেবে টীকা প্রদানের ক্ষেত্রে "হা/" ব্যবহার করা হবে।
[1]"মাতান" (متن) মানে হল কোনো হাদিসের মূল পাঠ্য অংশ (text)।
[2]যেই হাদিসে কোনো সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে সেই হাদিসকে বলা হয় "মাওক্বুফ"(موقوف)।
[3]কোনো হাদিস কোন কোন গ্রন্থে কোন কোন সুত্রে কিভাবে বর্ণিত হয়েছে, এ সংক্রান্ত বর্ণনাকে হাদিসশাস্ত্রের পরিভাষায় "তাখরিজ"(تخريج) বলা হয়।
[4]আংশিক সনদ উল্লেখ্য করে অথবা সম্পুর্ণ সনদহীনভাবে অতিরিক্ত সংযুক্তি হিসেবে কোনো হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধকৃত হাদিসকে "মুয়াল্লাক্ব"(معلق) বলা হয়।
[5]উক্ত তাখরিজটির উৎসসমূহ নিম্নরূপ,
সুনানুত তিরমিযী (তাঃ বাশার, 2/402, হা/ 1109) ; আলবায়হাক্বী, আসসুনানুল কুবরা (তাঃ মুহাম্মদ আতা, 1/476) ; আলবাগ্বওই, শারহুস সুন্নাহ (তাঃ আলআরনাউত এবং আশশাওইশ,9/37 ) ; মাসাইলু হারব আলকিরামানী কিতাবুত তাহারাহ ওয়াস সালাহ (তাঃ আসসারাইঈ, পৃষ্ঠা নং 587,হা/1289) ; ইবনু আব্দিলহাদী, তানক্বিহুত তাহক্বীক্ব (তাঃ সামি এবং আলখাব্বানী,4/324) ; ইবনু তাইমিয়াহ, শারহুল উমদাহ (দারু আত্বায়াতিল ইলম,1/555 ) ; বুরহানুদ্দিন,আলমুবদিঈ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 2/227)।
[6]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি
(মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, পৃষ্ঠা নং/68-75)
[7]ইবনু হিব্বান, আছছিক্বাত (দায়িরাতুল মায়ারিফিল উসমানিয়াহ,6/184) ; ইবনু হাজার, তাক্বরিবুত তাহযীব (তাঃ আওয়ামাহ, পৃষ্ঠা নং 151, রাবি/1105) ; আলক্বাশিরী, তারিখুর রিক্বক্বাহ (তাঃ ইব্রাহিম সালিহ, পৃষ্ঠা নং 68); আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি (মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, পৃষ্ঠা নং/94-97)।
[8]ইবনু আব্দিলহাদী, তানক্বিহুত তাহক্বীক্ব (তাঃ সামি এবং আলখাব্বানী,4/324); ইবনু আবিউমার, আশশারহুল কাবির আলাল মুক্বনিঈ (আলমানার, 7/388); ইবনু ক্বুদ্দামাহ, আলমুগ্বনী (তাঃ আততুর্কী এবং আলহুলুউ, 9/404); শামসুদ্দিন ইবনু মুফলিহ, আলফুরুউ (তাঃ আব্দুল্লাহ আততুর্কী, 3/283); বুরহানুদ্দিন ইবনু মুফলিহ, আলমুবদিঈ শারহুল মুক্বনিঈ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 6/98); আলবুহুতী, আররাওদ্বুল মুরবাআ বিশারহি যাদিল মুস্তাক্বনাআ (দারু রাকাইয,3/86); আলবুহুতী, কাশাফুল ক্বানা আন মাতানিল ইক্বনা (ওয়াযারাতুল আদাল, 11/253); আব্দুল্লাহ আলমাক্বদিসী, শারহু দালিলিত ত্বলিব (তাঃ আহমাদ আলজামায, 3/223) ; ইবনুন নাজ্জার আলফুতুহী, মায়ুনাতু উলিন্নাহা শারহু মুন্তাহাল ইরাদাত (তাঃ দাহীশ, 9/45); বাহাউদ্দিন আলমাক্বদিসী, আলউদ্দাহ শারহুল উমদাহ (দারুল হাদিস, পৃষ্ঠা নং 393-394); শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী (দারুল উবাইকান, 5/83); আররুহাইবানী, মাত্বালিবু উলিন্নাহা ফি শারহু গ্বায়াতিল মুন্তাহা (আলমাকতাবুল ইসলামী, 5/53); উসমান ইবনু জামি, আলফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত ফি আখসারিল মুখতাসারাত (মুয়াসসাতুর রিসালাহ, 3/281)…ইত্যাদি ইত্যাদি।
[9]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আল-হাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি
(মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ,পৃষ্ঠা নং 245-314)
[10] প্রথম মতটির পক্ষে অবস্থানকারী উলামাদের সংখ্যা খুবই কম, দ্বিতীয় মতটির পক্ষে অবস্থানকারী উলামাদের সংখ্যাটাও খুবই কম। অধিকাংশ উলামারা তৃতীয় মতটির পক্ষে অবস্থানকারী, তৃতীয় মতটিই অধিক প্রসিদ্ধ প্রচলিত ও অধিক প্রভাবশালী।
[11]বাদরুদ্দিন আযযারকাশী, আলবাহরুল মুহিত ফি উসুলিল ফিক্বাহ (দারুল কুতুবীই, 6/169-171) ; মাজদুদ্দিন আবুসসায়াদাত ইবনুল আছির, জামিউল উসুল ফি আহাদিসির রসুল (তাঃ আব্দুল ক্বাদির আলআরনাউত ও বাশির উয়ুন, 1/130) ; ফাখরুদ্দিন আররাযী, আলমাহসুল (মুয়াসসাতুর রিসালাহ, 4/412) ; ইবনু ক্বুদ্দামাহ, রাদ্বাতুন্নাযির ওয়া জুন্নাতুল মানাযির (তাঃ শা'বান ইসমাইল, 1/345) ; আবুহামিদ আলগাযযালী, আলমুস্তাসফা (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, পৃষ্ঠা নং 129 এবং 130)।
[12]দেখুন : ইবনু হাজার, আততালখিসুল হাবির (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 2/327);
আসসামহুদী, ওয়াফাউ উয়াফা বিয়াখবারি দারিল মুস্তফা (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 3/91); আলউসাইমিন, আশশারহুল মুমতাআ আলা যাদিল মুস্তাক্বনা (দারু ইবনিল যাওযি, 15/216); আলআলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসিস সাহিহাহ (মাকতাবাতুল মাআরিফ, 1/763); তাফসিরু ইবনে কাসির (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 8/410); আবুইয়ালা ইবনুল ফারা, আলউদ্দাহ ফি উসূলিল ফিক্বাহ (তাঃ আহমাদ বিন আলী আলমুবারকী, 4/1108) ;
ইবনু তাইমিয়াহ, শারহু উমদাতিল ফিক্বাহ কিতাবুস সিয়াম (দারুল আনসারী, 1/229)… ইত্যাদি ইত্যাদি।
[13]আবুবকর ইবনুল আরাবী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 5/24)
[14]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি
(মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ,পৃষ্ঠা নং 279)
[15]আবু মুহাম্মদ ইবনু ক্বুদ্দামাহ, আলকাফী ফি ফিক্বহিল ইমাম আহমাদ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 3/20)
[16]আবু মুহাম্মদ ইবনু ক্বুদ্দামাহ, আলমুগ্বনী (তাঃ আততুর্কী এবং আলহুলুউ, 9/404)
[17]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি
(মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ,পৃষ্ঠা নং 280)
[18]ইবনু আবিউমার, আশশারহুল কাবির (হিজর, তাঃ আততুর্কী ও আলহুলুউ, 2/385)
[19]ইবনু আবিউমার, আশশারহুল কাবির (হিজর, তাঃ আততুর্কী ও আলহুলুউ, 20/126)
[20]ইবনু আবিউমার, আশশারহুল কাবির (হিজর, তাঃ আততুর্কী ও আলহুলুউ, 4/158)
[21]ইবনুননাজ্জার আলফুতুহী, মায়ুনাতু উলিন্নাহা শারহুল মুন্তাহা (মাকতাবাতুল আসাদী, তাঃ আব্দুলমালিক দাহিশ, 1/422)
[22]ইবনুননাজ্জার আলফুতুহী, মায়ুনাতু উলিন্নাহা শারহুল মুন্তাহা (মাকতাবাতুল আসাদী, তাঃ আব্দুলমালিক দাহিশ, 9/45)
[23]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি
(মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ,পৃষ্ঠা নং 283)
[24]মানসুর আলবুহুতী, আররাওদ্বুল মুরবা বিশারহি যাদিল মুস্তাক্বনা (দারু রাকাইয, 3/86)
[25]মানসুর আলবুহুতী, কাশাফুল ক্বানা আন মাতানিল ইক্বনা (ওয়াযারাতুল আদাল, 11/253)
[26]মানসুর আলবুহুতী, আলমানহুশ শাফাইয়াত (দারু কুনুয ইশবিলিয়া, তাঃ আব্দুলমালিক আলমুত্বলাক্ব, 2/574)
[27]মানসুর আলবুহুতী, দাক্বাইক্বু উলিন্নাহা লিশারহিল মুন্তাহা (আলিমুল কুতুব,1/250-251)
[28]মানসুর আলবুহুতী, কাশাফুল ক্বানা আন মাতানিল ইক্বনা (ওয়াযারাতুল আদাল, 3/110)
[29]শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী (দারুল উবাইকান, 5/83)
[30]
মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আযযারকাশী নিজ গ্রন্থ "শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী" (দারুল উবাইকান, 3/581) তে অন্য একটি হাদিস সম্পর্কে বলেছেন যে,
لكنه ضعيف، ولهذا لم يعتمده الإمام
অর্থ : কিন্ত তা যইফ, এবং একারণেই ইমাম (আহমাদ) এর উপর নির্ভর করেন নি।
যেই আলেমরা যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ১ম মতটির অনুসারী সেই আলেমদের দৃষ্টিতে কোনো হাদিস কর্তৃক নিছকই যইফ হয়া হাদিসটির উপর নির্ভর না করার কারণ হতে পারেনা, কেননা যইফ হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ১ম মতটির অনুসারী আলেমদের মতে যইফ হাদিস সাধারণভাবে শর্তসাপেক্ষে নির্ভরযোগ্য। যেই আলেমরা যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ২য় বা ৩য় মতটির অনুসারী, শুধুমাত্র সেই আলেমদের দৃষ্টিতেই কোনো হাদিস কর্তৃক নিছকই যইফ হয়া হাদিসটির উপর নির্ভর না করার যথাযথ ও যথেষ্ট কারণ।
আযযারকাশী বলেছেন যে ইমাম আহমাদ কর্তৃক একটি হাদিসের উপর নির্ভর না করার কারণ হচ্ছে এই যে হাদিসটি যইফ। অর্থাৎ আযযারকাশী বিশ্বাস করতেন যে যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ এর মূলনীতি হচ্ছে ২য় বা ৩য় মতটি। অপরদিকে আযযারকাশী ফিক্বহের মূলনীতির ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ এর ফিক্বহী মূলনীতিসমূহের অনুসারী ছিলেন। সুতরাং যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে আযযারকাশী ২য় বা ৩য় মতটির অনুসারী ছিলেন।
[31]মুস্তফা আররুহাইবানী, মাত্বালিবু উলিন্নাহা ফি শারহি গায়াতিল মুন্তাহা (আলমাকতাবুল ইসলামি, 5/53)
[32]মুস্তফা আররুহাইবানী, মাত্বালিবু উলিন্নাহা ফি শারহি গায়াতিল মুন্তাহা (আলমাকতাবুল ইসলামি,1/580)
[33]উসমান ইবনু জামিঈ, আলফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত ফি শারহি আখসারিল মুখতাসারাত (মুয়াসসাতুর রিসালাহ, 3/281)
[34]উসমান ইবনু জামিঈ আলহাম্বলী তাঁর "আলফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত ফি শারহি আখসারিল মুখতাসারাত"(মুয়াসসাতুর রিসালাহ, 4/1194) গ্রন্থে একটি মাসয়ালা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একটি হাদিসকে নিছকই যইফ হয়ার কারণে অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন। এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে উসমান ইবনু জামিঈ যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ২য় বা ৩য় মতটির অনুসারী। যেসব আলেমরা যইফ হাদিস এর নির্ভরযোগ্যতা প্রসঙ্গে ১ম মতটির অনুসারী, তারা কোনো হাদিসকে নিছকই যইফ হয়ার কারণে অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করতে পারেন না।
[35]আবুবকর ইবনুল আরাবী, আরিযাতুল আহওয়াযী (দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, 5/24)
[36]শামসুদ্দিন আযযাহাবী, সিইরু আ'লামিন নুবালা (মুয়াসসাতুর রিসালাহ, 20/199 এবং 201)
[37]আবুলবাক্বা আইয়ুব বিন মুসা আলকাফওই,আলকিলিয়াত মুজাম ফিল মুস্তালাহাত ওয়াল ফুরুক্বিল লুগ্বুইয়াহ (মুয়াসসাতুর রিসালাহ, তাঃ আদনান দারওয়েশ এবং মুহাম্মাদ আলমাসরী, পৃষ্ঠা নং 125-126)
وَالْأَصْل فِي كلمة (إِن) الْخُلُو عَن الْجَزْم بِوُقُوع الشَّرْط أَو لَا وُقُوعه أَيْضا، فانه يسْتَعْمل فِيمَا يتَرَجَّح، أَي يتَرَدَّد بَين أَن يكون وَبَين أَن لَا يكون.وَالْأَصْل فِي فرض المحالات كلمة (لَو) دون (إِن) لِأَنَّهَا لما لَا جزم بِوُقُوعِهِ وَلَا وُقُوعه، والمحال مَقْطُوع بِلَا وُقُوعه
[38]ফাদ্বিল আসসামাররায়িই, মায়ানিয়ুন্নাহু (দারুল ফিকার, 4/69-71,89- 94)
[39]বাদরুদ্দিন আযযারকাশী,আননুকতু আলা মুক্বাদ্দামাতি ইবনিস সালাহ (আদ্বওয়াউস সালাফ, 1/450)
[40]আব্দুল কারিম আলখাদ্বির, আলহাদিসুয যইফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজি বিহি (মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, পৃষ্ঠা নং 249)