Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

আবু-বকর আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা।

বিষয় : আবু-বকর আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা।
লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী  

0. সূচিপত্র :-  

1. ভূমিকা।  
2. কিছু পরিগ্রহ। 
3. সিদ্ধান্ত। 
4. মূল ভিত্তি। 
5. করণীয়। 
6. আর-রাযীর অমুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান দলিলগুলো সম্পর্কে আলোচনা। 
7. আর-রাযীর মুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান দলিলগুলোকে উল্লেখকরণ। 
8. উপসংহার।
9. টীকাসমূহ।  


1. ভূমিকা :-  

প্রসিদ্ধ চিকিৎসক আবু-বকর মুহাম্মাদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে মানুষদের মাঝে মতভেদ এবং বিতর্ক বিদ্যমান। 

এই লেখাটিতে, আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী ছিল সেই প্রসঙ্গে আমি নিজে যেই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছি সেই সিদ্ধান্তটিকে উল্লেখ করাপূর্বক সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ। 

2. কিছু পরিগ্রহ :-  

মূল আলোচনা আরম্ভ করার পূর্বে, নিম্নে কিছু পরিগ্রহ উল্লেখ করা হল, নিম্নোক্ত পরিগ্রহগুলো অনুযায়ী মূল আলোচনা পরিচালিত হবে। 

প্রথম পরিগ্রহ : "আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক ধারার ইতিহাসবিদদের বক্তব্যগুলো অবিবেচ্য অধর্তব্য এবং অনির্ভরযোগ্য।"  

দ্বিতীয় পরিগ্রহ : "আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অমুসলিম লেখকদের বক্তব্য এবং অজ্ঞাত লেখকদের বক্তব্য অনির্ভরযোগ্য, অধর্তব্য এবং অবিবেচ্য।"  

তৃতীয় পরিগ্রহ : "আর-রাযী কর্তৃক রচিত গ্রন্থগুলোতে আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস এর সহিত সম্পর্কিত যেসব বিষয় প্রকাশিত হয়েছে, সেসব বিষয় আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য, বিবেচ্য এবং ধর্তব্য। "  

চতুর্থ পরিগ্রহ : "মধ্যযুগীয় মুসলিম ইতিহাসবিদরা এবং মধ্যযুগীয় ধারার মুসলিম ইতিহাসবিদরা  আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস এর সহিত সম্পর্কিত যেই তথ্যগুলো বর্ণনা করেছেন, সেই তথ্যগুলো আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য, বিবেচ্য এবং ধর্তব্য।"  

পঞ্চম পরিগ্রহ : "আধুনিক ধারার ইতিহাসবিদরা তাদের বক্তব্যগুলোর পক্ষে যেসব মূল উৎস উল্লেখ করেছেন সেসব মূল উৎস বিবেচ্য এবং ধর্তব্য। "  

ষষ্ঠ পরিগ্রহ : " উপর্যুক্ত তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পরিগ্রহত্রয়ে বর্ণিত উৎসগুলো ব্যতীত বাকি সকল উৎস এক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য, অবিবেচ্য এবং অধর্তব্য।"  

3. সিদ্ধান্ত :-  

আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী ছিল সেই প্রসঙ্গে আমি নিজে যেই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছি সেই সিদ্ধান্তটি নিম্নরূপ,  

"আর-রাযী তাঁর জীবনের একটা পর্যায়ে এসে ইসলামের সহিত সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কুফুরী মতবাদ গ্রহণ করেছিলেন, অতঃপর তিনি উক্ত মতবাদগুলোকে ত্যাগ করে পুনরায় একজন মুসলিম হয়ে যান, এবং মুসলিম হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেন। "  

দ্রষ্টব্য : এই লেখাটিতে, উপর্যুক্ত আমার এই সিদ্ধান্তটিকে উদ্দেশ্য করার জন্য বা বুঝানোর জন্য আমি "আমার সিদ্ধান্ত" কথাটি ব্যবহার করব। 

4. মূল ভিত্তি :-  

নিম্নোক্ত পাঁচটি বিষয় একত্রে মিলে আমার সিদ্ধান্তটির মূল ভিত্তি গঠন করে এবং প্রমাণ করে যে, আমার সিদ্ধান্তটি সঠিক। 

এক. প্রথম বিষয় :  

আল-কাদ্বী আবুল-ক্বাসিম সঈদ ইবনু সঈদ আল-আন্দালুসী তাঁর "طبقات الأمم" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আর-রাযী কর্তৃক রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ হতে বুঝা যায় যে, আর-রাযী কিছু কুফুরী মতবাদকে (যেমন : নবুওত অস্বীকার, শির্ক) পছন্দ করেছিলেন। _[1] 

দুই. দ্বিতীয় বিষয় :  

উপর্যুক্ত প্রথম বিষয়টি উল্লেখ করার পর, আল-কাদ্বী আবুল-ক্বাসিম সঈদ ইবনু সঈদ আল-আন্দালুসী তাঁর "طبقات الأمم" গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেছেন যে, আর-রাযী দার্শনিকদের মতবাদগুলোর মধ্য হতে সমস্যাবিশিষ্টগুলোকে প্রত্যাখ্যান এবং সমস্যামুক্তগুলোকে গ্রহণ করেছিলেন। _[1]  

তিন. তৃতীয় বিষয় :  

সঈদ এর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন মুসলিম ইতিহাসবিদরাও উপর্যুক্ত দ্বিতীয় বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন, যেমন : ইবনু-খাল্লিকান, খলিল আস-সিফদী, সিদ্দিক্ব হাসান খান _[2]  

চার. চতুর্থ বিষয় : 

সঈদ তাঁর طبقات الأمم গ্রন্থে উপর্যুক্ত প্রথম বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন। 

উপর্যুক্ত প্রথম বিষয়টিকে উল্লেখ করার পর সঈদ লিখেছেন যে,_[1]  

ولو أن الرازي وفقه الله تعالی للرشد  

অর্থ : যদিও আল্লাহ তায়ালা আর-রাযীকে সত্যের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। 

অতঃপর, সঈদ উপর্যুক্ত দ্বিতীয় বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন।  

পাঁচ. পঞ্চম বিষয় :  

ইবনু-খাল্লিকান তাঁর وفيات الأعيان গ্রন্থে আররাযীর জন্য "رحمه الله تعالى" বলে রহমতের দোয়া করেছেন। [3]  

দ্রষ্টব্য : এই লেখাটিতে, উপর্যুক্ত পাঁচটি বিষয়কে একত্রে একসাথে উদ্দেশ্য করার জন্য আমি "মূল ভিত্তি" কথাটি ব্যবহার করব। 

5. করণীয় :-  

আমি যদি দেখাতে পারি যে, এমন কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল এর অস্তিত্ব নেই যা আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক, তাহলে এর দ্বারা প্রমাণিত হবে যে, আমার সিদ্ধান্তটি সঠিক। 

সুতরাং, এবার আমি এটা দেখানোর চেষ্টা করব যে, এমন কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল এর অস্তিত্ব নেই যা আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক।

6. আর-রাযীর অমুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান দলিলগুলো সম্পর্কে আলোচনা :-  

এক. প্রথম দলিল প্রসঙ্গে :  

আররাযী فلسفة (ফালসাফাহ) সম্পর্কে পড়াশোনা ও লেখালেখি করেছেন, তিনি একজন ফাইলাসূফ (فيلسوف) ছিলেন। এই বিষয়টির উপর ভিত্তি করে দাবি করা হয়েছে বা হতে পারে যে আররাযী একজন অমুসলিম ছিলেন। 

ফালসাফাহ এর কিছু বিষয় কুফর, কিছু বিষয় বিদআহ, কিছু বিষয় পথভ্রষ্টতা এবং কিছু বিষয় মুবাহ। ফালসাফাহ এর সবকিছুই কুফর নয়।[4]  

সুতরাং, কোনো একজন মুসলিম কর্তৃক ফালসাফাহ চর্চা করা এবং ফাইলাসূফ হওয়া এর অর্থ এইটা হওয়া আবশ্যক না যে উক্ত মুসলিম ব্যক্তিটি কাফির হয়ে গিয়েছেন।  

বরং, একজন ফালসাফাহ চর্চাকারী ফাইলাসূফ কাফির হবেন যদি এবং কেবল যদি তিনি ফালসাফাহ এর কুফরসমূহ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। 

অতএব, কোনো মুসলিম কর্তৃক নিছক ফালসাফাহ সম্পর্কে পড়াশোনা এবং লেখালেখি করার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়না যে উক্ত মুসলিম ব্যক্তিটি কাফের হয়ে গিয়েছেন। 

দুই. দ্বিতীয় দলিল প্রসঙ্গে :  

ইবনুন-নাদিম তাঁর الفهرست গ্রন্থে আর-রাযী কর্তৃক রচিত গ্রন্থসমূহের নামগুলোর একটি তালিকা প্রদান করেছেন, উক্ত তালিকাটিতে তিনি كتاب في يرد به إظهار ما يدعي من عيوب الأنبياء নামক একটি গ্রন্থকে উল্লেখ করেছেন [5]। দাবি করা হয়েছে যে, আর-রাযী কর্তৃক রচিত এই গ্রন্থটি নাকি ইসলামবিরোধী।  

এক্ষেত্রে ইবনুন-নাদিম একা না, বরং ইবনুন-নাদিমের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু ইতিহাসবিদরাও উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। 

কিন্ত উক্ত গ্রন্থটির জন্য ইবনুন-নাদিম কর্তৃক উল্লেখকৃত এই নামটি খুবই অস্পষ্ট। 

তাজুদ্দিন ইবনুস-সাঈ তাঁর "الدر الثمين" গ্রন্থে উক্ত গ্রন্থটির নামটিকে সর্বাধিক স্পষ্টতার সহিত উল্লেখ করেছেন।_[6]  

উক্ত গ্রন্থটির জন্য ইবনুস-সাঈ কর্তৃক উল্লেখকৃত নামটি নিম্নরূপ, [6]  

"وكتاب الردّ على منصور بن طلحة فيما يدّعي من عيوب الأنبياء عليهم السلام" 

ইবনুস-সাঈ কর্তৃক উল্লেখকৃত এই অধিক স্পষ্ট নামটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে উক্ত গ্রন্থটি নবীদের বিরোধী নয় বরং নবীদের পক্ষের!   

তিন. তৃতীয় দলিল প্রসঙ্গে :  

মুত্বহির বিন ত্বহির, নিযামুল-মুলক আত-তুসী, আলী বিন রিদ্বওয়ান এবং এক বা একাধিকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি مخاريق الأنبياء নামক একটি ইসলামবিরোধী গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।_[7]  

মুত্বহির বিন ত্বহির একজন অজ্ঞাত লেখক। [8]  

আর-রাযীর ক্ষেত্রে, আলী বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী অনির্ভরযোগ্য। [9]  

কোন কোন লেখক কোন কোন বই লিখেছেন বা লিখেন নি, এই ধরনের বিষয় নির্ণয় করা নিযামুল-মুলক এর দক্ষতার ক্ষেত্র ছিলনা, এই ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে তিনি অনির্ভরযোগ্য।  

অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অনির্ভরযোগ্য, অধর্তব্য এবং অবিবেচ্য। 

পক্ষান্তরে, এসবের বিপরীতে, ইবনু-আবি-উসাইবাআহ مخاريق الأنبياء নামক গ্রন্থটির সহিত আর-রাযী এর সম্পৃক্ততা মিথ্যা হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। [10]  

সুতরাং, مخاريق الأنبياء নামক গ্রন্থটির সহিত আর-রাযী এর সম্পৃক্ততা অপ্রমাণিত। 

কোনো একজন মুসলিম কর্তৃক মুরতাদ হওয়াপূর্বক ইসলামের বিরোধিতা করার মানে এটা হওয়া আবশ্যক না যে, উক্ত মুরতাদ ব্যক্তিটি আর কখনোই ইসলামে ফিরে আসেনি। 

অতএব, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, আর-রাযী এর সহিত مخاريق الأنبياء নামক গ্রন্থটির সম্পৃক্ততা সত্য এবং প্রমাণিত, তাহলেও এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হবে না যে, ইসলাম ত্যাগ করার পর আর-রাযী আর কখনোই ইসলামে ফিরে আসেন নি।  

অপরদিকে, আমার সিদ্ধান্তটি অনুযায়ী, আর-রাযী তার জীবনের একটা পর্যায়ে এসে ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন, অতঃপর তিনি ইসলামে ফিরে এসেছিলেন। 

সুতরাং, আর-রাযী এর সহিত مخاريق الأنبياء নামক গ্রন্থটির সম্পৃক্ততা সত্য এবং প্রমাণিত হলেও এই বিষয়টি আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক হবে না। 

চার. চতুর্থ দলিল প্রসঙ্গে :  

মুত্বহির বিন তাহির তাঁর البدء و التاريخ গ্রন্থে আর-রাযীকে একজন নবুওতবিরোধী পথভ্রষ্ট অমুসলিম ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। _[11]  

মুত্বহির বিন তাহির একজন অজ্ঞাত লেখক। [8]  

সুতরাং, আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মুত্বহির এর বক্তব্য অনির্ভরযোগ্য, অধর্তব্য এবং অবিবেচ্য।  

পাঁচ.পঞ্চম দলিল প্রসঙ্গে : 

আলী বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী এবং এক বা একাধিকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি দাবি করেছেন যে, আর-রাযী একজন কাফির। [10]  

আর-রাযীর ক্ষেত্রে, আলী বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী অনির্ভরযোগ্য। [9]  

আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অবিবেচ্য অধর্তব্য এবং অনির্ভরযোগ্য। 

ছয়. ষষ্ঠ দলিল প্রসঙ্গে :  

আবু-হাতিম আহমাদ বিন হামদান বিন আহমাদ আর-রাযী আল-কাশশী আও-ওয়ারসাহী أعلام النبوة (Signs of Prophecy) নামক একটি গ্রন্থ লিখেছেন, এই গ্রন্থটির অপর নাম হচ্ছে دلائل النبوة ((Proofs of Prophecy)। এই গ্রন্থটিতে আবু-হাতিম এবং "জনৈক নাস্তিক" এর মাঝে সংঘটিত হওয়া কিছু বিতর্কের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে।আবু-হাতিম কর্তৃক প্রদানকৃত এসব বিবরণ অনুযায়ী উক্ত জনৈক নাস্তিক ব্যক্তিটি একজন ইসলামবিরোধী অমুসলিম। দাবি করা হয়েছে যে, আবু-হাতিম কর্তৃক উল্লেখকৃত "জনৈক নাস্তিক" ব্যক্তিটি হচ্ছেন আবু-বকর মুহাম্মাদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী। 

আবু-হাতিম কর্তৃক রচিত أعلام النبوة নামক গ্রন্থটির মূল পাণ্ডুলিপিতে কোথাও এটা লেখা নেই যে "জনৈক নাস্তিক" কথাটি দ্বারা আর-রাযীকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কিন্ত তা সত্ত্বেও, কোনো ধরনের প্রমাণ বা ভিত্তি ছাড়াই, কিছু মানুষ কর্তৃক ধরে নেওয়া হয়েছে যে, উক্ত জনৈক নাস্তিক আর-রাযীই! আবু-হাতিম এর أعلام النبوة নামক গ্রন্থটিতে "জনৈক নাস্তিক" বলতে আর-রাযী উদ্দেশ্য হওয়ার তত্ত্বটি হচ্ছে একটি প্রমাণহীন অন্ধবিশ্বাস । _[12]  

তাছাড়া, আবু-হাতিম একজন ইসমাইলী শিয়া ছিলেন [13]। 

ইসমাইলী শিয়ারা অমুসলিম।  

সুতরাং, আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আবু-হাতিম অনির্ভরযোগ্য, অবিবেচ্য এবং অধর্তব্য। 

সাত. সপ্তম দলিল প্রসঙ্গে :  

হামিদুদ্দিন আহমাদ আল-কারমানী, আর-রাযীর বিরুদ্ধে الأقوال الذهبية নামক একটি বই লিখেছেন, উক্ত বইটিতে তিনি আর-রাযীকে একজন ইসলামবিরোধী অমুসলিম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [14]  

হামিদুদ্দিন আহমাদ আল-কারমানী একজন ইসমাইলী শিয়া ছিলেন। [15]  

ইসমাইলী শিয়ারা অমুসলিম। 

সুতরাং, আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হামিদুদ্দিন অনির্ভরযোগ্য, অবিবেচ্য এবং অধর্তব্য। 

আট. অষ্টম দলিল প্রসঙ্গে :  

আবুল-ফারাজ ইবনুল-আবরী তাঁর تاريخ مختصر الدول গ্রন্থে দাবি করেছেন যে : আর-রাযী একটি কুফরবিশিষ্ট ইসলামবিরোধী দর্শনশাস্ত্রভিত্তিক ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। [16]  

আবুল-ফারাজ ইবনুল-আবরী একজন অমুসলিম ছিলেন। [17]  

সুতরাং, আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইবনুল-আবরী অনির্ভরযোগ্য, অবিবেচ্য এবং অধর্তব্য। 

নয়. নবম দলিল প্রসঙ্গে :  

আর-রাযী সম্পর্কে বর্ণিত হওয়া একটি সমালোচনা নিম্নরূপ, 

"আর-রাযী ঈশ্বর সংক্রান্ত বিজ্ঞান এর গভীরে প্রবেশ করেন নি এবং এর উদ্দেশ্য বুঝেন নি, আর এমনটা হওয়ার ফলস্বরূপ আর-রাযীর চিন্তাভাবনা বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। এবং আর-রাযী বহু নির্বোধ ও দূর্বল দৃষ্টিভঙ্গির অন্ধ অনুসরণ করেন ও বহু দূষিত ও নিকৃষ্ট মতবাদকে গ্রহণ করেন।"  

জামালুদ্দিন আল-ক্বিফতী, ইবনু-আবি-উসাইবাআহ, সঈদ ইবনু সঈদ, ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ আল-আমরী, সিদ্দিক হাসান খান এবং অন্যান্যরা, আর-রাযী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে উপর্যুক্ত এই সমালোচনাটিকে উল্লেখ করেছেন। _[18]  

আর-রাযী কুফরি মতবাদগুলোকে ত্যাগ করে ইসলামে ফিরে এসেছিলেন নাকি না? এ প্রসঙ্গে উপর্যুক্ত এই সমালোচনাটিতে কিছুই বলা হয়নি।  

সুতরাং, উপর্যুক্ত এই সমালোচনাটি আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না। 

দশ. দশম দলিল প্রসঙ্গে :  

ইবনুল-কাইইম তাঁর مدارج السالكين নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, একজন অথবা একাধিকজন জ্ঞানী লোক আর-রাযীকে একজন কাফির, অমুসলিম ও জাহান্নামী সাব্যস্ত করেছেন। _[19]  

উক্ত জ্ঞানী লোকগুলোর মধ্যে কারা কারা অন্তর্ভুক্ত, তা ইবনুল-কাইইম স্পষ্ট করেন নি, অর্থাৎ উক্ত জ্ঞানী লোকগুলো এক্ষেত্রে অজ্ঞাত। 

আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস কী তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অবিবেচ্য অধর্তব্য এবং অনির্ভরযোগ্য। 

এগারো. একাদশ দলিল প্রসঙ্গে :  

ইবনুল-কাইইম তাঁর مدارج السالكين নামক গ্রন্থে আর-রাযীকে যিন্দিক্বদের অন্তর্ভুক্ত একজন হিসেবে গণ্য করেছেন। _[19]  

আমার সিদ্ধান্তটি অনুযায়ী, আর-রাযী তাঁর জীবনের একটা পর্যায়ে একজন অমুসলিম ছিলেন। 

সুতরাং, ইবনুল-কাইইম কর্তৃক আর-রাযীকে যিন্দিক্বদের অন্তর্ভুক্ত একজন হিসেবে গণ্যকরণ ভুল কিছু না । 

আর-রাযী কুফরি মতবাদগুলোকে ত্যাগ করে ইসলামে ফিরে এসেছিলেন নাকি না? এ প্রসঙ্গে ইবনুল-কাইইম নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলেন নি। 

সুতরাং, ইবনুল-কাইইম কর্তৃক আর-রাযীকে যিন্দিক্বদের অন্তর্ভুক্ত একজন হিসেবে গণ্যকরণ আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না। 

বারো. দ্বাদশ দলিল প্রসঙ্গে :  

আর-রাযী তাঁর মৃত্যুর খুবই নিকটবর্তী কোনো একটা সময়ে নিম্নোক্ত বাইতদ্বয় আবৃত্তি করেছিলেন, 

لعمري ما أدري وقد آذَن البِلَى ... بعاجلِ ترحالِي إلى أين ترحالي 

وأين محلُّ الرُّوح بعد خُروجِه ... مِنَ الجسد المنحلِّ والهيكل البالي 

…[20]  

দাবি করা হয়েছে যে, আর-রাযী এর উক্ত বাইতদ্বয় নাকি তাঁর অমুসলিম হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। 

আর-রাযী এর উক্ত বাইতদ্বয়ের মর্ম হচ্ছে অনেকটা এরকম,  

"আর-রাযী জানেন না যে তিনি জান্নাতে যাবেন নাকি জাহান্নামে, তবে তিনি তা জানতে চান, এবং তিনি জাহান্নামের আযাবের প্রতি ভীত হয়ে আছেন।"_[21]  

সুতরাং, আর-রাযীর উক্ত বাইতদ্বয় আর-রাযীর অমুসলিম হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে না।  

তেরো. ত্রয়োদশ দলিল প্রসঙ্গে :  

আর-রাযীর অমুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান একটি প্রমাণ হচ্ছে আবুর-রাইহান আল-বিরুনী
কর্তৃক রচিত একটি رِسَالَة (Epistle), যা رسالة البيروني في فهرست كتب محمد بن زكريا الرازي (Risalat Al-Biruni Fi Fihrisit e Kutub Muhammad Bin Zakaria Al-Razi) নামে পরিচিত।_[22]  

আল-বিরুনী তাঁর এই রিসালাহটিতে আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে বিশাল ব্যাপ্তিবিশিষ্ট একটি সুবিস্তারিত সমালোচনা প্রদান করেছেন যা আর-রাযীর মুসলিম হওয়াকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং আর-রাযীকে একজন কাফির সাব্যস্ত করে। _[23]  

আল-বিরুনী তাঁর এই রিসালাহটিতে في النبوات এবং في حيل المتنبيين নামক দুইটি ইসলামবিরোধী কুফুরী (Heretical) গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। _[24]  

আল-বিরুনীর উক্ত রিসালাহটিতে في النبوات নামক গ্রন্থটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে : "It was claimed to be against religions." [24]  

আল-বিরুনীর উক্ত রিসালাহটিতে في حيل المتنبيين নামক গ্রন্থটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে : "It was claimed as attacking the necessity of the prophets." [24]  

আর-রাযীবিদ্বেষী একদল খারাপ লোকদের অস্তিত্ব ছিল, যাদেরকে ইবনু-আবি-উসাইবাআহ  "الأشرار المعادون للرازي" বলে উল্লেখ করেছেন।_[10]  

আর-রাযীকে অপমানিত করার উদ্দেশ্যে আর-রাযী সম্পর্কে মিথ্যা কথাবার্তা বানিয়ে প্রচার করার মত মন-মানসিকতাও উপর্যুক্ত আর-রাযীবিদ্বেষীদের একাংশের মধ্যে ছিল। ইবনু-আবি- উসাইবাআহ তাঁর عيون الأنباء গ্রন্থে এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছেন।_[10]  

আল-বিরুনীর এই রিসালাহটির জন্য শুধুমাত্র একটি পাণ্ডুলিপি (مخطوطة) বিদ্যমান, উক্ত একমাত্র পাণ্ডুলিপিটি আল-বিরুনীর মৃত্যুর প্রায় 250 বছর পর 692 হিজরিতে লেখা হয়েছে এবং বর্তমানে তা University Of Leiden এর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। _[25][26][27][28]  

সুতরাং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে উক্ত পাণ্ডুলিপিটির লেখক আর-রাযীবিদ্বেষীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তিনি আর-রাযীকে অপমানিত করার উদ্দেশ্যে আল-বিরুনীর রিসালাহটির একটি বিকৃত পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন। 

সুতরাং, উক্ত পাণ্ডুলিপিটির নির্ভরযোগ্যতা সন্দেহপূর্ণ। 

কিন্ত তবুও ধরে নিচ্ছি যে উক্ত পাণ্ডুলিপিটির নির্ভরযোগ্যতা সন্দেহমুক্ত এবং আল-বিরুনীই হচ্ছেন রিসালাহটিতে বিদ্যমান আর-রাযী সংক্রান্ত কথাগুলোর কথক। অতঃপর ধরে নিচ্ছি যে আল-বিরুনীর রিসালাহটিতে আর-রাযী সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছে তার সবই সত্য। 

ইসলাম ত্যাগ করার পর, আর-রাযী ইসলামে ফিরে এসেছিলেন নাকি না? এ প্রসঙ্গে আল-বিরুনীর উক্ত রিসালাহটিতে কিছুই বলা হয়নি। 

সুতরাং, আল-বিরুনীর উক্ত রিসালাহটিতে বিদ্যমান আর-রাযী সংক্রান্ত কথাগুলো আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না। 

চৌদ্দ. চতুর্দশ দলিল প্রসঙ্গে :  

ইবনু তাইমিয়াহ তাঁর একাধিক বিভিন্ন গ্রন্থে একাধিকবার আর-রাযীকে একজন অমুসলিম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [33]  

ইসলাম ত্যাগ করার পর, আর-রাযী ইসলামে ফিরে এসেছিলেন নাকি না? এ প্রসঙ্গে ইবনু তাইমিয়াহ কিছুই বলেন নি।  

সুতরাং, ইবনু তাইমিয়াহ কর্তৃক তাঁর একাধিক বিভিন্ন গ্রন্থে একাধিকবার আর-রাযীকে একজন অমুসলিম হিসেবে উল্লেখকরণ আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না।  

পনেরো. পঞ্চদশ দলিল প্রসঙ্গে : 

আর-রাযী তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন কুফুরী মতবাদের পক্ষে বলেছেন।  

আর-রাযী কর্তৃক তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন কুফুরী মতবাদের পক্ষে বলার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, আর-রাযী আর কখনোই ইসলামে ফিরে আসেন নি। 

সুতরাং, আর-রাযী কর্তৃক তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন কুফুরী মতবাদের পক্ষে বলার বিষয়টি আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না। 

ষোলো. ষোড়শ দলিল প্রসঙ্গে :  

অমুক মধ্যযুগীয় বা মধ্যযুগীয় ধারার মুসলিম ইতিহাসবিদ বলেছেন যে, আর-রাযী একজন অমুসলিম। 

আর-রাযী কুফুরী মতবাদগুলোকে ত্যাগ করে ইসলামে ফিরে এসেছিলেন নাকি না? এ প্রসঙ্গে অমুক কিছুই বলেন নি। 

সুতরাং, অমুক কর্তৃক আর-রাযীকে অমুসলিম সাব্যস্তকরণ আমার সিদ্ধান্তটির সহিত সাংঘর্ষিক না।

7. আর-রাযীর মুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান দলিলগুলোকে উল্লেখকরণ :-  

আর-রাযীর মুসলিম হওয়াকে সমর্থনকারী কিছু বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হল।  

এক. প্রথম দলিল :  

আবু-দাউদ ইবনু-জুলজুল আল-আন্দালুসী লিখেছেন যে, [29]  

محمد بن زكريا الرازي مسلم النحلة  

অর্থ : মুহাম্মাদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম।  

দুই. দ্বিতীয় দলিল :  

আর-রাযীর জন্য ইবনু-খাল্লিকান رحمه الله تعالی বলে রহমতের দোয়া করেছেন। [3]  

তিন. তৃতীয় দলিল : 

একাধিক মুসলিম ইতিহাসবিদ আর-রাযীকে طبيب المسلمين বলে উল্লেখ করেছেন। [30]  

চার. চতুর্থ দলিল :  

সঈদ আল-আন্দালুসী লিখেছেন যে,[1]  

ولو أن الرازي وفقه الله تعالی للرشد  

অর্থ : যদিও আল্লাহ তায়ালা আর-রাযীকে সত্যের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। 

পাঁচ. পঞ্চম দলিল :  

মানসুর বিন ত্বলহাহ নামক একজন ব্যক্তি দাবি করেছিল যে, নবীদের বহু ক্রুটি আছে। আর-রাযী উক্ত দাবিটির বিরুদ্ধে এবং নবীদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন এবং উক্ত দাবিটির খণ্ডনস্বরূপ মানসুর বিন ত্বলহাহ এর বিরুদ্ধে একটি বই লিখেছিলেন। [6]  

ছয়.  ষষ্ঠ দলিল :  

আর-রাযী, নবুওত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এবং নবুওত এর পক্ষে في وجوب دعوة النبي علی من نكر بالنبوات নামক একটি বই লিখেছিলেন। [31]  

সাত. সপ্তম দলিল :  

আর-রাযী, দার্শনিকদের মতবাদগুলোর মধ্য হতে সমস্যাবিশিষ্টগুলোকে প্রত্যাখ্যান এবং সমস্যামুক্তগুলোকে গ্রহণ করেছিলেন। [1][2]  

আট. অষ্টম দলিল :  

আল-বোরহান ইবনু জামাআহ এর একটি বক্তব্য হতে বুঝা যায় যে, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আর-রাযী একজন মুসলিম ছিলেন। [32]  

নয়.  নবম দলিল :  

শামসুদ্দিন আবুল-খাইর আস-সাখাওই এর একটি বক্তব্য হতে বুঝা যায় যে, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আর-রাযী একজন মুসলিম ছিলেন। [32]  

দশ. দশম দলিল :  

আর-রাযী, দোয়া করা সম্পর্কে في وجوب الدعاء من طريق الحزم নামক একটি বই লিখেছিলেন। [31]  

8. উপসংহার :-  

দেখা যাচ্ছে যে, আর-রাযী এর অমুসলিম হওয়ার পক্ষে বিদ্যমান নির্ভরযোগ্য দলিলগুলোর সবগুলোই আমার সিদ্ধান্তটির সহিত অসাংঘর্ষিক। 

সুতরাং, আমার সিদ্ধান্তটি এক্ষেত্রে সঠিক।

9. টীকাসমূহ :-  

[1] 
طبقات الأمم لصاعد الأندلسي (المطبعة الكاثوليكية ، صفحة 33 و 122 و 101)  

[2] 
قال شمس الدين أبو العباس أحمد ابن خلكان البرمكي الإربلي في"وفيات الأعيان و أنباء أبناء الزمان"(دار صادر،5/158) في ترجمة أبي بكر الرازي : 

وأقبل على دراسة كتب الطب والفلسفة، فقرأها قراءة رجل متعقب على مؤلفيها، فبلغ من معرفة غوائرها الغاية، واعتقد الصحيح منها وعلل السقيم، وألف في الطب كتباً كثيرة 

و قال صلاح الدين خليل بن أيبك الصفدي في "الوافي بالوفيات"(دار إحياء التراث، 3/62) :  

وَأَقْبل على دراسة كتب الطِّبّ والفلسفة فقرأها قِرَاءَة معقب على مؤلفيها فَبلغ من مَعْرفَتهَا الْغَايَة واعتقد صحيحها وَعلل سقيمها وصنف فِي الطِّبّ كتبا كَثِيرَة 

قال صديق حسن خان القنوجي في "أبجد العلوم"(دار ابن حزم ، صفحة 632) : 

ثم أقبل على تعلم الفلسفة ودراسة كتب الطب فنال منها كثيرا وقرأها قراءة رجل متعقب على مؤلفيها فبلغ من معرفة غوائرها الغاية واعتقد الصحيح منها وعلل السقيم وكان إمام وقته في علم الطب 

[3] 
قال ابن خلكان في "وفيات الأعيان"(دار صادر ،5/159) في ترجمة أبي بكر محمد بن زكريا الرازي :  

...وتوفي سنة إحدى عشرة وثلثمائة، رحمه الله تعالى.... 

[4] 
قال أبو حامد الغزالي الطوسي في "إحياء علوم الدين"(دار المعرفة،1/22) : 

وأما الفلسفة فليست علماً برأسها بل هي أربعة أجزاء .أحدها الهندسة والحساب وهما مباحان كما سبق ولا يمنع عنهما إلا من يخاف عليه أن يتجاوز بهما إلى علوم مذمومة فإن أكثر الممارسين لهما قد خرجوا منهما إلى البدع فيصان الضعيف عنهما لا لعينهما كما يصان عصبى عن شاطىء النهر خيفة عليه من الوقوع في النهر وكما يصان حديث العهد بالإسلام عن مخالطة الكفار خوفاً عليه مع أن القوي لا يندب إلى مخالطتهم.
الثاني المنطق وهو بحث عن وجه الدليل وشروطه ووجه الحد وشروطه وهما داخلان في علم الكلام.
الثالث الإلهيات وهو بحث عن ذات الله سبحانه وتعالى وصفاته وهو داخل في الكلام أيضاً والفلاسفة لم ينفردوا فيها بنمط آخر من العلم بل انفردوا بمذاهب بعضها كفر وبعضها بدعة وكما أن الاعتزال ليس علماً برأسه بل أصحابه طائفة من المتكلمين وأهل البحث والنظر انفردوا بمذاهب باطلة فكذلك الفلاسفة.
والرابع الطبيعيات وبعضها مخالف للشرع والدين والحق فهو جهل وليس بعلم 

[5] 
الفهرست لابن النديم (دار المعرفة،صفحة 363) 

[6] 
الدر الثمين في أسماء المصنفين لابن الساعي (دار الغرب الإسلامي، صفحة 180) 

[7] 
انظر : البدء و التاريخ للمطهر بن طاهر المقدسي (أَرنست لرُو الصَحّاف،3/110) و سياست نامه لنظام الملك الطوسي (دار الثقافة،صفحة 257) و عيون الأنباء في طبقات الأطباء لابن أبي أصيبعة (دار مكتبة الحياة, صفحة 426) 

[8] 
قال خير الدين الزركلي في"الأعلام" (: دار العلم للملايين ، 7/253) :  

مطهر بن طاهر المقدسي: مؤرخ، نسبته إلى بيت المقدس. دل تحقيق المستشرق (كليمان هوار) على أنه مصنف كتاب (البدء والتاريخ - ط) ستة أجزاء، مع ترجمتها إلى الفرنسية، وله بقية ما زالت مخطوطة، وكان المعروف أنه من تأليف أبي زَيْد (أحمد بن سهل) البلخي، كما في كشف الظنون وخريدة العجائب، إلا أنّ البلخي توفي سنة ٣٢٢ وكتاب (البدء والتاريخ) صنف سنة ٣٥٥ هـ وقال هوار: كان مطهر في (بست) من بلاد (سجستان) . وزاد (بروكلمن) أنه توفي فيها. قلت: ولم أظفر بترجمة له  

[9] 
قال ابن أبي أصيبعة في "عيون الأنباء في طبقات الأطباء" (دار مكتبة الحياة، صفحة 563) : 

وحَدثني أَبُو عبد الله مُحَمَّد المالقي النَّاسِخ أَن ابْن رضوَان تغير عقله فِي آخر عمره....أَقُول وَكَانَ ابْن رضوَان كثير الرَّد على من كَانَ يعاصره من الْأَطِبَّاء وَغَيرهم وَكَذَلِكَ على كثير مِمَّن تقدمه وَكَانَت عِنْده سفاهة فِي بَحثه وتشنيع على من يُرِيد مناقشته وَأكْثر ذَلِك يُوجد عِنْدَمَا كَانَ يرد على حنين بن إِسْحَق وعَلى أبي الْفرج بن الطّيب وَكَذَلِكَ أَيْضا على أبي بكر مُحَمَّد بن زَكَرِيَّا الرَّازِيّ وَلم يكن لِابْنِ رضوَان فِي صناعَة الطِّبّ معلم ينْسب إِلَيْهِ وَله كتاب فِي ذَلِك يتَضَمَّن أَن تَحْصِيل الصِّنَاعَة من الْكتب أوفق من المعلمين 

[10] 
قال ابن أبي أصيبعة في "عيون الأنباء في طبقات الأطباء" (دار مكتبة الحياة، صفحة 426) : 

كتاب فِيمَا يرومه من إِظْهَار مَا يَدعِي من عُيُوب الْأَوْلِيَاء أَقُول وَهَذَا الْكتاب إِن كَانَ قد ألف وَالله أعلم فَرُبمَا أَن بعض الأشرار المعادين للرازي قد أَلفه وَنسبه إِلَيْهِ ليسيء من يرى ذَلِك الْكتاب أَو يسمع بِهِ الظَّن بالرازي وَإِلَّا فالرازي أجل من أَن يحاول هَذَا الْأَمر وَأَن يصنف فِي هَذَا الْمَعْنى وَحَتَّى إِن بعض من يذم الرَّازِيّ بل يكفره كعلي بن رضوَان الْمصْرِيّ وَغَيره يسمون ذَلِك الْكتاب كتاب الرَّازِيّ فِي مخاريق الْأَنْبِيَاء 

[11] 
البدء و التاريخ للمطهر بن طاهر المقدسي (أَرنست لرُو الصَحّاف،3/110) 

[12] 
فلسفة أبي بكر الرازي لعبد اللطيف العبد  

[13] 
لسان الميزان لابن حجر (دار البشائر الإسلامية، 1/448) 

[14] 
دراسة و تحقيق عيون الأنباء للدكتور عامر النجار (1/67) 

[15] 
الأعلام للزركلي (دار العلم للملايين ، 1/156) 

[16] 
تاريخ مختصر الدول لابن العبري (دار الشرق،1/46) 

[17] 
الأعلام للزركلي (دار العلم للملايين، 5/117) 

[18] 
إخبار العلماء بأخبار الحكماء لجمال الدين القفطي (دار الكتب العلمية،صفحة 206) و عيون الأنباء في طبقات الأطباء لابن أبي أصيبعة (دار مكتبة الحياة،صفحة 416) و مسالك الأبصار في ممالك الأمصار لابن فضل الله العمري (المجمع الثقافي،9/56) و أبجد العلوم لصديق حسن (دار ابن حزم، صفحة 632) 

[19] 
مدارج السالكين لابن القيم (دار عطاءات العلم و دار ابن حزم ، 4/191) 

[20] 
انظر : مسالك الأبصار لابن فضل الله (المجمع الثقافي،9/59) و مدارج السالكين لابن القيم (دار عطاءات العلم و دار ابن حزم ، 4/191) و الجواهر والدرر للسخاوي (دار ابن حزم،1/384) و الوافي بالوفيات للصفدي (دار إحياء التراث ،3/63) و نكث الهميان للصفدي (دار الكتب العلمية، صفحة 236) و عيون الأنباء لابن أبي أصيبعة (دار مكتبة الحياة،صفحة 421) و غيرهم . 

[21] 
قال شمس الدين أبو الخير السخاوي في كتابه "الجواهر و الدرر"(دار ابن حزم، 1/384) : 

والظاهر أنَّ مقصودَ ابن زكريا أن يعرف: هل هو مِنْ أهل الجنة أو من أهل النار، وبيتاه يدلَّان على خوفه مِنْ سوء الخاتمة أعاذنا اللَّه منها بفضله 

[22] 
 قلت : ترجم الدكتور نور دين ديوراسيه رسالة البيروني في فهرست كتب الرازي باللغة الإنجليزية وهذه الترجمة الإنجليزية موجودة في الإنترنيت .  

See : "Risalat Al-Biruni Fi Fihrist Kutub Al-Razi : A Comprehensive Bibliography Of The Works Of Abu-Bakr Al-Razi And Al-Biruni" By 'Dr. Nurdeen Deuraseh'. 
https://ejournal.um.edu.my/index.php/afkar/article/view/5872/3596 

[23] 
The criticism provided by Al-Biruni is quoted below :  

Were it not for my respect for you, I would not have done this, because such a work could bring upon me hatred from al-Razi’s opponents who might think that I belong to his sect and am among those who equalize between al-Razi’s true justifications and his inclinations to heretic tendencies and expressions in fanaticism, which exposed him to big sins. Religiously, he did not reduce the harshness (qasawah) by his neglect, avoidance, ignorance since he worked on disapproved things with evil desires and corrupt deeds. In addition, he was infl uenced by the books of Mani and his followers which deceived all religions including Islam.The proof of what I say can be found at the end of his book On Prophecies which the author made glorious and great. This work corrupted his thought, tongue and pen with which an intelligent man would have nothing to do and would not pay any attention since his effort will not secure anything good in this world save hatred.We have not ceased observing people who do not follow his ideas saying: “Indeed, Razi destroyed the wealth of the people, their bodies and religions”. This is true in the first extreme and many other extremes. Therefore, it is impossible to sensibly argue with him with moderation. 

Although I am free from following him concerning matters that corrupted property – despite my love of wealth and other things for the purpose of becoming rich, I cannot free myself from it – I am not saved from other aspects. This is because, I read his book on Divine Science (Metaphysics) in which he displays indications of Mani’s books particularly the book entitled the Book of Secrets”, such that the sign misled me as the white and yellow alloys in alchemy deceive others.My youth creates in me a desire to speak the truth but remains obscured in order to seek those secrets from my acquaintances in various cities and lands. I remained in the torments of desire for more than forty years until a letter from Hamadhan reached me while I was in Khawarizm which included the books which were in the collections of Fadl b. Sahlan, who knew that I loved them much. Together with this letter is the book which included Manichaean writings such as: Pragmateria, the book of Giants, the Treasure of Living, Certain Morning, the Foundation, Bible, the Shaburiqan and several epistles by Mani. Among them also was the book of secrets, which I searched for. I was overwhelmed with joy when I obtained it just like the joy of a thirsty person upon seeing mirages. It is sad that finally, this felling turned into sadness when I discovered that it was a fantasy 

I believe that God speaks the truth in his saying: “For any to whom Allah Giveth not light, there is no light.”Then, I summarized the purely nonsensical and deviating contents of the book, for the purpose of study, so that those people who are stricken by the harm that also befalls me will inspect them and rush to be healed from them as I have done.This was the condition of Abu Bakr al-Razi, and I do not believe that he was trying to deceive others, on the other hand he himself was deceived, just like what he believes concerning people whom God preserves from such ideas, and his share in that which he desire will not diminish; for all actions are in accordance with one’s intentions and on the day of judgment, one should be a sufficient account against himself. 

(See : the 22nd annotation.)  

[24] 
See : the 22nd annotation 

[25] 
Jan just Witkam, Inventory Of The Oriental Manuscripts Of The Library Of The University Of Leiden (Page 60-61, Or.133)   

[26] 
P. Voorhoeve, Handlist Of Arabic Manuscripts ( Page 83)  

[27] 
قال بول كرواس في مقدمة تحقيق رسالة البيروني في فهرست كتب  أبي بكر الرازي :  

"نشرنا هذه الرسالة على حسب المخطوط الوحيد المحفوظ في مكتبة ليدن" 

[28] 
" According to Mehdi Mohaghegh, the difficulties of editing the Arabic text 
were dominated by the fact that there was available only one unique copy 
which exists in Leiden (MSS.No.133). This manuscript has many errors, but 
a careful study of it will enable us to make the necessary corrections (see, 
M.Mohaghegh, Notes on Biruni’s Fihrist, in Biruni’s Commemorative Volume, 
ed.by Hakim Mohammad Said, (Pakistan: Hamdard National Foundation), 
1973, p. 231). "  

Note : This is a quote from the source mentioned in the 22nd annotation.  

[29] 
طبقات الأطباء و الحكماء لابن جلجل (مؤسسة الرسالة ،صفحة 77) 

[30] 
انظر : إخبار العلماء للقفطي (دار الكتب العلمية ، صفحة 206) و مسالك الأبصار لابن فضل الله (المجمع الثقافي، 5/55) و أبجد العلوم لصديق حسن خان (دار ابن حزم، صفحة 632) وغيرهم. 

[31] 
انظر : رسالة البيروني في فهرست كتب أبي بكر محمد بن زكريا الرازي 

[32] 
الجواهر والدرر للسخاوي (دار ابن حزم ،1/384) 

[33] 
انظر : منهاج السنة النبوية (جامعة الإمام محمد بن سعود ،2/572) و الانتصار لأهل الأثر (دار عطاءات العلم و دار ابن حزم ،صفحة 168) و درء تعارض العقل و النقل (جامعة الإمام محمد بن سعود ،9/346) و غيرهم