Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

নক্ষত্রসমুহের নিকটবর্তী আসমানে থাকা প্রসঙ্গে

অভিযোগ : "কোরান অনুযায়ী নিকটবর্তি আসমানে নক্ষত্র আছে, অর্থাৎ বায়ুমন্ডলে নক্ষত্র আছে। যা কিনা চরম অবৈজ্ঞানিক " অথবা "কোরান অনুযায়ী নক্ষত্র শুধুমাত্র নিকটবর্তি আসমানেই আছে "।

 

জবাব :

 

কোর'আনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তায়ালা নিকটবর্তি আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার কথা বলেছেন। …[1] 

 

নিকটবর্তি আসমানের দুরকম মানে হতে পারে। হতে পারে এরদ্বারা শাব্দিক অর্থেই নিকটবর্তি আসমান তথা বায়ুমন্ডল বোঝাচ্ছে। আবার হতে পারে যে নিকটবর্তি আসমান বলতে বায়ুমন্ডল উদ্দেশ্য নয়, বরং মহাকাশের একটা বিশাল বড় অঞ্চল উদ্দেশ্য তা তুলনামুলকভাবে আমাদের সাপেক্ষে অধিক নিকটতর।[2] 

 

এবার মুল আলোচনায় আসা যাক।

 

যদি ধরে নেই যে নিকটবর্তি আসমান বলতে পৃথিবীর চারদিকের মহাশুন্যের একটা বিশাল অঞ্চল উদ্দেশ্য , এবং উক্ত আয়াত অনুযায়ি নিকটবর্তি আসমানে নক্ষত্র আছে ; তাহলে এরদ্বারা কখনৌই এটা প্রমানিত হয়না যে নিকটবর্তি আসমানের বাহিরে নক্ষত্র নেই। কেননা এই আয়াতগুলো শুধুমাত্র এটা জানাচ্ছে যে নিকটবর্তি আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে, নিকটবর্তি আসমানের বাহিরে নক্ষত্র থাকাকে অস্বিকার করে, এমন কোনোকিছুরই অস্তিত্ব উক্ত আয়াতগুলোতে নেই। এই আয়াতগুলো এটা অস্বিকার করছেনা যে নিকটবর্তি আসমানের বাহিরেও নক্ষত্র থাকতে পারে বা আছে। সুতরাং এই ইস্তেদলালটিতে প্রকাশ্য ক্রুটি বিদ্যমান। এর কোনো ভিত্তিই নেই।নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার অর্থ হলো নিকটবর্তি আসমানকে নক্ষত্রের "সৌন্দর্য " ও "আলো" এর মাধ্যমে সজ্জিত করা [3][4]। যদি ধরে নেই যে নিকটবর্তি আসমান বলতে বায়ুমন্ডল অথবা মহাকাশের বিশাল পরিমাণ তুলনামুলক নিকটবর্তী অঞ্চল উদ্দেশ্য, সেক্ষেত্রে বলা হবে যে নক্ষত্রের সৌন্দর্য বা আলো প্রদর্শনের জন্য তার স্বয়ং নিকটবর্তি আসমানে বিদ্যমান হয়ার প্রয়োজন নেই। নক্ষত্র যদি অকল্পনীয় দুরত্বে অবস্থান করে এবং বায়ুমন্ডল বা সেই মহাকাশীয় অঞ্চলটির কোনোটিতেই অবস্থান না করে, তবুও রাতের বায়ুমন্ডলে কিংবা মহাকাশের সেই বিশাল অঞ্চলে নক্ষত্রগুলোর আলো ও সৌন্দর্য পর্যবেক্ষন করা যাবে, বায়ুমন্ডল অথবা মহাশুন্যের বিশাল অঞ্চলটি তবুও সেই নক্ষত্রগুলোর সৌন্দর্য ও আলো দ্বারা সজ্জিত ই গণ্য হবে। নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার জন্য নক্ষত্রগুলোকে স্বশরীরে নিকটবর্তী আসমানে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, নক্ষত্রগুলোকে নিকটবর্তি আসমান থেকে অকল্পনীয় দুরত্বের মধ্যে রেখেও সেই নক্ষত্রগুলো দ্বারা নিকটবর্তি আসমানকে সজ্জিত করা যায়। নক্ষত্র যত দুরেই অবস্থান করুক না কেন, নক্ষত্র কর্তৃক আকাশকে সজ্জিত করার দৃশ্য সর্বদা পরিলক্ষিত হবেই। অর্থাৎ এমনটা বলা গ্রহণযোগ্য যে নিকটবর্তি আসমানের বাহিরে নক্ষত্র আছে এবং নিকটবর্তি আসমানে কোনো নক্ষত্র নেই, নিকটবর্তি আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার অর্থ হলো নিকটবর্তি আসমান হতে অনেক দূরে অবস্থিত নক্ষত্রগুলো দ্বারা নিকটবর্তী আসমানকে সজ্জিত করা হয়েছে।

 

উপরে উল্লেখিত আমার এই কথাগুলোকে বিভিন্ন বড় বড় আলেমদের বক্তব্য প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয়। নিম্নে এরকম কয়েকজন আলেমদের নাম উদাহরণস্বরুপ উল্লেখ্য করা হলো : …[5]

 

এক. আবু-হাফস ইবনু আদিল আদ-দিমাশক্বী 

দুই.  মুহাম্মদ আল-খাতিব আশ-শিরবিনী 

তিন. আবু-যাইদ আব্দুর-রহমান আছ-ছায়ালবী

চার. ফাখরুদ্দিন আবু-আব্দুল্লাহ আর-রাযী

পাচ.  বোরহানুদ্দিন ইব্রাহিম আল-বাক্বাঈ

ছয়.  মুহাম্মদ বিন আলি আশ-শাওক্বানী

সাত.  আব্দুর-রহমান বিন নাসির আস-সা'দী

আট. মুহাম্মদ ইবনু জুয্যাই আল-কালবী 

নয়.  মুহাম্মদ আত-তহির ইবনু আশুর

 

 

টিকাসমুহ : 

 

[1] যেমন :- সুরা আস-সাফফাত, আয়াত 6 ; সুরা ফুসসিলাত, আয়াত 12 ; সুরা মুলক, আয়াত 5 ইত্যাদি ইত্যাদি। 

 

[2]আল-মাতুরিদী, তা'ওইলাতু আহলিস-সুন্নাহ (8/546)

 

[3]আবুল-মুযাফফর, তাফসিরুস সাম'আনী (4/392) 

 

[4]ইবনুল যাওযি, যাদুল মাসির(পৃ/1182)

 

[6]উল্লেখিত এই আলেমদের যেই বক্তব্যগুলো আমার এসব কথাকে সমর্থন করে, সেই বক্তব্যগুলোর উৎস উল্লেখ্য করা হলো। দেখুন : ইবনু আদিল, আল-লুবাব (16/277) ; আল-খাতিবুশ শিরবিনী, আস-সিরাজুল মুনির (3/370); আছ-ছায়ালবী, আজ-জাওয়াহিরুল হিসান (5/458) ; আর-রাযী, মাফাতিহুল গাইব (26/317) ; আল-বাকাঈ, নিযমুদ্দ-দুরার (20/230) ; আশ-শাওকানী, ফাতহুল ক্বাদির (পৃ/1511) ; তাফসিরুস-সা'দী (পৃ/876) ; ইবনু জুয্যাই, আত-তাসহিল (4/1568-1569) ; তাফসিরু ইবনে আশুর (23/47)