Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

নবি ﷺ এর মুত্র কি পবিত্র? এটা কি সহিহ যে (সাহাবিদের)কেউ উনার মুত্র হতে পান করেছিলেন?



"নবি ﷺ এর মুত্র কি পাক? এটাকি সহিহ যে (সাহাবিদের) কোনো একজন উনার মুত্র হতে পান করেছিলেন?  "

লেখক : শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফি)
অনুবাদক : সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

প্রশ্ন : নবি ﷺ এর মুত্র কি পাক?  এটাকি সহিহভাবে বর্নিত আছে যে সাহাবিদের কোনো একজন উনার মুত্র পান করেছেন? 

উত্তর :

আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত,

দুজন মহিলার নবির ﷺ  মুত্র পান করার ঘটনা দুইটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।

প্রথম হাদিস : "উম্মু আইমান" এর নবির ﷺ  মুত্র পান করা সম্পর্কে, হাদিসটি আবু-মালিক আন-নাখঈ এর সুত্রে আল-আসওয়াদ বিন কায়স হতে নুবাইহ আল-আনাযী হতে উম্মু আইমান হতে এসেছে, যে উম্মু আইমান বলেছেন : "রাসুলুল্লাহ ﷺ রাতে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পাশের একটি কলসিতে মুত্রত্যাগ করলেন। তারপর আমি ঘুম থেকে উঠলাম ও আমি খুবই পিপাসার্ত ছিলাম, ফলে সেই কলসিতে যা ছিল আমি তাই পান করে নিলাম এবং টের পেলাম না (যে সেটা মুত্র ছিল)। তারপর যখন নবি ﷺসকালে উঠলেন তিনি বললেন 'হে উম্মু আইমান,উঠো এবং উই কলসিটিতে যা আছে ফেলে দিয়ে এসো '। আমি (উম্মু আইমান) বললাম : আল্লাহর কসম, সেটাতে যা ছিল আমি তো তা পান করে ফেলেছি! তিনি (উম্মু আইমান) বললেন : ফলে রাসুলুল্লাহ ﷺ এমনভাবে হাসলেন যে তার মাড়ির দাতগুলো দেখা যাচ্ছিলো। তারপর তিনি বললেন : 'তাহলে অবশ্যই তোমার পেটে কখনো অসুথ হবেনা'।

আল-হাকেম তার "মুস্তাদরাক"(4/70) এ হাদিসটি বর্ননা করেছেন। এবং আবু-নুয়াইম "আল-হিলয়াহ"(2/67) তে। এবং আত-তাবারানী "আল-কাবির"(25/89,90) এ।

হাদিসটির সনদ "যইফ ",এতে দুইটি দুর্বলতা আছে : প্রথম দুর্বলতা : নাবিহ আল-আনাযী ও উম্মু-আইমান এর মধ্যকার ইনকিতা (সনদের বিচ্ছিন্নতা), এবং দ্বিতীয় দুর্বলতা : আবু-মালিক আন-নাখঈ যার নাম আব্দুল-মালিক বিন হুসাইন, তার যইফ হয়ার ব্যাপারে সকলের ঐক্যমত আছে। আন-নাসাঈ তার সম্পর্কে বলেছেন : "পরিতাজ্য", এবং আবু-হাতেম বলেছেন : "হাদিসের ক্ষেত্রে যইফ ", এবং উমার বিন আলি বলেছেন : "যইফ, হাদিসের ক্ষেত্রে মুনকার"। দেখুন : আন-নাসাঈর "আদ্ব-দ্বুয়াফা ওয়াল মাতরুকিন", ইবন আবি হাতেম এর "আল-জারাহ ওয়াত তা'দীল ", ইবন হাজারের "তাহযিবুত তাহযিব "।

হাফেয ইবন হাজার - রহিমাহুল্লাহ - বলেছেন : "এবং আবু-মালেক যইফ, এবং নুবাইহ, উম্মু আইমান এর সাথে সাক্ষাত পায়নি " বক্তব্য সমাপ্ত "আল-তালখিসুল হাবির ফি তাখরিজে আহাদিসির রাফিয়িঈ আল-কাবির "(1/171) হতে।

হাদিসটি আবু-মালেক আন-নাখঈ অপর সুত্রে ইয়ালা বিন আতা হতে আল-ওয়ালিদ বিন আব্দির-রহমান হতে উম্মু-আইমান হতে বর্ননা করেছেন।আদ-দারাকুতনী - রহিমাহুল্লাহ - বলেছেন : "এবং আবু-মালেক যইফ, এবং তার কারনে উক্ত হাদিসে ইযতিরাব রয়েছে " বক্তব্য সমাপ্ত আদ-দারাকুতনির "আল-ইলাল" (15/415) হতে।

দ্বিতীয় হাদিস : "বারাকাহ উম্মু ইউসুফ" এর নবির ﷺ  মুত্র পান করা সম্পর্কে, হাদিসটি ইবন জুরাইজ এর সুত্রে এসেছে, যে তিনি (ইবন জুরাইজ) বলেছেন আমাকে হুকাইমাহ বিনত উমাইমাহ বিনত রুকাইকাহ তার মাতা (উমাইমাহ) হতে বর্ননা করেছেন যে (উমাইমাহ) বলেছেন "নবি ﷺ একটি কাঠের পাত্রে মুত্রত্যাগ করতেন, তারপর পাত্রটি তার খাটের নিচে উঠিয়ে রাখতেন। (একদা) তিনি তাতে মুত্রত্যাগ করলেন, তারপর(আবার) আসলেন ও পাত্রটি পেতে ইচ্ছা করলেন। তখন (তিনি দেখলেন যে) পাত্রটিতে কিছুই নেই। ফলে তিনি একজন মহিলাকে বললেন : "পাত্রটিতে যেই মুত্র ছিল তা কোথায় গেল?", সেই মহিলাটিকে "বারাকাহ " নামে ডাকা হতো, তিনি উম্মু-হাবিবাহ এর খেদমত করতেন ও হাবশাহ থেকে এসেছেন। (মহিলাটি) জবাবে বললেন : 'আমি তা পান করেছি '। ফলে তিনি ﷺ বললেন : ' তাহলে অবশ্যই তোমার জন্য জাহান্নাম নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে '।

আল-বায়হাকী হাদিসটি "আস-সুনানুল কুবরা "(7/67) এ বর্ননা করেছেন, এবং আত-তাবারানী "আল-কাবির"(24/189) এ।

এবং এটি একটি যইফ হাদিস, এর কারন হলো হুকাইমাহ বিনত উমাইমাহ এর অপরিচিত হয়া। আয-যাহাবী "মিযানুল ই'তিদাল"(1/587) এ বলেন "সে অপরিচিত ", বক্তব্য সমাপ্ত। ইবন হাজার "তাকরিবুত তাহযিব "(পৃ/745) এ বলেন "হুকাইমাহ বিনত উমাইমাহর পরিচয় জানা যায়না " বক্তব্য সমাপ্ত। রাবির অপরিচিত হয়ার পাশাপাশি এই হাদিসটির মতনও বড় ধরনের ইযতিরাব দ্বারা মুযতারাব।

দ্বিতীয়ত,

নবি ﷺ এর মুত্রের বিধান : এক্ষেত্রে মুল বিষয় হলো এই যে এটাও অন্যান্য মানুষের মুত্রের অনুরুপ। সেটাতে কোনো ব্যাতিক্রম বৈশিষ্ট নেই যে তা পাক হতে যাবে। এটা সহিহভাবে প্রমানিত আছে যে নবি ﷺ মুত্রত্যাগ শেষ করার পর ও তার (অন্য) প্রয়োজন পুরন করে নেয়ার পর পবিত্রতা অর্জন করতেন। এবং এটা সহিহভাবে প্রমানিত নেই যে কোনো মানুষ কখনো তার ﷺ মুত্র পান করেছেন। উপরে উল্লেখিত এইধরনের হাদিসগুলোর সবগুলৌই যইফ। যদি এসবের কোনো কিছু সহিহও হতো, তবুও তা উনার মুত্র পাক হয়ার দলিল নয়, কেননা মুত্র পান করাটা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুলক্রমে  দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে।

মুহাম্মাদ ﷺ এর সৃষ্টির মুল উপাদান অন্যান্য মানুষদের মতই। কেননা আল্লাহ বলেছেন (বল, যে অবশ্যই আমি তোমাদের মতই মানুষ) আল-কাহফ/110, তিনি ﷺ বলেছেন (নিশ্চই আমি তোমাদের মতই মানুষ, আমি ভুলে যাই যেভাবে তোমরা ভুলে যাও, যখন আমি ভুলে যাব আমাকে তখন তোমরা মনে করিয়ে দিবে) হাদিসটি বুখারি (392) ও মুসলিম (572) বর্ননা করেছেন। তিনি ﷺ বলেছেন : (আমি একজন মানুষ মাত্র। মানুষ যাতে সন্তুষ্ট থাকে আমিও তাতে সন্তুষ্ট হই। আমিও রাগাম্বিত হই যেভাবে মানুষ রাগাম্বিত হয়ে থাকে। সুতরাং আমি আমার উম্মাতের কোন লোকের বিরুদ্ধে বদদু’আ করলে সে যদি তার যোগ্য না হয় তাহলে তা তার জন্য পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্যের সোপান বানিয়ে দাও, যার দ্বারা কিয়ামতের দিনে সে তোমার নৈকট্য অর্জন করতে পারে) হাদিসটি মুসলিম বর্ননা করেছেন (2603)।

তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উনার ব্যাতিক্রম বৈশিষ্ট ছিল যাদ্বারা আল্লাহ তাকে সম্মানিত  করেছেন ও অন্যান্য মানুষ হতে আলাদা বানিয়েছেন। যেমন বুখারি (1096) ও মুসলিম (738) এর বর্ননায় এসেছে আয়েশাহ (রা) হতে বর্নিত যে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : (হে আয়েশাহ নিশ্চই আমার দুই চোখ ঘুমায়, কিন্ত আমার অন্তর ঘুমায় না) । এবং যেমনটা আনাস বিন মালিক (রা) হতে বর্নিত হয়েছে যে নবি ﷺ বলেছেন (তোমরা কাতার সোজা করে নিবে। কেননা, আমি আমার পিছনে তোমাদেরকে দেখতে পাই) হাদিসটি বুখারি (686) ও মুসলিম (425) বর্ননা করেছেন।

এবং আল্লাহই অধিক জানেন।

[মুল আর্টিকেলের লিংক : https://islamqa.info/ar/181776]

.