Are you sure?

বিবিধ »  বিবিধ

বুয'আহ কুপ এর ঘটনা ও এসক্রান্ত ফিকহি বিষয়বস্ত সম্পর্কে আলোচনা

 

লেখক : ইমাম আবু-জা'ফার আত-তাহাবী (রহ)
অনুবাদক : মাওলানা জাকির হোসেন
পরিমার্জনে : সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরদী

 

[আলোচনাটি ইমাম আবু-জা'ফার আত-তাহাবী (রহ) রচিত "শারহু মাআনিয়িল আছার " গ্রন্থটির ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত বাংলা অনুবাদ "তাহাবী শরিফ" এর প্রথম খন্ডের পৃষ্ঠা নং 15-29 হতে উল্লেখ্য করা হলো। পরিমার্জন হিসেবে হাদিসগুলোর আরবি ইবারত বাদ দিয়ে শুধু বাংলা অর্থ উল্লেখ্য করা হয়েছে, এবং আত-তাহাবির বর্নিত সকল সনদ বাংলায় উল্লেখ্য করা হয়েছে,এবং কিছু টিকা দেয়া হয়েছে ]

আত-তাহাবির (রহ) আলোচনা আরম্ভ হলো,

১- আমাদের মুহাম্মাদ বিন খুযায়মাহ বিন রাশিদ আল-বাসরী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-হাজ্জাজ ইবনুল মিনহাল বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আহমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক হতে তিনি উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুর-রহমান হতে তিনি আবু-সাইদ আল-খুদরী হতে বর্ননা করেছেন যে : রাসুলুল্লাহ ﷺ বী'রে বুযা'আর (পানি দিয়ে) [1] উযু করতেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল!  এই কুয়োটিতো এমন যে তাতে মৃত (প্রানী), হায়যে ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তখন তিনি বললেন : পানি নাপাক (কলুষিত) হয়না।

২- আমাদের ইব্রাহিম বিন আবি-দাউদ ও সুলাইমান বিন দাউদ আল-আসাদী, এনারা দুজন বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আহমাদ বিন খালিদ আল-ওয়াহাবী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বর্ননা করে বলেছেন সুলাইত বিন আইয়ুব হতে তিনি উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুর-রহমান বিন রাফিঈ হতে তিনি আবু-সাইদ আল-খুদরী হতে বর্ননা করেছেন যে : তিনি বলেছেন, একবার বলা হলো হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য বী'রে বুযা'আ হতে পানি আনা হয়, অথচ তা এমন (অরক্ষিত) কুয়ো যাতে লোকদের মল,নারিদের হায়যে ব্যবহৃত কাপড়ের টুকড়া এবং কুকুরের গোশত ফেলা হয়ে থাকে। তিনি বললেন, এই পানিতো পাক, একে কোনো বস্ত কলুষিত করতে পারেনা।

৩- আমাদের ইব্রাহিম বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ঈসা বিন ইব্রাহিম আল-বারাকী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল-আযিয বিন মুসলিম আল-ক্বাসমালী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুতার'রিফ বর্ননা করেছেন খালিদ বিন আবি-নাওফ হতে তিনি ইবন আবি সাইদ আল-খুদরী হতে তিনি তার পিতা হতে বর্ননা করেছেন, যে তিনি বলেছেন আমি রাসুল ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হলাম, আর তিনি বী'রে বুয'আ হতে উযু করছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!  আপনি কি তা থেকে উযু করছেন? অথচ তা এমন কুয়ো যাতে ময়লা ফেলা হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন : এ পানিকে কোনো বস্ত কলুষিত করতে পারেনা

৪- আমাদের ইব্রাহিম বিন-আবিদাউদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আসবাগ ইবনুল ফারাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাতেম বিন ইসমাইল বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন আবি-ইয়াহিইয়া আল-আসলামী হতে তিনি তার মাতা হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন, একবার আমরা চারজন নারী সাহল ইবন সা'দ এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বী'রে বুয'আ থেকে পানি পান করাই তাহলে তোমরা তা অপছন্দনীয় মনে করবে। অথচ আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে নিজ হাতে তা থেকে পানি পান করিয়েছি।

৫- আমাদের ফাহদ বিন সুলাইমান বিন ইয়াহইয়া বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুহাম্মাদ বিন সাইদ ইবনুল আসবাহানী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের শারিক বিন আব্দুল্লাহ আন-নাখঈ বর্ননা করেছেন তারিফ আল-বাসরী হতে তিনি আবু-নাযরাহ হতে তিনি জাবির অথবা আবু-সাইদ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন, আমরা একবার এক সফরে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সংগে ছিলাম। একসময় আমরা একটি জলাশয়ের কাছে পৌছালাম ; যাতে মৃত (প্রানী) পড়ে রয়েছিল। আমরা বিরত থাকলাম এবং লোকেরাও বিরত থাকল। তারপর রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট এলেন ও বললেন তোমাদের কি হয়েছে,পানি পান করছ না কেন ?  আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল, এই মৃত প্রানীর কারনে। তিনি বললেন, তোমরা পান কর। কেননা পানিকে কোনো বস্ত কলুষিত করতে পারেনা। সুতরাং আমরা অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করলাম।

পর্যালোচনা :

একদল আলিম এসমস্ত হাদিসের মর্ম গ্রহন করে বলেছেন, পানিতে পতিত কোনো বস্ত পানিকে কলুষিত করতে পারেনা যতক্ষন না এর রঙ বা গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তিত হবে। পক্ষান্তরে ওগুলোর কোনো একটি পরিবর্তিত হয়ে গেলে পানি নাপাক হয়ে যাবে।

পক্ষান্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরাপর আলেমগন তাদের বিরুধিতা করে বলেছেন বী'রে বুয'আ সম্পর্কে যা কিছু তোমরা উল্লেখ্য করেছ [2] এতে তোমাদের অনুকূলে কোনো প্রমান নেই। যেহেতু বী'রে বুয'আ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে যে তা কি ছিল? [3] একদল (বিশ্লেষক) আলিম বলেন যে তা বাগানসমুহে প্রবাহমান পানির পথ ছিল।[4]তাতে পানি স্থীর থাকত না। [8]অতএব এর পানির বিধান নদীসমুহের বিধানের অনুরুপ হবে।অনুরুপভাবে আমরা এরুপ প্রত্যেক স্থানের ব্যাপারে অনুরুপ বক্তব্য প্রদান করব যে, যদি তাতে নাপাকি পতিত হয় তাহলে তা যতক্ষন পর্যন্ত এর স্বাদ বা রঙ বা গন্ধকে পরিবর্তিত না করবে, পানি নাপাক হবেনা। অথবা যদি জানা যায় যে, তা থেকে নেয়া পানির অংশে নাপাকির অংশ বিদ্যমান আছে, তাহলে পানি নাপাক হয়ে যাবে। আর যদি তা জানা না যায় তাহলে পানি পাক হিসেবে বিবেচিত হবে।

বী'রে বুয'আ সম্পর্কে আমরা যা উল্লেখ্য করেছি এটি আল-ওয়াকিদী[5]থেকে বর্নিত আছে। আমার নিকট তা আবু-জা'ফার আহমাদ বিন আবি-ইমরান বর্ননা করেছেন আবু-আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন শাজা'আ আছ-ছালাজী হতে তিনি আল-ওয়াকিদী হতে বর্ননা করেছেন যে কুয়োটো এইরুপই ছিল।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এটিও একটি প্রমান যে ফকিহগন নিম্নোক্ত বিষয়ে ঐক্যমত[6] পোষন করেছেন যে যখন কুয়োতে নাপাক পতিত হয়ে পানির স্বাদ বা গন্ধ বা রঙ কে প্রভাবিত করে তাহলে এর পানি নাপাক হয়ে যাবে [7][10]। পক্ষান্ততে বী'রে বুয'আ সম্পর্কে হাদিসে এমন কিছুর উল্লেখ্য নেই। এতে শুধু এটুকু ব্যাক্ত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বী'রে বুয'আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এবং তাকে বলা হয়েছে যে, এতে কুকুর এবং হায়যে ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো ফেলা হয়ে থাকে।[9]তিনি বললেন,পানিকে কোনো বস্ত নাপাক করতে পারেনা।

বস্তুত আমরা জ্ঞাত আছি যে, যদি কোনো কুয়োতে এর চাইতে কম কিছুও পতিত হয়, তাহলে এর পানির গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তিত না হয়া অসম্ভব। এবং এটি যুক্তিসংগত ও পরিজ্ঞাত বিষয়।

বস্তত যখন বিষয়টি এরুপ এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদের জন্য উক্ত পানি ব্যবহার বৈধ সাব্যস্ত করেছেন আর এটিত সকলের কাছে স্বীকৃত যে,সেটি পানি পুর্বোল্লিখিত কারনসমুহের কোনো কারনে পরিবর্তিত হয়ে যায়নি। [11]

আমাদের বিবেচনায় আর আল্লাহ উত্তমরুপে জ্ঞাত, কুয়োয় নাপাকি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় নবি ﷺ কে এই পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা এবং তার এরুপ উত্তর প্রদান করা সম্পুর্ন অসম্ভব।সম্ভবত এই প্রশ্ন উথাপিত হয়েছিল কুয়ো থেকে নাপাকি বেড় করার পরে,[12]এবং আল্লাহ উত্তমরুপে জ্ঞাত। যেন তারা নবি ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছেন তা থেকে নাপাকি বেড় করার পর তা কি পাক হবে? এবং এর সেই পানি নাপাক হবে না, যা পরবর্তিতে এখন তাতে পড়বে? বস্তুত, এটি একটি কঠিন বিষয়। যেহেতু কুয়োর দেয়ালসমুহ ধোয়া হয়নি এবং এর কাদামাটিও বেড় করা হয়নি।অতএব নবি ﷺ তাদেরকে বলেছেন : পানি নাপাক হয়না। বস্ত এরদ্বারা তার (ﷺ) উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেই পানি যা নাপাকি বেড় করাত পরে সেখানে পৌছে। এরুপ নয় যে, পানিতে নাপাকি মিলিত হয়ার পরে তা নাপাক হবেনা।

আবার আমরা তাকে (রাসুলুল্লাহ ﷺ কে) দেখছি যে তিনি বলেছেন : মুমিন নাপাক (অপবত্র) হয়না।

৬- আমাদের ইবন আবি-দাউদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-মুকাদ্দামী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইবন আবি-আদি বর্ননা করেছেন হুমাইদ হতে। এবং আমাদেরকে তা ইবন খুযাইমাহ বর্ননা করে বলেছেন যে হাজ্জাহ ইবনুল মিনহাল বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বর্ননা করেছেন হুমাইদ হতে। তিনি (হুমাইদ) বর্ননা করেছেন বাকার হতে তিনি আবু-রাফিঈ হতে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন,একবার আমি নবি ﷺ এর সংগে সাক্ষাত করলাম, তখন আমি ছিলাম অপবিত্র (গোসল ওয়াজিব অবস্থায়)। তিনি তার হাত আমার দিকে প্রসারিত করলেন। আমি আমার হাত সরিয়ে ফেললাম এবং বললাম আমি অপবিত্র অবস্থায় আছি। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, মুমিন কখনও (এমন) অপবিত্র হয়না ( যে, তাকে স্পর্শ করা যাবেনা) তিনি ﷺ অন্য হাদিসে বলেছেন : ভুমি অপবিত্র হয়না।

৭- আমাদের তা আবু-বাকারাহ বাককার বিন কুতাইবাহ আল-বাকরাবী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-দাউদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-উকাইল আদ-দাওরাক্বী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-হাসান বর্ননা করে বলেছেন যখন সাকীফ গোত্রের প্রতিনধীদল রাসুলুল্লাহ ﷺ এর খিদমতে উপস্থিত হল তখন তিনি তাদের জন্য মসজিদে তাবু স্থাপন করলেন। লোকেরা (সাহাবীগন) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!  এরাতো অপবিত্র লোক। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, ভুমির সংগে লোকদের অপবিত্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। লোকদের অপবিত্রতার সম্পর্ক তাদের নিজের সংজ্ঞে

বিশ্লেষণ :

অতএব তার (ﷺ) এর উক্তি "মু'মিন অপবিত্র হয়না" - এর মর্ম এটি নয় যে, তার দেহ নাপাক হবেনা, যদিও তাতে নাপাকি লেগে থাকে। তার (ﷺ) উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্য কোনো অর্থের দিক দিয়ে অপবিত্র না হয়া। অনুরুপভাবে তার (ﷺ) উক্তি "ভুমি নাপাক হয়না"- এর মর্ম এটি নয় যে, নাপাকি লাগা সত্ত্বেও তা নাপাক হয়না। আর এটি কিভাবে হতে পারে?অথচ তিনি সে মসজিদের সেই স্থানে এক বালতি পানি ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল যেখানে জৈনিক বেদুঈন পেশাব করে দিয়েছিল।

৮- আমাদের তা আবু-বাকারাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের উমার বিন ইউনুস আল-ইয়ামামী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইকরামাহ বিন আমমার বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইসহাক বিন আব্দুল্লাহ বিন আবি-তালহাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাকে আনাস বিন মালিক বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সংগে বসা ছিলাম। হঠাত এক বেদুঈন এলো এবং সে দাঁড়িয়ে মসজিদে পেশাব করতে লাগল।রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগন বললেন, নিবৃত্ত হও, নিবৃত্ত হও। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তারা তাকে ছেড়ে দিলেন, সে পেশাব সেরে নিল। এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে ডেকে বললেন এই সমস্ত মসজিদ পেশাব-পায়খানার উপযোগী স্থান নয়। এগুলোত আল্লাহর যিকির, সালাত ও কোর'আন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত। ইকরামাহ বলেন : রাসুলুল্লাহ ﷺ হুবুহু এ কথা বা অনুরুপ কোনো কথা বলেছেন। তারপর তিনি এক ব্যাক্তিকে এক বালতি পানি আনার জন্য নির্দেশ দিলেন, সে পানির বালতি এনে এর উপর ঢেলে দিল।

৯- আমাদের আলি বিন শায়বাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইয়াহইয়া বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল-আযিয বিন মুহাম্মাদ বর্ননা করেছেন ইয়াহইয়া হতে তিনি তিনি হতে, যে তিনি আনাস বিন মালিক (রা) কে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে অনুরুপ উল্লেখ্য করতে শুনেছেন। তবে তিনি "এই সমস্ত মসজিদ " …… থেকে শেষ পর্যন্ত এই অংশ উল্লেখ্য করেন নি। তাওস বর্ননা  করেন যে, নবি ﷺ সেই স্থানকে খনন করার নির্দেশ দিয়ে দিলেন।

১০- আমাদের তা আবু-বাকারাহ বাককার বিন কুতাইবাহ আল-বাকরাবী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইব্রাহিম বিন বাশশার বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বিন আইয়িনাহ বর্ননা করেছেন উমার বিন দিনার হতে, তিনি তাওস হতে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। আর আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ ও এই হাদিস নবি ﷺ থেকে বর্ননা করেছেন।

১১- আমাদের ফাহদ বিন সুলাইমান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইয়াহইয়া বিন আব্দিল-হামিদ আল-হামমানী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-বকর বিন আইয়াশ বর্ননা করেছেন সাম'আন বিন মালিক আল-আসাদী হতে তিনি আবি-ওয়াইল হতে তিনি আব্দুল্লাহ হতে যে, তিনি বলেছেন জৈনিক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিয়েছিল। তখন নবি ﷺ এর নির্দেশে তাতে এক বালতি পানি ঢেলে দেয়া হয়েছিল। এরপর তিনি নির্দেশ দিলে সেই স্থান খনন করা হয়।

ইমাম আবু-জা'ফার আত-তাহাবী বলেন : তার (ﷺ) উক্তি "ভুমি অপবিত্র হয়না" এর মর্ম হচ্ছে যখন এর থেকে নাপাকি-অপবিত্রতা দুরিভুত হয়ে যায় তখন তা নাপাক থাকেনা। বস্তুত এই অর্থ নয় যে, সেখানে নাপাকি বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ও নাপাক হয়না। অনুরুপভাবে "বী'রে বুয'আ" সম্পর্কে তার (ﷺ) উক্তি যে, "পানি নাপাক হয়না" বস্তুত এটি নাপাকি পাওয়া যাওয়ার অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং তা নাপাকি না থাকার অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং এটিই হচ্ছে "বী'রে বুয'আ" সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর উক্তি "পানিকে কোনো বস্ত নাপাক করতে পারেনা " এর মর্মকথা। আল্লাহই উত্তমরুপে জ্ঞাত।

অবশ্য, আমরা অন্য হাদিসে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি এরুপ বর্ননা করেছেন।

১২- আমাদের সালিহ বিন আব্দুর-রহমান বিন উমার ইবনুল হারিস আল-আনসারী এবং আলী বিন শায়বাহ ইবনুস সলত আল-বাগদাদী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযিদ আল-মুকরী বর্ননা করে বলেছেন যে আমি ইবন আওন কে মুহাম্মাদ বিন সিরিন হতে বর্ননা করতে শুনেছি যে তিনি আবু-হুরাইরাহ  হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন :  রাসুলুল্লাহ ﷺ নিষিদ্ধ করেছেন বা এটা নিষিদ্ধ যে মানুষ স্থির পানিতে পেশাব করে তারপর তা থেকে ওযু অথবা গোসল করবে।

১৩- আমাদের আলি বিন মা'বাদ বিন নুহ আল-বাগদাদী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন বাকার আস-সাহমী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হিশাম বিন হাসসান বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন সিরিন হতে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে যে তিনি (ﷺ) বলেছেন : স্থির পানিতে - যা প্রবাহিত নয়, পেশাব করে তাতে তোমরা কেও গোসল করবেনা

১৪- আমাদের ইউনুস বিন আব্দুল-আ'লা আবু-মুসা আস-সাদাফী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাকে আনাস বিন আইয়াদ্ব আল-লাইসী জানিয়েছেন আল-হারিস বিন আবি-যুবাব হতে যিনি কিনা আল-আযদ এর একজন ব্যাক্তি তিনি আতা বিন মিনা হতে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে বর্ননা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : স্থির পানিতে তোমরা কেও কখনো পেশাব করবেনা,যে থেকে তারপর উযু করবে কিংবা পান করবে।

১৫-আমাদের ইউনুস বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহব বর্ননা করে বলেছেন যে আমাকে উমার ইবনুল হারিস জানিয়েছেন যে বুকাইর বিন আব্দিল্লাহ ইবনুল আশাজ্জ তাকে বর্ননা করেছেন আবুস-সাইব মাওলা হিশাম বিন যাহরাহ তাকে বর্ননা করেছেন যে তিনি আবু-হুরাইরাহ কে বলতে শুনেছেন যে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : তোমাদের কেও যেন অপবিত্র (গোসল ওয়াজিব) অবস্থায় স্থির পানিতে গোসল না করে। বর্ননাকারী [আবু-হুরাইরাহ (রা)-কে] জিজ্ঞাসা করেন, হে আবু-হুরাইরাহ! সে কি করবে?তিনি বললেন, সে পানি উঠিয়ে নিবে।

১৬- আমাদের ইবন আবি-দাউদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সাইদ ইবনুল হাকাম বিন আবি-মারিয়াম বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুর-রহমান বিন আবিয-যিনাদ জানিয়েছেন যে আমাদের আমার পিতা বর্ননা করেছেন মুসা বিন আবি-উসমান হতে তিনি তার পিতা হতে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন : তোমাদের কেও যেন স্থির পানিতে যা কিনা প্রবাহিত নয় পেশাব না করে,যা থেকে তারপর গোসলও সম্পন্ন করবে।

১৭-  আমাদের হুসাইন বিন নাসার ইবনুল মা'আরাক আল-বাগদাদী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আল-ফারইয়াবী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বলেছেন। এবং আমাদের ফাহাদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-নুয়াইম বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বর্ননা করে বলেছেন। তিনি (সুফিয়ান) আবিয-যিনাদ হতে অনুরুপ রিওয়াত করেছেন।

১৮-আমাদের আর-রাবিঈ বিন সুলাইমান আল-মুয়াযযিন বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আসাদ বিন মুসা বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন লাহিয়াহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দু-রহমান আল-আ'রাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমি আবু-হুরাইরাহ কে রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেছেন : তোমাদের কেও স্থির পানিতে যা প্রবাহিত নয়, পেশাব করবেনা,যা থেকে পরে গোসল করবে।

১৯- আমাদের আর-রাবিঈ বিন সুলাইমান আল-জিযী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-যুর'আহ ওয়াহব বিন রাশিদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাইওয়াহ বিন শুরাইহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমি ইবন আজলানকে আবুয-যিনাদ হতে বর্ননা করতে শুনেছি যে তিনি আল-আ'রাজ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ননা করেছেন,যে তিনি বলেছেন : তোমাদের কেও যেন স্থির পানিতে পেশাব না করে এবং তাতে গোসল না করে।

২০- আমাদের ইব্রাহিম বিন মুনক্বিয আল-উসফুরী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাকে ইদ্রিস বিন ইয়াহইয়া বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আব্দুল্লাহ বিন আইয়াশ বর্ননা করেছেন আল-আ'রাজ থেকে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে তিনি নবি ﷺ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন : এবং তাতে জুনুবী (অপবিত্র ব্যাক্তি) গোসল করবেনা।

২১- আমাদের মুহাম্মাদ ইবনুল হাজ্জাজ বিন সুলাইমান আল-হাযারমী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আলি বিন মা'বাদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-ইউসুফ বর্ননা করেছেন ইবন-আবি লাইলা হতে তিনি আবুয-যুবাইর হতে তিনি জাবির হতে তিনি নবি ﷺ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি ﷺ স্থির পানিতে পেশাব করে তাতে উযু করতে নিষেধ করেছেন।

ইমাম আবু-জা'ফার আত-তাহাবী (রহ) বলেন : বস্তুত যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ  বিশেষত সেই স্থির পানির কথা বলেছেন, যা কি না প্রবাহিত নয়। প্রবাহিত পানির উল্লেখ করেন নি। এতে বুঝা যাচ্ছে যে তিনি তা পৃথক করে দিয়েছেন[13]। যেহেতু নাজাসাত (অপবিত্রতা) সেই পানিতে প্রবেশ করে যা প্রবাহিত নয়। প্রবাহিত পানিতে প্রবেশ করেনা।

আল্লাহর রাসুল ﷺ থেকে কুকুরের মুখ দেয়া পাত্র ধৌত করার ব্যাপারেও (হাদীস) বর্নিত আছে। আমরা তা আমাদের এই গ্রন্থের অন্যস্থানে ইনশা'আল্লাহ শিঘ্রই বর্ননা করব[14]।বস্তুর এটি পাত্র এবং এর পানি অপবিত্র হয়ার প্রমান। অথচ এটা এর গন্ধ রঙ এবং স্বাদের উপর প্রভাব ফেলেনা। অতএব ঐই  সমস্ত রিওয়ায়াতসমুহের বিশুদ্ধতাও সেই বস্তুকে অপরিহার্য করে যা আমরা এই অনুচ্ছেদে "বী'রে বুযা'আ" সম্পর্কীয় হাদিসের মর্মার্থের ব্যাপারে বর্ননা করেছি। এভাবে এই হাদিসের মর্ম ঐ সমস্ত হাদিসের মর্মের সংগে সাংঘর্ষিক না হয়ে সামঞ্জস্যশীল হয়। আর এটি সেই পানির বিধান যা প্রবাহিত নয় যখন কিনা তাতে অপবিত্রতা পতিত হয় এবং এটি হলো এই সমস্ত রিওয়ায়াতের বিশুদ্ধ মর্ম নির্ধারনের সঠিক পদ্ধতি। পক্ষান্তরে একদল আলিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছুটা পরিমাণ নির্ধারিত করে বলেছেন যখন পানি দুই কুল্লা (বড় দুই মটকা) পৌছে যাবে তখন তা আর নাপাকী বহন করেনা। তারা এই বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসসমুহ প্রমান স্বরুপ পেশ করেছেন :

২২- আমাদের বা'হর বিন নাসর বিন সাবিক্ব আল-খাওলানী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইয়াহইয়া বিন হাসসান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-উসামাহ হামমাদ বিন উসামাহ বর্ননা করেছেন আল-ওয়ালিদ বিন কাসির আল-মাখযুমী হতে তিনি মুহাম্মাদ বিন জা'ফার ইবনুয যুবাইর হতে তিনি উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ হতে তিনি আব্দুল্লাহ বিন উমার হতে বর্ননা করেছেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ - কে হিংস্র প্রানী যে পানি থেকে পান করতে আসে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন : দুই কুল্লা (মটকা) পরিমান পানি হলে তা আর নাপাকি বহন করেনা।

অনুরুপভাবে,

২৩- আমাদের আল-হুসাইন বিন নাসর বর্ননা করেছেন যে আমি ইয়াযিদ বিন হারুন কে বলতে শুনেছি যে আমাদের মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন জা'ফার ইবনুয যুবাইর হতে তিনি উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার হতে তিনি নিজ পিতা হতে তিনি নবি ﷺ হতে বর্ননা করেছেন যে, একবার নবী ﷺ কে মাঠের সেই সমস্ত ক্ষুদ্র জলাশয়গুলোর পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,যা থেকে হিংস্র প্রানী পানি পান করে থাকে। জওয়াবে তিনি বলেছিলেন : যখন পানি দুই কুল্লা পরিমান পৌছে যাবে তখন আর তা নাপাকি বহন করেনা।

২৪- এবং আমাদের মুহাম্মাদ ইবনুল হাজ্জাজ বর্ননা করেছেন যে আমাদের আলী বিন মা'বাদ বর্ননা করেছেন যে আমাদের আববাদ বিন আববাদ আল-মুহাল্লাবী বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক হতে তিনি মুহাম্মাদ বিন জা'ফার হতে তিনি উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার হতে তিনি নিজ পিতা হতে তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন

২৫- আমাদের ইয়াযিদ বিন সিনান বিন ইয়াযিদ আল-বাসারী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুসা বিন ইসমাইল বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক হতে তিনি মুহাম্মাদ বিন জা'ফার হতে তিনি
উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার হতে তিনি তার নিজ পিতা হতে তিনি নবি ﷺ হতে অনুরুপ বর্ননা করেছেন

২৬- আমাদের ইয়াযিদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুসা বিন ইসমাইল বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন যে তাদের আসিম ইবনুল মুনযির জানিয়েছেন যে, আমরা একবার আমাদের বাগানে অথবা উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার এর বাগানে ছিলাম। তখন যুহরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল।তিনি (উবাইদুল্লাহ) বাগানের এক কুয়োর দিকে চলে গেলেন এবং তা থেকে উযু করলেন। অথচ তাতে মৃত প্রানির চামড়া পড়ে রয়েছিল। আমি বললাম,আপনি কি এর থেকে উযু করেছেন, অথচ এতে তা (চামড়া) রয়েছে? উবাইদুল্লাহ বললেন রাসুল ﷺ বলেছেন : যখন পানি দুই কুল্লা পরিমানের হবে, তখন তা নাপাক হবেনা।

২৭- আমাদের রাবিঈ আল-মুয়াযযিন বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ইয়াহইয়া বিন হাসসান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন … তারপর এই সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। তবে তিনি তা নবি ﷺ পর্যন্ত পৌছাননি। বরং তিনি তা আব্দুল্লাহ বিন উমার পর্যন্ত মাওকুফরুপে বর্ননা করেছেন।

এই সমস্ত মনীষী বলেছেন : যখন পানি এই পরিমান পৌছাবে, তখন এতে পতিত নাজাসাত এর ক্ষতি করবেনা। কিন্ত সেটি যদি এর গন্ধ বা স্বাদ বা রঙ এর উপর প্রভাব ফেলে (তাহলে নাপাক হয়ে যাবে)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা ইবন উমার (রা) এর এই হাদিস দ্বারা প্রমান পেশ করেছেন। কিন্ত এই প্রমান স্বয়ং তাদের বিরুদ্ধে সেই সমস্ত লোকদের প্রমান হিসাবে বিবেচিত হবে যারা বলে যে, হাদিসসমুহে দুই কুল্লার পরিমান আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করা হয়নি। অতএব এর পরিমান হিজায এলাকার দুই মটকার সমান হওয়ার সম্ভাবনা আছে,যেমন আপনারা উল্লেখ করেছেন। আবার এ সম্ভাবনাও আছে যে এরদ্বারা মানুষের দেহের উচ্চতা বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন পানি দুই দেহের উচ্চতার সমান হয়ে যায়,তখন আধিক্যের কারনে তা নাপাকি বহন করবেনা, যেহেতু এই অবস্থায় তা নদীর (পানির) সমপর্যায়ে বিবেচিত হবে।

কেও যদি প্রশ্ন উথাপন করে বলেন যে, আমাদের মতে হাদিসের ব্যাহ্যিক অর্থই গ্রহনযোগ্য।আর মটকা দ্বারা হিজাজের প্রসিদ্ধ মটকা-ই বুঝানো হয়েছে -

উত্তরে বলা হবে : আপনাদের বক্তব্য মুতাবিক যদি হাদিসের ব্যাহ্যিক অর্থই গ্রহন করা হয় তাহলে পানি যখন সেই পরিমান পর্যন্ত পৌছে যায় তখন নাজাসাত দ্বারা এর রং বা স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তিত হয়ে গেলেও পানি নাপাক না হওয়াই বিধেয় হতো। যেহেতু নবি ﷺ এই হাদিসে তা উল্লেখ্য করেননি এবং হাদীসের ব্যাহ্যিক অর্থই বিবেচিত হবে। আর যদি বলা হয় যে, যদিও এই হাদিসে এটিরই উল্লেখ্য নেই, কিন্ত অন্য হাদিসে তা উল্লেখ্য করা হয়েছে। এপ্রসংগে নিম্নোক্ত হাদিস উল্লেখ্য করা হয়।

২৮- আমাদের মুহাম্মাদ ইবনুল হাজ্জাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আলি বিন মা'বাদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের ঈসা বিন ইউনুস বর্ননা করেছেন আল-আহওয়াদ্ব বিন হাকিম হতে তিনি রাশিদ বিন সা'দ হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন, নবি ﷺ বলেছেন : পানিকে কোনো বস্ত নাপাক করতে পারেনা। তবে যে বস্ত এর রঙ বা স্বাদ বা গন্ধের উপর প্রবল হয়ে যায়। [15][16]

তাহলে উত্তরে বলা হবে : এই হাদিসটির সনদ মুনকাতি (বিচ্ছিন্ন) [16] আর আপনারাও মুনকাতি হাদিসকে স্বিকৃতি দেন না, প্রমান হিসেবেও পেশ করেন না। আর যদি আপনারা তার (ﷺ) উক্তি "দুই কুল্লা" দ্বারা বিশেষ ধরনের মটকা বুঝানো হয়েছে বলে দাবি করেন তাহলে অন্যের জন্যও পানিতে বিশেষ ধরনের পানি বুঝানো হয়েছে বলা বৈধ হবে এবং তার নিকট এটি প্রথমোক্ত রিওয়ায়াতসমুহের মর্মেই অনুকূলেই হবে,বিপরীত হবেনা।

বস্তুত প্রথমোক্ত রিওয়ায়াতসমুহ যা স্থির পানিতে পেশাব করা এবং সেই পাত্রের পানি নাপাক হয়া সম্পর্কে ব্যাক্ত হয়েছে যাতে বিড়াল মুখ দিয়েছে অনেক ব্যাপক এবং এতে পানির পরিমান উল্লিখিত হয়নি। তাই ওগুলো দ্বারা সেই পানি বুঝানো হয়েছে, যা প্রবাহিত নয়। অতএব এতে প্রমানিত হলো "হাদীসে কুল্লাতায়ন" এ সেই পানির কথা উল্লেখিত হয়েছে যা প্রবাহিত। এতে পানির পরিমানের দিকে দৃষ্টি দেয়া হবেনা। যেমনিভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়না সেইসমস্ত পানির কোনটিতে যা আমরা পুর্বে উল্লেখ্য করেছি। এভাবে এই অনুচ্ছেদে বর্নিত কোনো হাদিস এবং পুর্বে উল্লেখিত হাদিসের মর্ম পরস্পরবিরুধি থাকেনা। এবং এটিই হচ্ছে আবু-হানিফাহ, আবু-ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহিমাহুমুল্লাহ) এর মতামত।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের পুর্ববর্তী [17] থেকেও এরুপ হাদিস বর্নিত আছে। যা তাদের মাযহাবের [18] অনুকূলে। এগুলো নিম্নরুপ :

২৯- আমাদের সালিহ বিন আব্দুর-রহমান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সাইদ বিন মানসুর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হুশাইম বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মানসুর বর্ননা করছেন আতা হতে, তিনি (আত) বলেছেন : এরপর জৈনিক হাবশী ব্যাক্তি যমযম কুয়োয় পতিত হয়ে মৃত্যুবরন করে। তারপর ইবনুয-যুবাইর নির্দেশ দিলে এর পানি বেড় করা হয়। কিন্ত পানি শেষ হয়েছিলনা। দেখা গেল হাজরে আসওয়াদ এর দিক থেকে একটি পস্রবন প্রবাহিত হচ্ছে। পরে ইবনুয-যুবাইর বলেন : তোমাদের জন্য এতটুকুই যথেস্ট।

৩০- আমাদের হুসাইন বিন নাসর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-ফিরইয়াবী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাকে জাবির জানিয়েছন আবুত-তুফাইল হতে যে তিনি বলেছেন, একবার এক বালক যমযম কুপে পড়ে মারা গিয়েছিল। তখন এর সমস্ত পানি বেড় করে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

৩১-আমাদের মুহাম্মাদ বিন খুযায়মাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাজ্জাজ ইবনুল মিনহাল বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন আতা ইবনুস সাইব হতে তিনি মাইসারাহ হতে বর্ননা করেছেন যে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন : এক কুয়োয় ইদুর পড়ে মারা গিয়েছিল। তিনি বললেন : এর পানি বেড় করে ফেলে দিতে হবে।

৩২- আমাদের মুহাম্মাদ বিন হুমাইদ বিন হিশাম আর-রু'আঈনি বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আলি বিন মা'বাদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুসা বিন আ'ইয়ুন বর্ননা করেছেন আতা হতে তিনি মাইসারাহ ও যাযান হতে উনারা (দুজন) আলি হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন : যখন ইদুর বা অন্য কোনো প্রানী কুয়োয় পড়ে যায় তখন এর পানি বেড় করতে থাকো, যতক্ষন না পানি তোমার উপর প্রবল হয়ে যায় (তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়ো)

৩৩- আমাদের মুহাম্মাদ বিম খুযায়মাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাজ্জাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বর্ননা করেছেন আবুল-মিহযাম হতে যে তিনি বলেছেন : আমরা আবু-হুরাইরাহকে সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, যে কোন জলাশয় বা পুকুরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে, সে কি তাতে পেশাব করতে পারবে? তিনি বললেন : না, যেহেতু সেখান দিয়ে তার মুসলিম ভাই অতিক্রম করে। সে তা থেকে পান করতে এবং ওযু করতে পারে। আর তা যদি প্রবাহিত হয়, তাহলে সে তাতে ইচ্ছা করলে পেশাব করতে পারে।

৩৪- আমাদের মুহাম্মাদ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাজ্জাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বর্ননা করেছেন আইয়ুব হতে তিনি মুহাম্মাদ হতে তিনি আবু-হুরাইরাহ হতে অনুরুপ বর্ননা করেছেব

৩৫- আমাদের আবু-বাকারাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-আমের আল-আকদী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বর্ননা করেছেন যাকারিয়া হতে তিনি আশ-শু'বী হতে পাখি, বিড়াল এবং অনুরুপ প্রানির বিষয়ে রিওয়ায়াত করেছেন যে, যদি কুয়োয় পতিত হয়, তাহলে এর থেকে চল্লিশ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।

৩৬- আমাদের হুসাইন বিন নাসর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-ফিরইয়াবি বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বর্ননা করেছেন জাকারিয়া হতে তিনি আশ-শু'বী হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন :  তা থেকে চল্লিশ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।

৩৭- আমাদের সালিহ বিন আব্দুর-রহমান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সাইদ বিন মানসুর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হুশাইম বর্ননা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন সাবুরাহ আল-হামদানী হতে তিনি আশ-শু'বী হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন : তা থেকে সত্তর বালতি (পানি) তুলে ফেলতে হবে।

৩৮- আমাদের ফাহদ বিন সুলাইমান বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুহাম্মাদ বিন সাইদ আল-আসবাহানী বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাফস বিন গিয়াস আন-নাখঈ বর্ননা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন মাইসারাহ আল-হামদানী হতে তিনি আশ-শু'বী হতে বর্ননা করেছেন যে তিনি বলেছেন : আমরা তাকে মুরগির ব্যাপারে জিগ্যাস করেছি যা কুয়োয় পড়ে মারা যায়। তিনি বললেন, তা থেকে সত্তর বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।

৩৯-আমাদের সালিহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সাইদ বিন সাইদ বিন মানসুর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হুশাইম বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের মুগিরাহ বর্ননা করেছেন ইব্রাহিম হতে সেই কুয়ো সম্পর্কে বর্ননা করেন, যাতে বড় ইদুর বা বিড়াল পড়ে গিয়ে মারা যায়। তিনি বললেন, এর থেকে চল্লিশ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে। মুগিরাহ বললেন : যতক্ষন না পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায়।

৪০-আমাদের মুহাম্মাদ বিন খুযায়মাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাজ্জাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আবু-আওয়ানাহ বর্ননা করেছেন আল-মুগিরাহ ও ইব্রাহিম হতে  কুয়োয় পড়ে যাওয়া ইদুর সম্পর্কে যে, এর থেকে চল্লিশ বালতি পরিমাণ পানি তুলে ফেলতে হবে।

৪১- আমাদের হুসাইন বিন নাসর বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের আল-ফারইয়াবি বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের সুফিয়ান বর্ননা করেছেন আল-মুগিরাহ হতে তিনি ইব্রাহিম হতে কুয়োয় পড়ে যাওয়া ইদুর সম্পর্কে, যে এর থেকে কয়েক বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।

৪২- আমাদের ইবন খুযায়মাহ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হাজ্জাজ বর্ননা করে বলেছেন যে আমাদের হামমাদ বিন সালামাহ বর্ননা করেছেন হামমাদ বিন আবি-সুলাইমান হতে যে তিনি মুরগির ব্যাপারে বলেছেন, যা কুয়োয় পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে। তিনি বলেন : চল্লিশ অথবা পঞ্চাশ বালতি পরিমান পানি তুলে ফেলতে হবে। তারপর এর থেকে উযু করবে।

বিশ্লেষন :

বস্তত এটি সেই সমস্ত রিওয়ায়াত যা আমরা সাহাবা(রা) ও তাবেঈদের থেকে বর্ননা করেছি। তারা নাজাসাত পতিত হয়ার দ্বারা কুয়োর পানিকে নাপাক সাব্যস্ত করেছেন। এর (নাজাসাতের) কম ও বেশি হয়ার প্রতি লক্ষ্য করেন না,বরং লক্ষ্য করেন এর অবস্থান ও স্থিতির প্রতি, তারা এর এবং প্রবাহমান পানির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। অতএব কুয়োয় নাজাসাত পতিত হয়া সম্পর্কে আমাদের (হানাফি) আলিমগন পুর্বে উল্লিখিত সেই সমস্ত রিওয়ায়াত যা আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ননা করেছি, গ্রহন করে নিয়েছেন। সুতরাং তাদের জন্য সেইসমস্ত রিওয়ায়াতের বিরোধিতা করা বৈধ হবেনা, যেহেতু কারো থেকে পরিপন্থী বর্ননা নেই।

কেও যদি প্রশ্ন উথাপন করে বলে যে, তোমরাত নাজাসাত পতিত হয়ার কারনে কুয়োর পানিকে নাপাক সাব্যস্ত করেছ। অতএব তোমাদের কুয়ো কখনও পাক হবেনা। যেহেতু এর অপবিত্র পানি এর দেয়ালে মিশে গিয়েছে এবং তাতে স্থির রয়ে গিয়েছে। সুতরাং (কুয়ো পাক করতে হলে) দেয়াল ভেংগে ফেলা উচিত।

উত্তরে তাকে বলা হবে : তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে, এই রিতীই প্রচলিত আছে। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা) নবি ﷺ এর সাহাবিগনের উপস্থিতিতে যমযম কুয়োর ব্যাপারে তাই করেছেন, যা আমরা উল্লেখ্য করেছি। এতে তাদের কেও তার প্রতিবাদ করেন নি এবং তাদের পরবর্তিগনও তার প্রতিবাদ করেন নি। আর কেও তা ভেংগে ফেলা (বন্ধ করে দেয়া) আবশ্যক মনে করেন না এবং রাসুললুল্লাহ ﷺ সেই পাত্র তা ধৌত করারই নির্দেশ দিয়েছেন,যা কুকুর মুখ দেয়ার কারনে নাপাক হয়ে গিয়েছে। তিনি তা ভেংগে ফেলার নির্দেশ দেন নি। অথচ তা কিছু না কিছু নাপাক পানি চুষে নিয়েছে। অতএব যেমনিভাবে সেই পাত্র ভেংগে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়নি, অনুরুপভাবে উক্ত কুয়ো ভেংগে ফেলার (বন্ধ করে দেয়ার) নির্দেশ দেয়া যাবেনা।

যদি কেও কোনো প্রশ্ন উথাপন করে বলে যে, আমরা দেখতে পাচ্ছি পাত্র তা ধৌত করা হয়, তাহলে কুয়োর ক্ষেত্রে এরুপ করা হয়না কেন? 

উত্তরে তাকে বলা হবে, কুয়া ধৌত করা যায়না। যেহেতু এর যা কিছু ধৌত করা হবে তা তাতেই ফিরে পড়বে। এটি পাত্রের ন্যায় নয় যে যা দ্বারা[19] ধৌত করা হয় তা ভাসিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং যখন কুয়া সেই সমস্ত বস্ত থেকে ধৌত করা সম্ভব নয় এবং এর পবিত্রতা কোনো না কোনোভাবে প্রমানিত ; যেহেতু যে ব্যাক্তি কুয়োয় নাজাসাত পতিত হয়ার কারনে একে নাপাক সাব্যস্ত করে সে এর পবিত্র হওয়ার জন্য পানি তুলে ফেলা আবশ্যক মনে করে। যদিও এর কাদা (মাটি) বেড় করা না হয়। অতএব যখন এর কাদা (মাটি) অবশিষ্ট থাকায় পরবর্তিতে আগত পানিকে নাপাক মনে করেনা। যদিও পানি ওই কাদার উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে এই অবস্থায় দেয়ালসমুহ নাপাক না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আর যদি ব্যাহ্যিক অর্থের দিকে লক্ষ্য করা হত,তাহলে যতক্ষন পর্যন্ত এর দেয়ালসমুহ ধৌত করা না হত কাদা (মাটি) বেড় না করা হত এবং একে খনন করা না হত,কুয়ো পবিত্র হতোনা। সুতরাং যখন ফকিহ আলিমগন ঐক্যমত পোষন করেছেন যে,এর কাদা(মাটি) বের করে ফেলা এবং একে খনন করা আবশ্যক নয়, তাহলে দেয়ালসমুহ ধৌত করা ওয়াজিব না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। এগুলৌই ইমামা আবু-হানিফা, আবু-ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহিমাহুল্লাহ) এর অভিমত।

[আলোচনা সমাপ্ত ]


পরিমার্জনকারীর টিকা :

[1]বী'রে বুযা'আ - মানে হলো "বুযাআ কুপ"। বীর'র অর্থ হলো "কুপ", এবং "বুযা'আ" হলো একটি (কুপের) নাম।

[2]বুয'আ কুপের পানির ক্ষেত্রে প্রায় সকল আলেমই রং, স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তিত হয়া না হয়ার ব্যাপারটিকে উল্লেখ্য করেছেন,বিবেচনায় এনেছেন, এই তিনটি বিষয়ের আলোকে বুয'আ কুপের পানির হাদিসটিকে ব্যাখ্যা করেছেন, বুঝেছেন।উনারা বলেছেন যে বুয'আ কুপের রঙ স্বাদ ও গন্ধের মধ্যে কোনো পরিবর্তন এসেছিলনা, যার ফলে তা রাসুল ﷺ এর নিকট পাক ছিল। "যা কিছু তোমরা উল্লেখ্য করেছ " বলতে এটাই উদ্দেশ্য।

[3] এটা কোন ধরনের কুপ বা জলাশয় ছিল তা নিয়ে মতভেদ হয়েছে।

[4]অনুরুপ বলেছেন : আল-আইনী,মোগলতাঈ,আয-যুবাইদী,আল-কাশ্মিরী,আত-তাইবী, আল-কারী, আস-সাহারানপুরী,ইমাম মালেক,আল-বাবরাতী, আল-মারগিনানী, আস-সাগানাকী, আস-সারখাসী, ইবন নাজিম, আল-কুদুরী,আল-ওয়াকিদী,আব্দুলহক্ক আদ-দেহলভী,আল-ফাত্তানী (*)

(*)নাখবুল আফকার (1/69-70),শারহু ইবন মাজাহ (পৃ/554),তাখরিজ আহাদিসে ইহইয়া উলুমিদ্দিন (1/288),ফুতুহুল গাইব (1/254),ফায়যুল বারি (2/451),মিরকাতুল মাফাতিহ (2/451),আল-ইনায়াহ (1/75),আন-নিহায়াহ (1/94),আল-মাবসুত লিসসারখাসী (1/52)
,আল-বিনায়াহ (1/375),আল-বাহরুর রাইক (1/83),আত-তাজরিদ (1/298),আল-হিদায়াহ (1/21),লাম'আতুত তানকিহ (2/207), মাজমায়ু বাহারিল আনওয়ার (1/617),

[5]আল-ওয়াকিদী হাদিসের ক্ষেত্রে যইফ, মাতরুক মিথ্যাবাদী হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি মহাজ্ঞানিদের একজন ছিলেন। (*) বুয'আ কুপ সম্পর্কে উনার এই বক্তব্যটি হাদিস সক্রান্ত কোনো বিষয় নয়। কাজেই এক্ষেত্রে উনার উপর নির্ভর করা যেতে পারে।

(*)https://www.islamweb.net/ar/fatwa/256546/

[6]শারহু মা'আনিঈল আছারের মুল আরবিতে আছে "أجمعوا", অর্থাৎ এখানে "ঐক্যমত পোষন" বলতে "ইজমায় উপনিত হয়া" উদ্দেশ্য।

[7]ইবনুল মুনযির "আল-ইজমা"(পৃ/11) তে বলেছেন : "আহলুল-ইলম ইজমায় উপনিত হয়েছেন যে কম বা বেশি পানিতে যদি নাপাকি পতিত হয়, এবং এরফলে পানির স্বাদ বা রঙ বা গন্ধে পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে যতক্ষন পর্যন্ত এই পরিবর্তন থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত পানিটি নাপাক "।

[8]প্রবাহমান পানি কখনো স্থির থাকেনা।

[9]প্রকৃতপক্ষে মানুষ এসে ইচ্ছাকৃতভাবে বুয'আ কুপে এগুলা ফেলতনা বরং বুয'আ কুপ কিছুটা ঢালু ভুমিতে ছিল, যার ফলে বৃষ্টির পানিতে উসব আবর্জনা ভেসে এসে বুয'আ কুপে মিলিত হতো। প্রায় সকল মুহাদ্দিসরাই এব্যাপারে একমত।

[10]রাসুল ﷺ বলেছেন : "নিশ্চই আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মতকে ভুলের উপর ইজমায় উপনিত হয়া থেকে রক্ষা করেন "।(*) রাসুল ﷺ বলেছেন : "অবশ্যই আমার উম্মত ভুলের উপর ইজমায় উপনিত হবেনা "(^)। রাসুল ﷺ বলেছেন : "আমি আল্লাহর নিকট অনুরোধ করলাম যে তিনি যেন কখনৌই আমার উম্মতকে ভুলের উপর ইজমায় উপনিত হতে না দেন, আল্লাহ আমার এই অনুরুধ কবুল করেছেন " (~)

(*) আল-জামিউস সহিহ (4/242),সহিহুল জামে (1786),সিলসিলাতুস স-সাহিহাহ (1331), যিলালুল জান্নাহ (82)

(^) মুস্তাদরাকুল হাকেম (1/201)।ইবন হাজার আল-আসকালানী (রহ) "মুয়াকাফাতুল খবার"(1/105) এ এই হাদিস সম্পর্কে বলেছেন : "
قلت: هو حديث مشهور المتن، له أسانيد كثيره من رواية جماعة من الصحابة بألفاظ مختلفة
আমি বলব : হাদিসটির মতন মশহুর, এর প্রচুর সনদ আছে, এটি সাহাবিদের একটি জামাত হতে বিভিন্ন শব্দে-বাক্যে বর্নিত হয়েছে।

(~) মুসনাদ আহমাদ - রিসালাহ (45/200), মুহাক্কিক শুয়াইব আল-আরনাওত ও আদিল মুরশেদ এই হাদিস সম্পর্কে (45/200 এর 3 নং) টিকায় বলেন : "صحيح لغيره" (সহিহ লিগাইরিহ)

[11]অর্থাৎ সেই আবর্জনাগুলোর কারনে বুয'আ কুপের পানির রঙ বা স্বাদ বা গন্ধে কোনোরুপ পরিবর্তন দেখা যায়নি।

[12]আল-আইনী "আল-বিনায়াহ (1/375)" তে ও আল-খাযারজী আল-মানজাবী "আল-লুবাব ফিলজামা'আ (1/62)" তে এর সমর্থন দিয়েছেন।

[13]অর্থাৎ প্রবাহিত পানি (ماء جاري) ও স্থির পানির (ماء دائم) মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এদুই ধরনের পানিকে আলাদা আলাদা ভাবে বিবেচনা করেছেন।

[14]ইমাম আত-তাহাবী উনার এই কথা অনুযায়ি পড়ে এসক্রান্ত হাদিস বর্ননা করেছেন।দেখুন : "আলিমুল কুতুব" প্রকাশনি হতে প্রকাশিত ইমাম আত-তাহাবির "শারহু মা'আনিয়িল আছার" গ্রন্থের প্রথম খন্ডের পৃষ্ঠা 21-22, এবং "শারহু মা'আনিয়িল আছার" এর ইফা: হতে প্রকাশিত বাংলা অনুবাদ "তাহাবী শরিফ" এর প্রথম খন্ডের পৃষ্ঠা নম্বর 35।

[15]=(তাহলে তা নাপাক হয়ে যাবে)

[16]হাদিসটিতে যা বলা হয়েছে, সেটা গ্রহন করার ও সঠিক হয়ার উপর ইজমা আছে। কিন্ত হাদিস হিসেবে এই কথাটি প্রমানিত নয় বরং "যইফ"। হাদিসটি সকল মুহাদ্দিসসের ঐক্যমতে যইফ, অগ্রহনযোগ্য, দলিলযোগ্য নয়। হাদিসটি যইফ হিসেবে গন্য করেছেন : আন-নববী, আশ-শাফেঈ,আহমাদ, আবু-হাতেম, আদ-দারাকুতনী,আল-বায়হাকী,আল-গাসসানী,ইবন কাসির, আয-যাইলাঈ,মোগলতাঈ, ইবন-আবিল-ইযয আল-হানাফী, ইবনুল মুলাক্কিন, আল-ইরাকী, আল-হাইছামী, আল-বাওসিরী, ইবন হাজার, আল-মিনাওই, আল-আলবানী। {দেখুন : দিওয়ানুস সুন্নাহ কিসমুত তাহারাহ (1/318)}

[17] পুর্ববর্তী বলতে সাহাবি ও তাবেঈ রা উদ্দেশ্য।

[18]অর্থাৎ তাদের এই মতামতের।

[19]"যা দ্বারা" অর্থাৎ "যেই পানির দ্বারা"