Are you sure?

হাদিস »  বিবিধ

মাজহুলুল আইন রাবির বর্নিত হাদিসের হুকুম।

 

"যেই রাবির নিকট হতে শুধুমাত্র একজন ছাত্র হাদিস বর্ননা করেছে, সেই রাবিকে হাদিসশাস্ত্রের পরিভাষায় مجهول العين (মাজহুলুল আইন) বলা হয় " [1] 

 

মাজহুলুল আইন রাবির বর্নিত হাদিসের হুকুম সম্পর্কে উলামাদের মাঝে মতভেদ ঘটেছে। এব্যাপারে মোট ৫ টি মত রয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ্য করা হলো : _[2] 

 

(১) তা (কোনোক্ষেত্রেই) গ্রহনযোগ্য হবেনা। 

 

(২) তা (সকলক্ষেত্রেই) গ্রহনযোগ্য হবে।

 

(৩) যেই ব্যাক্তি মাজহুলুল আইন রাবিটির নিকট হতে একা হাদিস বর্ননা করেছেন, তিনি যদি এমন কোনো মুহাদ্দিস হয়ে থাকেন যিনি নির্ভরযোগ্য রাবি ব্যাতিত অন্য ধরনের রাবি হতে হাদিস বর্ননা করেন না ; তাহলে সেই মাজহুলুল আইন রাবির হাদিস গ্রহনযোগ্য হবে, অন্যথ্যায় তা গ্রহনযোগ্য হবেনা।

 

(৪) যদি মাজহুলুল আইন রাবিটি বিরত্ব কিংবা উত্তম চরিত্রের দরুন খ্যাতি লাভ করে থাকেন বা বিখ্যাত হয়ে থাকেন। তাহলে উক্ত মাজহুলুল আইন রাবির হাদিস গ্রহনযোগ্য হবে, অন্যথ্যায় তা গ্রহনযোগ্য হবেনা।

 

(৫) যদি মাজহুলুল আইন রাবিটিকে জারাহ তা'দিলের ইমামদের মধ্য হতে কেও প্রশংসা করে থাকেন, তাহলে উক্ত মাজহুলুল আইন রাবির হাদিস গ্রহনযোগ্য হবে, অন্যথ্যায় তা গ্রহনযোগ্য হবেনা।

 

 

উক্ত ৫ টি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মতটি হচ্ছে প্রথম মত। অর্থাৎ মাজহুলুল আইন রাবির হাদিস কোনো ক্ষেত্রেই গ্রহনযোগ্য হবেনা। 

 

বহু মুহাদ্দিস উল্লেখিত ৫ টি মতের মধ্য থেকে ১ম মতটিকে বিশুদ্ধ হিসেবে গন্য করেছেন। যেমন :

 

যাইনুদ্দিন আল-ইরাকী বলেছেন : 

 

مجهولُ العَيْنِ، وهو مَنْ لم يروِ عنه إلا راوٍ واحدٌ. وفيه أقوالٌ: الصحيحُ الذي عليه أكثرُ العلماءِ من أهلِ الحديثِ، وغيرِهم، أنّهُ لا يقبلُ [2]

 

মাজহুলুল আইন, তিনি হলেন এমন রাবি যার নিকট হতে শুধুমাত্র একজন বর্ননা করেছেন। এবং তার ব্যাপারে একাধিক মতামত (৫ টি মত) রয়েছে। এবং বিশুদ্ধ মত (যা অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের উলামা ও অন্যান্য উলামাদের মত) হলো এই যে তা গ্রহন করা হবেনা।

 

শামসুদ্দিন আল-বিরমাওই (মাজহুলুল আইন রাবির ব্যাপারে) বলেছেন : 

 

وحاصل الأقوال فيه خمسة: أحدها: وهو الصحيح الذي عليه أكثر العلماء من أهل الحديث وغيرهم أنه لا يُقبَل _[3] 

 

এবং তার ব্যাপারে মোট ৫ টি (যা উপরে উল্লেখ্য করা হয়েছে) মত রয়েছে। এর প্রথমটি হলো : যে তা গ্রহন করা হবেনা, এবং এটাই বিশুদ্ধ ও অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের উলামাগন ও অন্যান্য উলামাদের মত।

 

জালালুদ্দিন আস-সুয়ুতী (মাজহুলুল আইন রাবির ব্যাপারে) বলেছেন : 

 

وَرَدُّهُ هُوَ الصَّحِيحُ الَّذِي عَلَيْهِ أَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ مِنْ أَهْلِ الْحَدِيثِ، وَغَيْرِهِمْ [4] 

 

এবং সেটাকে (মাজহুলুল আইনের হাদিসকে) প্রত্যাখ্যান করাটাই বিশুদ্ধ ও অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের উলামাগন ও অন্যান্য উলামাগন এই মতই দিয়েছেন।

 

বুহরানুদ্দিন আল-আবনাসী (মাজহুলুল আইন রাবির ব্যাপারে) বলেছেন : 

 

وهو مجهول العين الذي لم يرو عنه إلا راو واحد وفيه خمسة أقوال أصحها وعليه الأكثر أنه لا يقبل[5] 

 এবং তিনি মাজহুলুল আইন, যার নিকট হতে শুধুমাত্র একজন বর্ননা করেছেন। তার ব্যাপারে ছয়টি মত আছে (যা উপরে উল্লেখিত হয়েছে)। এবং ছয়টির মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও অধিকাংশের মত হলো এই যে তা গ্রহন করা হবেনা। 

 

ইবন আম্মার আল-মালিকী (মাজহুলুল আইন রাবির ব্যাপারে) বলেছেন : 

 

هذا القسم فيه أقوال، والصحيح الذي عليه أكثر العلماء من أهل الحديث وغيرهم أنه لا تقبل [6]

 

এই প্রকারটির ব্যাপারে (মাজহুলুল আইন হলো মাজহুল রাবিদের একাধিক প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকার) একাধিক মতামত আছে, এবং বিশুদ্ধ ও অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের উলামা ও অন্যান্য উলামাদের মত হলো এই যে তা গ্রহন করা হবেনা।

 

 

ইযযুদ্দিন আস-সান'আনী বলেছেন : 

 

وهو "مجهول العين و" حقيقته "هو من لم يرو عنه إلا راو واحد وفيه" أي في الحكم فيه خمسة "أقوال": الأول: أن "الصحيح الذي عليه أكثر العلماء من أهل الحديث وغيرهم أنه لايقبل [7] 

 

এবং তা হলো "মাজহুলুল আইন ", এবং এর বাস্তবতা হচ্ছে "তিনি, যার নিকট হতে শুধুমাত্র একজন বর্ননা করেছেন"। তার হুকুমের ব্যাপারে ৫ টি মত রয়েছে। এবং প্রথমটি হলো এই যে তা গ্রহন করা হবেনা, এবং এটাই হলো বিশুদ্ধ মত, যা অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের উলামা ও অন্যান্য উলামাদের মত।

 

মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আও-ওয়াযির (মাজহুলুল আইনের ব্যাপারে) বলেছেন : 

 

الصحيح الذي عليه أكثر العلماء من أهل الحديث وغيرهم أنه لا يقبل. [8] 

 

এবং বিশুদ্ধ ও অধিকাংশ হাদিসশাস্ত্রের ও অন্যান্য উলামাদের মত হলো এই যে তা গ্রহন করা হবেনা। 

 

 

প্রমানসমুহ : 

 

[1]ইবন হাজার, নুখবাতুল ফিকার (পৃ/20)

 

[2]আল-ইরাকী, শারহু আলফিয়াতিল ইরাকী (1/350-351) 

 

[3]আল-বিরমাওই, আল-ফাওয়াইদুস সুন্নিয়াহ (2/643) 

 

[4]আস-সুয়ুতী, তাদরিবুর রাওই (1/373)

 

[5]আল-আবনাসী, আশ-শাযাল ফায়াহ (1/248) 

 

[6]ইবন আম্মার, মিফতাহুস সায়িদিয়াহ (পৃ/192) 

 

[7]আস-সান'আনী,তাওদ্বিহুল আফকার (2/115)

 

[8]আল-ওয়াযির, আত-তানকিহ (পৃ/198)