Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও উম্মু কুলসুম বিনত আলি (রহিমাহাল্লাহ) এর বিয়ে সম্পর্কিত তিনটি তথ্যের তাহকিক



বিষয় : উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও উম্মু কুলসুম বিনত আলি (রহিমাহাল্লাহ) এর বিয়ে সম্পর্কিত তিনটি তথ্যের তাহকিক

লেখক : সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

**************************************

তথ্য - এক : উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) যখন আলি (রা) এর কন্যা উম্মু কুলসুম (রহ) কে বিয়ে করেন তখন উম্মু-কুসলুম (রহ) একজন "শিশু" ছিলেন।

গ্রহনযোগ্যতা যাচাই  : এই তথ্যটি বিভিন্ন বর্ননায় পাওয়া যায়, এই তথ্য সংবলিত একটা বর্ননাও নির্ভরযোগ্য নয়। নিম্নে উক্ত তথ্যটির বিস্তারিত তাহকিক উল্লেখ্য করা হলো,

ইবন সা'দ, "আত-তাবাকাতুল কুবরা"(10/430) ও ইবনে সা'দের সুত্র ধরে ইবন আসাকির তার "তারিখ" (19/485) এ উক্ত তথ্য সংবলিত একটি বর্ননা "মুহাম্মাদ বিন উমার" সহ আরো কয়েকজন হতে উল্লেখ্য করেছেন। মুহাম্মাদ বিন উমার ও অন্যান্যরা উক্ত বর্ননার সনদকে সম্পুর্নরুপে বাদ দিয়ে বর্ননা করেছেন, এভাবে কোনো বর্ননার সনদের রাবিদের বিলুপ্ত করে দিলে সেই বর্ননাকে "معضل" (মু'যাল) বলা হয় [আল-মা'রেফাহ ফি উলুমিল হাদিস পৃ/(39)]। এবং "(মু'যাল)" বর্ননার হুকুম হলো এই যে তা "যইফ" [আল-কিফায়াহ (পৃ/21),তাদরিবুর রাওই (1/295)]

আল-হাইসাম বিন কুলাইব তার "মুসনাদ" এ [যেমনটা ইবন কাসির 'মুসনাদুল ফারুক'
(2/122) এ বলেছেন ], তার সুত্র ধরে আল-মাকদেসী "আল-মুখতারাহ"(1/398) এ,আবার
আল-কাতিয়িঈ তার "যাওয়াইদ"(2/626) এ ও আল-কাতিয়িঈর সুত্র ধরে আবু-নুয়াইম "মারেফাতুস সাহাবাহ"(1/56) তে, ও আহমাদ "ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ"(2/626)- শারিক বিন আব্দুল্লাহ আন-নাখঈ এর সুত্রে আল-মুস্তাযিল বিন হুছাইন হতে এই তথ্য সংবলিত একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন। "শারিক বিন আব্দুল্লাহ আন-নাখঈ " হাদিস বর্ননায় প্রচুর ভুল করতেন [আত-তাকরিব (রাবি/2802)]। এবং মুস্তাযিল বিন হুছাইন একজন "মাজহুল"। সুতরাং এই বর্ননাও যইফ।

আল-আজিরী "আশ-শারিয়াহ"(5/2329-2330) এ হিশাম বিন সা'দ এর সুত্র ধরে আতা আল-খোরাসানী হতে বর্ননা করেছেন। আতা, উমার (রা) কে পাননি, যার অর্থ উক্ত সনদে ইনকিতা আছে ও সনদটি মুনকাতিঈ। আর মুনকাতিঈ বর্ননার হুকুম হলো তা যইফ [মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/789)]। আবার হিশাম বিন সা'দ হলো "যইফ রাবি"
[তাহরিরুত তাকরিব (4/39)]। সুতরাং এই বর্ননাটিও যইফ। আল-আজিরী তার "আশ-শারিয়াহ " (5/2328) তে মুহাম্মাদ বিন আলহুসাইন হতে উক্ত তথ্য সংবলিত একটি বক্তব্য উল্লেখ্য করেছেন, যা সনদহীন, সনদহীন বক্তব্য নির্ভরযোগ্য নয়।

আল-বায়হাকী "আস-সুনানুল কুবরা"(7/185) এ ও আত-তাবারানী "আল-আওসাত"
(6/357) এ সুফিয়ান বিন ওয়াকিঈ এর সুত্রে একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন। সুফিয়ান বিন ওয়াকিঈ হলেন একজন "যইফ রাবি" [তাহরিরুত তাহযিব (2/52)]

আব্দুর-রাজ্জাক "মুসান্নাফ"(হা/10354) এ ইকরামাহর সুত্র ধরে এই তথ্য সংবলিত একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন। ইকরামাহ, উমার (রা) কে পান নি, যার অর্থ উক্ত সনদে ইনকিতা আছে ও সনদটি মুনকাতিঈ। আর মুনকাতিঈ বর্ননার হুকুম হলো তা যইফ [মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/789)]।

ইবন ইসহাক "সিরাত"(পৃ/248) এ ও আদ-দাওলাবী "আয-যারিয়াহ" (পৃ/114) তে "ইউনুস বিন বুকাইর " এর সুত্রে একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন।  "ইউনুস বিন বুকাইর " একজন ক্রুটিপুর্ন রাবি [আত-তাকরিব (রাবি/7900)]। সুতরাং এই বর্ননাটিও ক্রুটিপুর্ন।

এই বর্ননাগুলো আরো বহু লেখক,মুহাদ্দিস,ইতিহাসবিদ সনদ ধরে উল্লেখ্য করেছেন, এখানে সবার নাম উল্লেখ্য করা হয়নি। তবে সবার বর্নিত সনদই ঘুরে ফিরে আলোচ্য  সুত্রসমুহ পর্যন্ত এসে মিলিত হয়েছে।

তথ্য-দুই : উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) যখন উম্মু কুলসুম বিনত আলি (রহ) এর সাথে বিয়ের পুর্বে উম্মু কুলসুমকে বিয়ের জন্য দেখতে আসেন। উম্মু-কুলসুম উঠে দাড়ালেন, তখন উমার (রা) উম্মু কুলসুমের (রহ) এর হাটুর অঞ্চল হতে কিছু কাপড় সরান, তাকে ডেকে চুম্বন করেন ও এতে উম্মু কুলসুম (রহ) উমার (রা) এর প্রতি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন ও উমারকে (রা) ঘাড়ে থাপ্পড় মারার ও নাক ফাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ও নিজ পিতা আলি (রা) এর নিকট গিয়ে উমার (রা) কে একজন "খারাপ বুড়োলোক " বলে নালিশ করেন ও অন্যান্য অভিযোগ করেন। এবং তখন উম্মু কুলসুম (রহ) একজন কমবয়সি মেয়ে ছিলেন এবং তারপর উমার (রা) এর সাথে তার বিয়ে হয়।

গ্রহনযোগ্যতা যাচাই  : এই তথ্যটি একাধিক বিভিন্ন বর্ননার স্বমন্বয়ে গঠিত। এবং এসব বর্ননার একটাও গ্রহনযোগ্য নয়, সবগুলৌই যইফ। নিম্নে উক্ত তথ্যটির বিস্তারিত তাহকিক উল্লেখ্য করা হলো,

আল-খাতিব তার "তারিখ" (6/182) এ  সনদ ধরে একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন, যার সনদে "ইব্রাহিম বিন মাহরান বিন রুস্তম" নামক একজন রাবি আছেন, ইবন আদি "আল-কামিল"(1/437) এ তাকে "মুনকারুল হাদিস" বলেছেন। সুতরাং এটি একটি অগ্রহনযোগ্য বর্ননা।

আব্দুর-রাজ্জাক "মুসান্নাফ"(6/163) এ, ও সাইদ বিন মানসুর "সুনান"(1/173) এ একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন আবু-জা'ফার হতে, আবু-জা'ফার, উমার(রা) বা আলি (রা) কে পান নি। যার অর্থ উক্ত সনদে ইনকিতা আছে ও সনদটি মুনকাতিঈ। আর মুনকাতিঈ বর্ননার হুকুম হলো তা যইফ [মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/789)]।

এইমর্মে আয-যুবাইর বিন বাক্কার এর একটি বর্ননা আছে। যা "জামহারাতু নাসবে কুরাইশ ও আখবারিহা "(2/782) এ উল্লেখিত আছে। আয-যুবাইর এর সুত্র ধরে ইবন আসাকির তার "তারিখ"(19/483) এ ও ইবনুল যাওযি "আল-মুন্তাযিম"(4/237) এ বর্ননাটি উল্লেখ্য করেছেন। আয-যুবাইর বিন বাক্কার উক্ত বর্ননার সনদকে সম্পুর্নরুপে বাদ দিয়ে বর্ননা করেছেন, এভাবে কোনো বর্ননার সনদের রাবিদের বিলুপ্ত করে দিলে সেই বর্ননাকে "معضل" (মু'যাল) বলা হয় [আল-মা'রেফাহ ফি উলুমিল হাদিস পৃ/(39)]। এবং "(মু'যাল)" বর্ননার হুকুম হলো এই যে তা "যইফ" [আল-কিফায়াহ (পৃ/21),তাদরিবুর রাওই (1/295)]

আব্দুর-রাজ্জাক "মুসান্নাফ" (হা/10353) এ "আল-আ'মাশ " হতে একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন। আল-আ'মাশ, উমার (রা) কে পান নি। যার অর্থ উক্ত সনদে ইনকিতা আছে ও সনদটি মুনকাতিঈ। আর মুনকাতিঈ বর্ননার হুকুম হলো তা যইফ [মুজামুল মুস্তালাহাতিল হাদিসিয়াহ (পৃ/789)]।

ইবন বাশকাওয়াল "গাওয়ামিযুল আসমা"(2/787) এ "আহমাদ বিন ফিরাস" হতে "আব্দুর-রহমান বিন আব্দিল্লাহ বিম মুহাম্মাদ বিন ইয়াযিদ আল-মুকরী" হতে বর্ননা করেছেন। তাদের উভয়েই মাজহুলুল হাল,এবং মাজহুলুল হাল রাবির হাদিস যইফ। এবং ইবন বাশকাওয়াল "গাওয়ামিযুল আসমা"(2/787) এ "মুহাম্মাদ বিন আহমাদ" এর সুত্র ধরে একটি বর্ননা উল্লেখ্য করেছেন, এবং মুহাম্মাদ বিন আহমাদ হলেন "যইফ"[দিওয়ানুয যুয়াফা (রাবি/3573)]।

ইবন আব্দিল-বার "আল-ইস্তি'আব"(4/1955) এ "ইবন আবি উমার " এর সুত্র ধরে সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ হতে বর্ননা করেছেন। ইবন আবি উমার, সুফিয়ান হতে বর্ননা করার সময় গাফলতি করতেন, একবারত এমনো হয়েছে যে তিনি গাফলতিবশত একটা জাল হাদিসকে সুফিয়ান ইবন উয়াইনাহ হতে বর্ননা করে বসেছিলেন। [আল-জারাহ ওয়াত তা'দিল (8/124-125)], সুতরাং এটা নির্ভরযোগ্য নয়। "ইবন আবি উমার " এর সুত্র ধরে সুফিয়ান হতে এই বর্ননা ইবন হাজার "আল-ইসাবাহ"(8/293) এ উল্লেখ্য করেছেন।

এই বর্ননাগুলো আরো বহু লেখক,মুহাদ্দিস,ইতিহাসবিদ সনদ ধরে উল্লেখ্য করেছেন, এখানে সবার নাম উল্লেখ্য করা হয়নি। তবে সবার বর্নিত সনদই ঘুরে ফিরে আলোচ্য  সুত্রসমুহ পর্যন্ত এসে মিলিত হয়েছে।

তথ্য - তিন : "উমার (রা) উম্মু কুলসুম (রহ) এর সাথে ১৭ হিজরি সনে (৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে) বাসর করেন। "

গ্রহনযোগ্যতা যাচাই : এই তথ্যটির মুল উৎস হলো আল-ওয়াকিদীর বক্তব্য, আল-ওয়াকিদী এই তথ্যটা বলেছেন। আল-ওয়াকিদীর এই বক্তব্যটি আত-তাবারী তার "তারিখ"(4/69) এ, ইবন কাসির "আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ"(10/48) তে, ইবনুল আছির "আল-কামিল ফিত তারিখ"(2/361) এ উল্লেখ্য করেছেন, এছাড়াও আরো অনেক স্থানেই আল-ওয়াকিদীর বর্নিত উক্ত তথ্যটি বর্নিত হয়েছে। আল-ওয়াকিদী একজন "মাতরুক রাবি" (পরিতাজ্য রাবি) ছিলেন [আত-তাকরিব (রাবি/6175)]। কাজেই তার বক্তব্য নির্ভরযোগ্য উৎস নয়।