যদি প্রশ্ন করা হয় আল-কিন্দি কি মুসলিম ছিলেন? নাকি না?
তাহলে এর সহজ উত্তর হবে : হ্যা, তিনি মুসলিম ছিলেন।কেননা ইবন হাজার, ইবন তাইমিয়াহ, আয-যিরকিলী, ইবন হাজ্জাহ, ইবন আবি-উসাইবায়াহ, আস-সিফদী, আস-সুয়ুতী, আল-কিফতী, ইবন জুলজুল,আসামুদ্দিন, আবু-মু'শির, আশ-শাহরাস্তানী, ইবন নাবাতাহ, আল-কিন্দির সমসাময়িক সবাই সহ আরো অনেকেই আল-কিন্দিকে একদম সুস্পষ্টভাবে একজন "ইসলামের অন্তর্ভুক্ত দার্শনিক " হিসেবে গন্য করেছেন।[1]
উনার মুসলিম হয়াতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে উনার ক্ষেত্রে বেশকিছু সমালোচনা আছে যেগুলো দ্বারা উনার মুসলিম হয়া মোটেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়না।
সেই সমালোচনাগুলোর মধ্যে হতে প্রধান সমালোচনাগুলো উল্লেখ্য করে সেগুলোর পর্যালোচনা করা হলো।
উনার ব্যাপারে মুল সমালোচনা হলো এই ছয়টি : _[2]
(১) উনি দ্বীনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছিলেন।
(২) উনি গ্রিক দর্শন চর্চা করতেন ও এরদ্বারা তিনি প্রভাবিত ছিলেন।
(৩)উনার প্রচুর লেখাতে তিনি বিভিন্ন ভুলভাল বাতিল দৃষ্টিভংগি পোষন করেছেন ও বাস্তবতাবিরুধি মুলনিতী প্রনয়ন করেছেন।
(৪) তিনি লম্বা সময় যাবত কোর'আনের মত কিছু লিখার চেস্টা করেছিলেন, তবে শেষমেষ এটা স্বিকার করে নিয়েছিলেন যে কোর'আনের মত কোনোকিছু লেখা সম্ভব না।
(৫) উনি একজন দয়াহীন ও কৃপন মানুষ ছিলেন।
(৬) আল-কিন্দী গান-বাজনা নিয়ে বই লিখেছেন ও তিনি গানবাজনা শুনতেন।
পর্যালোচনা :
এসব অভিযোগের মধ্য হতে একটি দ্বারাও এটা প্রমানিত হয়না যে তিনি অমুসলিম ছিলেন। বরং এসব অভিযোগের দ্বারা বড়জোর এতটুকু প্রমানিত হয় যে তাঁর আকিদাহয় সমস্যা ছিলো এবং তিনি দ্বীনের প্রতি গাফেল ছিলেন।
দ্বীনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত হয়া আকিদাহতে সমস্যা ও দ্বীন মানার ক্ষেত্রে গাফলতি থাকাকে নির্দেশ করে, এরদ্বারা অমুসলিম হয়া বুঝায়না। গ্রিক দর্শন দ্বারা তিনি অনেকটাই প্রভাবিত ছিলেন, কিন্ত এতটাও না যে এরদ্বারা তাকে কাফের বলা যাবে, যদি তাই হতো তাহলে সবাই তাকে "ইসলামের দার্শনিক" হিসেবে গন্য করতেন না। তৃতীয় অভিযোগটি আল-গাযযালির উপরও করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগের ক্ষেত্রে বলব : মুল ঘটনাটা হচ্ছে অনেকটা এরকম যে : "একদা আল-কিন্দির কিছু ছাত্র তাকে কোর'আনের মত কিছু রচনা করতে বলেন। আল-কিন্দী এই কাজের জন্য অনেক লম্বা সময় নেন। এবং অনেকদিন পর তিনি এসে বলেন যে : আল্লাহর কসম, এইটা করা সম্ভব না "[2]। স্পষ্টতই, তিনি উক্ত চেস্টা হতে নিজেকে পরে রুজু করে নিয়েছিলেন।
দয়াহীন ও কৃপন হলে কেও অমুসলিম হয়ে যায়না। গানবাজনা হারাম, কেও হারাম কাজে লিপ্ত হলেই কাফের হয়ে যায়না।
প্রমানসমুহ :
[1]আল-ফাতাওয়াউল কুবরা (9/186),লিসানুল মিযান (8/531),আল-আ'লাম (8/195)
,ছামারাতুল আওয়ারক (1/104), উয়ুনুল আনবা (পৃ/286),আল-ওয়াফি বিল-ওয়াফিয়াত (28/78),জাহদুল কারিহাহ (পৃ/106), ইখবারুল উলামা (পৃ/274), আর-রাদ্বুন নাযার (2/160), আল-মিলাল ওয়ান নাহল (3/3), সারহুল উয়ুন (পৃ/231)
[2]আয-যাহাবী : সিইরু আ'লামিন নুবালা (12/337),ইবন হাজার : লিসানুল মিযান (8/527), ইবন আবি-আসিবায়াহ : উয়ুনুল আনবা (পৃ/287)