Are you sure?

কুরআন »  বিবিধ

কুরআনের (৩৬:১৪) অনুযায়ী খ্রিস্টানদের পৌলই কী সেই তৃতীয় নবী ও রাসূল? এ মিথ্যা দাবির জবাব!

খ্রিস্টানদের একটি ভিত্তিহীন প্রশ্ন যে, সূরা ইয়াসিন আয়াত 🧨১৪ তে পৌলকে সেই নবী ও রাসূল করে আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন। খ্রিস্টানদের কাছে এই মিথ্যাচার আশা করাই যায়। কারণ তারা একই দাবি ঈসা আঃ এর ক্ষেত্রেও করে যে, ঈসা আঃ নাকি নবী ও পাশাপাশি তিনি নাকি ঈশ্বরও। খ্রিস্টানদের এসব কথা শুনে খুবই হাসি পায়। 

জবাব :- 

আসুন দেখি সূরা ইয়াসিন আয়াত ১৪ তে ঠিক কী বলা হয়েছে। 

اِذۡ  اَرۡسَلۡنَاۤ  اِلَیۡہِمُ  اثۡنَیۡنِ  فَکَذَّبُوۡہُمَا فَعَزَّزۡنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوۡۤا اِنَّاۤ  اِلَیۡکُمۡ مُّرۡسَلُوۡنَ ﴿۱۴﴾

যখন আমি তাদের নিকট পাঠিয়েছিলাম দু’জন রাসূল, কিন্তু তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল; তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা এবং তারা বলেছিলঃ আমরাতো তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।

When We sent to them two Messengers, they belied them both, so We reinforced them with a third, and they said: Verily! We have been sent to you as Messengers.

 

এর পরের আয়াত গুলো দেখুন :-

قَالُوۡا مَاۤ  اَنۡتُمۡ  اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا ۙ وَ مَاۤ اَنۡزَلَ  الرَّحۡمٰنُ  مِنۡ شَیۡءٍ ۙ اِنۡ  اَنۡتُمۡ  اِلَّا تَکۡذِبُوۡنَ ﴿۱۵﴾

তারা বললঃ তোমরাতো আমাদের মত মানুষ, দয়াময় কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা শুধু মিথ্যাই বলছ।

They (people of the town) said: You are only human beings like ourselves, and the Most Beneficent (Allah) has revealed nothing, you are only telling lies. (36:15)

قَالُوۡا رَبُّنَا یَعۡلَمُ  اِنَّاۤ  اِلَیۡکُمۡ لَمُرۡسَلُوۡنَ ﴿۱۶﴾

তারা বললঃ আমাদের রাব্ব জানেন যে, আমরা অবশ্যই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।

The Messengers said: Our Lord knows that we have been sent as Messengers to you, (36:16)

وَ مَا عَلَیۡنَاۤ  اِلَّا  الۡبَلٰغُ  الۡمُبِیۡنُ ﴿۱۷﴾

স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।

And our duty is only to convey plainly (the Message).(36:17)

আয়াত গুলোতে উল্লেখ আছে এই যে, আল্লাহ কোন এক জাতির কাছে প্রথমে দুইজন রাসূল পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেই জাতির লোকেরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাই আল্লাহ আরো একজন রাসূল পাঠিয়ে সেই দুইজন রাসূলকে সেই তৃতীয় রাসূলের মাধ্যমে শক্তিশালী করে। তৃতীয় জনও রাসূল ছিলেন কারণ কুরআনে বলা হয়েছে তারা প্রেরিত হয়েছে। সুতরাং তৃতীয় জন যে রাসূল এতে কোন সন্দেহ নেই।

📌 তো! কথা এই যে, মিথ্যাবাদী খ্রিস্টানরা এই তিন জন রাসূলের মধ্যে তৃতীয়জনকে পৌল বলে দাবি করে । যারা পুরোই ভিত্তিহীন একটি কথা। 

খ্রিস্টানদের মতানুযায়ী ১ম রাসূল হলো যোহন বা আমাদের নবী ইয়াহিয়া (আঃ) ও ২য় রাসূল যিশু বা আমাদের নবী ঈসা (আঃ)। আর তৃতীয় রাসূল নাকি তাদের পৌল। খুবই হাস্যকর একটা দাবি। 

এ দাবির কোন প্রমাণ তাদের কাছে নেই কয়েকটা ভিত্তিহীন ও সনদহীন তাফসীর ছাড়া। 

তাদের দাবি হলো ইসলাম অনুযায়ী পৌল নাকি রাসূল।

এ দাবি খন্ড করা হলো নিচের হাদিস দিয়ে !

حَدَّثَنَا أَبُوْ الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَبُوْ سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ أَنَا أَوْلَى النَّاسِ بِابْنِ مَرْيَمَ وَالأَنْبِيَاءُ أَوْلَادُ عَلَاتٍ لَيْسَ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُ نَبِيٌّ

৩৪৪২. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ‘ঈসার অধিক ঘনিষ্ঠ। আর নাবীগণ পরস্পর বৈমাত্রিয় ভাই। আমার ও তার মাঝখানে কোন নবী নেই। (৩৪৪৩, মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৫, আহমাদ ৮২৫৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৯৬)  [হাদিসটি চেক করুন]

ইসলাম অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট যে, পৌল কোন নবী বা রাসূল নই। কারণ মুহাম্মদ সাঃ বলে দিয়েছেন তার ও ঈসা আঃ এর মাঝখানে কোন নবী বা রাসূল নেই ।  

তাহলে ঐ ৩ জন রাসূল কারা ছিলেন :-  

ঐ তিন জন রাসূল কারা ছিলেন তাদের নাম কী ? এ ব্যাপারে কুরআনে কিছু বলা হয়নি। 

কোরআনের ভাষ্যমতে, 

আল্লাহ তায়ালা নবীজীকে উদ্দেশ করে বলছেন, হে রাসূল! অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য মক্কার মুশরিকদের সামনে অতীতের একটি জাতির ঘটনা বর্ণনা করুন যে জাতির কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য দুইজন নবীকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই জাতির লোকজন গোঁড়ামি ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে তাদের বিরোধিতা করে। আল্লাহ তাদের শক্তিশালী করতে আরো একজন রাসূল পাঠান। তারা ভেবেছিল মহান আল্লাহ তাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা মন যা চায় তাই করতে পারে।

কিন্তু নবী-রাসূলগণ এসেছেন মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে। তাঁরা সব সময় একথাই বলেছেন যে, তারা নিজে থেকে নয় বরং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর দিকে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। নবীরা বলেছেন, আমরা আল্লাহর বার্তা বহন করে এনেছি এবং এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো কিছু কামনা করি না।

ঐ ৩ জন রাসূলকে যে বনি ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছিল এর কোন প্রমান নেই। যদি তারা বনি ইসরায়েলের রাসূল হয়ে থাকে, তবে তারা ৩জন হবে,

১। জাকারিয়া (আঃ)

২। ইয়াহিয়া (আঃ)

৩। ঈসা (আঃ)

জাকারিয়া (আঃ) তিনি বনি ইসরায়েলের নবী ছিলেন । ইয়াহিয়া (আঃ) তিনি নবী জাকারিয়া (আঃ) এর পুত্র । তিনিও নবী ছিলেন বনি ইসরায়েলের। ঈসা আঃ তাকে বনি ইসরায়েলের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল । এই ৩জন নবীর কথাই যে কুরআনে বলা হয়েছে এর একটা শক্ত প্রমাণ হলো যে, তারা ৩জনই ৩জনের সময় জীবিত ছিলো ও তারা একে অপরের আত্মীয় ছিলো । 

যাইহোক, আল্লাহ ভালো জানেন তারা কারা ছিলেন ৷ পৌল ইসলাম অনুযায়ী যে নবী বা রাসূল নই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ইসলামে পৌলের কোন অস্থিত্ব নেই। 

সূরা ইয়াসিন আয়াত ১৪ এর কিছু তাফসীর কারা ছিলেন সেই রাসূল :-

তাফসীরে ইবনে কাসির :-

اِذۡ  اَرۡسَلۡنَاۤ  اِلَیۡہِمُ  اثۡنَیۡنِ  فَکَذَّبُوۡہُمَا فَعَزَّزۡنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوۡۤا اِنَّاۤ  اِلَیۡکُمۡ مُّرۡسَلُوۡنَ ﴿۱۴﴾

যখন তাদের কাছে দু’জন রসূল পাঠিয়েছিলাম তখন তারা সে দু’জনকে মিথ্যে ব’লে প্রত্যাখ্যান করল। অতঃপর আমি তৃতীয় আরেকজন দ্বারা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করলাম। তারা বলল- আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। ১৩-১৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার কওমের সামনে তুমি ঐ লোকদের ঘটনা বর্ণনা কর যারা এদের মত তাদের রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল। এটা হলো ইনতাকিয়া শহরের ঘটনা। তথাকার বাদশাহর নাম ইনতায়খাস। তার পিতা ও পিতামহেরও এই নামই ছিল। রাজা ও প্রজা সবাই মূর্তিপূজক ছিল। তাদের কাছে সাদিক, সদূক ও শালুম নামক আল্লাহর তিনজন রাসূল আগমন করেন। কিন্তু এ দুর্বত্তরা তাদেরকে অবিশ্বাস করে। সতুরই এই বর্ণনা আসছে যে, এটা যে ইনতাকিয়ার ঘটনা একথা কোন কোন লোক স্বীকার করেন না। প্রথমে তাদের কাছে দু’জন নবী আগমন করেন। তারা তাদেরকে অস্বীকার করলে তাঁদের শক্তি বৃদ্ধিকল্পে তৃতীয় একজন নবী আসেন। প্রথম দু'জন নবীর নাম ছিল শামউন ও বুহনা এবং তৃতীয়জনের নাম ছিল বুলাস। তাঁরা তিনজনই বলেনঃ “আমরা আল্লাহর প্রেরিত যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের মাধ্যমে তোমাদেরকে হুকুম করেছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না।” হযরত কাতাদা ইবনে দাআমাহ (রঃ)-এর ধারণা এই যে, এই তিনজন বুযর্গ ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রেরিত ছিলেন। ঐ গ্রামের লোকগুলো তাদেরকে বললোঃ “তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ। তাহলে এমন কি কারণ থাকতে পারে যে, তোমাদের কাছে আল্লাহর অহী আসবে আর আমাদের কাছে আসবে না? হ্যা, তোমরা যদি রাসূল হতে তবে তোমরা ফেরেশতা হতে।” অধিকাংশ কাফিরই নিজ নিজ যুগের রাসূলদের সামনে এই সন্দেহই পেশ করেছিল। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওটা এ কারণে যে, তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ দলীল প্রমাণসহ আগমন করতো তখন তারা বলতোঃ মানুষ কি আমাদেরকে হিদায়াত করবে?”(৬৪:৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা বলেছিল- তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, তোমরা চাচ্ছ যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদত করতো তা হতে আমাদেরকে ফিরিয়ে দিবে, সুতরাং আমাদের কাছে প্রকাশ্য দলীল আনয়ন কর।”(১৪:১০) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা যদি তোমাদের মত মানুষের আনুগত্য কর তাহলে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে।”(২৩:৩৪) আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মানুষকে তাদের কাছে হিদায়াত আসার পর ওর উপর ঈমান আনতে শুধু এটাই বাধা দিয়েছে যে, তারা বলেঃ আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?”(১৭:৯৪) এই কথা ঐ লোকগুলোও তিনজন নবীকে বলেছিলঃ “তোমরা আমাদের মতই মানুষ। আসলে আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা মিথ্যা কথা বলছো।” নবীগণ উত্তরে বললেনঃ আল্লাহ্ খুব ভাল জানেন যে, আমরা তাঁর সত্য রাসূল। যদি আমরা মিথ্যাবাদী হতাম তবে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আমাদেরকে মিথ্যা বলার শাস্তি প্রদান করতেন। কিন্তু তোমরা দেখতে পাবে যে, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদেরকে সম্মানিত করবেন। ঐ সময় তোমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, পরিণাম হিসাবে কে ভাল! যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন, আর যারা বাতিলের উপর ঈমান এনেছে ও আল্লাহকে অস্বীকার করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।"(২৯:৫২) নবীগণ বললেনঃ স্পষ্টভাবে পৌছিয়ে দেয়াই শুধু আমাদের দায়িত্ব। মানলে তোমাদেরই লাভ, আর না মানলে তোমাদেরকেই এ জন্যে অনুতাপ করতে হবে। আমাদের কোন ক্ষতি নেই। কাল তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ 

اِذۡ  اَرۡسَلۡنَاۤ  اِلَیۡہِمُ  اثۡنَیۡنِ  فَکَذَّبُوۡہُمَا فَعَزَّزۡنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوۡۤا اِنَّاۤ  اِلَیۡکُمۡ مُّرۡسَلُوۡنَ ﴿۱۴﴾

১৩-২১ নম্বর আয়াতের তাফসীর : আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি জনবসতির ঘটনা বর্ণনার নির্দেশ দিচ্ছেন, যে জনবসতির নিকট দু’জন রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে বসতির লোকেরা দু’জন রাসূলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। তৎক্ষণাৎ তাদের দু’জনের শক্তি বৃদ্ধি কল্পে তৃতীয় আরেকজনকে নাবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল এবং নাবীগণ বললেন যে, আমরা তোমাদের নিকট দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি, আমরা মিথ্যাবাদী না। নাবীগণের এ কথার উত্তরে জনবসতির অধিবাসীগণ বলল : তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, সুতরাং দয়াময় আল্লাহ তা‘আলা কোন মানুষকে রাসূল করে পাঠাতে পারেন না। বরং তোমরা এ ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলছ। যেমন তাদের উক্তি : (ذٰلِكَ بِأَنَّه۫ كَانَتْ تَّأْتِيْهِمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنٰتِ فَقَالُوْآ أَبَشَرٌ يَّهْدُوْنَنَا ز فَكَفَرُوْا وَتَوَلَّوْا وَّاسْتَغْنَي اللّٰهُ ط وَاللّٰهُ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ) “তা এ জন্য যে, তাদের নিকট তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ আসতেন। তখন তারা বলত : মানুষই কি আমাদেরকে পথের সন্ধান দিবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিলো; কিন্তু এতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না। আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।” (সূরা তাগাবুন ৬৪ : ৬) জনবসতির কথার প্রত্যুত্তরে নাবীগণ তাদেরকে বললেন যে, আমাদের দায়িত্ব শুধু তোমাদের নিকট স্পষ্টভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী পৌঁছে দেয়া আর এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিপালক অবগত আছেন যে, আমরা তোমাদের নিকট তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। তিনিই আমাদের ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলার বাণী : (قُلْ كَفٰي بِاللّٰهِ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ شَهِيْدًا) “বল : ‎‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা আনকাবুত ২৯ : ৫২) উপরোক্ত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায় : ১. পূর্ববর্তী উম্মাতের কাছে যারা রাসূল হিসেবে এসেছেন তারা সবাই মানুষ ছিলেন এবং যাদের কাছে এসেছিলেন তারাও জানত যে, এরা আমাদের মত মানুষ। অতএব কেন আমরা এরূপ মানুষের কথা মানব। যেমন সূরা ইসরার ৯৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয় কিন্তু তারা নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাটির মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না। এ আয়াত থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ২. তারা যখন দু’জন রাসূলকে সাধারণভাবে অস্বীকার করল তখন আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয় আরেকজনকে প্রেরণ করলেন এবং তারা বললেন : নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের কাছে প্রেরিত রাসূল। তারপরেও যখন অস্বীকার করল, তখন রাসূলগণ বললেন : আল্লাহ তা‘আলা জানেন, অবশ্যই আমরা তোমাদের কাছে নিশ্চিত প্রেরিত রাসূল। অর্থাৎ তাদের অস্বীকার যত বাড়ল রাসূলদের কথার গুরুত্বও তত বাড়ল। উক্ত গ্রাম কোথায় ও তিনজন প্রেরিত রাসূল কারা ছিলেন তা নিয়ে কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে কোন কোন মুফাসসিরদের ধারণা, সে গ্রামটি ছিল আন্তাকিয়া। যেমন ইবনু আব্বাস, কা‘ব ও ওহাব বিন মুনাব্বাহ (রাঃ) বলেছেন। মু’জামুল বুলদানের বর্ণনানুযায়ী ‘আন্তাকিয়া’ শাম দেশের একটি প্রাচীন নগরী। যা তার সমৃদ্ধি ও স্থাপত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এ নগরীর দুর্গ ও নগর প্রাচীন দর্শনীয় বস্তু ছিল। এতে খ্রিস্টানদের বড় বড় স্বর্ণ-রৌপ্যের কারুকার্য খচিত সুশোভিত গির্জা অবস্থিত রয়েছে। এটি একটি উপকূলীয় নগরী। ইসলামী আমলে শামবিজয়ী সাহাবী আবূ ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) এ শহরটি জয় করেছিলেন। নবী তিনজন ছিলেন- সাদেক, সাদুক ও শামুল। (ইবনু কাসীর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ এলাকাবাসীর ঘটনা বর্ণনা করার নির্দেশ দেয়ার কারণ হলো যাতে মক্কাবাসীসহ পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে মুহাম্মাদ কোন নতুন নাবী নন, পূর্বে অনেক নাবী এসেছেন এবং এটাও যেন জানতে পারে, রাসূল গায়েব জানেন না বরং ওয়াহী মারফত পূর্ববর্তীদের এসব ঘটনা জেনেছেন। রাসূলগণ যে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তা বর্জন করলে ধ্বংস অনিবার্য এ কথাও যাতে জেনে নিতে পারে। (إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ) تطير অর্থ কুলক্ষণ গ্রহণ করা। অর্থাৎ তারা রাসূলগণকে বলল, তোমাদের আগমনে আমরা অকল্যাণকর ও আমাদের জন্য অশুভ মনে করছি। যদি তোমরা চলে না যাও তাহলে পাথর মেরে হত্যা করব এবং আমাদের থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। (قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْ) অর্থাৎ তাদের কথার উত্তরে রাসূলগণ বললেন : তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই, কেননা তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। যেমন সালেহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় বলেছিল : (قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَ ط قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللّٰهِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ)‏ “তারা বলল : ‎ ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’ সে বলল : ‎ ‘তোমাদের অকল্যাণ আল্লাহর ইখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ (সূরা নামল ২৭ : ৪৭) এমনকি তারা সত্যের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা থেকে বিরতই থাকল এবং রাসূলগণকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল। ঐ জনবসতির একজন মু’মিন ব্যক্তি ছিল যে শহরের শেষ প্রান্তে বসবাস করত। সে তাদের নিকট ছুটে আসলো ও বলল : হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা প্রেরিত ব্যক্তি (রাসূলগণ)-দের অনুসরণ করো। অনুসরণ করো তাদের যারা তোমাদের নিকট কোনই পারিশ্রমিক চায় না। তাঁদের স্বার্থের জন্য নয়, বরং তোমাদের কল্যাণার্থেই তাঁরা তোমাদেরকে সৎ পথের দিকে আহ্বান করছেন। সুতরাং তাঁদের আহ্বানে তোমাদের সাড়া দেয়া উচিত এবং তাঁদের আনুগত্য করা কর্তব্য। এতদসত্ত্বেও তারা ঈমান আনল না, রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং তাঁদেরকে অকল্যাণের কারণ মনে করল। এ লোকটির নাম কী ছিল তা নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়। তবে অনেকে বলেছেন : তার নাম ইয়াসিন হাবীব। বিঃদ্রঃ কুরআন যে সকল ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম বা অন্য কিছু অস্পষ্ট করে ছেড়ে দিয়েছে এবং সহীহ হাদীসে তার কোন বর্ণনা নেই তা জানা কোন জরুরী বিষয় নয়। বরং এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার শামিল। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় : ১. রাসূলগণের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে তাদের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। কাউকে মানার জন্য বাধ্য করা নয়। বর্তমানে ‘আলিম সমাজের দায়িত্বও তা-ই। তারা মানুষকে হক্বের পথে দা‘ওয়াত দিবে। ২. দা‘ওয়াতী কাজ করে বিনিময় গ্রহণ না করাটাই উত্তম। যেমন নাবী-রাসূলগণ বিনিময় গ্রহণ করেননি। তবে যদি এর জন্য এমন সময় ব্যয় হয় যে কারণে পরিবারের ব্যয়-ভার উপার্জন করতে সময় পাওয়া যায় না তাহলে উপযুক্ত পরিমাণ বিনিময় নেওয়া যেতে পারে। ৩. রাসূলগণ মানুষ, তাদেরকে রিসালাত দেয়া হয়েছে মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করার জন্য। ৪. যা জানলে কোন উপকারে আসবে না তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

এবার বাইবেল থেকে প্রমান যে, পৌল সেই রাসূল নই :- বাইবেল অনুযায়ী পৌল কখনো যিশুকে দেখেনি। পৌল নিজ চোখে যিশুকে দেখেছে এমন কোন প্রমাণ খ্রিস্টানরা দিতে পারবে না । যিশুর ১২ জন শিষ্যের মধ্যে পৌলের কোন নাম নেই। পৌলের যিশুর শিষ্যদের সাথে কখনো দেখা হয়েছে কিনা এটা নিয়েই মতভেদ আছে। বাইবেল অনুযায়ী পৌলের সাথে যদি যিশুর কোনদিন দেখাই না হয় তবে সে কুুুরআনের ৩য় রাসূল হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না ৷

ইসলাম অনুযায়ী পৌল কোন নবী বা রাসূল নই এটা প্রমানিত ।

পৌল তবে কে ছিলেন ?

পুরোটা পড়ুন তবে পৌলের ভন্ডামি জানতে পারবেন। 

সাধু পৌলের ভন্ডামি করে, পয়গম্বর হওয়ার কাহিনী:-

[লেখাটি ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র.) এর 'কিতাবুল মোকাদ্দস,ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম বই থেকে নেওয়া হয়েছে]
 
সংকলনে:- Sk Abdul Ashik 
 
  সাধু পলের (Paul) মূল নাম সৌল (Saul)। তিনি বর্তমান তুরস্কের তারসূস (Tarsus) বা সাইলেশিয়ায় (Cilicia) জন্মগ্রহণ করেন (প্রেরিত ২১/৩৯, ২২/৩)। তিনি জাতিতে রোমান (প্রেরিত: ২২/২৮, ১৬/৩৭-৩৮, ২৩/২৭), মাতৃভাষা গ্রীক (প্রেরিত: ৯/২৯) এবং ধর্মে ইয়াহূদী ছিলেন। (রোমীয় ১১/১-২; করিন্থীয় ১১/২২; ফিলিপীয় ৩/৫)। ধর্মে ইয়াহূদী হলেও ইয়াহূদী ধর্ম ও ধর্মশাস্ত্রের সাথে তাঁর পরিচয় ছিল সামান্যই (রোমীয় ৭/৯; গালাতীয় ১৫/১); তবে তিনি গ্রীক-রোমান ধর্ম ও দর্শনে ব্যাপক অভিজ্ঞ ছিলেন (এনকার্টা: পল)। সাধু পল যীশুর সমসাময়িক ছিলেন, তবে যীশুর জীবদ্দশায় তিনি তাঁকে কখনো দেখেন নি (১ করিন্থীয় ৯/১, ১৫/৮)।
 
যীশুর তিরোধানের পর তিনি তাঁর অনুসারীদের হত্যা ও নির্যাতন করতেন (প্রেরিত: ৭/৫৮, ৮/৩, ৯/১-২; (২২/৪-৫ ও ২৬/৯-১১); গালাতীয়: ১/১৩)। এরপর তিনি যীশুর অনুসারী হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি দাবি করেন যীশু তাকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন এবং তাকে শিষ্যত্ব প্রদান করেন। এরূপ হঠাৎ ধর্মান্তরের দাবি ছিল যে, সাধু পল দ্রুত ফিলিস্তিনে এসে হাওয়ারিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাঁদের নিকট থেকে ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল শরীফ শ্রবণ ও অধ্যয়ন করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে তাদের থেকে দূরে থাকেন (গালাতীয় ১/১৬-১৭)। তিনি ইঞ্জিল শরীফ সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা না করেই শুধু একবার একটু আলো দেখা ও কথা শোনাকেই তার পয়গম্বরীর জন্য যথেষ্ট বলে গণ্য করেন। তিনি ধর্ম, শরীয়ত ও ইঞ্জিল সম্পর্কে হাওয়ারিদের সাথে কোনোরূপ পরামর্শ না করে নিজেকে তাদের চেয়েও বড় ও সরাসরি ঈসা মাসীহের সাক্ষাৎপ্রাপ্ত শিষ্য বলে দাবি করতে থাকেন। হাওয়ারীদের কারো মতেরই কোনো দাম নেই বলে ঘোষণা করতে থাকেন (গালাতীয় ১/১১-১২, ১৫, ২/৬, ১-করিন্থীয় ৩/১০, ৪/১৫, ৯/১, ১১/৫-৬)।
 
ঈসা মাসীহ জীবদ্দশায় ইঞ্জিল প্রচার করেছেন (মথি ৪/২৩, ৯/৩৫, ১১/১৫; মার্ক ১/১৪, ১৫, ৮/৩৫; মার্ক ১০/২৯; লূক ৯/৬...)। সাধু পল কখনোই তাঁর বা শিষ্যদের থেকে ইঞ্জিল শুনেন নি বা শিক্ষা করেন নি। অথচ তিনি নিজেই ইঞ্জিলের রচয়িতা বলে প্রচার করতেন এবং বলতেন: (my gospel) “আমার ইঞ্জিল” (রোমীয় ২/১৬, ১৬/২৫; ২ তিমথীয় ২/৮)। তিনি বারংবার ঘোষণা দেন যে, তাঁর নিজের ইঞ্জিল ছাড়া অন্য কোনো ইঞ্জিল, অর্থাৎ ঈসা মাসীহের মূল ইঞ্জিল যদি কেউ প্রচার করে তবে সে অভিশপ্ত (গালাতীয় ১/৬, ৮-৯; ২-করিন্থীয় ১১/৪)।
 
সর্বাবস্থায় তাঁর যীশুর শিষ্য হওয়ার কাহিনীটি “প্রেরিত” নামক পুস্তকে  ৯, ২২ ও ২৬ অধ্যায়ে তিন স্থানে তিনভাবে দেওয়া হয়েছে। ৯/৩-৭-এর বক্তব্য: “তখন হঠাৎ আকাশ হইতে আলোক তাঁহার চারিদিকে চমকিয়া উঠিল। তাহাতে তিনি ভূমিতে পড়িয়া শুনিলেন, তাঁহার প্রতি এই বাণী হইতেছে: শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? ... কিন্তু উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে, তাহা বলা যাইবে। আর তাহার সহপথিকেরা অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, তাহারা ঐ বাণী শুনিল বটে, কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পাইল না (hearing a voice, but seeing no man)।
 
পক্ষান্তরে ২২/৬-১০-এর ভাষ্য: “হঠাৎ আকাশ হইতে মহা আলো আমার চারিদিকে  চমকিয়া উঠিল। তাহাতে আমি ভূমিতে পড়িয়া গেলাম ও শুনিলাম, এক বাণী আমাকে বলিতেছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ?... আর যাহারা আমার সঙ্গে ছিল, তাহারা সেই আলো দেখিতে পাইল বটে, কিন্তু যিনি আমার সহিত কথা কহিতেছিলেন, তাঁহার বাণী শুনিতে পাইল না (And they that were with me saw indeed the light, and were afraid; but they heard not the voice of him that spake to me) প্রভু আমাকে কহিলেন, উঠিয়া দামেশকে যাও, তোমাকে যাহা যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে।”
 
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনায় কি কোনো সাধারণ সুস্থ মানুষ এত স্ববিরোধী কথা বলতে পারে? প্রথম বর্ণনায় সহ-পথিকরা কথা শুনলো কিন্তু আলো দেখল না; আর দ্বিতীয় বর্ণনায় ঠিক তার উল্টো কথা: তারা আলো দেখল কিন্তু কথা শুনলো না!!! এ কি সাধু পলের স্ববিরোধী কথা? না ‘পাক রুহের’ অজ্ঞতার ফল?!
 
আরেকটি বিষয় দেখুন! উপরের দুস্থানে বলা হয়েছে যে, পলের কী করণীয় সে বিষয়ে যীশু তাকে কোনো নির্দেশ দিলেন না; শুধু বললেন, দামেশকে যাও, সেখানেই সব বলা হবে। অথচ ২৬ অধ্যায়ের ১৬-১৮ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, সাধু পলের দায়িত্ব ও করণীয় বিস্তারিত সেখানেই তাকে জানানো হয়েছিল? 
 
এ সকল স্ববিরোধী বক্তব্যের মধ্যে কোনটি সত্য? নাকি সবই মিথ্যা? আমরা জানি না। তবে আমরা দেখেছি যে, সাধু পল স্বস্বীকৃত মিথ্যাবাদী। তিনি জোর গলায় বলেছেন যে, ঈশ্বরের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা বললে অসুবিধা নেই। তিনি যে বহুরূপী তা তিনি অন্যত্রও স্বীকার করেছেন (দেখুন: ১ করিন্থীয় ১৯-২১)।
 
তার এ সকল কথা সবই হয়ত মিথ্যা। ঈসা মাসীহের শিক্ষা বিনষ্ট করাকেই তিনি ঈশ্বরের মর্যাদা বৃদ্ধি বলে বিশ্বাস করতেন। এজন্যই তিনি তাঁর অনুসারীদের হত্যা ও নির্যাতন করতেন (প্রেরিত ২৬/৯-১১)। তিনি দেখলেন যে, হত্যা ও নির্যাতন করে যীশুর শিক্ষার বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না; কাজেই শিষ্য সেজে তা বিনষ্ট করতে হবে।
 
লক্ষণীয় যে, সাধু পল দাবি করেন যে, যীশু তাঁকে বলেছিলেন: “তোমার নিজের লোকদের (ইহুদীদের) এবং অ-ইয়াহূদীদের হাত থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করব।” (প্রেরিত ২৬/১৭)। কিন্তু বাস্তবে এ ওয়াদা কার্যকর হয় নি। সাধু পলকে যীশু রক্ষা করেন নি; বরং তিনি নিহত হয়েছেন। ৬২  খৃস্টাব্দের দিকে রোমান সরকার তাকে বন্দী করে এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। (Microsoft® Encarta® 2008: Paul) এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, তিনি মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড নবী ছিলেন। কারণ, আমরা দেখব যে, ভণ্ড নবীর পরিণতি হত্যা বা অপমৃত্যু বলে কিতাবুল মোকাদ্দসে বলা হয়েছে।
 
বাহ্যত সাধু পল ও তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কেই ঈসা মাসীহ বলেন: “ভণ্ড নবীদের বিষয়ে সাবধান হও। তারা তোমাদের কাছে ভেড়ার চেহারায় আসে, অথচ ভিতরে তারা রাক্ষুসে নেকড়ে বাঘের মত।
 
তাদের জীবনে যে ফল দেখা যায় তা দিয়েই তোমরা তাদের চিনতে পারবে। ... যারা আমাকে ‘প্রভু প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়। কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলি নি? তোমার নামে কি ভূত ছাড়াই নি? তোমার নামে কি অনেক অলৌকিক কাজ করি নি? তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’ (মথি ৭/১৫-২৩)। তিনি আরো বলেন: “অনেক ভণ্ড মসীহ্ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং ‘বড় বড় আশ্চর্য ও চিন্থ-কাজ করবে যাতে সম্ভব হলে আল্লাহ্‌র বাছাই করা বান্দাদেরও তাঁরা ঠকাতে পারে।” (মথি ২৪/২৪) যীশুকে প্রভু প্রভু বলেছেন, তাঁর নামে অলৌকিক কাজ ও চিন্থ-কাজ করেছেন এবং ‘আল্লাহর বাছাইকরা বান্দাদের’ অর্থাৎ যীশুর সাহাবী-শিষ্যদেরকেও ভুলাতে পেরেছেন এমন ব্যক্তি সাধু পল ছাড়া আর কাউকে আমরা দেখি না।
 
কেউ যদি ইঞ্জিলের ‘প্রেরিত’ পুস্তকটি ও পরবর্তী পত্রগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করেন তবে ড. মরিস বুকাইলির নিম্নের বক্তব্যের সাথে অবশ্যই একমত হবেন:
 
Paul is the most controversial figure of Christianity, He was considered to be a traitor to Jesus’ thought by the latter’s family and by apostles who had stayed in Jerusalem in the circle around James. Paul created Christianity at the expense of those whom Jesus had gathered around him to spread his teachings”.
 
“পল খৃস্টধর্মের সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। ঈসা মাসীহের পরিবার এবং শিষ্যগণ যেরুজালেমে (ঈসা মাসীহের ভাই) জেমসের (যাকোবের) চারিপাশে জমায়েত ছিলেন এবং তারা পলকে মাসীহের চিন্তা-চেতনার বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করতেন। ঈসা মাসীহ তাঁর শিক্ষা প্রচারের জন্য যাদেরকে জমায়েত করেছিলেন সাধু পল তাদের বিপরীতে একটি খৃস্টধর্ম তৈরি করেন।” (Dr. Maurice Bucaile, The Bible, the Qur'an and the Science, page 52)