Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান হাদিস »  বিজ্ঞান

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির অনির্ভরযোগ্য হওয়ার মতটির সমর্থনে কিছু কথা এবং উক্ত হাদিসটির বিজ্ঞানবিরোধী হওয়ার উপর একটু দৃষ্টিপাত। 

বিষয়/শিরোনাম : শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির অনির্ভরযোগ্য হওয়ার মতটির সমর্থনে কিছু কথা এবং উক্ত হাদিসটির বিজ্ঞানবিরোধী হওয়ার উপর একটু দৃষ্টিপাত। 

লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী  

0. সূচিপত্র :-  

0. সূচিপত্র। 
1. ভূমিকা।
2. কিছু স্পষ্টীকরণ : 
3. হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ। 
4. হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী কিছু উলামাদের নাম উল্লেখকরণ।
5. হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী উলামাদের সংখ্যাটা কম নয় বরং বেশি। 
6. অধিকাংশ উলামাদের নিকট হাদিসটি ইল্লতযুক্ত।
7. হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সমর্থনকরণ ও প্রতিষ্ঠিতকরণ। 
8. একটি বিশেষ নীতিকে প্রতিষ্ঠিতকরণ। 
9. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের প্রসঙ্গে। 
10. উপসংহার। 
11. পরিশিষ্ট (হাদিসটি কি বিজ্ঞানবিরোধী?)। 
12. টীকাসমূহ।

1. ভূমিকা :-  

ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,_[1]  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَال ‏خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَفِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْل… 

অর্থ : আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন।   

উক্ত হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতার প্রসঙ্গে উলামাদের মাঝে মতভেদ বিদ্যমান। উলামাদের একাংশের মতে, উক্ত হাদিসটি ইল্লতযুক্ত অর্থাৎ অনির্ভরযোগ্য। এর বিপরীতে, উলামাদের অপর একাংশের মতে, উক্ত হাদিসটি ইল্লতমুক্ত সহিহ অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য। এই লেখাটিতে, আমি উক্ত হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়ার মতটির পক্ষে কিছু কথা বলব, অতঃপর উক্ত হাদিসটি বিজ্ঞানবিরোধী নাকি না সেই বিষয়টির উপর একটু দৃষ্টিপাত করব। 

2. কিছু স্পষ্টীকরণ :-  

মূল আলোচনা আরম্ভ করার পূর্বে, কিছু বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত, অন্যথায় কিছু জটিল বিষয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য মূল আলোচনার মধ্যে বার বার বিরতি নিতে হবে যা লেখাটির শৃঙ্খলা এবং বোধগম্যতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।  

2.1. প্রথম স্পষ্টীকরণ :-  

প্রথম স্পষ্টীকরণ এর ক্ষেত্রে কিছু জটিল ও বিস্তারিত বিষয়কে সংক্ষেপে ও সরলভাবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে কিছু ছোট আকৃতির পরিভাষা ব্যবহার করা হবে, সেই পরিভাষাগুলো হল : প্রথম উক্তি, দ্বিতীয় উক্তি, তৃতীয় উক্তি, প্রথম ক্রিয়া এবং দ্বিতীয় ক্রিয়া।  

"প্রথম উক্তি" মানে হচ্ছে এমন যেকোনো উক্তি বা বক্তব্য যা দ্বারা শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে বা হয় বা যায়।  

"দ্বিতীয় উক্তি" মানে হচ্ছে এমন যেকোনো উক্তি বা বক্তব্য যা দ্বারা (সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান কোনো সুনির্দিষ্ট হাদিসকে সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য না করে) আম্মভাবে (ব্যাপকার্থে) সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসকে সহিহ সাব্যস্ত করা হয়েছে বা হয় বা যায়।  

"তৃতীয় উক্তি" মানে হচ্ছে এমন যেকোনো উক্তি বা বক্তব্য যা দ্বারা (সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান কোনো সুনির্দিষ্ট হাদিসকে সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য না করে) আম্মভাবে (ব্যাপকার্থে) সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা ঘোষণা করা হয়েছে বা হয় বা যায়।  

"প্রথম ক্রিয়া" মানে হচ্ছে এক বা একাধিক স্থানে বা সময়ে বা ক্ষেত্রে "প্রথম উক্তি" ব্যক্তকরণ। 

"দ্বিতীয় ক্রিয়া" মানে হচ্ছে এক বা একাধিক স্থানে বা সময়ে বা ক্ষেত্রে " দ্বিতীয় উক্তি" অথবা "তৃতীয় উক্তি" অথবা "দ্বিতীয় উক্তি এবং তৃতীয় উক্তি" ব্যক্তকরণ। 

ধরা যাক যে, কোনো একজন আলেম প্রথম ক্রিয়াটি করেছেন এবং উক্ত একই আলেম দ্বিতীয় ক্রিয়াটিও করেছেন। 

মূলনীতি হচ্ছে এই যে, আম্ম এবং খাস একই প্রসঙ্গে এসে মিলিত হলে খাস এর উপর ভিত্তি করে আম্ম কে তাখসিস করতে হয় [2]। এক্ষেত্রে, প্রথম ক্রিয়াটি খাস, দ্বিতীয় ক্রিয়াটি আম্ম, এবং এরা একই প্রসঙ্গে এসে মিলিত হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে খাস প্রথম ক্রিয়াটির উপর ভিত্তি করে আম্ম দ্বিতীয় ক্রিয়াটিকে তাখসিস করতে হবে।  

প্রথম ক্রিয়াটির উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় ক্রিয়াটিকে তাখসিস করলে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, উক্ত আলেম দ্বিতীয় ক্রিয়াটির ক্ষেত্রে প্রথম ক্রিয়াটিতে ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্তকৃত হাদিসটিকে (অর্থাৎ শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে) ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিবেচনার বাহিরে রেখেছেন বা উপেক্ষা করেছেন। অর্থাৎ, উক্ত আলেমের দৃষ্টিতে, প্রথম ক্রিয়াটিতে ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্তকৃত হাদিসটি (অর্থাৎ শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসিটি) ব্যতীত সহিহ মুসলিমের বাকি সকল হাদিস সহিহ বা সহিহ হওয়ার ইজমাপ্রাপ্ত অথবা সহিহ হওয়ার ইজমার সহিত সহিহ এবং সুনির্দিষ্টভাবে কেবলমাত্র প্রথম ক্রিয়াটিতে ইল্লতযুক্ত ও অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্তকৃত হাদিসটি (অর্থাৎ শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি) ইল্লতযুক্ত ও অনির্ভরযোগ্য এবং সহিহ হওয়ার ইজমা হত��� মুক্ত।  

উল্লেখ্য যে : আম্ম এবং খাস একই প্রসঙ্গে এসে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে রুজুউ (মত পরিবর্তন) সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মূলনীতি হচ্ছে এটাই যে খাস এর উপর ভিত্তি করে আম্ম কে তাখসিস করতে হবে। _[3] 

2.2. দ্বিতীয় স্পষ্টীকরণ :-  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে কেউ কেউ দাবি করে যে, উক্ত হাদিসটির সহিহ হওয়ার উপর নাকি ইজমা আছে। এই দাবিটি চরমভাবে ভুল, প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ হওয়ার উপর কখনোই কোনো ধরনেরই কোনো ইজমা সংঘটিত হয়নি বরং সর্বদাই সকল যুগেই উক্ত হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতার প্রসঙ্গে মতভেদ ছিল, হয়ে আসছে এবং আছে। 

যদি বলা হয় যে : সহিহ মুসলিম এর সব হাদিস সহিহ হওয়ার উপর ইজমা আছে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ মুসলিম এর "সব হাদিস" এর অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং উক্ত হাদিসিটি সহিহ হওয়ার উপরও ইজমা আছে। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে : উপর্যুক্ত এই যুক্তিটির উপর ভিত্তি করে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিহ হওয়ার উপর ইজমা সাব্যস্তকরণ সঠিক হবেনা। সহিহ মুসলিম গ্রন্থটির ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে এই যে, সহিহ মুসলিমের সকল হাদিস সহিহ হওয়ার ইজমার সহিত সহিহ। কিন্তু শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি হচ্ছে উক্ত সাধারণ নিয়মটির বহির্ভূত একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি নির্ভরযোগ্য নাকি অনির্ভরযোগ্য?তা একটি বিতর্কিত ও মতভেদপূর্ণ বিষয়। উলামাদের একাংশের মতে, উক্ত হাদিসটি নির্ভরযোগ্য এবং ক্রুটিমুক্ত। এর বিপরীতে, উলামাদের অপর একাংশের মতে, উক্ত হাদিসটি অনির্ভরযোগ্য এবং ক্রুটিযুক্ত। ৩০০ হিজরীর আগে এবং পরে, সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে এবং সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, অতঃপর বর্তমানে, অর্থাৎ সর্বদাই সকল যুগেই, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি নির্ভরযোগ্য নাকি অনির্ভরযোগ্য তা নিয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ ও বিতর্ক ছিল, হয়ে আসছে এবং আছে। এই বিতর্ক ও মতভেদ ভবিৎষতেও খুব সম্ভবত চলমান থাকবে।  

যদি বলা হয় যে :  হাদিসটি নির্ভরযোগ্য নাকি অনির্ভরযোগ্য তা নিয়ে উলামাদের মাঝে একটা সময় পর্যন্ত মতভেদ ছিল। অতঃপর, যখন সহিহ মুসলিম এর বিশেষ মর্যাদাটি সকলের মাঝে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রসিদ্ধ হয়ে যায়, তখন উক্ত মতভেদের অবসান ঘটে। এবং উলামাদের সবাই এই মর্মে ইজমায় উপনিত হন যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিহ হওয়ার মতটিই সঠিক। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে : সহিহ মুসলিম এর বিশেষ মর্যাদাটি সকলের মাঝে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রসিদ্ধ হওয়ার পরে এসেছেন এমন বহু উলামারাই শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ক্রুটিযুক্ত ও অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং, উপর্যুক্ত এই দাবিটি ভুল। 

যদি বলা হয় যে : সহিহ মুসলিম এর বিশেষ মর্যাদাটি সকলের নিকট সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রসিদ্ধ হওয়ার পরে এসেছেন এমন উলামাদের মধ্যে যারা শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ক্রুটিযুক্ত ও অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন তাঁরা মূলত শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিহ হওয়ার মতটির সঠিক হওয়ার উপর সংঘটিত ইজমাটিকে অমান্য করেছেন। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  একাধিকটি মতের মধ্য থেকে কোনো একটা সুনির্দিষ্ট মতের সঠিক হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে নাকি হয়নি, তা জানার জন্য বা নির্ণয় করার জন্য কেবলমাত্র একটি সূত্র বিদ্যমান, এবং সেই সূত্রটি হচ্ছে এই যে, একাধিকটি মতের মধ্য থেকে কোনো একটা সুনির্দিষ্ট মতের সঠিক হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হলে দেখা যায় যে উক্ত ইজমাটি সংঘটিত হওয়ার পরে কোনো আলেমই উক্ত সুনির্দিষ্ট মতটির বিরোধিতা করেন না। উপর্যুক্ত এই দাবিটি (যা "যদি বলা হয় যে:" অংশে উল্লেখকৃত) উক্ত একমাত্র সূত্রটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাছাড়া, এভাবে চিন্তা করলে যেকেউ চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো মতভেদপূর্ণ মাসয়ালার ক্ষেত্রে প্রচলিত যেকোনো একটা নির্দিষ্ট মতের ব্যাপারে দাবি করতে পারবে যে সেই মতটি সঠিক হয়ার উপর যেকোনো এক সময়ে ইজমা সংঘটিত হয়ে গিয়েছিল এবং উক্ত ইজমাটি সংঘটির হয়ার পর যারাই উক্ত মতটির বিরোধী অন্য কোনো মত দিয়েছেন তাঁরা সবাই মূলত ইজমা অমান্য করেছেন। 

যদি বলা হয় যে : বিপুল সংখ্যক উলামারা বলেছেন যে সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে, এবং তাঁরা এমনটা বলার ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম থাকার কথা উল্লেখ করেন নি। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ মুসলিম এর "সব হাদিস" এরই অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামাদের উক্ত বক্তব্য শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির জন্যও প্রযোজ্য। অর্থাৎ বিপুল সংখ্যক উলামাদের মতে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিহ হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে।  

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

সহিহ মুসলিম গ্রন্থটিতে মোট 3033 টি হাদিস বিদ্যমান। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি হচ্ছে সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান 3033 টি হাদিসের অন্তর্ভুক্ত 1 টি হাদিস। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ মুসলিমের সকল হাদিসের 0.03297066% এর প্রতিনিধিত্ব করে, অপরদিকে এই হাদিসটিকে বাদ দিয়ে বিবেচনা করলে সহিহ মুসলিমের অন্যান্য সকল হাদিস মিলে সহিহ মুসলিম এর সকল হাদিসের 99.96702934 % এর প্রতিনিধিত্ব করে। কোথায় 3032, আর কোথায় 1! কোথায় 99.96702934 % , আর কোথায় 0.03297066%!  উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামারা ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টি কেন উল্লেখ করেন নি তা এ থেকেই বুঝা যায়। 

3032 টি হাদিস এর বিপরীতে কেবলমাত্র 1 টি হাদিস এবং মোট হাদিস সংখ্যার 99.96702934 % এর বিপরীতে মোট হাদিস সংখ্যার কেবলমাত্র 0.03297066% অতিসামান্য, অতিনগণ্য, অতিতুচ্ছ এবং প্রায় কিছুইনা হওয়ার দরুন শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামাদের খেয়ালে ছিলনা। বরং উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামারা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে উপেক্ষা করেছেন এবং উক্ত হাদিসটিকে গণায় ধরা ও বিবেচনায় আনা হতে বিরত থেকেছেন। এবং এই কারণেই উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামারা সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন নি।_[4]  

উপর্যুক্ত আমার এই ব্যাখ্যাটিকে সমর্থন করে এমন কিছু বিষয়কে নিম্নে উল্লেখ করা হল। 

এক. 

ইজমা ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে উলামাদের মধ্যে ভুল হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। বিভিন্ন উলামারা ইজমা ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন ভুল করেছেন এমন প্রচুর উদাহরণ বিদ্যমান। অতএব, উক্ত বিপুল সংখ্যক উলামা কর্তৃক সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করতে ভুলে যাওয়া মোটেও অনাকাঙ্খিত কিছু না, বরং তা এমন কিছু যা ঘটার সম্ভাবনা এমনেতেই অনেক বেশি।  

দুই.  

মানুষদের মধ্যে বিদ্যমান একটি সাধারণ প্রবণতা বা অভ্যাস হচ্ছে এই যে, ব্যতিক্রমের পরিমাণ অতিসামান্য, অতিনগণ্য, অতিতুচ্ছ এবং প্রায় কিছুইনা হলে মানুষ সেই ব্যতিক্রমকে উপেক্ষা করাপূর্বক উল্লেখ করা হতে বিরত থাকতে পারে।  

তিন. 

যথেষ্ট সংখ্যক এমন উলামারাও আছেন যারা কিনা সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্তকরণের ক্ষেত্রে বা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন।   

সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্তকরণের ক্ষেত্রে বা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন এমন উলামাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন, _[5]  

(১) তাক্বিউদ্দিন ইবনু তাইমিয়াহ 
(২) ইবনু কাইয়িমিল-যাওযিয়াহ 
(৩) ইবনু কাসির আদ-দিমাশক্বী 
(৪) আবু-ত্বহির আস-সিলাফী 
(৫) আবু-উমার ইবনুস-সলাহ 
(৬) মুহিউদ্দিন আন-নওওই 
(৭) ইবনু হাজার আল-আসক্বলানী 
(৮) আবুল-খাইর আস-সাখাওই 
(৯) বাদরুদ্দিন আয-যারকাশী 
(১০) ইবনু আবিল-ঈয আল-হানাফী 
(১১) আব্দুর-রয়ুউফ আল-মুনাওই 
(১২) আব্দুল-আযিয ইবনু বায
(১৩) মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদিয়িঈ 
(১৪) হাতিম বিন আরিফ আল-আওনী 
(১৫) মুস্তফা আল-আদাওই 
(১৬) ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম 
(১৭) হাসান আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী 
(১৮) মুহাম্মাদ বিন মাত্বর আয-যাহরানী 
(১৯) মুহাম্মাদ বিন ফারিদ যারইওহ  

……এবং অন্যান্য আরও অনেকেই। 

যদি বলা হয় যে : যেসব উলামারা সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্তকরণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন, সেসব উলামাদের অনেকেই অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখকরণ ব্যতীত সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে ব্যক্ত করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করা এবং কিছু ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম থাকার কথা উল্লেখ না করা, এটাত এক ধরনের স্ববিরোধিতা!   

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

এটা স্ববিরোধিতা না, বরং এটা হচ্ছে ভাষাগত বৈধতা। উক্ত উলামারা কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখকরণের সহিত সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্ত করেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখকরণ ব্যতীত সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা যেসব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করেন নি, সেসব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার বিষয়টি কথাতে শাব্দিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও কথার অর্থের মধ্যে ঊহ্যভাবে বিদ্যমান আছে। _[6]  

2.3. তৃতীয় স্পষ্টীকরণ :-  

তৃতীয় স্পষ্টীকরণ এর ক্ষেত্রে কিছু জটিল ও বিস্তারিত বিষয়কে সংক্ষেপে ও সরলভাবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে কিছু ছোট আকৃতির পরিভাষা ব্যবহার করা হবে, সেই পরিভাষাগুলো হল : নীরব আলেম, দ্বিতীয় উক্তি এবং তৃতীয় উক্তি। 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি নির্ভরযোগ্য ইল্লতমুক্ত সহিহ নাকি অনির্ভরযোগ্য ইল্লতযুক্ত? এই প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি এবং কিছুই লিখেননি, এমন যেকোনো আলেমকে উদ্দেশ্য করার জন্য কেবলমাত্র তৃতীয় স্পষ্টীকরণের ক্ষেত্রে "নীরব আলেম" পরিভাষাটি ব্যবহৃত হবে। 

"দ্বিতীয় উক্তি" মানে হচ্ছে এমন যেকোনো উক্তি বা বক্তব্য যা দ্বারা (সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান কোনো সুনির্দিষ্ট হাদিসকে সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য না করে) আম্মভাবে (ব্যাপকার্থে) সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসকে সহিহ সাব্যস্ত করা হয়েছে বা হয় বা যায়।  

"তৃতীয় উক্তি" মানে হচ্ছে এমন যেকোনো উক্তি বা বক্তব্য যা দ্বারা (সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান কোনো সুনির্দিষ্ট হাদিসকে সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য না করে) আম্মভাবে (ব্যাপকার্থে) সহিহ মুসলিম এর সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা ঘোষণা করা হয়েছে বা হয় বা যায়। 

উল্লেখ্য যে : দ্বিতীয় স্পষ্টীকরণে ব্যক্তকৃত অনেক কথাই তৃতীয় স্পষ্টীকরণ এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তৃতীয় স্পষ্টীকরণে বলতে হতো এমন বহু কথাই দ্বিতীয় স্পষ্টীকরণে বলে দেওয়া হয়েছে। যেই কথাগুলো দ্বিতীয় স্পষ্টীকরণে বলে দেওয়া হয়েছে সেই কথাগুলো তৃতীয় স্পষ্টীকরণে আবার বলতে যাব না। তৃতীয় স্পষ্টীকরণটিকে দ্বিতীয় স্পষ্টীকরণটির আলোকে বুঝার চেষ্টা করুন। 

কোনো একজন নীরব আলেম কর্তৃক দ্বিতীয় উক্তি ব্যক্তকরণের দ্বারা এটা প্রমাণিত হবে না যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি উক্ত নীরব আলেম এর নিকট নির্ভরযোগ্য ইল্লতমুক্ত সহিহ। কারণ এক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার অত্যন্ত দৃঢ় ও অত্যন্ত তীব্র সম্ভাবনা আছে যে উক্ত নীরব আলেম যখন সহিহ মুসলিম এর সব হাদিস সম্পর্কে মন্তব্য করছিলেন তখন শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি তাঁর
খেয়ালে ছিল না। 

কোনো একজন নীরব আলেম কর্তৃক তৃতীয় উক্তি ব্যক্তকরণের দ্বারা এটা প্রমাণিত হবে না যে উক্ত নীরব আলেম এটা বিশ্বাস করেন যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিহ হওয়ার উপর ইজমা আছে। কারণ এক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার অত্যন্ত দৃঢ় ও অত্যন্ত তীব্র সম্ভাবনা আছে যে উক্ত নীরব আলেম যখন সহিহ মুসলিমের সব হাদিসের সহিহ হওয়ার উপর ইজমা থাকার বিষয়টিকে ব্যক্ত করছিলেন তখন শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি তাঁর খেয়ালে ছিলনা।

2.4. চতুর্থ স্পষ্টীকরণ :-  

আহমাদ বিন শুয়াঈব আন-নাসাঈ শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে নিম্নে উল্লেখকৃত এই সনদটি দ্বারা বর্ণনা করেছেন, _[7]  

أخبرنا إبراهيم بن يعقوب، قال: حدثني محمد بن الصباح، قال: حدثنا أبو عبيدة الحداد، قال: حدثنا الأخضر بن عجلان، عن ابن جريج المكي، عن عطاء، عن أبي هريرة،  

আন-নাসাঈ কর্তৃক বর্ণিত উক্ত সনদটি শায।  

উক্ত সনদটিতে, আলআখদ্বার বিন আজলান বর্ণনা করেছেন যে ইবনু জুরাইজ হাদিসটি পেয়েছেন আতা হতে।   

অপরদিকে, হাজ্জাজ বিন মুহাম্মাদ, হিশাম বিন ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ বিন ছাওর বর্ণনা করেছেন যে ইবনু জুরাইজ হাদিসটি পেয়েছেন ইসমাইল বিন উমাইয়াহ হতে।  

স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে ইবনু জুরাইজ হতে সূত্র বর্ণনাকরণের ক্ষেত্রে মতভেদ ঘটেছে, আলআখদ্বার এর মতে ইবনু জুরাইজ হাদিসটি পেয়েছেন আতা হতে, পক্ষান্তরে হাজ্জাজ, হিশাম এবং ইবনু ছাওর এর মতে ইবনু জুরাইজ হাদিসটি পেয়েছেন ইসমাঈল বিন উমাইয়াহ হতে। _[8]  

হাজ্জাজ বিন মুহাম্মাদ এবং হিশাম বিন ইউসুফ, এনারা দুজন রাবি হিসেবে আলআখদ্বার বিন আজলান এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী।   

হাজ্জাজ, হিশাম এবং ইবনু ছাওর কর্তৃক ইবনু জুরাইজ হতে বর্ণিত সূত্রটি শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ এবং পরিচিত। অপরদিকে আলআখদ্বার কর্তৃক বর্ণিত সূত্রটি শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ক্ষেত্রে খুবই কম পরিচিত।   

সুতরাং, আন-নাসাঈ কর্তৃক বর্ণিত উক্ত সনদটি শায।   

…[9][10]  

2.5. পঞ্চম স্পষ্টীকরণ :-  

সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান সমালোচিত হাদিসগুলোকে দুইটি প্রকারে বিভক্ত করা যায়, যথা :-  

(১) প্রথম প্রকার :  

একজন বা সামান্য কয়েকজন মুহাদ্দিস বললেন যে সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান অমুক হাদিসটি ইল্লতযুক্ত। অতঃপর মুসলিমবিশ্বের বাকি সকল মুহাদ্দিসরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে উক্ত সমালোচনাটিকে প্রত্যাখ্যান করলেন এবং উক্ত সমালোচনাটির ভুল ও অগ্রহণযোগ্য হওয়ার উপর একমত হলেন।   

সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান যেই সমালোচিত হাদিসগুলোর ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত এই পরিস্থিতিটি তৈরি হয়েছে সেই সমালোচিত হাদিসগুলো "প্রথম প্রকার" এর অন্তর্ভুক্ত। 

(২) দ্বিতীয় প্রকার :  

একজন বা সামান্য কয়েকজন মুহাদ্দিস সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে এমন একটি হাদিসকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করলেন। অতঃপর মুসলিমবিশ্বের মুহাদ্দিসদের একটা বড় অংশ উক্ত সমালোচনাটিকে গ্রহণ করলেন, সঠিক সাব্যস্ত করলেন এবং সমর্থন করলেন। অপরদিকে, মুসলমবিশ্বের মুহাদ্দিসদের অপর একটা অংশ উক্ত সমালোচনাটিকে প্রত্যাখ্যান করলেন, ভুল সাব্যস্ত করলেন এবং খণ্ডন করলেন। অতঃপর, উক্ত সমালোচনাটি সঠিক নাকি ভুল তা নিয়ে মুহাদ্দিসদের উক্ত দুইটি অংশ সর্বদাই সকল যুগেই সবসময়ই মতভেদ ও বিতর্ক করে গেলেন এবং কখনোই কোনো একটি সুনির্দিষ্ট মতের উপর একমত হলেন না।  

সহিহ মুসলিমে বিদ্যমান যেই সমালোচিত হাদিসগুলোর ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত এই পরিস্থিতিটি তৈরি হয়েছে সেই সমালোচিত হাদিসগুলো "দ্বিতীয় প্রকার" এর অন্তর্ভুক্ত।  

-----  

সহিহ মুসলিমে যত সমালোচিত হাদিস আছে, তার প্রায় সবগুলোই উক্ত প্রথম প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত। এবং আলোচনাধীন শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি হচ্ছে উক্ত দ্বিতীয় প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত সমালোচিত হাদিসগুলোর উপর আসা সমালোচনাগুলো শায, ভুল, অগ্রহণযোগ্য, অধর্তব্য এবং অবিবেচ্য। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত সমালোচিত হাদিসগুলোর উপর আসা সমালোচনাগুলো গায়রে শায, সঠিক হতে পারে, গ্রহণযোগ্য, ধর্তব্য এবং বিবেচ্য।  

2.6. ষষ্ঠ স্পষ্টীকরণ :-  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য হওয়ার মানে কখনোই এই না যে, আবু-হুরাইরাহ (রা) হাদিসটিকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কোনো ভুল করেছেন। হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্তকারী উলামাদের কেউই হাদিসটির ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য হওয়ার হওয়ার পিছনে আবু-হুরাইরাহ (রা) কে দায়ী করেন নি। 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য হওয়ার দ্বারা কখনোই কোনোভাবেই হাদিসশাস্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল না, হয়নি, হয়না এবং হবেনা। হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্তকারী উলামারা সবাই হাদিসশাস্ত্রে বিশ্বাসী মূলধারার সুন্নী মুসলিম ছিলেন। 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য হওয়ার দ্বারা সহিহ মুসলিম গ্রন্থটির নির্ভরযোগ্যতা এবং মর্যাদা কমে যায় না। কারণ, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সহিহ মুসলিমের সকল হাদিসের কেবলমাত্র 0.03297066% এর প্রতিনিধিত্ব করে। 

3. হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ :-  

নিম্নে উল্লেখকৃত এই ইল্লতগুলোর দ্বারা বিভিন্ন মুহাদ্দিস কর্তৃক শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে।  

(১) হাদিসটির মাতানটি রাসূল (সা) এর বক্তব্য নয় বরং কাব আল-আহবার এর বক্তব্য যা কাব আল-আহবার ইসরাইলিয়াত থেকে গ্রহণ করেছেন। হাদিসটিকে ভুলবশত রাসূল (সা) হতে মারফুউরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।  

(২) ইসমাঈল বিন উমাইয়াহ, আইয়ুব বিন খালিদ থেকে হাদিসটিকে শ্রবণ করেন নি। বরং, প্রকৃতপক্ষে, ইসমাঈল বিন উমাইয়াহ, ইব্রাহিম বিন আবি-ইয়াহইয়া নামক একজন মাতরুক রাবি থেকে হাদিসটিকে শ্রবণ করেছেন।  

(৩) হাদিসটির চূড়ান্ত সনদে বিদ্যমান রাবী 'আইয়ুব বিন খালিদ' একজন যইফ রাবী। 

(৪) একাধিক বিভিন্ন কারণে এবং উপায়ে, বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন দিক দিয়ে, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে, হাদিসটির মাতানটি দূর্বলতাযুক্ত, ক্রুটিপূর্ণ, ভুলবিশিষ্ট, সমস্যাজনক, অনির্ভরযোগ্য এবং অগ্রহণযোগ্য। 

…[10]  

4. হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী কিছু উলামাদের নাম উল্লেখকরণ :-  

প্রচুর সংখ্যক মুতাক্বদ্দীম, মুতাআখখীর এবং মুআসীর উলামারা শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন এবং হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়াকে সমর্থন করেছেন।  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী এবং হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়াকে সমর্থনকারী কিছু মুতাক্বদ্দীম উলামাদের নাম নিম্নরূপ, 

(১) ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-ক্বাত্তান [10] 
(২) আব্দুর-রহমান বিন মাহদী [10] 
(৩) আলী ইবনুল-মাদিনী [10] 
(৪) ইয়াহইয়া ইবনু মুআঈন [10] 
(৫) মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী [10] 
(৬) মুহাম্মাদ ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী [10]  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী এবং হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়াকে সমর্থনকারী কিছু মুতাআখখীর উলামাদের নাম নিম্নরূপ, 

(৭) আবুল-ফাতাহ আল-আযদী [10] 
(৮) আবু-বকর আল-বাইহাক্বী [10]
(৯) ইবনু আতিয়াহ আল-আন্দালুসী [10]  
(১০) আবুল-আব্বাস আল-ক্বুরতুবী [10] 
(১১) আবু-আব্দিল্লাহ আল-ক্বুরতুবী [10]  
(১২) মুহিউদ্দিন আবু-যাকারিয়া আন-নওওই [11] 
(১৩) তাক্বিউদ্দিন ইবনু তাইমিয়াহ [10] 
(১৪) ইবনু ক্বাইয়িমিল যাওযিয়াহ [10] 
(১৫) জামালুদ্দিন আল-মিযযী [12] 
(১৬) আলাউদ্দিন আল-খাযীন [13] 
(১৭) আমাদুদ্দিন ইবনু কাসির আদ-দিমাশক্বী [10]
(১৮) আব্দুল-ক্বাদির আল-ক্বুরেশী [10] 
(১৯) ইবনু আবিল-ঈয আল-হানাফী [14] 
(২০) বাদরুদ্দিন আয-যারকাশী [10] 
(২১) সিরাজুদ্দিন ইবনুল-মুলাক্কীন [15] 
(২২) আল-মোল্লা আলী আল-ক্বারী [16] 
(২৩) আব্দুর-রয়ুউফ আল-মুনাওই [10]  
(২৪) মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আস-সনআনী [17]  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী এবং হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়াকে সমর্থনকারী কিছু মুআসীর উলামাদের নাম নিম্নরূপ, 

(২৫) শিহাবুদ্দিন আবুছ-ছানা আল-আলওয়াসী [10] 
(২৬) মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ আল-মাযহারী [18] 
(২৭) আবু-আব্দির-রহমান আল-হুউত [19] 
(২৮) মুহাম্মাদ রাশিদ রিদ্বা [10] 
(২৯) জামালুদ্দিন আল-ক্বাসিমী [10] 
(৩০) আব্দুল-হাফীয আল-ফাসী [10] 
(৩১) আবুল-ফাইদ্ব আহমাদ আল-গুমারী [10] 
(৩২) মুহাম্মাদ আল-আমিন আশ-শানকিতিঈ [10] 
(৩৩) মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন [10] 
(৩৪) আব্দুল-আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায [20][21] 
(৩৫) শুআঈব আল-আরনাউউত [10] 
(৩৬) বকর আবু-যাইদ [21] 
(৩৭) সালিহ আল-ফাওযান [21] 
(৩৮) আব্দুল্লাহ বিন গ্বদইয়ান [21] 
(৩৯) আব্দুল-আযিয আল আশশায়খ [21] 
(৪০) আব্দুল-আযিয বিন আব্দুল্লাহ আর-রাজিহী [22] 
(৪১) মুহাম্মাদ দ্বিয়াউর রহমান আল-আ'যামী [23] 
(৪২) ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম [24] 
(৪৩) মুহাম্মাদ আবু-শুহবাহ [10] 
(৪৪) সাঈদ বিন মুহাম্মাদ আস-সানারী [25] 
(৪৫) হুসাইন সালিম আসাদ [26] 
(৪৬) বাশশার আওয়াদ মারুফ [27] 
(৪৭) মুহাম্মাদ বিন ফারিদ যারইওহ [10] 
(৪৮) সুলাইমান বিন মুহাম্মাদ আদ-দাবিখী [10] 
(৪৯) আহমাদ আল-ক্বুসাইইর [10] 
(৫০) আব্দুল্লাহ আল-গ্বুনাইমান [28] 
(৫১) নাসির বিন আব্দিল-কারিম আল-আলী [29]  

5. হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী উলামাদের সংখ্যাটা কম নয় বরং বেশি :-  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী উলামাদের সংখ্যাটা কম (قليل) নয় বরং বেশি (كثير)। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে চিন্তাকারী একাধিক সংখ্যক উলামারা এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, 

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী আলেম 'হাসান আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী' বলেছেন যে,_[30]  

وهذا الحديث نازع في ثبوته كثير من المحدثين  

অর্থ : প্রচুর সংখ্যক মুহাদ্দিসরা এই হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতার বিরোধিতা করেছেন।  

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী আলেম 'মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ' বলেছেন যে,
_[31]  

وذهب إليه كثير من العلماء والمحدثين  

অর্থ : প্রচুর সংখ্যক আলেম ও মুহাদ্দিস এই মতটির (হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়ার মতটির) পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। 

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী আলেম 'ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ আল-লাহিম' বলেছেন যে,
_[32]  

ومتن الحديث فيه نكارة رده بسببها كثير من النقاد  

অর্থ : হাদিসটির মাতানে নাকারাহ (সমস্যা) বিদ্যমান এবং এই কারণে প্রচুর সংখ্যক নাক্বিদ (মুহাদ্দিস) হাদিসটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

6. অধিকাংশ উলামাদের নিকট হাদিসটি ইল্লতযুক্ত :-  

আবু-জা'ফার মুহাম্মাদ ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণস্বরূপ লিখেছেন যে,_[33]  

وأولى القولين في ذلك عندي بالصواب قول من قال: اليوم الذي ابتدأ الله تعالى ذكره فيه خلق السموات والأرض يوم الأحد، لإجماع السلف من أهل العلم على ذلك  

অর্থ : এ প্রসঙ্গে উক্ত মতদ্বয়ের মধ্যে আমার নিকট যেই মতটি অধিক সঠিক সেই মতটি হচ্ছে এই যে, যেই দিনটিতে আল্লাহ তাআলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিকরণ আরম্ভ করেছেন সেই দিনটি হচ্ছে ইয়াওমুল-আহাদ, কারণ এর উপর সালাফ উলামাদের ইজমা আছে। 

উল্লেখ্য যে : ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী এর পরিভাষায় অধিকাংশ উলামাদের মতই "ইজমা" [34]।অতএব, এক্ষেত্রে আত্ব-ত্ববারী কর্তৃক সালাফদের ইজমা ঘোষণাকরণের মানে হচ্ছে এই যে এটাই সালাফদের অধিকাংশের মত। 

আবু-জা'ফার আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আন-নাহহাস আল-মুরাদী লিখেছেন যে,_[35]  

فأما الاختلاف في ابتداء الخلق، فقال ابن سلام فيه: ابتداؤه يوم الأحد، وكذا قال مجاهد والضحاك، وعليه أكثر الناس، وقال بعض العلماء: يوم السبت؛ وكذا قال محمد بن إسحاق  

অর্থ :  অতঃপর, সৃষ্টির আরম্ভ হওয়ার প্রসঙ্গে মতভেদ বিদ্যমান। এই প্রসঙ্গে ইবনু সালাম বলেছেন যে সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে, এবং অনুরূপ বলেছেন মুজাহিদ এবং আদ্ব-দ্বাহহাক এবং মানুষদের অধিকাংশই এই মতের উপর। উলামাদের একাংশ বলেছেন যে তা ইয়াওমুস সাবাত, এবং অনুরূপ বলেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব। 

তাক্বিউদ্দিন আবুল-আব্বাস ইবনু তাইমিয়াহ আল-হাররানী লিখেছেন যে, _[36]  

وقد روى في ابتدائه يوم السبت حديث رواه مسلم فالذي عليه الجمهور وعامة الأحاديث أن ابتداءه يوم الأحد  

অর্থ : এবং সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুস-সাবাতে হওয়ার প্রসঙ্গে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যা মুসলিম বর্ণনা করেছেন। তবে যেই মতটির উপর জুমহুর (অধিকাংশ) উলামারা আছেন এবং প্রায় সকল হাদিসগুলো আছে তা হচ্ছে এই যে, সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে। 

মুহিউদ্দিন আব্দুল-ক্বাদির বিন মুহাম্মাদ আল-ক্বুরেশী শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণস্বরূপ লিখেছেন যে,_[37]  

واتفق الناس على أن يوم السبت لم يقع فيه خلق، وأن ابتداء الخلق يوم الأحد  

অর্থ : এবং মানুষরা এই ব্যাপারে একমত হয়েছে যে, ইয়াওমুস-সাবাতে সৃষ্টিকরণ সংঘটিত হয়নি এবং সৃষ্টিকরণ আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে। 

আব্দুল-হাক্ব বিন সাইফুদ্দিন আদ-দিহলওই লিখেছেন যে,_[38]  

دل هذا الحديث على أن ابتداء الخلق يوم السبت، والمشهور أنه يوم الأحد  

অর্থ : এই হাদিসটি সৃষ্টির আরম্ভ ইয়াওমুস-সাবাতে হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে, এবং প্রসিদ্ধ হচ্ছে এই যে তা  ইয়াওমুল-আহাদ।  

সুতরাং প্রমাণিত হল যে, উলামাদের অধিকাংশের মতে আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টিকরণ ইয়াওমুল আহাদে আরম্ভ হয়েছে। 

যদি বলা হয় যে : ইবনুল-আনবারী নামে পরিচিত আবু-বকর মুহাম্মাদ ইবনুল-ক্বাসিম আল-আনবারী বলেছেন যে, _[39]  

واتفق أهل العلم على أن الله جل وعز ابتدأ الخلق يوم السبت  

অর্থ : এবং আহলুল-ইলম এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে আল্লাহ জাল্লা ওয়া আযযা ইয়াওমুস সাবাতে সৃষ্টিকরণ আরম্ভ করেছেন। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

প্রথমত, ইবনুল-আনবারী এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটি ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী , ইবনু তাইমিয়াহ এবং আব্দুল-ক্বাদির আল-ক্বুরেশী এর উপর্যুক্ত বক্তব্যত্রয়ের সহিত সাংঘর্ষিক। তাছাড়া আবু-জা'ফার আন-নাহহাস এবং আব্দুল-হক্ব আদ-দেহলওই এর উপর্যুক্ত বক্তব্যদ্বয় ইবনুল-আনবারী এর উপর্যুক্ত বক্তব্যটির ভুল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে।  

দ্বিতীয়ত, ইবনুল-আনবারী এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটিকে ইবনু তাইমিয়াহ সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য করাপূর্বক অশুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। ইবনুল-আনবারী এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটিকে উদ্দেশ্য করে ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন যে,_[40]  

غلط من جعل الأول إجماع أهل العلم من المسلمين 

অর্থ : যিনি প্রথমটিকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত আহলুল-ইলম এর ইজমা বানিয়ে দিয়েছেন তিনি ভুল করেছেন।  

এবার, 

উলামাদের অধিকাংশের মতে সৃষ্টকরণ আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে। 

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি অনুযায়ী সৃষ্টিকরণ আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুস-সাবাতে। 

স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে উলামাদের অধিকাংশের মত হাদিসটির সহিত সাংঘর্ষিক। 

অর্থাৎ, এক্ষেত্রে উলামাদের অধিকাংশই হাদিসটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

সুতরাং, উলামাদের অধিকাংশের দৃষ্টিতে হাদিসটি ইল্লতযুক্ত। 

যদি বলা হয় যে : হতে পারে যে, উলামাদের অধিকাংশই হাদিসটি জানতেন না, তাই তাঁরা  এমন একটি মতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যা হাদিসটির সহিত সাংঘর্ষিক। 

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে : শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি একটি প্রসিদ্ধ (مشهور) হাদিস [41]। কোনো প্রসিদ্ধ হাদিসের ক্ষেত্রে এই ধরনের সম্ভাবনা অধর্তব্য ও অবিবেচ্য।  

যদি বলা হয় যে :  সৃষ্টিকরণ ইয়াওমুল-আহাদে আরম্ভ হওয়া এবং শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি এর মাঝে কোনো সাংঘর্ষিকতা ও বিরোধ নেই।  

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

এটা সঠিক হবে যদি এবং কেবল যদি শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে বর্ণিত ইয়াওমগুলো কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ছয় ইয়াওম হতে ভিন্ন হয়।  

সকল সময়ের সকল যুগের সকল উলামাদের মাঝেই এই ব্যাপারে ঐক্যমত ছিল যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে বর্ণিত ইয়াওমগুলো কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ছয় ইয়াওম হতে ভিন্ন নয় বরং শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ইয়াওমকেই বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত ঐক্যমত বহাল ছিল আল-আলবানী এর আগমনের আগ পর্যন্ত। অতঃপর আল-আলবানী এসে দাবি করেন যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে বর্ণিত ইয়াওমগুলো কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ছয় ইয়াওম হতে ভিন্ন [42]। অতঃপর আল-আলবানীর উক্ত দাবিটিকে বা ব্যাখ্যাটিকে আল-আলবানীর সমসাময়িক বিভিন্ন উলামারা এবং আল-আলবানীর পরে আসা বিভিন্ন উলামারা গ্রহণ ও সমর্থন করেন। 

অতএব, আল-আলবানীর আগে আসা কোনো আলেম যদি বলেন যে সৃষ্টিকরণ আরম্ভ হয়েছিল ইয়াওমুল-আহাদে, তাহলে এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হবে যে উক্ত আলেমের দৃষ্টিতে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য। 

অপরদিকে, সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক সংখ্যক উলামারা একদম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে উলামাদের অধিকাংশের নিকট শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য। 

উদাহরণস্বরূপ , 

আবু-আব্দির-রহমান আল-হুউত বলেছেন যে,_[19]  

وأكثر أهل العلم على أنه غلط 

অর্থ : এবং আহলুল-ইলম এর অধিকাংশের মতে হাদিসটি ভুল। 

আবু-আব্দিল্লাহ মুস্তফা ইবনুল-আদাওই বলেছেন যে,_[43]  

الرفع وهم والجمهور من المحدثين على إعلاله وأنه من قول كعب الأحبار  

অর্থ : হাদিসটির মারফু হওয়া ভুল, এবং মুহাদ্দিসদের অধিকাংশের মতে হাদিসটি ইল্লতযুক্ত এবং কাব আল-আহবার এর বক্তব্য হতে আগত। 

সুলাইমান বিন মুহাম্মাদ আদ-দাবিখী বলেছেন যে,_[44]  

إلا أن المضعفين له أكثر عددا وأعلم بالعلل من المصححين له. 

অর্থ : কিন্তু হাদিসটিকে যইফ সাব্যস্তকারীরা হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্তকারীদের তুলনায় সংখ্যার দিক দিয়ে অধিক এবং ইলাল প্রসঙ্গে অধিক জ্ঞানী। 

আহমাদ বিন আব্দিল-আযিয আল-ক্বুসাইইর বলেছেন যে,_[45]  

وهذا رأي الأكثر من المفسرين و المحدثين   

অর্থ : এবং মুফাসসিরদের এবং মুহাদ্দিসদের অধিকাংশের মত এটাই।  

islamweb এ বলা হয়েছে যে,_[46]  

وأكثر المحققين والجهابذة الكبار على إعلاله  

অর্থ : মুহাক্বক্বিক্বদের এবং উচুস্তরের দক্ষ উলামাদের অধিকাংশের মতে হাদিসটি ইল্লতযুক্ত। 

7. হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সমর্থনকরণ ও প্রতিষ্ঠিতকরণ :-  

এক. 

"হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশে উল্লেখকৃত ১ নং ইল্লতটির জবাবস্বরূপ হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, 

"কাব আল-আহবার হতে এমনটা সহিহ সনদে প্রমাণিত আছে যে তিনি সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল আহাদে হওয়ার মতটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন [47]। সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল আহাদে হওয়ার মতটি শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিত সাংঘর্ষিক। সুতরাং, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি কাব আল-আহবার এর বক্তব্য নয়।"  

উপর্যুক্ত এই জবাবটির খণ্ডন নিম্নরূপ। 

কোনো একজন আলেম কর্তৃক স্ববিরোধিতা সংঘটিত হওয়া খুবই সম্ভব এবং এমনটা হওয়ার বিপুল সংখ্যক উদাহরণও আছে। অর্থাৎ, কোনো একজন আলেম থেকে একে অপরের বিরোধী দুইটি ভিন্ন ভিন্ন কথা প্রকাশিত হওয়া অত্যন্ত সম্ভব এবং এমনটা অহরহই হয়ে থাকে। 

সুতরাং, সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল আহাদে হওয়ার মতটির কাব থেকে প্রকাশিত হওয়ার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি কাব এর বক্তব্য নয়।  

দুই.  

"হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশে উল্লেখকৃত ১ নং ইল্লতটির জবাবস্বরূপ হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, 

"ইহুদি-খ্রিষ্টানরা এই ব্যাপারে একমত যে সৃষ্টিকরণ আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতেও এটাই বলা আছে যে সৃষ্টিকরণ আরম্ভ হয়েছে ইয়াওমুল-আহাদে। সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল আহাদে হওয়া শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির সহিত সাংঘর্ষিক। সুতরাং, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি ইসরাইলিয়াত হতে গ্রহণকৃত নয়।"  

উপর্যুক্ত এই জবাবটির খণ্ডন নিম্নরূপ। 

আল-বুখারী এবং একাধিক সংখ্যক অন্যান্য মুহাদ্দিসরা শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে কাব আল-আহবার কর্তৃক ইসরাইলিয়াত হতে গ্রহণকৃত হিসেবে গণ্য ও সাব্যস্ত করেছেন।  

কাব আল-আহবার এর যুগে, মূল ধারার সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের থেকে বিচ্ছিন্ন এমন কিছু ছোট ছোট অপরিচিত উপেক্ষাকৃত ইহুদি-খ্রিষ্টান উপদলের অস্তিত্ব ছিল যারা কিনা বিভিন্ন বিষয়ে মূল ধারার ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিরোধিতা করত। এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে, কাব আল-আহবার শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে এরকম কোনো একটা বিচ্ছিন্ন উপদল থেকে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং, সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে হওয়ার উপর ইহুদি-খ্রিষ্টানগণ কর্তৃক একমত হওয়ার দ্বারা উক্ত মুহাদ্দিসগণ কর্তৃক শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে কাব কর্তৃক ইসরাইলিয়াত হতে গ্রহণকৃত হিসেবে গণ্যকরণ ও সাব্যস্তকরণ ভুল প্রমাণিত হয় না। 

প্রায় সকল ইহুদি-খ্রিষ্টান কর্তৃক গ্রহণকৃত তাওরাত-ইনজিল এর সুপ্রসিদ্ধ সুপরিচিত মূল ধারার সংস্করণগুলোর পাশাপাশি তাওরাত-ইঞ্জিলের কিছু বিচ্ছিন্ন অপরিচিত উপেক্ষাকৃত সংস্করণও ছিল। এসব বিচ্ছিন্ন সংস্করণগুলো এবং উক্ত মূল ধারার সংস্করণগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে একে অপরের সহিত সাংঘর্ষিক ছিল। এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে, কাব আল-আহবার এরকম কোনো একটা বিচ্ছিন্ন সংস্করণ থেকে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টিকরণের আরম্ভ ইয়াওমুল-আহাদে হওয়ার বিষয়টি বা কথাটি ব্যক্তকৃত বা উল্লেখকৃত হওয়ার দ্বারা উক্ত মুহাদ্দিসগণ কর্তৃক শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে কাব কর্তৃক ইসরাইলিয়াত হতে গ্রহণকৃত হিসেবে গণ্যকরণ ও সাব্যস্তকরণ ভুল প্রমাণিত হয় না। 

তিন. 

"হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশে উল্লেখকৃত ২ নং ইল্লতটির জবাবস্বরূপ হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, 

"মুহাদ্দিসদের সকলেই এই ব্যাপারে একমত যে, ইসমাঈল বিন উমাইয়াহ ছীক্বাহ গ্বাইর-মুদাল্লিস। সুতরাং, ইসমাইল বিন উমাইয়াহ হাদিসটিকে আইয়ুব বিন খালিদ থেকেই শ্রবণ করেছেন।"  

উপর্যুক্ত এই জবাবটির খণ্ডন নিম্নরূপ। 

কোনো একজন রাবী কর্তৃক ছীক্বাহ গ্বাইর-মুদাল্লিস হওয়ার মানে এই না যে উক্ত রাবীটির দ্বারা হাদিস বর্ণনাকরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা ভুলও হতে পারবেনা। বরং একজন ছীক্বাহ রাবীর দ্বারাও অন্তত ১ বার ভুল হওয়া সম্ভব এবং এমনটা হওয়ার প্রচুর সংখ্যক উদাহরণও বিদ্যমান। 

কোনো একজন মুহাদ্দিস যখন কোনো একজন রাবীকে ছীক্বাহ সাব্যস্ত করেন তখন উক্ত মুহাদ্দিস উক্ত ছীক্বাহ সাব্যস্তকরণ দ্বারা এটা বুঝান না যে উক্ত রাবীটির দ্বারা শুধুমাত্র একটা ভুলও সংঘটিত হতে পারেনা।  

কোনো একজন রাবী কর্তৃক কেবলমাত্র একবার ভুল করা উক্ত রাবীটির ছীক্বাহ হওয়ার উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। _[48]  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারীদের কেউই ইসমাইল বিন উমাইয়াহ এর ছীক্বাহ এবং গ্বাইর মুদাল্লিস হওয়ার উপর কোনো ধরনের কোনো আপত্তি প্রকাশ করেননি। হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারীদের কেউই ইসমাইল বিন উমাইয়াহ কে মুদাল্লিস সাব্যস্ত করেননি। বরং, এক্ষেত্রে ইসমাইল বিন উমাইয়াহ এর একটিমাত্র বিশেষ অতিসুনির্দিষ্ট খাস হাদিসকে একান্তভাবে বিশেষভাবে সুনির্দিষ্টভাবে খাসভাবে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে উক্ত হাদিসটি ইসমাইল বিন উমাইয়াহ শ্রবণ করেছেন ইব্রাহিম বিন আবি-ইয়াহইয়া থেকে। অর্থাৎ শুধুমাত্র কেবলমাত্র উক্ত হাদিসটির ক্ষেত্রে ইসমাইল বিন উমাইয়াহ ছীক্বাহ গ্বাইর-মুদাল্লিস হওয়া সত্ত্বেও ভুলবশত অনিচ্ছাকৃতভাবে সনদ হতে ইব্রাহিম বিন আবি-ইয়াহইয়া এর নাম বাদ দিয়ে দিয়েছেন।  

সুতরাং, "হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশটিতে উল্লেখকৃত ২ নং ইল্লতটি এবং ইসমাইল বিন উমাইয়াহ এর ছীক্বাহ গ্বাইর-মুদাল্লিস হওয়া একে অপরের সহিত সাংঘর্ষিক নয়। 

সুতরাং, উক্ত দুইটি বিষয়কে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো অসঠিক। 

সুতরাং, ইসমাইল বিন উমাইয়াহ এর ছীক্বাহ গ্বাইর-মুদাল্লিস হওয়ার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে "হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশটিতে উল্লেখকৃত ২ নং ইল্লতটি  ভুল। 

চার.  

"হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশে উল্লেখকৃত ৩ নং ইল্লতটির জবাবস্বরূপ হাদিসিটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, 

" আবুল-ফাতাহ আল-আযদী এবং সামান্য কয়েকজন মুহাদ্দিস ব্যতীত সকল মুহাদ্দিসদের নিকট আইয়ুব বিন খালিদ ছীক্বাহ বা হাসানুল-হাদিস। অপরদিকে, আবুল-ফাতাহ আল-আযদী সম্পর্কে প্রচুর সংখ্যক মুহাদ্দিসরা বলেছেন যে আবুল-ফাতাহ আল-আযদী জারাহ-তাদিল এর ক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য। "  

উপর্যুক্ত এই জবাবটি সঠিক এবং অখণ্ডনীয়।   

তবে উল্লেখ্য যে :  আবুল-ফাতাহ আল-আযদী এবং ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-ক্বাত্তান ব্যতীত অন্য আর কোনো আলেমই কেবলমাত্র আইয়ুব বিন খালিদ এর যইফ হওয়ার উপর ভিত্তি করে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেন নি। উক্ত দুইজন মুহাদ্দিস ব্যতীত  সকল উলামারাই কেবলমাত্র আইয়ুব বিন খালিদ এর যইফ হওয়ার উপর ভিত্তি করে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করা থেকে বিরত থেকেছেন।  

পাঁচ.   

"হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সংক্ষেপে উল্লেখকরণ" অংশে উল্লেখকৃত ৪ (চার) নং ইল্লতটির জবাবস্বরূপ হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের বহু ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। 

উক্ত ব্যাখ্যাগুলো এক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। কেন ও কিভাবে অগ্রহণযোগ্য? তা নিম্নে ব্যাখ্যা ক��া হলো। 

উ���্ত ব্যাখ্যাগুলো হচ্ছে তাওইল-ভিত্তিক।  

কোনো তাওইল এর গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে এই যে তাওইলটির পক্ষে একটা বা একাধিকটা সমর্থনকারী (قرينة أو دليل) থাকতে হবে। যদি তাওইলটির পক্ষে একটাও সমর্থনকারী না থাকে, তাহলে তাওইলটি গ্রহণযোগ্য হবে না।_[49]  

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারীদের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত উক্ত তাওইল-ভিত্তিক ব্যাখ্যাগুলোর পক্ষে কোনো সমর্থনকারী পাওয়া যায় না।  

সুতরাং, উক্ত ব্যাখ্যাগুলো অগ্রহণযোগ্য। 

যদি বলা হয় যে : উক্ত ব্যাখ্যাগুলোর পক্ষে বিদ্যমান সমর্থনকারী (قرينة أو دليل) হচ্ছে এই যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি ইল্লতমুক্ত সহিহ।   

তাহলে উত্তরস্বরূপ বলা হবে যে :  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি ইল্লতমুক্ত সহিহ হবে যদি এবং কেবল যদি উক্ত ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণযোগ্য হয়। অর্থাৎ শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতমুক্ত সহিহ হওয়া উক্ত ব্যাখ্যাগুলোর গ্রহণযোগ্য হওয়ার উপর সরাসরিভাবে নির্ভরশীল।  

সুতরাং, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতমুক্ত সহিহ হওয়ার দাবিটি উক্ত ব্যাখ্যাগুলোর পক্ষের সমর্থনকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারবে না।  

বরং, উক্ত ব্যাখ্যাগুলোর সাহায্যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্ত করতে চাইলে আগে এটা দেখাতে হবে যে উক্ত ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণযোগ্য। 

উল্লেখ্য যে : হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী মুয়াসীর উলামাদের মধ্য থেকে কয়েকজন উক্ত ব্যাখ্যাগুলোর অধিকাংশকেই খণ্ডন করেছেন। _[10]  

8. একটি বিশেষ নীতিকে প্রতিষ্ঠিতকরণ :-  

জারাহ-তাদিল সংক্রান্ত একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে এই যে, 

الجرح المفسر مقدم علی التعديل   

অর্থ : ব্যাখ্যাযুক্ত জারাহ, (ব্যাখ্যামুক্ত) তাদিল এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। 

উপর্যুক্ত এই মূলনীতিটির ভিত্তি হিসেবে কার্যরত মূলনীতিটি হচ্ছে এই যে,  

"ব্যাখ্যাযুক্ত নেতিবাচক মন্তব্য, ব্যাখ্যামুক্ত ইতিবাচক মন্তব্য এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।"  

জারাহ এবং তাদ্বইফ একই ধরনের বিষয়, বরং তাদ্বইফই হচ্ছে জারাহ এর মূল, কেননা কোনো রাবীকে জারাহ করার অর্থ হলো উক্ত রাবীটির রিওয়াইয়াতগুলোকে তাদ্বইফ করা।  

তাদিল এবং তাসহিহ একই ধরনের বিষয়, বরং তাসহিহই হচ্ছে তাদিল এর মূল, কেননা কোনো রাবীকে তাদিল করার অর্থ হলো উক্ত রাবীটির রিওয়াইয়াতগুলোকে তাসহিহ বা তাহসিন করা। 

সুতরাং, জারাহ-তাদিল সংক্রান্ত উপর্যুক্ত মূলনীতিটির ভিত্তি হিসেবে কার্যরত উক্ত মূলনীতিটি তাদ্বইফ এবং তাহসিন এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।  

সুতরাং, এমনটা বলা সঠিক হবে যে, 

"ব্যাখ্যাযুক্ত তাদ্বইফ, ব্যাখ্যামুক্ত তাসহিহ এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।"  

এই প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী বলেছেন যে,_[50]  

وهو الصواب الذي تقتضيه قاعدة: " الجرح المفسر مقدم على التعديل " التي يتفرع عنها: أن التضعيف مقدم على التصحيح إذا تبينت العلة،  

অর্থ : এবং এটাই সঠিক যেটাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করে মূলনীতি "ব্যাখ্যাযুক্ত জারাহ ব্যাখ্যামুক্ত তাদিল এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত" যা হতে নির্গত হয় যে : ইল্লত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখকৃত হলে তাদ্বইফ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে তাসহিহ এর উপর। 

9. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী উলামাদের প্রসঙ্গে :-  

9.1. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী কিছু উলামাদের নাম উল্লেখকরণ :-  

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী কিছু মুতাক্বদ্দীম উলামাদের নাম নিম্নরূপ, 

(১) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব 
(২) মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজ 
(৩) মুহাম্মাদ ইবনু খুযাইমাহ 
(৪) আবু-বকর ইবনুল-আনবারী  

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী কিছু মুতায়াখখীর উলামাদের নাম নিম্নরূপ, 

(৫) ইবনু হিব্বান আল-বুস্তী 
(৬) আবু-মানসুর আল-আযহারী 
(৭) আবু-বকর ইবনুল-আরাবী 
(৮) আবুল-ফারাজ ইবনুল-যাওযী 
(৯) সালাহুদ্দিন আল-আলাঈ 
(১০) জালালুদ্দিন আস-সুয়ুতী 
(১১) আব্দুর-রহমান আস-সুহাইলী   
(১২) আবু-আব্দিল্লাহ আল-বালানসী 
(১৩) আবু-হাইয়ান আল-আন্দালুসী 
(১৪) জামালুদ্দিন ইবনুয-যাহিরী 
(১৫) সাবাতু ইবনিল-যাওযী  
(১৬) হাসান বিন আলী আল-ফাইয়ুমী
(১৭) মুহাম্মাদ বিন আলী আশ-শাওকানী  

বিপুল সংখ্যক মুয়াসীর উলামারা হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের নাম নিম্নরূপ,  

(১৮) আব্দুর-রহমান আল-মুয়াল্লিমী
(১৯) মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী 
(২০) আবু-ইসহাক্ব আল-হুয়াইনী 
(২১) আহমাদ শাকির 
(২২) সিদ্দিক হাসান খান আল-ক্বিন্নুজী 
(২৩) ইসমাঈল হাক্বক্বী 
(২৪) হাসান আবুল-আশবাল আয-যুহাইরী  

9.2. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুতাক্বদ্দীম উলামাদের প্রসঙ্গে :-  

মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব এর বিপরীতে তাঁর চেয়ে অধিক দৃঢ় ও অধিক জ্ঞানী মুহাদ্দিস আব্দুর-রহমান বিন মাহদী হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। 

মুসলিম ইবনুল-হাজ্জাজ এর বিপরীতে তাঁর চেয়ে অধিক জ্ঞানী মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। 

মুহাম্মাদ ইবনু খুযাইমাহ এর বিপরীতে তাঁর সমপর্যায়ের মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।  

আবু-বকর ইবনুল-আনবারী এর বিপরীতে তাঁর চেয়ে অধিক জ্ঞানী মুহাদ্দিস ইয়াহইয়া ইবনু মুআঈন হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।  

তাছাড়া, ইবনু জারির আত্ব-ত্ববারী এবং আবু-জা'ফার আন-নাহহাস এর উপর্যুক্ত বক্তব্যদ্বয় হতে স্পষ্ট হয় যে মুতাক্বদ্দীম উলামাদের অধিকাংশের দৃষ্টিতে হাদিসটি ইল্লতযুক্ত।  

9.3. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুতায়াখখীর উলামাদের প্রসঙ্গে :-  

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুতায়াখখীর উলামাদেরকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা :  

(১) তাঁরা, যাঁরা হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্ত করার পাশাপাশি হাদিসটির উপর আরোপিত ইল্লতগুলোর জবাব দিয়েছেন।  

(২) তাঁরা, যাঁরা হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্ত করেছেন কিন্তু হাদিসটির উপর আরোপিত ইল্লতগুলোর কোনোটিরই জবাব দেননি। 

9.3.1. উপর্যুক্ত ১ নং ভাগটির অন্তর্ভুক্ত উলামাদের প্রসঙ্গে :-  

উক্ত উলামারা কেবলমাত্র কিছু ইল্লতের জবাব দিয়েছেন। তাঁরা যেই জবাবগুলো দিয়েছেন সেই জবাবগুলো খণ্ডনীয়, তাঁদের পক্ষ থেকে দেওয়া জবাবগুলোর খণ্ডন প্রদান করা হয়েছে এই লেখাটির "হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সমর্থনকরণ এবং প্রতিষ্ঠিতকরণ" অংশে।  

9.3.2. উপর্যুক্ত ২ নং ভাগটির অন্তর্ভুক্ত উলামাদের প্রসঙ্গে :-  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী মুতাআখখীর উলামাদের সবাই কোনো না কোনো ইল্লত বর্ণনা করেই হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। অতএব, তাঁদের এই ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণ হচ্ছে ব্যাখ্যাযুক্ত তাদ্বইফ। পক্ষান্তরে উপর্যুক্ত ২ নং ভাগটির অন্তর্ভুক্ত উলামারা হাদিসটির উপর আরোপিত ইল্লতগুলোর কোনোটিরই জবাব দেননি। অতএব, তাঁদের এই ইল্লতমুক্ত ও সহিহ সাব্যস্তকরণ হচ্ছে ব্যাখ্যামুক্ত তাসহিহ। 

অপরদিকে, এই লেখাটির "একটি বিশেষ নীতিকে প্রতিষ্ঠিতকরণ" অংশে দেখানো হয়েছে যে : ব্যাখ্যাযুক্ত তাদ্বইফ, ব্যাখ্যামুক্ত তাসহিহ এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। 

9.4. হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুয়াসীর উলামাদের প্রসঙ্গে :- 

হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুয়াসীর উলামাদের অধিকাংশই হাদিসটির উপর আরোপিত ইল্লতগুলোর জবাব দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এমনও কিছু উলামারা অন্তর্ভুক্ত আছেন যাঁরা হাদিসটির উপর আরোপিত সবগুলো ইল্লতেরই জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের উক্ত জবাবগুলো খণ্ডনীয়, তাঁদের পক্ষ থেকে দেওয়া জবাবগুলোর খণ্ডন প্রদান করা হয়েছে এই লেখাটির "হাদিসটিতে বিদ্যমান ইল্লতগুলোকে সমর্থনকরণ এবং প্রতিষ্ঠিতকরণ" অংশে।  

হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকারী মুয়াসীর উলামাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ইল্লত বর্ণনা করেই হাদিসটিকে ইল্লতযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। অতএব, তাঁদের এই ইল্লতযুক্ত সাব্যস্তকরণ হচ্ছে ব্যাখ্যাযুক্ত তাদ্বইফ। পক্ষান্তরে, হাদিসটিকে ইল্লতমুক্ত সহিহ সাব্যস্তকারী মুয়াসীর উলামাদের মধ্য থেকে যাঁরা হাদিসটির উপর আরোপিত ইল্লতগুলোর কোনোটিরই জবাব দেননি, তাঁরা কর্তৃক হাদিসটিকে ইল্লমুক্ত ও সহিহ সাব্যস্তকরণ হচ্ছে ব্যাখ্যামুক্ত তাসহিহ। অপরদিকে, এই লেখাটির "একটি বিশেষ নীতিকে প্রতিষ্ঠিতকরণ" অংশে দেখানো হয়েছে যে : ব্যাখ্যাযুক্ত তাদ্বইফ, ব্যাখ্যামুক্ত তাসহিহ এর উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। 

10. উপসংহার :-  

উপর্যুক্ত সবকিছুর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতার প্রসঙ্গে রাজিহ মত হচ্ছে এই যে, তা ইল্লতযুক্ত এবং অনির্ভরযোগ্য। 

তাছাড়া উল্লেখ্য যে, এই লেখাটিতে বেশকিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। তার উপর আবার অনেকগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয়কে খুবই সংক্ষিপ্ত করে উল্লেখ করা হয়েছে। শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির ইল্লতযুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে আরও ভালোভাবে জানার জন্য 10 নং টীকাটিতে উল্লেখকৃত উৎসগুলো দেখা যেতে পারে।  

11. পরিশিষ্ট (হাদিসটি কি বিজ্ঞানবিরোধী?) :-  

11.0. পরিশিষ্টের শিরোনাম :-  

"শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি কি বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক?"  

11.1. পরিশিষ্টের ভূমিকা :-  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়, এবং বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া আবশ্যক না, এবং এক্ষেত্রে এমনটা নিশ্চয়তার সহিত বলা যাবেনা, যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি বিজ্ঞানের সহিত সাংঘর্ষিক। বরং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ।   

11.2. পরিশিষ্টের মূল বক্তব্য :-  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটির মাতানে বিদ্যমান কিছু বিষয়ের জন্য এমনকিছু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ করা হল যা গ্রহণ করলে হাদিসটি এবং বিজ্ঞান এর মাঝে কোনো বিরোধ বা সাংঘর্ষিকতা থাকবেনা।  

এক.   

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী এর মতে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে বর্ণিত সাতদিন কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টির ছয়দিন হতে ভিন্ন এবং উক্ত হাদিসটিতে শুধুমাত্র পৃথিবী সংক্রান্ত কিছু বিষয় সম্পর্কে আলাদাভাবে পৃথকভাবে বিশেষভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে।_[51]  

দুই.  

মাজদুদ্দিন আবুস-সাআদাত ইবনুল-আছির এর মতে, শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিতে "نور" (নূর) বলতে "خير" (কল্যাণ) উদ্দেশ্য এবং "مكروه"(মাকরুহ) বলতে "شر"(অকল্যাণ) উদ্দেশ্য। _[52]    

তিন.  

শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটি সম্পর্কে মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ আল-মাযহারী লিখেছেন যে,_[53]  

دليل في الحديث على ان المراد بالجمعة التي خلق فيها آدم أول جمعة بعد خلق الأرض لعل ذلك الجمعة بعد مضى الدهور   

অর্থ : উক্ত হাদিসের মধ্যে এমন কোনো দলিল নেই যা প্রমাণ করে যে যেই জুময়াতে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই জুময়াহ পৃথিবীকে সৃষ্টি করার ঠিক পরের প্রথম জুময়াহই, বরং হতে পারে যে সেই জুময়াহ বলতে উদ্দেশ্য বহু-যুগ গত হয়ে যাওয়ার পরে আগত কোনো জুময়াহ।   

আল-মাযহারী এর উপর্যুক্ত এই বক্তব্যটি, হাদিসটিতে বর্ণিত অন্যান্য দিনগুলোর ক্ষেত্রেও সত্য, হাদিসটিতে এমনও কোনো দলিল নেই যা এটা প্রমাণ করে যে হাদিসটিতে বর্ণিত দিনগুলো একই সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত বা ধারাবাহিকভাবে একটার পর আরেকটা।   

সুতরাং, এক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব যে, হাদিসটিতে বর্ণিত দিনগুলো ধারাবাহিক না, ক্রমভিত্তিক না, একটার পর আরেকটা না, একই সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত না, বরং এদের প্রত্যেকেই সম্ভবত একেকটা ভিন্ন ভিন্ন সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত।   

11.3. পরিশিষ্টের উপসংহার :-  

যেহেতু শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবেও ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে, সুতরাং শনিবারে মাটি সৃষ্টির হাদিসটিকে বিজ্ঞানবিরোধী বলে ইসলামকে আক্রমণ করা সঠিক হবেনা।  

12. টীকাসমূহ :-  

[1]  

انظر : صحيح مسلم (دار الطباعة العامرة ، 8/127) و مسند أحمد (مؤسسة الرسالة ، 14/82 ، رقم التعليق : 1) و المسند المصنف المعلل (دار الغرب الإسلامي ،34/ 484 و 485) و غيرهم. 

[2]  

قال أبو البقاء الكفوي في الكليات (مؤسسة الرسالة ، صفحة 602)   

والعام إذا كان مقابلا للخاص يكون المراد من العام ما وراء الخاص .انتهی . 

وقال ابن رجب الحنبلي في تقرير القواعد وتحرير الفوائد (ركائز ، 2/419) 

فقد يقال إن الخاص لا يدخل في العام مطلقا ويكون تخصيصه بالذكر قرينة مخرجة له من العموم ما لم يعارض ذلك قرينة تقتضي دخوله فيه. انتهی. 

وقال عبد الله بن محمد بن سعد آل خنين في توصيف الأقضية في الشريعة الإسلامية (2/188) 

يجب العمل بعموم العام من كلام المكلف ما لم يخصص، فإذا قام دليل يخصصه عملنا بالخاص، وبقى العام على عمومه فيما عدا ما خصص منه.انتهی. 

وقال أبو بكر الجصاص في الفصول في الأصول (وزارة الأوقاف الكويتية ,1/138) 

وليس أن دلالة التخصيص غير مذكورة مع اللفظ بمانع أن يكون في معنى الاستثناء المتصل باللفظ لأنا قد وجدنا اللفظ المطلق الذي قد أريد به في استثناء بعضه قد اقتصر فيه على الإطلاق من غير ذكر الاستثناء متصلا به في بعض المواضع وإن كان قد ذكر في بعضها ولم يكن وجود ذلك في الكلام وجوازه فيه بمانع أن يكون الاستثناء مرادا. انتهی. 

[3] 

قال عبد الله بن محمد بن سعد آل خنين في توصيف الأقضية في الشريعة الإسلامية (2/189) 

أما إذا كان الرجوع ممكنا كالوصية فيقدم الخاص على العام مطلقا علم التاريخ أو جهل .انتهی. 

وقال ابن رجب الحنبلي في تقرير القواعد وتحرير الفوائد (ركائز ، الجزء الثاني، 420-421) 

والحالة الثانية: أن يكون الرجوع ممكنا، كالوصية، وعزل الإمام لمن يمكنه عزله وولايته؛ فهذا يشبه تعارض العام والخاص في كلام الشارع في الأحكام، وفي ذلك ثلاث روايات:أشهرها: تقديم الخاص مطلقا، وتخصيص العموم به، سواء جهل التاريخ أو علم. والثانية: إن جهل التاريخ؛ فكذلك، وإلا قدم المتأخر منهما.والثالثة: إن علم التاريخ؛ عمل بالمتأخر، وإن جهل تعارضا.ويتصل بهذه القاعدة قاعدتان:إحداهما: إذا اجتمع في شخص استحقاق بجهة خاصة؛ كوصية معينة وميراث، واستحقاق بجهة عامة؛ كالفقر والمسكنة؛ فإنه لا يأخذ إلا بالجهة الخاصة، نص عليه .ويتفرع على ذلك مسائل: منها: إذا أوصى لزيد بشيء، ووصى لجيرانه بشيء، وهو من الجيران؛ فإنه لا يعطى من نصيب الجيران.ومنها: إذا وصى لزيد بشيء، وللفقراء بشيء، وزيد فقير؛ فإنه لا يعطى من نصيب الفقراء شيئا، انتهی. 

[4] 

قال ابن تيمية في منهاج السنة النبوية (جامعة الإمام محمد بن سعود الإسلامية ، 7/216) 

وفي الجملة من نقد سبعة آلاف درهم، فلم يرج عليه فيها إلا دراهم يسيرة، ومع هذا فهي مغيرة ليست مغشوشة محضة، فهذا إمام في صنعته. والكتابان سبعة آلاف حديث وكسر .انتهی. 

وقال ابن أبي العز في الاتباع (عالم الكتب ، صفحة 49) 

وفي الجملة من نقد سبعة آلاف درهم فلم يبهرج عليه فيها إلا دراهم يسيرة ومع هذا فهي معتبرة ليست بمغشوشة محضة فهذا إمام في صنعته وفي كتابه سبعة آلاف حديث وكسر .انتهی. 

[5] 

قال ابن حجر في نزهة النظر في توضيح نخبة الفكر (بتحقيق القاسم ، صفحة 117) 

ثم صحيح مسلم لمشاركته للبخاري في اتفاق العلماء على تلقي كتابه بالقبول أيضا سوى ما علل.انتهی. 

وقال عبد الرؤوف المناوي في اليواقيت و الدرر شرح شرح نخبة الفكر (مكتبة الرشد ، صفحة 376) 

ثم صحيح مسلم لمشاركته للبخاري في ��تفاق العلماء على تلقي كتابه بالقبول أيضا سوى ما علل.انتهی. 

وقال ابن تيمية في جواب الاعتراضات المصرية على الفتيا الحموية (بتحقيق محمد عزير شمس ، صفحة 46) 

واعلم أن جمهور أحاديث البخاري ومسلم من هذا الباب، كما ذكر أبو عمرو بن الصلاح ومن قبله من العلماء، كالحافظ أبي طاهر السِّلَفي وغيره.انتهی. 

وقال ابن تيمية في منهاح السنة النبوية (بتحقيق محمد رشاد سالم ،الجزء السابع ، صفحة 214-216) 

ومثل هؤلاء الجهال يظنون أن الأحاديث التي في البخاري ومسلم إنما أخذت عن البخاري ومسلم، كما يظن مثل ابن الخطيب ونحوه ممن لا يعرف حقيقة الحال، وأن البخاري ومسلما كان الغلط يروج عليهما، أو كانا يتعمدان  الكذب، ولا يعلمون أن قولنا: رواه البخاري ومسلم علامة لنا على ثبوت صحته، لا أنه كان صحيحا بمجرد رواية البخاري ومسلم، بل أحاديث البخاري ومسلم رواها غيرهما من العلماء والمحدثين من لا يحصي عدده إلا الله، ولم ينفرد واحد منهما بحديث، بل ما من حديث إلا وقد رواه قبل زمانه وفي زمانه وبعد زمانه طوائف، ولو لم يخلق البخاري ومسلم لم ينقص من الدين شيء، وكانت تلك الأحاديث موجودة بأسانيد يحصل بها المقصود وفوق المقصود. وإنما قولنا: رواه البخاري ومسلم كقولنا: قرأه  القراء السبعة. والقرآن منقول بالتواتر، لم يختص هؤلاء السبعة بنقل شيء منه، وكذلك التصحيح لم يقلد أئمة الحديث فيه البخاري ومسلما، بل جمهور ما صححاه كان قبلهما عند أئمة الحديث صحيحا متلقى بالقبول، وكذلك في عصرهما وكذلك بعدهما قد نظر أئمة هذا الفن في كتابيهما، ووافقوهما على تصحيح ما صححاه، إلا مواضع يسيرة، نحو عشرين حديثا، غالبها في مسلم، انتقدها عليهما طائفة من الحفاظ، وهذه المواضع المنتقدة غالبها في مسلم، وقد انتصر طائفة لهما فيها، وطائفة قررت قول المنتقدة .
والصحيح التفصيل ; فإن فيها مواضع منتقدة بلا ريب، مثل حديث أم حبيبة، وحديث خلق الله البرية يوم السبت، وحديث صلاة الكسوف بثلاث ركوعات وأكثر.وفيها مواضع لا انتقاد فيها في البخاري، فإنه أبعد الكتابين عن الانتقاد، ولا يكاد يروي لفظا فيه انتقاد، إلا ويروي اللفظ الآخر الذي يبين أنه منتقد، فما في كتابه لفظ منتقد، إلا وفي كتابه ما يبين أنه منتقد.وفي الجملة من نقد سبعة آلاف درهم، فلم يرج عليه فيها إلا دراهم يسيرة، ومع هذا فهي مغيرة ليست مغشوشة محضة، فهذا إمام في صنعته. والكتابان سبعة آلاف حديث وكسر .والمقصود أن أحاديثهما انتقدها الأئمة الجهابذة قبلهم وبعدهم، ورواها خلائق لا يحصي عددهم إلا الله، فلم ينفردا لا برواية ولا بتصحيح . انتهی.   

وقال ابن أبي العز في الاتباع (عالم الكتب ، صفحة 47-50) 

بخلاف مسلم فإنه وقع له في عدة أحاديث غلط أنكرها عليه الحفاظ والذي أنكر على الشيخين أحاديث قليلة جدا وأحاديث البخاري ومسلم لم يقل أهل الحديث أنها صحيحة بمجرد رواية البخاري ومسلم لها بل لأنه قد رواها غيرهما من العلماء والمحدثين من لا يحصى عددهم إألا الله تعالى ولم ينفرد واحد منهم بحديث بل ما من حديث رواه إلا وقد رواه قبل زمانه ومن زمانه وبعد طوائف ولو لم يخلق البخاري ومسلم لم ينقص من الدين شيء وكانت تلك الأحاديث موجودة بأسانيد يحصل بها المقصود وفوق المقصود وإنما قولنا رواه البخاري ة ومسلم كقولنا رواه القراء السبعة والقرآن منقول بالتواتر لم يختص هؤلاء السبعة بنقل الشيء منه وكذلك التصحيح لم يقلد أهل الحديث فيه البخاري ومسلما بل جمهور ما صححاه وما كان قبلهما عند أئمة الحديث صحيحا متلقى بالقبول وكذلك في عصرهما وبعده وقد نظر أئمة هذا الفن في كتابيهما ووافقوهما على تصحيح ما صححاه إلا مواضع يسيرة نحو عشرين حديثا غالبها في مسلم إنتقدها عليهما طائفة من الحفاظ وقد انتصر طائفة لهما وطائفة قررت قول المنتقد والصحيح التفصيل فإن فيها مواضع منتقدة بلا ريب في مسلم مثل حديث أم حبيبة وحديث خلق التربة يوم السبت وحديث صلاة الكسوف بثلاث ركعات وأكثر وفيها مواضع لا انتقاد فيها وأكثر ما لا انتقاد فيه البخاري فإنه أبعد الكتابين عن الإنتقاد ولا يكاد يروي لفظا فيه انتقاد إلا ويروي اللفظ الآخر الذي يبين أنه منتقد وفي الجملة من نقد سبعة آلاف درهم فلم يبهرج عليه فيها إلا دراهم يسيرة ومع هذا فهي معتبرة ليست بمغشوشة محضة فهذا إمام في صنعته وفي كتابه سبعة آلاف حديث وكسر وهذا الذي قاله أهل العلم من أنه ليس بعد القرآن كتاب أصح من كتابي البخاري ومسلم إنما كان لأن هذين الكتابين جرد فيهما الحديث الصحيح المسند ولم يكن القصد بتصنيفهما ذكر آثار الصحابة والتابعين ولا تمييز الحسن والمرسل وشبه ذلك وما جرد فيه الصحيح المسند عن رسول الله صلى الله عليه وسلم فهو أصح الكتب المصنفة لأنه أصح منقول عن المعصوم . انتهی. 

وقال ابن القيم في الصواعق المرسلة على الجهمية والمعطلة (دار عطاءات العلم - دار ابن حزم، صفحة 360) 

وأهل الحديث متفقون على أحاديث الصحيحين، وإن تنازعوا في أحاديث يسيرة منها. انتهی. 

وقال ابن كثير في الباعث الحثيث إلی اختصار علوم الحديث (بتحقيق أحمد شاكر ، صفحة 35) 

ثم حكى (ابن الصلاح) أن الأمة تلقت هذين الكتابين بالقبول، سوى أحرف يسيرة، انتقدها بعض الحفاظ، كالدارقطني وغيره، ثم استنبط من ذلك القطع بصحة ما فيهما من الأحاديث، لأن الأمة معصومة عن الخطأ، فما ظنت صحته ووجب عليها العمل به، لا بد وأن يكون صحيحا في نفس الأمر. وهذا جيد.وقد خالف في هذه المسئلة الشيخ محيي الدين النووي وقال: لا يستفاد القطع بالصحة من ذلك. قلت : وأنا مع ابن الصلاح فيما عول عليه وأرشد إليه. والله أعلم. انتهی.   

وقال محيي الدين النووي في إرشاد طلاب الحقائق (مكتبة الإيمان ، 1/131) 

اتفاق الأمة حاصل من ذلك لأنها اتفقت على تلقي ما روياه أو أحدهما بالقبول، سوى أحرف يسيرة تكلم عليها بعض الحفاظ كالدارقطني وغيره وهي معروفة.قلت: وقد أجاب عن تلك الأحرف آخرون. انتهی. 

وقال ابن الصلاح في معرفة أنواع علوم الحديث (بتحقيق عتر ، صفحة 28-29) 

 وهو الذي يقول فيه أهل الحديث كثيرا صحيح متفق عليه . يطلقون ذلك ويعنون به اتفاق البخاري ومسلم، لا اتفاق الأمة عليه. لكن اتفاق الأمة عليه لازم من ذلك وحاصل معه، لاتفاق الأمة على تلقي ما اتفقا عليه بالقبول ......ومن فوائدها: القول بأن ما انفرد به البخاري أو مسلم مندرج في قبيل ما يقطع بصحته لتلقي الأمة كل واحد من كتابيهما بالقبول على الوجه الذي فصلناه من حالهما فيما سبق، سوى أحرف يسيرة تكلم عليها بعض أهل النقد من الحفاظ، كالدارقطني وغيره، وهي معروفة عند أهل هذا الشأن، والله أعلم. انتهی . 

وقال بدر الدين الزركشي في النكت علی مقدمة ابن الصلاح (أضواء السلف ، 1/287) 

سوى أحرف يسيرة قد صرح بالاستثناء أيضا في القطعة التي له على مسلم فقال وهذا مستثنى مما ذكرناه بعد الإجماع على تلقيه بالقبول. انتهی. 

وقال شمس الدين أبو الخير السخاوي في فتح المغيث بشرح ألفية الحديث (مكتبة السنة ، 1/72) 

إن الذي أورده البخاري ومسلم مجتمعين ومنفردين بإسناديهما المتصل دون ما سيأتي استثناؤه من المنتقد والتعاليق وشبههما - مقطوع بصحته ; لتلقي الأمة المعصومة في إجماعها عن الخطأ. انتهی. 

وروی محمد بن سعد الشويعر في مجموع فتاوى ومقالات متنوعة (رئاسة إدارة البحوث العلمية والإفتاء، الجزء 25 ، صفحة 69-70) عن عبد العزيز بن عبد الله بن باز أنه قال  

س: ما موقفنا ممن يضعف أحاديث في صحيح مسلم أو صحيح البخاري؟
ج: هذا شذوذ عن العلماء لا يعول عليه إلا في أشياء يسيرة عند مسلم - رحمه الله - نبه عليها الدارقطني وغيره، والذي عليه أهل العلم هو تلقي أحاديث الصحيحين بالقبول والاحتجاج بها كما صرح بذلك الحافظ ابن حجر والحافظ ابن الصلاح وغيرهما، وإذا كان في بعض الرجال المخرج لهم في الصحيحين ضعف فإن صاحبي الصحيح قد انتقيا من أحاديثهم ما لا بأس به، مثل: إسماعيل بن أبي أويس، ومثل عمر بن حمزة بن عبد الله بن عمر بن الخطاب، وجماعات فيهم ضعف لكن صاحبي الصحيح انتقيا من أحاديثهم ما لا علة فيه؛ لأن الرجل قد يكون عنده أحاديث كثيرة فيكون غلط في بعضها أو رواها بعد الاختلاط إن كان ممن اختلط، فتنبه صاحبا الصحيحين لذلك فلم يرويا عنه إلا ما صح عندهما سلامته.والخلاصة أن ما رواه الشيخان قد تلقته الأمة بالقبول فلا يسمع كلام أحد في الطعن عليهما رحمة الله عليهما سوى ما أوضحه أهل العلم كما تقدم.ومما أخذ على مسلم - رحمه الله - رواية حديث أبي هريرة: أن الله خلق التربة يوم السبت. ... الحديث. والصواب أن بعض رواته وهم برفعه للنبي - صلى الله عليه وسلم - وإنما هو من رواية أبي هريرة - رضي الله عنه - عن كعب الأحبار؛ لأن الآيات القرآنية والأحاديث الصحيحة كلها قد دلت على أن الله سبحانه قد خلق السماوات والأرض وما بينهما في ستة أيام أولها يوم الأحد وآخرها يوم الجمعة؛ وبذلك علم أهل العلم غلط من روى عن النبي - صلى الله عليه وسلم - أن الله خلق التربة يوم السبت، وغلط كعب الأحبار ومن قال بقوله في ذلك، وإنما ذلك من الإسرائيليات الباطلة. والله ولي التوفيق. انتهی. 

وقال الشريف حاتم بن عارف العوني    

لكن العلماء قد نصوا أن أحاديث الصحيحين (صحيح البخاري وصحيح مسلم) كلها مقبولة، إلا أحاديث يسيرة انتقدها بعض النقاد الكبار، الذين بلغوا رتبة الاجتهاد المطلق في علم الحديث. وأن ما سوى تلك الأحاديث اليسيرة، فهي متلقاة بالقبول عند الأمة جميعها. انتهی.  

انظر : https://shamela.ws/book/894/484  

و قال أبو عبد الله مصطفی العدوي  

ماذا نقول لمن يضعف حديثا في صحيحي البخاري ومسلم؟الجواب : تقدم الكلام على ذلك: وهو أن صحيحا البخاري ومسلم قد تلقتهما الأمة بالقبول إلا أحاديث يسيرة جدا انتقدها الحفاظ كـ الدارقطني وغيره، وهي نسبة لا تتجاوز نصف الواحد في المائة، أي: أن تسعة وتسعين في المائة ونصف صحيح ونصف في المائة ضعيف، فإذا كان المنتقد قد أورد حديثا من الأحاديث المنتقدة، وقال: العالم الفلاني تكلم فيه فله ذلك، لكن إذا تطاول وأدلى برأيه ولم يورد مستندا بذلك فقوله مردود عليه.انتهی.
 
انظر : https://shamela.ws/book/7695/162#p1  

وقال مقبل بن هادي الوادعي في غارة الفصل على المعتدين على كتب العلل (دار الأثار ، صفحة 93) 

وأما حديث قد أخرجه الشيخان أو أحدهما فيكفي العزو إليهما، اللهم إلا أن يكون الحديث من الأحاديث المنتقدة التي انتقدها الدارقطني أو غيره من الحفاظ المعترف بانتقاده، كما قال ابن الصلاح ما معناه: إن أحاديث " الصحيحين " تفيد العلم اليقيني النظري إلا أحاديث يسيرة انتقدها الحفاظ كالدارقطني وغيره، فإذا كان من الأحاديث المنتقدة فله أن يبدي رأيه إن كان أهلا لذلك - بتأييد الانتقاد أو دفعه .انتهی. 

وقال إبراهيم بن عبد الله اللاحم  

........ يعني: هو صحيح إلى درجة كبيرة, أن جمهور أحاديث الصحيحين, إذا استثنينا ما انتقد, أو ما فيه اختلاف على بعض -يعني إذا استثنينا بعض الأشياء-؛ فبقية أحاديث الصحيحين من المقطوع بصحته، ويفيد العلم اليقين .انتهی. 

انظر :https://shamela.ws/book/2066/71#p1  

وقال حمد بن عبد الله الحمد   

فإن أحاديث مسلم لا شك أن أهل العلم قد اتفقوا على تصحيحها، لكن يستثنى من ذلك اليسير الذي خالفه فيها الأئمة الكبار كأحمد والبخاري وغيرهم، وحذاق أهل العلم ممن كان لهم بصيرة في هذا العلم، فكان لهم مخالفة في أحاديث من أحاديث مسلم، وفي أحاديث أقل منها في صحيح البخاري، والواجب على طالب العلم أن يصحح كل ما ثبت في صحيح مسلم إلا تلك الأحاديث التي انتقدها الأئمة النقاد أو بعضهم، فله مجال بتصحيحها أو القول بتضعيفها فلا تكون من الأحاديث التي تلقت بالقبول واتفق الحفاظ على تصحيحها، انتهی. 

انظر : https://shamela.ws/book/852/1233  

وقال حسن أبو الأشبال الزهيري  

فنقول: على العموم البخاري ومسلم هما أصح الكتب بعد كتاب الله عز وجل، ثم البخاري يتفوق على مسلم، وفي بعض الكتب الأخرى كالسنن والمسانيد والمعاجم والأجزاء والفوائد أسانيد على حدة وعلى انفراد توازي وتعادل بل وتفوق بعض الأسانيد المنفردة عند البخاري وعند مسلم على انفراد، أما الكتابين في مجملهما - البخاري ومسلم - فقد تلقتهما الأمة بالقبول، وهما أصح الكتب بعد كتاب الله عز وجل.وليس هذا القبول لكل حديث ولكل كلمة في الكتابين، وإنما لعموم الكتابين، ثم هناك أحرف يسيرة قد انتقدت على البخاري وعلى مسلم، هذه الأحرف اليسيرة التي طال فيها الخلاف بين إثبات ما كانت على شرط صاحب الصحيح أو لم يكن على شرطه، وظهر فيها الخلاف أيضا بين الصحة والضعف، هذه الأحرف لم تتلقها الأمة بالقبول، وإنما الأمة تلقت بالقبول ما اتفق على صحته. انتهی. 

انظر : https://shamela.ws/book/37066/3#p1  

وقال محمد بن فريد زريوح في المعارضات الفكرية المعاصرة لأحاديث الصحيحين -دراسة نقدية ( تكوين للدراسات والأبحاث، 1/536 و 2/669) 

         إنَّ التَّلقي للكتابين بالقَبول إنَّما هو لما تضمَّناه من أخبار مُسندةٍ مرفوعة في الجملة، لا لكلِّ حرفٍ أو لفظٍ فيهما على حِدة، فهذا ليس إلَّا للقرآنِ الكريم، فهو الَّذي قبوله فرضٌ على الأعيانِ بحروفِه وألفاظِه؛ وجميعُ أهلِ العلمِ بالحديثِ، إنَّما يجزمون بصحَّةِ جمهورِ أحاديثِ الكِتابين، لا بكلِّ حرفٍ فيهما.فالصواب أن نقول: إن (جمهور) متون «الصحيحين» معلومة الصحة متقنة، تلقاها أهل العلم بالحديث بالقبول والتصديق، وأجمعوا على صحتها، وأن فيهما ما هو معلول الإسناد والمتن معا، لكنه قليل جدا، وهذا ما ذكره أبو عمرو ابن الصلاح ومن قبله، كالحافظ أبي طاهر السلفي وغيره (١).وبهذا نعلم أن ما ورد عن بعض العلماء من تعميم هذا الاتفاق على كل حديث فيهما، كما تراه في دعوى الدهلوي (ت ١١٧٦ هـ): «الصحيحان قد اتفق المحدثون على أن جميع ما فيهما من المتصل المرفوع صحيح بالقطع» (٢)؛ وكذا قول أحمد شاكر (ت ١٣٧٧ هـ): «أحاديث الصحيحين صحيحة كلها، ليس في واحد منها مطعن أو ضعف» (٣)؛ فضلا عما تقدم من عبارة الإسفراييني في زعمه صحة كل ما اشتمل عليه الكتابين: فهذا منهم نوع تساهل، مؤداه الغلط وعدم الدقة في العبارة؛ والأولى أن يستثنى من جملة الاتفاق ما قدمنا شرحه آنفا.وهذه الدقة في الاحتراز هي ما تراه في مثل قول السخاوي: «إن الذي أورده البخاري ومسلم، مجتمعين ومنفردين، بإسناديهما المتصل، دون ما سيأتي استثناؤه من المنتقد والتعاليق وشبههما: مقطوع بصحته» (٤).وختاما؛ نستطيع بعد ما مضى في هذا المطلب كله أن نسوغ جملا مختصرة تلم شعث ما تقدم من الأدلة، في ما يتعلق بالموقف العلمي من دعوى الإجماع على «الصحيحين»: في كون الإجماع على صحة جمهور أحاديث «الصحيحين».  

(١) «جواب الاعتراضات المصرية» (ص/٤٦).
(٢) «حجة الله البالغة» (١/ ٢٣٢).
(٣) تعليقه على «اختصار علوم الحديث» لابن كثير (١/ ١٢٤).
(٤) «فتح المغيث» (١/ ٧٢)  

.................... 

الحال أن مزية «الصحيحين» وجلالتهما ثابتة ثبوت الجبال الرواسي، «لا يهون من أمرهما إلا مبتدع متبع غير سبيل المؤمنين» (١)؛ وهذا الإجماع من علمائهم إنما هو على جمهور أحاديث «الصحيحين»، لا على كل حرف فيهما على حدة، هو في ذاته فضيلة لم يبلغها غير الشيخان.والعاقل من الناس يعلم أن من نقد سبعة آلاف درهم متنوعة، أتته من بلاد مختلفة، فلم يرج عليه منها إلا دراهم معدودة، «وهي مع هذا مغيرة ليست مغشوشة محضة: فهذا إمام في صنعته!فالكتابان سبعة آلاف حديث وكسر» (٢)، واشتمالهما على أحرف يسيرة خولفا فيها من حذاق الفن لا يعيبهما في شيء، بل محمدة استحقا عليها التنويه من النقاد العارفين بوعورة ما اشترطاه في كتابيهما، والتسليم للشيخين بالحذق في هذا الفن، ونفوذ بصيرتهما في انتقاء المتون، وشدة احتياطهما في تصحيح الأسانيد.  

(١) «حجة الله البالغة» للدهلوي (١/ ٢٣٢).
(٢) «منهاج السنة» لابن تيمية (٧/ ٢١٦)  

انتهی . 

وقال محمد بن مطر الزهراني في تدوين السنة النبوية نشأته وتطوره من القرن الأول إلى نهاية القرن التاسع الهجري (دار الهجرة ، صفحة 59) 

جميع أهل العلم بالحديث يجزمون بصحة جمهور أحاديث الكتابين، وسائر الناس تبعاً لهم في معرفة الحديث، وإذا أجمع أهل العلم على شيءٍ فسائر الأمَّة تبعٌ لهم فإجماعهم معصوم لا يجوز أن يجمعوا على خطأ. انتهی. 

[6]  

وقال أبو بكر الجصاص في الفصول في الأصول (وزارة الأوقاف الكويتية ,1/138) 

وليس أن دلالة التخصيص غير مذكورة مع اللفظ بمانع أن يكون في معنى الاستثناء المتصل باللفظ لأنا قد وجدنا اللفظ المطلق الذي قد أريد به في استثناء بعضه قد اقتصر فيه على الإطلاق من غير ذكر الاستثناء متصلا به في بعض المواضع وإن كان قد ذكر في بعضها ولم يكن وجود ذلك في الكلام وجوازه فيه بمانع أن يكون الاستثناء مرادا. انتهی. 

[7] 
السنن الكبری للنسائي (مؤسسة الرسالة ، 10/213) 

[8] 
البداية والنهاية لابن كثير (دار هجر ، 1/32) 

[9] 
معجم المصطلحات الحديثية لعبد الماجد الغوري (دار ابن كثير ، صفحة 414-415) 

[10] 

قال محمد بن فريد زريوح في المعارضات الفكرية المعاصرة لأحاديث الصحيحين (تكوين للدراسات والأبحاث ، 2/1010) 

أما ما استدل به من حديث الأخضر على فهمه ذاك: فغير سالم له ولا مسلم، لأن الأخضر بن عجلان خالف في سنده ومتنه الثقات من رواة هذا الحديث عن ابن جريج، وهم: حجاج بن محمد المصيصي (٣)، وهشام بن يوسف الصنعاني (٤)، ومحمد بن ثور (٥)، والصواب روايتهم دونه.والأخضر صدوق نازل عن مرتبتهم في الضبط، فروايته بهذا السياق الشاذ عن المعروف من متن الحديث وسنده مردودة.  

(٣) وعنه رواه مسلم في «صحيحه».
(٤) وعنه رواه ابن معين في «تاريخه - الدوري» (٣/ ٥٢، رقم: ٢١٠).
(٥) وعنه رواه الطبراني في «المعجم الأوسط» (٣/ ٣٠٣، رقم: ٣٢٣٢)، وأبو الشيخ في «العظمة» (٤/ ١٣٦٠).  

انتهی. 

وقال شعيب الأرناوؤط و عادل مرشد في تعليق مسند الإمام أحمد (مؤسسة الرسالة ، 14/83) 

أخرجه النسائي في الكبری من طريق الأخضر بن عجلان عن ابن جريج عن عطاء عن أبي هريرة و الأخضر بن عجلان صدوق و قد خالف ثقتين هما حجاج بن محمد و هشام بن يوسف والصواب قولهما ورواية الأخضر خطأ . انتهی. 

وقال أحمد بن عبد العزيز بن مُقْرِن القُصَيِّر في الأحاديْثُ المُشْكِلَةُ الواردةُ في تفسير القرآنِ الكريم (دار ابن الجوزي ، صفحة 244-245) 

قلت: وهذه الرواية معلولة من أوجه:الأول: أن الأخضر بن عجلان خالف ثلاث ثقات، في إسناد هذا الحديث، وحسبك مخالفته لحجاج بن محمد؛ فإنه من أثبت الناس في ابن جريج. ......الوجه الثاني: عنعنة ابن جريج، قال الإمام أحمد: "كل شيء قال فيه ابن جريج: قال عطاء، أو عن عطاء؛ فإنه لم يسمعه من عطاء". اهـ من شرح علل الترمذي، لابن رجب (٢/ ٦٠٠).انتهی. 

وقال مصحح حديث خلق التربة عبد الرحمن المعلمي اليماني في الأنوار الكاشفة (دار عالم الفوائد ، 12/266) 

أقول: في صحة هذه الرواية عن ابن جريج عن عطاء بن أبي رباح نظر لا أطيل ببيانه، فمن أحب التحقيق فليراجع «تهذيب التهذيب» (٢١٣: ٧) و «فتح الباري» (٥١١: ٨) (٤) ومقدمته (ص ٣٧٣) (٥) وترجمتي أخضر وعثمان بن عطاء من «الميزان» (٦) وغيره. والله الموفق. انتهی. 

[10]  

المعارضات الفكرية المعاصرة لأحاديث الصحيحين لمحمد بن فريد زريوح (الناشر : تكوين للدراسات والأبحاث، الجزء الثاني، صفحة 993-1021)  

الأحاديْثُ المُشْكِلَةُ الواردةُ في تفسير القرآنِ الكريم لأحمد بن عبد العزيز بن مُقْرِن القُصَيِّر (الناشر : دار ابن الجوزي ، صفحة 243-258)  

أحاديث العقيدة المتوهم إشكالها في الصحيحين لسليمان بن محمد الدبيخي (الناشر : مكتبة دار المنهاج، صفحة 356 -378)  

مسند الإمام أحمد بن حنبل بتحقيق شعيب الأرناوؤط و عادل مرشد (الناشر : مؤسسة الرسالة، الجزء 14، صفحة 82-84 ، تعليق 1)  

[11]  

قال محمد بن إسماعيل الصنعاني في التحبير لإيضاح معاني التيسير (مكتبة الرشد ، 3/683) 

أخرجه مسلم تكلم عليه النووي والبخاري  وغير واحد من الحفاظ. انتهی. 

[12] 
تحفة الأشراف للمزي (بتحقيق عبد الصمد شرف الدين ، 10/133) 

[13] 
لباب التأويل في معاني التنزيل لعلاء الدين الخازن (دار الكتب العلمية ، الجزء الثاني، صفحة 206-207) 

[14] 
الاتباع لابن أبي العز (عالم الكتب ، صفحة 47-50) 

[15]
تحفة المحتاج لابن الملقن (دار حراء ، الجزء الثاني ، صفحة 563-564) 

[16]
الأسرار المرفوعة للملا علي القاري (بتحقيق محمد الصباغ ، صفحة 456-457) 

[17] 
التحبير لإيضاح معاني التيسير لمحمد الصنعاني (مكتبة الرشد ، 3/683) و التنوير شرح الجامع الصغير لمحمد الصنعاني (مكتبة دار السلام ، الجزء الخامس ، صفحة 499-500)


[18] 
التفسير المظهري لمحمد ثناء الله المظهري (مكتبة الرشدية ، 9/76 و 8/285) 

[19]
أسنى المطالب في أحاديث مختلفة المراتب لأبي عبد الرحمن الحوت (دار الكتب العلمية ، صفحة 132) 

[20] 
انظر : قول ابن باز المنقول في التعليق الخامس  

[21]
 فتاوی اللجنة الدائمة المجموعة الثانية (رئاسة إدارة البحوث العلمية والإفتاء ،1/10) 

[22] 

https://shamela.ws/book/37048/197  

https://shamela.ws/book/11/4237#p1  

[23]
الجامع الكامل للأعظمي (دار السلام ، 7/411) 

[24] 
مقارنة المرويات لإبراهيم اللاحم (مؤسسة الريان، الجزء الثاني ، صفحة 173-174) 

[25] 
مسند أبي يعلی بتحقيق السناري (الجزء الثامن ، صفحة 334-335 ) 

[26] 
مسند أبي يعلی بتحقيق حسين أسد (10/513) 

[27] 
تحرير تقريب التهذيب لبشار عواد معروف (مؤسسة الرسالة ، 1/160) 

[28] 
https://shamela.ws/book/3047/26  

[29] 
https://shamela.ws/book/37717/246  

[30] 
https://shamela.ws/book/37026/1066  

[31] 
https://islamqa.info/ar/218080  

[32] 
مقارنة المرويات لإبراهيم اللاحم (مؤسسة الريان ، 2/174) 

[33] 
تاريخ الرسل والملوك لابن جرير الطبري (دار المعارف ، 1/45) 

[34] 
الإجماع في التفسير لمحمد بن عبد العزيز بن أحمد الخضيري (دار الوطن ، صفحة 61) 

[35] 
عمدة الكتاب لأبي جعفر النحاس (دار ابن حزم ، صفحة 88) 

[36] 
بغية المرتاد لابن تيمية (مكتبة العلوم و الحكم ، صفحة 299) 

[37] 
الجواهر المضية في طبقات الحنفية لعبد القادر القرشي (دار هجر ، بتحقيق عبد الفتاح محمد الحلو ، 4/568) 

[38] 
لمعات التنقيح في شرح مشكاة المصابيح لعبد الحق الدهلوي (دار النوادر ، 9/210) 

[39] 
الزاهر في معاني كلمات الناس لابن الأنباري (مؤسسة الرسالة ، 2/138) 

[40] 
مجموع الفتاوی لابن تيمية (مجمع الملك فهد ، 17/237) 

[41]  

ذكره بدر الدين الزركشي في اللآلئ المنثورة في الأحاديث المشهورة (دار الكتب العلمية ، صفحة 212) وذكره جلال الدين السيوطي في الدرر المنتثرة في الأحاديث المشتهرة (عمادة شؤون المكتبات ، صفحة 112) وذكره شمس الدين أبو الخير السخاوي في المقاصد الحسنة في بيان كثير من الأحاديث المشتهرة علی الألسنة (مكتبة الخانجي ، 1/200) وذكره أبو الفداء إسماعيل بن محمد العجلوني الجراحي في كشف الخفاء ومزيل الإلباس عما اشتهر من الأحاديث علی ألسنة الناس (المكتبة العصرية ، 1/435)  

[42] 

قال محمد بن فريد زريوح في المعارضات الفكرية المعاصرة لأحاديث الصحيحين -دراسة نقدية (تكوين للدراسات والأبحاث ، 2/1010)

وأما جعل الألباني الأيام المذكورة في الحديث أياما أخرى غير الأيام الستة للتخليق، بل جعلها بعدها فبدع من القول لا سلف له فيه! فإن كل من تقدمه -سواء من مصححي الحديث أو مضعفيه- متفقون على تنزيل الأيام الستة في القرآن على هذه الأيام الواردة في هذا الحديث، ودونك كتب المفسرين وشراح الحديث لترى ذلك. انتهی.

قال سليمان بن محمد الدبيخي في أحاديث العقيدة المتوهم إشكالها في الصحيحين جمعا ودراسة (مكتبة دار المنهاج ، صفحة 377-378)

ومما يحسن التنبيه عليه أن أصحاب القولين -المصححين للحديث والمضعفين له- متفقون على تنزيل الأيام الستة المذكورة في القرآن على الأيام الواردة في حديث التربة، ما عدا الألباني رحمه الله، حيث ذهب -كما تقدم- إلى أن الأيام الواردة في الحديث غير الأيام الستة المذكورة في القرآن. انتهی.

[43] 
سلسلة الفوائد الحديثية والفقهية لأبي أويس أشرف بن نصر بن صابر الكردي (دار اللؤلؤة و دار مكة ، 6/235)

[44] 
أحاديث العقيدة المتوهم إشكالها في الصحيحين لسليمان بن محمد الدبيخي (مكتبة دار المنهاج ، صفحة 371)

[45] 
أحاديث المشكلة الواردة في تفسير القرآن الكريم لأحمد بن عبد العزيز القصير (دار ابن الجوزي ، صفحة 248)

[46] 
https://www.islamweb.net/amp/ar/fatwa/137773 

[47] 
قال أبو بكر عبد الله بن محمد بن أبي شيبة الكوفي العبسي في كتابه المصنف (كمال يوسف الحوت ، الجزء السابع، صفحة 269) : حدثنا وكيع، حدثنا الأعمش، عن أبي صالح، عن كعب، قال: «بدأ الله تعالى بخلق السموات يوم الأحد فالأحد والاثنان والثلاثاء والأربعاء والخميس والجمعة وجعل كل يوم ألف سنة» 

[48] 
https://shamela.ws/book/37066/57 

قال مصحح حديث خلق التربة حسن أبو الأشبال الزهيري 

…فعند ابن الجوزي أن الراوي الثقة هو الذي يخطئ مرة، وهذه المرة عند المحدثين لا عبرة بها؛ لأن الأصل فيه العدالة والتوثيق، لكن إذا أخطأ مرة عند ابن الجوزي سقطت عدالته كلها… انتهی.

[49] 
 انظر : البحر المحيط في أصول الفقه لبدر الدين الزركشي (دار الكتبي ، 5/46) و إرشاد الفحول إلی تحقيق الحق من علم الأصول لمحمد بن علي الشوكاني (دار الكتاب العربي ، 2/34) و الإحكام في أصول الأحكام لأبي الحسن الآمدي (المكتب الإسلامي ، 3/53) وغيرهم.

[50] 
سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة لمحمد ناصر الدين الألباني (مكتبة المعارف ، 12/332)

[51] 
مختصر العلو للعلي العظيم للذهبي لناصر الدين الألباني (المكتب الإسلامي ، صفحة 112) 

[52] 
النهاية في غريب الحديث و الأثر لابن الأثير (المكتبة العلمية ،4/169) 

[53] 
التفسير المظهري لمحمد ثناء الله المظهري (مكتبة الرشدية ،1/49)


*******