বিষয় : ইসলাম অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স কত?
লেখক : আবু-মুহাম্মাদ ইবনু হাযম আয-য্বহিরী
অনুবাদক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী
উৎস : আল-ফাসলু ফিল-মিলালি ওয়াল-আহওয়ায়ি ওয়ান-নিহাল লিইবনে হাযম আয-য্বহিরী (মাক্তাবাতুল খ্বনিজী, 2/84-85)
(দ্রষ্টব্য : বাংলা অনুবাদটিকে যথাসম্ভব শাব্দিক ও আক্ষরিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।)
অপরদিকে, ইতিহাসশাস্ত্রের ক্ষেত্রে মানুষদের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান। ইয়াহুদীরা বলে যে, দুনিয়ার বয়স চার হাজার বছরের চেয়ে একটু বেশি। এবং খ্রিষ্টানরা বলে যে, দুনিয়ার বয়স পাঁচ হাজার বছর। পক্ষান্তরে, যদি আমাদের প্রসঙ্গ আসে, তাহলে আমরা এমন কোনো সংখ্যার ব্যাপারে নিশ্চিত না যা আমাদের জানা আছে। আর, যে এ প্রসঙ্গে দাবি করেছে যে তা সাত হাজার বছর বা এর চেয়ে বেশি বা এরচেয়ে কম, সে অবশ্যই মিথ্যা বলেছে। এবং সে এমন একটা কথা বলেছে যার পক্ষে রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে মোটেও এমন কোনো উক্তি (বর্ণিত হয়ে) আসেনি যা সহিহ বরং তাঁর عليه السلام নিকট হতে এর বিপরীতটা সহিহ (ভাবে বর্ণিত) হয়েছে।
বরং আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে দুনিয়ার এমন বিষয় আছে যা আল্লাহ عز وجل ব্যতীত আর কেহই জানেনা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে "আমি তাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির সাক্ষী করিনি এবং না তাদের নিজদের সৃষ্টির" এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বক্তব্য "পূর্ববর্তী উম্মতদের মাঝে তোমরা হচ্ছ একটি কালো ষাঁড়ের দেহে বিদ্যমান একটি সাদা চুলের ন্যায় অথবা একটি সাদা ষাঁড়ের দেহে বিদ্যমান একটি কালো চুলের ন্যায়" এটা তাঁর عليه السلام নিকট হতে ছাবিত (প্রমাণিত)। এবং তিনি عليه السلام সত্যের মূল ব্যতীত কিছুই বলেন না এবং এমন কোনোকিছুর প্রতি সদয় হন না যা বাত্বিল (মিথ্যা) থেকে (আগত)।
এটি তাঁর (মুহাম্মাদ ﷺ এর) তুলনা, যিনি (মুহাম্মাদ ﷺ) তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন এবং ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যার হিসাব জেনেছেন। এবং (এটা হচ্ছে) পৃথিবীর জনবহুল থেকে যা তাদের (মুসলিমদের) হাতে আছে তা সংক্রান্ত তুলনা এবং এই ব্যাপারটা (সংক্রান্ত তুলনা) যে তা (অমুসলিমদের বা পূর্ববর্তী উম্মতদের সংখ্যা) অনেক বেশি। জেনে রাখুন যে, দুনিয়ার (বয়সের) একটা সংখ্যা আছে, যা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কেহই হিসাব করতে পারেনা। অনুরূপভাবে তাঁর ﷺ এর বক্তব্য "আমি এবং সাআহ (কিয়ামত) এই দুইটির মতো" এবং তিনি তাঁর দুইটি মুক্বাদ্দাসাহ আঙ্গুল শাহাদত অঙ্গুলি ও মধ্যবর্তী অঙ্গুলি কে (একে অপরের সহিত) যুক্ত করলেন।
এবং এই মর্মে নস এসেছে যে কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ عز و جل ব্যতীত কেউ জানেনা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহই না। সুতরাং এটা সঠিক সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি عليه السلام নিকটত্ব এর তীব্রতা বুঝিয়েছেন, শাহাদত অঙ্গুলির উপর মধ্যবর্তী আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের বর্ধিতাংশকে না, যদি তিনি সেটার বর্ধিতাংশকে উদ্দেশ্য করতেন, তাহলে আঙ্গুলদ্বয়ের মাঝে বিদ্যমান তুলনাটি গ্রহণকৃত হত এবং তা মধ্যবর্তী আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের দ্বারা সম্পৃক্তকৃত হত, ফলে কখন কিয়ামত ঘটবে তা এর দ্বারা জানা যেত, এবং এটা বাতিল। আবার, (যদি এমনটা হত তাহলে) তিনি عليه السلام কর্তৃক ষাঁড়ের একটি চুলের অনুরূপ হওয়ার বিষয়টির দ্বারা আমাদের এবং আমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে তুলনাকরণ মিথ্যা হত, ওয়া মাআযাল্লাহ মিন যালিক।
সুতরাং এটা সঠিক সাব্যস্ত হয়েছে যে, অবশ্যই তিনি عليه السلام নিকটত্বের তীব্রতা বুঝিয়েছেন এবং তাঁর عليه السلام আগমনের পর চারশত বছরের চেয়ে একটু বেশি (পরিমাণ সময়) গত হয়েছে। পৃথিবীর আয়ু থেকে আর কী পরিমাণ (সময়) বাকি আছে তা সম্পর্কে আল্লাহই অধিকতর জ্ঞানী। যখন, এই বিরাট সংখ্যাটি এমন যে, ইহার কোনো তুলনা নেই তার সহিত যা অতীত হয়েছে, যা অতীত হয়েছে তার সাপেক্ষে ইহার স্বল্পতা ও ক্ষুদ্রতা এর কারণে। এবং এটাই সেই বিষয়টি যা তিনি عليه السلام বলেছেন (বুঝিয়েছেন) (তাঁর এই বক্তব্যটির) দ্বারা (যে), "যারা গত হয়েছে তাদের মাঝে আমরা হচ্ছি ষাঁড়ের দেহের একটি চুলের ন্যায় অথবা গাধার হাতের একটি রক্বমাহ এর ন্যায়।"
আমি আল-আমির আবু-মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন আব্দির-রহমান বিন আন-নাসিরী রহিমাহুল্লাহ এর হস্তলিপিতে দেখেছি যে তিনি বলেছেন যে আমাকে মুহাম্মাদ বিন মুয়াওইয়াহ আল-ক্বুরেশী বর্ণনা করে বলেছেন যে তিনি হিন্দে (ভারতে) ৭২০০০ বছরের একটি জলসংযোগনালি দেখেছেন। এবং মাহমুদ বিন সুবুক্তিকিন হিন্দে (ভারতে) এমন একটি শহর আবিষ্কার করেছেন যা সম্পর্কে তারা বলে যে তা ৪০০০০০ বছর বয়সী।
**********