Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস

মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে (২য় সংস্করণ)

 

বিষয় : মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী এর ধর্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে (২য় সংস্করণ)

লেখক : সামিউল হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

0. সূচিপত্র :-

1. দ্রষ্টব্য।
2. সূচনা।
3. আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমূহ প্রসঙ্গে।
3.1. আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমুহ।
3.2.আর-রাযীর সহিত উক্ত গ্রন্থসমূহের সম্পৃক্ততা ভুল ও মিথ্যা।
4. আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে।
4.1. আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আসা বড় ধরনের সমালোচনাগুলো প্রসঙ্গে।
4.2. আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আসা মাঝারি ধরনের সমালোচনাগুলো প্রসঙ্গে।
4.3. আর-রাযীর প্রকৃত ধর্মবিশ্বাস।
5. আর-রাযী কোন ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন? 
5.1. আর-রাযীর একটি ছোট কবিতা নিয়ে সৃষ্টি হয়া জটিলতা প্রসঙ্গে।
5.2. আর-রাযী যেই ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
6. পরিশিষ্ট।
7. টিকাসমুহ।

1 দ্রষ্টব্য :-

এই লেখাটির পুর্বেও ২০২২ সালের শেষের দিকে আর-রাযীর ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে এই একই শিরোনামবিশিষ্ট অপর আরেকটি লেখা আমি লিখেছিলাম। আমার সেই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো " islamicauthors.com" ওয়েবসাইটটিতে। এই লেখাটি হচ্ছে মূলত সেই পুর্বের লেখাটিরই একটি নতুন দ্বিতীয় সংস্করণ। এই লেখাটিতে মূলত পুর্বের লেখাটিতে যা বলা হয়েছে তা ই পুনরায় বলা হবে, তবে ভিন্ন ভঙ্গিতে, ভিন্ন বিন্যাসে, তুলনামুলক অধিক স্পষ্টভাবে। তাছারাও এই নতুন সংস্করণটিতে নতুন কিছু ছোটোখাটো বিষয় যুক্ত করা হবে যেগুলো পুর্ববর্তী প্রথম সংস্করণটিতে ছিলোনা, এবং এর পাশাপাশি প্রথম সংস্করণের কিছু ছোটখাটো বিষয়কে হালকামাত্রায় সংশোধন করা হবে।

2. সূচনা :-

এই লেখাটিতে, মুসলিম ইতিহাসবিদরা  "আবু-বকর মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া আর-রাযী" এর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে যেসব তথ্য উল্লেখ্য করেছেন, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আর-রাযীর প্রকৃত ধর্মবিশ্বাস কি ছিলো, তা নির্ণয় করা হবে। এবং আর-রাযীর মুসলিম হয়ার ব্যাপারে আনিত অভিযোগ, আপত্তি ও সংশয়সমুহের জবাব প্রদান করা হবে। উক্ত আলোচনাটির প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে চারটি,

এক. আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমুহ প্রসঙ্গে।

দুই. আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের উপর আসা সমালোচনাগুলো প্রসঙ্গে।

তিন.  আর-রাযী কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, সেব্যাপারে।

চার. আর-রাযী কোন ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন, সেব্যাপারে।

অতএব, এবার মূল আলোচনা আরম্ভ করা যাক।

3. আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমুহ প্রসঙ্গে :-

আলোচনার এই তৃতীয় শ্রেণীটিতে দুটি উপশ্রেণী 3.1 ও 3.2 থাকবে। 3.1 এ আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থগুলোর নাম উল্লেখ্য করা হবে, এবং কে বা কারা উক্ত গ্রন্থগুলোকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন সেটাও উল্লেখ্য করা হবে। 3.2 এ আর-রাযীর সহিত উক্ত ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমুহের সম্পৃক্ততাকে খন্ডন করা হবে।

3. 1. আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করা ইসলামবিরোধী গ্রন্থসমুহ :

আর-রাযীর দিকে মোট চারটি ইসলামবিরোধী গ্রন্থের সম্পৃক্ততা দাবি করা হয়েছে।সেগুলো নিম্নরুপ,

প্রথম গ্রন্থ - "মাখারিকুল আনবিয়া" (مخاريق الأنبياء)

গ্রন্থটির শিরোনাম 'مخاريق الأنبياء' মানে হলো 'নবিদের প্রতারণা/দোষসমুহ'।

'আল-মুহতির বিন তাহির আল-মাকদিসী', তাঁর "আল-বাদয়ু ওয়াত তারিখ" গ্রন্থে উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন [1]।

'নিযামুল-মুলক আল-হাসান আত-তুসী' তাঁর "সিয়াসাত নামাহ " গ্রন্থে উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন [2]।

'আবুল-আব্বাস ইবনু আবি-উসাইবায়াহ' তাঁর "উয়ুনুল আনবা" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে, 'আলি বিন রিদ্বওয়ান' ও আর-রাযীর বাজে চরিত্রের কিছু শত্রুরা উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন [3]।

এনারা ছাড়া, মধ্যযুগীয় লেখকদের বা ব্যাক্তিদের মধ্য হতে আর কেও উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন বলে আমি জানতে পারিনি, কাজেই আমি ধরে নিচ্ছি যে মধ্যযূগীয়দের মধ্য হতে শুধুমাত্র এনারাই উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে যে এনারা ছাড়াও আরো কিছু ব্যাক্তিরা সম্পৃক্ততা দাবি করেছেন, কিন্ত আমি তাদের বক্তব্যগুলো খোজে পাইনি ; কাজেই উক্ত গ্রন্থের সহিত আর-রাযীর সম্পৃক্ততাকে খন্ডন করার সময় আমি এই সম্ভাবনাটিকে বিবেচনায় রাখব।

দ্বিতীয় গ্রন্থ - "হিয়ালুল মুতানাব্বিইন " (حيل المتنبيين)

গ্রন্থটির শিরোনাম 'حيل المتنبيين' মানে হলো 'নবুওত দাবিদারদের কৌশল'। 

'আবুর-রাইহান আল-বেরুনী' তাঁর গ্রন্থ "আর-রিসালাহ ফি ফিহরিসিতে কুতুবে মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী" এ উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে 'প্রচলিত বিশ্বাস বিরোধী' একটি গ্রন্থ হিসেবে সম্পৃক্ত করেছেন ও বলেছেন : 'It was claimed as attacking the necessity of the prophets' [4][5]

আধুনিক যুগে যাঁরা আর-রাযীর দিকে উক্ত গ্রন্থটিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তাদের অনেকে হিয়ালুল মুতানাব্বিইন ও মাখারিক্বুল আনবিয়া কে একই গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অর্থাৎ একটা গ্রন্থের দুইটা নাম, 'হিয়ালুল মুতানাব্বিইন' ও 'মাখারিক্বুল আনবিয়া'।[6]

তবে, আমি ধরে নিচ্ছি যে এদুইটা গ্রন্থ একই নয় বরং আলাদা আলাদা পৃথক ও ভিন্ন দুটি গ্রন্থ।

তৃতীয় গ্রন্থ - "ফিন নাবুওয়াত"(في النبوات) 

গ্রন্থটির শিরোনাম 'في النبوات' মানে হলো 'নবুওতসমুহ প্রসঙ্গে'।

'আবুর-রাইহান আল-বেরুনী' তাঁর গ্রন্থ "আর-রিসালাহ ফি ফিহরিসিতে কুতুবে মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী" এ উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে 'প্রচলিত বিশ্বাস বিরোধী' একটি গ্রন্থ হিসেবে সম্পৃক্ত করেছেন ও বলেছেন : 'It was claimed to be against religions' [5]।

চতুর্থ গ্রন্থ - "কিতাব ফিমা ইয়ারিদ বিহি ইযহারু মা ইয়াদআ মিন উয়ুবিল আনবিয়া" (كتاب فيما يرد به اظهار ما يدعى من عيوب الأنبياء)

বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা, আর-রাযীর দিকে كتاب فيما يرد به اظهار ما يدعى من عيوب الأنبياء শিরোনামের একটি গ্রন্থকে সম্পর্কিত করেছেন। যেমন : ইবনুন-নাদিম, আল-কিফতী, আল-বাবানী, ইবনু আবি-উসাইবায়াহ, ইবনুস সাঈ এবং অন্যান্য আরো অনেকে [7][8][9][10][11]।

এই গ্রন্থটির নাম বা শিরোনাম "كتاب فيما يرد به اظهار ما يدعى من عيوب الأنبياء" এর মর্ম হচ্ছে অনেকটা এরকম যে, "এমন একটি বই যেখানে নবিদের বহু দোষ-ক্রুটি প্রকাশ ও উল্লেখ্য করা হয়েছে।" গ্রন্থটির উক্ত শিরোনাম অনুযায়ী বিচার করলে এটি এমন একটি গ্রন্থ যা কিনা নবীদের বিরোধী।

3. 2. আর-রাযীর সহিত উক্ত গ্রন্থসমূহের সম্পৃক্ততা ভুল ও মিথ্যা :

এই চারটি বইয়ের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করার পুর্বে দুইটি গুরুত্বপুর্ণ সাধারণ ও সার্বজনীন বিষয় উল্লেখ্য করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। এদুইটি বিষয় প্রত্যেকটি বইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, কাজে লাগবে।

প্রথম বিষয় - "আবু-বকর আর-রাযীর ফিহরিসিত"

আবু-বকর আর-রাযী তাঁর নিজের লিখিত গ্রন্থগুলোর ব্যাপারে একটি 'فهرست'
(ফিহরিসিত) লিখেছেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর নিজের লিখিত গ্রন্থগুলোর নাম উল্লেখ্য করে ছোট বই আকারে একটি তালিকা লিখেছেন। ইতিহাসবিদ 'ইবনুন-নাদিম', আর-রাযীর লিখিত উক্ত ফিহরিসিতটি পেয়েছিলেন, এবং আর-রাযীর লিখিত উক্ত ফিহরিসিতটিতে তিনি আর-রাযী কর্তৃক উল্লেখিত যত বইয়ের নাম পেয়েছেন তার সবই  নিজ গ্রন্থ "আল-ফিহরিসিত" এ উল্লেখ্য করেছেন [12]। ইবনুন-নাদিমের "আল-ফিহরিসিত" গ্রন্থটির সুত্র ধরে, অপর আরেকজন ইতিহাসবিদ 'জামালুদ্দিন আল-কিফতী', আর-রাযীর লিখিত উক্ত ফিহরিসিতটি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।এবং ইবনুন নাদিমের "আল-ফিহরিসিত" গ্রন্থটির মাধ্যমে, তিনি আর-রাযীর উক্ত ফিহরিসিতটিতে বিদ্যমান সকল বইয়ের নাম নিজ গ্রন্থ "ইখবারুল উলামা বিয়াখবারিল হুকামা" এ উল্লেখ্য করেছেন [13]।

আর-রাযীর উক্ত ফিহরিসিতটিতে, 'مخاريق الأنبياء' (মাখারিকুল আনবিয়া), 'حيل المتنبيين'
(হিয়ালুল মুতানাব্বিইইন), এবং 'في النبوات'  (ফিন নাবুওয়াত) নামের কোনো ইসলাম বিরোধী বইয়ের কথা উল্লেখ্য করা হয়নি। এর সহজ অর্থ হলো এই যে আর-রাযী জানতেন না যে তিনি  "মাখারিক্বুল আনবিয়া" বা "হিয়ালুল মুতানাব্বিইন " বা "ফিন-নাবুওয়াত" নামের কোনো গ্রন্থ লিখেছেন। কেননা যদি তিনি জানতেন, তাহলে তিনি এগুলোর নাম তাঁর 'ফিহরিসিত' টিতে অবশ্যই অবশ্যই উল্লেখ্য করতেন। 'ফিহরিসিত' এমন কোনো তালিকাগ্রন্থ না যেখানে কিছু বই না উল্লেখ্য করে থাকা যায়, বরং 'ফিহরিসিত' এ জানতে পারা বা জানা থাকা সকল বইয়ের নামই উল্লেখ্য করা হয়, করতে হয়।

অপরদিকে, ইতিহাসবিদ 'ইবনু আবি-উসাইবায়াহ' এর একটি বক্তব্য হতে বোঝা যায় যে মধ্যযূগে আর-রাযীবিদ্বেষী একদল বাজে চরিত্রবিশিষ্ট লোকদের বিচরণ ছিলো, এসব খারাপ লোকদের মধ্যে আর-রাযীর নামে জাল গ্রন্থ লিখে আর-রাযীর বদনাম হয়ার লক্ষ্যে সেই জাল গ্রন্থকে আর-রাযীর গ্রন্থ বলে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করার মত সামর্থ্যও ছিলো [3]।

দ্বিতীয় বিষয় - "ইবনু আবি উসাইবায়াহ এর গবেষণা"

মুসলিম চিকিৎসক ও ইতিহাসবিদ 'আবুল-আব্বাস ইবনু আবি-উসাইবায়াহ', তাঁর "উয়ুনুল আনবা" গ্রন্থে আর-রাযীর সহিত مخاريق الأنبياء (মাখারিক্বুল আনবিয়া) গ্রন্থটির সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন যে,

"كتاب فيما يرومه إظهار ما يدعي من عيوب الأولياء . أقول وهذا الكتاب إن كان قد ألف ، ولله أعلم ، فربما أن بعض الأشرار المعادين للرازي قد ألفه و نسبه إليه ، ليسيء من يری ذلك الكتاب او يسمع به الظن بالرازي ، وإلا فالرازي أجل من ان يحاول هذا الأمر و ان يصنف في هذا المعنی ، وحتی أن بعض من يذم الرازي بل يكفره كعلي بن رضوان المصري و غيره يسمون ذلك الكتاب كتاب الرازي في مخاريق الأنبياء ." _[3]

ইবনু আবি-উসাইবায়াহর উক্ত বক্তব্যটি হতে বেশকিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বোঝা যায়, যথা ;

এক. আর-রাযীর সহিত "মাখারিক্বুল আনবিয়া" গ্রন্থটির সম্পৃক্ততা সঠিক নয়, বরং মিথ্যা ও ভুল।

দুই. মধ্যযূগে আর-রাযীবিদ্বেষী একদল বাজে চরিত্রবিশিষ্ট লোকদের বিচরণ ছিলো, এসব খারাপ লোকদের মধ্যে আর-রাযীর নামে জাল গ্রন্থ লিখে আর-রাযীর বদনাম হয়ার লক্ষ্যে সেই জাল গ্রন্থকে আর-রাযীর গ্রন্থ বলে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করার মত সামর্থ্যও ছিলো

তিন. আর-রাযী এমন কোনো ব্যাক্তি ছিলেন না, যে কিনা এই ধরনের ইসলামবিরোধী কাজ করার চেষ্টা করতে বা ইসলামবিরোধী বই লিখতে পারে ।

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।

প্রথম গ্রন্থটি প্রসঙ্গে ;

'আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী' তাঁর "আল-বাদয়ু ওয়াত তারিখ" গ্রন্থে আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে প্রচন্ড বাজে মন্তব্য করেছেন, তাকে একজন নবুওতবিরোধী নিকৃষ্ট ব্যাক্তি হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন, এবং মাখারিক্বুল আনবিয়া গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। [1]

আর-রাযীর ব্যাপারে আল-মুতহিরের উল্লেখিত এসব বিষয় গ্রহণযোগ্য নয়।

কেননা, 'আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী' একজন অজ্ঞাত লেখক। উনার ব্যাপারে কিছুই জানা যায়না। মুসলিম ইতিহাসবিদদের কেওই উনার বা উনার বইয়ের ব্যাপারে কিছু লিখেন নি। আবার বইটির সাথে আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসীর লেখক হিসেবে যেই সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেই সম্পৃক্ততাও প্রশ্নবিদ্ধ সংশয়পুর্ন। [14]

নিযামুল-মুলকের উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পর্কিত করা গ্রহণযোগ্য নয় কেননা তিনি কোনো ইতিহাসবিদ ছিলেন না। উনার বিশেষত্ব ছিলো বিভিন্ন সরকারি কর্মকান্ডে।

'আলি বিন রিদ্বওয়ান' কর্তৃক উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করাটা গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা,

ক. আলি বিন রিদ্বওয়ান, আর-রাযীর বাজে চরিত্রের শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত একজন ছিলেন।

খ. আলি বিন রিদ্বওয়ান তাঁর সমসাময়িক ও তাঁর পুর্বে গত হয়ে যাওয়া প্রচুর সংখ্যাক চিকিৎসকদের বিরোদ্ধে কথা বলতেন, মানে তিনি প্রায় সবারই বিরোধী ছিলেন [15]

গ. তিনি তার আলোচনাগুলোতে নিজ মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতা জাহির করতেন, কেও তাঁর এসব মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ কথাবার্তার জবাব দিতে চাইলে তিনি তাকে গালাগালি করতেন। [15]

ঘ. এবং তিনি তাঁর এই গুনটি (গ নং এ উল্লেখিত গুনটি) সবচেয়ে বেশি তখনই প্রয়োগ করতেন যখন তিনি হুনাইন বিন ইসহাক, আবুল-ফারাজ ইবনুত তাইব ও মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযীর বিরোদ্ধে বলতেন। অর্থাৎ এইতিনজনের বিরোদ্ধে বলার সময় তিনি সর্বাধিক পরিমান নির্বুদ্ধিতা ও মুর্খতা প্রকাশ করতেন, কেও এইতিনজনের ব্যাপারে তাঁর বলা মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ কথাসমুহের প্রতিউত্তর দিতে চাইলে তিনি তাকে সবচেয়ে বেশি গালাগালি করতেন। [15]

ইবনু আবি-উসাইবায়াহ উল্লেখ্য করেছেন যে আলি বিন রিদ্বওয়ানের মতো আর-রাযীর অন্যান্য কিছু বাজে চরিত্রের শত্রুরা উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।[3] আর-রাযীর বাজে চরিত্রের শত্রুদের কর্তৃক উক্ত গ্রন্থটিকে আর-রাযীর সহিত সম্পৃক্ত করাটা গ্রহণযোগ্য নয়, আর এর কারণও খুবই স্পষ্ট।

অতএব, এক্ষেত্রে যারা উক্ত গ্রন্থটির সহিত লেখক হিসেবে আর-রাযীর সম্পৃক্ততা থাকার দাবি করেছেন, তাঁদের এই দাবি আপত্তিকর, সমস্যাজনক, অনির্ভরযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য।

নিম্নে উল্লেখিত কারণসমূহের কারণে, আর-রাযীর সহিত "মাখারিক্বুল আনবিয়া" গ্রন্থটির সম্পৃক্ততা ভুল ও মিথ্যা, 

এক.

এক্ষেত্রে যারা উক্ত গ্রন্থটির সহিত লেখক হিসেবে আর-রাযীর সম্পৃক্ততা থাকার দাবি করেছেন, তাঁদের এই দাবি বিভিন্ন কারণে আপত্তিকর, সমস্যাজনক, অনির্ভরযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য।

দুই.

ইতিহাসবিদ 'আবুল-আব্বাস ইবনু আবি উসাইবায়াহ' তাঁর "উয়ুনুল আনবা" গ্রন্থে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আর-রাযীর সহিত "মাখারিক্বুল আনবিয়া" গ্রন্থটির সম্পৃক্ততা সঠিক নয়, বরং মিথ্যা ও ভুল।

তিন.

আর-রাযী তাঁর নিজের লেখা 'ফিহরিসিত' টিতে এই গ্রন্থটির নাম উল্লেখ্য করেন নি, অর্থাৎ তিনি জানতেন না যে তিনি উক্ত নামের কোনো গ্রন্থ লিখেছেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রন্থদুটি প্রসঙ্গে ;

শুধুমাত্র আল-বেরুনি ই "হিয়ালুল মুতানাব্বিইইন" ও "ফিন নাবুওয়াত" নামক উক্ত দুটি গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি ছাড়া আর কেও উক্ত দুটি গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, এইমর্মে কিছু পাওয়া যায়না।

নিম্নে উল্লেখিত কারণসমূহের কারণে, আর-রাযীর সহিত "হিয়ালুল মুতানাব্বিইইন" ও "ফিন নাবুওয়াত" নামক উক্ত দুটি গ্রন্থের সম্পৃক্ততা ভুল ও মিথ্যা,

এক.
শুধুমাত্র আল-বেরুনিই উক্ত দুটি গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। তিনি ছাড়া আর কেওই উক্ত দুটি গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পর্কিত করেন নি।এব্যাপারটা এইমর্মে সন্দেহ ও সম্ভাবনা তৈরি করে যে আল-বেরুনি হয়তো কোনো ভুল করেছেন এক্ষেত্রে। উল্লেখ্য যে, আর-রাযীর লিখিত গ্রন্থগুলোর ব্যাপারে আল-বেরুনী ছাড়াও অন্যান্য আরো বহু সংখ্যাক ইতিহাসবিদরা তালিকা বর্ণনা করেছেন, যেমন : ইবনুন নাদিম, ইবনুস সাঈ, আল-কিফতী, ইবনু আবি উসাইবায়াহ, আল-বাবানী সহ এরকম আরো অনেকেই।

দুই.
ইবনু আবি-উসাইবায়াহর গবেষণা হতে জানা যায় যে মধ্যযূগে আর-রাযীবিদ্বেষী একদল বাজে চরিত্রবিশিষ্ট লোকদের বিচরণ ছিলো, এসব খারাপ লোকদের মধ্যে আর-রাযীর নামে জাল গ্রন্থ লিখে আর-রাযীর বদনাম হয়ার লক্ষ্যে সেই জাল গ্রন্থকে আর-রাযীর গ্রন্থ বলে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করার মত সামর্থ্যও ছিলো। এব্যাপারটা হতে এইমর্মে সন্দেহ ও সম্ভাবনা প্রকাশিত হয় যে, খুব সম্ভবত আল-বেরুনী আর-রাযীর নামে লিখিত কিছু জাল গ্রন্থের খপ্পরে পড়ে এদুটি গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পর্কিত করেছেন।

তিন.
আল-বেরুনীর মৃত্যুর বহুকাল পরে আসা ইতিহাসবিদ 'ইবনু আবি উসাইবায়াহ' উল্লেখ্য করেছেন যে, আর-রাযী এমন কোনো ব্যাক্তি ছিলেন না, যে কিনা এইধরনের ইসলামবিরোধী বই লিখতে পারে।

চার.
আর-রাযী নিজের লিখিত 'ফিহরিসিত' টিতে উক্ত দুটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ্য করেন নি।

পাচ.

আল-বেরুনি তাঁর গ্রন্থ "আর-রিসালাহ ফি ফিহরিসিতে কুতুবে মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী" এর মধ্যে উক্ত দুটি ইসলামবিরোধী গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন তা সত্য, কিন্ত এই একই গ্রন্থে তিনি উক্ত দুটি গ্রন্থের পাশাপাশি নিম্নে উল্লেখিত তিনটি গ্রন্থকেও আর-রাযীর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। _[16]

1.Wujub Da‘wat al-Nabi ‘Ala Man Naqara bi al-Nubuwwat = Obligation to Propagate the Teachings of the Holy Prophet (pbuh) Against Those who Denied Prophecies

2.Fi anna li al-Insan Khaliqan Mutqinan Hakiman (That Man has a Wise and Perfect Creator).

3.Fi Wujub al-Du‘a’ Min Tariq al-Hazm (The Obligation of Prayer in Absolute and Sincere Faith).

এই তিনটি গ্রন্থই ইসলামের 'পক্ষের', ইসলামকে 'সমর্থনকারী'।

প্রথম গ্রন্থটি নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা) ও উনার দেয়া শিক্ষাসমুহের পক্ষে লেখা হয়েছে,  'নবুওত' বিষয়টার পক্ষে লেখা হয়েছে, যারা নবুওত অস্বীকার করে তাদের বিরোদ্ধে লেখা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থটি লেখা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষে। তৃতীয় গ্রন্থটি দোয়া করার পক্ষে লেখা হয়েছে।

আল-বেরুনি আলোচ্য দুটি ইসলামবিরোধী গ্রন্থকে আর-রাযীর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, এছাড়াও তিনি আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে লম্বা সমালোচনা করেছেন যার সারমর্ম হচ্ছে এই যে আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস ইসলামের সহিত সাংঘর্ষিক ছিলো। কিন্ত একজন ইসলামবিরোধী হয়া সত্ত্বেও আর-রাযীর পক্ষে কিভাবে ইসলামের পক্ষের উক্ত তিনটি বই লেখা সম্ভব হলো, সেটার কোনো ব্যাখ্যাই আল-বেরুনি দেন নি। ফলে, এক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের অস্পষ্টতা ও অসংগতি থেকে যায়।

অর্থাৎ ; আল-বেরুনির বক্তব্য অনুযায়ী বিচার করলে, আর-রাযী একজন ইসলামবিরোধী ও নবুওয়তবিরোধী ব্যাক্তি ছিলেন, কিন্ত আর-রাযী যদি আসলেই একজন ইসলামবিরোধী ও নবুওতবিরোধী হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কিভাবে ও কেন ইসলাম ও নবুওতের পক্ষে বই লিখলেন? এই প্রশ্নটির উত্তর আল-বেরুনি দিয়ে যান নি, তিনি এমন কিছু উল্লেখ্যও করে যান নি যাদ্বারা এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে।

চতুর্থ গ্রন্থটি প্রসঙ্গে ;

চতুর্থ গ্রন্থটির সহিত আর-রাযীর সম্পৃক্ততা প্রকৃতপক্ষে সত্য সঠিক ও প্রমাণিত, মোটেও ভুল নয়, অর্থাৎ আর-রাযী আসলেই চতুর্থ গ্রন্থটি লিখেছেন। তবে এই গ্রন্থটির শিরোনাম নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে।

গ্রন্থটির শিরোনাম كتاب فيما يرد به اظهار ما يدعى من عيوب الأنبياء এর মধ্যে الأنبياء শব্দটি বসবে, নাকি الأولياء শব্দটি বসবে, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ আছে। ইবনুন নাদিম, ইবনুস সাই সহ অন্যান্য কিছু ইতিহাসবিদদের মতে এখানে الأنبياء বসবে ; পক্ষান্তরে আল-কিফতী, আল-বাবানী, ইবনু আবি-উসাইবায়াহ সহ অন্যান্য কিছু ইতিহাসবিদদের মতে এখানে الأولياء বসবে। [7][8][9][10][11]

ইবনুন নাদিম তাঁর "আল-ফিহরিসিত" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে আর-রাযী নিজ  ফিহরিসিতটিতে উক্ত গ্রন্থটির শিরোনাম উল্লেখ্য করেছেন الأنبياء বসিয়ে। পক্ষান্তরে ইবনুন নাদিমেরই সুত্র ধরে জামালুদ্দিন আল-কিফতী তাঁর "ইখবারুল উলামা" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে আর-রাযী নিজ ফিহরিসিতটিতে উক্ত গ্রন্থটির শিরোনাম উল্লেখ্য করেছেন الأولياء বসিয়ে। [7][8]

উল্লেখ্য যে, যদি الأنبياء বসে, তাহলে উক্ত শিরোনামের সারমর্ম দাঁড়াবে অনেকটা এরকম "এমন একটি গ্রন্থ যেখানে নবীদের বহু দোষ-ক্রুটি বর্ণনা করা হয়েছে", পক্ষান্তরে যদি এক্ষেত্রে الأولياء বসে, তাহলে উক্ত শিরোনামের সারমর্ম দাঁড়াবে অনেকটা এরকম "এমন একটি গ্রন্থ যেখানে ওলিদের বহু দোষ-ক্রুটি বর্ণনা করা হয়েছে "। অর্থাৎ الأنبياء বসলে, বইটি হবে নবীদের দোষ-ক্রুটি বর্ণনাকারী, আর الأولياء বসলে তা নবীদের দোষ-ক্রুটি বর্ণনাকারী হবেনা বরং ওলিদের দোষ-ক্রুটি বর্ণনাকারী হবে।

স্পষ্টতই, এক্ষেত্রে উক্ত গ্রন্থটির শিরোনাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে, উক্ত গ্রন্থটি নবীদের বিরোধী নাকি ওলিদের বিরোধী তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী উক্ত গ্রন্থটি নবীদের বিরোধী, আরেকটি মত অনুযায়ী তা নবীদের বিরোধী নয় বরং ওলিদের বিরোধী।এখন প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে কোন মতটি সঠিক? 

উত্তর হিসেবে বলব, এক্ষেত্রে الأولياء বসার মতটি সঠিক, অর্থাৎ উক্ত গ্রন্থটিতে নবীদের নয় বরং ওলিদের বহু দোষ ক্রুটি বর্ণিত হয়ার মতটি সঠিক।

যদি الأنبياء বসার মতটি সঠিক হয়, তাহলে উক্ত গ্রন্থটি নবীদের বিরোধী হবে, কিন্ত ইবনু আবি-উসাইবায়াহ এর বক্তব্য অনুযায়ী আর-রাযী এমন কোনো ব্যাক্তি ছিলেন না, যিনি কিনা নবীদের বিরোদ্ধে বই লিখতে পারেন, এরপাশাপাশি ইবনু আবি-উসাইবায়াহ এক্ষেত্রে শিরোনামে  الأولياء হয়ার মতটিরই পক্ষের, তিনি তাঁর "উয়ুনুল আনবা" গ্রন্থে الأولياء বসিয়ে শিরোনামটি উল্লেখ্য করেছেন। সুতরাং শিরোনামটিতে الأولياء বসার মতটিই সঠিক ও الأنبياء বসার মতটি ভুল।

আল্লাহর ওলিরা নিষ্পাপ ছিলেন না, তাদেরও কমবেশি দোষক্রুটি ছিলো, কাজেই ওলিদের দোষক্রুটি বর্ণনা করে বই লেখার দরুন কেও অমুসলিম হয়ে যায়না।

4. আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে :-

এই চতুর্থ শ্রেণীটিতে তিনটি উপশ্রেণী 4.1, 4.2 ও 4.3 থাকবে। প্রথম উপশ্রেণী 4.1 এ আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আসা বড় ধরনের গুরুতর অভিযোগগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে, যেগুলো কিনা তাঁর মুসলিম হয়াকে তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দ্বিতীয় উপশ্রেণী 4.2 এ আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আসা মাঝারি ধরনের অগুরুতর অভিযোগগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। তৃতীয় উপশ্রেণী 4.3 এর মধ্যে আর-রাযী কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তা নির্ণয় করা হবে।

এবার মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

4. 1.  আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আসা বড় ধরনের সমালোচনাগুলো প্রসঙ্গে :

আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে কিছু মধ্যযূগীয় লেখকরা বড় ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন, যা আর-রাযীর মুসলিম হয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ আনা মোট ৬ জন মধ্যযূগীয় লেখকের ব্যাপারে আমি জানতে পেরেছি। তারা হলেন, 

১.  আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী
২.  আবু-হাতিম আর-রাযী আল-ইসমাঈলী
৩.  হামিদুদ্দিন আহমদ আল-কিরামানী
৪ . আবুর-রাইহান মুহাম্মদ আল-বেরুনী
৫.  আবুল-ক্বাসিম সঈদ আল-আন্দালুসী
৬.  আলি বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী

এবার বিস্তারিত,

১. আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী তাঁর "আল-বাদয়ু ওয়াত তারিখ" গ্রন্থে আর-রাযীকে একজন নবী-রাসুলদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণকারী নিকৃষ্ট অমুসলিম ব্যাক্তি হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন।

জবাব :

এর জবাব তৃতীয় শ্রেণীর 3.2 উপশ্রেণীতে ইতিমধ্যে গত হয়ে গেছে। তবুও, আবার উল্লেখ্য করছি।

"আর-রাযীর ব্যাপারে আল-মুতহিরের উল্লেখিত এসব বিষয় গ্রহণযোগ্য নয়।কেননা, 'আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসী' একজন অজ্ঞাত লেখক। উনার ব্যাপারে কিছুই জানা যায়না। মুসলিম ইতিহাসবিদদের কেওই উনার বা উনার বইয়ের ব্যাপারে কিছু লিখেন নি। আবার বইটির সাথে আল-মুতহির বিন তাহির আল-মাকদিসীর লেখক হিসেবে যেই সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেই সম্পৃক্ততাও প্রশ্নবিদ্ধ সংশয়পুর্ন। "[14]

২.  আবু-হাতিম আর-রাযী আল-ইসমাঈলি এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

ইসমাঈলি শিয়া দাঈ ও দার্শনিক আবু-হাতেম আহমদ বিন হামদান আর-রাযী আল-ওয়ারসামী  'أعلام النبوة' (Signs of Prophecy) নামের একটি গ্রন্থ লিখেছেন, উক্ত গ্রন্থটির আরেকটি ভিন্ন নামও আছে, এবং সেই নামটি হচ্ছে 'دلائل النبوة' (Proofs of Prophecy)।সেই গ্রন্থে তিনি তাঁর ও আর-রাযীর মাঝে সংঘটিত হয়া বিতর্কগুলোর বিবরণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি আর-রাযীকে একজন 'নাস্তিক' হিসেবে সম্বোধন করেছেন, তাঁর দেয়া এসব বিতর্কসমুহের বিবরণগুলো অনুযায়ী বিচার করলে, আর-রাযী একজন অমুসলিম, ইসলামবিরোধী এবং নবুওতবিরোধী ব্যাক্তি ছিলেন।

জবাব :

শিয়া দার্শনিক আবু-হাতেম তাঁর أعلام النبوة গ্রন্থটিতে একজন নাস্তিকের সহিত তাঁর হয়ে যাওয়া বিতর্কসমূহের বিবরণ দিয়েছেন, কিন্ত أعلام النبوة গ্রন্থটির মূল পান্ডুলিপিতে কোথাও এমনটা উল্লেখ্য করা হয়নি যে, তিনি উক্ত গ্রন্থে যেই নাস্তিকের কথা উল্লেখ্য করেছেন সেই নাস্তিকটি আবু-বকর মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী ই। বরং আবু-হাতেম উক্ত গ্রন্থটিতে 'নাস্তিক' বলতে আসলে কাকে উদ্দেশ্য করেছেন কোন ব্যাক্তিটিকে উদ্দেশ্য করেছেন, তা অজানা, অবর্ণিত ; এবং তা জানা সম্ভবও না, কেননা মূল পান্ডুলিপির মলাটের অংশটা বহুকাল আগেই হারিয়ে গিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আবু-হাতেমের أعلام النبوة গ্রন্থে উল্লেখিত নাস্তিকটির পরিচয় অজ্ঞাত, অজানা, অস্পষ্ট, অবর্ণিত। উক্ত অজ্ঞাত নাস্তিকটির নাম পরিচয় أعلام النبوة গ্রন্থটির মূল পান্ডুলিপির কোথাও বর্ণনা করা হয়নি।মূলত পরবর্তীকালে আধুনিক যূগে অনেকে প্রমাণহীনভাবেই নিছক দাবি করেছে যে আবু-হাতেম উনার أعلام النبوة গ্রন্থটিতে যেই নাস্তিকটির কথা উল্লেখ্য করেছেন সেই নাস্তিকটি আবু-বকর আর-রাযী ই,  কিন্ত এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ না থাকায় এটি ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য। [17]

যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেই যে আবু-হাতেম এখানে "নাস্তিক" বলতে আবু-বকর আর-রাযীকেই বুঝিয়েছেন। তবুও তাঁর এই 'أعلام النبوة' গ্রন্থটির উপর নির্ভর করে আর-রাযীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া গ্রহণযোগ্য হবেনা।

কেননা আবু-হাতেমের ব্যাপারে 'ইবনু হাজার আল-আসকালানী' বলেছেন :

كان من أهل الفضل والأدب والمعرفة باللغة وسمع الحديث كثيرا وله تصانيف ثم أظهر القول بالإلحاد وصار من دعاة الإسماعيلية وأضل جماعة من الأكابر [18]

'তিনি সম্মানিত, সাহিত্যিক ও ভাষা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং তিনি প্রচুর হাদিস শ্রবন করেছেন, এবং তাঁর বহু বই রয়েছে। অতপর তিনি নাস্তিকিয় কথাবার্তা বলা আরম্ভ করেন, এবং ইসমাইঈলিয়াহর দাঈদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান, এবং বড় বড় ব্যাক্তিদের এক জামাতকে পথভ্রষ্ট করেন '

আবু-হাতেম 'أعلام النبوة'  গ্রন্থটি তখন লিখেছেন যখন তিনি ইসমাঈলী দাঈ ছিলেন। এর প্রমাণ হলো এই যে তাঁর উক্ত গ্রন্থে শিয়াদের ইমাম-তত্ত্বের পক্ষে বেশকিছু কথা বলা হয়েছে।

৩. হামিদুদ্দিন আহমদ আল-কিরামানী এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

হামিদুদ্দিন আহমদ আল-কিরামানী আর-রাযীর বিরুদ্ধে 'الأقوال الذهبية ' নামক একটি বই লিখেন। সেখানে তিনি আর-রাযীকে নবুওত অস্বীকারকারী, ইসলামবিরোধী ও অমুসলিম  হিসেবে অভিযুক্ত করেন। [19]

জবাব : হামিদুদ্দিন আহমদ আল-কিরামানী ছিলেন একজন কট্টর ইসমাঈলী শিয়া দাঈ, যাকে পুর্বদিকে ইসমাইঈলিইয়ত প্রচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল ।[20] কাজেই আর-রাযীর ব্যাপারে হামিদুদ্দিনের কোনো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য নয়।

৪. আবুর-রাইহান মুহাম্মদ আল-বেরুনি এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

আবুর-রাইহান আল-বেরুনী, আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে তাঁর "আর-রিসালাহ ফি ফিহরিসিতে কুতুবে মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযী" গ্রন্থের ভুমিকা অংশে বিস্তারিত সমালোচনা করেছেন। নিম্নে আল-বেরুনির দ্বারা কৃত সম্পুর্ণ সমালোচনাটি উল্লেখ্য করা হলো, [21]

Indeed, I confirmed your doubt of me, as far as possible, and I verified to you Abu Bakr al-Razi’s books which I have seen or whose titles I have discovered by means of his guidance and indication. Were it not for my respect for you, I would not have done this, because such a work could bring upon me hatred from al-Razi’s opponents who might think that I belong to his sect and am among those who equalize between al-Razi’s true justifications and his inclinations to heretic tendencies and expressions in fanaticism, which exposed him to big sins. Religiously, he did not reduce the harshness (qasawah) by his neglect, avoidance, ignorance since he worked on disapproved things with evil desires and corrupt deeds. In addition, he was influenced by the books of Mani and his followers which deceived all religions, including islam.

The proof of what I say can be found at the end of his book On Prophecies which the author made glorious and great. This work corrupted his thought, tongue and pen with which an intelligent man would have nothing to do and would not pay any aĴention since his eff ort will not secure anything good in this world save hatred.We have not ceased observing people who do not follow his ideas saying: “Indeed, Razi destroyed the wealth of the people, their bodies and religions”. This is true in the fi rst extreme and many other extremes. Therefore, it is impossible to sensibly argue with him with moderation.

Although I am free from following him concerning maĴ ers that corrupted property – despite my love of wealth and other things for the purpose of becoming rich, I cannot free myself from it – I am not saved from other aspects. This is because, I read his book on Divine Science (Metaphysics) in which he displays indications of Mani’s books particularly the book entitled the Book of Secrets”, such that the sign misled me as the white and yellow alloys in alchemy deceive others.

……I believe that God speaks the truth in his saying: “For any to whom Allah Giveth not light, there is no light.”Then, I summarized the purely nonsensical and deviating contents of the book, for the purpose of study, so that those people who are stricken by the harm that also befalls me will inspect them and rush to be healed from them as I have done.This was the condition of Abu Bakr al-Razi, and I do not believe that he was trying to deceive others, on the other hand he himself was deceived, just like what he believes concerning people whom God preserves from such ideas, and his share in that which he desire will not diminish; for all actions are in accordance with one’s intentions and on the day of judgment, one should be a suffi cient account against himself.

জবাব :

এখানে সমালোচনার শুরু থেকে আরম্ভ করে "……Therefore, it is impossible to sensibly argue with him with moderation." পর্যন্ত বলা কথাগুলোর ভিত্তি বা প্রমাণ হচ্ছে আর-রাযীর গ্রন্থ "في النبوات" যার ইংরেজি নাম "On Prophecies"।এব্যাপারটা আল-বেরুনির বক্তব্য "The proof of what I say can be found at the end of his book On Prophecies which the author made glorious and great." হতে স্পষ্ট হয়।আর আমি পুর্বেই দেখিয়েছি যে في النبوات গ্রন্থটির সহিত আর-রাযীর সম্পৃক্ততা ভুল ও মিথ্যা। কাজেই "......with him with moderation." পর্যন্ত যত কথা বলা হয়েছে সেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়, কেননা এসব কথার পক্ষে উল্লেখিত ভিত্তি বা প্রমাণটি সমস্যাজনক।

আল-বেরুনি বলেছেন,

We have not ceased observing people who do not follow his ideas saying: “Indeed, Razi destroyed the wealth of the people, their bodies and religions”.

আমি বলব, এক্ষেত্রে যেসব লোকদের কথা বলা হচ্ছে, তারা অজ্ঞাত, তারা কারা সেব্যাপারে আল-বেরুনি কিছুই বলেন নি। এটাওত হতে পারে যে এসব লোক আর-রাযির বাজে চরিত্রবিশিষ্ট শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত! কিছু অজ্ঞাত লোকের বক্তব্যের উপর নির্ভর করে আর-রাযীর ব্যাপারে যা তা বলে দেয়ার সুযোগ নেই, কেননা তৎকালীন সময়ে একশ্রেণীর লোকদের অভ্যাসই ছিলো এই যে তারা হিংসা-বিদ্বেষবশত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিত্বদের ব্যাপারে কুৎসা রটিয়ে বেড়াত, মিথ্যাচার করে বেড়াত।

আল-বেরুনি বলেছেন,

This is because, I read his book on Divine Science (Metaphysics) in which he displays indications of Mani’s books particularly the book entitled the Book of Secrets”, such that the sign misled me as the white and yellow alloys in alchemy deceive others

আমি বলব, এরদ্বারা আর-রাযীর ইমানহীন অমুসলিম হয়া প্রমাণিত হয়না। এই বক্তব্যটির উপর নির্ভর করে বড়জোর এতটুকু বলা যায় যে আর-রাযী পথভ্রষ্ট সমস্যাবিশিষ্ট মুসলিম ছিলেন, এই বক্তব্যটির উপর ভিত্তি করে এটা বলা যায়না যে আর-রাযী একজন অমুসলিম বা মুর্তাদ ছিলেন।

আল-বেরুনি তারপর বলেছেন যে,

……I believe that God speaks the truth in his saying: “For any to whom Allah Giveth not light, there is no light.”Then, I summarized the purely nonsensical and deviating contents of the book, for the purpose of study, so that those people who are stricken by the harm that also befalls me will inspect them and rush to be healed from them as I have done.This was the condition of Abu Bakr al-Razi, and I do not believe that he was trying to deceive others, on the other hand he himself was deceived, just like what he believes concerning people whom God preserves from such ideas, and his share in that which he desire will not diminish; for all actions are in accordance with one’s intentions and on the day of judgment, one should be a sufficient account against himself.

আমি বলব, আল-বেরুনির এই বক্তব্যটি দ্বারাও আর-রাযীর ইমানহীন অমুসলিম হয়া প্রমাণিত হয়না। এই বক্তব্যটির উপর ভিত্তি করেও বড়জোর এতটুকুই বলা যায় যে আর-রাযী একজন পথভ্রষ্ট সমস্যাবিশিষ্ট মুসলিম ছিলেন। এই বক্তব্যটির উপর ভিত্তি করেও এটা বলা যায়না যে আর-রাযী একজন অমুসলিম বা মুর্তাদ ছিলেন। এখানে আল-বেরুনি যেই ধরনের কথা বলেছেন আর-রাযীর বিরোদ্ধে, সেই একই ধরনের কথা একজন পাপিষ্ট তবে ইমানদার মুসলিমের বেলাতেও বলা যায়। কাজেই এসব কথা দ্বারা আর-রাযীর অমুসলিম বা মুর্তাদ হয়া প্রমাণিত হয়না।

৫. আবুল-ক্বাসিম সঈদ আল-আন্দালুসী এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

সঈদ আল-আন্দালুসী তাঁর 'তবাকাতুল উমাম' গ্রন্থে আর-রাযীর ব্যাপারে বলেছেন যে আর-রাযীর 'আল-ইলমুল ইলাহি', 'আত-তিব্বুর রুহানী' ও  তাঁর অন্যান্য কিছু গ্রন্থ হতে এমনটা ইংগিত পাওয়া যায় যে তিনি শির্ক করার ক্ষেত্রে ছানাওইয়াহদের দৃষ্টিভংগি, নবুওত অস্বীকার করার ক্ষেত্রে বারাহিমাহদের দৃষ্টিভংগিসমুহ এবং এক জিবদেহ হতে অন্য জীবদেহে আত্নার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সাবেঈদের আকিদাহ-বিশ্বাস  কে 'পছন্দ' করেছিলেন।[22]

জবাব :

সঈদ আল-আন্দালুসী এই সমালোচনাটি উল্লেখ্য করার পরে বলেছেন :

"ولو أن الرازي وفقه اللّٰه تعالی  للرشد…"[22]

'যদিও আর-রাযীকে আল্লাহ তা'য়ালা হেদায়েতের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন…'

সুতরাং সঈদের এই সমালোচনা সঈদের বক্তব্য দ্বারাই খন্ডিত হয়ে গেলো।

যদি কেও বলে যে, সঈদ এখানে তামান্নি বুঝাচ্ছেন, এর সঠিক অর্থ হবে "যদি এমনটা হতো, যে আর-রাযীকে আল্লাহ তা'য়ালা হেদায়াতের জন্য দিক-নির্দেশনা দিতেন।" অর্থাৎ এখানে সঈদ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছেন এই বলে যে 'যদি এমনটা হতো'। এরদ্বারা এটা স্পষ্ট হয়না যে এমনটাই হয়েছে।

তাহলে তাকে জবাবস্বরুপ বলব, সঈদ ولو এর পরে যা উল্লেখ্য করেছেন, তার একটা ক্ষুদ্র অংশ আমি এখানে এনেছি।  যদি তাঁর ولو এর পর উল্লেখ্য করা সম্পুর্ণ কথাটির দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়, তাহলে দেখা যাবে তিনি সেখানে যেই বিষয়টা বলেছেন ; সেই একই বিষয়কে অন্যান্য একাধিক-সংখ্যাক মুসলিম ইতিহাসবিদরা আর-রাযীর সাথে সম্পর্কিত একটি তথ্য হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন যে এমনটাই হয়েছে। যা হয়ে গিয়েছে, সঈদ সেটা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কেন প্রকাশ করতে যাবেন? সুতরাং এখানে সঈদ আকাঙ্ক্ষা বোঝান নি, বরং এখানে তিনি ولو কে দুটি ভিন্ন বাক্যের মাঝে সংযোগ সৃষ্টিকারী একটি অব্যয়ের ন্যায় ব্যবহার করেছেন, তামান্নী তথা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করেন নি।

৬. আলি বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী এর সমালোচনা প্রসঙ্গে,

আবুল-আব্বাস ইবনু আবি-উসাইবায়াহ তাঁর "উয়ুনুল আনবা" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে, আলি বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী, আবু-বকর আর-রাযীকে তাকফির করেছেন।

জবাব :

আলি বিন রিদ্বওয়ান আল-মাসরী কর্তৃক, আর-রাযীকে কাফের বলা গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা,

ক. আলি বিন রিদ্বওয়ান, আর-রাযীর বাজে চরিত্রের শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত একজন ছিলেন।

খ. আলি বিন রিদ্বওয়ান তাঁর সমসাময়িক ও তাঁর পুর্বে গত হয়ে যাওয়া প্রচুর সংখ্যাক চিকিৎসকদের বিরোদ্ধে কথা বলতেন, মানে তিনি প্রায় সবারই বিরোধী ছিলেন [15]

গ. তিনি তার আলোচনাগুলোতে নিজ মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতা জাহির করতেন, কেও তাঁর এসব মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ কথাবার্তার জবাব দিতে চাইলে তিনি তাকে গালাগালি করতেন। [15]

ঘ. এবং তিনি তাঁর এই গুনটি (গ নং এ উল্লেখিত গুনটি) সবচেয়ে বেশি তখনই প্রয়োগ করতেন যখন তিনি হুনাইন বিন ইসহাক, আবুল-ফারাজ ইবনুত তাইব ও মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাযীর বিরোদ্ধে বলতেন। অর্থাৎ এইতিনজনের বিরোদ্ধে বলার সময় তিনি সর্বাধিক পরিমান নির্বুদ্ধিতা ও মুর্খতা প্রকাশ করতেন, কেও এইতিনজনের ব্যাপারে তাঁর বলা মুর্খতা ও নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ কথাসমুহের প্রতিউত্তর দিতে চাইলে তিনি তাকে সবচেয়ে বেশি গালাগালি করতেন। [15]

উল্লেখ্য যে, আলি বিন রিদ্বওয়ানের উক্ত বৈশিষ্টগুলো পুর্বেও তৃতীয় শ্রেণীর 3.2 উপশ্রেণীতে একবার বর্ণিত হয়েছে, প্রয়োজনের স্বার্থে আবার উল্লেখ্য করলাম।

4. 2.আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আসা মাঝারি ধরনের সমালোচনাগুলো প্রসঙ্গে :

আর-রাযীর ব্যাপারে আরেকটি সমালোচনা আছে, এবং তা হলো এই যে,

"আর-রাযী ঈশ্বের সাথে সম্পর্কিত শাস্ত্রে গভিরভাবে প্রবেশ করেন নি। এবং তিনি উক্ত শাস্ত্রের বিষয়বস্তুসমুহ পরিপুর্ণভাবে বোঝে উঠতে পারেন নি। যার ফল-স্বরুপ উনার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিকৃতি দেখা দেয়, তিনি বহু নির্বুদ্ধিতাপুর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অন্ধ অনুসরণ করতে থাকেন, এবং বহু নিকৃষ্ট মতবাদকে গ্রহণ করেন, এবং তিনি ঠিকমতো না জেনে ও না বোঝেই বহু দলকে অপমান করে। "

আর-রাযীর ব্যাপারে এই সমালোচনাটি বহু মুসলিম ইতিহাসবিদরা উল্লেখ্য করেছেন। উদাহরণস্বরুপ,_[23]

১.আবুল-ক্বাসিম সঈদ আল-আন্দালুসী
২.আবুল-আব্বাস ইবনু আবি-উসাইবায়াহ
৩.ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ আল-আমরী
৪.জামালুদ্দিন আবুল-হাসান আল-কিফতী
৫.সিদ্দিক হাসান খান আল-কিন্নুজী

(এছারাও আরো অনেকে ……) 

এখন প্রশ্ন হলো, এই সমালোচনাটি কি আর-রাযীকে একজন অমুসলিম সাব্যস্ত করে?  তাঁর মুসলিম হয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে? 

এর উত্তর হলো : মোটেও না। এই সমালোচনাটি দ্বারা মোটেও আর-রাযী একজন অমুসলিম সাব্যস্ত হন না, এরদ্বারা তাঁর মুসলিম হয়া কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়না।

কেননা, "এই সমালোচনাটির মাত্রা বা মান এতটাও শক্তিশালী বা তীব্র নয়, যে এরদ্বারা আর-রাযীর মুসলিম হয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। "

আমার এই দাবিটির পক্ষে প্রমাণ হলো এই যে, আর-রাযীর ব্যাপারে যারা আলোচ্য সমালোচনাটি উল্লেখ্য করেছেন, স্বয়ং তাদেরই অনেকে আর-রাযীকে "মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত একজন " হিসেবে গণ্য করেছেন।

যেমন,_[24]

এক. জামালুদ্দিন আল-কিফতী, তিনি আর-রাযী সম্পর্কে আলোচ্য সমালোচনাটি উল্লেখ্য করেছেন, এবং এরপাশাপাশি ইবনু জুলজুলের সুত্র ধরে আর-রাযীকে ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম বলেছেন।

দুই. ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ আল-আমরী, তিনিও আর-রাযীর ব্যাপারে আলোচ্য সমালোচনাটি উল্লেখ্য করেছেন। এবং এরপাশাপাশি আর-রাযীকে "মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসক" উপাধি দিয়েছেন।

তিন. সিদ্দিক হাসান খান আল-কিন্নুজী, তিনি আর-রাযীর ব্যাপারে আলোচ্য সমালোচনাটি উল্লেখ্য করেছেন। এবং এরপাশাপাশি আর-রাযীকে "মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসক" উপাধি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, আর-রাযীর দর্শনচর্চার ব্যাপারে একটি প্রশংসাও আছে। এবং তা হলো এই যে,

"আর-রাযী দর্শনশাস্ত্র ও চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। তিনি দর্শনশাস্ত্রের একদম গভীরে চলে যান। তিনি দর্শনশাস্ত্রের সঠিক ও বিশুদ্ধ বিষয়গুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং সমস্যাযুক্ত বিষয়গুলোকে ক্রুটিপুর্ণ সাব্যস্ত করেন। "

এই প্রশংসাটিও বহু মুসলিম ইতিহাসবিদরা উল্লেখ্য করেছেন, যেমন : সিদ্দিক হাসান, ইবনু খাল্লিকান, আস-সিফদী এবং অন্যান্য আরো অনেকেই। [25]

4. 3. আর-রাযীর প্রকৃত ধর্মবিশ্বাস :

প্রকৃতপক্ষে, আর-রাযী একজন ইমানদার মুসলিম ছিলেন। একাধিক সংখ্যাক মুসলিম ইতিহাসবিদরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এব্যাপারটা স্পষ্ট করেছেন। যেমন,

'আবু দাউদ ইবনু জুলজুল আল-আন্দালুসী' একদম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, "আর-রাযী ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম ছিলেন"। [26]

'জামালুদ্দিন আবুল-হাসান আল-কিফতী' আর-রাযীকে "মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসক " উপাধি দিয়েছেন এবং ইবনু জুলজুলের সুত্র ধরে আর-রাযীকে ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম বলেছেন। [27]

'সিদ্দিক হাসান খান আল-কিন্নুজি' এবং 'ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ আল-আমরী' আর-রাযীকে "মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসক " উপাধি দিয়েছেন। [28]

'আহমাদ ইবনু খাল্লিকান আল-বারমাকী' মৃত আর-রাযীর আত্নার জন্য রহিমাহুল্লাহ বলে রহমতের দোয়া করেছেন। এবং এমনটা শুধুমাত্র সেসব মৃত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রেই করা যায়েয, যারা কিনা ইমানদার মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।_[29]

5. আর-রাযী কোন ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন? 

এই শ্রেণীটিতে দুটি উপশ্রেণী 5.1 ও 5.2 থাকবে। 5.1 এ আর-রাযীর মৃত্যুর অল্প কিছুকাল পুর্বের একটি ছোট কবিতা নিয়ে সৃষ্ট হয়া জটিলতা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে। এবং 5.2 এ আর-রাযী আসলে কোন ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তা নির্ণয় করা হবে।

5.1. আর-রাযীর একটি ছোট কবিতা নিয়ে সৃষ্টি হয়া জটিলতা প্রসঙ্গে :

আর-রাযীর একটি বিখ্যাত ছোট কবিতা আছে, যা আর-রাযী তাঁর মৃত্যুর নিকটবর্তি সময়ে নিজের ব্যাপারে পাঠ করেছিলেন। কবিতাটি হলো এই  : …[30]

لعمري ما أدري وقد آذَن البِلَى ... بعاجلِ ترحالِي إلى أين ترحالي

وأين محلُّ الرُّوح بعد خُروجِه ... مِنَ الجسد المنحلِّ والهيكل البالي

ইবনুল-কাইইম তাঁর "মাদারিজুস সালিকিন" গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন যে, কিছু জ্ঞানী ব্যাক্তিরা উক্ত কবিতাকে কেন্দ্র করে আর-রাযীকে একজন জাহান্নামী ও কাফের বলেছেন। [31]


জবাব :

 

আর-রাযীর উক্ত কবিতাটির মর্ম হচ্ছে অনেকটা এরুপ,

"আর-রাযী জানেন না যে তিনি মৃত্যুর পর জাহান্নামে যাবেন, নাকি জান্নাতে। তবে তিনি তা জানতে চান। এবং তিনি জাহান্নামের আযাবের প্রতি ভীত হয়ে আছেন। "[32] 

 

অর্থাৎ এই কবিতাতে এমন কিছুই নেই, যা আর-রাযীর কাফের হয়ার দিকে ইংগিত দেয়।

 

আর-রাযীকে কাফের জাহান্নামী সাব্যস্তকারী এই জ্ঞানী লোকগুলো আসলে কারা, তা স্পষ্ট নয়, তাঁরা কি ইতিহাসবিদ্যার ব্যাপারে অউদো কোনো ধারনা রাখেন কিনা তাও বলা যায়না। আর-রাযীকে কাফের সাব্যস্তকারী এসব জ্ঞানী লোক এক্ষেত্রে অপরিচিত অজ্ঞাত, আর কোনো ব্যাক্তির অবস্থা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অজ্ঞাত অপরিচিত লোকদের বক্তব্য নির্ভরযোগ্য নয়। একদল জ্ঞানী তবে অপরিচিত অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের কর্তৃক আর-রাযীকে জাহান্নামী-কাফের বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়, নির্ভরযোগ্য নয়, এবং এর উপর ভিত্তি করে আর-রাযীকে কাফের বা জাহান্নামী বলাটা সঠিক হবেনা।

 

5. 2. আর-রাযী যেই ধর্মে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন :

আর-রাযীর ব্যাপারে ইসলামের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদদের অন্তর্ভুক্ত একজন 'ইবনু খাল্লিকান আল-বারমাকী' লিখেছেন যে,

وتوفی سنة إحدی عشرة ثلثمائة رحمه اللّٰه تعالی _[29]

'এবং তিনি (আর-রাযী) তিনশত এগারো (হিজরি) সনে মৃত্যুবরন করেন, রহিমাহুল্লাহু তা'য়ালা (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুক)'

এক্ষেত্রে ইবনু খাল্লিকান মৃত আর-রাযীর আত্নার রহমতের জন্য "রহিমাহুল্লাহ" বলে দোয়া করেছেন, এবং এমনটা শুধুমাত্র সেসব মৃত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রেই করা যায় যারা কিনা ইমানদার মুসলিম থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সুতরাং, ইবনু খাল্লিকানের উক্ত দোয়া করার ব্যাপারটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আর-রাযী ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

6. পরিশিষ্ট :-

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে আর-রাযীর অমুসলিম ও ইসলামবিরোধী হয়ার পক্ষে যা কিছুই উল্লেখ্য করা হয়েছে তার সবই সঠিক, অর্থাৎ আর-রাযী একজন অমুসলিম ও ইসলামবিরোধী ছিলেন, ইসলাম ও নবীদের বিরোধীতা করতেন, ইসলামবিরোধী বিভিন্ন বই লিখতেন, ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কুফরি বিশ্বাস রাখতেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। তর্কের খাতিরে আর-রাযীর ব্যাপারে আসা এসব অপবাদ, অভিযোগ ও সমালোচনা যদি মেনেও নেই, তাহলেও আর-রাযীকে নিছকই একজন অমুসলিম ইসলামবিরোধী বলে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা এসবকিছুর পাশাপাশি, আর-রাযীর মুসলিম হয়ার পক্ষেও একাধিক সংখ্যাক দলিল-প্রমাণ আছে! তাঁর মুসলিম হয়ার পক্ষের এসব প্রমাণকে বিবেচনা হতে বাদ দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

যদি ধরে নেই যে আর-রাযী আসলেই অমুসলিম ও ইসলামবিরোধী ছিলেন, তাহলে এটাও মানতে হবে যে, আর-রাযী পরবর্তীতে হেদায়াত পেয়েছিলেন, তওবাহ করেছিলেন, এবং মুসলিম অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

আবুল-কাসিম সঈদ আল-আন্দালুসী, তার "তবাকাতুল উমাম" গ্রন্থে আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে গুরুতর কিছু অভিযোগ উল্লেখ্য করেছেন, এসব অভিযোগ আর-রাযীকে একজন অমুসলিম ও ইসলামবিরোধী সাব্যস্ত করে ও আর-রাযীর অমুসলিম হয়ার মতটিকেই সত্যায়ন করে। কিন্ত এসব অভিযোগ করার ঠিক পরেই তিনি বলেছেন যে আল্লাহ আর-রাযীকে হেদায়েতের পথ দেখিয়েছিলেন। [22] এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে আর-রাযী যদি আসলেই একজন নবুওতবিরোধী ইসলামবিরোধী অমুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে তিনি হেদায়াত লাভ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি তওবাহ করে পুনরায় মুসলিম হয়েছিলেন।

খুব সম্ভবত একারণেই আর-রাযীর মুসলিম হয়ার পক্ষেও অনেক প্রমাণ আছে, আবার তাঁর অমুসলিম হয়ার পক্ষেও অনেক প্রমাণ আছে। উনার মুসলিম হয়ার পক্ষের প্রমাণসমুহের প্রেক্ষাপট হচ্ছে উনার হেদায়াত লাভের পরবর্তী কালের, এবং উনার অমুসলিম হয়ার পক্ষের প্রমাণসমুহের প্রেক্ষাপট হচ্ছে উনার হেদায়াত লাভের পুর্বের। উপরে উল্লেখিত বিষয়টি মেনে নিলে আর-রাযীর মুসলিম হয়ার পক্ষের প্রমাণসমুহ ও অমুসলিম হয়ার পক্ষের প্রমাণসমুহের মাঝে সামঞ্জস্যসাধন করা যায়, আর-রাযীর ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে কেন পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।

আর-রাযী হেদায়াত লাভ করার পর পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ে যান নি, তিনি হেদায়াত লাভ করার পর, তথা তওবাহ করার পর, ইসলামের পথেই অটল ছিলেন, এবং ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলিম থাকা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।এর পক্ষে প্রমাণ হচ্ছে এই যে, ইবনু খাল্লিকান মৃত আর-রাযীর আত্নার জন্য "রহিমাহুল্লাহ" বলে দোয়া করেছেন।

7.টিকাসমূহ :-

[1]আল-মুতহির, আত-বাদয়ু ওয়াত তারিখ (3/110)

[2]নিযামুল-মুলক,সিয়াসাত নামাহ (পৃ/257)

[3]ইবনু আবি উসাইবায়াহ, উয়ুনুল আনবা (পৃ/426)

[4]Risalat al-Biruni fi Fihrist Kutub al-Razi: A Comprehensive Bibliography of the Works of Abu Bakr al-Rāzī (D. 313 A.H/925) and al-Birūni (D. 443/1051) by "Nurdeng Deuraseh"

https://ejournal.um.edu.my/index.php/afkar/article/view/5872/3596

[5]চতুর্থ টিকাতে উল্লেখিত উৎসের পৃষ্ঠা নম্বর 74

[6]যেমন :'ডক্টর মুহাম্মদ আস-সুলাইমানি',কানুনুত তা'ওইলের দারাসাহ ও তাহকিকে (পৃ/336) এমনটা উল্লেখ্য করেছেন। আহমদ হাসান আয-যাইয়াত পাশা তাঁর একটি লেখাতে এমনটা উল্লেখ্য করেছেন (https://shamela.ws/book/29674/14354)। একদল লেখকের সম্মিলিতভাবে লিখিত 'মুওজিযু দাইরাতিল মায়ারিফিল ইসলামিয়াহ' গ্রন্থে (16/5053) এমনটা উল্লেখ্য আছে।

[7]ইবনুন-নাদিম, আল-ফিহরিসিত(পৃ/363)

[8]আল-কিফতী,ইখবারুল উলামা (পৃ/209)

[9]ইবনু আবি-উসাইবায়াহ,উয়ুনুল আনবা (পৃ/426)

[10]আল-বাবানী,হিদায়াতুল আরিফিন (2/28)

[11]ইবনুস সাঈ , আদ-দুররুস সামিন (পৃ/180)

[12]ইবনুন-নাদিম, আল-ফিহরিসিত (পৃ/361-364)

[13]আল-কিফতী, ইখবারুল উলামা (পৃ/207-210)

[14]আর-যিরকিলী,আল-আ'লাম (7/253)

[15]ইবনু আবি উসাইবায়াহ, উয়ুনুল আনবা (পৃ/563)

[16]চতুর্থ টিকাতে উল্লেখিত উৎসের পৃষ্ঠা নম্বর 72

[17]'আব্দুল-লাতিফ আল-আব্দ' তাঁর গবেষণামুলক প্রবন্ধ 'فلسفة أبي بكر الرازي' তে এমনটা উল্লেখ্য করেছেন।

[18]ইবনু হাজার, লিসানুল মিযান (1/164)

[19]আমির আন-নাজ্জার, দারাসাহ ওয়া তাহকিক : উয়ুনিল আনবা (1/67)

[20]আয-যিরকিলী, আল-আ'লাম (1/156)

[21]চতুর্থ টিকাতে উল্লেখিত উৎসের পৃষ্ঠা নম্বর 58 থেকে 61

[22] সঈদ, তবাকাতুল উমাম (পৃ/33)

[23]ইবনু আবি-উসাইবায়াহ,উয়ুনুল আনবা (পৃ/416) ; ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ, মাসালিকুল আবসার (9/56);  আল-কিফতী,ইখবারুল উলামা (পৃ/206); সিদ্দিক হাসান,আবজাদুল উলুম (পৃ/632)।

[24]আল-কিফতী,ইখবারুল উলামা (পৃ/206) ; ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ,মাসালিকুল আবসার (5/55) ; সিদ্দিক হাসান, আবজাদুল উলুম (পৃ/632)।

[25]সিদ্দিক হাসান,আবজাদুল উলুম (পৃ/632) ;ইবনু খাল্লিকান,ওয়াফইয়াতুল আ'ইয়ান (5/158); আস-সিফদী, নুকতুল হুমইয়ান (পৃ/235) &আল-ওয়াফী বিল-ওয়াফিয়াত (3/62)।

[26]ইবনু জুলজুল,তবাকাতুল আত্তিবা (পৃ/77)

[27]আল-কিফতী,ইখবারুল উলামা (পৃ/206)

[28]ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ,মাসালিকুল আবসার (5/55) ; সিদ্দিক হাসান, আবজাদুল উলুম (পৃ/632)।

[29]ইবনু খাল্লিকান,ওয়াফইয়াতুল আ'ইয়ান (5/159)

[30]ইবনু ফাদ্বলিল্লাহ, মাসালিকুল আবসার (9/59) ;ইবনুল কাইইম, মাদারিজুস সালিকিন (4/191) ;আস-সাখাওই, আজ-জাওয়াহির ওয়াদ দুরার (1/384) :আস-সিফদী, আল-ওয়াফী বিল-ওয়াফিয়াত (3/63) & নুকতুল হামইয়ান (পৃ/236);ইবনু আবি-উসাইবায়াহ, উয়ুনুল আনবা (পৃ/421);হাজি খালিফাহ, কাশফুয যুনুন (1/160)।

[31]ইবনুল-কাইইম,মাদারিজুস সালিকিন (4/191)

[32]আস-সাখাওই, আজ-জাওয়াহির ওয়াদ দুরার (1/384)